বিষয়ঃ সংশয়বাদে যৌক্তিক সংশয়
লিখেছেনঃ এমডি আলী
=================================
ভূমিকাঃ “স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই” দাবিটির পক্ষে যখন নাস্তিকরা প্রমাণ পেশ করতে পারে না তখন প্রমাণ দেয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য সংশয়বাদের আশ্রয় নিয়ে বলে স্রষ্টা থাকতে পারে আবার নাও থাকতে পারে। যখন প্রশ্ন করা হয় স্রষ্টা নাও থাকতে পারে আপনার এই কথা কি সঠিক? তখন তারা ত্যানা প্যাঁচানো শুরু করে দেয়। কথাকে বিবর্তিত করে ফেলে। নাস্তিকরা নিজেদের বিশ্বাসের পক্ষে যুক্তি প্রমাণে দিতে না পেরে হারে হারে টের পাচ্ছে নাস্তিক্যবাদ দুর্বল যার যৌক্তিক ভিত্তি নেই। নাস্তিকতা পুরো মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত। কোনো নাস্তিক যখন নিজের নাস্তিক্যবিশ্বাস ছেড়ে দিয়ে সংশয়বাদের আশ্রয় গ্রহণ করে তখন ব্যাপারটি আরও হাস্যকর দেখায়। অনেকটা এরকম যে পাতার বাড়ি ছেড়ে কাপড়ের বাড়িতে গিয়ে উঠেছে। সংশয়বাদ নিয়ে নিশ্চিত সত্য কখনো পাওয়া যাবে না। কোনো নাস্তিক যদি বলে সংশয়বাদের আশ্রয় নিয়ে সত্য পাওয়া যাবে তখন যেই প্রশ্নের সামনে তাকে দাড়াতে হবে তা হলো সংশয়বাদের আশ্রয়ে সত্য পাওয়া যাবে এই কথা সংশয়বাদ কোনো সত্যের সাহায্যে নির্ধারণ করেছে? সংশয়বাদ নিজেই তো নিশ্চিত নয় তাহলে সংশয়বাদের মাধ্যমে সত্য পাবো এই আশা কি করে সত্য হয়? সংশয়বাদের তো কোনো ভিত্তিই নাই।
উদাহরণ দেই। ধরুন গণিত না জানা এক লোক নেশাগ্রস্ত হয়ে আপনার কাছে এসে বলছে আমি আপনাকে গণিত শিখিয়ে দিব। এই কথা কি যৌক্তিক হতে পারে? আপনি জানেন যে সে নিজেই গণিত জানে না এর উপরে আবার নিজেই নেশাগ্রস্থ। সে কি করে আমাকে গণিত শিখাতে পারে? ঠিক তেমনি সংশয়বাদ নিজেও তো নিশ্চিত নয়। সে নিজেই জানে না সত্য কি? কাকে বলা হবে? সত্য আসলেই আছে কি নেই? ইত্যাদি? তাহলে সে নিজে আমাকে কিভাবে সাহায্য করবে সত্য জানতে? সংশয়বাদ নিজেই যেখানে অনিশ্চিত সেখানে আমাকে কিভাবে নিশ্চিত সত্য দেখাবে? সংশয়বাদকে প্রশ্নের সামনে দাড় করিয়ে দিলে মনে হয় সে অক্সিজেন নিতে পারবে? নাকি সাথে সাথে ইন্তেকাল করে ফেলেছে?
সংশয়বাদে স্বয়ং যৌক্তিক সংশয়ঃ
মুক্তমনারা আমাদেরকে যেভাবে সংশয়বাদ বুঝায় আমরা ঠিক সেভাবেই বুঝার চেষ্টা করবো এবং যাচাই করে দেখবো মুক্তমনাদের কথা অনুযায়ীও আসলেই সংশয়বাদ যৌক্তিক কিনা? মুক্তমনারা বলে থাকেন,
সংশয়বাদ শব্দটা বিশ্বাসপ্রবণতার ঠিক বিপরীত। যদি আপনি প্রমাণ ছাড়া কোনো কিছু বিশ্বাস না করে অর্থাৎ বিশ্বাসপ্রবণ না হয়ে প্রতিটি বিষয়ের প্রমাণ খোঁজেন, তখনই আপনি সংশয়বাদী এর অর্থ কিন্তু দ্বিধায় ভোগা নয়। অথবা যেকোন কিছুকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মনোভাবকেই সংশয়বাদ বলা যেতে পারে। সাধারণ্যে বহুল প্রচলিত কোনো ধারণাকে সন্দেহ করা অর্থে সংশয়বাদ শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কোনো কিছুর নিদর্শন পেলে তাকে বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে না নিয়ে বরং সেই নিদর্শনটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করাই সংশয়বাদ। যারা সংশয়বাদের প্রতি আস্থা রাখেন বা সংশয়বাদ চর্চা করেন তাদেরকে সংশয়বাদী বলা হয়।
চিরায়ত দর্শন থেকেই সংশয়বাদের ইংরেজি প্রতিশব্দ, স্কেপ্টিসিজম শব্দটি এসেছে। প্রাচীন গ্রিসে কিছু দার্শনিক ছিলেন যারা "কোনো কিছুকেই নিশ্চিত বলে ঘোষণা দিতেন না বরং সব কিছুতেই তাদের নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করতেন"। দার্শনিকদের এই ধারাটিকে তখন Skeptiko বলা হতো। তাই Skeptikoi দার্শনিক ধারার দার্শনিকদের বৈশিষ্ট্যকেই স্কেপ্টিসিজম হিসেবে আখ্যায়িত করা হতে থাকে।
সংশয়বাদ নিয়ে বর্ণিত উপরের কথা গুলো আসলেই কি যৌক্তিক নাকি স্বয়ং সংশয়যুক্ত? বর্ণিত কথার বিরুদ্ধে যেই প্রশ্ন গুলো আসতেই পারে তা হলো প্রতিটি বিষয়ের প্রমাণ যে খুঁজবেন সেটা যে সত্য সেটা কোনো প্রমাণের ভিত্তিতে আপনি প্রমাণ করবেন? বলা হলো সংশয়বাদী অর্থ নাকি দ্বিধায় ভোগা না তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে আপনি যখন কোনো বিষয় নিশ্চিত নন তখন কি আপনি নিশ্চিত? একে দ্বিধা বলা হবে না কেন? ধরুন ডারউইনিজম সত্য নাকি মিথ্যা আপনি নিশ্চিত হন আপনি বলতে পারেন সেটা সত্য হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। এই “হতে পারা” অথবা “হতে না পারা” এগুলো কি দ্বিধা নয়? অনিশ্চিত হয়? তাছাড়া সন্দেহ কখন পোষণ করা হয়? যখন আপনি দ্বিধায় ভোগেন তখন অর্থাৎ আপনি কিছু নিয়ে নিশ্চিত নন ঠিক তখন আপনি সন্দেহ করেন তাই না? তাহলে সংশয়বাদী অর্থ দ্বিধায় ভোগা নয় এরকম কথা কিভাবে সংশয়মুক্ত হতে পারে?
এরপরে যেই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি চলে আসে সংশয়বাদের প্রতি আস্থা রাখতে হবে কেন? সংশয়বাদ যদি বিশ্বাসের ঠিক বিপরীত হয়েই থাকে তাহলে স্বয়ং সংশয়বাদে কেন আস্থা রাখতে হবে? সংশয়বাদকে কি অবিশ্বাস করা যাবে না? সংশয়বাদ সত্যের মাধ্যম এরকম কথা কিভাবে সংশয়হীন সত্য? প্রমাণ কি? সংশয়বাদ স্বয়ং যদি প্রমাণিত হয় তাহলে এখানে আস্থা রাখতে হচ্ছে কেন? কোনো কিছু প্রমাণ পেলেই সেটা সত্য এই কথা কিভাবে প্রমাণিত সত্য? ভিত্তি কি? প্রাচীন গ্রিসের দার্শনিকরা যে কোনো কিছুকেই নিশ্চিত বলে ঘোষণা করতেন না তাহলে কোনো কিছু নিশ্চিত নয় এই কথা কিভাবে নিশ্চিত সত্য প্রমাণিত? “কোনো কিছুকে নিশ্চিত মনে না করে প্রশ্ন করার মনোভাবকে সংশয়বাদ বলে” এরকম কথা যে সত্য সেটার প্রমাণ গুলো কি? এই কথা যে মিথ্যা না সেটা কিভাবে নিশ্চিত প্রমাণ করেছে সংশয়বাদীরা? সংশয়বাদীরা যে প্রমাণ সন্ধান করে সেই মাধ্যম গুলো কি কি? ভিত্তি গুলো কি কি? প্রমাণ স্বয়ং সংশয়মুক্ত?
সংশয়বাদ স্বয়ং নিশ্চিত সত্য? নিশ্চিত প্রমাণ কিভাবে করা হয়েছে? যেকোনো কিছুকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মনোভাবকেই সংশয়বাদ বলে না? সত্যের অস্তিত্ব সংশয়বাদের দৃষ্টিতে কিভাবে নিশ্চিত সত্য? সংশয়বাদের দৃষ্টিতে কিভাবে নাস্তিক্যবাদ সত্য? ডারউইনিজম সত্য? সেকুলারিজম সত্য? নৈতিকতা সত্য? ভালো হতে হবে কথাটি সত্য? বস্তুবাদ সত্য? অজ্ঞেয়বাদ সত্য? যুক্তিবাদ সত্য? অভিজ্ঞতাবাদ সত্য? মুক্তচিন্তা সত্য? মুক্তমন সত্য? নায়িলিজম সত্য? সমাজতন্ত্র সত্য? লেনিনবাদ সত্য? মাওবাদ সত্য? জ্ঞান সত্য? অস্তিত্ব সত্য? বিজ্ঞান সত্য? চেতনা সত্য?
সংশয়বাদ বিশ্বাসের বিপরীত। কোনো কিছুকেই না মেনে প্রশ্ন করার মনোভাব। এই যদি হয় সংশয়বাদীদের কথা। তাহলে সংশয়বাদ বিশ্বাসের বিপরীত, এই কথা কিভাবে বিশ্বাসযোগ্য? বিশ্বাস এর বিপরীত, প্রমাণ সন্ধান করা, কোনো কিছুকেই না মেনে প্রশ্ন করার মনোভাব করা ইত্যাদি যা যা বলা হলো সব কিছু কি বিশ্বাসযোগ্য? যদি জবাব হয় Yes তাহলে এখানেও বিশ্বাস করতে হচ্ছে। যদি জবাব হয় No হয় তাহলে যা বিশ্বাসযোগ্য নয় তা সত্যি কিভাবে হয়? সংশয়বাদের আলোকে এই সমস্যার সমাধানে কি হবে সংশয়বাদীদের কাছে? কোন প্রমাণের ভিত্তিতে সমাধান দেয়া হবে এবং কেন? সেই প্রমাণ যে সত্য সেসবের প্রমাণ গুলো কেমন হবে? কি হবে? কিভাবে হবে?
সংশয়বাদের প্রকৃত অর্থ করা উচিত যারা কিছুই জানে না অথবা সোজা বাংলায় যারা মূর্খতা চর্চা করে তারাই সংশয়বাদী। কিভাবে? আচ্ছা সহজ উদাহরণ দিচ্ছি। যারা সংশয়বাদী তারা নিশ্চিতভাবে এটা জানবেই না যে মহাবিশ্বকে কেউ সৃষ্টি করেছে অথবা করেনি। অর্থাৎ সেই বিষয় সে মূর্খ। এই মূর্খতাকেই সে চর্চা করবে। তাকে যদি প্রমাণ দেয়া হয় যুক্তি দিয়ে,দলীল দিয়ে এরপরেও সে সেই প্রমাণ গুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে সত্য মেনে নিবে না। কারণ তার মনমত হয়নি বলে। তার মনে যেটা প্রমাণ সেটাই সে প্রমাণ হিসেবে বিশ্বাস করবে। সেই বিশ্বাসকে আবার সে নিজে প্রশ্নবিদ্ধ করবে না। অথচ সংশয়বাদকেই প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়। “প্রমাণ পেলে সেটাই সত্য” এ কথাই যে চূড়ান্ত সত্য সেটার প্রমাণ গুলো কি হবে? কেমন হবে? সংশয়বাদীরা কি নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছে? না পারবে? সত্য কাকে বলা হবে? সত্য আসলে কি? সত্য জানার মাধ্যম গুলোকে কোন প্রমাণ দিয়ে সত্য নির্ধারণ করা যাবে?কেমন হবে তা প্রমাণ গুলো ? ইত্যাদি যৌক্তিক প্রশ্নের জবাব প্রমাণসহ কি দেখাতে পেরেছে সংশয়বাদীরা? তাহলে? মূর্খতা চর্চা করাকে সংশয়বাদ হিসেবে অভিহিত করা হলে যৌক্তিক হবে না কেন? সংশয়বাদ শব্দটি নিজে কি সার্বজনীন সংশয় থেকে মুক্ত? সংশয়বাদ নিজে কি নিশ্চিত? সংশয়বাদ যদি দ্বিধা Confusion না হয়ে থাকে তাহলে এটা যে Confusion না সেটা কোন নিশ্চিত জ্ঞানের মাধ্যমে জানা পসিবল হলো? আচ্ছা ধরে নিলাম সংশয়বাদ সত্য অনুসন্ধানের একটা রাস্তা। কিন্তু প্রশ্ন হলো সত্য অনুসন্ধানটা কি দিয়ে করা হবে? এবং কিভাবে? নিজের বিবেক? সবার বিবেক তো এক না? তাহলে সমাধান? বিবেক দিয়েই সত্য পাওয়া যাবে সংশয়বাদের দৃষ্টিতে এই কথা কোন প্রমাণের ভিত্তিতে সঠিক?
সংশয়বাদ সত্যি হলে নাস্তিক্যবাদ মিথ্যা?
নাস্তিকতা মানে হলো স্রস্টাকে প্রমাণের অভাবে অস্বীকার করা অর্থাৎ স্রস্টা নেই এটা নিশ্চিত বিশ্বাস করাই হচ্ছে নাস্তিকতা। কিন্তু সংশয়বাদ বলছে কোনো কিছুই নিশ্চিত সত্য না অথবা কোনো কথাকে বিনা প্রমাণে মেনে না নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করার মনোভাব হচ্ছে সংশয়বাদ। প্রশ্ন হচ্ছে সংশয়বাদের দৃষ্টিতে নাস্তিক্যবাদ কিভাবে সত্য প্রমাণ হয়? নাস্তিকরা কি সংশয়বাদীদের কাছে প্রমাণ করতে পেরেছে নাস্তিক্যবাদ সত্য? সংশয়বাদীরা কি নাস্তিকদের দেয়া প্রমাণ মেনে নিয়েছে? স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই- এই বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কি কি প্রশ্ন করেছে সংশয়বাদীরা? তাহলে সংশয়বাদের দৃষ্টিতে নাস্তিকতা নিশ্চিত প্রমাণ হচ্ছে না?
ডারউইনবাদ সঠিক হলে সংশয়বাদ মিথ্যা?
এককোষী ব্যাকটেরিয়া থেকে বিভিন্ন ধাপে ধাপে আজকের এ উন্নত জানোয়ার মানুষ প্রজাতি। মানুষ জাতি অন্য প্রানীদের মতোই প্রানী চতুস্পদ। অন্য প্রানীদের যেমন বিবেকবোধ নেই ঠিক মানুষের মাঝেও নির্দিষ্ট বিবেকবোধ নেই। তাই তো নাস্তিকরা একটা দাবি করে আমাদের ধর্মের প্রয়োজন নেই। যে যার মতো চলবে। এটা আসলে বিবর্তনবাদেরই একটা ধারণা । সংশয়বাদ যে বলে প্রশ্ন করার মনোভাব থাকতে হবে, বিশ্বাসের বিপরীত থাকতে হবে, প্রমাণ খুজতে হবে। আচ্ছা মানুষ ছাড়া প্রানী জগতের কে এই কাজ গুলো করে আমাকে বলেন তো? বাঘ, হরিণ, সিংহ ইত্যাদি যতো জানোয়ার আছে এরা কি সংশয়বাদের এসব নিয়ম মানে? উত্তর হচ্ছে না। তাহলে নাস্তিক কিভাবে সংশয়বাদী হয় বিবর্তনবাদের আলোকে? বিবর্তনবাদ মানুষকে বুদ্ধি দিয়েছে কিভাবে আর অন্য প্রানীদেরক কেন দেয় নাই? অন্য প্রানীদের মাঝে কি সংশয়বাদ মনোভাব আছে? একটা বাঘ হরিণকে হত্যা করে খেয়ে কি নৈতিক কাজ করলো? বাঘ কি কখনো ভেবেছে হরিণকে মেরে খাওয়া অপরাধ? এটার জন্য সে প্রশ্ন করেছে? সত্য অনুসন্ধান করেছে? না। তাহলে নাস্তিকরা নিজেদেরকে সংশয়বাদী দাবি করে কি বিবর্তনবাদকে ভুল প্রমান করছে না? বিবর্তনবাদ অনুপাতে দুনিয়ার সবাই তো বিবর্তিত প্রানী স্রেফ?
সংশয়বাদের কন্ট্রাডিকশন বুঝুনঃ
যারা সংশয়বাদী তারা আসলেই জেনে বুঝে সংশয়বাদী হয় কিনা সেটা নিয়েও বেশ সংশয় রয়ে যাবে। কারণ সংশয়বাদ কখনো বলে না সত্য সন্ধান করে পাওয়া যাবে। সংশয়বাদের সীমা হচ্ছে কোনো কিছুকে না মেনে সেটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মনোভাব। প্রমাণ সন্ধান করা। কিন্তু প্রশবিদ্ধ করে সত্য পেয়েই যাবে,প্রমাণ সন্ধান করে সত্য পেয়েই যাবে এমন কোনো নিশ্চয়তা সংশয়বাদ দেয় না। তাছাড়া সংশয়বাদ এমন একটি বিশ্বাস ব্যবস্থা যেখানে বৈপরীত্যের অভাব নেই। প্রথমটি সত্য হলে দ্বিতীয়টি মিথ্যা। দ্বিতীয়টি মিথ্যা হলে আগেরটি সত্য। এভাবে আসলেই সত্য পাওয়া সম্ভব কিনা সেটা আপনারাই চিন্তা করে দেখবেন। নিচে বৈপরীত্য গুলো তুলে ধরছি। মন দিয়ে বুঝে বুঝে পড়তে থাকুন। তার আগে পরিশেষে যুক্তিবাদী মানুষের কাছে আমার মানবিক আবদার। আপনি নাস্তিকিও বিশ্বাস এর বদলে যুক্তি-প্রমাণ নির্ভর হয়ে উঠুন,পড়ুন, জানুন এরপরে সঠিক সিদ্ধান্তের উপর বিশ্বাস করুন কারণ "জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, যুক্তি যেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব"।
সত্য বলে কিছু নেই।>এই বিবৃতিটা কি সত্য?
সকল সত্য আপেক্ষিক।>এই সত্যটা কি আপেক্ষিক?
সংশয় সকল জ্ঞানের উৎস।>এই কথাটি সংশয়মুক্ত?
আপনার কাউকে জাজ করা উচিত নয়।>এটা কি জাজমেন্ট না?
বিশ্বাসের কোনো যৌক্তিকতা নেই।>এই বিশ্বাসটির যৌক্তিকতা কতটুকু?
কারো পক্ষে সত্য জানা সম্ভব নয়।>এই বিবৃতিটি কি করে জানা সম্ভব হলো?
আপনি কখনোই সত্য জানতে পারবেন না।>আপনি কি এ কথার সত্যতা জানেন?
এই মহাবিশ্বের সবকিছু অর্থহীন।>এই বিবৃতির দ্বারা কি বুঝালেন?এই বিবৃতির অর্থ কি?
ইতিহাস সঠিকভাবে জানা সম্ভব না।>এই বিবৃতিটা কি একটু আগে ইতিহাস হয়ে গেল না?
এটা আপনার জন্যে সত্য, আমার জন্যে না।>আপনার এই বিবৃতিটা কি সবার জন্যে সত্য?
মুক্তমনের অধিকারীরা প্রমাণ ছাড়া কিছু বিশ্বাস করেনা।>আপনি কি এই বিবৃতি প্রমাণসহ বিশ্বাস করেছেন?
আপনার নিজেকে নিয়ে আগে চিন্তা করা উচিত।>তাহলে তো আমার এই বিবৃতিটি শোনা উচিত না, তাইনা?
ধর্মে কোনো সত্য নেই। যা আছে কেবল বিজ্ঞানে।>এটা কি বৈজ্ঞানিক সত্য? এই উক্তিটির কোনো পরীক্ষামূলক প্রমাণ নেই।
বিজ্ঞান একসময় সব জেনে যাবে।>বৈজ্ঞানিকভাবে জানলেন? সব জেনে যাওয়ার হিসেব কি বিজ্ঞান দিয়ে দিয়েছে?
কারও কাছে সত্য বলে কিছু নেই।>আপনি তাহলে কি বলছেন? তাহলে আপনার কাছে এই সত্য কিভাবে এবং কোথা থেকে এলো?
আপনাদের নৈতিকতা কখনোই আরেকজনের ওপর চাপিয়ে দেয়া উচিত নয়।>এই নৈতিকতাটা আমার ওপর বা অপরের ওপর চাপিয়ে দেয়া কি উচিত?
সবকিছুকে সন্দেহ করা উচিত।সন্দেহ দিয়ে সবকিছু শুরু করা উচিত।> আমার কি এই বিবৃতিকে সন্দেহ করা উচিত? এই বিবৃতিটাকে কি তাহলে সন্দেহ করতে শুরু করা উচিত না?
অন্যের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি আপনার সহনশীল হওয়া উচিত।> আপনি কি আমার দৃষ্টিভঙ্গীর ওপর সহনশীলতা প্রদর্শন করছেন? আমার দৃষ্টিভঙ্গী তাহলে আপনার সহ্য হচ্ছেনা কেন?
আপনার বিশ্বাস আপনার কাছে রাখুন। একজনের বিশ্বাস আরেকজনের ওপর চাপানো উচিত না।>তাহলে এই বিশ্বাসটি আমার ওপর চাপাচ্ছেন কেন?
দর্শন, অধিবিদ্যা, আধ্যাত্মিকতা ভুয়া জিনিস। অবৈজ্ঞানিক এবং অপ্রমাণিত। কেবল বিজ্ঞানই বিশুদ্ধ।>বিজ্ঞান নিজে কি বৈজ্ঞানিক? বিজ্ঞানকে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করুন তো?
পঞ্চইন্দ্রিয়ের দ্বারা যা লাভ করা যায় না, তার অস্তিত্বের কোনো প্রমাণ নেই।>আপনার এই উক্তিটির ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য কোনো অস্তিত্ব আছে কি? লিখিত বা শ্রবণকৃত উক্তি কন্ঠস্বর বা কলমের কালির প্যাটার্নের অস্তিত্বের প্রমাণ দেয়। উক্তিটির অস্তিত্বের নয়। আপনি যে চিন্তাজগত থেকে বিবৃতিটি দিলেন, তার অস্তিত্বের প্রমাণ দিতে পারবেন?