বিষয়ঃ মহাবিশ্বকে স্রষ্টা বানায়নি দাবির প্রমাণ কোথায়?
লিখেছেনঃ এমডি আলী।
==============================
ভূমিকাঃ যারা বিশ্বাস করে মহাবিশ্বকে স্রষ্টা বানায়নি তাদের জন্য আজকের লেখাটিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা রয়েছে। সততার সাথে লেখাটি আপনি পড়তে পারলে হয়তো এমন অনেক কিছুই জেনে ফেলবেন যা আপনাকে এর আগে জানানো হয়নি। আসলে জানতেই দেয়া হয়নি। প্রশ্নটি হচ্ছে আপনি বুঝে বুঝে মস্তিস্ক খরচ করে সত্যিটা জানতে আগ্রহী কিনা সেটা। ধরে নিলাম অনেক মুমিনের সাথে আপনি এসব নিয়ে বিতর্ক করেছেন কিন্ত নিজের বিবেকের সাথে কখনো বোঝাপড়া করা হয়ে উঠেছে কি? নাকি আপনাকে যা বুঝানো হয়েছে সেটাই অন্ধভাবে বিশ্বাস করে আছেন অথচ নিজেকে দাবি করছেন আপনি অন্ধবিশ্বাস করেন না অথবা আপনিই শুধু যুক্তিবাদী? নিজের অন্ধবিশ্বাস গুলোকে কি আবার চিন্তার মুক্তির প্যাকেটে লুকিয়ে রাখছেন না তো? স্রষ্টার অস্তিত্বের বিরুদ্ধে নাস্তিকরা যেসব অন্ধবিশ্বাস করে থাকে তা নিয়েই আজকে বিস্তারিত আলোচনা সমালোচনা হবে। তাই সবার আগে আপনি লেখাটি মন দিয়ে সম্পূর্ণ পড়ে নিন।
“কোনো কিছু নাই” এটা কি আবার দাবি হয় নাকি?
নাস্তিক্যবাদ (অন্যান্য নাম: নিরীশ্বরবাদ, নাস্তিকতাবাদ) (ইংরেজি: Atheism) একটি দর্শনের নাম যাতে ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে স্বীকার করা হয় না এবং সম্পূর্ণ ভৌত এবং প্রাকৃতিক উপায়ে প্রকৃতির ব্যাখ্যা দেয়া হয়। মূলত আস্তিক্যবাদ এর বর্জনকেই নাস্তিক্যবাদ বলা যায়। নাস্তিক্যবাদ বিশ্বাস নয় বরং অবিশ্বাস এবং যুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। বিশ্বাসকে খণ্ডন নয় বরং বিশ্বাসের অনুপস্থিতিই এখানে মুখ্য। শব্দটি সেই সকল মানুষকে নির্দেশ করে যারা ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই বলে মনে করে এবং প্রচলিত ধর্মগুলোর প্রতি বিশ্বাস কে ভ্রান্ত বলে তারা স্বীকার করে।
নাস্তিক্যবাদ বিশ্বাস নয় বরং অবিশ্বাস কথাটি ঠিক কিন্তু এরমানে এই না যে নাস্তিকরা নাস্তিক্যবাদে অবিশ্বাস করে অথবা মহাবিশ্বকে স্রষ্টা বানায় নাই কথায় অবিশ্বাস করে। অর্থাৎ নাস্তিকরা আস্তিকতায় অবিশ্বাস করলেও নাস্তিক্যবাদকে ঠিকই বিশ্বাস করে বা সমর্থন করে। তাহলে নাস্তিক্যবাদ যদি নাস্তিকদের কাছে সত্য হয় তাহলে এই দাবির প্রমাণ নাস্তিকদেরকে দিতে হবে না? স্রষ্টার অস্তিত্ব আছে এটা যেমন একটি দাবি তেমনি স্রষ্টা অস্তিত্ব নাই এটাও একটি দাবি। আসলে নাস্তিকরা খুব কৌশলে নিজেদেরকে প্রমাণ দেয়া থেকে রক্ষা করতে চায়। আমি যদি দাবি করি “মহাবিশ্বকে স্রষ্টা সৃষ্টি করেছেন” তাহলে অবশ্যই আমি আমার দাবির পক্ষে প্রমাণ দিব। একইসাথে কেউ যদি দাবি করে “মহাবিশ্বকে কেউ সৃষ্টি করে নাই” তাহলে এই দাবির পক্ষেও প্রমাণ পেশ করতে হবে।
ধরুন একটি বড় বাক্স। আপনি দাবি করলেন এই বাক্সের মধ্যে কিছুই নাই। তাহলে কিন্তু আপনি এই বাক্স খুলে দেখিয়ে দিয়ে প্রমাণ করতে পারলেন যে আসলেই এই বাক্স পুরো খালি। তাহলে, নাই কিছু দাবি কিভাবে হয় প্রশ্নটি অযৌক্তিক না? তাই যৌক্তিক কারণে নাস্তিকদেরকে এটা স্বীকার করে নিতে হবে “স্রষ্টার অস্তিত্ব নাই” এটিও একটি দাবি। এবং এই দাবি যেহেতু নাস্তিকদের সেহেতু দাবির পক্ষে প্রমাণ অবশ্যই পেশ করতে হবে।
নাস্তিকরা বলে থাকে,
বিজ্ঞান যা জানে তার বাইরে বলে না। যতটুকুই জানবো ততটুকুই মানবো। এখন পর্যন্ত স্রষ্টার অস্তিত্বের স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই আমি স্রস্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করি। আপনি যদি মনে করেন স্রস্টার অস্তিত্ব আছে তাহলে প্রমাণ করুন। এখন এই কথা বইলেন না যে *স্রস্টা নেই* সেটা প্রমাণ করুন। যে জিনিসটা নাই, সেটা যে নাই সেটাই একটা প্রমাণ যে সেটা নাই। না থাকলে আবার প্রমাণ আনবে কোথেকে? স্রস্টা নাই এটা যদি প্রমাণ করার বিষয় হয় তাহলে আমি বলবো সাত আকাশের উপরে আরো সাত আকাশ আছে। মোট চৌদ্দ আকাশ। আর সেখানে বসে আছে একটা বাঘ।সেই বাঘ যে নেই সেই প্রমাণ করুন। পারবেন? যারা বলেন স্রস্টা যে নেই প্রমাণ করতে তাদের যুক্তিটি এমনই ঠুনকো।
বিজ্ঞান সম্পর্কে লেখাপড়া না থাকার জন্য বিজ্ঞানবিরোধী কথা নাস্তিকরা বলতে পেরেছে। তাছাড়া উপরের কথায় নাস্তিকটি আসলে কোন বিজ্ঞানের কথা বলছেন? সেটা স্পষ্ট না। বিজ্ঞান মানুষ চালায়। এখানে নাস্তিক বিজ্ঞানী যেমন আছে তেমনি আস্তিক বিজ্ঞানীরাও আছেন। তাহলে বিজ্ঞান স্রস্টার অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারেনি কথার অর্থ কি? কারণ আস্তিক বিজ্ঞানীরা উনাদের গবেষণায় প্রমাণ করে ফেলেছেন যে মহাবিশ্ব অস্তিত্ব আসতে একটা কারণ আছে আর সেটাই হলেন স্রস্টা। আপনি যদি বিজ্ঞান মেনেই থাকেন তাহলে আপনার কাছে নাস্তিক বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞানী আর আস্তিক বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞানী না কেন? উভয়ে মানুষ তো নাকি? উভয়ই বিজ্ঞানী তো? আপনি যেহেতু বলেছেন *বিজ্ঞান প্রমাণ করতে পারেনি যে স্রস্টা আছেন* দুনিয়ার সব বিজ্ঞানীরাই কি আপনার কথার সাথে একমত সেটা আপনি কিভাবে নিশ্চিত করলেন? আমার তো মনে হয় না যে সব বিজ্ঞানীরা আপনার সাথে একমত।
বিজ্ঞানে সাম্প্রদায়িকতা আছে নাকি? আপনি বলছেন স্রষ্টার অস্তিত্বের পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি কিন্তু কি কি প্রমাণের ভিত্তিতে বিজ্ঞান স্রস্টার অস্তিত্বকে খুজেছে সেসবও কিন্তু আপনি জানাননি। কেন? অথবা নাস্তিক বিজ্ঞানীরাই বা কি কি যুক্তি-প্রমাণ দিয়ে স্রস্টার অস্তিত্বকে বাতিল বলেছেন সেসব তথ্যও আপনি জানান নাই, কেন? আবার বলছেন *স্রস্টার অস্তিত্ব নেই* এটার প্রমাণ চাওয়া যাবে না। নাস্তিকদের যুক্তি যে পুষ্টিহীনতায় ভুগছে সেটা স্পষ্ট। আপনি যদি বলেন, আমি নাস্তিক বিজ্ঞানীদের গবেষণা মানি তাহলে আপনি সেটা স্পষ্ট করুন। কারণ বিজ্ঞান নাস্তিকদের বাবার সম্পত্তি না যে তারা যা বলবে সেটাই চুরান্ত হিসেবে আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে।
আপনারা যখন বলেন, স্রস্টার অস্তিত্বের প্রমাণ কি? এটা কেন সাথে বলে দেন না যে আসলে আপনার কাছে প্রমাণ কি যেই প্রমাণের ভিত্তিতে আপনাকে বুঝিয়ে দিলে আপনারা মেনে নিবেন যে স্রস্টাই মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করেছেন? স্রস্টা যে আছেন আমি এই মুহুর্তেই কিছু প্রমাণ দেই। দেখেন তো আপনার কাছে ভালো লাগে কিনা।
কোনো কিছু নিজে নিজেই নিয়ন্ত্রিত হতে পারে না যদি না সে বুদ্ধিমান হয় অথবা বাইরে থেকে কেউ উক্ত বস্তুকে নিয়ন্ত্রণ না করে। মধ্যাকর্ষণ শক্তি এই মুহুর্তে তার শক্তি হারাচ্ছে না আর মধ্যাকর্ষণ শক্তি বুদ্ধিমান কেউই না।এরমানে একে বাইরে থেকে কেউ নিয়ন্ত্রণ করছে। যিনি নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনিই স্রস্টা। যদি বলেন কেউ নিয়ন্ত্রণ করছে না তাহলে মধ্যাকর্ষণ শক্তি এই মুহুর্তে তার শক্তি হারাচ্ছে না কেন? যদি তার নিজের উপর নিজেরই কন্ট্রোল থাকে? যার নিজের উপর নিজের কন্ট্রোল থাকে সে তো স্বাধীন,তাহলে? বাস্তব সত্য কথা এটি স্রস্টা ছাড়া সৃষ্টি সম্ভবই না। তাই স্রস্টার অস্তিত্ব অটোমেটিক প্রমাণিত সত্য। আপনি বলছেন স্রস্টার অস্তিত্বের প্রমাণ নেই অথচ আমি এই মুহুর্তেই প্রমাণ দিয়ে দিলাম।
কি আমার দেয়া প্রমাণ আপনার প্রমাণ ভালো লাগেনি তাই তো? নাকি? তাহলে এবার আমার কথা খুব খেয়াল দিয়ে শুনুন। একটু বুঝার চেষ্টা করুন,কেমন। আপনার কাছে আসলে প্রমাণ কাকে বলা হবে?
আপনার কাছে যা প্রমাণ তা কি সবার কাছেই প্রমাণ? আপনার প্রমাণ যে চুরান্ত সেটার প্রমাণ কি হবে? আপনার প্রমাণই যে একমাত্র সত্য তা আপনি কিসের ভিত্তিতে সঠিক হিসেবে মেনে নিচ্ছেন? স্রস্টার অস্তিত্ব নেই এই কথার চুরান্ত প্রমাণ গুলো আপনার কাছে কি কি এবং কেমন? কেন,কাকে প্রমাণ হিসেবে মানতে হবে আর কানে কাকে প্রমাণ হিসেবে মানতে হবে না তা স্পষ্ট করুন না কেন? *স্রস্টার অস্তিত্বের প্রমাণ কোথায়?* প্রশ্নটিই কি যৌক্তিকভাবে প্রমাণিত? আপনার কাছে প্রমাণ বলতে *সরাসরি দেখা* এমন কিছু নাকি?
যদি তাই হয় তাহলে এই প্রমাণ দিয়ে আপনি যে চিন্তা করতে পারেন তা বাতিল হয়ে যাবে। অতীতকালকে প্রমাণহীন বলতে হবে। আপনি যে আমার যুক্তি বুঝতে পেরেছেন এরপরেও সত্য মানার অনুভুতি আপনার নেই তা বাতিল হয়ে যাবে।আপনি আপনার মাকে ভালোবাসেন তা বাতিল হয়ে যাবে। সময়ের অস্তিত্ব হয়ে যাবে বাতিল। এমন কি *স্রস্টার অস্তিত্ব নেই* এটাও বাতিল হয়ে যাবে কারণ আপনি আমাদেরকে আপনার প্রমাণ অনুযায়ী পুরো মহাবিশ্ব ভ্রমণ করিয়ে দেখাতে পারছেন না যে স্রস্টা নেই। এরপরেও না বুঝলে আরো সহজে বুঝিয়ে দিচ্ছি। আপনাকে সম্পুর্ন বুঝতে হবে না,অল্প বুঝলেও হবে। এরপরেও বোঝার চেষ্টা করুন। *কিছু আছে* যেমন প্রমাণ করা যায় আবার *কিছুই নেই* তাও কিন্তু প্রমাণ করা যায়। ধরুন আপনি দাবি করলেন আপনার কাছে ১০ টাকা আছে। আমি বললাম প্রমাণ দেখান? আপনি আমাকে দেখিয়ে দিলেন। আবার আপনি বললেন আপনার কাছে ১০ টাকা নেই। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, প্রমাণ দেখান? আপনি আপনার পকেট থেকে দেখালেন যে পকেটে ১০ টাকা নেই।
প্রমাণ যার নাই সেটার কি প্রমাণ হয় নাকি? - এই ধরনের কথা কি অবুঝ শিশুদের মতো হয়ে গেলো না? আমার দেয়া প্রমাণ যদি আপনি কাছে গ্রহণযোগ্য মনে না হয় তাহলে আপনি যে আপনার প্রমাণের ভিত্তিতে দাবি করছেন স্রস্টা নেই সেসবের প্রমাণ দিন,এটা কি কঠিন কিছু? নাকি আপনার কাছে এই সহজ বিষয় অনেক কঠিন লাগছে? কোনটা? আমি আমার লেখায় প্রায়ই একটা প্রশ্ন করি। *স্রস্টা নেই* এটা কি দাবি? যদি উত্তর হুম হয় তাহলে এর প্রমাণ থাকা লাগবে কিনা? যদি উত্তর না হয় তাহলে যা দাবি করারই যোগ্য না সেটা কিভাবে বিশ্বাস করা যায়? যদি বলেন স্রস্টা নেই এর প্রমাণ দেয়া লাগবে না তাহলে এ দাবি কি অন্ধবিশ্বাস হয়ে যাচ্ছে না? যদি স্রস্টা নেই এই দাবির প্রমাণ দিতে না হয় তাহলে এটা প্রমাণহীন বিশ্বাসের কথা হয়ে যাচ্ছে না? স্রস্টা নেই এটা অন্ধবিশ্বাস? এরচেয়ে আমি আর কিভাবে সহজে বুঝিয়ে বলবো আপনাকে?
শেষের যেই উদাহরণ দিয়ে আপনারা আমাদের যুক্তি গুলোকে ঠুনকো প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন। নিজে কি একবার ভেবেছেন এই যুক্তি আপনাকে নাস্তিকতা থেকে বের করে দিচ্ছে? আপনি যদি এটা বিশ্বাস করেন যে সাত আসমানের উপর আরো সাতটি আসমান আছে আর তার উপরে একটা বাঘ আছে। - এই বিশ্বাস করলে আপনি কি নাস্তিক থাকছেন, নাকি হিন্দুদের ধরনের মতো আস্তিক হয়ে যাচ্ছেন? আপনার কথানুযায়ী চৌদ্দ আসমানের উপরে বাঘকে যদি সত্যিই আপনি নিজে বিশ্বাস করে থাকেন তাহলে আপনার পক্ষে কি কি যুক্তি প্রমাণ আছে তা আমাদের কাছে পেশ করুন এরপরে আমরা যুক্তি দিয়ে,প্রমাণ দিয়ে আপনার দাবি সঠিক নাকি ভুল সেটা যাচাই করবো। বোঝা গেছে?
আপনি *স্রস্টা নেই* এটার পক্ষে প্রমাণ দেয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য যে বিশ্বাস করে বসলেন মহাবিশ্বের চৌদ্দ আসমানের উপরে বাঘ আছে এটা কিভাবে যৌক্তিক হতে পারে নাস্তিকতার অর্থে? সরল কথা হলো আমরা মুসলিমরা এটা অবিশ্বাস করি যে চৌদ্দ আসমানের উপরে বাঘ আছে। আর আপনি যদি নাস্তিক হয়ে থাকেন তাহলে আপনিও এরকম কথায় মনে হয় না যে আস্থা রাখবেন।এখানে আমরা একমত। আমি যে আপনার চৌদ্দ আসমানের উপরে বাঘ আছে এটা অবিশ্বাস করি আমার এই অবিশ্বাসের পক্ষে আমি কিন্তু ঠিকই প্রমাণ দিতে পারবো। আমি কিন্তু আপনার মতো এরকম শিশুতোষ কথা বলবো না যে প্রমাণ দিতে হবে কেন?
আপনার মহাবিশ্বের চৌদ্দ আসমানের উপরে বাঘ আছে এই বিশ্বাসকে আমরা মুসলিমরা কেন অবিশ্বাস করি জানেন? আপনি নিজে একজন নাস্তিক। অথচ আপনি আবার বিশ্বাস করছেন চৌদ্দ আসমানের উপরে বাঘ আছে। এই বিশ্বাসকি নাস্তিকতার সাথে সাংঘর্ষিক হচ্ছে না? অবশ্যই হচ্ছে। আপনার এই পরস্পর বৈপরীত্য আপনাকে ও আপনার অন্ধবিশ্বাসকে অলরেডি প্রতারক মিথ্যাবাদী হিসেবে প্রমাণ করে ফেলেছে। এবং এর জন্য আপনি নিজেই দায়ী। তাহলে, আমরা যা স্বীকার করি অর্থাৎ মহাবিশ্বকে একমাত্র স্রস্টাই সৃষ্টি করেছেন। আমরা এর পক্ষে যা যা প্রমাণ দেই, সেসব প্রমাণ আপনার যদি ভালো না লাগে তাহলে আপনার কি উচিত না যে *স্রস্টা নেই* এর স্বপক্ষে আপনার যুক্তি, আপনার প্রমাণ, আপনার তথ্য পেশ করা। কিন্তু তা কি আপনি করছেন? তা না করে আপনি নিজেই হিন্দুধর্মের মতো বিশ্বাস করে তা আবার ভুল প্রমাণ করতে বলছেন। আপনারা কি এগুলোই পারেন শুধু?
আপনার কাছে আপনার দাবিনুযায়ী কি কি যুক্তি আছে? কি ধরনের প্রমাণ আছে? কি কি তথ্য আছে? আপনার কাছে মহাবিশ্ব কিভাবে অস্তিত্বে এসেছে? আপনি যে বলছেন স্রস্টা নেই তো এর পক্ষে কি কি প্রমাণ থাকা লাগবে এবং কেন? স্রস্টার অস্তিত্বের পক্ষে প্রমাণ নেই সেটার প্রমাণ গুলো কি কি? এসব প্রশ্ন করা কি আমার অপরাধ? আপনার কাছে প্রমাণ চাওয়া যাবে না? আপনি যে নিজেকে সঠিক ভেবে বসে আছেন সেটা নিয়ে সংশয়ও প্রকাশ করার অধিকার আমার নেই?
নাস্তিকরা স্রষ্টার অস্তিত্বের পক্ষে কেমন প্রমাণ চায়?
আমি যখন নাস্তিকদের কাছে স্রষ্টার অস্তিত্বের যৌক্তিক,গাণিতিক ইত্যাদিভাবে অকাট্য প্রমাণ দেই। তখন সেসব প্রমাণ নাস্তিকরা গ্রহণ করতে চায় না। গ্রহণ না করে বলে প্রমাণ হয় নাই। এসবকে প্রমাণ বলে না। তাহলে নাস্তিকদেরকেই স্পষ্ট করতে হবে তারা আসলে কেমন প্রমাণ চায়। নাস্তিকদের মস্তিস্ক যেহেতু দুর্বল সেহেতু ধারালো শাণিত যুক্তি নাস্তিকরা বুঝে উঠতে পারে না। এরপরেও আমি আরও সহজ করে বুঝানোর চেষ্টা করবো। নাস্তিকরা না বুঝলেও যেকোনো চিন্তাশীল মানুষ বুঝতে পারবে।
ধরুন আপনি আপনার মাকে জিজ্ঞাসা করলেন,মা তোমার কাছে ৫০০ টাকা আছে? মা বললো, জি আছে। ছেলে বললো প্রমাণ দেও। মা নিজের ব্যাগ থেকে ৫০০ টাকা এনে হাতে দিয়ে দিলো। ধরুন একে বলা হয় "সরাসরি প্রমাণ"। সরাসরি "কিছু আছে" যেমন প্রমাণ করা যায় আবার সরাসরি "কিছু নেই" তাও সরাসরি প্রমাণ করা যাবে। কিভাবে? মা তার ব্যাগ খুলে দেখিয়ে দিল যে তার কাছে টাকা নেই।
ধরুন আপনার মা আপনাকে বলছে,তুই আমার সন্তান আমি তোকে অনেক ভালোবাসি এই জন্য এই কেকটি নিয়ে আসলাম। ছেলে কেকটি কেটে দেখলো যে কেকের মাঝে ভালবাসার অস্তিত্ব নেই। ছেলে বললো মা আমাকে প্রমাণ দেও তুমি আমাকে ভালবাসো। মা বললো আমি তোকে ভালবাসি দেখেই এই মজাদার কেকটি নিজে বানিয়ে তোকে খেতে দিয়েছি। খেয়াল করুন এখানে কিন্তু মা ৫০০ টাকার মতো সরাসরি প্রমাণ দেন নাই। দিয়েছেন "পর্যবেক্ষণগত প্রমাণ" এখানে কিন্তু আগের সরাসরি প্রমাণ গ্রহণযোগ্য নয় কারণ ভালবাসা বিস্কুটের মতো না যে নিজ হাতে ধরা যাবে,ছোয়া যাছে,চাবানো যাবে। বৃদ্ধাশ্রমে রেখে দিয়ে আসা সন্তানদের মতো উক্ত ছেলেটি যদি মা-বাবা বিদ্বেষী হয় আর যদি বলে যে কেকের মধ্যে ভালোবাসার অস্তিত্ব দেখলাম না সুতরাং তুমি আমাকে ভালোই বাসো না তোমার ভালোবাসা আমি অবিশ্বাস করি তাহলে এই যুক্তিতে দুনিয়ার সব মা ছেলের পবিত্র সম্পর্ক বাতিল হয়ে যাবে কিন্তু।
এই লেখাটি আপনি পড়ছেন। ধরুণ লেখককে আপনি কখনোই দেখেননি।লেখক সাদা নাকি কালো,লেখক চিকন নাকি মোটা ইত্যাদি আপনি কিছুই দেখন নাই কিন্তু আপনার অভিজ্ঞতা আপনাকে বলছে এমন যৌক্তিক লেখা যিনি লিখতে পারেন তিনি অবশ্যই বুদ্ধিমান নাহলে এমন লেখা নিজে নিজে অস্তিত্বে আসবেই না। ধরুণ এই লেখার লেখকের সাথে আপনার জীবনেও দেখা হয় নাই এরমানে কি লেখকের অস্তিত্বের প্রমান নেই? না। এটা আপনার বাস্তব অভিজ্ঞতা।এই অভিজ্ঞতার প্রমাণ নিজে অনুধাবন করা গেলেও অনেক সময় অন্যকে সেই অনুধাবন করানো যায় না।
তাহলে বলতে পারি আমরা বিভিন্ন ধরণের প্রমাণের পদ্ধতি দেখলাম। সরাসরি প্রমাণ,পর্যবেক্ষণ প্রমাণ। অভিজ্ঞতার প্রমাণ। আরও থাকতে পারে, আপাতত এসব নিয়েই সামনে আগাই। কোনো কিছুর অস্তিত্ব সরাসরি না পাওয়া গেলে এটা প্রমাণ হয় না যে পর্যবেক্ষণ করে প্রমাণ করা যাবে না আবার কোনো অস্তিত্ব পর্যবেক্ষণ করে প্রমাণ না করা গেলেও অভিজ্ঞতা থেকে প্রমাণ করা যাবে না এটাও বলা যায় না। এটি যৌক্তিক সত্য। তাই মহাবিশ্বকে স্রষ্টা সৃষ্টি করেছেন। আপনি মহাবিশ্বের স্রস্টাকে সরাসরি প্রমাণ করতে পারবেন না অর্থাৎ আপনি নিজের চোখ দিয়ে সরাসরি উনাকে দেখতে পারছেন না,হাত দিয়ে স্পর্শ করতে পারছেন না। এরমানে এটা প্রমাণ হয় না যে উনি নেই বা পর্যবেক্ষণ করেও উনার অস্তিত্ব প্রমাণ করা যাবে না।
ধরুন মহাবিশ্বের স্রস্টার অস্তিত্ব আপনি সরাসরি প্রমাণ করতে পারছেন না। ধরে নিলাম পর্যবেক্ষণ করেও উনার অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারছেন না এর থেকে এটা প্রমাণ হয় না যে উনাকে অভিজ্ঞতালব্ধ প্রমাণ দিয়েও উনার অস্তিত্ব প্রমাণ করা যাবে না। যদি এটাও ধরে নেই এসব পদ্ধতি থেকেও প্রমাণ করা যাবে না তাহলেও এটা বলার সুযোগ নেই যে যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করা যাবে না। অর্থাৎ আমি বুঝাতে চাচ্ছি স্রষ্টাকে অবশ্যই প্রমাণ করা সম্ভব। তবে যা সম্ভব না সেটা হচ্ছে স্রষ্টা নাই এটা প্রমাণ করা।
অভিজ্ঞতালব্ধ প্রমাণটি একটু ব্যাখ্যা করি। নাস্তিকরা বস্তুবাদে বিশ্বাসী। তাই নাস্তিকরা আমাদেরকে এমন একটা বস্তু থেকে অভিজ্ঞতা দেখাক যা শূন্য থেকে নিজে নিজে "কোনো কিছুর মাধ্যম ছাড়াই" অস্তিত্বে আসতে পেরেছে তাহলেই প্রমাণ হয়ে যাবে মহাবিশ্বের স্রস্টার অস্তিত্ব নেই। অথবা সরাসরি প্রমাণ দেখাক যে স্রস্টার অস্তিত্ব নেই অথবা এমন কিছু যৌক্তিক সন্দেহের ঊর্ধ্বে পর্যবেক্ষণযোগ্য বস্তুগত কতিপয় অকাট্য কারণ পেশ করুক যাতে নিশ্চিত হওয়া যাবে মহাবিশ্বের স্রস্টার অস্তিত্ব নেই। অথবা স্রষ্টার অস্তিত্ব আছে দাবির পক্ষে নাস্তিকরা যেই প্রমাণ চায় সেই একই প্রমাণের ভিত্তিতে নাস্তিকরা প্রমাণ হাজির করুক যে মহাবিশ্বকে কেউ সৃষ্টি করে নাই। কিন্তু নাস্তিকরা কি নিজেদের দাবির পক্ষে প্রমাণ হাজির করতে পেরেছে?
এসব যৌক্তিক ধারালো চেতনা থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখতে নাস্তিকরা প্রশ্ন করে তাহলে স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করেছে? কিন্তু এই প্রশ্নটি নাস্তিকদের দাবিকে সত্য প্রমাণ করতে পারে না। এতটুকু বুঝবার মতো যোগ্যতা নাস্তিকদের নেই যে, স্রষ্টাকে যদি কেউ সৃষ্টি করতো তাহলে তো উনি আর স্রস্টাই হতেন না বরং সৃষ্টি হয়ে যেতেন তাই যৌক্তিক কারণেই স্রষ্টা তিনি যিনি স্বয়ং সৃষ্টি হওয়া থেকে মুক্ত। স্রষ্টা নিজে কারণ হওয়া থেকে মুক্ত কারণ মহাবিশ্বের শুরুর কারণটি স্বয়ং উনি অর্থাৎ স্রষ্টা নিজে শুরু হওয়া বা শেষ হয়ে যাওয়া থেকে মুক্ত। খুব সুক্ষ ধারালো চিন্তাশক্তির অধিকারী না হলে এসব কথা অনেকেই উপলব্ধি করতে পারবে না।
আমরা সব কিছুই চোখে দেখেই শুধুমাত্র বিশ্বাস করি না। তাহলে কিসের ভিত্তিতে বিশ্বাস করি? এই “ভিত্তি”টা বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে। কেউ নাস্তিক নামক বিজ্ঞানীদের কথা যাচাই ছাড়াই বিশ্বাস করে নেয়। আবার কেউ নির্ভরযোগ্যতা দেখে বিশ্বাস করে নেয়। কেউ নিজেদের বন্ধুদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মেনে নেয়। যেমন নাস্তিকরা ইসলামবিরোধী পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত। এখন প্রশ্নটি হচ্ছে স্রষ্টার অস্তিত্বের ব্যাপারে নাস্তিকরা কেমন প্রমাণ পেলে স্বীকার করে নেবে যে আসলেই মহাবিশ্বকে স্রষ্টাই সৃষ্টি করেছেন। এটা একটি বিশাল প্রশ্ন। নাস্তিকরা কেমন প্রমাণ চায়? নাস্তিকদের কাছে প্রমাণ কাকে বলা হবে? কাকে বলা যাবে না? প্রমাণের ভিত্তি কেমন হবে? কি হবে? কি দিয়ে হবে? নাস্তিকদের বলা প্রমাণটিই যে সঠিক হবে সেটার প্রমাণ কি হবে? কে নির্ধারণ করে দেবে প্রমাণ কি? কারা করবে? সবার বিবেক তো ভিন্ন ভিন্ন তাহলে প্রমাণের ব্যাপারটি কে চূড়ান্ত করবে বস্তুবাদী দৃষ্টিতে?
আমি যখনই এই যৌক্তিক প্রশ্ন গুলো নাস্তিকদের সামনে তুলে ধরছি তারা ঠিকমত জবাবই দিতে পারে না। জবাব না দিতে পেরে দাসী সেক্স, জান্নাতের ৭২ হুর, মুরতাদের শাস্তি, জিহাদ, গনিমতের মাল এসব নিয়ে কথা বলা শুরু করে আসল মুল বিষয়টিকেই পুরো বিবর্তন করে ফেলার পয়তারা করে। নাস্তিকরা নিজেদের বিশ্বাসকে যৌক্তিকভাবে পেশ করতে পারে না। নাস্তিকরা নিজেদের বিশ্বাসের পক্ষে প্রমাণ দিতে পারে না। প্রশ্ন হচ্ছে কেন? কিন্তু আবার তারাই বলে প্রমাণ ছাড়া নাকি কিছুতে তাদের বিশ্বাস নেই। তারাই বলে তারা নাকি বিজ্ঞানে বিশ্বাসী। আমি আজকে এমন কিছু দিক আলোকপাত করতে চাচ্ছি যা আমরা সরাসরি দেখি না কিন্তু তারপরেও সেসব কাজের এফেক্ট অথবা ফলাফল বা যোগসূত্র দেখে সেসবের অস্তিত্বকে মেনে নেই। এফেক্ট দেখেই সেসব জিনিসের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়। কিন্তু আমরা সেই অস্তিত্বকে নিয়ে মাতামাতি করি না কারণ এফেক্টই প্রমাণ করে দেয় সেই জিনিসের অস্তিত্ব আছে।
দেশপ্রেমঃ
সম্পূর্ণ অদৃশ্য একটি জিনিস। বলতে পারেন দেশ তো দৃশ্যমান। হ্যাঁ ,কিন্তু প্রেম তো অদৃশ্য। দেশপ্রেম বিষয়টি সম্পূর্ণ অদৃশ্য একটি বিষয় বা জিনিস বা বস্তু যাই বলি না কেন এটার অস্তিত্ব আছে। খেয়াল করুন আপনি দেশপ্রেমকে সরাসরি প্রমাণ করতে পারবেন না কিছু নিদর্শন দেখে,কিছু চিহ্ন দেখে দেশপ্রেমের অস্তিত্ব বুঝতে পারবেন। কি সেই সব নিদর্শন বা চিহ্ন? দেশের ক্ষতি করবে না,দেশের আইন মানবেন,দেশের সংবিধান মানবেন,দেশের উন্নয়নের কথা ভাববেন,দেশের কষ্টে নিজে কষ্ট পাবেন ইত্যাদির সমষ্টি হচ্ছে দেশপ্রেম। তাই তো? হ্যাঁ।
এখন কেউ যদি বলে দেশপ্রেমের অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য যেই নিদর্শন অথবা এফেক্ট দেয়া হয়েছে সেসব আমি প্রমাণ হিসেবে মানি না তাহলে কি হবে? বুঝতে হবে সেই লোক মানসিক রোগী অথবা দেশদ্রোহী। এখানে একটি কথা বলে রাখি দেশের দেশদ্রোহীরা কিন্তু দেশপ্রেমের অস্তিত্বে বিশ্বাসী না যদি হতো তাহলে আর দেশদ্রোহী হতো না। পয়েন্টটি মনে রাইখেন।
চিন্তা,চেতনা,অনুভুতিঃ
এসবের অস্তিত্ব আমরা কিভাবে বুঝি? দেশপ্রেম নিয়ে আমার লেখাটি সঠিক ভাবে বুঝতে পারা আপনার চিন্তা করার প্রমাণ। চিন্তা করতে পেরেছেন কারণ আপনার মধ্যে চেতনা রয়েছে এবং চিন্তা ও চেতনা সঠিক ভাবে করতে পেরেছেন কারণ আপনার মধ্যে অনুভুতি আছে। এসব না বুঝার মতো কথা নয়। এখন কেউ যদি বলে আমাকে চিন্তা,চেতনার,অনুভুতির সরাসরি প্রমাণ দেও নাহলে আমি এসব মানি না তাহলে আমরা কি বুঝবো? লোকটি মানসিক ভারসাম্যহীন। ডাক্তারের সঠিক চিকিৎসা পেলে সে সুস্থ হবে। যেসব নাস্তিকরা আত্মায় বিশ্বাস করে না তারাই আবার বিবেক,বুদ্ধি,চিন্তা,চেতনা,অনুভব নামক অদৃশ্যে বিশ্বাস করে যা হাস্যকর লাগে আমার কাছে। যেই যুক্তিতে আত্মা অস্বীকার করে অন্ধবিশ্বাসী নাস্তিকরা সেই একই যুক্তিতে আবার বিবেক,বুদ্ধি,চিন্তা,চেতনা,অনুভবে কিভাবে বিশ্বাস করে? আমি আশ্চর্য হই এসব নাস্তিক নামক মানসিক রোগীদের দেখে। এদের সুচিকিৎসা কে করবে? কে এদের পাশে দাঁড়াবে এবং মানবতার হাত বাড়িয়ে দিবে?
তাহলে বুঝা যাচ্ছে সত্য বিষয়কে বুঝতে পারা চিন্তার অস্তিত্ব প্রমাণ করে। চিন্তা করা প্রমাণ করে চেতনার অস্তিত্ব আছে আবার চেতনার অস্তিত্ব আছে প্রমাণ করে অনুভুব করতে পারা। এখন কারো অনুভুতি করার শক্তি নষ্ট হয়ে গেলে এরমানে এই না যে চিন্তা-চেতনা বা অনুভুতির অস্তিত্ব নেই। বুদ্ধিমান সকল মানুষরাই এসব কথার সাথে একমত হবেন।
ভালবাসাঃ
এটার অস্তিত্ব কিভাবে প্রমাণ করা যায়? ধরুন আপনি আপনার মাকে ভালবাসেন। সেটা সরাসরি প্রমাণ করা কিন্তু সম্ভব না। কিছু চিহ্ন দেখে বুঝা সম্ভব যে আপনি আপনার মাকে আসলেই ভালবাসেন। যেমন আপনি আপনার মায়ের সব কথা শুনেন,উনার সেবা যত্ন করেন,উনার প্রশংসা করেন,উনাকে কষ্ট দেন না ইত্যাদি মায়ের প্রতি ভালবাসার লক্ষণ। কিন্তু এসব চিহ্ন ছাড়া সরাসরি “মায়ের প্রতি ভালবাসাকে” প্রমাণ করা সম্ভব না। এসব চিহ্ন কেউ অস্বীকার করলে সে আসলে আদর্শ সন্তান হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। বস্তুবাদী দৃষ্টিতে নিজ মাকে ভালবাসা আর নিজ স্ত্রীকে ভালবাসা আমাদের চিন্তা কিভাবে পার্থক্য করে? কোনো কি কেমিক্যাল আছে পার্থক্য করার? বস্তু দিয়ে এই প্রশ্নের জবাব কি হবে? এই বোধ আমাদেরকে কে দিয়েছে? কেন এই বোধ থাকা দরকার? বোধ, চেতনা, বিবেক, বুদ্ধি এসবের বস্তুগত অস্তিত্ব কেমন?
ধরুন একজন নাস্তিক ছেলে একটি নাস্তিক মেয়েকে প্রপোজ করলো। আমি তোমাকে ভালবাসি। সেই নাস্তিক মেয়েটি বললো আমি এসব ভালবাসায়-টালোবাসায় বিশ্বাস করি না কারণ এসবের অস্তিত্ব বৈজ্ঞানিক ল্যাবে গবেষণা করে প্রমাণ করা যায় না। মুমিনরা আমাকে এতো যুক্তি-প্রমাণ দিয়ে স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রমাণ দিয়েছে সেটাই স্বীকার করতে চাই না আবার তোমার ভালবাসার যুক্তি-প্রমাণ মানতে যাবো কোন দুঃখে? ভালবাসার অস্তিত্বে বিশ্বাস স্রেফ অন্ধ বিশ্বাস। আমি মুক্তমনা নারীবাদী এসবে বিশ্বাস করি না।-নাস্তিক ছেলেটি ঠিক কি কি সরাসরি চাক্ষুষ প্রমাণ দিয়ে মেয়েটিকে বুঝাবে? ভালবাসার চিহ্ন বা নিদর্শন দেখানো ছাড়া?
নৈতিকতা,মানবতাঃ
এসব কিন্তু অদৃশ্য। পাগল,মানসিক রোগী বা সন্ত্রাসী ছাড়া কখনো কেউ কিন্তু এসব বলবে না যে আমরা এসবের অস্তিত্বে বিশ্বাস করি না। এসবের অস্তিত্ব সরাসরি প্রমান করা যায় না। কিছু অবাক করা প্রশ্ন করি। কেউ কি বলতে পারবেন নৈতিকতা দেখতে কেমন? সাদা নাকি কালো? নৈতিকতা-মানবতা পুরুষ নাকি মহিলা নাকি অন্য লিঙ্গের? নৈতিকতা কি আপেল নাকি কাঁঠাল গাছ? মানবতার স্বাদ কি মুরগীর গোস্তের মতো টেস্ট নাকি ঝাল?
কিন্তু কিছু নিদর্শন বা চিহ্নের সাহায্যে নৈতিকতা-মানবতার অস্তিত্ব আছে এটা বুঝা যায়। এসবের অস্তিত্বের প্রমান কি? মানুষের সাথে ভাল আচরণ করা,সব সময় সত্য কথা বলা,গরীবদের সাহায্য করা,রোগীর সেবা করা ইত্যাদি নৈতিকতা এবং মানবতার অস্তিত্বের প্রমান। এখন এসব নিদর্শন ছাড়া বা চিহ্ন ছাড়া কেউ কি সরাসরি নৈতিকতা ও মানবতার অস্তিত্ব প্রমান করতে পারবেন? নাস্তিকরা পারবে? এখন কেউ যদি এসব চিহ্ন না মানে তাহলে বুঝতে হবে সে মানুষ হওয়ার যোগ্যতাই রাখে না বরং তার পূর্বপুরুষ বান্দর ছিল সেটা নিজ নৈতিক দায়িত্বে বুঝে নিতে হবে।
মহাবিশ্বের স্রস্টাঃ
উপরের যৌক্তিক কথামালা আপনাদের বোধগম্য হলে স্রস্টার অস্তিত্বকে বুঝা এখন একেবারেই সহজ হবে। স্রস্টার অস্তিত্ব কিভাবে প্রমাণ হবে? এটা প্রমান করার কিছু চিহ্ন আছে,নিদর্শন আছে আর তা হচ্ছে সৃষ্টিজগত। সৃষ্টিকে দেখেই স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রমান পাওয়া যায়। আমাদের মহাবিশ্ব যেই নিয়মে চলছে সেই নিয়ম এক সেকেন্ডের জন্য হেরফের হলে পুরো মহাবিশ্ব ধ্বংস হয়ে যাবে। এখন,এই মুহূর্তে মধ্যকর্ষণ শক্তি কেন নিয়ন্ত্রণে আছে? কেন এই শক্তির বিস্ফোরণ হচ্ছে না যাতে নেগেটিভ আরেকটি মধ্যকর্ষণ শক্তির আবিস্কার হয় এবং এতে মানুষ পাখির মত এমনে এমনেই কোন কিছুর সাহায্য ছাড়াই আকাশে উড়তে পারবে? একে কে নিয়ন্ত্রণ করছেন? যৌক্তিক উত্তর হচ্ছে মধ্যকর্ষণ শক্তিকে যে সৃষ্টি করেছেন উনিই এই শক্তিকে এভাবে বানিয়েছেন এবং উনিই পুরো মহাবিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করছেন। স্রস্টা আছেন বলেই তো মহাবিশ্ব নামক এফেক্ট হয়েছে,হচ্ছে এই সহজ বিষয় বুঝতে এতো কষ্ট লাগে কেন নাস্তিক অন্ধবিশ্বাসীদের? ওরা কি যুক্তি বুঝে না? ওদের কি বিবেক নেই? ওদের কি সত্য স্বীকার করতে কষ্ট লাগে? ওরা কি বুদ্ধির অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না? নাকি আরজ আলী ব্রেনে এসব কথার বদ হজম হয়? কোনটা? ওরা অন্ধবিশ্বাস থেকে কবে মুক্তি পাবে? নাকি দেশদ্রোহীরা দেশের অস্তিত্বে বিশ্বাসী নয় ঠিক যেমন স্রস্টাদ্রোহীরা স্রস্টার অস্তিত্বে বিশ্বাসী নয়?
এখন নাস্তিকরা যদি মানসিক রোগীদের মতো বলে মহাবিশ্ব এমনে এমনেই সৃষ্টি হয়েছে,মধ্যকর্ষণ শক্তি এমনে এমনেই সৃষ্টি হয়েছে,এমনেই নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে। এটাই মুক্তচিন্তা,এটাই বাকস্বাধীনতা। তাহলে একই ধরনের কথা অন্য ভাবে কোনো মানসিক রোগী যদি বলে যেমনঃ দেশদ্রোহীতাই প্রকৃত দেশপ্রেম,মিথ্যা বলাই প্রকৃত সততা,নিজ মাকে বিনা কারনে ঘৃণা করাটাই আসলে মায়ের প্রতি আসল ভালবাসা,মিথ্যাচার করাটাই আসল বিবেকবোধ,মানুষকে বিপদে ফেলাটাই আসল চেতনার অনুভূতি,দুর্নীতি করাটাই আসল মানবতা,চুরি করে নিজেকে ধনী করাটাই আসল পরিশ্রম,ঘুষ খাওয়াই মুক্তমনা চেতনা ইত্যাদি তাহলে কি যৌক্তিক হবে? অবশ্যই না।
বুঝতে হবে আসল নিদর্শন বা চিহ্ন বাদ দিয়ে যখনই আপনি কিছু ব্যাখ্যা করতে যাবেন ভুল করবেন। এই ভুলটাই মানুষের মতো দেখতে কিছু নাস্তিক করে,ইচ্ছা করেই ভুলটি করে। স্রস্টার অস্তিত্বের প্রমানে আমরা হাজার হাজার যুক্তি প্রমান চিহ্ন আমরা দিয়েছি,দিচ্ছি কিন্তু এরপরেও নাস্তিকদের তালগাছ আমার টাইপ একটি মনোভাব। এই অন্ধবিশ্বাস থেকে নাস্তিকরা মুক্ত হতে পারেই না। তখন আর আমার বুঝতে বাকি নেই যে,এরা যে বলে আমাদের ব্রেন কেমিক্যাল রিয়েকশনের ফলাফল সেটা আসলেই এদের ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়য় কারণ নাহলে এরা নিজেদের স্রস্টাকে অনুভব করতে পারবে না কেন? স্রষ্টাকে স্বীকার করতে পারবে না কেন? সত্য জানার যোগ্যতা এদের নষ্ট হয়ে গেছে কেন? বিবেককে এরা ইসলাম আর মুসলিমদের গালাগালি করার ক্ষেত্রে প্রয়োগ না করে যদি ইসলামকে সঠিক ভাবে জানার চেষ্টা করতো, সত্যিকে গ্রহণ করতে চাইতো তাহলে কি এমন মাতলামি এরা করতো? এরা মিথ্যুক হয়ে এতো আনন্দ পায় কেন? অমানবিকতাই কি নাস্তিক্যধর্মের আদর্শ? প্রশ্ন গুলো চিন্তাশীলদের কাছে রেখে দিলাম।
নাস্তিকদের সংশয়বাদী হবার ছলচাতুরীঃ
মহাবিশ্বের উদ্ভব নিয়ে যখন নাস্তিকরা দেখে নিজেদের দাবি প্রমাণ করতে তারা পারছে না অথবা ইন্টেলেকচুয়াল মুসলিমদের সামনে নিজেদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী ভাবে তুলে ধরতে বারবার অক্ষম হচ্ছে তখন নতুন প্যাকেটে নিজেদেরকে বন্দী করে নেয়। আর সেই কারাগার হচ্ছে সংশয়বাদ তথা “আমরা জানি না” “আমরা নিশ্চিত নই’ এসব বলে নিজেদেরকে নিরাপদ রাখার পয়তারা করা। স্কুলে কিছু ছাত্র থাকে যাদেরকে হাজার বার বুঝানোর পরেও ক্লাসে পড়া ধরলে উত্তরে বলে স্যার আমি জানিনা। তারপরে স্যার বাধ্য হয়ে সেসব গণ্ডমূর্খ ছাত্রদেরকে মুরগী করে ক্লাসের বাইরে বসিয়ে রাখে। সবাই তাদেরকে দেখে হাসাহাসি করে। নাস্তিকদের এসব নিন্মমানের চিত্র দেখে আমরাও হাসাহাসি করি।
স্রষ্টার অস্তিত্ব আছে নাকি এই বিষয় নিশ্চিত নয় যে তাকেই স্রষ্টা বিষয়ে সংশয়বাদী বলা হয়। কিন্তু সেই সংশয়বাদী যদি নিজের নাস্তিক্যবাদকে অথবা মহাবিশ্বকে কেউ বানায় নাই এসব দাবির দিকেই বা এসব দাবির পক্ষেই কথা বলে তাহলে কি তাকে সংশয়বাদী বলা যাবে? নাস্তিকরা সামনে আপনি যখন স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রমাণ দেখাবেন তখন তারা দেখবেন সংশয়বাদী মুড ছেড়ে নাস্তিক্যমুডে বিবর্তন করে। কিন্তু আপনি যখন তাদের কাছে প্রমাণ চাইবেন দেখবেন তারা নিজেদেরকে সংশয়বাদী কারাগারে বন্দী করে নেবে। জানি এই কথা গুলো নাস্তিকরা অনেকেই নিতে পারবে না কিন্তু সত্যিটা তো আমাকে বলতে হবেই। যে প্রকৃত অর্থেই স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে সংশয়বাদী হবে সে নিজে নিজে যাচাই করতে পারে কিন্তু স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই বা আছে কোনো পক্ষেই কথা বা বিতর্ক করতে পারে না। করা উচিত নয়। কারণ সে তো এই বিষয় নিশ্চিতই না। ব্যাপারটা এমন যে কেউ জীবনে লন্ডন দেখে নাই অথচ লন্ডন নিয়ে বিতর্ক করছে। হাস্যকরটা ব্যাপারটা?
যেসব নাস্তিকরা নিজেদেরকে সংশয়বাদী দাবি করে তারা বলেন,
স্রস্টা ছাড়া সব কিছু কোথা থেকে আসলো? কিভাবে চলছে? কোনো প্রশ্নের প্রকৃত উত্তরটি যদি আমাদের অজানা থাকে তাহলে সব চেয়ে সহজ ও সৎ উত্তরটি হবে "আমরা জানি না"। হয়তো আমরা কখনোই এটা জানতে পারবো না ঠিক কিভাবে আমাদের এই মহাবিশ্বের উদ্ভব ঘটেছিল।তাই বলে আমরা এটা ধরে নিতে পারি না যে কোনো অলৌকিক সত্তা বা স্রষ্টাই এই মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করেছে।মহাবিশ্বের উদ্ভব কিভাবে ঘটেছে সেটা আমাদের না জানাটা প্রমান করে না একজন সৃষ্টিকর্তাই মহাবিশ্বের উদ্ভব ঘটিয়েছে।
কোনো প্রশ্নের উত্তর আমরা জানি না বলে নিজেদের মতো করে একটা অনুমান করে নিলেই সেই উত্তরটি সত্য হয়ে যায় না। মানুষ কখনো অজানা নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলো না।কোনো ঘটনার পিছনের রহস্য না জানলে বা না বুঝলে কোনো অতিপ্রাকৃতিক ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছে।বিজ্ঞানের অবদানে এমন অসংখ্য ঘটনা পেছনের রহস্য আজ আমরা জানি যা আগে স্রস্টার লীলা বলে মনে করা হতো।এখনো আমরা মহাবিশ্বের অসংখ্য ঘটনার পেছনের রহস্য জানি না,হয়তো কখনোই জানতে পারবো না।তবে,কোনো ঘটনার পেছনের রহস্য আমরা জানি না মানে এই নয় যে সেই ঘটনার জন্য নিজেদের মতো করে একটি ব্যাখ্যা অনুমান করে নিতে হবে। সত্য যদি আপনার অজানা থাকে এবং আপনি যদি সত্যি জানতে চান, তাহলে অজানাকে মেনে নিয়েই আপনাকে সত্যের খোজে থাকতে হবে।
সচেতনতার সাথে উপরের বক্তব্য গুলো খেয়াল করলে নাস্তিকদের প্রচুর মূর্খতা স্পষ্ট দেখা যায়। উপরের কথা গুলোর উপর ভিত্তি করে আমি কিছু যৌক্তিক প্রশ্ন নাস্তিকদের কাছে রেখে দিচ্ছি। প্রশ্ন গুলো মন দিয়ে পড়ুন। বুঝার চেষ্টা করুন। মহাবিশ্বের উদ্ভব কিভাবে হয়েছে এটা আপনারা নাস্তিকরা জানেন না,এই কথা সত্য হলে এটা কিভাবে ও কোন সত্যের ভিত্তিতে নিশ্চিত জানলেন যে হয়তো আমরা কখনোই এটা জানতে পারবো না ঠিক কিভাবে আমাদের এই মহাবিশ্বের উদ্ভব ঘটেছিল? মহাবিশ্বের উদ্ভব কিভাবে ঘটেছিল এটা আপনাদের অজানা তাহলে এটা কিভাবে নিশ্চিত ধরে নিতে পারলেন যে মহাবিশ্বের উদ্ভব কেউই ঘটায়নি?
আপনাদের না জানাটা যদি এটা প্রমান না করে যে মহাবিশ্বের উদ্ভব স্রষ্টা ঘটিয়েছে তাহলে এটা কিভাবে প্রমান করে যে স্রস্টা মহাবিশ্বের উদ্ভব ঘটায়নি? কোনো প্রশ্নের উত্তর আপনারা জানেন না বলে নিজেদের মতো করে একটা অনুমান করে নিলেই যদি সেটা সত্যি না হয় তাহলে স্রস্টা মহাবিশ্বের উদ্ভব ঘটায়নি এই অনুমানটি কিভাবে আপনাদের কাছে সত্য বলে প্রমানিত হলো? মানুষ কোনো ঘটনার পিছনের রহস্য না জানলে বা না বুঝলে কোনো অতিপ্রাকৃতিক ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছে তাহলে স্রস্টা মহাবিশ্বের উদ্ভব ঘটায়নি এই অতিপ্রাকৃত ব্যাখ্যা কিভাবে সত্য হয়ে গেল আপনাদের কাছে?
বিজ্ঞানের অবদানে আপনারা কিভাবে নিশ্চিত হয়ে গেলেন স্রষ্টার অস্তিত্ব বলে কিছুই নেই? দুনিয়ার সব বিজ্ঞানীরা কি প্রমান করে ফেলেছে মহাবিশ্বের উদ্ভব স্রষ্টা ঘটায়নি? যদি উত্তর হয় "হ্যাঁ" তাহলে আপনারা যে প্রথমে দাবী করেছিলেন "মহাবিশ্বের উদ্ভব কিভাবে ঘটেছিল" এটা আপনাদের অজানা। তাহল সেই কথা কিভাবে সত্যি হলো? যদি উত্তর হয় "না" তাহলে যেই বিজ্ঞানের অবদানে আপনারা নিশ্চিত জানতে পারছেন না সেই বিজ্ঞানের অবদানের কথা কোন যুক্তিতে বললেন? আপনাদের কুযুক্তি গুলোতে কি পরস্পর বৈপরীত্য হচ্ছে না?
এখনো আমরা মহাবিশ্বের অসংখ্য ঘটনার পেছনের রহস্য জানি না তাহলে কিসের ভিত্তিতে আপনারা হয়তো কখনোই জানতে পারবেন না? তবে, কোনো ঘটনার পেছনের রহস্য আমরা জানি না মানে এই নয় যে সেই ঘটনার জন্য নিজেদের মতো করে একটি ব্যাখ্যা অনুমান করে নিতে হবে। তাহলে নিজেদের মতো করে এই অনুমান, ব্যাখ্যা কেন দাঁড় করালেন যে মহাবিশ্বের উদ্ভব স্রষ্টা ঘটায়নি? অজানাকে মেনে নিয়ে সত্যের খোজ কিভাবে করতে হবে? কিসের ভিত্তিতে করতে হবে? আপনারা যেখানে সত্য পান নাই সেখানে অন্যরা কিভাবে এবং কিসের ভিত্তিতে সত্যের সন্ধান করবে?আপনারা যেখানে নিজেরাই সত্য নিয়ে সন্দিহান সেখানে অন্য মানুষদেরকে কিভাবে নিশ্চিত সত্য প্রদান করতে চাচ্ছেন? তা ছাড়া আপনারা কোন যোগ্যতায় অন্যকে সত্য সন্ধানের কথা বলতে পারেন যেখানে আপনারা নিজেরাই সত্য খোজে পান নাই? আপনারা যেই ভিত্তিতে সত্য খোজ করছেন সেটা কি সত্যের মাপকাঠি? সেই মাপকাঠি কে দিয়েছে? কেন সবাইকেই সেটা মানতে হবে যেটা আপনারা দিতে চাচ্ছেন?
মহাবিশ্বের উদ্ভব কিভাবে ঘটেছিল?এটা কি আসলেই নাস্তিকান্ধদের অজানা নাকি একটা প্রতারণা? এর উত্তর হচ্ছে স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই –এই দাবীর স্বপক্ষে যৌক্তিক সন্দেহের উর্ধের প্রমান দেয়া থেকে নিজেদের ইজ্জত রক্ষা করার জন্য নাস্তিকরা বলে থাকে যে মহাবিশ্বের উদ্ভব কিভাবে হয়েছে সেটা অজানা। অথচ মহাবিশ্ব নিয়ে বিস্তারিত লেখা নাস্তিকদের বই পাওয়া যায়।
হুমায়ুন আজাদ লিখিত “মহাবিশ্ব” বইয়ের ১৫,১৬ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছেঃ
মহাবিশ্বের সৃষ্টি বা উদ্ভব সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত তত্ত্ব হচ্ছে “বিগ ব্যাং” বাঙলায় বলতে পারি মহাগর্জন তত্ত্ব। এটিই এখন গৃহীত তত্ত্ব মহাবিশ্বর উদ্ভব সম্পর্কে।.....(বিস্তারিত)....এটিই মহাবিশ্বের উদ্ভব সম্পর্কে সব চেয়ে বিজ্ঞানসম্মত তত্ত্ব; এবং এটিই জনপ্রিয়ও,সাধারন মানুষও এটির প্রতি বোধ করে আকর্ষণ।
হুমায়ুন আজাদ কে? আশা করি এটা আমার চেয়ে নাস্তিকান্ধরা ভালো জানে? তাই উনার বিষয় আলাদা করে কিছু লিখলাম না।উনি পুরো একটি বই লিখেছেন “মহাবিশ্ব” নামে। এই বইতে মহাবিশ্বের উদ্ভব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।অথচ অনলাইনের সস্তা নাস্তিকরা বলে বেড়াচ্ছে মহাবিশ্বের উদ্ভব কিভাবে ঘটেছে সেটা নাকি ওদের অজানা।এসব নাস্তিকান্ধরা কি বই পড়ে না? “মহাবিশ্ব” নামক বইতে হুমায়ুন আজাদ যা লিখেছেন সব ভুল? ভুল হলে কেন ভুল ? আর সঠিক হলে কেন সঠিক? যদি ভুল হয় তাহলে সেই ভুলের বিরুদ্ধে নাস্তিকরা কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে? এমনকি কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (A BRIEF HISTORY OF TIME), স্টেফেন ডব্ল হকিং,ভাষান্তর;ইফতেখার রসুল জর্জ। এই বইতে মহাবিশ্বের উৎপত্তি নিয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে এবং মহাবিশ্বের উদ্ভব যে “বিগ ব্যাং” এর ফলে হয়েছে সেটাও এই বইতে স্বীকার করা হয়েছে। এরপরে ‘অ্যা,ব্রিফার হিস্ট্রি অব টাইম’ মূল স্টেফেন হকিং ও লিওনার্দো ম্লোডিনো, অনুবাদঃ আব্দুল্লাহ আদিল মাহমুদ। লরেন্স এম ক্রাউসের বইই লিখেছে “A UNIVERSE FROM NOTHING”। এসব বইতেও ব্যাপক আলোচনা করা হয়েছে।এসব সেলেব্রিটি নাস্তিকরা কি ভুল অনলাইনের সস্তা নাস্তিকদের কাছে? মহাবিশ্বের উৎপত্তি কিভাবে হয়েছে? এই বিষয় ব্যাপক বই আছে অথচ সস্তা নাস্তিকরা বলছে এসব ওদের অজানা।
অজানা বলে দিলেই প্রমাণ দেয়া থেকে থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না। যদি আপনাদের দাবী হয় এটা “মহাবিশ্বের উদ্ভব কিভাবে ঘটেছে তা আমাদের অজানা” তাহলে স্রষ্টার অস্তিত্ব আছে এর বিপক্ষে কথা বলার যোগ্যতা আপনাদের নেই আবার স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই এর পক্ষেও কথার বলার যোগ্যতা আপনাদের থাকবে না। কেননা আপনারা মহাবিশ্বের উৎপত্তি নিয়ে কিছুই জানেন না একে চরম পর্যায়ের মূর্খতাও বলা হয়ে থাকে। আরও মজার কথা হচ্ছে অজানার কাছে নাস্তিকতা নিয়েও আপনাদের, পক্ষে কথার বলার যোগ্যতা আপনারা হারাবেন।কেননা নাস্তিক্যধর্ম যে সত্য সেটার প্রমান কি ? কারা প্রমান করেছেন? স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই এটা কিভাবে ও কেন সত্য? কোন কোন মানুষ এসব সমস্যার সমাধান করেছেন? তাদেরকে কেন বিশ্বাস করতে হবে? তাদেরকে অবিশ্বাস করলে সমস্যা হবে কেন?
তাছাড়া বিজ্ঞানের উপর অন্ধ বিশ্বাস রাখা নিরাপদ নয়। নাস্তিক্যধর্মের অন্ধ বিশ্বাসীরা বিজ্ঞানের উপর অন্ধ বিশ্বাস করলেও আমরা মুসলিমরা কখনোই বিজ্ঞানের উপর অন্ধ বিশ্বাস করি না । কারন গ্রীক জ্যোতির্বিজ্ঞানী টলেমী আমাদের ফতোয়া দিয়েছিলেন যে সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে । বিজ্ঞান ফতোয়া বিভাগে এই ভুল মিথ্যা ফতোয়া টিকে ছিল পুরো ২৫০ বছর । এই ২৫০ বছরে ধরে পৃথিবীর মানুষ , যাদের মধ্যে আবার বড় বড় বিজ্ঞানী , ডাক্তার , ইঞ্জিনিয়ার ছিল তারাও বিশ্বাস করত যে সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে । এই ২৫০ বছরে তাদের মধ্যে যারা ইন্তেকাল করেছেন তারা এই ভুল বিশ্বাস নিয়েই মারা গিয়েছেন যে সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে। আবার টলেমী হুজুরের বৈজ্ঞানিক ফতোয়ার বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছেন আরেক বিজ্ঞানী নিকোলাস কোপারনিকাস কিন্তু এই মরা বিজ্ঞানীও ঘাবলা করে গেছেন সেটি হল সে বলেছে "সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে না বরং পৃথিবীই সূর্যের চারপাশে ঘোরে আর সূর্য ঘোরে না কিন্ত আজ আজকের জীবিত বিজ্ঞানীরা আমাদের বলছে যে সূর্য স্থির নয় বরং সূর্যও নিজের কক্ষপথে অবিরাম ঘুরছে । শুনলে অবাক হবেন বিজ্ঞানী নিকোলাস কোপারনিকাস হুজুরের ফতোয়া টিকে ছিল ৫০ বছর ।
তাহলে দেখা যাচ্ছে বিজ্ঞানকে অন্ধ বিশ্বাস করার ফলে একজন মানুষকে ‘মিথ্যাকেই’ সত্য জেনে মরতে হচ্ছে যা আমরা মুসলিমরা কখনোই হতে দিতে পারি না।সস্তা নাস্তিকরা বিজ্ঞানবাদে অন্ধ বিশ্বাস রাখতে পারে কিন্তু আমরা সভ্যমনারা রাজি নই।আমরা বিজ্ঞানকে প্রশ্ন করবো, বিজ্ঞান আমাদেরকে যেই প্রমান দেয় সেই প্রমান যাচাই করবো।কারন বিজ্ঞানীরাও আমার আপনার মতোই মানুষ। সুতরাং বিজ্ঞানের উপর অন্ধ বিশ্বাস আমরা করি না আর করবোও না। আগামী ৩০০ বছর পরে যদি সব বিজ্ঞানীরা এটা বলে ঘোষণা দেয় যে স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমানিত সত্য, বিবর্তনবাদ ভুয়া, মিথ্যা এবং নাস্তিকতা পুরোটাই গলদ,তখন যারা আগে মরে যাবে তাদের কি হবে? কি অবস্থা হবে? যদিও বর্তমানে অনেক বিজ্ঞানীরাও এমন কথা বলেন আর তাদের গবেষণা গুলো নাস্তিক বিজ্ঞানীরা লুকিয়ে রাখেন অথবা নষ্ট করে ফেলার চেষ্টা করেন।
যেসব বিজ্ঞানী বিবর্তন বিরোধী অথবা বিবর্তন যে একটা মিথ্যা বিশ্বাস প্রমান করেছেন এরকম বিজ্ঞানীদের গবেষণা সত্য হওয়া সত্ত্বেও তাদের গবেষণা যেন বাইরে বের না হয় এরকম ব্যবস্থা করা হয়।এ বিষয় ইউটিউবে Expelled:No intelligence allowed লিখে সার্চ করলেই সেই ডকুমেন্টারি দেখতে পাবেন। এ বিষয় বিখ্যাত জীবাশ্মবিদ “গুনটার বেকলির”সাথে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনা প্রাধান্য পায়।তিনি জার্মানির স্টাটগার্ডে অবস্থিত স্টেট মিউজিইয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রি –তে কিউরেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গুনটার বেকলি ফসিল ড্রাগনফ্লাই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ।তিনি অনেক গুলো ফসিল ড্রাগন ফ্লাই প্রজাতি আবিস্কার করেন এবং তার নামে একাধিক প্রজাতির নাম করনও করা হয়। তিনি ছিলেন বিবর্তনবাদী এবং ঐ মিউজিয়ামে বিবর্তনবাদ সম্পর্কে নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতেন।কিন্তু গত কয়েক বছর তিনি তার পড়ালেখার আলোকে বিবর্তনবাদের কথিত প্রমাণাদির উপর সন্দেহ পোষণ করতে শুরু করেন এবং শেষ পর্যন্ত এ সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছান যে এলোপাতাড়ি বিবর্তনের প্রস্তাবিত কোন পদ্ধতিী প্রজাতির বিবর্তন প্রমানের জন্য যথেষ্ট না।প্রথম প্রথম তিনি তার সিদ্ধান্ত এর বিষয়টি গোপন রাখেনও গত বছর তা প্রকাশ করেন।যার ফলে তাকে মিউজিয়ামের কিউরেটর পদ থেকে কোন উপযুক্ত কারন প্রদর্শন না করেই অপসারণ করে দেয়া হয়।
উইকিপিডিয়ার মতো তথাকথিত নিরপেক্ষ অনলাইন বিশ্বকোষ থেকে তার পেইজটি এমনভাবে নিশ্চিহ্ন করা হয় যেন জীবাশ্মবিদ্যায় তার কোন অবদানই নেই।
বিস্তারিত দেখুনঃ
https://evolutionnews.org/2017/10/wikipedia-erases-paleontologist-gunter-bechly/
এখানে একটি প্রশ্ন জাগে যে নাস্তিকরা বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে আমাদেরকে স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে বলে অথচ সব বিজ্ঞানী কিন্তু নাস্তিক অথবা আস্তিক নয়। তাহলে বিজ্ঞানের নামে নাস্তিকরা আসলে নাস্তিক বিজ্ঞানীদের কথায় বিশ্বাস করে আমাদেরকে নাস্তিক্যধর্ম গ্রহন করাতে চায় অথচ আস্তিক বিজ্ঞানী আছে, তারাও কিন্তু একই বিজ্ঞানী অথচ এদের গবেষণা নাস্তিকরা অবিশ্বাস করে আবার নিজেদেরকে বিজ্ঞানমনস্ক দাবী করে। হাস্যকর লাগে এসব বান্দরমনাদের লাফালাফি দেখে।
নাস্তিক্যসংশয়বাদীদের আরও কিছু যৌক্তিক প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। প্রশ্ন গুলো হচ্ছেঃ
সংশয়বাদ নিজে কি সংশয় থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত? যদি উত্তর হয় ‘হ্যাঁ’ তাহলে সেটার যৌক্তিকতা কি? যদি উত্তর হয় ‘না’ তাহলে যা নিজেই সন্দেহযুক্ত সেটা নিজে কিভাবে আমাদেরকে সত্য বিষয় জানতে সাহায্য করবে? সংশয়বাদ কি জ্ঞান নির্ভর ? যদি উত্তর হয় ‘হ্যাঁ’ তাহলে সেই জ্ঞানের যৌক্তিক ভিত্তি কি? যদি উত্তর হয় ‘না’ তাহলে এই মূর্খশয়বাদ কিভাবে সমাধান পেশ দিবে? সংশয়বাদ এবং সত্য কি পরস্পর বৈপরীত্য নয়? সংশয়বাদে সত্যের উপস্থিতি যদি থাকে তাহলে সেই সত্য কিভাবে যৌক্তিক সন্দেহের বাইরে? যদি সংশয়বাদে সত্য না থাকে তাহলে সেখানে কি মিথ্যার উপস্থিত থাকছে না কিভাবে? এরমানে কি সংশয়বাদ মিথ্যার উপর নির্ভর করে আছে? নাস্তিকরা নাস্তিক্যবাদ নিয়ে সংশয় প্রকাশ কেন করে না? ডারউইনবাদ নিয়ে কেন সংশয় প্রকাশ করে না? সেকুলারিজম নিয়ে কেন সংশয় প্রকাশ করে না? লিবারেলিজম নিয়ে কেন সংশয় প্রকাশ করে না? নিজের অস্তিত্ব নিয়েই বা কেন সংশয় প্রকাশ করে না? নৈতিকতার অস্তিত্ব নিয়ে কেন সংশয় প্রকাশ করে না?
“স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই” বিশ্বাস করা অন্ধবিশ্বাস না?
নাস্তিক্যবাদের সত্যতার পক্ষে প্রমাণ দিতে নাস্তিকরা হিমশিম খায়। তারা গায়ের জোরে মুমিনদের দিকে প্রমাণ দেবার দায়িত্ব চাপিয়ে দিতে চায়। তারা বলে,যে আগে দাবী করবে প্রমাণ সেই আগে দিবে। দাবির দায়ভার তার,আমার না-প্রশ্ন হচ্ছে এই দাবি কে আগে করেছে? নাস্তিকরা। তাহলে একইভাবে প্রথমে আগে দাবি করলেই যদি আগে প্রমাণ দিতে হয় তাহলে এই দাবি যে করেছে আগে সেই প্রমাণ দিক যে স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই? এটাই তো বেশি যৌক্তিক। স্রষ্টার অস্তিত্ব আছে এর স্বপক্ষে ব্যাপক প্রমাণ যুক্তি ছিল,আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবেই। কিন্তু সেসব প্রমাণ অন্ধবিশ্বাসী নাস্তিকরা স্বীকার করে না কারণ তারা বিচার মানে কিন্তু তালগাছ তাদের নীতিতে চলে। সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের পক্ষে নাস্তিকরা যেমন যৌক্তিক সন্দেহের উর্ধে প্রমাণ চায় একই প্রমাণ স্রস্টার অস্তিত্ব নেই- আমিও ওদের কাছে এ দাবীর পক্ষে একই প্রমাণ চাই কারণ নাস্তিকরা চরম বিশ্বাস করে “স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই” এই দাবী যৌক্তিক সন্দেহের উর্ধে। তাই এটার পক্ষে প্রমাণ থাকা দরকার কি না? স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই-এটি কি একটি দাবী? যদি উত্তর হয় ‘হ্যাঁ’ তাহলে নাস্তিকদের উচিত এর স্বপক্ষে এমন প্রমাণ পেশ করা যেই প্রমাণ হবে যৌক্তিক সংশয়ের উর্ধে। যদি উত্তর হয় ‘না’ তাহলে যেটা স্বয়ং দাবী করারই যোগ্যতা রাখে না সেটার পক্ষে কথা বলা কতটুকু যৌক্তিক?
নাস্তিকদের কাছে প্রমাণ চেয়ে আমি কিন্তু এটা বলছি না যে আমি আমার দাবির পক্ষে প্রমাণ দিব না। আমি অবশ্যই বলি সবাই সবার দাবির পক্ষে প্রমাণ দেবে। নাস্তিক হউক বা আস্তিক। কিন্তু নাস্তিকরা এখানেও প্রতারণা করে অর্থাৎ তারা সব প্রমাণ দেবার ভার মুমিনদের দিকে চাপিয়ে দিয়ে নিজেরা প্রমাণ দেবার দায়িত্ব থেকে রেহাই পেতে চায়। নাস্তিকরা যেহেতু নিশ্চিত মহাবিশ্বকে স্রষ্টা বানায়নি তাহলে আমি তো এই দাবিতে নাস্তিকরা কেন বিশ্বাস করে সেই প্রমাণটি চাইছি। দাবিটির যৌক্তিক প্রমাণ কোথায়? গাণিতিক প্রমাণ কোথায়? বৈজ্ঞানিক প্রমাণ কোথায়? অকাট্য প্রমাণ কোথায়? নাস্তিকদের দাবির প্রমাণ চাওয়াটা কি আমার অপরাধ?
রিচার্ড ডকিন্স, স্যাম হ্যারিস, লরেন্স ক্রাউস এবং লুলামরা নাস্তিক স্টিফেন হকিংদের মতো নাস্তিক বিজ্ঞানীরা কিসের ভিত্তিতে দাবী করে স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই? সেই ভিত্তি কি সঠিক? সেই প্রমাণ কি যৌক্তিক সন্দেহের উর্ধে? কি আছে সেসব প্রমাণে? প্রমাণের সিস্টেম কি? পদ্ধতি কি? সূত্র কি? একই সিস্টেমের প্রমাণ দিয়ে যদি স্রষ্টার অস্তিত্ব সত্য হয় তাহলে কি নাস্তিকরা সেটা সত্য বলে বিশ্বাস করবে? নাকি নাস্তিকরা আসলে নাস্তিক বিজ্ঞানীদেরকে অন্ধবিশ্বাস করে? এটাই কি মুক্তমনা? এটাই কি সততা নাস্তিকদের? সব বিজ্ঞানীরাই নাস্তিক হয় না। এমন অনেক বিজ্ঞানী আছে যারা আস্তিক। যারা স্বীকার করেন মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা আছেন। এখানে নাস্তিকরা একটি প্রশ্ন করতে পারে যে খৃস্টান বিজ্ঞানী আছে যারা মানে যিশু সৃষ্টিকর্তা তাহলে মুসলিমরা কি সেই যিশুকে স্রষ্টা বলে মানবে? এসব গাধাদের প্রশ্নের জবাবে আমি বলতে চাই যে মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা আছেন এই দাবীর পক্ষে সকল আস্তিকরাই এক। সেই সৃষ্টিকর্তাকে কে কি নামে ডাকবে সেটা ভিন্ন বিষয় এবং এই বিষয় সৃষ্টিকর্তা নেই সেটা প্রমাণ করে না। বোঝা গেছে? স্রষ্টার অস্তিত্ব আছেন এটা সকল আস্তিকদের দাবি। স্রষ্টা অস্তিত্ব নেই এটা সকল নাস্তিকদের দাবি।
দুনিয়াতে হাজার হাজার ধর্মের মধ্যে মতভেদ থাকার কারণে যদি নাস্তিকরা সকল ধর্মকে ত্যাগ করে দিতে পারে তাহলে একইভাবে দুনিয়াতে বিজ্ঞানের মধ্যে হাজার হাজার মতভেদ আছে তাহলে কি বিজ্ঞানকেও নাস্তিকরা একইযুক্তিতে ত্যাগ করে দেবে? নাস্তিকরা যদি মহাবিশ্ব নামক বস্তুর ক্ষেত্রে এই বিশ্বাস করতে পারে যে মহাবিশ্বকে কেউ বানায় নাই তাহলে সেই বস্তুর স্রষ্টার ক্ষেত্রে কেন এই বিশ্বাস নাস্তিকরা করতে পারে না যে স্রষ্টা তিনি যিনি শুরু ও শেষ হওয়া থেকে মুক্ত? মহাবিশ্বটা তো বস্তু এই বস্তু তো নিজেই নিজেকে শুন্য থেকে অস্তিত্ব দিতে পারবে না আবার মহাবিশ্ব অস্তিত্বে যা যা দরকার তা তো মহাবিশ্বের কাছে নেই তাহলে কে মহাবিশ্বকে অস্তিত্বে আনলো? স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করেছে? প্রশ্নটি হচ্ছে এমন যে রাধুনিকে কে রান্না করলো? রাধুনিকে কে রান্না করলো প্রশ্নটি যেমন ভুল অর্থাৎ রাধুনিকে কেউ রান্না করলে রাধুনি আর রাধুনি হতে পারতো না সে রান্না হয়ে যেতো তেমনি স্রষ্টাকে কেউ সৃষ্টি করলে সেও আর স্রষ্টা থাকতে পারতো না সে নিজেই সৃষ্টি হয়ে যেতো। তাই স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করেছে প্রশ্নটি বাতিল ও যুক্তিবিরোধী।
কুরআন কি আসলেই চিন্তাশীল হতে বলে?
কুরআন আমাদেরকে কিছু চমৎকার যুক্তি পেশ করেছে যা আমাদেরকে স্রস্টার অস্তিত্বের দিকে দারুণ প্রভাবিত করে। যারা অসুস্থ এবং যারা সত্য অনুভব করতে পারে না তারা এই যুক্তি অনুধাবন করতে পারবে না। কি সেই যুক্তি?
আল কুরআন,সুরা তুর ৫২:৩৫,৩৬,৩৭ আয়াতে বলা হচ্ছে,
তারা কি আপনা-আপনিই সৃজিত হয়ে গেছে, না তারা নিজেরাই স্রষ্টা? না তারা নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছে? বরং তারা বিশ্বাস করে না। তাদের কাছে কি আপনার পালনকর্তার ভান্ডার রয়েছে, না তারাই সবকিছুর তত্ত্বাবধায়ক?
আমাদের এই মহাবিশ্ব এমনে এমনে সৃষ্টি হতেই পারে না। এক্সিডেন্ট অথবা বিস্ফোরণ থেকে কোনো কিছু সৃষ্টি হয় নাকি ধ্বংস হয়? বিবেকবান যৌক্তিক মানুষ এটা বিশ্বাস করবে যে এক্সিডেন্ট বা বিস্ফোরণ থেকে কোনো কিছুই তৈরি হতে পারে না এবং এটা বাস্তব ভিত্তিক বিশ্বাস আমাদের। যেমনঃধরুন একটি বিমান আর একটি গাড়ী এক্সিডেন্ট হলো এখন এই এক্সিডেন্ট বা দুর্ঘটনায় কি ১০০ তালার 5 star হোটেল তৈরি হতে থাকবে? যদি হাজার হাজার বছর সময় দেয়া হয় তাহলে কি এমনে এমনেই হয়ে যাবে? তাহলে মুল যেই প্রশ্ন সেটা হচ্ছে কি এমন শক্তি কাজ করেছে যা দুর্ঘটনার বিস্ফোরণে এতো সুন্দর মহাবিশ্বকে অস্তিত্বে নিয়ে এসেছে?
আল কুরআন,সুরা ওয়াকিয়া ৫৬:৬৩,৬৪ আয়াতে বলা হচ্ছে?
তোমরা যে বীজ বপন কর, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? তোমরা তাকে উৎপন্ন কর, না আমি উৎপন্নকারী?
একটি খেজুরের বীজ কখনো লাগিয়েছেন? দেখবেন কত সুন্দর করে ধিরে ধিরে সেখান থেকে আরেকটি খেজুরের গাছ সৃষ্টি হয় এবং সেখান থেকে খেজুর। চিন্তা করার বিষয় হচ্ছে খেজুরের বীজে কিন্তু আরেকটি খেজুর থাকে না কিন্তু সেটা মাটিতে পুতে দিলে কয়কেদিন বাদ সেখান থেকে আরেকটি খেজুরের গাছ সৃষ্টি হয়। এমনে এমনেই এই সুন্দর সিস্টেম তৈরি হয়ে গেছে? এমনে এমনেই সিস্টেম তৈরি হওয়ার দরকার হলো কেন? আল্লাহই এসব সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহই এসবকে অস্তিত্ব দান করেছেন।
নাস্তিকরা এটার কি ব্যাখ্যা দিবে? যেই ব্যাখ্যাই দেক না কেন সেটা কি গ্রহনযোগ্য? নাস্তিকরা ধরেই নিয়েছে এটা কেউ বানায় নাই অথচ এটা নাস্তিকদের অন্ধবিশ্বাস ছাড়া কিছু না। নাস্তিকরা একটি ভ্রান্ত কথা বলে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টিতে স্রস্টার প্রয়োজন নেই। প্রশ্ন হচ্ছে “প্রয়োজনের অস্তিত্ব” কাকে বলে? এই সংজ্ঞা কে দিয়েছে? নাস্তিকরা কোন মানুষের সংজ্ঞা নিয়েছে? সেই সংজ্ঞা কি বিশ্বাসযোগ্য? যদি মহাবিশ্ব সৃষ্টিতে স্রস্টার প্রয়োজন না হয় তাহলে স্বয়ং “প্রয়োজনের” এটা কেন প্রয়োজন হলো যে মহাবিশ্বকে শুন্য থেকেই প্রয়োজনে আসতে হয়েছে? নাস্তিকদের অযৌক্তিক ব্যাখ্যা আসলে অন্ধবিশ্বাসের ফসল। মহাবিশ্ব স্রস্টা বানায় নাই এই অন্ধবিশ্বাস থেকে নাস্তিকরা মুক্ত হতে পারে নাই। অথচ তারাই নাকি চিন্তার মুক্তিতে বিশ্বাসী।
আল কুরআন,সুরা রাদ ১৩:৪ আয়াতে বলা আছে,
যমিনে বিভিন্ন শস্য ক্ষেত্র রয়েছে-একটি অপরটির সাথে সংলগ্ন এবং আঙ্গুরের বাগান আছে আর শস্য ও খেজুর রয়েছে-একটির মূল অপরটির সাথে মিলিত এবং কতক মিলিত নয়। এগুলো কে একই পানি দ্বারা সেচ করা হয়। আর আমি স্বাদে একটিকে অপরটির চাইতে উৎকৃষ্টতর করে দেই। এগুলোর মধ্যে নিদর্শণ রয়েছে তাদের জন্য যারা চিন্তা ভাবনা করে।
এই আয়াত চমৎকার ভাবে আমাদেরকে চিন্তা করতে বলছে,ভাবতে বলছে,আমাদের চেতনাকে প্রয়োগ করতে বলছে। আপনি একটি বাগান তৈরি করলেন। সেখানে বিভিন্ন ফল চাষ করলেন। সেখানে আম গাছ,কাঁঠাল গাছ,তরমুজ গাছ,খেজুর গাছ আছে। এসব ফলের মধ্যে যেই স্বাদ সেই স্বাদ কি মাটিতে ছিল আগে? সেই স্বাদ কথা থেকে এলো? সেই স্বাদ কে দিলো? কি দরকার ছিল এসব ফলের মধ্যে স্বাদ দেয়ার? এতো বড় মহাবিশ্ব দুর্ঘটনায় সৃষ্টি হতে পারলে আর সামান্য খেজুরের বীজ থেকে দুর্ঘটনায় তরমুজ ফল হতে পারে না কেন? কখনো কি এসব নিয়ে নাস্তিকরা মুক্তচিন্তা করতে পেরেছে?
আল কুরআন,সূরা যারিয়াত ৫১:২০,২১ আয়াতে বলা আছে,
পৃথিবীতে বিশ্বাসী মানুষের জন্যে (বিশ্বাসের) বহু নিদর্শন ছড়িয়ে আছে। খোদ তোমাদের মাঝেও আছে। তবু কি তোমরা তোমাদের চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগাবে না?
আমাদের দেহে আল্লাহর নিদর্শন বা চিহ্ন আছে। চিন্তাশীল ছাড়া কেউই এসব পর্যবেক্ষণ করতে পারে না। আমরা জন্ম গ্রহন করি,এরপরে কিশোর,এরপরে যুবক,এরপরে বৃদ্ধ এরপরে আবার আমাদের মৃত্যু হয়। এই সিস্টেম কেন সৃষ্টি হয়েছে? দুর্ঘটনায় যদি এতো কিছু সৃষ্টি হতে পারলো তাহলে দুর্ঘটনায় এই সিস্টেম উল্টো হতে পারলো না কেন? দুর্ঘটনায় এমন হতে পারতো যে হটাত কয়েক বছর জন্ম হয়েই বৃদ্ধ এরপরে যুবক,এরপরে কিশোর এরপরে শিশু এরপরে মৃত্যু, এমন হয় না কেন দুর্ঘটনায়? আমাদেরকে জন্মই বা হতে হয় কেন? মৃত্যুই বা হতে হবে কেন আবার? কেন এখানে এসেছি? কি উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছি? কে এই জটিল জটিল সিস্টেম গুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন? আল্লাহই এসব সিস্টেম সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহই এসবকে অস্তিত্ব দিয়েছেন। আল্লাহই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন দেখেই সব সুত্র এখনো সঠিক অবস্থাতে থাকতে পারছে। স্রষ্টার অস্তিত্ব যে ফ্যাক্ট এটা যৌক্তিক সন্দেহের উর্ধে।
আল কুরআন,সুরা কাহফ ১৮:২৯ আয়াতে বলা আছে,
সত্য তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত। অতএব, যার ইচ্ছা, বিশ্বাস স্থাপন করুক এবং যার ইচ্ছা অমান্য করুক। আমি জালেমদের জন্যে অগ্নি প্রস্তুত করে রেখেছি, যার বেষ্টনী তাদের কে পরিবেষ্টন করে থাকবে। যদি তারা পানীয় প্রার্থনা করে, তবে পুঁজের ন্যায় পানীয় দেয়া হবে যা তাদের মুখমন্ডল দগ্ধ করবে। কত নিকৃষ্ট পানীয় এবং খুবই মন্দ আশ্রয়।
মহাবিশ্ব সৃষ্টির আগে আল্লাহ কি দেখতেন?
নাস্তিকরা স্রষ্টার বিষয়ে অনেক অযৌক্তিক ফালতু প্রশ্ন করে। নাস্তিকরা প্রশ্ন করে কুরআন অনুসারে আল্লাহ সব দেখেন তাহলে তিনি সর্ব প্রথম যে জিনিস সৃষ্টি করেছিলেন তা সৃষ্টি করার আগে তিনি কি দেখতেন? বা কি দেখেছিলেন? ইসলামের দৃষ্টিতে এই প্রশ্নের জবাব খুবই সহজ। আল্লাহ এই মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করার আগে তিনি কি দেখতেন বা কি দেখেছিলেন সেটা আমাদেরকে জানান নাই। অথবা সেই মুহূর্তের কথা বা সম্পূর্ণ অবস্থান আমাদের অজানা। আল্লাহর দেখার ধরণ কেমন সেটাও আমরা সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা করতে পারি না। এমনকি এটা আমাদের জানাও জরুরি না। কেউ যদি এই প্রশ্নের উত্তর জীবনে নাও জানে তারপরেও তার, না লাভ হবে আর না ক্ষতি।
যদিও এটাকে আমি জবাব হিসেবে বলছি না তর্কের খাতিরে বলছি। ধরুন যদি বলা হয় যেহেতু সব কিছু সৃষ্টির আগে আল্লাহর অস্তিত্বই বিরাজমান ছিল সেহেতু আল্লাহ উনার অস্তিত্বই দেখে থাকবেন। কিন্তু দেখার ধরণ কেমন সেটা আমরা জানি না। এখন বলুন তো এই উত্তর জেনে কি লাভ হয়েছে? নাস্তিকরা সব স্রষ্টাকে মেনে নিবে? কিন্তু এসব প্রশ্নের মধ্যে যেই ব্যাপারটা বুঝতে পারা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হচ্ছে স্রষ্টা কি দেখতে পারেন বা উনি কিভাবে দেখেন, উনি কেমন এসব প্রশ্ন স্রষ্টার অস্তিত্বকে বাতিল করতে পারে না। আর আল্লাহর দেখা আর মানুষের দেখা এক না। আল্লাহর কোনো কিছু দেখতে যে মানুষের মতো চোখ লাগবে এটা জরুরি নয়। কারন কুরআনের সুরা শুরা ৪২ঃ১১ আয়াতে বলেছেন, তাঁর মতো কিছু নেই আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। তাহলে চোখ দিয়েই মানুষের মতো আল্লাহকে দেখতে হবে এটা গলদ কথা। আল্লাহ কিভাবে দেখেন এটা উনি ভালো জানেন। মহাবিশ্বের আগে উনি কি দেখতেন কিভাবে দেখতেন এসব কিছুই উনিই ভালো জানবেন।
ধরুন আপনি বরিশালে যাওয়া পথে লঞ্চ ডুবে মারা গেলে। মারা যাওয়ার কয়েক ঘন্টা আগে আপনি আপনার মাকে কল দিয়ে জানিয়ে দিলেন মা তোমার জন্য একটা চিঠি লিখতেসি। সেখানে আমার মনের কিছু কথা লিখা থাকবে যা আমি কখনোই কাউকে জানাই নাই। আপনার মা এই কথা আপনার বাবাকে বলেছে। এখন আপনি যে মারা গেলেন আপনার মাকে যদি বাবা প্রশ্ন করে আমাদের ছেলেটা নাকি কি একটা চিঠি লিখেছিল সেখানে কি লেখা ছিল? খেয়াল করে শুনুন সেই চিঠিতে কি লেখা ছিল? এটার একমাত্র উত্তর হচ্ছে স্রেফ আপনিই জানেন। আর কেউই জানে না। এই সাহজ উদাহরণ বুঝে থাকলে বলুন আল্লাহ সব কিছু বানানোর আগে কি করতেন? এখন কি করছেন? কি অবস্থায় আছে? এসবের একমাত্র উত্তর হচ্ছে আল্লাহই ভালো জানেন। যেহেতু উনি আমাদেরকে এসব জানান নাই।
স্রস্টার অসীমতার মধ্যে শুন্যতা কোথায় ছিল?
নাস্তিকরা প্রশ্ন করে,
সৃষ্টি শব্দের অর্থ অনস্তিত্বশীল কোনকিছুকে অস্তিত্বে আনা। প্রকৃতিতে কোন কিছুর উপাদান গুলো আগেই বিদ্ধমান থাকলে তাকে আর সৃষ্টি বলা যায় না,তৈরি বা বানানা বা রূপান্তর বলা যায়। তাহলে মহাবিশ্ব ও সকল কিছু সৃষ্টির পূর্বে অসীম আল্লাহ পাক ছাড়া আর কিছুই তো ছিল না। সেই অসীমতার (আল্লাহর) মধ্যে শুন্যতা কোথায় ছিল? অসীম (আল্লাহ) আর শুন্যতা একই সাথে অবস্থান করতে পারে না কারন একটি অপরটির অস্তিত্ব ভুল প্রমান করে।
নাস্তিকদের এমন কথাবার্তা পড়লে বুঝা যায় তারা যুক্তিবিদ্যা সম্পর্কে কতটা দুর্বল। যখন মহাবিশ্ব ছিল না তখন শুধুই আল্লাহ ছিলেন। আল্লাহ স্বয়ং অস্তিত্বহীনতা থেকে শুন্যতাকে বানাতে পারেন এবং এই শুন্যতা বানাতে হলে আগে থেকেই শূন্যতার একটা ডেমো বা মোডেল আল্লাহর দেখতে হবে এটা জরুরি না। আল্লাহ এসবকে সহজ ভাবেই বানাতে পারেন।এটা আল্লাহর কাছে কঠিন কিছুই না একেবারেই সহজ। এভাবেও যদি বলি তাও সমস্যা নেই শুন্যতা আগে থেকে ছিল না আল্লাহ শুন্যতা বানিয়েছেন এবং সেখান থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন। এখন আপনি যদি আল্লাহর অস্তিত্ব স্বীকার করেন এই সাধারন বিষয় বুঝতে পারা কি একেবারেই কঠিন নাকি পানির মতো সহজ?
অসীম (আল্লাহ) আর শুন্যতা একই সাথে ছিল এটা কে বলেছে? কুরআন সুন্নাহের কোথায় আছে আল্লাহ আর শুন্যতা একই সাথে ছিল? এরকম কোন তথ্য আমি তো পাইনি, আপনারা কোথা থেকে পাইলেন? প্রমান দিয়েন,কেমন? প্রকৃতিতে কোন কিছুর উপাদান গুলো আগেই বিদ্ধমান থাকলে তাকে আর সৃষ্টি বলা যায় না,তৈরি বা বানানা বা রূপান্তর বলা যায়- নাস্তিকরা এই তথ্য কোথায় পেল যে আল্লাহ মহাবিশ্ব সৃষ্টি করার আগেই প্রকৃতি সেখানে উপস্থিত ছিল?এমন দাবী কুরআন সুন্নাহের কোথায় আছে? যদি না থাকে এমন দাবী করা কি সঠিক হয়েছে নাস্তিকান্ধদের?
আর অসীম (আল্লাহ) আর শুন্যতা একই সাথে অবস্থান করতে পারে না কারন একটি অপরটির অস্তিত্ব ভুল প্রমান করে? - আল্লাহর কাছে শূন্যতাও একটি সৃষ্টি। এবং এই শূন্যতাকে বানাতে হলে আল্লাহর "শূন্যতার" সাথে একই অবস্থানে থাকতে হবে না। আল্লাহ শূন্যতার সাথে একই অবস্থানে না থেকেও শূন্যতাকে বানানোর ক্ষমতা রাখেন।এই সহজ কথা ডারুউইন দাদার চেলারা বুঝেনা কেন? তারপরেও যুক্তির খাতিরে যদি ধরেও নেই যে অসীম আল্লাহ আর শুন্যতা একই সাথে আছে বা অবস্থান করতে পারে তাও সমস্যা হবে না কারন স্রষ্টা নিজেই যেখানে শুন্যতা সৃষ্টি করেছেন এবং স্রষ্টা অবশ্যই শুন্যতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন এবং এই নিয়ন্ত্রণের ফলে স্রস্টার অস্তিত্ব অথবা স্রস্টার ক্ষমতার প্রতি বিন্দুমাত্র প্রভাব পরবে না। কারন শূন্যতাও আল্লাহর সৃষ্টি যাকে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আনা হয়েছে।
মহাবিশ্ব অসীম হলে স্রস্টার অস্তিত্ব কি বাতিল হবে? উত্তর হচ্ছে, যদি বলেন মহাবিশ্বের স্বাধীনতা আছে,ইচ্ছা শক্তি আছে,শুরুও নাই আবার শেষও নাই তাহলে মহাবিশ্ব স্বয়ং বাকি সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা হয়ে যাচ্ছে না? কারন সৃষ্টিকর্তা তো সেই যা সব কিছুকেই সৃষ্টি করবেন। শুধু কি তাই?সৃষ্টিকর্তার শুরু নাই,শেষ নেই এবং উনি সর্বশক্তিশালী,উনার স্বাধীনতা আছে,স্বয়ং ইচ্ছা শক্তি আছে একই কিছু যদি মহাবিশ্বের থাকে তাহলে মহাবিশ্বই নাস্তিকদের সৃষ্টিকর্তা হয়ে যাবে না? এই সমস্যার সমাধান কি?
মহাবিশ্ব অসীম হলে সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন নেই – প্রশ্ন হচ্ছে “প্রয়োজনের অস্তিত্ব” কাকে বলে? মহাবিশ্ব কি স্বয়ং সম্পূর্ণ? মহাবিশ্ব কি প্রয়োজনের মুখাপেক্ষী? মহাবিশ্ব অসীম হলে স্রস্টার প্রয়োজন নেই তাহলে মহাবিশ্বের অসীমতা থেকে বাকি সব কিছু আসার প্রয়োজন হয়েছে কেন? যদি আপনি বলেন মহাবিশ্বের শক্তি আছে,স্বাধীনতা আছে,শুরু নাই আবার শেষও নেই তাহলে আমরা আস্তিকরা আমাদের ভাষায় এমন মহাবিশ্বকে সৃষ্টিকর্তা বলবো কারন মহাবিশ্বের অসীমতা ধারনা যদি সেটাই হয় তাহলে আমাদের আস্তিকদের সেটা মানতে সমস্যা নেই। কিন্তু মহাবিশ্ব যদি অসীম হয় আর মহাবিশ্বের যদি স্বাধীন ইচ্ছা,সর্বশক্তিমান না হয় তাহলে আমাদের যৌক্তিক আপত্তি আছে,থাকবে।
যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেয়া হয় স্রষ্টা বলে কিছুই নেই। এখন সম্পূর্ণ স্রস্টাকে এরিয়ে গিয়ে আসুন মহাবিশ্বের অসীমতার ধারনাকে ব্যাখ্যা করি দেখি এটা যৌক্তিক কিনা। যদি এটা হয় মহাবিশ্ব অসীম অর্থাৎ এর শুরুও নাই আবার শেষ ও নাই,স্বাধীনতা নেই,নিজের ইচ্ছা শক্তি নেই তাহলে আমাদের অস্তিত্বই আসতো না। আমাদের সব অস্তিত্ব যেখানে বুদ্ধিমান সত্ত্বার দিকে ইশারা দেয় সেখানে মহাবিশ্ব যেহেতু যদি সম্পূর্ণ শুন্যতাময় অসীম তাই এখান থেকে বাকি কিছু অস্তিত্বে আসতেই পারে না।মহাবিশ্বের যদি ইচ্ছা শক্তি না থাকে,স্বাধীন না তাহলে তাহলে তো অসীম থেকে অসীম হওয়ারই কথা অসীম থেকে সসীম হলো কোন উদ্দেশ্যে কেন?
এটা কিভাবে?
মহাবিশ্ব কি নিজে স্বয়ং শক্তিশালী? যদি উত্তর হয় না ।
মহাবিশ্বের কি স্বয়ং স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি আছে? যদি উত্তর হয় না।
মহাবিশ্বের কি স্বয়ং পারফেক্ট বুদ্ধিমত্তা আছে? যদি উত্তর হয় না।
তাহলে সাধারন প্রশ্ন জাগে, মহাবিশ্বের যদি স্বাধীনতা না থাকে,ইচ্ছা না থাকে,বুদ্ধি না থাকে তাহলে কিভাবে সেই অসীম থেকে সকল কিছু সৃষ্টি হতে পারে? তাহলে মুল কথা তো সেই একই হয়ে যাচ্ছে যে শুন্যনামক মহাবিশ্ব থেকে বাকি সব অস্তিত্বে এসেছে? মহাবিশ্ব অসীম এর পিছনে যৌক্তিকতা কি? প্রমান কি ? অসীমতার (স্রষ্টার অস্তিত্ব বাদ দিয়ে) শুন্যতা থেকেই বাকি সকল সৃষ্টির অস্তিত্ব কিভাবে এসেছে? ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নিন। অসীম ০+ অসীম ০ = ১ হবে না। গানিতিক যুক্তিতেও বুঝা যাচ্ছে মহাবিশ্ব অসীম হলে অন্য সকল কিছুই সেখান থেকে আসতে পারতো না।আর এসব যৌক্তিকতা থেকে সিদ্ধান্তে আসা যায় মহাবিশ্ব নিজে আসলে অসীম না।
নাস্তিকদের সামনে যেই যৌক্তিক প্রশ্ন গুলো উঠবে–নাস্তিকদের কথা অনুযায়ী মহাবিশ্ব স্রষ্টা থেকে নয় বরং শুন্য থেকে এমনে এমনেই এসেছে।তাহলে শূন্যতার ঠিক কোন জাগায় মহাবিশ্বের অস্তিত্ব ছিল? এবং সেখান থেকে কিভাবে এমনে এমনেই বের হয়েছে? শুন্যতা অর্থ যদি হয় যেখানে "কিছুই ছিল না" তাহলে সেখান এমন কি ঘটেছে বা কি এমন কিছু ছিল কি না, যার সাহায্যে মহাবিশ্ব এমনে এমনেই এসেছে? কিসের মাধ্যমে?সেই মাধ্যম কি ? শুন্যতা আর মহাবিশ্ব কি একই সাথে অবস্থান করতে পারে?যদি মহাবিশ্ব শূন্যতার মধ্যে পূর্ব থেকে অস্তিত্বে থাকে তাহলে সেটা কিভাবে আর বিস্ফোরণের ফলেই কেন মহাবিশ্বকে আসতে হবে?আর যদি অস্তিত্বে না থাকে তাহলে এসেছে কেন?
মহাবিশ্ব শুন্যতা থেকে আসার প্রয়োজন হয়েছে কেন?প্রয়োজনের অস্তিত্ব কি আগে থেকেই ছিল নাকি শুন্যতা সেই প্রয়োজন সৃষ্টি করেছে?কিভাবে করেছে? শুন্যতা থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টির প্রয়োজন কেন হয়েছে? শুন্যতা আর মহাবিশ্ব যদি অসীম হয় তাহলে এরা একই অবস্থাকে থাকে কিভাবে? যদি শুন্যতা অসীম না হয় তাহলে এটা কেন ও কিভাবে হয়েছে? আর যদি মহাবিশ্ব অসীম হয় তাহলে সেটা কেন? এই অসীমকে, মহাবিশ্ব বানিয়েছে কে? যদি শূন্যতা আর মহাবিশ্ব সসীম হয় তাহলে অসীম থেকে কিভাবে এলো? মহাবিশ্ব এবং সকল কিছু যদি শুন্যতা থেকে আসে তাহলে মহাবিশ্ব যদি শুন্য থেকে আসে তাহলে সকল কিছু কেন শুন্যতা থেকে আসতে পারে না?যেমন আম গাছে এমনে এমনেই কেন কাঁঠাল ধরে না? সন্তান কেন বাবা মা ছাড়া শুন্য থেকে এমনে এমনেই হতে পারে না?কোনো খাবার না খেয়েই এমনে এমনেই কেন ক্ষুধা দূর হয় না?মুমিনরা এমনে এমনেই কেন সব দুনিয়ায় থেকে চলে যায় না?নাস্তিকান্ধরা অন্য প্রশ্ন দেখে কান্না করলেও এই প্রশ্নে খুব খুশি?
যুক্তির খাতিরে যদি ধরেও নেই অসীম আর শুন্যতা একই সাথে অবস্থান করতে পারে না কারন একটি অপরটির অস্তিত্ব ভুল প্রমান করে-প্রশ্ন হচ্ছে অসীম আর শুন্যতা এক সাথে থাকতে পারে না এই তথ্যের ভিত্তি কি নাস্তিক্যধর্মের কাছে? কার কথা বিলিভ করে এই কথা হয়েছে?নাস্তিদকের কাছে অসীমের অস্তিত্ব আছে? শূন্যতার অস্তিত্বের প্রমান কি? নাস্তিকরা স্রস্টার অস্তিত্বের যেই প্রমান চায় সেই প্রমান দিয়ে স্বয়ং অসীম আর শূন্যতার অস্তিত্বকে প্রমান করতে পারবে নাস্তিকরা?সেই প্রমান কিভাবে যৌক্তিক সন্দেহের বাইরে থাকবে? স্রষ্টা আছে এটা নাকি মুমিনরা ধরে নেয় তাহলে একই যুক্তিতে স্রষ্টা ছাড়াই মহাবিশ্ব নিজে নিজেই এসেছে এটা নাস্তিকান্ধদের ধরে নিতে হবে কেন? "স্রষ্টা নেই" এই তথ্য ছাড়া মহাবিশ্বের অস্তিত্বকে ব্যাখ্যা কিভাবে করা সম্ভব? স্রষ্টা নেই এই তথ্য কি যৌক্তিক সন্দেহের বাইরে?
নাস্তিকান্ধরা অনেক সময় বলে থাকে "স্রষ্টা নেই" এটা যদি প্রমান নাও হয় এরমানে কি এটা প্রমান হয় যে স্রষ্টা আছে? - একই প্রশ্নের ভিত্তিতে এই প্রশ্ন অটোম্যাটিক চলে আসে যে যদি মুমিনরা "স্রস্টার অস্তিত্ব আছে" এর পক্ষে প্রমান নাও দিতে (হাজার হাজার প্রমান দেয়া হয়েছে) পারে তাহলে কিভাবে এটা কিসের ভিত্তিতে প্রমান আছে যে স্রস্টার অস্তিত্ব নেই?নাস্তিক্যধর্ম কি সমাধান দিবে? মহাবিশ্ব যখন শূন্যতা থেকে আসছিল তখন কি সেখানে সত্য উপস্থিত ছিল নাকি মিথ্যা?সত্যি বা মিথ্যা যাই আসুক না কেন, কিন্তু মহাবিশ্ব আসার পরেই কেন আসতে হয়েছে?
স্রষ্টাকে মানবো কি মানবো না?
মুক্তমনা নাস্তিকদের অন্যতম ভিত্তি হল বস্তুবাদ। বস্তুই সব। বাস্তবতা ছাড়া যা আছে সবই অবাস্তব ও প্রমাণিত না আর স্রষ্টাকে না মানার কারণের মধ্যেই অন্যতম কারণ হল এই বস্তুবাদ। স্রষ্টাকে দেখা যায় না তাই নাস্তিকরা তাঁকে মানে না। নাস্তিকদের সকল কথাবার্তা পর্যবেক্ষণ করলে এটাই বুঝা যায় যে নাস্তিকরা স্রষ্টাকে দেখা যায় না দেখে মানে না।
আমাদের বুঝতে হবে আমাদের দৃষ্টি ১০০% সব কিছুই দেখে নেবার জন্য ক্ষমতাবান কিনা। তীব্র রোদে খালি চোখে সূর্যের দিকে ১০ সেকেন্ড তাকাতে আমরা পারি না। আমরা অন্ধকারে দেখতে পাই না। আমরা বিনা সাহায্যে আমাদের কপালটা পর্যন্ত আমরা দেখতে পারি না। বর্তমানে থেকে অতীতকাল ও ভবিষ্যৎকালকে আমরা সাথে সাথেই সাহায্যহীন দেখতে পাই না। কোটি কোটি মাইল দূরে কি আছে সেটা আমরা সরাসরি দেখতে পারি না। আমাদের পেটের ভিতর কি আছে সেটাই তো খালি চোখে কিছুর সাহায্য ছাড়া আমরা দেখতে পারি না। তাই আমাদেরকে এটা মেনে নিতেই হবে আমাদের চোখ সৃষ্টি জগতেরই হাজার জিনিস দেখার যোগ্যতা রাখতে পারে না সেখানে মহাবিশ্বের মতো বিশাল বস্তুর অস্তিত্বকে যিনি সৃষ্টি করেছেন উনাকে এই সামান্য চোখ দিয়ে দেখতে চাওয়াটাই অযৌক্তিক।
নাস্তিকতা নাকি যুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত তাই তারা কোনো কিছুকে বিশ্বাস করে না। আমার প্রশ্নটি হচ্ছে এই কথার উপর তাদের বিশ্বাস আছে কিনা? যদি বলে হ্যাঁ তাহলে তারাও বিশ্বাস করে আর যদি বলে না তাহলে যেই নাস্তিক্যবাদে তাদের বিশ্বাস নাই সেই অবিশ্বাসযোগ্য মতবাদকে আমরা কেন বিশ্বাস করবো? সব কিছুকেই যুক্তি দিয়ে বুঝতে হবে এমন ধারনা সব সময় সব ক্ষেত্রে ঠিক না। কারণ যুক্তির সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এটা মানতে হবে। যুক্তি দেয়া যাবে না আমি কিন্তু এই কথা বলছি না। আমার কথার ভুল বুঝলে হবে না। আমরা যখন ম্যাজিক দেখি তখন আমরা আনন্দিত হই। কেন? কারণ যাদুকর কিভাবে কৌশল করে তার জাদুটি দেখায় সেটা আমাদের অজানা বা আমরা ঐ সময় বুঝি না জাদুর আসলে সূত্রটা কি? যাদুকর দেখাবে যে, বড় একটি রশি সাপ হয়ে গেছে , কিন্তু এখানে একটি কৌশল আছে , সুত্র আছে যা আমরা জানি না তাই আনন্দিত হই। কিন্তু আমাদের অভিজ্ঞতা বলছে রশি সাপ হতে পারে না কিন্তু দেখা গেল যুক্তি ফেইল করেছে যখন আমরা দেখলাম রশি সাপ হয়েছে। দেখা গেল যুক্তি ফেইল করে যখন আমাদের অজানা থাকে। কিভাবে করা হল সেটা আমরা জানি না তাই অবাক হই। জানানোর মালিক ঐ সময় একমাত্র যাদুকর। সুতরাং যখন দেখছি রশি সাপ হয়ে গেল আর যুক্তি আমাকে বলছে না এটা সম্ভব না আর ঐ কৌশল আমি জানি না তখন আমার যুক্তি ফেইল করেছে অর্থাৎ এখানে যুক্তি ফেল করেছে এখানে যুক্তি লিমিটেড। সুতরাং আমাদের সামনে এমন অনেক ঘটনাই হয় যা আমরা যুক্তি দিয়ে বুঝে উঠতে পারি না। সুতরাং যুক্তি সব সময় সব ক্ষেত্রেই কাজ হবে ব্যাপারটা তা নয়।
আমাদের মগজ, আমাদের চোখ, আমাদের হাত,পা, মাথা সব কিছুর সন্নিবেশনে আমাদের আরেকটি শক্তি আছে। যেটা আমাদের ইন্দ্রিয়ের বাইরে। সেটা হল অনুধাবন শক্তি। আমাদের অনুধাবন শক্তি দিয়ে অনেক দূরের বিষয়কেও আমরা খুজে বের করতে পারি। যেহেতু নাস্তিকদের কাছে এমন অকাট্য কোনো প্রমাণ নেই স্রষ্টার অস্তিত্ব না থাকার তাই দ্বিতীয় আর কোনো অপশন নেই সে জায়গা দখল করবার তাই আমাদেরকে এই সিদ্ধান্তে আসতে বাধ্য হতে হবে পারফেক্ট স্বয়ংসম্পূর্ণ স্রস্টাই এই মহাবিশ্বকে অস্তিত্বে এনেছেন। মহাবিশ্বের অস্তিত্বের ক্ষেত্রে আমাদেরকে এই সমাধানকেই গ্রহণ করে নিতে হচ্ছে। এর বিকল্প উপায় নেই। এটা গাণিতিকভাবেও অকাট্য সত্য।
“শূণ্য + শূন্য”= “শূন্যই হবে”। আপনি হাজার বার ট্রাই করলেও ১ বের করতে পারবেন না। আপনি ক্যালকুলেটর ০+১ দেন = ১ আসবে। মানে অর্থ পূর্ণ সংখ্যা বের হবে। কিন্তু ০+০= ১ এটা জীবনেও আপনি বের করতে পারবেন না, আর এটা সম্ভবও না। শুন্য থেকে যদি এক হওয়া সম্ভব না হয়য় তাহলে আমাদের মহাবিশ্ব শুন্য থেকে কিভাবে অস্তিত্বে আসলো? পদার্থ বিজ্ঞানের সুত্র গুলো কোথা থেকে এলো? এলোই বা কেন? মহাবিস্ফোরণ কেন হল? স্রষ্টার অস্তিত্বকে স্বীকার করা ছাড়া এই প্রশ্ন গুলোর সঠিক ব্যাখ্যা করা সম্ভব না। এই গাণিতিক অকাট্য যৌক্তিক প্রমাণ নাস্তিকদের মগজ বুঝতে অক্ষম। নাস্তিকরা যে দিন নাস্তিক্যসংশয়বাদীতা ত্যাগ করে মানুষের মতো যৌক্তিক চিন্তা করতে পারবে সেই দিন এই ব্যাপার গুলো তাদের বোধগম্য হবে। তার আগে না। অথচ যে কোনো যৌক্তিক চিন্তাশীল মানুষ সহজেই বুঝে ফেলবে যে “ কিছুই নাই” “কিছুই নাই-এটাও নাই” থেকে কখনোই “কিছু” আসতে পারেই না। এটা বাস্তব সত্যি কথা। যেহেতু মহাবিশ্ব অস্তিত্বে এসেছে সেহেতু এমন কোনো সত্ত্বাই মহাবিশ্বকে অস্তিত্বে এনেছে যিনি স্বয়ং শুন্য থেকে মুক্ত মানে সর্বদাই অস্তিত্বশীল। নাস্তিকদের সাথে বিজ্ঞানের সম্পর্ক নেই। নাস্তিকদের সাথে সত্যের সম্পর্ক নাই। নাস্তিকদের সাথে যুক্তির সম্পর্ক নাই। আপনি পুরো লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকুন তাহলে নিজেই আসল রহস্যটা উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন।
নৈতিকতা কি মানুষ দিতে পারে?
নাস্তিকরা এই যুক্তিটি বোঝেই না। আসলে বুঝতে না পারাটাই স্বাভাবিক। বুঝতে হলে মানুষের মতো মগজ থাকতে হবে তো। প্রশ্নটি খুব গভীরভাবে খেয়াল করুন নৈতিকতার অস্তিত্ব যদি মানুষ দেয় তাহলে সেটা মেনে নেবার গুরুত্ব বা মহত্ত্বটা কি? আমিও তো নিজের ইচ্ছা মতো নৈতিকতা বানাতে পারি, আপনিও তো পারেন,তাহলে? অন্য মানুষের বানানো নৈতিকতা আমি বা আপনি যেমন মেনে নিতে পারি না তেমনি আপনার বানানো নৈতিকতাও তো অন্যরা মেনে নেবে না। তাই না? মানুষ কি আসলেই নৈতিকতা দিতে পারে? বা পারা উচিত? অথবা মানুষের থেকে নৈতিকতা আমরা কেন নিব? মানুষের দেয়া নৈতিকতা কি যৌক্তিক? বিশ্বাস যোগ্য? কিসের ভিত্তিতে? যুক্তি কি? প্রমাণ কোথায়?
নাস্তিক মুক্তমনারা বলে থাকে আমাদের দেহ আমার সিদ্ধান্ত। আমরা কি করবো নাকি করবো না সেটা আমার ব্যাপার। মুমিনরা এখানে নাক গোলাবে কেন? ইসলামের নৈতিকতার সমালোচনা মুক্তচিন্তায় নাস্তিকরা করে থাকে তাহলে আমরা কেন নাস্তিকদের সমালোচনা করবো না? আমরা কেন নাস্তিকদের বিশ্বাসকে প্রশ্ন করবো না? আমরা কেন নাস্তিকদের মিথ্যাচারের জবাব দেব না? সব চেয়ে বড় প্রশ্ন নাস্তিকদের দেয়া নৈতিকতা কেন আমরা মেনে নিব? আপনি কেন মেনে নিবেন?
আমি যদি নাস্তিকদেরকে বলি, আমি মুক্তচিন্তায় ইসলামকে বিশ্বাস করি। আমি মুক্তচিন্তায় আল্লাহকে সত্যি বলে স্বীকার করি। নবী মোহাম্মদ (সা)কে সত্যি নবী ও রাসুল বলে স্বীকার করি। ইসলামই পারে মানব জাতিকে মুক্ত করে দিতে তাহলে আমার এই মুক্তচিন্তায় নাস্তিকরা একমত হবে? উত্তর হচ্ছে না। এটাই যথেষ্ট বুঝার জন্য যে নাস্তিকরা আসলে মুক্তচিন্তার ভ্যান ধরে আসলে তারা নিজেরাও চিন্তার মুক্তিতে নেই। যদি থাকতো তাহলে মুসলিমদেরকে ইসলাম ত্যাগ করে নাস্তিক্যধর্মের মুক্তচিন্তা করাতে বলতে পারতো না।
খেয়াল করলে আরও দেখবেন ওরা আমাদেরকে বলে ইসলাম ছাড়াও নৈতিক হওয়া যায় বা আমাদেরকে নৈতিক হওয়ার জন্য ইসলামের দরকার নেই,মানবতাবাদী হতে হলে ইসলামের দরকার নেই । ইত্যাদি ইত্যাদি অন্ধবিশ্বাস মার্কা কথা ওরা আমাদেরকে বিশ্বাস করাতে চায়। এদের কথা মানলে মানুষের গোলাম হতে হবে। মুক্তমনার নামে নাস্তিক্যধর্ম কেন মানতে হবে? ডারউইনের বিবর্তনবাদে কেন মানতে হবে? ইসলাম কেন ত্যাগ করতে হবে? স্রষ্টা নেই এই অন্ধবিশ্বাস কেন করতে হবে? এসব মানলে কি মুক্তমনা হওয়া যায়? যারা মুক্ত দাবী করেন তারা কি এসব থেকে মুক্ত হতে পারবেন? পেরেছেন কখনো? এসব থেকে মুক্ত থেকে নিজেকে স্বাধীন বলে ঘোষণা দিতে? কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে আল্লাহর দেয়া নিয়ম ছাড়া মানুষের দেয়া নৈতিকতা মানা কতোটুকু যৌক্তিক? আমি প্রশ্ন করতে পারি আমি মানুষের দেয়া নৈতিকতা মানবো না,মানবো কেন? আমি মানুষের গোলাম হবো কেন? অন্যের কথা অনুযায়ী নৈতিকতা আমি মানবো কেন? আমি যদি নৈতিকতা দেই সে কি মানবে? তাহলে? আমার নৈতিকতা সে না মানলে আমি কেন ওদের নৈতিকতা মানতে যাবো? আমার কি ঠেকা? সুতরাং নৈতিকতা মহাবিশ্বের সত্য স্রষ্টা আল্লাহ থেকে আসলেই মানা সম্ভব এবং এসেছেও। তাই মানুষের দেয়া নৈতিকতা মানার কোনোই কারণ দেখি না। বরং মানুষের দেয়া নৈতিকতা মানলে উনার সাময়িক গোলাম হতে হবে কিন্তু আল্লাহর দেয়া নৈতিকতা মানলে মানুষের গোলাম হওয়া লাগবে না। মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তার নৈতিকতা মেনে উনার গোলাম হওয়া সত্যিই সম্মানের এবং মর্যাদার।
চুরি করা খারাপ এই নৈতিকতা যদি মানুষ দেয় তাহলে সেটার বিন্দুমাত্র মূল্য নেই। কারণ যে মানুষ এই নৈতিকতা প্রথম দিবে সেটাই চুরান্ত করবে কে? কারণ চোরের কাছে চুরি করা কিন্তু ঠিকই নৈতিক? চোর কিন্তু ঠিকই নিজের পক্ষে সাফাই দিবে? চোর নিজেও তো চিন্তার মুক্তিতে এই প্রশ্ন করতে পারে আমিও মানুষ আমার দেহ আছে আমার সিদ্ধান্ত নেবার স্বাধীনতা কেন থাকবে না?
অন্ধবিশ্বাসী নাস্তিকরা আসলে মানুষের দাস। কোন মানুষ? যেই মানুষের আগে টাইটেল থাকবে *নাস্তিক বিজ্ঞানী* ব্যাস। এই মানুষ গুলা যা গিলতে বলবে তাই গিলবে। রিচার্ড ডকিন্স, স্যাম হ্যারিস, লরেন্স ক্লাউস, অ্যালেক্স ইত্যাদি সস্তা নাস্তিকদের কথাই বাকি নাস্তিকরা খায়। এখন ওরা কি সত্যি কয় নাকি মিসা হেইডা অনুসন্ধান করবে না। ওদেরকে নিয়ে প্রশ্ন করলে নাস্তিকদের গায়ে চুলকায়,আর এই চুলকানি কাউকে শেয়ারও করতে পারে না। তাই নাস্তিকদের প্রশ্ন করুন,প্রশ্নের পাথরে বিক্ষত করুন।
নাস্তিক এখানে বলতে পারে আমরা কারও অন্ধ অনুকরণ করি না,"এই মুমিন মিসা কথা কইতাসে", "আমরা মুক্তমনা নাস্তিকরা আমাগো বিবেক দিয়া নির্ণয় করি কোনডা ভালা কোনটা মন্দা"। তাহলে আমার প্রশ্ন বর্তমানে চীনের উইঘুর অসহায় মুসলিমদেরকে নাস্তিক্যধর্মের অন্ধবিশ্বাসী নাস্তিকরা যে নির্মম ভাবে হত্যা করছে, গলা কাটছে, কল্লা ফেলছে, এসব ওদের বিবেক অনুপাতে নৈতিকতা? কমিউনিস্ট নাস্তিকরা যে লক্ষ লক্ষ অসহায় মানুষের কল্লা ফেলে দিয়েছে সেটাই ওদের বিবেক অনুপাতে নৈতিকতা? শুধু কি তাই? ইসলাম নিয়ে জালিয়াতি, রেফারেন্সের ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া, এসব মিথ্যাচার এবং এই মিথ্যাচারকে নাস্তিকরা সত্য বলে বিশ্বাস করে,এটা কি নৈতিকতা? নবীজি (সা)কে নিয়ে যেই গালাগালি, নোংরামি,মিথ্যাচার করে নাস্তিকরা,এসব কি নাস্তিকদের নৈতিকতা? সরলমনা মুসলিমদেরকে ইসলাম নিয়ে মিথ্যাচার করে নাস্তিক্যধর্মের দিকে আহব্বান করা কি নৈতিকতা? আরও উন্মুক্ত প্রশ্ন করতে চেয়েছিলাম কিন্তু করবো না। সত্য বোঝার জন্য এসব প্রশ্নই অনুধাবন করা যথেষ্ট যদি ওদের বোধগম্যতা থাকে তো?
তাই আমি নাস্তিকতার শেকল গোলায় লাগাতে রাজি নই। নাস্তিক্যধর্মের মুক্তচিন্তার কারাগারে আমি বন্দী হতেই চাই না। ডারউইনবাদের মতো অযৌক্তিক মতবাদে আমি বিশ্বাস করতে ভালোবাসি না। আমি নাস্তিক্যবাদকে অবিশ্বাস করি। আমি নাস্তিক্যধর্মের মুক্তচিন্তাকে অবিশ্বাস করি। আমি ডারউইনবাদকে অবিশ্বাস করি। আমি সেকুলারিজমকে অবিশ্বাস করি। আমি লিবারেলিজমকে অবিশ্বাস করি। নাস্তিকতা সম্পূর্ণ যুক্তিবিরোধী একটি বিশ্বাস। ডারউইনবাদ বিজ্ঞানবিরোধী বিশ্বাস। সেকুলারিজম-লিবারেলিজম এসব অকার্যকর ও ভিত্তিহীন পদ্ধতি।
মোরালিটি (নৈতিকতা) সাবজেক্টিভ না অবজেক্টিভ এটা দর্শন শাস্ত্রের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রশ্ন। অবজেক্টিভ মোরালিটি হচ্ছে এরকম- যা ভালো, তা সর্বাবস্থায় ভালো, আর যা খারাপ, তা সর্বাবস্থায় খারাপ। অবজেক্টিভ মোরালিটির ক্ষেত্রে ব্যক্তি বিশেষের পছন্দের কোন স্থান নেই। আপনি পছন্দ করলেন কী করলেন না- এটা অবজেক্টিভ মোরালিটিতে ম্যাটার করে না।
যেমন- মিথ্যা বলা খারাপ। এটা আপনি পছন্দ করেন বা না করেন, এটা খারাপ। মানুষ হত্যা খারাপ। এটা আপনি পছন্দ করেন বা না করেন, এটা খারাপ। ক্ষমা একটা মহৎ গুণ। এটা আপনি পছন্দ করেন বা না করেন, এটা ভালো। সাবজেক্টিভ মোরালিটি হলো আত্মকেন্দ্রিক। ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বিশেষের পছন্দের ব্যাপারকে সাবজেক্টিভ মোরালিটি বলা হয়। যেমন- আপনি বা আপনারা ঠিক করলেন যে মিথ্যা বলা মোটেও খারাপ না, এই বিশ্বাসটাকে বলা হয় সাবজেক্টিভ মোরালিটি। এখন, অবজেক্টিভ মোরালিটি বলে যদি কিছু পৃথিবীতে থাকে, তাহলে একজন স্রষ্টা থাকা আবশ্যক। কেননা, ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বিশেষের কাছ থেকে কখনোই অবজেক্টিভ মোরালিটি আসতে পারে না। কারণ, যা খারাপ, তা সর্বাবস্থায়, সর্বস্থানে, সর্বস্তরে খারাপ। যা ভালো, তা সর্বাবস্থায়, সর্বস্থানে, সর্বস্তরে ভালো। এখানে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী প্রিফারেন্স বলে কিছু নেই। ভালোকে সর্বাবস্থায় ভালো, আর খারাপকে সর্বাবস্থায় খারাপ বলে নির্ধারণ করে দেওয়ার জন্য একজন Supreme Law Giver দরকার। আর, এই Supreme Law Giver হলো স্রষ্টা।
এখন প্রশ্ন হলো, মোরালিটি সাবজেক্টিভ না অবজেক্টিভ? মোরালিটি যদি সাবজেক্টিভ হয়, তাহলে একসময়ের 'দাসপ্রথা' কে আজকে বসে আপনি 'ভুল' বলতে পারেন না। বর্ণপ্রথাকে খারাপ বলা যায় না। হিটলার কর্তৃক 'ইহুদি নিধন' গণহত্যাকে আজকে বসে আপনি 'ভুল' বলতে পারেন না। পল পট কর্তৃক কম্বোডিয়ার গণহত্যাকে আপনি কোনভাবেই 'ভুল' বলতে পারেন না। কারণ, একসময়ের লোক দাসপ্রথাকে ভুল মনে করতো না, ভালো মনে করতো। হিটলার তথা নাযী সম্প্রদায় ইহুদি হত্যাকে জায়েজ মনে করতো। তাহলে, যদি মোরালিটি সাবজেক্টিভ (ব্যক্তি বা গোষ্ঠী নির্ভর) হয়, তাহলে একসময়ের দাসপ্রথা, হিটলার, পলপট, মাও সে তুং- প্রত্যেকেই সঠিক ছিলো। মোরালিটি সাবজেক্টিভ হলে তাদের প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গায় ঠিক।
কিন্তু, কমন সেন্স কী বলে? মানুষ হত্যা কী ঠিক? হিটলার কী তার অবস্থানে ঠিক ছিলো? উত্তর যদি 'না' হয়, তাহলে মোরালিটি সাবজেক্টিভ না, অবজেক্টিভ...মোরালিটি সাবজেক্টিভ না অবজেক্টিভ- এটা একটা দারুন ফিলোসপিক্যাল প্রশ্ন। এই প্রশ্নে নাস্তিকরা প্রায়ই 'ঢোঁক' গিলে চেপে যান। বার্ট্রান্ড রাসেলের মতো একসময়ের বাঘা বাঘা নাস্তিকও এই প্রশ্নটাকে স্কিপ করে যেতো। ইদানীং কালের নাস্তিকরা অবশ্য কিছু আলাপ করে এটা নিয়ে। তাদের পয়েন্ট হলো- মোরালিটি অবজেক্টিভ হলেও, এটা কোনভাবেই স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণ করেনা। এটা স্রষ্টার কাছ থেকে আসতে হবে, এমন কোন কথা নেই।
একজন নাস্তিকের সাথে আলাপ হচ্ছিলো কিছুদিন আগে। সেও বললো,- 'ঠিক আছে, মোরালিটি অবজেক্টিভ। কিন্তু এটা কী প্রমাণ করে যে মোরালিটি স্রষ্টা নির্ধারণ করে দেয়?' আমি বললাম,- 'চুরি করা কী খারাপ?' সে বললো- 'হ্যাঁ।' - 'চুরি করা খারাপ, এই সেন্সটা মানুষের মধ্যে কীভাবে এলো?'- 'সভ্যতার সাথে সাথে।'- 'যেমন?' সে এক্সপ্লেইন করলো এভাবে-'ধরুন, আপনি আমার কাছ থেকে সবকিছু চুরি করে নিয়ে গেলেন। এরপর দেখলেন, পরেরদিন আমি একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেলাম। না খেয়ে মরতে বসলাম। তখন আপনি ফিল করলেন যে আপনি ঠিক করেন নি। কাজটা ঠিক হয় নি।চুরি করা খারাপ। এভাবেই মোরালিটি আস্তে আস্তে গ্রো আপ হয়। মানুষ বুঝতে শিখে, চুরি করা অপরাধ।'
আমি বললাম,- 'এটা তো একটা এসাম্পশন মাত্র। এমনও তো হতে পারতো, ধরুন- আমি আপনার সবকিছু চুরি করে নিয়ে গেলাম। এরপর দেখলাম, আরেব্বাস! কাজটা তো খারাপ না। রাতারাতি ধনী হয়ে যাওয়া যায়। আমি ফিল করলাম, চুরি করা তো ভালো। রাতারাতি অবস্থার পরিবর্তন। এরপর আমি আরো জোরেশোরে চুরিতে নামলাম। আরো ধরুন, আপনিও ফিল করলেন, চুরি করে যদি আমি যদি ধনী হয়ে যেতে পারি, আপনি কেনো পারবেন না? এরপর, আপনিও চুরি তে নামলেন। এমনও তো হতে পারতো। কিন্তু এরকম না হয়ে চুরিকে মানুষ অপরাধ হিসেবে দেখা শুরু করলো কেনো? এটা কীভাবে হলো?'
মজার ব্যাপার। অই নাস্তিক সেদিন বলেছিলো,- 'এমনি এমনি হয়ে গেছে....' আসলেই, নাস্তিকতায় সবকিছু এমনি এমনিই হয়ে যায়। ম্যাজিক শো দেখতে গেলেও, ম্যাজিকের পেছনে একজন ম্যাজিশিয়ান থাকে, নাস্তিকতায় বিলিভ করতে গেলে ম্যাজিককেও ঠুনকো মনে হবে। নাস্তিকতা মতে, পৃথিবীতে ভালো,মন্দ বলে কিছু নেই। বিখ্যাত নাস্তিক রিচার্ড ডকিন্স বলেছিলো-
“The universe we observe has precisely the properties we should expect if there is at the bottom, no design, no purpose, no evil and no good. Nothing but blind pitiless indifference. . . . DNA neither knows nor cares. DNA just is, and we dance to its music.”
রিচার্ড ডকিন্সের মতে, দুনিয়ায় ভালো-খারাপ বলে কিছু নেই।আমরা যা করি, তা কেবলমাত্র আমাদের DNA তে ক্যামিকেল মিউজিকের জন্যই করি। ডকিন্সের লজিক অনুযায়ী, একজন ধর্ষণকারী ধর্ষণ করলে তাকে ব্লেইম করা যাবে না। কারণ, এই ধর্ষণে ধর্ষণকারীর কোন ভূমিকা নেই। সব দোষ তার DNA 'র। একজন খুনীকে খুনের জন্য ব্লেইম করা যাবে না। কারণ, সে তার DNA'র মিউজিক সম্পন্ন করেছে, তার দোষ নেই। এজন্য দেখবেন, নাস্তিকরা সবকিছুর পেছনে ন্যাচারাল কজ খুঁজে। এইযে,সমকামীতাকে বৈধতা, ন্যাচারাল বানানোর জন্য Gay Gene নিয়ে কী কাহিনীটাই না করলো। নাস্তিকরা কিছুদিন আগে Crime Gene নিয়েও কাহিনী করেছে। অর্থাৎ, মানুষ যে অপরাধ করে, মূলত তাতে মানুষের কোন হাত নেই। সে Crime Gene নিয়ে জন্মালে, Crime করবেই। এটা ন্যাচারাল প্রসেস। এজন্য তাকে শাস্তি দেওয়া যাবে না, ব্লেইম করা যাবে না। নাস্তিকদের প্রস্তাবিত পৃথিবী কেমন হবে? যেখানে খুন, ধর্ষণ কোন অপরাধ না। যেখানে অপরাধ হবে, অথচ অপরাধের কোন শাস্তি হবে না। স্বাভাবিক আর ন্যাচারাল বলে মানুষ অপরাধকে নিতে শুরু করবে। ভাবতেই শিউরে উঠি। গা ছমছমে।
নৈতিকতার মানদণ্ড নিয়ে নাস্তিকদের প্রতারণাঃ
নাস্তিকরা বলে,
নীতি নৈতিকতা আকাশ থেকে এসে পড়ে না। আমরাই নীতি নৈতিকতার উৎস, আমরাই নীতি নৈতিকতা নির্ধারন করি।
নাস্তিকদের এমন কথা অনেক সমস্যাপূর্ণ। সব নীতি নৈতিকতা আপনারাই যদি ঠিক করেন তাহলে চোর তার স্ট্যান্ডের নীতিমালা ঠিক করবে এখানে চোরের অপরাধ কি? এটার সমাধান আপনি কেন দেন নাই?
ধরুন একজন লোকের নাম আসিফ মহিউদ্দিন। উনি নিজেকে মুক্তমনা দাবি করে থাকেন। উনার যৌনসাথী রয়েছেন। নাম কানিজ। ধরুন নাস্তিকটি নিজের যৌনসাথীর সাথে সেক্স করতে গিয়ে সম্মতি নিতে ভুলে গিয়েছেন মাতাল থাকার কারণে। এখন সেই যৌনসাথীও স্বীকার করলো যে তাকে মুক্তচিন্তায় ধর্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু যেহেতু এখানে ক্ষতি কারো ক্ষতি হয় নাই সেহেতু অন্য নাস্তিকরা এটাকে বৈধ ধর্ষণ মনে করলো। কিন্তু অন্য দিন সলারিন নামের আরেক নাস্তিক কানিজ নামের নাস্তিক মেয়েকে জবরদস্তি ধর্ষণ করলো। কিন্তু আসিফ বাধা দিলে সলারিন বলল, আমার চিন্তার মুক্তিতে আমি কাকে কি করবো নাকি করবো সেটা তুই বলার কে রে মগাসিফ? সলারিন মগাসিফকে মুক্তবুদ্ধির চর্চা সম্পর্কে বুঝালো যে নাস্তিকদের নৈতিকতা আকাশ থেকে আসে না নাস্তিকরা নিজেরাই নিজেদের নৈতিকতার উৎস। তাই একজন নাস্তিক মুক্তচিন্তা করলে ধর্ষণ করবার মুক্তচিন্তা করতে পারবে। তাহলে নাস্তিকরা কি এই কথাটি মেনে নিবে? কারণ নাস্তিকরা যেভাবে নৈতিকতাকে দেখে সেভাবে ধর্ষণ করা, চুরি করা, মিথ্যা বলা, প্রতারণা করা সব কিছুকেই নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে জায়েজ। কারণ সবাই যদি সবার নৈতিকতা ঠিক করে তাহলে চোর নিজের নৈতিকতা নিজে কেন ঠিক করবে না? ধর্ষক নিজের নৈতিকতা কেন নিজে ঠিক করবে না? দুর্নীতিবাজ নিজের নৈতিকতা কেন নিজে ঠিক করবে না?
নাস্তিকরা বলে,
নাস্তিকরা ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ নৈতিকতার কথা বলে, যা সমাজের সকল মানুষকে সমান চোখে দেখে, ধর্ম পরিচয়ে কাউকে ছোট আবার কাউকে বড় করে দেখে না এবং সকল মানুষকে একে অপরের সহযোগী হতে অনুমোদন দেয়। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, সমাজে সুবিধা ও কল্যাণ বৃদ্ধি করা এবং ক্ষতি ও দুঃখ দূর্দশা হ্রাস করা। সমাজের কোনো মানুষের কোনো কাজ বা আচরণ যদি এই উদ্দেশ্যের বিরুদ্ধে যায় তাহলে তা অনৈতিক বলে গণ্য হবে আর যেসকল কাজ বা আচরণ এই উদ্দেশ্যের বিরুদ্ধে যায় না সেসব কাজ বা আচরণ নৈতিক বলে গণ্য হবে।
যদি তাই হয় তাহলে মুসলিমরা বিশ্বাসের ভাইরাসের আক্রান্ত বলে মুসলিমদেরকে ছোট কেন করা হয়? নবী মোহাম্মদ (সা)কে নিয়ে গালাগালি করে উনাকে কেন ছোট করার চেষ্টা করা হয়? ইসলামের মিথ্যা সমালোচনা করে কেন মুসলিমদের বিশ্বাসকে ছোট করা হয়? নাস্তিকরা যদি সবাইকেই সমান করে দেখে থাকে তাহলে মুসলিম নারীদের বোরখা পরিধান করাকে নাস্তিকরা কেন সমালোচনা করে? মুসলিম পুরুষ দাড়ি রাখলে, টুপি পরিধান করলে, জুব্বা পরাকে নাস্তিকরা মধ্যযুগীয় বর্বর বলে কেন অপমান করতে চাচ্ছে? আসলে নাস্তিকরা বিশুদ্ধ ধোঁকাবাজ। তারা মুখে বলে একটা আর কাজ করে আরেকটা। নাস্তিকরা কখনোই সবাইকে সমান চোখে দেখে না।
নাস্তিকরা বলে,
ধর্মবিশ্বাসীরা মনে করেন, মানুষ কেবল ঈশ্বর এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনের প্রতি বিশ্বাস থেকেই মানুষ খুন করা থেকে বিরত থাকে। তারা মনে করেন, যেহেতু নাস্তিকরা ঈশ্বর এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনে বিশ্বাস করে না সেহেতু নাস্তিকদের কাছে খুন করা খুবই স্বাভাবিক একটি কাজ, নাস্তিকরা ইচ্ছা করলেই খুন করতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কেন খুন করি না? সবাই যদি চাইলেই সবাইকে খুন করে বেড়ায় তাহলে সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে। এই বিষয়টি বুঝাটা খুব সহজ যে, আমরা যদি একে অপরকে খুন করে বেড়াই তাহলে আমাদের সমাজ আর মানব সমাজ হয়ে থাকবে না। আমরা সবাই নিজেদের ভালো চাই, কেউ নিজের খারাপ চাই না। আমরা সবাই নিজেদের জন্য সুবিধা চাই, কেউ নিজের জন্য অসুবিধা চাই না। আর আমরা নিজেদের সুবিধার জন্যই এবং অসুবিধা থেকে দূরে থাকার জন্যই সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করি, নিজেদের জন্যই আমরা সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে বাধ্য। তাই সমাজের সুবিধা সমাজের কল্যাণ নিজেরই সুবিধা নিজেরই কল্যাণ, সমাজের অসুবিধা সমাজের দুর্বিপাক নিজেরই অসুবিধা নিজেরই দুর্বিপাক। সমাজে যদি মানুষ মানুষকে খুন করে বেড়ায় তাহলে সমাজ বলেই আর কিছু থাকে না। তাই মানুষকে খুন করা বা এজাতীয় কাজ ‘খারাপ কাজ’ বলে নির্ধারিত।
আমি মনে করি না যে শুধুমাত্র স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস ও মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে বিশ্বাস থেকেই মানুষ অপরাধ থেকে বিরত থাকে কিন্তু আমি মনে করি এগুলো যথেষ্ট ভূমিকা রাখে অপরাধ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে। পাপবোধ থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। উপরের কথা গুলো খেয়াল করলে বুঝাই যাচ্ছে তারমানে কেউ নাস্তিক যদি চায় সমাজকে ধ্বংস করতে তাহলে সে নিজের স্বার্থ হাসিল করতে সেটা মুক্তচিন্তায় করতে পারবে। সবাই সবার সুবিধা চায় তাহলে কোনও নাস্তিক যদি স্বর্ণ গয়না হাসিল করতে মানুষ খুন করে সহজেই পেয়ে যায় তাহলে এই সুবিধাকে নাস্তিকরা কেন বৈধ বলার সাহস করছে না? নাস্তিকদের যুক্তিতেই তো মানুষ খুন করা জায়েজ বলতে হবে? উইঘুরের নাস্তিকরা যেমন নিজেদের সুবিধা আদায় করবার জন্য মুসলিমদেরকে ধর্ষণ, হত্যা, গুম-খুন সব করছে নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে এসব কাজকে অন্যায় বলার সুযোগ আছে? কারণ সমাজ থেকে মুসলিমদেরকে নাস্তিকরা সরিয়ে ফেলতে চাইছে। তর্কের খাতিরে যদি নাস্তিকদের উপরের কথাকে ধরেও নেই তাহলেও নাস্তিকদেরকে এটা স্বীকার করতে হবেই যে সমাজকে টিকিয়ে রাখার জন্য তাহলে মুক্তচিন্তায় মানুষ খুন করা নাস্তিকদের জায়েজ আছে।
নাস্তিকরা বলে,
আরও সহজভাবে বুঝানোর জন্য বলা যায়, ধরুন, আপনি রাস্তা দিয়ে ফোনে কথা বলতে বলতে হেটে যাচ্ছেন এবং একজন চোর আপনার কান থেকে ফোন থাবা দিয়ে নিয়ে দৌড়ে চলে গেলো। আপনি অবশ্যই বুঝতে পারবেন যে, চোরটি যা করেছে তা একটি অপরাধ, অন্যায় কাজ এবং অবশ্যই খারাপ একটি কাজ। প্রশ্ন হলো, আপনি কেন তা বুঝতে পারবেন? তার কারণ এটি নয় যে কোনো এক গ্রন্থে লেখা আছে ‘চুরি করা খারাপ’। তার কারণ, আপনি জানেন, ফোন চুরি হওয়ার কারণে আপনি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। কারণ, আপনি চান না আপনার নিজস্ব কোনো জিনিস আপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কেউ কেড়ে নিক। আর তাই, চুরি করা বা এজাতীয় কাজ “ভুল বা অন্যায়” বলে বিবেচিত।
এমন দুর্বল নিন্মমানের কথা নাস্তিকদের থেকেই আশা করা যায়। এখানে ফোন ব্যাবহারকারীর কাছে ফোন চুরি করা অনৈতিক হলেও ঐ নাস্তিক ফোন চোরের কাছে কিন্তু ঠিকই নৈতিক এখানে কিভাবে সমাধান দিবেন আপনারা। কারো যদি ২ কোটি টাকা থাকে, আর কোন নাস্তিক যদি সেখান থেকে ২০০ টাকা ছিনতাই করে নিয়ে পালাই তাহলে তা নাস্তিকের জন্য লাভজনক। এবং যার টাকা তার কোনো ক্ষতিই হয়নি। বরং নাস্তিকের লাভ হয়েছে। এটা তাহলে কিভাবে ক্ষতিকর? আর মুসলিম যদি কুরআনে বিশ্বাস করে থাকে আর কুরআনে যদি লেখা থাকে চুরি করা ঠিক না তাহলে সে মুসলিম চাইলেও চুরি করাকে নিজের জন্য ভালো মনে করতে পারবে না কিন্তু একজন নাস্তিক চাইলে ঠিকই নিজের জন্য চুরি করাকে যৌক্তিকভাবে ভালো হিসেবে মনে করতে পারবে। এখানেই পার্থক্যটা।
নাস্তিকরা বলে।
আমরা রাস্তায় ট্রাফিক আইন মেনে চলি। আমরা বাইক চালানোর সময় হেলমেট ব্যাবহার করি, আমরা রাস্তা পার হওয়ার জন্য জেব্রা ক্রসিং ব্যাবহার করি অথবা ওভার ব্রিজ ব্যাবহার করি, আমরা প্রয়োজন মতো হর্ণ ব্যাবহার করি এবং আরও অন্যান্য নিয়মাবলি মেনে চলি। এখন কথা হলো, আমরা কেন এসব নিয়মাবলি মেনে চলি? আমরা কেন এসব নিয়মাবলি মেনে চলি সেই প্রশ্নের উত্তর আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারি যদি আমরা একটু ভাবি যে এসব নিয়মাবলি না মেনে চললে কি হবে বা হয়ে থাকে। আমরা যদি এসব নিয়মাবলি মেনে না চলি যা আমাদেরই সুবিধা সহজতর করতে সাহায্য করে এবং দূর্ঘটনা হ্রাস করে তাহলে আমাদের জীবন চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়বে। নিয়মনীতির অস্তিত্ব এজন্যই আছে যে তারা আমাদের অবস্থার উন্নতি করে, কেবল কোনো বইতে লেখা আছে বলে নয়।
কিন্তু কোনো নাস্তিক চাইলে মুক্তচিন্তায় ট্রাফিক আইন অবিশ্বাস করতে পারে। সে মুক্তচিন্তায় মনে করবে ট্রাফিক আইন মানলে আমার সময় অপচয় হতে পারে তাই আমি নিজেকে সেফ রেখে দ্রুত রাস্তা ক্রস করি। ব্রিজ ব্যাবহার করা থেকে সরাসরি রাস্তা দিয়ে গেলেই সময় বেঁচে যাবে তাই ব্রিজ ব্যাবহার না করে নিজেকে সেফ রেখে সরাসরি যাওয়াটাই ভালো। এই ক্ষেত্রে নাস্তিকরা কি বলবে? সুতরাং স্পষ্ট যে নাস্তিকদের দৃষ্টিতে নাস্তিকরা যেই নৈতিকতার মাপকাঠি দেয় সেটা অযৌক্তিক আর ভিত্তিহীন।
নাস্তিকরা বলে,
কোনো অতিপ্রাকৃত সত্ত্বা বা মৃত্যু পরবর্তী জীবনে বিশ্বাসের প্রয়োজন নেই। নীতিমালা নির্ধারণ করার জন্য।
একইভাবে নীতিমালা নির্ধারণের জন্য আইনের দরকার নেই, বিবেকের দরকার নাই, রাষ্ট্রের দরকার নাই এটা কেন বলছে না নাস্তিকরা? কিন্তু একটু খেয়াল করলেই বুঝা যায় কেউ যদি আসলেই পরকালে বিশ্বাস করে তাহলে তার মধ্যে পাপবোধ ও জবাবদিহিতার ভয় কাজ করবে যা নাস্তিকদের মধ্যে কাজ করবে না। কারণ নাস্তিকরা মুক্তচিন্তা করে আর মুক্তচিন্তায় যা ইচ্ছে সেটাই মুক্ত ভাবে চিন্তা করা জায়েজ আছে। যদি বলে জায়েজ নাই তাহলে সেটা মুক্ত কি করে হয়?
নাস্তিকরা বলে,
সব কিছুই সব মানুষের মঙ্গলের জন্য। নৈতিকতার মাপকাঠিও সেটা।
চোর নিজের মঙ্গলের জন্য চুরি করে। ঘুষখোর নিজের মঙ্গলের জন্য ঘুষ খায়। ডাকাত নিজের মঙ্গলের জন্য ডাকাতি করে। তাহলে নাস্তিকরা মেনেই নিচ্ছে এগুলোই নৈতিকতার মাপকাঠি?
পাঠক বুঝতেই পেরেছেন আশা করি। নাস্তিকদের দ্বারা সমাজের কল্যাণ সম্ভব না। নাস্তিকতা মানব সমাজের জন্য ভয়ংকর। নাস্তিকদের নাস্তিকধর্ম একটি অসভ্য মাপকাঠির উপর ভর দিয়ে চলে। যার শক্তিশালী ভিত্তি নেই। চুরি করা খারাপ, মিথ্যা বলা খারাপ ইত্যাদি এসব কথা সব ইসলাম ধর্ম আমাদের শিক্ষা দিয়েছে। এসব মেনে নিতে প্রতিটি মুসলিম বাধ্য কিন্তু নাস্তিকরা এসব মেনে নিতে বাধ্য না। কোনো মুসলিম চাইলেই ইসলামের বাইরে মুক্তচিন্তা করতে পারবে না কিন্তু নাস্তিকরা চাইলেই নৈতিকতার বাইরে চিন্তার মুক্তির প্রকাশ করতে পারবে।
আল কুরআন,সুরা হজ ২২:৩০ আয়াতে বলা আছে,
দূরে থাকো মিথ্যা কথা হতে।
কোনো মুসলিম চাইলেই এই কথাকে অবিশ্বাস করতে পারবে না। কিন্তু নাস্তিকরা চাইলেই পারবে যেভাবে ইসলামের বিধানে আছে সমকামিতা করা নিষেধ,নাস্তিকরা এই বিধানকে অবিশ্বাস করে। নাস্তিকরা দাসীর সাথে সহবাস করাকে খারাপ করে দেখায় অথচ নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে নাস্তিকরা চাইলে নিজের মায়ের সাথে, বাবার সাথে, দাদার সাথে, আপন ভাইয়ের সাথে, আপন বোনের সাথে, নিজের খালার সাথে সম্মতিতে যৌনচর্চা করতে পারবে। নাস্তিক্যধর্মে এসব জায়েজ আছে। কিন্তু কোনো নাস্তিক যদি চায় তাহলে এসব করবে না। এসব যার যার একান্ত ব্যাপার।
নাস্তিকরা বলে,
ভালো কাজ “ভালো” বলেই কি স্রষ্টা তা আদেশ করেন? এই অংশ থেকে আমরা যা বুঝতে পারি তা হচ্ছে ভালো এবং খারাপ কাজ অন্তর্নিহিত ভাবেই ভালো এবং খারাপ, এর সাথে স্রষ্টা বা কোনো এজেন্ট এর কোন সম্পর্ক নেই,বরং স্রষ্টা বা কোন এজেন্ট কোন কাজ সহজাতভাবেই ভালো এবং খারাপ বলেই সেটা পছন্দ/অপছন্দ করেন। এখানে নৈতিকতা স্রষ্টার মুখাপেক্ষী না, বরং স্রষ্টা নৈতিকতার মুখাপেক্ষী। একই সাথে এটা সর্বশক্তিমান এবং সর্বজ্ঞানী স্রষ্টার ধারনার সাথে সাংঘর্ষিক (a moral law external to and higher than God)। এখানে নৈতিকতার অস্তিত্ব/অবস্থান স্রষ্টার অস্তিত্বের বাইরে/ EXTERNAL, তাই নৈতিকতার জন্যে আমাদের স্রষ্টার প্রয়োজনই নাই।
স্রষ্টার সাথে নৈতিকতার সম্পর্ক নেই দাবিটি STRAW MAN FALLACY একইসাথে স্রষ্টা নিজে নাকি নৈতিকতার মুখাপেক্ষি কথাটিও একটি কুযুক্তি। ভালো যদি আসলেই ভালো হয় তাহলে চোর কেন চুরি করাকে নিজের জন্য ভালো মনে করে? খারাপ যদি আসলেই খারাপ হয় তাহলে নাস্তিক মাও সেতুং কেন গণহত্যাকে খারাপ মনে করেনি? যেখানে স্রষ্টা আমাদেরকে চিন্তাশীল মগজ দান করেছেন এবং সাথেও এটাও বুঝার তৌফিক দিয়েছেন ভালো মন্দ বিষয় তাহলে নৈতিকতার সাথে স্রষ্টার সম্পর্ক কিভাবে থাকে না? স্রষ্টা যেখানে আমাদেরকে নৈতিকতা নিয়ে চিন্তা করার সিস্টেম দিয়েছেন সেখানে স্রষ্টা কিভাবে নৈতিকতার মুখাপেক্ষি হয়? স্রষ্টা দুনিয়া না বানালে তো নৈতিকতাই অস্তিত্ব পেতো না তাহলে স্রষ্টা কিভাবে নৈতিকতার মুখেপেক্ষি হয়? (Morality does not exist without obeying the Creator)। নৈতিকতার জন্য অবশ্যই আমাদের স্রষ্টাকে মেনে নিতে হবে। তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেয়া হয় নৈতিক হতে হলে স্রষ্টার দরকার নাই তাহলে নাস্তিকদেরকে নিজেদের যুক্তিতেই এটা বলতে হবে যে, চোর নিজেই নিজের নৈতিকতা ঠিক করবে,ডাকাত নিজেই নিজের নৈতিকতা ঠিক করে নেবে, ধর্ষক নিজেই নিজের নৈতিকতা ঠিক করবে।
নাস্তিকরা বলে,
স্রষ্টা আদেশ করেন বলেই ভাল কাজ “ভাল” হয়? এই অংশ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে স্রষ্টা যা কিছু ভালো বা মন্দ হিসাবে বিবেচনা করবেন সেটা সে হিসেবেই বিবেচিত হবে। এক্ষেত্রে যে সমস্যাটি দেখা যায় তা হচ্ছে স্রষ্টা আপনাকে কোন খারাপ কিছু করতে বললেও ( যা কিনা আপনার বিবেক, সমাজ বা রাষ্ট্রের দৃষ্টিতে খারাপ), সেটা আপনি করবেন, এ কারণেই যে স্রষ্টা তা বলেছে এবং শুধু সে কারণেই সেটা খারাপ। এখানে ভালো এবং খারাপ এর নিজস্ব কোন বৈশিষ্ট্য/স্বাতন্ত্র্য নেই, স্রষ্টা যা বলবে তাই ভালো এবং খারাপ বিবেচিত হবে। ভাল বা খারাপ এখানে যুক্তির উপর নির্ভর করে না, এটা স্রষ্টার খেয়াল খুশির উপর নির্ভর করে। ধরুন স্রষ্টা যদি বলে আপনাকে শিশু/বাচ্চাদের বিয়ে করতে আপনি সেটা নির্দ্বিধায় করবেন, অথবা স্রষ্টা যদি আপনাকে তার অবিশ্বাসীদের হত্যা করতে বলে আপনি তা চোখ বন্ধ করে পালন করবেন, স্রষ্টা যদি বলে আপনার স্ত্রী গায়ে হাত তুলতে, আপনি তাই করবেন, এমনকি স্রষ্টা যদি আপনার নিজের সন্তানকে হত্যা/কুরবানি করতে বলে, আপনি তাও করবেন। এখানে দেখা যাচ্ছে নৈতিকতার ভিত্তিই আসলে ARBITRARY/স্বতঃস্ফূর্ত/উদ্দেশ্যহীন। স্রষ্টা যা নৈতিক বলবেন তাই নৈতিক হবে।
স্রষ্টা সম্পর্কে uneducated থাকার কারণে অনেক ভুল কথা স্রষ্টার নামে চালিয়ে দেয় নাস্তিকরা। সৃষ্টিকর্তা পারফেক্ট। উনার দ্বারা কখনো অন্যায় কাজ হবেন না, উনি কখনো উনার সৃষ্টি মানুষকে অন্যায় কাজ করতে আদেশ দিবেন না। উনি স্বয়ংসম্পূর্ণ দেখেই ভালো ও খারাপের মানদণ্ড উনি নির্ধারণ করে নেন যা আমরা মানুষরা মনুষ্য বিবেক দিয়ে উপলব্ধি করতে পারি। স্রষ্টা কখনো খারাপ কাজ করতে বলবেন না। তাই স্রষ্টা মানুষকে খারাপ কাজ করতে বলেন কথাটি নাস্তিকদের মিথ্যাচার। স্রষ্টা যদি বলে শিশু মেয়েকে বিয়ে করতে পারো কিন্তু ক্ষতি করা যাবে তবে অন্য বয়সী মেয়েদেরকেও বিয়ে করতে পারো তাহলে এখানে অন্যায়টা কি হয়েছে? স্রষ্টা যদি বলে যারা অবিশ্বাসী নাম ধারন করে সাম্প্রদায়িক ডাঙ্গা লাগায় তাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড তাহলে এখানে অন্যায় কি? স্রষ্টা যদি আপনার নিজের সন্তানকে কুরবানী করতে বলে বিনিময়ে বেশি প্রতিদান দিয়ে ঘাটতি পূরণ করে দিবেন বলে তাহলে এখানে ক্ষতি কি? স্রষ্টার কোনো আদেশ উদ্দেশ্যহীন বা অর্থহীন হয় না বরং নাস্তিকরাই নিজেদের অন্ধবিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করবার জন্য স্রষ্টার বলা যৌক্তিক বিধান ধামাচাপা দিয়ে স্রষ্টার কল্যাণকর বিধানকে খারাপ করে দেখাতে চায়।
নৈতিকতাকে যদি মানুষের জন্য স্বাধীন করে দেয়া হয় অথবা নাস্তিকরা যেভাবে চিন্তার মুক্তিতে নৈতিকতা বোঝে সেভাবে হয় তাহলে এখানে ভয়ংকর সমস্যা তৈরি হবে। কিভাবে? সব মানুষের বিবেক একরকম না। আমি এমন বহু নাস্তিকদের উদাহরণ দেখাতে পারবো যারা ধর্ষণের মুক্তচিন্তা করে, হত্যার মুক্তচিন্তা করে তাই নাস্তিকদের যদি নির্দিষ্ট নৈতিক গ্রন্থ থাকতো নাস্তিকরা এখানে বলতে পারতো তারা ঠিক ভাবে মুক্তচিন্তা করে নাই কিন্তু নাস্তিকদের কি এই কথা বলার সুযোগ আছে? নাই। তাই নাস্তিকদেরকে এটা স্বীকার করে নিতে হবে প্রতিটি নাস্তিকদের বিবর্তিত মগজ থেকে চুরি, ডাকাতি, গণহত্যা, ধর্ষণ, শিশু হত্যা ইত্যাদি সকল কাজকে চিন্তার মুক্তিতে ভালো মনে করতে পারবে, যদি চায় তো।
নাস্তিকরা বলে,
স্রষ্টা সব সময় ভালো এবং সব সময় ভাল কাজেরই আদেশ দেন, উনার চরিত্রই হচ্ছে ভাল”, কিন্তু এখানে সমস্যা আছে। খেয়াল করে দেখুন এখানে প্রথমেই একটি কুযুক্তি করা হয়ে গিয়েছে যাকে বলে BEGGING THE QUESTION, কারণ তারা আগেই ধরে নিয়েছেন যে, স্রষ্টা “ভালো”। যদিও তর্কের খাতিরে মেনে নেই স্রষ্টা বলতে কিছু আছে, সেই স্রষ্টার বৈশিষ্ট্য/গুন কিন্তু আরেকটি বড় প্রশ্ন। স্রষ্টা ভালো বা খারাপ সেটা আগে থেকেই বোঝার কোন উপায় নাই, কারণ আপনি মানুষ হয়ে স্রষ্টার বৈশিষ্ট্য জানতে পারেন না। (তবে হ্যাঁ, আপনাদের বহু পুরনো SPECIAL PLEADING কুযুক্তি দিয়ে বিশেষ গুনে গুণান্বিত স্রষ্টার সংজ্ঞা দিতে পারেন) স্রষ্টার অস্তিত্বই যেখানে একটি অপ্রমানিত এবং বিতর্কিত বিষয় সেখানে আপনি আপনার নিজের ইচ্ছামত স্রষ্টাকে গুণান্বিত করতেছেন। “স্রষ্টা ভাল” এমন বক্তব্য হচ্ছে A Priori এবং Argument from self-knowing/কুযুক্তি। স্রষ্টার অস্তিত্ব, তার গুন/বৈশিষ্ট্য সব আগে থেকে বানিয়ে/ধরে নিয়েই আপনারা উপরোক্ত কুযুক্তি উপস্থাপন করেছেন।
তর্কের খাতিরে যদি নাস্তিকদের বলা কথা গুলো ধরে নেয়া হয় তাহলে একইভাবে বলা যায় নাস্তিকরাই আসলে কুযুক্তিটি করেছে। লক্ষ্য করে দেখুন,নাস্তিকরা ধরেই নিয়েছে যে স্রষ্টা ভালো নাকি খারাপ সেটা নাকি বোঝার কোনো উপায় নাই এই কুযুক্তিটিকে বলা হয় BEGGING THE QUESTION, কারণ আপনি ধরেই নিচ্ছেন যে স্রষ্টাকে বোঝার উপায় নেই। সৃষ্টিজগত দেখে খুব সহজেই স্রষ্টাকে বুঝে নেয়া যায়। স্রষ্টা যদি কানা হতেন তাহলে উনি বিশাল মহাবিশ্ব সৃষ্টি করতে পারতেন না, স্রষ্টা যদি দুর্বল হতেন তাহলে জটিল জটিল কোষ উনি অস্তিত্ব দিতে পারতেন না তাহলে এভাবে আমরা বিশুদ্ধ যৌক্তিক বিশ্লেষণে বলতে পারি স্রষ্টাকে বোঝা সম্ভব। নাস্তিকদের মগজে বিবর্তিত প্রাণীদের মল থাকবার কারণে হয়তো তারা সঠিকভাবে বুঝতে পারেন না। নাস্তিকরা স্রষ্টার ক্ষেত্রে SPECIAL PLEADING কুযুক্তি দিয়ে বিশেষ খারাপ গুণে নিজেদের ইচ্ছে মতো গুণান্বিত করতে চায়। “স্রষ্টাকে বোঝার উপায় নাই” “স্রষ্টা খারাপ” নাস্তিকদের এসব বক্তব্য হচ্ছে, A Priori এবং Argument from self-knowing/কুযুক্তি। নাস্তিকরা স্রষ্টার ব্যাপারে মিথ্যা ও ভুল কথাকে সঠিক ধরে নিয়েই স্রষ্টাকে বাতিল প্রমাণ করতে উক্ত কুযুক্তির আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে।
নাস্তিকরা বলে,
আপনি যখন স্রষ্টার নৈতিকতার কথা বলছেন, তখন সেটি আসলে কোন স্রষ্টা? হাস্যকর এবং অযৌক্তিকভাবে আপনি দুনিয়ার ৪০০০+ স্রষ্টা থেকে শুধুমাত্র নিজের স্রষ্টা বেছে নিয়েছেন, মানে আপনি আসলে যেকন “স্রষ্টার নৈতিকতা” নিয়ে কথা বলছেন না,আপনি আপনার স্পেসিফিক/ সুনির্দিষ্ট ধর্মের স্রষ্টার নৈতিকতা নিয়ে দাবী করতেছেন, যা একটি কুযুক্তি বা SPECIAL PLEADING FALLACY. মজার ব্যাপার হচ্ছে আপনার মত একই দাবি অন্য সবাই করে বসে আছেন। তাই আপনাদের মুসলমানদের DIVINE COMMAND THEORY দিয়ে “হয়ত” শুধুমাত্র মুসলমানদেরই নৈতিকতার সমস্যার সমাধান করা গেলেও যেতে পারে, কিন্তু পৃথিবীর সবার নয়।
নাস্তিকরা কেমন লেভেলের বুদ্ধিহীন হয় এই কথাটি না পড়লে বুঝতাম না। পাঠক খেয়াল করুন, দুনিয়ার চার হাজার প্লাস ধর্মের সবাই নিজেদেরকে সত্য দাবি করে তেমনি নাস্তিকরা সবার মতো নিজেদেরকে সঠিক দাবি করে তারমানে নাস্তিকরা অন্য লোকদের মতো নিজেদের নাস্তিকিও ধারনাকে বেছে নিয়েছে। আপনি যখন স্রষ্টার বিরুদ্ধে আপত্তি তুলছেন এরমানে আপনি আপনার স্পেসিফিক/ সুনির্দিষ্ট নাস্তিক্যধর্মের নৈতিকতা নিয়ে দাবি করতেছেন যা একটি বা SPECIAL PLEADING FALLACY.মজার ব্যাপার হচ্ছে আপনার মত একই দাবি অন্য সবাই করে বসে আছেন। তাই আপনাদের নাস্তিকদের FREE THINKING COMMAND THEORY দিয়ে “হয়ত” মুক্তমনা নাস্তিকদের নৈতিকতার সমস্যার সমাধান করা গেলেও যেতে পারে, কিন্তু পৃথিবীর সবার নয়। নাস্তিকরা নিজেদেরটা বুঝেছেন তো?
ইসলাম অকাট্যভাবে সত্য প্রমাণিত। ইসলামের বিরুদ্ধে নাস্তিকদের সকল সমালোচনার সমালোচনা আমি করেছি। নাস্তিকরা আমার সমালোচনা গুলোর সমালোচনা করুক অকাট্যভাবে। কিন্তু নাস্তিকদের মধ্যে ভিন্নমতভীতি থাকার কারণে আমার লেখা গুলো নাস্তিকরা পড়তে চায় না। ইসলামের এমন একটা নৈতিকতা নাস্তিকরা দেখাতে পারবে না যা মানবজাতির জন্য ক্ষতিকর। আমি খৃষ্টান, হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ ইত্যাদি মতবাদ ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করেছি, গবেষণা করেছি একমাত্র ইসলামকেই সবার থেকে শক্তিশালী পেয়েছি। ইসলাম বিরোধীদের সকল অভিযোগ আপত্তিও আমার যাচাই করে দেখা শেষ। হ্যাঁ, সব গুলোই।
নাস্তিকরা আরও বলে থাকে, যেহেতু দুনিয়াতে চার হাজার প্লাস ধর্ম আছে এবং সবাই সবাইকে সত্য ও অন্যকে মিথ্যা করে তাই সবাই আসলে মিথ্যা। নাস্তিকদের এই কথাটির মধ্যে ফ্যালাসি রয়েছে। এখানে ধরে নেয়া হয়েছে যেহেতু সবাই নিজেকে সঠিক এবং অন্যকে ভুল বলে সেহেতু সকলেই ভুল। এটি FALSE DICHOTOMY অর্থাৎ ভ্রান্ত দ্বি-বিভাজন লজিকাল ফ্যালাসি বলা হয়। এই ধরণের দাবিতে যেটা হয় মানুষ সব ধরণের অপশন বিবেচনা করে না। একটা না হলেই আরেকটা হবে এমন কিছু একটা ধরে নিয়ে যুক্তি দেয়। সবাই নিজেকে সঠিক আর অন্যকে ভুল দাবি করলেই সবাই মিথ্যা হয়ে যায় না তেমনি সত্যও হয়ে যায় না। এখানে প্রয়োজন সব ধর্মকে যাচাই বাচাই করা এমনকি নাস্তিক্যধর্মকেও।
নাস্তিকরা বলে,
ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার করতে গেলেও আমরা দেখতে পাই যে ইসলামে সময় এবং পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে অনেক কিছুই বার বার পরিবর্তন করা হয়েছে, এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে নৈতিকতা যদি পরম/ABSOLUTE কিছু হয়ে থাকে, তাহলে স্রষ্টা কিভাবে সময় বা অবস্থার প্রেক্ষিতে নৈতিকতা পরিবর্তন করেন? ইসলামের আল্লাহ এরকম বার বার পরিবর্তনই প্রমাণ করে যে নৈতিকতা পরম/ABSOLUTE কোন কিছু নয়। শুধু তাই না কুরআনসহ দুনিয়ার কোন ধর্মগ্রন্থই নৈতিকতার একশভাগ সমাধান দিতে পারে না এবং সেটা সম্ভবও না।
ইসলাম সম্পর্কে নাস্তিকরা সঠিকভাবে না বুঝার কারণে এমন ফালতু কথা বলার সুযোগ পেয়েছে। মানুষের জীবন সব সময় একই রকম হয়না। মানুষ নানান সময়ে নানান সিচুয়েশনের মুখোমুখি হতে হয়। এই ক্ষেত্রে ইসলামও মানুষকে বিভিন্ন সময়ের জন্য বিভিন্ন কল্যাণকর নৈতিকতার বিধান প্রদান করে। যেমন সামাজিক অবস্থার ক্ষেত্রে যুদ্ধের আইন প্রযোজ্য হবে না। আবার যুদ্ধের সময়ে সামাজিক নীতি প্রয়োগ করা যাবে না। কোনো মানুষ যদি ক্ষুধার জন্য চুরি করে তাহলে তাকে শাস্তি দেয়া যাবে না কিন্তু যদি আক্ষরিক অর্থে চুরি করে তাহলে হাত কেটে দিতে হবে। এখন নাস্তিকরা যদি প্রেক্ষাপটকে লুকিয়ে রেখে বলে আল্লাহ কেন ভিন্ন ভিন্ন নৈতিকতা দিয়েছেন তাহলে এটা নাস্তিকদের চরম মূর্খতা বলে গণ্য হবে। প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলে নৈতিকতা পরিবর্তন হবে এটাই তো যৌক্তিক। কুরআনের আইন দিয়েই দিয়েই মানব সভ্যতাকে উন্নত করা যাবে। কুরআনের আইন দিয়েই সম্পূর্ণ সমাধান দেয়া যাবে। নাস্তিকরা পারলে এমন একটি ইসলামের বিধান দেখাক যা ক্ষতিকর। তবে শর্ত হচ্ছে প্রেক্ষাপট লুকানো যাবে না, বানিয়ে বানিয়ে মুক্তচিন্তায় মিথ্যা কথা বলে ইসলামের দিকে চাপানো যাবে না।
নাস্তিকরা বলে,
যেখান থেকে আমরা ইসলামের স্রষ্টার কোন ABSOLUTE MORALITY পাই কিনা তা দেখব। আমরা জানি যে ইসলামিক স্রষ্টা যুদ্ধবন্দীদের সাথে সেক্স করাকে বৈধ এবং হালাল ঘোষণা করে গিয়েছেন, এবং একই সাথে উনি দাসীদের সাথে সেক্স করার অনুমোদনও দিয়ে গিয়েছিলেন এবং নিজের স্ত্রীকে প্রহার করার অনুমোদনও দিয়েছেন। খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, উনি এইসব আইন/প্রথা বাতিল ঘোষণা করে যাননি। যেকোনো সময় ইসলামিক রাষ্ট্র কায়েম হলে এসব আইন আবার বলবৎ হবে। এখন আপনি কি যুদ্ধবন্দীদের সাথে সেক্স করা, দাসীদের সাথে সেক্স করাকে, স্ত্রীকে প্রহার করা, এমনকি দৈনিক পাঁচবার আপনাকে তার প্রার্থনা করতে বাধ্য করা ইত্যাদিকে ABSOLUTE MORAL ধরে নিতে পারেন? শুধুমাত্র ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলতে গেলে এরকম বহু বহু ইসলামের স্রষ্টা প্রদত্ত আইন বা নির্দেশ বলা যাবে যা কোনোভাবেই এই যমানায় (হাজার বছর পরে তো দুরের কথা) কেউ পালন করতে পারবে না।
আমি যেই ভুল নাস্তিকদেরকে করতে নিষেধ করেছি তারা সেটাই করেছে। যুদ্ধবন্দীনিদের সাথে ইসলাম জবরদস্তি করে সেক্স করতে বলেছে পারলে এই মর্মে একটি আয়াত অথবা সহিহ হাদিস নাস্তিকরা দেখাক, কি পারবে? দাসী সেক্স কিভাবে খারাপ হবে যদি দাসীর ক্ষতি না হয়? কিন্তু নাস্তিকদের নাস্তিক্যধর্মে আবার নাস্তিকরা চাইলে নিজের মায়ের সাথে, নিজের বাবার সাথে যৌনচর্চা করতে পারবে। নিজের আপন শিশু সন্তানদের সাথে চাইলে নাস্তিকরা যৌনচর্চা করতে পারবে। কারণ নাস্তিকরা সবাইকে মুক্তচিন্তা করতে বলে। আর এই সুত্রে যেকেউই নাস্তিক চাইলেই নিজের ইচ্ছে মতো চিন্তা করার স্বাধীনতা রাখে। তাহলে নিকৃষ্ট বর্বর কোনটা ইসলাম নাকি নাস্তিকদের নাস্তিক্যধর্ম?
স্ত্রীকে প্রহার করতে ইসলাম বলেছে কিন্তু কেন বলেছে? কতটুকু বলেছে ? এসব নাস্তিকরা ধামাচাপা দিয়ে ইসলামের বদনাম করে। যা RED HERRING তথা প্রসঙ্গ ঘোরানোর লজিকাল ফ্যালাসি। স্ত্রী যদি অন্যায় করে, অপরাধ করে, নিজের সন্তানদের ক্ষতি করে তাহলে অপরাধী স্ত্রীকে কি প্রহার করা যাবে না? ইসলামের প্রতিটি বিধান সবার জন্য উপকারী। তবে নাস্তিকদের মতো মুক্তচিন্তায় যদি ইসলাম নিয়ে মিথ্যাচার করে দাবি করা হয় ইসলাম সবার সমাধান দেয় না তাহলে সেটার দায়ভার কেন ইসলাম নিবে? নাস্তিকরা নিজেদের ইসলামবিরোধী বিশ্বাসকে সঠিক ধরে নিয়ে ইসলামের বদনাম করে যা অযৌক্তিক ও প্রতারণা। নাস্তিকদের কথাবার্তায় ফ্যালাসিতে ভরপুর। আমার লেখা নাস্তিক্যবিরোধী সকল সমালোচনা গুলো মন দিয়ে বুঝে বুঝে পাঠ করুন।
বৈজ্ঞানিক ও যৌক্তিক কারণে স্রষ্টাকে বাতিল করা যায়?
মহাবিশ্বের অস্তিত্ব স্রষ্টা ছাড়া যৌক্তিকভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না। মহাবিশ্বের মধ্যে যেই বিশাল ডিজাইন রয়েছে সেটাও। এই আর্গুমেন্ট গুলো মানুষের স্বাভাবিক ও সহজাত চিন্তা প্রক্রিয়ার সাথে সামঞ্জস্যপর্ণ। বিবেক বুদ্ধি দিয়ে সহজেই আমরা এসব বুঝে নিতে পারি।
যেমন, মানুষ কোনো বস্তু সম্পর্কে এ কথা ভাবে না যে এটি “এমনি” “এমনি” হয়েছে , তবে বস্তু মহাবিশ্বের ক্ষেত্রে কেন “এমনি এমনি” ভাবতে হবে? ধরা যাক, কেউ একজন নাস্তিকের পকেট থেকে বের করে কিছু একটি দেখিয়ে বলল এটা হটাত নিজে নিজেই তার পকেটে চলে এসেছে ! নাস্তিক কিন্তু তার কথা কখনোই বিশ্বাস করবে না । এই মুক্তমনা যত বড়ই সন্দেহবাদী বা অবিশ্বাসীই হোক না কেন তার মনে ১০০% “বিশ্বাস” তৈরি হবে যে সে মিথ্যা বলছে । এ ক্ষেত্রে নাস্তিক একজন খাঁটি বিশ্বাসী অথচ সে দাবি করে সে সন্দেহবাদি ! সঠিক কথা হল কথিত মুক্তমনা নাস্তিকরা দ্বৈত নীতিতে চলে । সকল ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস আর সুবিধামত অবিশ্বাস ও সন্দেহের বুলি ! । যাইহোক কোন কিছুর এমনি এমনি বা নিজে নিজে হওয়ার ধারনা মানুষের মৌলিক চিন্তা প্রক্রিয়ার বিরুধি । যারা দাবি করে নিজে নিজেই মহাবিশ্ব এসেছে তা মূলত স্ববিরোধী। তেমনি কোন ডিজায়িন “ডিজাইনার” ছাড়া নিজে নিজেই হয় না –এটাও মানুষের চিন্তা প্রক্রিয়ার একটি মূলনীতি । মানুষ কখনোই এর অন্যথা করে না । সে যত বড় বিজ্ঞানী হোক বা যত বড়ই মূর্খই হোক । পরিকল্পনা, নকশা , গোছানো , কিছু জটিলতা , নৈপুণ্য, সৌন্দর্য, প্রক্রিয়া , বিভিন্ন অংশের সমন্বয় – এই বিষয় গুলো যেখানে উপস্থিত সেখানেই কোন এক বুদ্ধিমান সত্তার হস্তখেপ আছে । বাস্তবে তাই মানুষ বিশ্বাস করে।
কেউ একটি ঘরে দুকে দেখল সেখানে চেয়ার টেবিল যথাস্থানে সারিবদ্ধ ভাবে গোছানো, সব কিছুই পরিস্কার , ফুল দিয়ে সাজানো , সব কিছু নিজ নিজে স্থানে সুন্দর ভাবে ঠিকঠাক আছে তখন কোন অতিরিক্ত গবেষণা ছাড়াই তার মস্তিষ্কে এ সিদ্ধান্ত আসে যে এই সুন্দর ঘরটি কেউ ঘুছিয়েছে এর বিপরীতে ধরা যাক কেউ বলতে চাচ্ছে যে প্রচণ্ড কঠিন ঝরের ফলে ঘরটি গোছানো হয়েছে, তবে তাকে চিন্তার সহজাত প্রক্রিয়া থেকে বের হয়ে বেশ অস্বাভাবিক এবং জটিল কোন তথ্য দাড় করাতে হবে ।এর এ ক্ষেত্রে আমরা নিচ্ছিত যে তার তথ্য কেউ বিশ্বাস করবে না , সে যতই মেধাবী বিখ্যাত হোক না কেন !!!
কেউ যদি একটি সাদা কাগজে “ক” অক্ষরটি লেখা পায় , তার মস্তিষ্কে সহজাত ভাবেই তাকে জানিয়ে দেবে এটা কেউ লিখেছে । “কালির দোয়াত” উল্টে পরে “ক” অক্ষর লেখা হয়েছে – এমন তথ্য দাড় করাতে চাইলে তাকে যৌক্তিক চিন্তার সহজাত প্রক্রিয়া পরিত্যাগ করতে হবে । এখানে একটি দারুন সুক্ষ বিষয় আমি বুঝাতে চাচ্ছি । আপনি ভাবুন তো সামান্য একটি পৃষ্ঠায় নিজে নিজে কালতালিয় ভাবেও একটি চিঠি নিজে নিজে লেখা সম্ভব না অথচ এর থেকে হাজার কোটি গুন জটিল আমাদের সামান্য কোষ অথচ এটা নিজে নিজেই হয়ে গেল? আজীব লাগে খুব তাদের মানুষিক ধারনা।
কোন একটি সমন্বয় বা ব্যাবহারের আরেকটি সহজ উদাহরণ হচ্ছে রাস্তার ট্রাফিক বাতি । সবুজ,হলুদ,লাল,হলুদ,সবুজ এখানে পর্যায় ক্রমে বাতি গুলো জ্বলবে বা জলতে থাকে । আমরা হয়ত সর্বদা এভাবে ভাবি না কিন্তু যদি দেখতাম তবে সহজেই জানতাম যে এই বাতি গুলো এভাবে একটি নিয়ম মেনে যে একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর জ্বলছে বা নিভছে,তা কোন কালতালিও ব্যাপার না বরং বুদ্ধিমান এই বেবস্থা কোন বুদ্ধিমান কেউ করেছে যিনি এইটা পরিচালনা করছেন । নিজে নিজে এইটা হওয়া সম্ভব না। কোন সুস্থ মস্তিস্কের মানুষ কখনোই এ কথা বিশ্বাস করবে না যে একটি ছাপাখানায় বিস্ফোরণ এর ফলে “গীতাঞ্জলী” রচিত হয়েছে অথবা বিশাল যন্ত্রের কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটে একটি “কম্পিউটার” নিজে নিজেই তৈরি হয়েছে। উপরের খুবই সাধারণ বাস্তব কিছু যুক্তি দেওয়া হয়েছে যা হুবহু কোরানের এক আয়াতের সাথে মিলে যায় । আয়াত টি খেয়াল করুন ।
বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন বলেন,স্রষ্টাকে নিয়ে সন্দেহ পোষণ করো না , কেননা একটি দুর্ঘটনার পক্ষে এই সুসজ্জিত , সুবিশাল মহাবিশ্বের নিয়ন্ত্রক হওয়া অসম্ভব। বিজ্ঞানী দার্শনিক ফ্রান্সিস বেকন বলেন,যে বিজ্ঞানকে অল্প জানবে সে নাস্তিক হবে আর যে ভাল ভাবে বিজ্ঞানকে জানবে সে অবশ্যই স্রষ্টায় বিশ্বাসী হবে। Dr.AJ Roberts . (molecular Biologist).university Of Pennsylvania. উনি বলেন,স্রষ্টার শক্তিই আমাদের প্রকৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। মাইক্রোবায়োলজির জনক লুই পাস্তর বলেন,বিজ্ঞানের সামান্য জ্ঞান আপনাকে স্রষ্টা থেকে দূরে সরিয়ে নিবে কিন্তু বিজ্ঞানের গভির জ্ঞান আপনাকে স্রষ্টার নিকটবর্তী করবে। চারলদ হার্ড টাউন্স,পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। উনি বলেন,আমি খুব শক্ত ভাবেই স্রষ্টার অস্তিত্ব বিশ্বাস করি । আমার সতলব্ধ জ্ঞান , পরিক্ষিত জ্ঞান , যুক্তি এবং বৈজ্ঞানিক প্রমাণাদি দ্বারা। পদার্থ বিজ্ঞানী আরনো এলান পেঞ্জিয়াস বলেন,কম হোক বা বেশিই হোক , বাস্তবতা থেকে আমরা জানতে পারি সব কিছুই স্রষ্টার উদ্দেশ্য সম্পর্কিত। বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনিসটাইন বলেন,ধর্ম ছাড়া যে বিজ্ঞান সেটা হল পঙ্গু আর বিজ্ঞান ছাড়া যে ধর্ম সেটা হল অন্ধ।
এছাড়া আরও অনেক বিজ্ঞানী রয়েছেন যারা বৈজ্ঞানিকভাবেই দাবি করেন মহাবিশ্বকে স্রষ্টা অস্তিত্ব দিয়েছেন। যেমন রবার্ট বয়েল (Robert Boyle) যিনি আধুনিক রসায়নের জনক। আইওনা উইলিয়াম পেটটি (iona William petty) –পরিসংখ্যান ও আধুনিক অর্থনীতির ওপর ব্যাপক গবেষণা কর্মের জন্য বিখ্যাত উনি। মাইকেল ফারাদে (Michael Faraday) যিনি শ্রেষ্ঠ পদার্থবিদদের একজন। জন ডাল্টন (Jon Dalton) যিনি পারমাণবিক তত্তের জনক। জন রে (John ray) যিনি বিখ্যাত ব্রিটিশ বিজ্ঞানী। গ্রেগরি ম্যান্দেল (Gregor Mendel) যিনি বংশগতি বিদ্যার জনক । তিনি তার আবিস্কারের মাধ্যমে ডারইয়িনবাদের মিথ্যাচার প্রমাণ করেছেন। লুই পাস্তর (Louis Pasteur) বিখ্যাত এই চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডারইয়িনবাদের বিরুদ্ধে কঠোরতা ঘোষণা করেছিলেন। ব্লেইস পেস্কেইল (Blaise Pascal) বিখ্যাত গনিতবিদ উনি। নিকলাস স্টেনো (Nicolaus Steno) যিনি বিখ্যাত বিজ্ঞানী। ক্যারোলাস লিনিয়াস (Carolus Linnaeus) যিনি বিখ্যাত জীব বিজ্ঞানী। জর্জেস কিউভিয়ার (Georges Cuvier ) যিনি চিকিৎসা বিজ্ঞানী। মেথু মাউরি (Matthew Maury) যিনি সমুদ্র বিদ্যার জনক। থমাস এন্দারসন (Thomas Anderson) যিনি জৈব রসায়নের জগতের একজন দিকপাল। বিখ্যাত পদার্থবিদ উইলিয়াম থমসন (লর্ড কেলভিন)-যিনি ছিলেন একজন থারমডাইনামিক্স এর প্রতিষ্ঠাতা তিনি স্রষ্টাকে স্বীকার করতেন। তিনি ডারউইনবাদকে তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং এই পদার্থবিদ সরাসরি বাতিল বলেছেন ডারউইনবাদকে। তিনি প্রাণের উৎপত্তি পেছনে একজন স্রষ্টার হাত আছে বলে বিশ্বাস করতেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক রবার্ট মাথুস ১৯৯২ সালে প্রকাশিত তার Unraveling The mind of god শীর্ষক গ্রন্থে একক স্রষ্টার অস্তিত্তের পক্ষে অকাট্য যুক্তি তুলে ধরেছেন।
নাস্তিকরা বিজ্ঞান পূজারি তাই বিজ্ঞানীদেরই কিছু কথাবার্তা উপরে তুলে দিলাম। আচ্ছা একটি সহজ হিসাব “শুন্য+শূন্য”= “শূন্যই হবে” । আপনি হাজার বার ট্রাই করলেও ১ বের করতে পারবেন না । আপনি ক্যালকুলেটর ০+১ দেন । দেখুন ২ আসবে ৩ আসবে মানে অর্থ পূর্ণ সংখ্যা বের হবে । কিন্তু ০+০= ১ এটা জীবনেও আপনি বের করতেও পারবেন না আর এটা সম্ভবও না । এটি একটি উদাহরণ ।
দার্শনিক পি.জে. জোয়ারট বলেনঃ
অসম্ভব বলে যদি কিছু থাকে তা হল শুন্য থেকে আপনা আপনি কিছুর উদ্ভব হওয়া।
—-P.J,Zwart, About time: A Philosophical Inquiry Into The Origin and Nature of time: page=117-119. (illustrated Edition,north-hol-land pub,co,1976)
বাতাস কি দৈবক্রমে একটি এরোপ্লেন সৃষ্টি করতে পারে? বিখ্যাত পদার্থবিদ স্যার ফ্রেড হয়েল (sir fred Hoyle) পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তি সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রকারন্তরে এ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন তিনি তার বই THE Intelligent Universe – এ লিখেছেন,
একটি টর্নেডোর ধাক্কায় হটাত করে প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহ একত্রিত হয়ে “রয়িং-৭৪৭” তৈরি হয়ে যাবার সম্ভাবনা যতটুকু ঠিক দৈবক্রমে প্রিথিবিতে প্রাণের উৎপত্তির সম্ভাবনাও ততটুকু। Nature,12 November, 1981
যখন থার্মোডাইনামিক্সের তাপ ও গতির সুত্রগুলো আবিস্কার হয়েছে এর দ্বিতীয় সুত্র বলছে – মহাবিশ্ব ক্রমাগত ও নিরবিচ্ছিন্ন উত্তাপ থেকে পর্যায়ক্রমে উত্তাপহীন অস্তিত্বের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে কিন্তু এ সুত্র উল্টো থেকে প্রয়োগ সম্ভব না। এভাবে একসময় চলতে চলতে সব শক্তি শেষ হবে আর এ মহাবিশ্বের ধ্বংস হবে। উদাহরণ হিসেবে একটি গরম চায়ের কাপ টেবিলে রাখা হলে সময়ের সাথে সাথে তা হারিয়ে ঠাণ্ডা হবে কিন্তু সেটা যে পরিমাণ গরম ছিল সময়ের সাথে সাথে তার চেয়ে বেশি গরম হবে এটা অসম্ভব । এটাই থার্মোডাইনামিক্সের সুত্র। এডওয়ার্ড লুথার কেসেল যিনি প্রাণিতত্ত্ববিদ ও কিটতত্ত্ববিদঃ এম,এস সি, পি-এইচ,ডিঃ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সানফ্রানসিসকো বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিদ্যার অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান , ক্যালিফোর্নিয়া একাডেমী অব সায়েন্সের স্টাফ কিটপতঙ্গের এসোসিয়েট কেউরেটর , জীববিদ্যার ওয়াসম্যান জার্নালসহ কারিগরি প্রকাশনার সম্পাদক । কীটপতঙ্গের ভ্রূণতথ, রোগতত্ত্ব, সালামানণ্ডার ক্লিথিরির ডিপটারোলজি বিশেষজ্ঞ।
স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণ করতে যেয়ে তিনি বলেন,
তাপ গতিবিদ্যা- এর দ্বিতীয় আইন বা Law of entropy নামে অভিহিত আইন অধিকাংশ সময় প্রমাণ করে যে , শেষ গোষ্ঠী ভুল করেছেন । বিজ্ঞান সুস্পষ্ট করে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, এই মহাবিশ্ব অনাদিকাল থেকে কখনোই বিরাজমান হতে পারে না । Law of entropy বলে যে, উত্তপ্ত বস্তু থেকে ততধিক শীতল বস্তুতে সব সময় তাপ প্রবাহিত হচ্ছে এবং তাপ প্রবাহের এই নিয়মকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিপরীতগামী করার জন্য কখনো পাল্টানো যায় না। মাপা শক্তির তুলনায় অমাপ্প শক্তির অনুপাতে হচ্ছে entropy: যাতেকরে বলা যায় যে, মহাবিশ্বের entropy সব সময় বৃদ্ধি পাচ্ছে । অতএব, মহাবিশ্ব এমন এক সময়ের দিকে যাচ্ছে যখন সামকগ্রিকভাবে তাপমাত্রা সমান হবে এবং তখন প্রয়োজনীয় আর কোন শক্তিই থাকবে না। পরিনামে আর কোন রাসায়নিক ও ভৌত পক্রিয়া থাকবে না এবং সকল প্রান নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে কিন্তু যেহেতু এখনো পৃথিবীতে প্রাণী বিরাজমান এবং রাসায়নিক ও ভৌত পক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে: কাজেই এ কথা নিঃসন্দেহে সত্য যে , আমাদের এই মহাবিশ্ব অনাদিকাল থেকে অবস্থান করছে না ।অন্যথায় এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে কাজে লাগানোর উপযোগী শক্তি বহুদিন আগেই শেষ হয়ে যেত আর সেই সঙ্গে প্রকৃতি সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে যেত । কাজেই সম্পূর্ণ অনিচ্ছা সত্তেও বিজ্ঞান এই কথাই প্রমাণ করে যে, নিশ্চয়ই আমাদের এই মহাবিশ্বের সুচনা হয়েছিল আর এই কথা প্রমাণ করতে যেয়ে বিজ্ঞান সেই সাথে স্রষ্টার অস্তিত্ব সত্তাকেই প্রমাণ করে, যারই সুচনা হয়েছে সেই আপনা আপনি থেকে আরম্ভ হয় নি, অধিকন্তু এর জন্য এক পরম ও চরম প্রস্তাবক সৃষ্টিকর্তা স্রষ্টা রয়েছেন।-The Evidence of god in expanding universe, Edited by jon clover monsma. বাংলায় অনুবাদ করেছেনঃ সৈয়দ রেদওয়ানুর রহমান । চল্লিশজন সেরা বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে আল্লাহর অস্তিত্ব, পৃষ্ঠাঃ ৪৪।
আধুনিক পদার্থবিদদের একটি বড় দল স্রষ্টার সৃষ্টির ব্যাখ্যা সত্য বলেই মেনে নিয়েছেন। ইতিহাস বিখ্যাত জে সব পদার্থবিদ স্রষ্টায় বিশ্বাস করতেন তাদের মধ্যে হলঃ স্যার আইজ্যাক নিউটন, ফারাদে , ক্যালভিন , মাক্সওয়েল অন্যতম। আইজ্যাক নিউটনের সময় বিখ্যাত বিজ্ঞানী ও পদার্থবিদরা বিশ্বাস করতেন যে গ্রহ সমূহ ও আসমানি বস্তুসমুহের গতি প্রকৃতিকে ভিন্ন ভিন্ন সুত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে। কিন্তু নিউটন বিশ্বাস করতেন যে যেহেতু পৃথিবী ও মহাশূন্যের স্রষ্টা একজন সেহেতু এদেরকে একই সুত্র বা Law দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে । তিনি লিখেছেনঃ
সূর্য,গ্রহসমূহ এবং ধূমকেতু সমুহের এই সুন্দর সিস্টেমটি কেবল একজন বুদ্ধিমান ও ক্ষমতাবান সত্তার প্রত্যক্ষ তত্থাবধানেই চালু থাকা সম্ভব।-Newton, principia,2nd Edition: j,de vries, essentials of physical science,B, Eerdmans pub,co. grand rapids. sd, 1958.
মধ্য যুগ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যে সব বিজ্ঞানী পদার্থ বিদ্যা গনিত ও জ্যোতির্বিদ্যার জগতে গবেষণা করেছেন তাদের মধ্যে হাজার হাজার বিজ্ঞানী এ সত্য সম্পর্কে একমত যে এ বিশ্ব জগতে একজন একক স্রষ্টা দ্বারা সৃষ্ট। বিখ্যাত বিজ্ঞানী জোহানেস ক্যাপলার (Johannes Kepler,the founder of physical astronomy). তার সে বিশ্বাসের কথা ,কোন রকম রাখডাক না করেই তার গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।-Henry M.Morris , men of science, men of god, master books, 1992 , page= 13.
যাদের কাজ হচ্ছে সকালে ঘুম থেকে উঠে ইসলামকে নিয়ে গালাগালি করা তারা কিভাবে সভ্য হবে? বস্তুবাদী নাস্তিকদের কাছে আমি কিছু যৌক্তিক প্রশ্ন রেখে দিচ্ছি। প্রকৃতি কেন নিয়ম মানে? প্রকৃতি কার বানানো নিয়ম মানে? প্রকৃতি কেন নিজে নিজেই আম গাছে তাল দিতে পারে নাহ? এমন ১০০ টি গাছের প্রমাণ দেন যেখানে আম গাছে তাল হয়েছে নিজে নিজেই কি পারবেন? প্রকৃতিকে অস্তিত্ব দিয়েছে কে? শুন্য থেকে মহাবিশ্ব হতে পারলে শুন্য থেকে নিজে নিজে মা বাপ ছাড়া সন্তান হওয়া যায় না কেন? অক্সিজেন ছাড়া মানুষ নিঃশ্বাস কেন নিতে পারে না? জন্ম ছাড়াই কেন জন্ম মানুষ শুন্য থেকে হতে পারে না? মানুষ কেন মহাবিশ্বের মধ্যে বন্দী?
বৈজ্ঞানিকভাবেই বলা যায় এই মহাবিশ্বের একটি শুরু আছে। যেহেতু এর শুরু আছে সেহেতু এর যৌক্তিক কারণ রয়েছে। আর সেই কারণকে স্রষ্টা বললে কেন ভুল হবে? নিজে নিজেই কিছু হওয়া এইটা বাস্তব বিরোধী ও যৌক্তিক। যারা বিজ্ঞানের দহাই দিয়ে স্রষ্টাকে বাতিল করতে চায় তারা হয়তো জানেই না বিজ্ঞানীদের মধ্যে স্রষ্টাকে সত্যি বলে স্বীকার করেন এমন বিজ্ঞানীও আছে। কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন জন্য যদি এই মহাবিশ্ব নিজে নিজেই হতে পারে তাহলে কেন আমরা দেখি না আম গাছে নিজে নিজেই তরমুজ ধরতে? কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন এটি হটাত কেন থেমে গেল? আগেই বা হল কেন নিজে নিজে? কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন এর ফলে দুনিয়াতে কেন সব কিছুই নিজে নিজে হয় না? কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন এর ফলে আমরা কেন নিজে নিজেই চোখ ছাড়া দেখতে পারি না? মহাবিশ্ব সব সময় ধরে অস্তিত্বে ছিল দাবির পক্ষে নাস্তিকদেরকে প্রমাণ দিতে হবে। যেই প্রমাণ সে প্রমাণ নাস্তিকরা নিজেরা স্রষ্টার অস্তিত্বের ব্যাপারে চেয়ে থাকে। যদিও নাস্তিকরা কেমন প্রমাণ চায় সেটা স্পষ্ট না।
যেসব নাস্তিকরা বলে থাকেন বিজ্ঞান যা বলে আমরা সেটাই বিশ্বাস করবো। বিজ্ঞান যা বলবে না আমরা সেটা মানবো না তাদের জন্য কষ্টের খবর হচ্ছে আধুনিক বিজ্ঞানে স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে এবং নাস্তিকদের বিরুদ্ধে অনেক ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে কিন্তু নাস্তিক বিজ্ঞানমনস্করা এসবকে ধামাচাপা দিয়ে রেখে দিতে চায়। আমার এই বিষয় অনেক বিশাল লেখা আছে আগ্রহীরা লেখাটি সন্ধান করে মন দিয়ে পড়ে জেনে নিন অজানাকে।