নাস্তিক্যবাদ কেন ধর্মের নাম?







বিষয়ঃ
নাস্তিক্যবাদ কেন ধর্মের নাম?

লিখেছেনঃ এমডি আলী।

============================

ভূমিকাঃ আপনি নিশ্চয় নাস্তিক্যবাদকে অবিশ্বাস করবেন না যদি আপনি নাস্তিক হয়ে থাকেন। নাস্তিকরা দাবি করে থাকে নাস্তিক্যবাদ নাকি ধর্ম নয়। এমনকি তারা এটাও বলে থাকে মুমিনদের মাথায় নাকি এই কথাটি ঢুকে না যে, ধর্ম ছাড়াও সব কিছুই করা যাবে কিন্তু সেটাকে ধর্ম বলা যাবে না। নাস্তিক্যবাদ যদি ধর্ম হয় তাহলে টাক মাথাকেও চুলের রঙ বলতে হবে-এসব বলেও নাস্তিকরা বিভিন্নভাবে বলার চেষ্টা করে যাচ্ছে যে নাস্তিক্যবাদ ধর্ম নয়। আজকের লেখায় বিশ্লেষণ করা হবে আসলেই নাস্তিক্যবাদ ধর্ম নাকি ধর্ম না। যাচাই করা হবে আসলেই মুক্তমনারা যে দাবি করছে আদও সত্যি কিনা। নাস্তিকরা নিজেদের দাবির পক্ষে যেই যেই যুক্তি গুলো পেশ করে সব গুলো যুক্তি তদন্ত করে বিচার করা হবে আসলেই সেই সব যুক্তি থেকে এটা প্রমাণ করা যায় কিনা যে নাস্তিক্যবাদকে ধর্ম বলা যাবে না। 

নাস্তিক্যবাদ কেন ধর্ম হবে না?

আস্তিকতার বিপরীত হচ্ছে নাস্তিকতা। স্রস্টার অস্তিত্বকে প্রমাণের অভাবে বাতিল করে দেয়াকেই নাস্তিক্যবাদ বলা হয়ে থাকে। নাস্তিকরা যদি এতটুকুর মধ্যে সীমাবদ্ধ হতো তাহলে মানা যেত যে নাস্তিক্যবাদ ধর্ম নয়। কিন্তু খুব কম নাস্তিক পাওয়া যাবে যারা নাস্তিক্যবাদকে নাস্তিক্যবাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে রাখে। নাস্তিকরা যখন অন্য মানুষকে নিজস্ব মুক্তচিন্তা থেকে নীতি নৈতিকতা প্রধান করতে যাবে। মানুষকে নিজেদের ভিডিও দেখিয়ে অনুপ্রাণিত করবে তখন কি আর নাস্তিকতা শুধু মাত্র “স্রস্টার অস্তিত্ব নেই” বিশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে? যখন নাস্তিকরা নিজেদের আদর্শ, নিজেদের বিশ্বাস, নিজেদের নৈতিকতা প্রচার প্রসার করবে তখন যদি বলা হয় নাস্তিক্যবাদ ধর্ম তবে এখানে এটা মেনে নিতে সমস্যা কোথায়?


ধর্ম অর্থটি সঠিকভাবে বুঝতে হবে। নাস্তিকরা এই অর্থটি ঠিকভাবে না বুঝার কারণে তারা আসল ব্যাপারটা ধরতেই পারে না। ধর্ম শব্দটি আসে সংস্কৃত √ধৃ হতে। এই √ধৃ -এর অর্থ 'ধারণ'। 'একজন ব্যক্তি তার জীবনে তার যতো প্রকার বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করে সব মিলিয়ে হয় তার ধর্ম।' তার বিশ্বাস, তার পরম্পরাগত শিক্ষা, তার আচার ব্যবহার ইত্যাদি এই সবই তার ধর্ম। যেভাবে আগুনের ধর্ম দহন করা, পানির ধর্ম শীতলতা,পশুর ধর্ম পশুত্ব, ক্ষুধার ধর্ম খাওরা, পাখির ধর্ম আকাশে উড়া, চোখের ধর্ম দেখা ইত্যাদি। 


হিন্দু,খৃষ্টান,বৌদ্ধ,শিখ,বাহাই ইত্যাদি অন্য ধর্মের মতোই যে সব ধর্ম হতে হবে এমন কোনো বাধ্যতা নেই। আমরা সবাই জানি ধর্ম শব্দের শাব্দিক অর্থ ধারণ করা। আপনি যা ধারণ করবেন সেটাই হবে আপনার ধর্ম। যেমন আমি নাস্তিক্যবাদকে অবিশ্বাস করলেও ইসলামকে ধারণ করি, বিশ্বাস করি। নাস্তিকরা কি নিজেদের নাস্তিক্যবাদকে অবিশ্বাস করে নাকি ধারণ করে? সততার সাথে এর একমাত্র জবাব হবে “হ্যাঁ” নাস্তিকরা নাস্তিক্যবাদকে ধারণ করে। আর নাস্তিক্যবাদই নাস্তিকদের ধর্ম। নাস্তিক্যবাদে হিন্দু ধর্মকে অবিশ্বাস করা হয়, খৃষ্টান ধর্মকে অবিশ্বাস করা হয়, ইসলাম ধর্মকে অবিশ্বাস করা হয়। তাই নাস্তিকরা অন্য সকল ধর্মকে অবিশ্বাস করলেও নিজেদের নাস্তিক্যবাদকে ঠিকই বিশ্বাস করে। এই সহজ কথাটি নাস্তিকরা কেন যে বুঝতে পারে না সেটাই বিরাট প্রশ্ন। যেসব নাস্তিকরা নিজের মূর্খতার জন্য দাবি করছে নাস্তিক্যবাদ ধর্ম না তাদের কাছে প্রশ্ন হচ্ছে আপনি যদি নাস্তিক্যবাদকে বিশ্বাস না করেন, ধারণ না করেন তাহলে আপনি কিভাবে নাস্তিক হোন? নাস্তিকরা নাস্তিক্যবাএ বিশ্বাস করে নাকি অবিশ্বাস?

নাস্তিকদের গোঁজামিলের যৌক্তিক খণ্ডনঃ

নাস্তিক্যবাদকে ধর্ম বলতে নারাজ এমন কতিপয় নাস্তিকরা কিছু কুযুক্তি দিয়ে বোঝাতে চায় নাস্তিক্যবাদ ধর্ম নয়। আসুন প্রথমে জেনে নেই তাদের কুযুক্তি যুক্ত প্রশ্ন এরপরে খণ্ডন করা হবে।

যদি নাস্তিকতা ধর্ম হয় তাহলে অফ বাটনকে টিভি চ্যানেল বলতে হয়, টাককে বলতে হয় চুলের রঙ,ষ্ট্যাম্প না জমানোকে ছবি বলতে হয়,বাগান না করাও একটি শখ, ক্রিকেট না খেলাও একটি খেলা,মদ সেবন না করাও একটি নেশা বলে হয় আপনি কি মানবেন?

নাস্তিকরা বোঝাতে চায় যেহেতু অফ বাটনকে টিভি চ্যানেল বলা হয় না,টাককে চুলের রঙ বলা হয় না,ষ্ট্যাম্প না জমানোকে ছবি বলা যায় না, বাগান না করাকেও শখ বলা যায় না, ক্রিকেট না খেলাকে একটি খেলা বলা হয় না তেমনি নাস্তিক্যবাদকেও ধর্ম বলা হয় না অথবা যাবে না। একটু খেয়াল করলে বুঝবেন অফ বাটনকে টিভি চ্যানেল বলা না হলেও নাস্তিকরা কি কোনো চ্যানেল দেখে না? টাককে চুলের রঙ না বলা হলেও রঙ বলে কি কিছুই নাই? ষ্ট্যাম্প না জমানোকে ছবি বলা হয় না দেখে কি ছবি বলে কিছু নেই? বাগান না করাকেও শখ বলা হয় না তারমানে কি নাস্তিকদের কোনো শখই নাই? ক্রিকেট না খেলাও একটি খেলা না কিন্তু খেলা বলে কি কিছুই নাই?

নাস্তিকরা আসলে বোঝেই না কেন দাবি করা হয় নাস্তিক্যবাদ একটি ধর্ম। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে হিন্দু ধর্মের মতো নাস্তিক্যধর্ম নয়। খৃষ্টান ধর্মের মতো নাস্তিক্যধর্ম নয়। শিখ ধর্মের মতো নাস্তিক্যধর্ম নয়। ইসলামের মতো নাস্তিকতা নয়। নাস্তিক্যবাদ নাস্তিক্যধমের মতো। নাস্তিকরা যেভাবে বলে ধর্ম ছাড়াও নৈতিক হওয়া যায় সেভাবে অন্য ধর্মের মতো হওয়া ছাড়াও নাস্তিক্যবাদকে ধর্ম বলা যায়। নাস্তিকরা যা যা চিন্তা করে, যা যা ধারণ করে সব কিছুর সমষ্টিকেই ধর্ম বলা যাবে। তাছাড়া মদ সেবন না করাও একটি নেশা। এটা সেই লোকের ভালো নেশা যে মদ খায় না। যেমন আমি সিগারেট খাই না এমনকি এর দুর্গন্ধও আমি সহ্য করতে পারি না-এই না পারাটাই আমার ভালো নেশা।

কেউ যদি অফ বাটনকে টিভি চ্যানেল না বলে বা টাককে চুলের রঙ কেউ না বলে অথবা ষ্ট্যাম্প না জমানোকে ছবি না বলে তারমানে এই না যে নাস্তিক্যবাদকে ধর্ম বলা যাবে না। নাস্তিকতাকে ধর্ম বলতে হলে কেন বলতে হবে যে "অফ বাটনকে টিভি চ্যানেল" বা "টাককে চুলের রঙ" বা "ষ্ট্যাম্প না জমানোকে ছবি? নাস্তিক্যবাদ ধর্ম হওয়া অথবা না হওয়ার মধ্যে এসবের কোনো সম্পর্কই নাই।

বাগান না করাকে শখ যদিও বলা যায় তাতে তেমন কোনো সমস্যা নাই। যেমন কেউ বাগান করে না এটাই তার শখ। এরপরেও যদি ধরে নেই বাগান না করাকে শখ বলা যাবে না কিন্তু তার অর্থ কি এটা যে আর কোনো শখ নেই আপনার? আপনি যেমন বাগান না করাকে শখ বলেন না কিন্তু আপনার নিজের অন্য শখ তো ঠিকই থাকতে পারে। কি ভুল বললাম? আপনার সাহিত্য পাঠের শখ থাকতে পারে, আপনার ইসলামবিরোধীতা করবার শখ থাকতে পারে,আপনার নাস্তিক্যবাদ চর্চার শখ থাকতে পারে। কি পারে না?

নাস্তিকতা ধর্ম হলে বোবা লোককেও ভাষাবিদ ডাকতে হবে,দাতবিহীন লোককে দাত আছে বলতে হয়, উপোস থাকাকেও এক ধরনের খাদ্যগ্রহন বলতে হয় , চাকরি না করাটাও একটি পেশা বলতে হয়, বই না পড়াকেও পাঠাভ্যাস বলতে হয়, পোশাক খুলে ফেলাটাও এক ধরনের পোশাক পরিধান বলতে হয় , চশমা না পরাটাও এক ধরনের সানগ্লাস ফ্যাশন বলতে হয়, সারাজীবন বিয়ে না করাটাও এক প্রকার বিয়ে বলতে হবে , নির্লোভ থাকার চেষ্টাকেও এক ধরনের লোভ বলতে হবে, রোগবিহীন মানুষকেও এক ধরনের রোগ বলতে হবে।

আপনার কি জানা নাই বোবা লোকদের জন্য সাইন ল্যাংগুয়েজ আছে? দাতবিহীন লোককে দাত আছে বলা না হলেও যার দাত নাই সে কি নকল দাত মুখে লাগায় না? উপোস হওয়াকে খাদ্য গ্রহণ না বলা হলেও নাস্তিকরা কি অন্যান্য খাদ্য খান না? চাকরি না করাটিও একটি পেশা বলা না হলেও মানুষ কি অন্য চাকরি করে না? বই না পড়াকেও পাঠাভ্যাস বলা হয় না কিন্তু নাস্তিকরা কি কোনো বইই পড়ে না? এভাবে পোশাক খুলে দিয়েও মানুষ অন্য পোশাক ঠিকই পরিধান করে। চশমা না পরেও মানুষ অন্য চশমা ব্যাবহার করতে পারে। বিয়ে না করাকে বিয়ে বলা হয় না কিন্তু মানুষ বিয়ে করে। রোগবিহীন মানুষকে রোগী না বলা হলেও মানুষের কিন্তু রোগ হয়। নির্লোভ থাকার চেষ্টাকেও এক ধরনের লোভ বলা হয় না কিন্তু মানুষের নানান লোভ থাকতে পারে। তেমনি ভাবে নাস্তিকরা অন্য ধর্ম যেমন হিন্দু ধর্ম, খৃষ্টান ধর্ম, ইসলাম ধর্ম এসব ধর্ম বিশ্বাস করে না কিন্তু এরপরেও নাস্তিকদের নিজস্ব ধর্ম আছে, নিজস্ব নৈতিকতা আছে, নিজস্ব চিন্তা চেতনা আছে যার সমষ্টিকেই যৌক্তিক কারণে নাস্তিক্যধর্ম বলা যাবে। বলতে হবে।

নাস্তিকতা হচ্ছে যে স্রষ্টার প্রমানের অভাবে , স্রষ্টা বিষয়ে যত দাবিগুলা আছে তা বাতিল করে দেয়াকে বলে নাস্তিকতা বা নাস্তিক্যবাদ। এখন আর সাথে কে কার সাথে ঘুমাবে, বন্ধুত্ব করবে তার কোনো সম্পর্ক নেই। অন্য মানুষ কে কি করলো সেটি নিয়ে নাস্তিকতা ডিল করে না। যেমন ধরুন ফুটবল খেলার কিছু নিয়ম আছে এখন এই খেলা বলছে না যে কানিজ নামক আরেক নারীবাদী মাতুব্বরের রাত কাটাবে কি কাটাবে না। এই বিষয়ে ফুটবল খেলার নিয়ম কানুনে তার বক্তব্য নাই । মানুষ যাই করবে সেটা তার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। এটা নিয়ে ফুটবল খেলা ডিল করে না। এই দুটি আসলে ভিন্ন ব্যাপার।

এই কথা গুলোর সাথে একমত পোষণ করা যেত যদি আমরা নাস্তিকদেরকে দেখতাম অন্য ধর্মে কি বলা আছে কি বলা নাই সেসব নিয়ে ডিল না করতে। কে দাসী সেক্স করেছে, কার চারটা বউ, কার এগারটা বউ, কে যুদ্ধ করেছে ইত্যাদি ব্যাপারে আমরা যদি দেখতাম নাস্তিকরা কথা বলছে না তাহলে এটা বলা যেতো যে নাস্তিকদের সাথে ধর্মের সম্পর্ক নাই। কিন্তু নাস্তিকরা যখন অন্যকে নীতি নৈতিকতা বিশ্বাস করাতে চাচ্ছে, মানুষকে ইসলাম ত্যাগ করিয়ে কৌশলে নাস্তিক্যবাদ বিশ্বাস করাতে চাচ্ছে তখন অবশ্যই যৌক্তিক কারণে নাস্তিকদের কর্মকাণ্ডের সমষ্টিকে নাস্তিক্যধর্ম বলতে বাধ্য হতেই হচ্ছে। ফুটবল খেলার নিয়ম এটা বলে না যে আপনি কার সাথে কি করবেন অথবা করবেন না কিন্তু কোনো ফুটবল খেলোয়াড় যখন অন্য মানুষদেরকে সংশয়ের নামে নিজস্ব বিশ্বাস, নিজস্ব চিন্তা, নিজস্ব চেতনাকে প্রচার করবে তখন কেউ যদি বলে তোমার ধর্মে কি কি সমাধান আছে তখন এই প্রশ্ন কেন অযৌক্তিক হবে? ফুটবল খেলোয়াড় যদি সংশয়ের নামে ধর্মের বিরোধীতা করে নিজের ফুটবল খেলার নিয়মকে কৌশলে মানুষের কাছে প্রচার করতে থাকবে তখন যদি তাকে প্রশ্ন করা হয় তাহলে সমস্যা কোথায়?

মানুষ যাই করবে সেটা তার ব্যাক্তিগত ব্যাপার-এই কথায় যদি নাস্তিকরা আসলেই বিশ্বাস করতো তাহলে মুসলিমরা নাস্তিকদের কাছে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে এলেও নাস্তিকরা ইসলামের বিরুদ্ধে সমালোচনা করতে পারতো না কারণ নাস্তিকদের বিশ্বাস হচ্ছে যাই করুক সেটা তার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। নাস্তিকদের বিশ্বাসের বৈপরীত্যটা ধরতে পেরেছেন? তাছাড়া নাস্তিক্যবাদ যদি ধর্ম না হয়েই থাকে তাহলে মানুষ কেন বিশ্বাস করবে যে নাস্তিক্যবাদকে ধর্ম বলতে হলে আপনাকে অফ বাটনকে টিভি চ্যানেল বলতে হবে? টাককে বলতে হবে চুলের রঙ? ষ্ট্যাম্প না জমানোকে ছবি? বাগান না করাও একটি শখ? ক্রিকেট না খেলাও একটি খেলা? মদ সেবন না করাও একটি নেশা?

“নাস্তিক্যবাদকে ধর্ম বলা যাবে না” এই বিধানটাই, এই নিয়মটাই, এই বিশ্বাসটাই আসলে প্রমাণ করবার জন্য যথেষ্ট যে নাস্তিক্যবাদ আসলেই ধর্মের নাম। নাস্তিকতাকে যদি ধর্ম বলা না যায় তাহলে নাস্তিকরা কিসের ভিত্তিতে অন্যের নৈতিকতার সমালোচনা করে? কিসের ভিত্তিতে নাস্তিকরা জীবন পরিচালনা করে? মানুষ যাই করবে সেটা তার ব্যাক্তিগত ব্যাপার-যদি তাই হয় তাহলে নাস্তিকরা কেন এটা স্বীকার করে নিচ্ছে না যে কোনো নাস্তিক চাইলে নাস্তিক্যবাদকে ধর্ম বলতে পারবে? নাস্তিকরা ইসলামের সমালোচনা করে। নাস্তিকরা বলে থাকে মুসলিম পুরুষরা দাড়ি রাখতে পারবে না। নাস্তিকরা বলে মুসলিম নারীরা বোরখা পরিধান করতে পারবে না। মুসলিমরা কুরআনে বিশ্বাস করতে পারবে না। এভাবে হাজার হাজার নীতি নৈতিকতা মুক্তচিন্তায় নাস্তিক্যধর্মের অনুসারীরা প্রচার করে যাচ্ছে তারপরেও নাকি নাস্তিক্যবাদকে ধর্ম বলা যাবে না।

নাস্তিকরা বলে থাকে,নাস্তিকতা কোনোকিছুই দাবি করে না, কোনোকিছুই বিশ্বাস করতে বলে না। কোনো আদেশ করে না, কোনো নিষেধ করে না, কোনো রীতিনীতি পালন করতে বলে না। এটা কেবলই ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাসের অনুপস্থিতি আর কোনোকিছুর অনুপস্থিতিকে কোনোভাবেই একটি ধর্ম বলা যায় না। একজন নাস্তিক কেবল ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস না করা বা ঈশ্বর আছে মনে না করার জন্যই নাস্তিক। কোনোকিছু না করার জন্য কোনোভাবেই একজন মানুষ ধার্মিক হয়ে যায়না।

প্রশ্ন হচ্ছে নাস্তিক্যবাদে নাস্তিকরা অবিশ্বাস করে নাকি বিশ্বাস? “স্রস্টার অস্তিত্ব নেই” এই কথায় কি নাস্তিকরা বিশ্বাস করে নাকি অবিশ্বাস? নাস্তিক্যবাদের পক্ষে প্রমাণ নাই? নাস্তিকরা কি মানুষকে মানব ধর্মে বিশ্বাস করাতে চায় না? নাস্তিকরা কি চায় না দুনিয়ার সব মানুষ নাস্তিক হয়ে মুক্তচিন্তা করতে জানুক? এসব কি ভালো নাকি মন্দ? তাহলে নাস্তিকরা কেন মানুষের সামনে অন্য মতবাদের সমালোচনা করে? কেন নাস্তিকরা চায় অন্য মানুষরা ইসলাম ত্যাগ করে মুক্তবুদ্ধির চর্চা করুক? নাস্তিকরা কেন সমালোচনা করবে তাহলে? যদি এখানে নাস্তিকরা বলে তারা এসব চায় না তাহলে নাস্তিকদের সব ভিডিও, সকল সাইট নাস্তিকরা কেন বন্ধ করে দিচ্ছে না? মুক্তমনার নামে, সংশয়ের নামে ইসলামবিরোধীতা করে মানুষকে নাস্তিক্যবাদ বিশ্বাস করাতে চাইবেন আর বলবেন নাস্তিকতা কিছু দাবি করে না, নাস্তিকতার নীতি নেই-এই ধান্দাবাজি আর কত করবেন?


নাস্তিকরা কেন স্বীকার করতে চায় না?

কারণ নাস্তিকরা খুব ভালো করেই জানে মানুষের সামনে যদি নাস্তিক্যবাদকে ধর্ম বলা হয় তাহলে মানুষ সহজেই নাস্তিকদের সকল দৃষ্টিভঙ্গি, সকল ধান্দাবাজি সহজেই বুঝে যাবে। কিছু নাস্তিক এও মনে করতে পারে যে আমি যেখানে সারাদিন ধর্মের বিরুদ্ধে বলি সেখানে আমি নিজেই নাস্তিক্যধর্মে সীমাবদ্ধ হয়ে আছি। নাস্তিকদের জ্ঞান নাস্তিক্যধর্মে সীমাবদ্ধ, ডারউইনবাদে আড়ষ্ট,মুক্তচিন্তার ভাইরাসে নাস্তিকরা আক্রান্ত। মুক্তি কিভাবে সম্ভব হবে সেখানে?

নাস্তিকরা বিশ্বাস করে মহাবিশ্বকে কেউ সৃষ্টি করে নাই। নাস্তিকরা বিশ্বাস করে ডারউইনবাদ সঠিক। নাস্তিকরা বিশ্বাস করে মৃত্যুর পরবর্তী জীবন বলে কিছু নাই। নাস্তিকরা বিশ্বাস করে মুক্তচিন্তায়। নাস্তিকরা বিশ্বাস করে ব্যক্তিস্বাধীনতায়। নাস্তিকরা বিশ্বাস করে তার যেভাবে ইচ্ছে সেভাবেই চলবে কেউ তাদেরকে বাধা দিবে না। নাস্তিকরা বিশ্বাস করে মানুষের আদি পুরুষ মানুষ ছিল না। নাস্তিকরা চায় মানুষ তাদের মতো চিন্তা করতে পারুক। নাস্তিকরা চায় মানুষ অন্য ধর্ম ছেড়ে সেচ্ছায় নাস্তিক্যধর্ম গ্রহণ করুক। নাস্তিকরা মুসলিমদেরকে বিধান দেয় যে একজন পুরুষ চারজন স্ত্রী বিয়ে করতে পারবে না। দাসী সহবাস করা ঠিক না। কিন্তু এই নাস্তিকরাই আবার বলে সম্মতি থাকলে নিজের মায়ের সাথেও নাকি যৌনচর্চা করাতে সমস্যা নাই। নিজের বাবার সাথে সমকামীতা কোনো নাস্তিক চাইলে করতে পারবে। এতো এতো কিছু নাস্তিকরা বিশ্বাস করে, ধারণ করে–এরপরেও নাস্তিক্যবাদ কিভাবে নাকি ধর্ম হয় না? নাস্তিক্যধর্মের বিশ্বাসকে মানুষের সামনে কিভাবে প্রচার করে নাস্তিকরা নিজেরাই দেখুন।



শাব্দিক বিশ্লেষণ ও যৌক্তিক সিদ্ধান্তঃ

নাস্তিকদের মস্তিস্কে গভীর যৌক্তিক বিশ্লেষণের সক্ষমতা নেই। নিচের অর্থ গুলো মনোযোগ দিয়ে পাঠ করলে যে কেউই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হবে না। আসুন প্রথমে মন দিয়ে প্রতিটি শব্দের অর্থ বুঝে নেবার চেষ্টা করি।

ধর্ম শব্দের ইংলিশ শব্দ যথাক্রমে Faith , Duty , Morality , Law , Character। এই ইংলিশ শব্দের অর্থ করলে হয় faith অর্থ আস্থা। Duty অর্থ দায়িত্ব।  Morality অর্থ নৈতিকতা। law অর্থ নিয়ম কানুন। Character অর্থ চরিত্র(১)। Religion শব্দের অনেক অর্থ আছে এর মধ্যে ধর্মবিশ্বাস এবং বিবেকের বিষয় অর্থ অন্যতম। আবার Religious আরেক অর্থও হলো বিবেকী(২)।“ধারণ” এর ইংলিশ শব্দ হচ্ছে Supporting(৩)। কোনো কিছু সমর্থন করাই হচ্ছে ধারণ। √ধৃ+ম = ধর্ম(৪)। আবার বলা হয়েছে ধৃ মান ধারণ করা। সুতরাং ধর্ম মানে ধারণ করা(৫)। নাস্তিক মানে হলো ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না এমন, নিরীশ্বরবাদী(৬)। Reliable শব্দের অর্থ নির্ভরযোগ্য, বিশ্বাসযোগ্য(৭)। Belief শব্দের অর্থ বিশ্বাস ,আস্থা। আবার Believe শব্দের অর্থও বিশ্বাস করা ,আস্থা রাখা(৮)। 

 যৌক্তিক কারণেই বলতে হবে, নাস্তিকরা নাস্তিক্যবাদকে ধারণ করে,বিশ্বাস করে। নাস্তিক্যবাদের উপর নাস্তিকরা আস্থা রাখে, ভরসা রাখে। অন্য সব ধর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়াতে এটা স্পষ্ট যে নাস্তিকরা চায় মানুষ সব ধর্ম ত্যাগ করে নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাস আনুক। প্রতিটি নাস্তিকদের নিজস্ব নৈতিকতা রয়েছে, আছে চরিত্র, রয়েছে নিয়ম কানুন। প্রতিটি নাস্তিক নাস্তিকতাকে নির্ভরযোগ্য এবং বিশ্বাসযোগ্য মনে করে। নাস্তিকরা নিজেদেরকে বিবেকময় বা বিবেকবান দাবি করে থাকে। সার্বিক যৌক্তিক বিশ্লেষণ করলে নাস্তিকদের সকল চিন্তাভাবনা ও কর্মকাণ্ডের সমষ্টিকেই নাস্তিক্যধর্ম বলা হয়।

বিজ্ঞানমনস্ক নাস্তিক অভিজিৎ রায় এর লেখা “সমকামিতা” বইয়ের নবম অধ্যায়, ১৭২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

ধর্ম নামক বিষয়টির ব্যাপকতা আজকের দিনে বহুমাত্রিক এবং বিশাল। একেক ভাষায় এর ভাবার্থ একেক রকম। ইংরেজিতে প্রােপার্টি অর্থে যে ভাবে এটিকে ব্যবহার করি, বাংলায়ও অনুরূপ বস্তুর গুণ বােঝাতে আমরা ধর্মকে ব্যবহৃত হতে দেখেছি বহুক্ষেত্রেই। যেমন আমরা বলি, আলাের ধর্ম ‘ঔজ্বল্য’, আগুনের ধর্ম ‘দহন’ ইত্যাদি। ধর্ম শব্দটির বুৎপত্তি ঘটেছে সংস্কৃত 'ধূ' ধাতু থেকে। ধৃ ধাতুর সাথে 'ম' প্রত্যয় যােগ করে ধর্ম শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। কাজেই আক্ষরিক অর্থে সংজ্ঞায়িত করতে গেলে ‘যা ধারণ করে থাকে তাই ধর্ম'। তবে এই ‘ধারণ করার সংজ্ঞাতেই ধর্মের ব্যপ্তি আটকে থাকেনি। ইংরেজি ‘রিলিজিয়ন' শব্দটির বাংলাও আমরা করেছি -ধর্ম, যার অর্থ প্রােপার্টি হতে ভিন্ন। কাজেই বাংলাভাষায় প্রােপার্টি এবং রিলিজিয়নের জন্য আলাদা আলাদা শব্দ ব্যবহৃত হয়নি। দুটোকেই ‘ধর্ম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে অধুনা এ দুটি শব্দের পার্থক্য বােঝাতে অনেকে রিলিজিয়নের শব্দার্থ করেছেন ‘উপাসনা ধর্ম'। অর্থাৎ ঈশ্বর উপাসনা, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের সাথে জড়িয়ে থাকা মানুষের যে আধ্যাত্মিক ক্রিয়াকাণ্ড তাকেই বলা হয়েছে মানুষের উপাসনা ধর্ম বা রিলিজিয়ন। এই অর্থে ইসলাম, খ্রস্টিয়, হিন্দু এমন কি বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মকেও উপাসনা ধর্ম বা রিলিজিয়ন হিসেবে গণ্য করতে পারি। তবে ‘রিলিজিয়ন’ তথা ধর্মের মূল ভিত্তি হলাে ব্যক্তি ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস, যদিও বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মের মত ‘নিরীশ্বরবাদী’ দর্শনগুলাে এই সংজ্ঞার বাইরেই পড়বে।

ঐতিহাসিক প্রমাণ ও নাস্তিকদের স্বীকারোক্তিঃ

নাস্তিকদের কাছে ঐতিহাসিক প্রমাণ দিলেও তারা মেনে নিতে চায় না। সত্যি গ্রহণ করতে নাস্তিকদের এতো অনীহা কেন? আসুন ইতিহাস থেকে প্রমাণটি দেখে নেই।

গবেষক ও চিন্তাবিদ গোলাম মোস্তফা তার "ইসলাম ও কমিউনিজম" বইয়ের ৮৭ ও ৮৮ নং পৃষ্ঠায় Pan-Islamism and Bolshevism বই পৃষ্ঠা ৪১৬ ও ৪১৭ এর রেফারেন্স উল্লেখ করে বর্ণনা করেছেনঃ

লেনিনের মৃত্যুর পর নাস্তিকতাই সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজধর্ম হয়েছিল। লেলিনের মৃত্যুর পর মে, ১৯২৯ সালে নাস্তিকতাকে সোভিয়েত ইউনিয়নের "রাজ ধর্ম" অর্থাৎ "রাজকীয় ধর্ম" বলে ঘোষণা করা হয় এবং নাস্তিকদের নিজেদের মত প্রচার করার একচেটিয়া অধিকার দিয়ে একটি রাজকীয় ফরমান (বিধান) জারি করা হয়। অতএব সোভিয়েত সরকার দ্রুত শিক্ষা সচিবকে ধর্মহীনতা প্রচার করার একটি নতুন "ইনস্পেটকর" বিভাগ খোলার নির্দেশ দেন। এই বিভাগের কাজ ছিলঃ নতুন নতুন বিধান সর্বত্র চালু করা , গির্জার স্বাধীনতা খর্ব করা এবং কোন প্রকার ধর্ম বিষয়ক প্রচারণা যাতে কেউ চালাতে না পারে।

নতুন সংস্করণের ছবি তুলে দিচ্ছি দেখুন।


নাস্তিকদের কাছে খুবই পরিচিত একটি বইয়ের নাম হচ্ছে “অবিশ্বাসের দর্শন” এই বইতেও স্বীকার করা হয়েছে যে নাস্তিকরাও ধার্মিক।

নাস্তিক বিজ্ঞানমনস্ক অভিজিৎ রায় তার "অবিশ্বাসের দর্শন" বইয়ের ৩০৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

আগুনের ধর্ম যেমন দহন, ছুরির ধর্ম যেমন তিক্ষতা তেমনই মানুষের ধর্ম হওয়া উচিৎ মনুষ্যত্বের বিকাশ সাধন আর সে হিসেবে নামাজ না পড়েও বা শনি শীতলার পূজা না করেও আমরা যুক্তিবাদী নাস্তিকেরাই প্রকৃত ধার্মিক কারন আমরা মনুষ্যত্বের চরম বিকাশ চাই।

নাস্তিক রিচার্ড ডকিন্স বলেন তার "RICHARD DAWKIS, THE GOD DELUSION; P. 14 (LONDON: BANTHAM PRESS 2006) বলেনঃ

দার্শনিক বস্তবাদি অর্থে নাস্তিক হলো এমন ব্যক্তি যে বিশ্বাস করে পার্থিব, ভৌত জগতের বাইরে কিছু নেই। কোনো স্রষ্টা নেই যিনি দৃশ্যমান এই মহাবিশ্বের পিছনে চুপিসারে কলকাটি নাড়ছেন। আত্মার কোন অস্তিত্ব নেই যা মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকে, নেই অলৌকিক বলে কোনো কিছু। কেবলই রয়েছে জাগতিক ঘটনাবলী, যা আমরা এখনো বুঝে উঠতে পারি নি।

শহীদ ডঃ আব্দুল্লাহ আযযাম রহ এর লেখা “”লাল কর্কট” বইয়ের, পঞ্চম পরিচ্ছেদ, ৭১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

স্টেলিন ১৯৩৭ সালে বলেছেন, এটা বোধগম্য হওয়া উচিত যে ধর্ম হলো কল্পকাহিনী, আল্লাহর চিন্তা কুসংস্কার নাস্তিকতাই আমাদের ধর্ম।

“লাল কর্কট” বইটি কমিউনিজম সম্পর্কে গবেষণামূলক একটি গ্রন্থ। বইটি অনুবাদ করেছে আব্দুস সত্তার আইনী। কমিউনিস্ট নাস্তিকরা কেমন লেভের বর্বর ছিল জানতে বইটি অবশ্যই সকল সত্য সন্ধানীদের একবার হলেও পড়া দরকার।

অক্সফোর্ড প্রেস থেকে Michale Ruse যিনি নিজেও একজন নাস্তিক। তিনি বইই লিখেছেন এই নামে,

"Darwinism as Religion"

শুধুই যে নাস্তিক্যবাদ ধর্ম তা নয় বরং ডারউইনবাদও ধর্ম।

এককালে সেরা Evolutionary Biologist, Stephen Jay Gould একাধারে হার্ভার্ড এবং নিউ ইয়োর্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন তিনি এই ডারুইনিজম এবং নাস্তিকতার ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কে বলেনঃ 

হয় আমার অর্ধেক সহকর্মীরা হচ্ছে বেকুব, মূর্খ আর নাইলে ডারউইনিজমের বিজ্ঞান, যা পুরোপুরিভাবে ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং নাস্তিকতার সাথে এর সামঞ্জস্যতা পুরোটাই(৯)।

উইকিপিডিয়ায় "সোভিয়েত ইউনিয়ন" বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে । এবং সেখানে রাষ্ট্রীয় ধর্ম নাস্তিক্যবাদ উল্লেখ করা হয়েছে। আসুন সরাসরি ছবিটি দেখে নেই।



সন্ত্রাসী নাস্তিক ভ্লাদিমির লেনিন এর ধর্মও ছিল নাস্তিকতা। আসুন ছবিটি দেখে নেই।



"Religion in Russia" তে “নাস্তিকতা” কে অন্যান্য ধর্মের সাথে উল্লেখ করা হয়েছে। আসুন সরাসরি ছবিটি দেখে নেই।



"ENCYCLOPÆDIA BRITANNICA" তেও অন্য ধর্মের সাথে নাস্তিকতাকেও অ্যাড করা হয়েছে। দেখুন "Religious affiliation 2005" চার্টে অন্য ধর্মের সংখ্যা বর্ণনা করতে গিয়ে নাস্তিকতা বিশ্বাসীদের সংখ্যা সবুজ রং দিয়ে দেখানো হয়েছে(১০)।



নাস্তিকদের গির্জাও রয়েছেঃ

বাংলাদেশের নাস্তিক গুলো আসলে পড়াশোনা করে না। মুক্তচিন্তায় মূর্খতাই আজীবন চর্চা করে যেতে চায়। নাস্তিকদের জন্য যে চার্চ রয়েছে এটা অনেক নাস্তিক মূর্খরা জানেই না।


মাইক আউস যিনি একজন নাস্তিক। উনি বলেছেন(১১),

“Just because you don’t believe in God does not mean you do not need to get together in community and draw strength from that,” said Mike Aus, a onetime Lutheran pastor who is now an atheist and founder of Houston Oasis.

ভাবানুবাদঃ "কেবল আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না তার মানে এই নয় যে আপনার সম্প্রদায়ে একত্রিত হওয়ার এবং সেখান থেকে শক্তি অর্জন করার দরকার নেই," বলেছেন মাইক আউস, একজন এক সময়ের লুথারান যাজক যিনি এখন একজন নাস্তিক এবং হিউস্টন ওয়েসিসের প্রতিষ্ঠাতা।

চার্চের নাম দিয়েছে “হোউস্টোন নাস্তিক চার্চ” অথচ এই লোক নিজেই আবার বলছে একে নাকি নাস্তিক চার্চ বলা যাবে না। তার নাকি নতুন নতুন লক্ষ্য আছে। যাই হোক নাস্তিক চার্চের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আপনারা সরাসরি লিংক থেকে পড়ে নিবেন। এছাড়া ঈশ্বরহীন গির্জা রয়েছে(১২)। যেখানে বিভিন্ন নাস্তিকরা একত্রিত হয়। তারা আনন্দ করে। জ্ঞান গায়। একে অপরের সাথে বার্তালাপ করে ইত্যাদি।

যেই ধর্মে স্রস্টাকে অবিশ্বাস করা হয়ঃ

নাস্তিকরা মনে করে ধর্ম মানে স্রস্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস করা লাগবে। কিন্তু কথাটি সঠিক না। আমরা এমন অনেক উদাহরণ পাই যেখানে স্রস্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস করা হয় না এরপরেও সেটাকে ধর্ম বলা হয়। যেমন শিন্তো ধর্ম(১৩)।

জাপানের স্থানীয় এবং অনানুষ্ঠানিক একটি রাষ্ট্রীয় ধর্ম শিন্তো। এই ধর্মের অনুসারীরা কোনো ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না। তাদের কোনো ধর্মপ্রচারক বা ধর্মগুরু নেই। পরকালেও বিশ্বাস করেন না তারা। মজার বিষয় হলো শিন্তোদের কোনো  ধর্মগ্রন্থও নেই। এই ধর্মের মূল কথাই হলো, সৃষ্টিকর্তা বলতে কেউ নেই, তবে কিছু স্বাধীন আত্মা বা স্বর্গীয় স্বত্ত্বা আছেন, যাদের নাম ‘কামি’। এই কামিরা পৃথিবীর মানুষের কল্যাণকামী। তাই মানুষের উচিৎ তাদের পূজা করা, বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে খুশি রাখা। এ ধর্মের মন্দিরগুলোয় কোনো বৃহৎ লোক সমাগম হয় না। বরং অধিকাংশ মানুষের বাড়িতেই ছোট্ট একটি মন্দির থাকে। সেখানেই তারা পূজা করে। যেহেতু শিন্তো ধর্মের কোনো বাঁধাধরা নিয়মকানুন নেই, তাই যে কেই চাইলেই এ ধর্মের অনুসারী হতে পারেন। জাপানজুড়ে ৮১ হাজার শিন্তো মন্দির রয়েছে, যেগুলোতে শিন্ত ধর্মাবলম্বীর চেয়ে সাধারণ মানুষের আনাগোনাই বেশি। পৃথিবীতে এ ধর্মের অনুসারী রয়েছে প্রায় ৪০ লাখ। এদের প্রায় সবারই বাস জাপানে।

বৌদ্ধ ধর্ম এমন একটি ধর্ম যেখানে স্রস্টার অস্তিত্ব নিয়ে তেমন কিছু বলে না(১৪)। যারা বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী তাদেরকে নাস্তিক বললে কিভাবে ভুল হবে? স্রস্টার অস্তিত্ব করাকে যদি নাস্তিকতা বলা হয় তাহলে বৌদ্ধ ধর্মের লোকেরা স্রস্টায় বিশ্বাস করে না। তাহলে তাদেরকেও কেন নাস্তিক বলা যাবে না? বৌদ্ধ ধর্মের লোকদেরকে নাস্তিক বলা যেতেই পারে।

Buddhists do not believe in any kind of deity or god, although there are supernatural figures who can help or hinder people on the path towards enlightenment.

ভাবানুবাদঃ বৌদ্ধরা কোনো ধরনের দেবতা বা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না, যদিও এমন কিছু অতিপ্রাকৃত ব্যক্তিত্ব আছে যারা মানুষকে জ্ঞানার্জনের পথে সাহায্য করতে বা বাধা দিতে পারে।

অভিজিৎ রায়ের “সমকামিতা” বইয়ের ১৮৩ ও ১৮৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

৫৬৬ খ্রীস্টপূর্বাব্দে গৌতম বুদ্ধের জন্ম। তিনি বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা। এই ধর্ম (কিংবা দর্শন) ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে তেমন মাথা ঘামায়নি, বরং বুদ্ধের মতে অতৃপ্ত বাসনাই জাগতিক দুঃখের অন্যতম কারণ। এই অতৃপ্ত বাসনার জন্যই মানুষকে পুনর্জন্মের মাধ্যমে পুনরায় ধরাধামে জন্ম নিতে হয়। তাই বাসনা নিবৃত্তির মধ্যেই রয়েছে দুঃখ দূরীকরণের উপায়। তিনি এই অবস্থাকে বলেছেন নির্বাণ লাভ'। তবে নির্বাণ লাভের জন্য সব কিছু বাদ দিয়ে কেবল কৃচ্ছসাধনাকে বৌদ্ধ ধর্মে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। প্রচুর ভােগবিলাস যেমন কামনা বাসনার নিবৃত্তি ঘটাতে পারে না, তেমনি কঠোর কৃচ্ছতাসাধনের মধ্য দিয়েও তা সম্ভব হয় না। যৌনতার সাথে কামনা বাসনার সম্পর্ক গভীরভাবে যুক্ত। অতিরিক্ত যৌনসম্ভোগকে তাই বৌদ্ধধর্মের অনুসারীদের অনেকেই। নির্বান লাভের পথে অন্যতম বাধা বলে মনে করে। সমকামিতা যৌনতারই একটি বিশেষ দিক। তা সত্ত্বেও বৌদ্ধ ধর্ম সমকামিতা সম্বন্ধে আশ্চর্যজনক ভাবে নীরব। বিমলাকৃতিনির্দেশে বর্ণিত কিছু কাহিনী ছাড়া (অষ্টম অধ্যায় দ্রঃ) বৌদ্ধ সাহিত্যে সমকামিতার তেমন কোনাে উল্লেখ আমরা পাইনা। কিন্তু ধর্ম বা সাহিত্যে খুব বেশি কিছু থাকলেও প্রায় সব দেশেই বৌদ্ধ ধর্মীয়দের মধ্যে সমকামিতার অস্তিত্ব দেখা যায়। এমনকি আছে মঠবাসী সন্ন্যাসীদের মধ্যেও

এটা বলাই যায় নাস্তিক্যবাদকে ধর্ম হতে হলে যে নাস্তিকদেরকে স্রস্টায় বিশ্বাস করতে হবে, ধর্মীয় গ্রন্থ থাকতে হবে এটা জরুরি না। যদিও নাস্তিক্যবাদের সাথে স্রস্টাহীন ধর্মের বেশ অমিল রয়েছে। স্রস্টায় বিশ্বাস না করেও, ধর্মীয় গ্রন্থ না থাকা সত্ত্বেও একজন মানুষ ধর্মে বিশ্বাসী হতে পারে। নাস্তিকরা যেভাবে বলে ধর্ম ছাড়াও একজন মানুষ নৈতিক হতে পারে তেমন ব্যাপারটা।

গবেষক ও লেখক ডঃ মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম লিখিত “প্রাচ্যের রাষ্ট্রচিন্তা” বইয়ের ২২০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

‘কনফুসিয়াস কোন ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেন নি। সাম্প্রতিককালে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, তার ঘনিষ্ঠ অনুসারীরা নিরীশ্বরবাদী নাস্তিক (Atheist) ছিলেন। কিন্তু তারা অভিভাবকের প্রতি সন্তানের যথার্থ আচরণ নীতির উপর একটি ধর্মের ভিত্তি স্থাপন করেন। তারা এরূপ আচরণ রীতির তিনটি পর্যায় নির্দেশ করেন। কারাে নিজে এ আচরণ দ্বারা তার পিতামাতাকে গৌরবান্বিত করা; মাতাপিতার নামের অবমাননা না করা এবং মাতাপিতাকে সময় স্বাচ্ছন্দ্য দান করা। ‘অভিভাবকের প্রতি সন্তানের যথার্থ আচরণনীতি এক সত্যিকার ধর্মে পরিণত হয়, যখন কাউকে তার পিতামাতার চিন্তা না করে এক পাও না ফেলতে, একটি শব্দও উচ্চারণ না করতে বলা হয়। মাতাপিতার কথা স্মরণ করার শিক্ষা জাত। ধর্মে সাধারণভাবে নির্দেশিত কোন দেবতার প্রতি শ্রদ্ধাবােধের স্থান লাভ করে। ..... এভাবে স্রষ্টায় বা দেবতায় বিশ্বাস ছাড়াই কনফুসিয়ানিজম বা কনফুসীয় ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হয়।

তবে এই বিষয় যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন কনফুসিয়াস ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন আবার কারো কারো মতে করতেন না। তবে নাস্তিক মুক্তমনা হুমায়ুন আজাদের লেখা অন্যতদ একটি বইয়ের নাম হচ্ছে “কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ” এই বইয়ের ৩৮ পৃষ্ঠায় অ্যাডকে ধর্ম বলা হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন করা যেতেই পারে অ্যাড যদি ধর্ম হয় তাহলে নাস্তিক্যবাদ কেন ধর্ম হতে পারবে না?



আরজ আলী মাতুব্বর স্পষ্ট করে বলেছিলেন যে তার ধর্ম মানবতাবাদ। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে মানবতাবাদকে যদি ধর্ম বলা যায় কেন ও কিভাবে তাহলে নাস্তিক্যবাদকে ধর্ম বলা যাবে না? আরজ আলী মাতুব্বর রচনাসমগ্র ১, প্রথম খণ্ড, ১২ নং পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,


এতো এতো প্রমাণ ও শক্তিশালী যুক্তি থাকা সত্ত্বেও যদি নাস্তিকরা সত্যিটা স্বীকার করতে না চায় তাহলে আর কিছুই বলার নেই। এমনকি নাস্তিকদের ফেসবুক আইডি চেক করা হলে, রিলিজিয়াস ভিউ অপশনে চেক করলে দেখবেন “Militant Atheist” অথবা হিউমেনিজম লিখা। নাস্তিক্যবাদকে ধর্ম বলা হলে মন্দ হবে এমন দাবি তো কেউই করছে না। নাস্তিকরা যদি স্বীকার করে নেয় নাস্তিক্যবাদ ধর্ম তাহলে সমস্যা কোথায়? সকল তথ্য-প্রমাণ ও যৌক্তিক বিশ্লেষণ সামনে রাখলে এটা স্পষ্ট যে নাস্তিক্যবাদ অবশ্যই ধর্ম। কেউ স্বীকার করুক বা না করুক। যুক্তিবাদীরা সহজেই নাস্তিক্যবাদ যে ধর্ম এটা বুঝতে পারবে।

রেফারেন্স সমূহঃ

[১] "OXFORD ADVANCED LEARNERS DICTIONARY BENGALI TO ENGLISH"

[২] Bangla Academy English-Bangla Dictionary , page 60

[৩] "OXFORD ADVANCED LEARNERS DICTIONARY BENGALI TO ENGLISH"  পৃষ্ঠা ৪১৭ 

[৪] ডঃ সোলায়মান কবীর এবং মনিরুল মোমেন তাদের "বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি" বইয়ের ১২৪ পৃষ্ঠা। 

[৫] "বাংলা ভাষার ব্যাকরণ" বইয়ের ৮০ নং পৃষ্ঠা।

[৬] "বাংলা একাডেমী  আধুনিক বাংলা অভিধান" পৃষ্ঠা ৭৩০।

[৭] Bangla Academy English-Bangla Dictionary , page 604

[৮]Bangla Academy English-Bangla Dictionary , page 69

[৯] Stephen Jay Gould, 'Impeaching a Self-appointed Judge', Scientific American 267, No.1, 1992, pp.118-121

[১০] Religion of Russia

https://www.britannica.com/place/Russia/Religion

[১১] ATHEISTS FIND A SUNDAY-MORNING CONNECTION WITH OTHER NONBELIEVERS

https://sojo.net/articles/atheists-find-sunday-morning-connection-other-nonbelievers

[১২] The godless church and the atheists taking the US by storm

https://www.youtube.com/watch?v=O1t-WEk0DOk

[১৩] কোন ধর্মে কত লোকঃ

https://www.banglainsider.com/international/41630/%E0%A6%95%E0%A7%8B%E0%A6%A8-%E0%A6%A7%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A6%A4-%E0%A6%B2%E0%A7%8B%E0%A6%95?fbclid=IwAR1m-d3oTaJxLRI8oOxErrj05Am7skflWp5y_WuLTVkHva4kb45ezU5Skr0

[১৪] Buddhism

https://education.nationalgeographic.org/resource/buddhism


 

এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post