সৃষ্টিকর্তাকে কে সৃষ্টি করেছে?

বিষয়ঃ সৃষ্টিকর্তাকে কে সৃষ্টি করেছে?

লিখেছেনঃ এমডি আলী।

==============================


কথা গুলো বুঝে পড়ুনঃ

যারা এই বিশ্বাস পোষণ করে যে এককোষী ব্যাকটেরিয়া থেকে কোটি কোটি বছরের বিবর্তন হয়ে তাদের মস্তিস্ক অস্তিত্বে এসেছে তাদের পক্ষে এরকম ভিত্তিহীন প্রশ্ন করাটি অস্বাভাবিক নয়। কারণ তারা তো মানুষের মতো বিবেকবোধ সম্পন্ন নয়। তারা তো মানুষের মতো চিন্তাশীলতার অধিকারীও নয়। তারা তো ঠিক মতো চিন্তাই করতে পারে না তারা যুক্তির কি বুঝবে? হ্যাঁ, নাস্তিকগোষ্ঠীর কথাই বলছিলাম।


যখন আমি নাস্তিকদেরকে শক্তিশালী যুক্তি প্রমাণ দিয়ে প্রমাণ করে দেই মহাবিশ্বকে স্রস্টা বানিয়েছেন তখন নাস্তিকরা আমার দেয়া যুক্তি প্রমাণ গুলোর জবাব দিতে না পেরে চোখ বন্ধ করে বলে দেয় তাহলে স্রস্টাকে কে সৃষ্টি করেছে? যুক্তি প্রমাণের মান সম্মান খেয়ে শিশুদের মতো মুখস্ত করা এই প্রশ্নটি করে এমন একটা নায়ক মার্কা ভাব ধরবে যেন মনে হবে সে এই দুনিয়ার রাজা হয়ে গেছে।


অথচ নাস্তিক্যবাদের দৃষ্টিতেই এই প্রশ্নটি সম্পূর্ণ বাতিল। প্রশ্নটি নাস্তিকতার সাথেই পরস্পর বৈপরীত্য ও সাংঘর্ষিক। নাস্তিকতা অর্থ স্রস্টাকে অস্বীকার করা। তাহলে এই অনুযায়ী “সৃষ্টিকর্তাকে কে সৃষ্টি করেছেন?” এই প্রশ্নটি বাতিল হয়ে যাচ্ছে। কারণ নাস্তিকরা যেখানে মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তাকেই স্বীকার করতে চায় না সেখানে আবার সৃষ্টিকর্তাকে কে সৃষ্টি করেছে? এর জবাবে কোনো হিন্দু বা খ্রিষ্টান যদি বলে ‘সৃষ্টিকর্তাকে আরেক সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি করেছে’ তাহলে নাস্তিকরা এই উত্তর মানবে? এবং আস্তিক হয়ে যাবে? কি মনে হয় আপনার?


নাস্তিকরা যখন প্রশ্ন করে স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করেছে ? তখন এই প্রশ্ন দ্বারা আসলে ওরা সৃষ্টিকর্তা বলতে কি বুঝাচ্ছে? এটা আগে বুঝা গুরুত্বপূর্ণ। যদি নাস্তিকরা বলে সৃষ্টিকর্তাকে কেউ সৃষ্টি করে নাই তাহলে তো আমাদের অর্থাৎ মুসলিমদের সাথে দ্বিমত থাকছে না। কিন্তু যদি বলে সৃষ্টিকর্তা এমন যাকে কেউ সৃষ্টি করেছে তাহলে নাস্তিকরা হিন্দু অথবা খ্রিষ্টানদের বহুঈশ্বরকে কেন স্বীকার করে আস্তিক হতে চায় না? যদি স্বীকার করতে না-ই বা চায় তাহলে প্রশ্নটিই বা করে কেন? তাহলে নাস্তিক্যবাদের দৃষ্টিতে কি নাস্তিকদের প্রশ্নটিই বাতিল হয়ে যাচ্ছে না?


মহাবিশ্বের সুন্দর সৃষ্টিশীলতা,চমৎকার সাজানো,সুন্দর সুন্দর স্টার,চাঁদ,সূর্য গ্রহ,জটিল জটিল সৃষ্টি অবশ্যই কোনো এক বুদ্ধিমান সত্ত্বা থেকেই সৃষ্টি হওয়া সম্ভব,অসীমতার শুন্যতা থেকে এসব এমনে এমনেই সৃষ্টি হওয়া সম্ভব না। তখন নাস্তিকরা বলে যে যদি মহাবিশ্ব কোনো বুদ্ধিমান স্রস্টা থেকে এসেছে তাহলে একই যুক্তিতে সৃষ্টিকর্তার মতো বিদ্ধিমান সত্ত্বাও আরেকজন বুদ্ধিমান স্রস্টা থেকে সৃষ্টি হয়েছে।


নাস্তিকদের এমন কথা কিন্তু হিন্দুদের হাজার হাজার ভগবানের দিকে ইশারা করে কিন্তু নাস্তিকরা কি এই যুক্তি মানে? তাছাড়া বুদ্ধিমান স্রস্টাকে আরেক বুদ্ধিমান স্রস্টা সৃষ্টি করেছে এই কথাটি কিন্তু নাস্তিকদের বিশ্বাসকে সঠিক প্রমাণ করছে না অর্থাৎ “স্রস্টার অস্তিত্ব নাই” দাবিটিকে কিন্তু প্রমাণ করতে পারছে না- খেয়াল করেছেন পাঠক?


আমি এমন স্রস্টার কথা বলছি না যে দুর্বল। আমি এমন স্রস্টার কথাও বলছি না যে স্রস্টা এতো দুর্বল যে উনাকে তৈরি করতে হবে। আমি বলছি এমন স্রস্টার কথা যে পারফেক্ট। যে সৃষ্ট হওয়ার দুর্বলতা থেকে মুক্ত। যে সব সময় অস্তিত্বশীল। যার শুরু নেই এবং শেষ নেই। এমন স্বয়ংসম্পূর্ণ স্রস্টার কথা আমি বলছি। মহাবিশ্বের একক নিয়মকানুনই যথেষ্ট এটা প্রমাণ করতে যে মহাবিশ্বের স্রস্টা একজনই। কিন্তু নাস্তিকদের বিবর্তিত মস্তিস্কে এসব শক্তিশালী যুক্তি ইনস্টল হয় না।


নাস্তিকদের এই প্রশ্ন স্রস্টাকে কে সৃষ্টি করেছে? এই প্রশ্ন থেকে যা ফুটে উঠে তা হচ্ছে স্রস্টাকে আরেকজন স্রস্টা সৃষ্টি করেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে নাস্তিকরা কি তাদের করা এই প্রশ্নের ভিতরের দর্শনকে বিশ্বাস করে কিনা? যদি করে তাহলে নাস্তিক থাকে কিভাবে? নাস্তিকদের যুক্তি অনুযায়ী মহাবিশ্বের স্রস্টাকে যদি কেউ সৃষ্টি করে তাহলে সে নিজে স্রস্টা হবে কিভাবে? সে তো নিজেই সৃষ্টি হয়ে যাবে, তাই না? “সৃষ্টি” বস্তুটির অস্তিত্বই তো পেয়েছে “সর্বদা অস্তিত্বশীল” স্রস্টার থেকে তাহলে স্রস্টাকে আবার কে সৃষ্টি করবে?


সৃষ্টিকর্তাকে কে সৃষ্টি করেছে? প্রশ্নটি যুক্তিবিদ্যার দৃষ্টিতে বাতিল যোগ্য। যদি তর্কের খাতিরে বলা হয় স্রস্টাকে আরেক স্রস্টা বানিয়েছে তাকে আরেক স্রস্টা বানিয়েছে এভাবে যদি “এর কোনো শেষ নাই” – এমন “উত্তর”(?) দেয়া হয় তাহলে এইটা এক ধরনের logical fallacy’র উদ্ভব ঘটায়। এই ফ্যালাসিকে বলে begging the question fallacy। কিংবা এই সমস্যাকে আপনি loaded question fallacyও বলতে পারেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে, “স্রস্টাকে কে সৃষ্টি করলো?’ – নিরীশ্বরবাদী, বস্তুবাদী বা সংশয়বাদীদের এই প্রশ্নটা আসলে একটা ভুল ধরনের প্রশ্ন বা fallacious question। কেননা, প্রশ্নকর্তা প্রশ্ন করার সময় ধরেই নিয়েছে, এই প্রশ্নের কোনো যুক্তিসঙ্গত সদুত্তর নাই। অথবা, আদৌ তিনি কোনো উত্তর পেতে চান না।


স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করলো, এই প্রশ্নের মাঝে একটা ফাঁক আছে। সেটা হলো প্রশ্নকারী বিনা প্রমাণে আগেই ধরে নিয়েছেন যে, স্রষ্টাকে সৃষ্টি করা হয়েছে; তিনি একসময় ছিলেন না। যেমন- আপনি যদি জিজ্ঞাসা করেন যে, স্রষ্টার সন্তান কয়জন? এর মানে হলো, আপনি আগেই বিনা প্রমাণে ধরে নিয়েছেন যে, স্রষ্টার সন্তান আছে। অথচ এরকম বিনা প্রমাণে কিছু ধরে নিয়ে, তার উপর ভিত্তি করে প্রশ্ন করা একেবারেই অযৌক্তিক। যদি ধরে নি যে আপনি জানেন না তাই প্রশ্নটা করলেন, তাহলেও এখানে সমস্যা রয়েছে। যদি কেউ না যেনে প্রশ্নটা করে থাকেন তাহলে তার কাছে ২টা সম্ভবনা রয়েছে, ১ম হল স্রষ্টাকে কেউ সৃষ্টি করেছে ২য় হল স্রষ্টাকে কেউ সৃষ্টি করেনি। তার প্রশ্ন থেকে বুঝা যাচ্ছে যে সে ১ম সম্ভবনার উপর বিশ্বাস করে প্রশ্নটা করেছে, আর কোন কিছু সত্য হওয়ার সম্ভবনা থেকে সেটাকে সত্য মেনে নেওয়াকেই বলা হয় An Appeal to probability fallacy। Who has created God? এই প্রশ্নটাই তো একটা ভুল প্রশ্ন বা category mistake।


আর যদি সে ইচ্ছাকৃত প্রশ্নটা করে থাকে তাহলে এ ধরনের প্রশ্নকে বলা হয় loaded question বা complex question fallacy, যেটি কোন controversial বা unjustified assumption করে করা হয়। কারন প্রশ্নটা হল অনেকটা ড্রাইবারকে কে ড্রাইব করল, রাধুনীকে কে রাঁধল, লেখককে কে লিখল, চিত্রকারকে কে অংকন করল ইত্যাদি প্রশ্নে মতো। নাস্তিকরা এভাবেই অনেক কুযুক্তি, অপব্যাখ্যা করে মানুষকে বাস্তব সত্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়, চাচ্ছে। 


ইসলামিক দৃষ্টিতে প্রশ্নটির জবাব খুবই সহজ। যে কেউই সহজে বুঝতে পারবে। স্রস্টাই সব কিছু সৃষ্টি করেছেন তাই উনাকে সৃষ্টি করার কোনো প্রশ্নই আসে না। সৃষ্টিকর্তা হলেন অসৃষ্ট যাকে কেউই সৃষ্টি করে নাই। উনাকে কেউই সৃষ্টি করেন নাই এই জন্যই উনি সবার সৃষ্টিকর্তা। সৃষ্টিকর্তাকে কেউ যদি সৃষ্টি করে তাহলে সে সৃষ্টিকর্তা থাকে কিভাবে? যাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সে কিভাবে সৃষ্টিকর্তা হবে,সৃষ্টি না হয়ে? কুরআন ও সহিহ হাদিস থেকে প্রমাণ গুলো পড়ে নেই আসুন।


আল কুরআন, সুরা ইখলাস ১১২:১,২,৩,৪ আয়াতে বলা আছে,

তিনি আল্লাহ,যিনি একক। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি।এবং তার সমতুল্য কেউ নেই।


আল কুরআন, সুরা বাকারা ২:২৫৫ আয়াতে বলা আছে,

আল্লাহ!তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। তিনি স্বাধীন,সব কিছুর ধারক।তন্দ্রা ও নিদ্রা তাঁকে স্পর্শ করে না।আসমান ও যমিনে যা কিছু রয়েছে সবই তাঁর।কে আছে এমন যে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করতে পারে? সামনে অথবা পিছনে সবই তিনি অবগত আছেন। একমাত্র তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন তা ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারে না।তাঁর সিংহাসন আসমান ও যমিনকে পরিবেষ্ঠিত করে আছে।আর এদের রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে বিন্দুমাত্র ক্লান্ত করে না।তিনি মহান,শ্রেষ্ঠ।


আল কুরআন, সুরা শুরা ৪২:১১ আয়াতে বলা আছে,

কোন কিছুই তাঁর সাদৃশ্য নয়।


আল কুরআন, সুরা রহমান ৫৫:২৬,২৭ আয়াতে বলা আছে,

আল্লাহ ছাড়া সব কিছুই ধ্বংসশীল।


আল কুরআন, সুরা হাদীদ - ৫৭:৩ আয়াতে বলা আছে,  

তিনিই প্রথম, তিনিই সর্বশেষ, তিনিই প্রকাশমান ও অপ্রকাশমান এবং তিনি সব বিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত।


আল কুরআন, সুরা রহমান ৫৫ঃ ২৬,২৭ আয়াতে বলা আছে,  

ভূপৃষ্টের সবকিছুই ধ্বংসশীল। একমাত্র আপনার মহিমায় ও মহানুভব পালনকর্তার সত্তা ছাড়া।


আল কুরআন, সুরা কাসাস  ২৮:৮৮ আয়াতে বলা আছে, 

আপনি আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে আহবান করবেন না। তিনি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই। আল্লাহর সত্তা ব্যতীত সবকিছু ধবংস হবে। বিধান তাঁরই এবং তোমরা তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে। 


কুরআনের আয়াত গুলো থেকে আমরা স্পষ্ট হলাম যে স্রস্টাকে কেউই সৃষ্টি করেনই নাই কারণ উনি সর্বদাই অস্তিত্বশীল। শুরু হওয়া, শেষ হয়ে যাওয়া, ধ্বংস হয়ে যাওয়া এসব দুর্বলতা থেকে স্রস্টা সম্পূর্ণ মুক্ত কারণ উনি স্বয়ংসম্পূর্ণ। সর্বদা অস্তিত্বশীল আল্লাহই মহাবিশ্বকে শুন্য থেকে অস্তিত্ব দিয়েছেন সেখানে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে প্রশ্নটিই যৌক্তিকভাবে বাতিল। ‘কোনো সৃষ্টি স্রষ্টা ছাড়া আসতে পারে না’ বা ‘সব সৃষ্টির স্রষ্টা রয়েছে’। এখানে সব সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে কিন্তু স্রষ্টা তো সৃষ্টি নন তাই তিনি এর আয়তাভুক্ত নন। নবী মোহাম্মদ (সা) এই প্রশ্নটির অসাধারণ চমৎকার সমাধান দিয়েছেন। আসুন পড়ি।


মিশকাতুল মাসাবিহ,হাদিসঃ৭৫,হাসান হাদিসঃ 

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : মানুষেরা তো প্রথম সৃষ্টি জগত ইত্যাদি সম্পর্কে পরস্পরের প্রতি প্রশ্ন করতে থাকবে, এমনটি সর্বশেষে এ প্রশ্নও করবে, সমস্ত মাখলূক্বাতকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, তবে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে?যখন তারা এ প্রশ্ন উত্থাপন করে তখন তোমরা বলবে : আল্লাহ এক, তিনি অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি আর কেউ তাকে জন্ম দেননি।তাঁর সমকক্ষও কেউ নেই। অতঃপর শাইত্বনের উদ্দেশে তিনবার নিজের বাম দিকে থু থু ফেলবে এবং বিতাড়িত শয়তান হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাবে।-ihadis.com


এই হাদিসটি আরও বর্ণিত হয়েছে,ihadis.com,সহিহ বুখারী,হাদিসঃ৩২৭৬/হাদিস সম্ভার,হাদিসঃ১৩১/আল লুলু ওয়াল মারজান,হাদিসঃ৮২/মিশকাতুল মাসাবিহ,হাদিসঃ৭৬,৬৬/ সব গুলো হাদিস সহিহ।


কিছু সোজা উদাহরণ দিচ্ছি যাতে বুঝতে আরও সহজ হয়। প্রতিটি উদাহরণ মন দিয়ে বুঝে বুঝে পড়বেন। প্রথম উদাহরণটি পড়লেই সব বুঝে যাবেন এরপরেও সব গুলো উদাহরণই পড়বার চেষ্টা করবেন।


উদাহরণ ১/

আপনি একটি লিখা লিখেছেন।যদি প্রশ্ন করি আপনাকে কে লিখেছে ? তখন ! আসলে এ প্রশ্নটি করা ব্যাকরণগত ভুল,গলদ।কারন আপনি হলেন মানুষ।আপনাকে যদি কেউ লিখত তাহলে আপনি আর মানুষ হতেন না,আপনি "লিখা" হয়ে যেতেন।আপনি মানুষ আর আপনি লিখার ঊর্ধ্বে।আপনার ক্ষেত্রে লিখা শব্দটি প্রযোজ্য না তেমনি একইভাবে স্রষ্টার ক্ষেত্রেও সৃষ্টি শব্দটিও গ্রহনযোগ্য না।মানুষ ও লিখার মধ্যে যেমন তফাৎ বা পার্থক্য আছে তেমনি স্রষ্টা আর সৃষ্টির মধ্যেও আরও বেশি পার্থক্য রয়েছে।


উদাহরণ ২/

ধরেন আপনার নাম রহিম।এখন রহিম সাইকেল চালায়।প্রশ্ন করা হলঃ রহিমকে কে চালায়? এ প্রশ্নটিও একইরকম ভুল।রহিমকে যদি কেউ চালাত তবে রহিম আর রহিম থাকতো না রহিম সাইকেল হয়ে যেত।ঠিক তেমনি স্রষ্টাকে যদি কেউ সৃষ্টি করতো তাহলে স্রষ্টা আর স্রষ্টা থাকতেন না,তিনিও সৃষ্টি হয়ে যেতেন। স্রষ্টা "সৃষ্টি" নন বলেই তিনি স্রষ্টা।


উদাহরণ ৩/ 

ধরেন আপনি ছবি একেছেন।যেমন,গাছের ছবি,সুন্দর নদ-নদী,ফুল,পাহাড়-পর্বত,শহর-গ্রাম ইত্যাদি ইত্যাদি।প্রশ্ন করা হল আপনাকে কে একেছে ? -খেয়াল করুন আপনাকে যদি কেউ আঁকত তবে আপনি আর মানুষ থাকতেন না আপনিও ছবি হয়ে যেতেন।বাস্তব মানুষ ও জড় ছবির মধ্যে যে পার্থক্য তেমনি স্রষ্টা ও তাঁর সৃষ্টির মাঝে অনেক তফাৎ।


উদাহরণ ৪/

একটি তাসের সারি টোকা দেয়া হল।প্রত্যেক তাস একে একে পরে গেল।কেউ যদি প্রশ্ন করে প্রথম যে টোকা দিয়েছে সে কি তাস ? উত্তর হল,না। কারন যে তাসকে প্রথম টোকা দিয়েছে সে মানুষ, যে তাস না।স্রস্টাও প্রথমে সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন তাঁকে কে সৃষ্টি করেছেন ? না তাঁকে কেউই সৃষ্টি করেননি কারন তিনি সৃষ্ট নন।


উদাহরণ ৫/ 

আপনি কম্পিউটারে বসে টাইপ করছেন।প্রশ্ন করা হল আপনাকে কে টাইপ করছে ? বুঝার চেষ্টা করুন যদি আপনাকে কেউ টাইপ করতো তাহলে আপনি আর মানুষ থাকতেন না আপনি হয়ে যেতেন কিবোর্ড।একই ভাবে আপনার ক্ষেত্রে যেমন "কে টাইপ করেছে"  এই প্রশ্ন হাস্যকর তথা গ্রহনযোগ্য নয় একই ভাবে সবকিছুই স্রষ্টা সৃষ্টি করেছেন তাঁকে কে সৃষ্টি করেছে এই প্রশ্নটি গ্রহনযোগ্য নয় এবং এই প্রশ্নটিই ভুল প্রশ্ন।


উদাহরণ ৬/ 

কেউ যদি প্রশ্ন করে যে রাধুনিকে কে রান্না করেছে? এটা গলদ প্রশ্ন।রাধুনিকে কেউ রান্না করে না আর যদি রাধুনিকে কেউ রান্না করে তাহলে সে রাধুনি হবেই না, হয়ে যাবে রান্না।রাধুনি আর রান্নার মধ্যে যেই পার্থক্য ঠিক একইভাবে সৃষ্টি আর স্রস্টার মাঝে একই পার্থক্য।স্রষ্টাকে কেউ সৃষ্টি করলে সে আর সৃষ্টি হবে না হয়ে যাবে সৃষ্টি।


উদাহরণ ৭/ 

ড্রাইভারকে কে ড্রাইভ করে? এটিও একইরকম।অর্থাৎ ড্রাইভারকে যদি কেউ ড্রাইভ করে তাহলে সে আর ড্রাইভার হবে না হয়ে যাবে ড্রাইভ বা গাড়ি।একই ভাবে স্রষ্টাকে যদি কেউ সৃষ্টি করে তাহলে সে আর স্রস্টাই থাকবে না হয়ে যাবে সৃষ্টি।


উদাহরণ ৮/ 

বাবুর্চিকে কে রান্না করেছে? এখানে বাবুর্চিকে কেউ রান্না করলে বাবুর্চি আর বাবুর্চি থাকতেন না যেও রান্না হয়ে যেতেন একইভাবে স্রস্টাকে যদি কেউ সৃষ্টি করতো তাহলে সেও আর সব কিছুর স্রস্টা হতেন না বরং সৃষ্টি হয়ে যেতেন।


উদাহরণ ৯/

মনে করেন একজন ব্যাচলর ছেলেকে এসে কেউ ‍জিজ্ঞাসা করল যে ছেলেটির স্ত্রী ও সন্তান কেমন আছে, তারা কোথায় এখন। এখন আপনারাই বলেন প্রশ্নটা কি ঠিক হয়েছে? যেখানে সে ব্যাচলর সেখানে তার স্ত্রী ও সন্তানের খবরাখবর জানতে চাওয়াটাকি বোকামি নয়? এই ধরনের প্রশ্নগুলা করে যারা যক্তি দেয় তাদের এগুলা আসলে হচ্ছে লজিক্যাল ফ্যালাসি।


উদাহরণ ১০/

বিগব্যাং থেকে জানতে পারি "মহাবিশ্বের একটি শুরু আছে"। এখন আমরা সহজ সমীকরণ পদ্ধতিতে দেখবো স্রষ্টাকে সৃষ্টির প্রয়োজন আছে কিনা অথবা স্রষ্টার সৃষ্টিকর্তা থাকতে পারে কিনা। *সকল সৃষ্টির একটা নির্দিষ্ট শুরু আছে এবং শেষ আছেঃ ধরি এটা সমীকরণ ১ আবার *মহাবিশ্ব একটি সৃষ্টিঃ এটা সমীকরণ ২। এখন সমীকরণ ১ আর ২ থেকে পাইঃ সকল সৃষ্টির শুরু এবং শেষ আছে। মহাবিশ্ব একটি সৃষ্টি, তাই এটারও একটা শুরু এবং শেষ আছে। এখন আমার ৩ নং সমীকরণ হচ্ছেঃ স্রষ্টা সব কিছুই সৃষ্টি করেছেন। খেয়াল করুন, আমার প্রথম শর্তের সাথে কিন্তু তৃতীয় শর্ত ম্যাচ হচ্ছে না। আমার প্রথম শর্ত ছিলঃ সকল সৃষ্টির শুরু এবং শেষ আছে কিন্তু তৃতীয় শর্তে কথা বলছি স্রষ্টা নিয়ে। তিনি সৃষ্টি নন,তিনি স্রষ্টা। তাই এখানে প্রথম শর্ত খাটে না। তারমানে স্রষ্টার শুরু নাই,শেষও নাই। অর্থাৎ তাঁকে নতুন করে সৃষ্টিরও প্রয়োজন নাই।তারমানে স্রষ্টার আরেকজন স্রষ্টা থাকারও প্রয়োজন নাই। কারণ "শুরু" হওয়া সৃষ্টির কাজ আর স্রষ্টা সেই শুরুটা করেছেন। যেহেতু স্রষ্টার শুরু নাই এবং শেষও তাই তাঁকে সৃষ্টি করার দরকারও নাই।


পরিশেষে স্রস্টাকে কি সৃষ্টি করেছে? এরপরেও যদি কেউ এই ধরণের অযৌক্তিক ও হাস্যকর প্রশ্ন করে তাহলে বুঝতে হবে সে নিজের মূর্খতা ও অজ্ঞতা প্রকাশ করে দেখাতে চাইছে। আমরা যারা যৌক্তিক মানুষ তারা সেই সব মূর্খদের দেখে বিনোদন নেয়া ছাড়া আর উপায় নেই। তবে যারা সচেতন তারা ঠিকই সত্যকে গ্রহণ করে নিবে। স্রষ্টা স্বয়ং “সৃষ্টি হওয়া” “শুরু হওয়া” “শেষ হওয়া” “ধ্বংস হওয়া” এসব দুর্বলতা থেকে মুক্ত। এই কারণেই তো উনি সর্বশক্তিমান।

এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post