বীর্য নির্গত তথ্যে কুরআনে বৈজ্ঞানিক ভুল?

বিষয়ঃ বীর্য নির্গত তথ্যে কুরআনে বৈজ্ঞানিক ভুল?

লিখেছেনঃ এমডি আলী।

====================

নাস্তিকিস্টরা নিজস্ব মুক্তচিন্তায় অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়ে দাবি করে কুরআনে নাকি বৈজ্ঞানিক ভুল রয়েছে। তাদের দাবি গুলো যুক্তি প্রমাণের সাহায্যে তদন্ত করা হলে দেখা যায় তাদের দাবি গুলো মিথ্যায় ভরা। এরকমই একটি দাবি করা হয় সুরা তারিখের ৮৬ঃ ৫ থেকে ৭ নাম্বার আয়াত থেকে মানে বীর্য নির্গত হয় মেরুদণ্ড এবং বুকের পাঁজরের মধ্যে থেকে এই তথ্য নাকি বৈজ্ঞানিক ভুল। আসলেই কি এখানে বৈজ্ঞানিক ভুল রয়েছে নাকি বিবর্তিত মস্তিস্কে সত্য কানেক্ট করতে পারেনি চলুন পর্যালোচনায় ডুব দেয়া যাক।


কুরআনের আয়াতটি মনোযোগের সাথে পাঠ করা যাকঃ


আল কুরআন সুরা তারিখ ৮৬ঃ ৫,৬,৭ আয়াতে বলা আছে,


মানুষের ভেবে দেখা উচিত কি বস্তু থেকে সে সৃজিত হয়েছে। সে সৃষ্টি হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি থেকে। এটা নির্গত হয় মেরুদন্ড ও বক্ষপাজরের মধ্য থেকে।


কমপ্লিট বীর্য তৈরি হয়ে নির্গত হওয়ার মধ্যবর্তী স্থানঃ


আয়াতে শুধুমাত্র শুক্রকিটের (Sperm) কথা বলছে না বরং পুরো কমপ্লিট “বীর্যের পানির” কথা বলছে যা একজন পুরুষ সবেগে নিক্ষেপ করে। তো শুক্রকিট (Sperm) ও বীর্য (semen) কোথা থেকে আসে? আধুনিক বিজ্ঞান বলে শুক্রকিটকে যা ক্যারি করে সেটাকে বলা হয় এপিডিডমিস (Epididymis)। শুক্রকিট বের হবার সময় পানিটা ভেস ডিফারেন্স (Vas deferens) থেকে সেমিনাল ভেসিকেল (Seminal Vesicles) এবং প্রস্টেট গ্ল্যান্ড (Prostate Gland) পর্যন্ত যায় যেখানে সেমিনাল ভেসিকেল ও প্রস্টেট গ্ল্যান্ড ৯০% fluid তরল পানিও তৈরি করে ফেলে, শুক্রকিটে এরপরে বীর্য ও তরল (fluid) পানিও ফাইনাল যে জিনিসটা পায় “মিউকাস” (Mucus)। তারপর বালবোইউরেথাল গ্ল্যান্ডে (Bulbourethral Glands) এসে আমাদের শুক্রকিট ও বীর্যের মিক্সচারে কমপ্লিট রেডি হয় অর্থাৎ পানি নির্গত হবার জন্য প্রস্তুত হয় প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের কাছে। বীর্য কমপ্লিট রেডি হয়ে যে স্থান থেকে নির্গত হয়, আমরা যদি কুরআন অনুযায়ী বুকের পাজরের ও মেরুদণ্ডের মধ্যবর্তী স্থানকে ল্যান্ডমার্ক ধরি তাহলে স্পষ্ট দেখাই যাচ্ছে ছবিতে যে বীর্য নির্গত হবার স্থান বুকের পাজর ও মেরুদণ্ডের মধ্যবর্তী স্থানেই রয়েছে।



মানুষের বীর্য চারটি গ্রন্থির উৎপাদিত বস্তু দ্বারা গঠিত : অন্ডকোষ শুক্রাণু বা পুংজননকোষ উৎপাদন করে, সেই শুক্রাণু যে তরলে বাহিত হয় তা আসে সেমিনাল ভেসিকল, প্রোস্টেট গ্রন্থি এবং বালবোইউরেথাল গ্রন্থি থেকে। তারমানে বীর্য পুরোপুরি নির্গত জন্য রেডি হচ্ছে এসব স্থান থেকে আর মজার ব্যাপার হচ্ছে কুরআন অনুপাতে যদি আমরা বুকের পাজর ও মেরুদণ্ডের মধ্যবর্তী স্থানকে ল্যান্ডমার্ক হিসেবে ধরি তাহলে স্পষ্টই কমপ্লিট বীর্য নির্গত হবার স্থান বুকের পাজরের ও মেরুদণ্ডের মধ্যবর্তী স্থানই হয়। তাহলে কুরআন আমাদেরকে যে তথ্য দিচ্ছে তা পুরোপুরিই সত্য সঠিক। ছবিতে সবুজ অংশটি দেখুন যা বুকের পাজর ও মেরুদণ্ডের মধ্যেবর্তী স্থানেই রয়েছে।


সেই আয়াতটি আসলে কুরআনের সত্যতার অন্যতম প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, কারণ অণ্ডকোষ থেকে বীর্য আসে না; এটি সেমিনাল ভেসিকেল থেকে আসে যা পেটে থাকে এবং আয়াতটি বীর্যের কথা বলে, শুক্রাণুর নয়। শুক্রাণু অবশ্যই অণ্ডকোষ থেকে আসে। কিন্তু শুক্রাণুগুলিকে সেমিনাল ভেসিকলে অন্যান্য পদার্থের সাথে মিশে যেতে হয় এবং এর ফলে শুক্রাণু হয়। সুতরাং যখন একজন পুরুষ সম্পূর্ণ প্রস্তুত বীর্যপাত করে তখন বুকের পাজর ও মেরুদণ্ডকে ল্যান্ডমার্ক ধরলে মধ্যবর্তী স্থানেই থাকে বীর্য নির্গত হবার স্থান। ছবিটি দেখুন।



এখানে কথা উঠতে পারে যে একদম একুরেট তো মধ্যবর্তী স্থানে নেই, এইক্ষেত্রে কুরআনের আয়াতটি লক্ষ্য করলেই বুঝা যায় একদম একুরেট মধ্যবর্তী স্থানেই হতে হবে এমন কিছুই আয়াতে বলা নেই। তাছাড়া একুরেট মধ্যবর্তী স্থানে থাকা জরুরি না ধরা যাক আমি বললাম আপনার কপাল ও নাভির মধ্যবর্তী স্থানে আপনার নাক দিয়ে আপনি অক্সিজেন গ্রহণ করেন তাহলে কি আমার কথা ভুল বলার সুযোগ আছে? অবশ্যই না। কেননা আমি কপাল ও নাভির মধ্যবর্তী স্থানকে ল্যান্ডমার্ক ধরেছি আর নাক একুরেট মধ্যবর্তী স্থানে নেই বলে আসলেই নাক আপনার কপাল ও নাভির মধ্যবর্তী স্থানে নেই এই কথা বলার সুযোগ নেই। উচুতে অথবা নিচুতে যেখানেই থাকুক দেখতে হবে মধ্যবর্তী স্থানে আছে কিনা? যেহেতু আছে সেহেতু আমার কথা যেমন সঠিক ঠিক একইভাবে কুরআন অনুযায়ী বুকের পাজর ও মেরুদণ্ডকে ল্যান্ডমার্ক ধরে নিলে “বীর্য কমপ্লিট” নির্গত হবার স্থান মধ্যবর্তী স্থানেই থাকে। তাছাড়া আধুনিক দেহতত্ত্ব অনুযায়ী, বীর্যের প্রধান উৎস হলো সেমিনাল ভেসিকল থেকে আসা তরল আর এই ভেসিকল সমূহ মেরুদণ্ড এবং বুকের পাঁজরের মধ্যেই পড়ে। তাই কুরআনের আয়াতকে ভুল বলার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই।


কুরআনে কথা কিভাবে অলৌকিক?


নবীজি (সা) যদি কুরআন লিখতেন তাহলে উনি এভাবে ঘুরিয়ে বলতেন না বরং সরাসরি এটা লিখে দিতেন যে বীর্য লজ্জাস্থান থেকে বের হয়। বুকের পাজর ও মেরুদণ্ডকে উনি ল্যান্ডমার্ক হিসেবেও ধরতেন না। তাহলে কুরআন আমাদেরকে কি তথ্য দিতে চাচ্ছে যা আবার ভেবে দেখার জন্যও উৎসাহ দিচ্ছে? আসলে শুক্রাণু,বীর্য,তরল পানিও ইত্যাদি উপাদানের মিশ্রণে যে কমপ্লিট বীর্য তৈরি হয় সন্তানের অস্তিত্বের ক্ষেত্রে সেটা কুরআন আমাদেরকে বুঝাতে চাচ্ছে যা নবীজি (সা)এর কখনোই জানার কথা না যদি না উনাকে আল্লাহ জানান। কুরআন যে আল্লাহর পক্ষে থেকে নাজিল করা ও নবীজি (সা) একজন সত্যবাদী নবী ছিলেন সেটা প্রমাণিত সত্য। নবী মোহাম্মদ (সা) যদি কুরআন লিখতেন আর উনি যদি এই কথা লিখতেন বীর্য অণ্ডকোষ থেকে বের হয় তাহলে এই কথাটি ভুল হতো কারণ কমপ্লিট বীর্যের পানি যা মানুষের অস্তিত্বে নিয়ে আসে তা অণ্ডকোষে থাকে না। বিস্তারিত আগেই এটা ছবি সহ দেখিয়ে দেয়া হয়েছে।


নাস্তিকদের কিছু নিন্মমানের অভিযোগঃ


যখন দেখে উপরে দেয়া সঠিক ও যৌক্তিক ব্যাখ্যাকে ভুল প্রমাণ করা যাচ্ছে না তখন কিছু সস্তা কথার অবতারণা করার চেষ্টা করে নাস্তিকিস্ট সম্প্রদায়। কুরআনের আয়াতকে ভুল প্রমাণ করতে না পেরে মনের কষ্টে বলে ফেলে আয়াতটি নাকি অত্যন্ত অস্পষ্ট। কিছু অপ্রাসঙ্গিক উদাহরণ টেনে মানুষকে কুরআনের সত্যতা থেকে সরিয়ে ফেলার পয়তারা করতেও দেখা যায় এদেরকে। তো চলুন দেখি ইসলামের সমালোচকদের ময়লা কথা। 


অভিযোগ ১ > 

কুরআন এখানে স্পষ্ট করে বলে নাই সেহেতু বুঝা যায় যে কুরআন নবী মোহাম্মদ (সা) লিখেছে কারণ সে জানতো না বীর্য আসলে কোথা থেকে নির্গত হয়। একজন পাঠকের এখানে বোঝার কোনো কায়দা নেই যে বীর্য আসলে দেহের কোথায় থেকে বের হয়ে আসে। এখানে এটা বোঝারও কোনো কায়দা নেই যে কুরআনের লেখক আসলেই জানেন কিনা যে একজন মানুষের বীর্য তার দেহের ঠিক কোন জায়গা থেকে বের হয়ে আসে।


জবাবঃ কুরআনে স্পষ্ট করে বলা নেই অথবা নবীজি (সা) জানতেন না বীর্য কোথা থেকে নির্গত হয় এই কথা থেকে এটি কি প্রমাণিত হয় যে কুরআনের উক্ত আয়াতটি ভুল? না। কুরআন নবীজি (সা) লিখেছেন এটি নাস্তিকিস্টদের বানানো মিথ্যা কথা। কারণ কুরআনে এমন কোনো আয়াত নেই যেখানে এটি লেখা আছে যে কুরআন নবীজি (সা) লিখেছেন। বরং এই বিষয় উল্টো কথা আমরা কুরআনে পড়তে পাই। 


আল কুরআন, সুরা আনকাবুত ২৯ঃ৪৮ আয়াতে বলা আছে, 

আপনি তো এর পূর্বে কোন কিতাব পাঠ করেননি এবং স্বীয় দক্ষিণ হস্ত দ্বারা কোনো কিতাব লিখেননি। এরূপ হলে মিথ্যাবাদীরা অবশ্যই সন্দেহ পোষণ করত।


যেখানে স্পষ্ট ছবিতে দেখাই যাচ্ছে বুকের পাজর ও মেরুদণ্ডের মধ্যবর্তী স্থান হতেই বীর্য কমপ্লিট রেডি হয়ে নির্গত হয় সেখানে কি এই মিথ্যাকথা বলার সুযোগ আছে যে কুরআনের লেখক জানতেন না? তাছাড়া কুরআনে আয়াতটি মনোযোগ দিয়ে পড়লেই পরিস্কার হয়ে যায় ব্যাপারটি।


অভিযোগ ২ > 

কুরআন কেন স্পষ্ট করে সুরা তারিখের ৮৬ঃ৫ থেকে ৭ আয়াতে বীর্যের সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য প্রদান করে নি?


জবাবঃ এটা তো কুরআনেই স্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছে সুরা তারিখ ৮৬ঃ ৫ = মানুষের ভেবে দেখা উচিত কি বস্তু থেকে সে সৃজিত হয়েছে। কুরআন মানুষের জন্ম নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতে উৎসাহিত করে এই কারণেই আল্লাহ সরাসরি এই বিষয় কুরআনে জানান নাই। যেসব সস্তা সমালোচকরা বলে কুরআন মানুষকে ভাবতে দেয় না এদের কথা চরম ডাহা মিথ্যাচার কুরআন সম্পর্কে ভাবা যায়? যাদের বিশ্বাসের কেন্দ্র হচ্ছে জন্তু-জানোয়ার থেকে বিবর্তিত হওয়া তারা কিভাবে সততার সাথে তথ্য নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে পারে বলুন? তাছাড়া কুরআন এমন স্টাইলেই উক্ত তথ্যটি বর্ণনা করেছে যাতে তথ্যটি সঠিক এবং ভুল না হয়।


অভিযোগ ৩ > 

উপরে দেয়া ব্যাখ্যা ধরে নিলে কুরআনের আয়াতটিকে অত্যন্ত অস্পষ্ট একটি আয়াত হিসেবে প্রমাণ করে। ধরা যাক কোনো স্কুলে গণিত পরীক্ষা হচ্ছে এবং সেই পরীক্ষার একটা প্রশ্ন হলো, ৪০০ এবং ৪০০ যোগ করলে কতো হয়? রাশেদ নামের একজন ছাত্র এই প্রশ্নের উত্তর লিখলো ‘কোনো এক সংখ্যা’ আবার শফিক নামের একজন ছাত্র লিখলো ‘অনেক বড় একটি সংখ্যা’ এবং শ্রাবণী নামের একজন ছাত্রী লিখলো ‘৮০০’। ৪০০ ও ৪০০ যোগ করলে কতো হয়?’ এই প্রশ্নের একেবারে সঠিক এবং গ্রহণযোগ্য উত্তর হলো ৮০০। তবে কি রাশেদ আর শফিকের উত্তর সঠিক নয়? হ্যাঁ তাদের উত্তরও সঠিক। ৮০০ সংখ্যাটি কোনো একটি সংখ্যাই।


তাই কেউ যদি রাশেদের মতো বলে ৮০০ সংখ্যাটি ‘কোনো একটি সংখ্যা’, তাহলে ভুল কিছু বলা হয় না। আবার, ৮০০ সংখ্যাটি অনেক বড় একটি সংখ্যাও। তাই কেউ যদি শফিকের মতো বলে ৮০০ সংখ্যাটি ‘অনেক বড় একটি সংখ্যা’, তাহলেও ভুল কিছু বলা হয় না। রাশেদ আর শফিকের পরীক্ষার খাতা যে শিক্ষক দেখবেন তিনি কি তাদের এই প্রশ্নের উত্তর সঠিক বলে গ্রহণ করবেন এবং মার্কস দেবেন? অবশ্যই নয়, কোনো যুক্তিবাদী শিক্ষকই এমনটা করবেন না। কেন করবেন না? কারণ রাশেদ আর শফিকের উত্তরটি গ্রহণযোগ্য নয়। কেন গ্রহণযোগ্য নয়? কারণ, ৮০০ সংখ্যাটি কোনো একটি সংখ্যা হলেও সকল সংখ্যাকেই ‘কোনো একটি সংখ্যা’ বলা যায়। আবার, ৮০০ সংখ্যাটি অনেক বড় একটি সংখ্যা হলেও এমন সংখ্যার কোনো শেষ নেই যাদের ‘অনেক বড় একটি সংখ্যা’ বলা যায়। তাই ৪০০ এবং ৪০০ যোগ করলে কতো হয়?’ প্রশ্নটির উত্তরে ‘কোনো একটি সংখ্যা’ বা ‘অনেক বড় একটি সংখ্যা’ বলা হলে তা হবে খুবই অস্পষ্ট ও অগ্রহণযোগ্য উত্তর! একই সমস্যা কুরআনের আয়াতেও এসে পড়ে যদি সূরা তারিকের ৭ নং আয়াতের ‘মেরুদণ্ড ও বুকের পাঁজরের মধ্যে’ কথাটি খাড়াভাবে বা উপর থেকে নিচ বরাবর ধরে ব্যাখ্যা করা হয়। এভাবে ব্যাখ্যা করলে ‘মেরুদণ্ড ও বুকের পাঁজরের মধ্যে’ কথাটি দ্বারা হাত পা ও মাথা বাদে একজন মানুষের পুরো শরীরের ভেতরটাই নির্দেশ করা যায়। 


জবাবঃ কুরআনের উক্ত আয়াতে কি এটা বলা হয়েছে বীর্য কোনো এক স্থান থেকে নির্গত হয়? অথবা কোনো এক অঙ্গ থেকে নির্গত হয়? অবশ্যই না। তাহলে কুরআনের উক্ত আয়াত অস্পষ্ট হয় কিভাবে? বরং উপরের ছবি গুলো থেকে তো দেখাই যাচ্ছে যে কুরআন স্পষ্ট করেই এমন এক স্থানে কথা বলেছে যেটা বুকের পাজর ও মেরুদণ্ডের মধ্যবর্তী স্থানেই রয়েছে। আর মানুষের পুরো ভেতরটা তো কুরআন নির্দেশ করে নাই তাহলে এখানে পুরো ভেতরের কথা আসে কিভাবে? 


তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই যে আয়াতটি অস্পষ্ট কিন্তু এটা থেকে কি প্রমাণ হয় যে আয়াতটি ভুল? অবশ্যই না। কুরআন নিয়ে বিদ্বেষ থাকার কারণে আপনি হয়তো অস্পষ্ট বলতে পারেন কিন্তু সততার সাথে আয়াতকে ভুল কিন্তু বলা যাচ্ছে না। পরের যেই গনিত পরীক্ষার উদাহরণ দেয়া হয়েছে সেটাও কিন্তু কুরআনের আয়াতের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়। কারণ কুরআনের উক্ত আয়াতটি অস্পষ্ট নয় বরং স্পষ্টই। 


নাস্তিকরা এখানে গনিতের উদাহরণ টেনেছে কিন্তু সৃজনশীল পদ্ধতিতে যে পরীক্ষা হয় এটা কি শিপ্পাঞ্জির লোকেরা জানে? সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষায় প্রশ্নের কোনো নির্দিষ্ট উত্তর থাকে না বরং নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে যে যত সুন্দর গুছিয়ে লিখতে পারে শিক্ষক তাকে তত নাম্বার প্রদান করেন। ধরা যাক কোনো স্কুলে সৃজনশীল পদ্ধতিতে বাংলা পরীক্ষা হবে যেখানে এমন প্রশ্ন করা হবে যার নির্দিষ্ট কোনো উত্তর কোনো ছাত্ররাই জানে না অর্থাৎ নিজের মেধা থেকে উত্তর লিখতে হবে। 


ধরা যাক ক্লাসে এসে একজন যুক্তিবাদী শিক্ষক বলল আজকে তোমাদের মেধা যাচাই করবো এই জন্য এরকম কিছু প্রশ্ন করবো যার উত্তর তোমাদেরকে সঠিক প্রদান করতে হবে। তুমি এই ক্ষেত্রে যাই উত্তর দেও না কেন তবে শর্ত হচ্ছে সঠিক উত্তর দিতে হবে। পাঠক এইবার বলুন তো সৃজনশীল পদ্ধতিতে একজন ছাত্র যদি অস্পষ্ট জবাবও লিখে এবং সেটা যদি প্রশ্নের সাথে প্রাসঙ্গিক হয় তাহলে যুক্তিবাদী শিক্ষক সেই উত্তরকে ভুল দাবি করতে পারেন? অবশ্যই না। তাহলে দেখা যাচ্ছে কুরআনের আয়াতকে কেন্দ্র করে উপরে যে ব্যাখ্যা করা করা হয়েছে সেটিকে অস্পষ্ট যদি ধরেও নেই তর্কের খাতিরে এরপরেও ভুল কিন্তু কোনো ভাবেই ইসলামের সমালোচকরা দাবি করতে পারছে না। 


উপসংহারঃ 

কুরআন যেভাবে আমাদেরকে বুঝিয়েছে সেভাবে বুঝলেই কুরআনকে ভুল দাবি করার সুযোগ থাকছে না। কুরআনে বৈজ্ঞানিক ভুল আছে এমন অন্ধবিশ্বাসীরা যদি মনে নবীজি (সা)কে ঘৃণা করা,মুসলিমদেরকে অসহ্য করার নোংরা মুক্তচিন্তা করা থেকে বিরত হয়ে সততার সাথে যদি ভেবে দেখতো তাহলে এই সত্যে উপনীত হতে পারতো যে কুরআন সত্যই মহাবিশ্বের স্রস্টা আল্লাহ থেকেই নাজিল করা হয়েছে। কুরআনকে কুরআনের মতো বুঝতে চাইলে তো নাস্তিকরা মুক্তমনা মিথ্যাচার করতে পারবে না, সুদ-ঘুষ খাওয়ার মুক্তচিন্তা করতে পারবে না, ব্যক্তিস্বাধীনতায় ধর্ষণ করতে পারবে না , স্বাধীনভাবে চুরি-ডাকাতি করতে পারবে না তাই এরা নিজের মতো করে ইসলামকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে যাতে মানুষ ইসলাম নিয়ে সঠিক তথ্য জানতে না পারে। নাস্তিক্য মুক্তচিন্তার আন্দোলন যেভাবে করা হচ্ছে আশা করি এটা আমার আর না বললেও হবে!


কুরআনের কিছু আয়াত পড়ে আজকের মতো বিদায় নিচ্ছি তাহলেঃ


আল কুরআন, সুরা মুলক ৬৭ঃ ৮,৯,১০ আয়াতে বলা আছে, 

যখনই জাহান্নামে কোনো সম্প্রদায় নিক্ষিপ্ত হবে তখন তাদেরকে তার সিপাহীরা জিজ্ঞাসা করবে। তোমাদের কাছে কি কোনো সতর্ককারী আগমন করেনি? তারা বলবেঃ হ্যাঁ আমাদের কাছে সতর্ককারী আগমন করেছিল, অতঃপর আমরা মিথ্যারোপ করেছিলাম এবং বলেছিলামঃ আল্লাহ তা'আলা কোনো কিছু নাজিল করেননি। তোমরা মহাবিভ্রান্তিতে পড়ে রয়েছ। তারা আরও বলবেঃ যদি আমরা শুনতাম অথবা বুদ্ধি খাটাতাম, তবে আমরা জাহান্নামবাসীদের মধ্যে থাকতাম না।


এই বিষয় আরও জানতে দেখুনঃ


Does the Qur’ān make a mistake on where semen or sperm is produced?

https://sapienceinstitute.org/does-the-quran-make-a-mistake-on-where-semen-or-sperm-is-produced/


How Sperm Travels through Male Reproductive System Animation - Sperm Release Pathway -Function Video https://www.youtube.com/watch?v=K4nEzMxgZaA


Where Sperm Comes From? https://www.youtube.com/watch?v=PSv6rM2c-P8

 

এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post