নাস্তিক বনাম মুমিন সংলাপ

===============================

বিষয়ঃ নাস্তিক বনাম মুমিন সংলাপ

===============================

লিখেছেনঃ এমডি আলী।

===============================

নাস্তিকঃ

আল্লাহ সবজান্তা হলে তিনি জানতেন হিটলার অনেক মানুষ হত্যা করবে। এরপরেও কেন তিনি হিটলারকে সৃষ্টি করলেন? অপরাধী তাহলে হিটলার নাকি আল্লাহ? কারণ আল্লাহ না বানালে তো হিটলার হতো না?


মুমিন

হিটলারই অপরাধী,আল্লাহ নন।


নাস্তিকঃ বুঝিয়ে বলুন।


মুমিনঃ

আপনাকে যা বুঝতে হবে তা হলো, আল্লাহর জানার কারণে কি হিটলার খারাপ কাজটি করেছে নাকি হিটলার নিজের ইচ্ছায় খারাপ কাজ করেছে? উত্তর হচ্ছে অবশ্যই হিটলার নিজের ইচ্ছাতেই খারাপ কাজ করেছে। হিটলার একজন মানুষ। আর একজন মানুষের ভালো মন্দ বুঝার নোলেজ আছে। আপনি কি জানেন আল্লাহ মানুষকে কেন সৃষ্টি করেছেন?


নাস্তিকঃ

কেন সৃষ্টি করেছে?


মুমিনঃ

ঠিক মতো কুরআন পাঠ করে দেখেন নাই আবার ইসলামবিরোধী চর্চা করে যাচ্ছেন। আপনাকে আমি শিখিয়ে দিচ্ছি।

আল কুরআন,সূরা মুলক ৬৭:২ আয়াতেই বলা আছে,

“যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য- কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।


আল কুরআন,সূরা হুদ১১:৭ আয়াতে বলা আছে,

তোমাদের মধ্যে কে আমলে শ্রেষ্ঠ তা পরীক্ষা করার জন্য।


আল কুরআন, সূরা মায়িদা ৫:৪৮ আয়াতে বলা আছে,

“আর আল্লাহ্‌ ইচ্ছে করলে তোমাদেরকে এক উম্মত করতে পারতেন, কিন্তু তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা দিয়ে তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে চান। কাজেই সৎকাজে তোমরা প্রতিযোগিতা কর। আল্লাহ্‌র দিকেই তোমাদের সবার প্রত্যাবর্তনস্থল। অতঃপর তোমরা যে বিষয়ে মতভেদ করছিলে, সে সম্বন্ধে তিনি তোমাদেরকে অবহিত করবেন।


আল কুরআন, সুরা জারিয়াত ৫১ঃ৫৬ আয়াতে বলা আছে,

আর জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার ইবাদাত করবে। 


তাহলে দেখুন আল্লাহ মানুষকে বানিয়েছেন উনার ইবাদত করতে। সাথে ভাল মন্দ বুঝার সিস্টেমও করে দিয়েছেন। এখন এই সিস্টেমের অপব্যবহার মানুষ করলে সেটার জন্য আল্লাহ কেন দায়ী হবেন? কারণ আল্লাহ তো মন্দ কাজের আদেশ দেন না।


আল কুরআন,সুরা নাহল ১৬ঃ৯০ আয়াতে বলা আছে, 

নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফ, সদাচার ও নিকট আত্মীয়দের দান করার আদেশ দেন এবং তিনি আশ্লীলতা, মন্দ কাজ ও সীমালঙ্ঘন থেকে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।


নাস্তিকঃ 

আল্লাহ কি ইচ্ছা করলে হিটলারকে না বানালেও পারতেন না?


মুমিনঃ

অবশ্যই পারতেন কিন্তু আল্লাহ যখন হিটলারকে অস্তিত্ব দিয়েছেন তখন থেকেই কি হিটলার অপরাধী ছিল? অর্থাৎ শিশু অবস্থায় অথবা মায়ের পেটে? অবশ্যই না। তার চেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, আল্লাহ বানিয়েছেন এই কারণে কি হিটলার অপরাধ করেছে নাকি হিটলার নিজের স্বাধীন ইচ্ছার অপব্যবহার করে অপরাধী হয়েছে বলুন তো?


নাস্তিকঃ 

নিজের ইচ্ছার অপব্যবহার করে। 


মুমিনঃ

এই তো বুঝেছেন। তাহলে আল্লাহকে দায়ী করাটাই ভুল। ধরুন আপনি খেলার মাঠ বানালেন। যে কেউই সেখানে খেলতে পারে। এখন কিছু অভদ্র ছেলে সেই মাঠে খেলতে গিয়ে মারামারি করে ফেলল এবং একজনের হাত ভেংগে দিল। এর জন্য কি আপনি দায়ী? যে আপনি খেলার মাঠ না বানালে এরকম হতো না তাই আপনার অপরাধ?


নাস্তিকঃ 

আমাকে কেন দায়ী করা হবে। আমি তো মারামারি করার জন্য খেলার মাঠ বানাইনি। আমি মাঠ বানিয়েছি যেন সবাই আনন্দে খেলাধুলা করতে পারে।


মুমিনঃ

ধরা যাক আপনি একটা হাসপাতাল বানিয়েছেন। একটা চোর সেই হাসপাতাল থেকে কিছু জিনিস চুরি করেছে এবং পালানোর সময় এক লোককে ছুরি মেরে অজ্ঞান করে ফেলল। এখন কেউ যদি বলে হাসপাতাল বানানোর কারণে চোরটি চুরি করার সুযোগ পেয়েছে তাই হাসপাতাল যে বানিয়েছে তার দোষ। এই অভিযোগ করাটা কি কোন সুস্থ মানুষের কাজ? আপনি অবশ্যই বলবেন “আমি হাসপাতাল বানিয়েছি মানুষের রোগীদেরকে সুস্থ করার জন্য। চোরকে চুরি করার জন্য নয়।এই অভিযোগ সম্পুর্নই বাতিল এবং ভ্রান্ত হবে।” আপনাকে যেভাবে খেলার মাঠ বানানোর কারণে,হাসপাতাল বানানোর জন্য অপরাধী বলা যাবে না ঠিক একইভাবে আল্লাহ মানুষ বানানোর কারণে আল্লাহও অপরাধী হবেন না। কারণ আল্লাহ মানুষকে সন্ত্রাসী কাজ করার জন্য বানান নাই,বানিয়েছেন উনার ইবাদত করার জন্য,ভাল বান্দা হওয়ার জন্য,মানবিক হওয়ার জন্য। বোঝা গেছে?


নাস্তিকঃ

প্রশ্ন হচ্ছে আল্লাহ মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছা শক্তিটাই বা কেন দিলেন?


মুমিনঃ

আল্লাহ দুনিয়াতে মানুষের জন্য পরিক্ষার সিস্টেম করে দিয়েছেন এই কারণে। মানুষ ভালো কাজ করলে ভালো ফল পাবে। খারাপ কাজ করলে খারাপ। আল্লাহ কি বলেছে হিটলারকে, মানুষ খুন করতে? উত্তর হচ্ছে না। মানুষকে আল্লাহ ভাল মন্দ বুঝার এবং সেই অনুপাতে চলার স্বাধীনতা দিয়েছেন এখন স্বাধীনতার অপব্যাবহার করে হিটলার খুন করলে সেটার দোষ অবশ্যই হিটলারের,আল্লাহর নয়। আল্লাহ সব জানবেন এটাই স্বাভাবিক। আল্লাহ যেহেতু দুনিয়াকে পরিক্ষা স্বরূপ বানিয়েছেন সেহেতু মানুষের খারাপ কাজে বাধা অথবা ভাল কাজে জবরদস্তি করা আল্লাহর কাজ নয়। ধরুন আপনি কিছু  রোবট বানালেন এবং ওদেরকে স্বাধীন ইচ্ছার ভাল মন্দের সিস্টেম তৈরি করে দিলেন। এখন কোনো রোবট যদি আপনার দেয়া স্বাধীনতার অপব্যাবহার করে কোন খারাপ কাজ করে তাহলে এর জন্য আপনি দায়ী হবেন না। কারণ আপনি রোবটদেরকে সেই খারাপ কাজ করতে বলেন নাই।


নাস্তিকটি ইসলাম নিয়ে আরও অনেক সমালোচনা করেছে সব জবাব দেবার পরে মুমিন বলছে। আপনি তো অনেক ইসলামের সমালোচনা করলেন আমি সব গুলোর এমন জবাব দিলাম একটা খন্ডন পর্যন্ত করতে পারলেন না। এইবার আমি আপনাকে প্রশ্ন করি ঠিক আছে। 


নাস্তিকঃ

অবশ্যই।


মুমিনঃ

বুদ্ধি, চেতনা, শক্তি এগুলো কেন সৃষ্টি হলো?


নাস্তিকঃ

কাকতালীয়ভাবে এমনে এমনেই সৃষ্টি হয়েছে।


মুমিনঃ

এগুলো কাকতালীয়ভাবে সৃষ্টি হলেও কিভাবে বলবৎ আছে এখন পর্যন্ত? কেন নিজ অবস্থান ধরে থাকতে পারছে? 


নাস্তিকঃ

বুঝলাম না। 


মুমিনঃ

আচ্ছা ধরুন একটা বিল্ডিং কাকতালীয়ভাবে তৈরি হয়ে গেল এখন বার বার তো একই সিস্টেমে বিল্ডিং তৈরি হলে সেটাকে আর কাকতালীয় বলা যায়না। তাই না? এখন, এই যে আপনি দাবি করেছেন আপনার বুদ্ধি আছে, চেতনা আছে, শক্তি আছে। এসব তো আপনার বিশ্বাস অনুযায়ী কাকতালীয়ভাবে এমনি এমনি সৃষ্টি। তাহলে আপনার কথার খাতিরে যদি ধরেও নেই এগুলো এমনে এমনেই সৃষ্টি, তাহলে এগুলো কাকতালীয়ভাবে হলে তো সাথে সাথে ধবংস হয়ে যাওয়ার কথা ছিল বা এলোমেলো থাকার কথা ছিল কিন্তু সেমন হচ্ছে না কেন? ধরুন আপনার কাছে দশটি কয়েন আছে, এখন সব গুলো কয়েন উপরে ছুঁড়ে আপনাকে বার বার টসে জিতবে হবে। আপনার সব সময় জিতার সম্ভাবনা কতোটুকু? বাস্তব সত্যি হলো কাকতালীয়ভাবে একবার পসিবল হলেও হতে পারে কিন্তু বার বার তো আর হবে না। কে এদেরকে বানিয়ে বলবৎ রেখেছে শুরু থেকে? চেতনা, বুদ্ধি, শক্তি এগুলো নিজে নিজেই কেন সৃষ্টি হতে গেল? এদেরকে যদি কেউ নিয়ন্ত্রণ না করে তাহলে এরা কার নিয়ন্ত্রণে এখনো অস্তিত্বে আছে অর্থাৎ শুরুতেই সৃষ্টি হয়ে শুরুতেই ধ্বংস হলো না কেন? বস্তুবাদের দৃষ্টিতে জবাব কি হবে?


নাস্তিকঃ

আমি জানি না এসবের উত্তর কি।


মুমিনঃ

একই ব্যাপারটা যদি আমার ক্ষেত্রে হতো তাহলে তো আপনি আমাকে অপমান করতেন। আমাকে মধ্যযুগীয় বর্বর বলে ছোট করতে চাইতেন কিন্তু আমি সেসব করবো না। কারণ আমি নাস্তিকতায় অবিশ্বাস করি। নাস্তিকদের সাথে আমার পার্থক্য থাকবে এটাই স্বাভাবিক।


টিকাঃ নাস্তিকরা আমাদের জবাব ঠিক মতো দিতে পারে না। অনেক নাস্তিক যখন মুসলিমদের যৌক্তিক প্রশ্নে কাবু হয়ে যায়, সেই প্রশ্ন গুলো নাস্তিকদের কাছে বলা হলে তারা বলে মুসলিমদেরকে চেতিয়ে দিবি। ওরা যখন রেখে যাবে তখন এর ফায়দা নিবি। নাস্তিকরা এক্সপার্ট মুসলিমদের সাথে তেমন একটা বিতর্ক করতে সাহস পায়না। নানান অজুহাত দেখিয়ে দূরে থাকতে চায়। কারণ নাস্তিকরা নিজেরাও জানে তারা ইসলাম নিয়ে যেভাবে জালিয়াতি করে সেটা এক্সপার্ট মুসলিমরা সহজেই ধরে ফেলতে পারবে। এই কারণে যে সব মুসলিমরা বিতার্কিক নয় সেই সব মুসলিমদেরকে টার্গেট করে নাস্তিকরা নিজেদেরকে হিরো সাজিয়ে লাইভে দেখায়। আমার কাছে নাস্তিক্যবাদের চশমা আছে, খৃষ্টবাদের চশমা আছে, হিন্দুবাদের চশমা আছে। এছাড়াও বিভিন্ন মতবাদের চশমা আমার কাছে আছে। আমি বুঝি, আমি জানি কোন চশমাটা কেমন। হ্যাঁ, ইসলামের চশমাও আমার কাছে রয়েছে। আমি বুঝি কোন চশমাটা বেশি ভালো,বেশি শক্তিশালী। এই কারণেই আমি নিজের জীবনের থেকে বেশি ইসলামের চশমাটা কে মনে প্রাণে ধারণ করি। ইসলামের চশমা দিয়েই সব কিছু দেখি। কেউ যদি আমার কাছে আসে আমি তাকে দেখিয়ে দিতে পারবো ইসলাম ছাড়া বাকি সব চশমা দুর্বল ও ভিত্তিহীন। আমার কাছেও আসা লাগবে না, আমার লেখা গুলো নিয়মিত পড়ুন আপনি নিজেই আমার মতো সব চশমা ফেলে ইসলামের চশমা চোখে লাগাবেন৷ 


মুমিনঃ

মহাবিশ্ব এমনি এমনিই কেন সৃষ্টি হলো? 


নাস্তিকঃ

বিগব্যাং, কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন আর পদার্থ বিজ্ঞানের সুত্রের কারণে মহাবিশ্ব এমনে এমনে সৃষ্টি হয়েছে।


মুমিনঃ

তাহলে তো বুঝা যাচ্ছে মহাবিশ্বকে এসব দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাহলে কে সৃষ্টি করেছে? তাছাড়া এসব কারণেই যদি মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়ে থাকে তাহলে তো আমরা বলতে পারি না যে মহাবিশ্ব শূন্য থেকে সৃষ্টি হয়েছে। বরং মহাবিশ্বকে এমন কিছু দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে যা না হলে মহাবিশ্ব অস্তিত্ব পেতো না। তাহলে এখানে তো স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রমাণ স্পষ্ট পাওয়া যাচ্ছে না? এমনি এমনি হলে তো এতো কারণই থাকতো না। থাকার কথা নয়। আপনি আমাকে যেই কারণ বলবেন সেই কারণের উপর মহাবিশ্ব নির্ভরশীল এটা আপনাকে মানতে হচ্ছে। তাহলে মহাবিশ্ব যদি এমন কিছুর উপর নির্ভরশীল হয় তাহলে তো নিশ্চই মহাবিশ্বকে কেউ নির্ভরশীল করেছে। প্রশ্নটি কে করেছে? নির্ভরশীল কোনো কিছু কি নিজে নিজেই অস্তিত্বে আসতে পারে নাকি বস্তুটিকে অস্তিত্বে নিয়ে আসতে হয়?


নাস্তিকঃ

আচ্ছা আপনারা তো মুমিন, তো স্রস্টা আমাদেরকে কেন ধর্ম বা জীবন বিধান দিবেন? কারণ মানুষ তো অতি নগন্য। আপনারা হয়তো বলতে পারেন মানুষের বুদ্ধি বেশি কিন্তু মানুষ থেকেও অনেক বুদ্ধিমান প্রানীর উদাহরণ দেয়া যায়। যেমন বানর,পিপরা এদেরকে বুদ্ধিমান প্রানী বলাই যায়। এরপরে আপনার হাতি, বাঘ এগুলা শক্তিশালী প্রানী এদের তুলনায় মানুষ কিছুই না।


মুমিনঃ

আপনি যেই যুক্তি পেশ করেছেন মহাবিশ্বের তুলনায় আমরা অতি নগন্য তাই স্রস্টা আমাদেরকে কোনো ধর্ম বা জীবন বিধান দিতে পারে না। আপনার এ যুক্তিটি অতি দুর্বল কেননা নগন্য হওয়ার কারণেই যে স্রস্টা আমাদেরকে জীবন বিধান দেন নাই এটা আপনি কিসের ভিত্তিতে জানতে পারলেন? উল্টো আমরা ছোট দেখেই স্রষ্টা আমাদেরকে গুরুত্ব বেশি দিবেন ভাবাটা মটেও অযৌক্তিক নয়।


নাস্তিকঃ

আমার বুদ্ধি দিয়ে জেনেছি।


মুমিনঃ

আপনার যুক্তি অনুপাতে স্রস্টা যদি আমাদেরকে ধর্ম না দেয় তাহলে তিনি আমাদেরকে বুদ্ধি কেন দিলেন কারণ আমরা তো অতি নগন্য? এটার কি জবাব দিবেন? আমরা অতি নগন্য হওয়ার পরেও তিনি আমাদেরকে যেখানে বুদ্ধি বিবেক দান করেছেন সেখানে আমাদের জীবন চলার পথ দিবেন না এটা তো হতেই পারে না।


নাস্তিকঃ

আমরা মানুষ, আমাদের মাথায় চুল আছে। এখানে হাজার হাজার চুল পরে আবার তৈরি হয় আমরা কিন্তু এসব ছোট বিষয় পাত্তা দেই না। আবার আমাদের পায়ের নিচে অনেক বালুকণা আছে আমরা গুরুত্ব দেই না আবার ছোট পোকামাকড় আছে যারা আমাদের অনিচ্ছা সত্বেও পায়ের চাপা খেয়ে ইন্তেকাল করে। ঠিক তদ্রুপ স্রস্টাও আমাদেরকে নগন্য বলেই জীবন বিধান দেন নাই। এখন কেন দেন নাই সেটা তিনি জানেন।


মুমিনঃ

আপনি যুক্তি অনেক নিন্মমানের। মনোযোগ দিয়ে শুনুন। চুল বালুকণা এসব মানুষ বানায় নাই সেহেতু মানুষ এসবে গুরুত্ব দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। আর পিপড়া বা পোকামাকড় এগুলাও মানুষ বানায় নাই। কিন্তু হ্যাঁ, যদি মানুষ এসব বানাইতো তাহলে অবশ্যই এসবকে গুরুত্ব দিতো। পোকামাকড়,চুল বালুর যেই কথা বললেন সেটা ভিত্তিহীন কথা। মানুষ এসব ছোট বিষয়কে গুরুত্ব দেয় না এরমানে এটা নয় যে স্রস্টা মানুষকে নগন্য ভেবে জীবন বিধান দিবেন না। স্রস্টা মানুষকে ধর্ম দেন নাই এই কথা আপনি কিসের মাধ্যমে নিশ্চিত হলেন এটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। স্রস্টা আমাদেরকে জীবন বিধান দিয়েছেন সেটা আমরা নিশ্চিত হয়েছি নবী-রাসূলগণ মাধ্যমে। এখন মহানবী (সা) আল্লাহর রাসুল কিনা সেটা নিয়ে আলাদা কথা আপনার সাথে বলাই যায়। মানুষ নগন্য  জিনিসকে পাত্তা দেয় না এই যুক্তি ভুল। কেননা ছোট একটা সোনার আংটিও মানুষ অনেক গুরুত্ব দেয়,শব্দ খাতায় লেখা থাকে সেটা মানুষের  তুলনার অনেক ছোট তারপরেও সেটা মানুষ গুরুত্ব দেয় কারণ আমাদের জ্ঞান অর্জনে সহায়।


স্রস্টা যদি নগন্য ভেবে আমাদেরকে জীবন বিধান নাই দেন তাহলে আমাদেরকে তিনি নগন্য ভেবে বুদ্ধি,চিন্তা করার ক্ষমতা, এনার্জি, সত্য জানার চেষ্টা এমনকি নৈতিকতা এসবও দেন নাই। যদি তিনি মানুষ নগন্য হওয়ার সত্বেও এসব দেন তাহলে ধর্মও অবশ্যই দিয়েছেন। এবং বিধান দিবেন যা আমার জন্য দরকারী। হিন্দু, খ্রিস্টান বৌদ্ধ ও ইসলাম কোন জীবন বিধান সত্য সেটা নিয়ে আলাদা আলোচনা করাই যায় আপনার সাথে কি বলেন? আপনার মতো মানুষ যারা বলে বানর, পিপড়ার মানুষের থেকে বুদ্ধিমান তারা আমার যুক্তি বুঝতে সময় লাগতে পারে। বানর পিপরা এরা লেংটা থাকে তাদের এই নৈতিকতা আপনি মানবেন? নাস্তিকদের ঈশরতত্ত্ব নিয়ে আপনার ধারণা আছে?


নাস্তিকঃ 

নাস্তিকদের ঈশরতত্ত্ব মানে? বুঝিনি।


মুমিনঃ

সৃষ্টিকর্তা হচ্ছেন তিনি যিনি আমাদেরকে বানিয়েছেন অথবা আমরা উনার থেকে এসেছি,রাইট?


নাস্তিকঃ

হুম। উহাকেই তো স্রষ্টা বলা হয়ে থাকে।


মুমিনঃ

আপনারা স্রস্টাকে মানেন না তাহলে আপনারা কিভাবে এই দুনিয়াতে এসেছিস? মানে আপনাদের বিশ্বাস কি সব কিছুর অস্তিত্বের ব্যাপারে?


নাস্তিকঃ

আমরা বিবর্তনের ধাক্কায়,এলোমেলো পরিবর্তন,ধাপে ধাপে এসেছি।


মুমিনঃ

প্রথমে কিসের উৎপত্তি হয়েছে?


নাস্তিকঃ

এককোষী ব্যাকটেরিয়া থেকে ধাপে ধাপে বিবর্তনের মাধ্যমেই তো আমরা আসছি।


মুমিনঃ

আপনারা দাবি করন যে আপনারা স্রস্টাকে মানেন না অথচ আপনাদের ঈশর আছে। আপনাদের নাস্তিকদের ঈশর হচ্ছে “এককোষী ব্যাকটেরিয়া”। আপনাদের উৎপত্তি এককোষী ব্যাকটেরিয়া থেকে। যেহেতু তোদেরকে সূচনা হয়েছে এককোষী ব্যাকটেরিয়া থেকে সেহেতু এককোষী ব্যাকটেরিয়া আপনাদের ঈশ্বর।


নাস্তিকঃ

আপনি বললেই হবে নাকি? এসব আপনাদের মুমিনদের ত্যানা প্যাঁচানো।


মুমিনঃ

আপনি আমার যুক্তির ভুল কি এটা কিন্তু বলতে পারেন নাই। আপনারা নাস্তিকরা আসলে নিজেদের বই গুলো ঠিক মতো পড়েন না। তাহলে আমি নাস্তিক বিজ্ঞানীর থেকেই প্রমাণ দিচ্ছি।


বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায় লিখিত “ভালোবাসা কারে কয় মানব মনের জৈববিজ্ঞানীয় ভাবনা” বইয়ের ২৪২,২৪৩ পৃষ্ঠায় বলা আছে,

ডকিন্স তার ‘সেলফিশজিন' গ্রন্থে অনুপম কাব্যিক ভঙ্গিমায় বলেন,আমরা সবাই একেকটি টিকে থাকার যন্ত্র (survival machine)- অন্ধভাবে প্রোগ্রাম করা একটি নিয়ন্ত্রিত যান্ত্রিক বাহন মাত্র ——যার উদ্দেশ্য কেবল স্বার্থপরভাবে এক ধরনের জৈবঅণুকে সংরক্ষণ করা। ... তারা আমার ভেতরে আছে, তারা রয়েছে আপনার ভেতরেও; তারাই আমাদের সৃষ্টি করেছে, আমাদের দেহ আর আমাদের মন; আর তাদের সংরক্ষণশীলতাই আমাদের অস্তিত্বের চূড়ান্ত মৌলিকত্ব ওই অনুলিপিকারকেরা এক দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে| এখন তাদেরকে জিন বলে ডাকা হয়, আর আমরা হলাম তাদের উত্তরজীবীতার যন্ত্র।


রিচার্ড ডকিন্স নিজেও মেনে নিয়েছেন কথাটি। এমনকি অভিজিৎ রায় পর্যন্ত সেই কথার বিরোধীতা করতে পারে নাই। তাহলে আপনি কেন মেনে নিচ্ছেন না আপনাদের ঈশর আছেন। আমি এটা বলছি না যে আপনারা সেই ঈশ্বরের পূজা করেন অথবা আপনারা তাকে সেভাবে দেখেন যেভাবে হিন্দু বা খ্রিস্টানরা তাদের ঈশরকে দেখে। আমি জানি আপনারা নাস্তিকরা হিন্দু খ্রিস্টান বা অন্যান্য ধর্মের দৃষ্টিতে যেই ঈশর তাতে অবিশ্বাস করেন কিন্তু তারমানে এই না যে আপনাদের নিজস্ব ঈশর নেই।


নাস্তিকঃ

ব্যাকটেরিয়া থেকে আমরা মানুষ হয়েছি কিন্তু তার মানে এই নয় যে ব্যাকটেরিয়া আমাদের গড। যেমন একটি প্লাস্টিকের খেলনা তৈরি করার জন্য ছোট ছোট প্লাস্টিক কে একত্রিত করে খেলনা তৈরি করা হয়েছে তার মানে কি এটা দাঁড়ায় যে প্লাস্টিক খেলনাটার গড? না কখনোই না। বরং ছোট ছোট প্লাস্টিক হলো ওই খেলনাটার উপাদান। ঠিক তেমনই ব্যাকটেরিয়া মানুষের ঈশ্বর নয় বরং ব্যাকটেরিয়া মানুষ সৃষ্টির উপাদান।


মুমিনঃ

আপনি ভালো করে চেষ্টা করেছেন কিন্তু আপনার কথা থেকেও আমার যুক্তিটি ভুল প্রমাণ করতে পারছে না। কারণ প্লাস্টিক খেলনার গড হবে না কিন্তু যেহেতু মানুষ খেলনাকে বানিয়েছে সেহেতু মানুষ খেলনার গড হবে, আপনার যুক্তিতে । কিন্তু দাবি যদি এরকম হয় যে খেলনা নিজে নিজেই সৃষ্টি হতে পারে প্লাস্টিক থেকে তাহলে এই ক্ষেত্রে প্লাস্টিক উক্ত খেলনার ঈশ্বর হয়ে যাবে। "ব্যাকটেরিয়া উপাদান" এই উপাদান ছাড়া বাকি প্রাণী হতে পারতো না। আপনাদের বিশ্বাস অনুযায়ী। সেই উপাদান ছাড়া যেহেতু আপনারা আসতে পারতেন না সেহেতু উক্ত উপাদানটিকেই আপনাদের ঈশ্বর হিসেবে গণ্য হচ্ছে। আপনি আপনাদের অস্তিত্বের যেই মূল কারণই দেখাবেন সেটাই আপনাদের নাস্তিকদের ঈশর। আপনি মানেন অথবা না মানেন।


নাস্তিকঃ

কুরআন তো আল্লাহর বানী। তবে কোরআনে আল্লাহ কিভাবে নিজের কাছে নিজে আশ্রয় চাচ্ছে? নিজের কাছে নিজেই পথপ্রদর্শন এর জন্য কাকুতি মিনতি করছে? বলেই সূরা আল ফাতিহা এর সবগুলো আয়াতই পড়ে শোনাল।পড়া শেষে মোটা চশমার ফাক দিয়ে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে লিকলিকিয়ে হাসতে লাগলো। ধরে নিচ্ছি কোরান আল্লাহর বানী, এবং তা সৃষ্টির আদিকাল থেকে লাওহে মাহফুজে লিখিতভাবে সংরক্ষিত ছিল। এরপরে নবী মুহাম্মদ নবুয়ত লাভ করেন, জিব্রাইলের মাধ্যমে আল্লাহ সেই পবিত্র কেতাব মুহাম্মদের কাছে প্রেরণ করেন। এসব ধরে নিলে বোঝা যাচ্ছে, কোরানের মূল লেখক আল্লাহ পাক, এবং নবী মুহাম্মদের ওপর তা নাজিল হয়েছে মাত্র। জিব্রাইল ছিলেন বাহক মাত্র। কিন্তু কোরানে এই ধারাটি ঠিক রাখা হয় নি। কোথাও আল্লাহ বলছেন, কোথাও নবী বলছেন,আবার কোথাও বান্দা বলছেন।


মুমিনঃ

আপনাদের এই অভিযোগ বা কথা গুলো যে আপনাদেরকে মূর্খ এবং অজ্ঞ প্রমাণ করে সেটা হয়তো আপনারা নিজেও টের পান না। সুরায় ফাতিহায় আল্লাহ নিজের কাছে নিজেই আশ্রয় চাচ্ছে এমন গোঁজামিলের প্রমাণ কি আপনার কাছে? আপনি কি আমাকে এমন একটি সহিহ হাদিস দেখাতে পারবেন যেখানে নবী মোহাম্মদ (সা) বলেছেন সুরা ফাতিহায় আল্লাহ নিজের কাছে নিজেই আশ্রয় চান? নিজেই নিজের কাছে কাকুতি মিনতি করেন? তাহলে নবী মোহাম্মদ (সা) এর উপরে কুরআন নাজিল হয়েছে উনি এই ব্যাপারটা বুঝলেন না আর আপনি এতো বছর পড়ে কুরআন বুঝে ফেললেন? যদি এমন হাদিস থাকতো তাহলে আপনি সেটা বলতে পারতেন কিন্তু আপনার ব্যাখ্যার তো কোনো শক্তিশালী প্রমাণ নেই।


আপনি যদি কখনো স্কুলে ক্লাস করে থাকেন তাহলে দেখে থাকবেন সেখানে আবেদন পত্রে কিভাবে আবেদন জানাতে হয় সেটা শিক্ষক দেখিয়ে দেন। এখন আপনি কি বলবেন শিক্ষক নিজেই নিজের কাছে আবেদন করছেন? এতো মূর্খ কেন আপনারা নাস্তিকরা? এসব সহজ বিষয় গুলো কি আপনাদের মস্তিস্ক কেন বুঝতে পারে না? ধরুন শিক্ষকটি আবেদন পত্র ইংরেজিতে কিভাবে বলে সেটা বুঝাতে গিয়ে বলছে,"May I ,therefore, pray and hope that you would be kind enough to grant me leave of absence and oblige thereby" এখন আপনি কি বলবেন এটা শিক্ষক নিজেই নিজেকে বলেছেন?


কুরআন আল্লাহ বানী এবং কুরআনে অনেক ইতিহাসের ঘটনা আছে এছাড়া আরও অনেক কিছুই আছে। কুরআনে জিব্রাইল ফেরেশতার কথা আছে, বিভিন্ন নবীদের কথা আছে, বিভিন্ন কাফেরদের ব্যাপারে কথা আছে কিন্তু এসব থেকে কিভাবে প্রমাণ হয় যে কুরআন আল্লাহর বানী না? আপনাদের নাস্তিকদের যদি কখনো বই পড়বার সুযোগ হয় দেখবেন সেখানে নানান মানুষের কথা থাকে কিন্তু তারমানে এই না যে সেটা লেখকের বই না। একইভাবে কুরআনে কখনো আল্লাহর বক্তব্য আছে, কখনো নবীদের কথা বলছে, কখনো ফেরেশতাদের কথা আছে কিন্তু তারমানে এই না যে কুরআন আল্লাহর বানী না। সততার সাথে চিন্তা করলে ব্যাপারটি বুঝতে পারবেন আর ইসলামবিরোধী অন্ধবিশ্বাস করলে তো বুঝবেন না।


নাস্তিকঃ

আমি বিবর্তনবাদে বিশ্বাস করি। এটা তো প্রমাণিত সত্য। বিবরতনবাদ বলে বিলিয়ন বিলিয়ন বছর আগে একটি এককোষী ব্যাকটেরিয়া থেকে বিবর্তিত হতে হতে পৃথিবীতে সকল প্রাণীর উদ্ভব ঘটেছে। অর্থাৎ সেই একটি ব্যাকটেরিয়া থেকেই বাঘ,ভাল্লুক,সাপ,কচ্ছপ,ইদুর,মসা, হাতি, নিলতিমি, থেকে বানর হতে শিপ্পাঞ্জি হয়ে মানুষ এসেছে। কিন্তু মুমিনরা আজ পর্যন্ত পারেনি স্রষ্টাকে আমাদের সামনে হাজির করতে তাই স্রষ্টাকে আমি মানি না।


মুমিনঃ 

কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে,আপনি তো চোখে না দেখা পর্যন্ত বিশ্বাস করেন না। আপনি আজ পর্যন্ত কোনো শিপ্পাঞ্জি কে বিবর্তিত হতে হতে মানুষে রূপান্তর হতে দেখেছেন?


নাস্তিকঃ 

না আসলে, সব যে চোখে দেখেই বিশ্বাস করি ঠিক তা নয়। বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে এমনটা হয়েছে। তারা অবশ্যই গবেষণা করেই তো বলেছেন। তাই তাদের কথায় তো বিশ্বাস করাই যায় তাই না ?


মুমিনঃ 

ও আচ্ছা ,তাই বলেন কিন্তু বিজ্ঞান তো আজ পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ দেখাতে পারল না যে যেখানে একটি প্রাণী সময়ের ব্যবধানে সম্পূর্ণ আরেকটি প্রাণীতে পরিণত হয়ে গেছে।, এরকম যেটাকে ম্যাক্রো ইভুলেশন বলে আর কি। এমন কি বিবর্তনবাদী বিজ্ঞানী রিচার্ড লেন্সকি ই কলাই ব্যাকটেরিয়ার উপরে লেব্রতারিতে দীর্ঘ ২৪ বছর একটানা মেউটেশন ঘটিয়ে পরীক্ষা করেছেন। আশা ছিল এর ফলে কোনো এক সময় এই ব্যাকটেরিয়া অন্য একটি প্রজাতিতে রূপান্তরিত হবে।  মেউটেশন ঘটিয়ে ব্যাকটেরিয়াকে অন্য প্রজতিতে রূপান্তর করার জন্য ২৪ বছর খুব পর্যাপ্ত সময় কারণ,ব্যাকটেরিয়ার রিপ্রোডাকশন সবচেয়ে দ্রুত হয়। কিন্তু আশার মধ্যে গুড়ে বালি দিয়ে দেখা গেলো, ২৪ বছর মিউটেশন ঘটানোর পর লেংড়া,বাকা,তেরা,তাতলা ব্যাকটেরিয়া ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় নাই। অর্থাৎ ই,কলাই ব্যাকটেরিয়া ২৪ বছর পরেও ব্যাকটেরিয়াই থেকে গেছে। অন্য কোনো প্রজাতিতে রূপান্তর হয় নি।


নাস্তিকঃ

দেখুন বিবর্তন খুব স্লো প্রসেস। ধরুন আপনাকে অ্যামাজন বনের রেড ইন্দিয়ানদের মধ্যে রেখে আসা হয়,সময়ের বিবর্তনে পারপারসিক অবস্থার সাথে তাল মিলাতে মিলাতে  আপনি এক সময় রেড ইন্দিয়ানদের মত কাচা মাংস খেতে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। আপনার এই কাচা মাংস খেয়ে টিকে যাওয়াকে বলে ন্যাচারাল সিলেকশন। এভাবেই বিবর্তন কাজ করে। ছোট ছোট সিস্টেম গুলো, আই মিন মাইক্র ইভুলেসন গুলো আস্তে আস্তে সময়ের পরিক্রমায় একদিন বৃহৎ বিবর্তন তথা মাইক্র ইভুলেসন ঘটিয়ে ফেলে। ছোট ছোট বিবর্তন গুলো দেখেই আমরা বুঝতে পারি যে বড় বিবর্তনও সম্ভব।


মুমিনঃ 

অ্যামাজন জংগলে আমি হয়তো সময়ের পরিক্রমায় রেড ইন্দিয়ানদের সাথে কাচা মাংস খাওয়া  শুরু করব কিন্তু সেটা কোনো ভবেই প্রমান করে না যে আমি কোনো একদিন রেড ইন্দিয়ান থেকে নিলতিমি তে পরিণত হয়ে সমুদ্রে ভ্রমণে বের হব?


নাস্তিকঃ 

আপনি ভাই আসলে বিজ্ঞান বুঝেনই না।


মুমিনঃ 

আচ্ছা ধরে নিলাম যে পরিবেশের সাথে খাওয়াতে যে ছোট ছোট পরিবর্তন গুলা হয়,সেগুলাই প্রমান করে যে এভাবে অনেক সময় দিলে একদিন একটি প্রাণী সম্পূর্ণ অন্য আরেকটি প্রাণীতে রূপান্তর হবে ,ঠিক আছে?


নাস্তিকঃ 

এইতো লাইনে আইসেন ।


মুমিনঃ 

আচ্ছা পরের প্রশ্ন বলুন তো, কেও যখন প্রেগন্যান্ট হয়, তার মধ্যে তখন কোনো প্রাথমিক লক্ষণ গুলা দেখা যায়?


নাস্তিকঃ

এই যেমন, বমি বমি ভাব হয়, মাথা ঘুরা,শরির দুর্বল দুর্বল লাগা এই সব।


মুমিনঃ 

আচ্ছা বেশ। ধরুন কাল সকালে উঠে দেখলেন যে, আপনার বমি বমি,মাথা ঘুরা,শরির দুর্বল দুর্বল লাগা এই সব হচ্ছে। তাহলে এই ছোট ছোট লক্ষণগুলা দেখে কি ধরে নিতে পারি যে, আপনি অদূর ভবিষ্যতে কোনো একদিন সত্যি সত্যিই প্রেগন্যান্ট হয়ে যাবেন?


নাস্তিকঃ 

আমি কিভাবে প্রেগন্যান্ট হব?


মুমিনঃ 

কেন? এই যে, ছোট ছোট লক্ষণ, সিস্টেম এই সবই তো প্রমান করার জন্য যথেষ্ট যে আপনি কোন একদিন প্রেগন্যান্ট হয়ে যাবেন, যেমন করে ছোট ছোট পরিবর্তনগুলা প্রমান করে আমি একদিন রেড ইন্দিয়ান থেকে নিল তিমি হয়ে যাবো ।


নাস্তিকঃ

আপনাদের নবী বাল্যবিবাহ করেছেন যা অমানবিক।


মুমিনঃ

একদম অমানবিক না। গোল্ডেন রুল কাকে বলে বলেন তো?


নাস্তিকঃ

নিজের এবং অন্যের ক্ষতি না করে যা করা হবে সেটাই নৈতিক ও ভালো কাজ হিসেবে গণ্য হবে।


মুমিনঃ

তাহলে নবী মোহাম্মদ (সা) যখন আয়েশা (রা) অল্প বয়সে বিয়ে করেন তখন তো উনাদের কারও বিন্দুমাত্র ক্ষতি হয় নাই। তাই গোল্ডেন রুলের দৃষ্টিতে নবী মোহাম্মদ (সা) ও আয়েশা (রা) এর বিয়েকে অমানবিক যৌক্তিক কারণেই বলা যায় না। তাছাড়া বর্তমানে যেভাবে অযাচার বৃদ্ধি পাচ্ছে ছেলে ও মেয়ে উভয়কেই কম বয়সেই বিয়ে দিয়ে দেয়া দরকার। আসুন দেখি '১৮ বছরের আগে বিয়ে করা যাবে না' এই কথা কতটুকু যৌক্তিক। ২০০২-২০১০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে ইউরোপের ২০টি দেশের স্কুলে অধ্যায়নরত ৯১,২৯৭ জন ছেলে-মেয়ের বয়ঃসন্ধিকালে তাদের যৌন আচরণের বিষয়ে একটি জরীপ করা হয়। এসব ছেলে-মেয়ের গড় বয়স ছিল ১৫.৬ বছর প্রায়।


১৫ বছর বয়সের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। গ্রিস:- ২০১০ সাল: ৩৮.২% ছেলে, ১৭.৬% মেয়ে ২০০৬ সাল: ৪৪.৫% ছেলে ১৭.৭% মেয়ে। পর্তুগাল:- ২০১০ সাল: ২৫.৯% ছেলে, ১৭.৫% মেয়ে ২০০৬ সাল: ২৫.৮% ছেলে, ২০.২% মেয়ে। অস্ট্রিয়া:- ২০১০ সাল: ৩৫.২% ছেলে, ২৮.৪% মেয়ে ২০০৬ সাল: ৩১.৭% ছেলে, ২৭.৮% মেয়ে। বেলজিয়াম:- ২০১০ সাল: ২৪.৩% ছেলে, ২৮.৫% মেয়ে ২০০৬ সাল: ২১.৩% ছেলে, ২৩.৫% মেয়ে। ফ্রান্স:-২০১০ সাল: ৩১.৫% ছেলে, ২৩.৩% মেয়ে ২০০৬ সাল: ৩২.৯% ছেলে, ২২.৯% মেয়ে।নেদারল্যান্ডস:- ২০১০ সাল: ১৯.১% ছেলে, ২১.৮% মেয়ে  ২০০৬ সাল: ২৫.৬% ছেলে, ২৬.৬% মেয়ে। সুইজারল্যান্ড:-২০১০ সাল: ২৩.৮% ছেলে, ১৬.৪% মেয়ে ২০০৬ সাল: ২৩.১% ছেলে, ১৭.৪% মেয়ে। ইংল্যান্ড:- ২০১০ সাল: ২৪.২% ছেলে, ৩৩.২% মেয়ে। ২০০৬ সাল: ২৫.৫% ছেলে, ৩০.৬% মেয়ে। সুইডেন:- ২০১০ সাল: ৩১.২% ছেলে, ৩২.৫% মেয়ে ২০০৬ সাল: ২৪.৭% ছেলে, ৩২.১% মেয়ে স্কটল্যান্ড:- ২০১০ সাল: ২৬.৬% ছেলে, ৩৫.৩% মেয়ে ২০০৬ সাল: ২৯.৪% ছেলে, ৩৩.৬% মেয়ে। ফিনল্যান্ড:- ২০১০ সাল: ১৯.৮% ছেলে, ২৪.২% মেয়ে ২০০৬ সাল: ২৪.৪% ছেলে, ২৯.২% মেয়ে  ১৩ বছর বয়সের নিচে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। গ্রিস:- ২০১০ সাল: ৫.২% ছেলে, ০.৭% মেয়ে  ২০০৬ সাল: ১৫.৯% ছেলে ৪.০% মেয়ে পর্তুগাল:- ২০১০ সাল: ৬.৯% ছেলে, ৩.০% মেয়ে ২০০৬ সাল: ৮.৩% ছেলে, ২.৮% মেয়ে অস্ট্রিয়া:- ২০১০ সাল: ১০.৪% ছেলে, ৬.৭% মেয়ে ২০০৬ সাল: ৯.৩% ছেলে, ৬.৬% মেয়ে  বেলজিয়াম:- ২০১০ সাল: ৫.০% ছেলে, ৬.৩% মেয়ে ২০০৬ সাল: ৫.৮% ছেলে, ৬.২% মেয়ে ফ্রান্স:- ২০১০ সাল: ১০.০% ছেলে, ২.৯% মেয়ে ২০০৬ সাল: ৮.৬% ছেলে, ৩.৫% মেয়ে  নেদারল্যান্ডস:- ২০১০ সাল: ৪.৬% ছেলে, ৩.৮% মেয়ে ২০০৬ সাল: ৬.৬% ছেলে, ৬.৭% মেয়ে সুইজারল্যান্ড:- ২০১০ সাল: ৫.৮% ছেলে, ২.৫% মেয়ে ২০০৬ সাল: ৪.৮% ছেলে, ৩.১% মেয়ে। রেফারেন্সঃ Gendered trends in early and very early sex and condom use in 20 European countries from 2002 to 2010 - European Journal of Public Health - The European Public Health Association (EUPHA) & Oxford University Press।


নাস্তিকঃ

শূন্যের জন্ম নাই মৃত্যু নাই ধংস নাই, তার আহার নিদ্রার প্রয়োজন নাই। তাহলে শূন্যই কি আমাদের ইশ্বর/আল্লাহ?


মুমিনঃ

আপনারা নাস্তিকরা কেন জানি পুরো তথ্য দিতে চান না। শূন্যের জন্ম নাই মৃত্যু নাই ধংস নাই, আহার নিদ্রার প্রয়োজন নাই কথা ঠিক কিন্তু শুন্য মানে যে ফাকা,খালি এইটা বললেন না কেন? শুন্যের তো বুদ্ধি নাই, চেতনা শক্তি নাই, স্বাধীন ইচ্ছা নাই, জ্ঞান নাই তাহলে শুন্যকে কিভাবে স্রষ্টা দাবি করতে পারেন? আপনাদের নাস্তিকদের যুক্তির লেভেল এতো নিচু কেন?


নাস্তিকঃ

এই যে মুমিন সাব একখানা আয়াত কই হুনেন। আল্লাহ কইসে,তোমরা ইচ্ছে কর না যদি বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ ইচ্ছে না করেন।-(সুরা তাকভীর ৮১ঃ২৯ আয়াত) তইলে আমি যে নাস্তিক এইডা আল্লাহর ইচ্ছায় অইসে তাই আমি নাস্তিক হইসি। আমার কুনো দুষ নাই। আল্লাহ আমারে নাস্তিক বানাইসে দেইক্ষা আমি নাস্তিক।


মুমিনঃ


আপনার কথা তো ঠিক আছে, একটু ভুল করেছেন নাস্তিক দাদা। আপনি পুরো কথা বলেন নাই এখানেই আপনার চুরিবিদ্যা ধরা খেলো।


নাস্তিকঃ

কেমনে?


মুমিনঃ

আল্লাহর ইচ্ছা হয়েছে প্রতিটি মানুষেরই ভালো ও মন্দ বাছাইয়ে স্বাধীনতা থাকবে। মানুষ ভালো-খারাপ পথ থেকে যা ইচ্ছা বাছাই করতে পারবে। আর মানুষের মাঝে "ইচ্ছাশক্তি"র অস্তিত্বটাই তো আল্লাহর ইচ্ছায় অস্তিত্ব পাওয়া। তাই না? তাই মানুষ যাই ইচ্ছা করে তা তো আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়,হচ্ছে কারণ আল্লাহ যদি মানুষকে ফ্রিডমের ইচ্ছা না দিতো তাহলে কি মানুষ ইচ্ছা করতে পারতো। এই কথাটিই বুঝিয়েছে উক্ত আয়াতে যে মানুষ ইচ্ছা করতে পারে না যদি না আল্লাহ ইচ্ছা করেন। 


নাস্তিকঃ

তইলে মন্দ কাজের লিগা আমারে কেন জাহান্নামে দিবো আল্লাহ?


মুমিনঃ

আল্লাহ আপনাকে গাইড বুক দিয়েই রেখেছেন। এখন আপনি যদি নিজের ইচ্ছায় আল্লাহকে না মানেন তাহলে সেটার দায় আপনার কারণ আপনি যা ইচ্ছে করবেন সেটা আপনাকে আল্লাহর ইচ্ছায় করতে দেয়া হয়েছে। ইচ্ছা শক্তির অস্তিত্বটাই তো আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। বুঝেছেন নাস্তিক দাদা?


নাস্তিকঃ

কি বুজাইলা মুনিন সাব? আগা মাথা কিচ্ছুই বুঝলাম না তো। সহজ কইররা বুজাও।


মুমিনঃ

সহজ উদাহরণ দেই। এইবার বুঝবেন আশা করি। ফেসবুকে আমরা যা যা করি সব কি জুকারবার্গ এর ইচ্ছায় হচ্ছে না? অবশ্যই। কারণ সে ফেসবুক না বানাইলে আমরা ফেসবুক চালাতেই পারতাম না। 

ধরুন সে বলল, ফেসবুক চালাতে চাইলেই তোমরা চালাতে পারবা না যদি না আমার ইচ্ছে হয়। 

কথাটি কিন্তু আসলেই সত্যি। কিন্তু ফেসবুক ব্যবহার করে যে অপরাধ করা হয় এর জন্য কি মার্ক জুকারবার্গ দায়ী? আপনি বলতে পারেন " হুম" কারণ তার জন্যই ফেসবুক সবাই চালাতে পারছে কিন্তু আপনি তাকে অপরাধী বলতে পারবেন না। কেন? কারণ সে ফেসবুকে গাইড লাইন্স দিয়ে রেখেছে। এখন আপনি যদি আপনার ইচ্ছায় ফেসবুকের নিয়ম না মেনে অপরাধ করেন এর দায় আপনার, তার না। 

তেমনিভাবে আল্লাহর ইচ্ছাতেই আমরা ইচ্ছা শক্তির ব্যবহার করতে পারি। মন্দ ও ভালো সব ইচ্ছাই আল্লাহর ইচ্ছাতে হয় কিন্তু আমরা আল্লাহকে অপরাধী বলতে পারি না কারণ উনি আমাদেরকে গাইড লাইন দিয়েছেন। উনি বলেছেন আমরা যাতে মন্দের ইচ্ছা না করি। এখন আল্লাহর দেয়া গাইড লাইন আপনি না মেনে যদি ভুল পথে চলেন সেটার দায় আপনার, অবশ্যই আল্লাহর নয়। এরপরে আর কুরআনের উক্ত আয়াত নিয়ে ভুল বুঝার কোনো সুযোগ নেই।


নাস্তিকঃ

পরকাল বলে কিছু নাই। সব মুমিনদের অন্ধবিশ্বাস।


মুমিনঃ

পরকালের অস্তিত্ব নিয়ে আধুনিক বিজ্ঞান বিভিন্ন মত প্রকাশ করে যাচ্ছে। এই যেমন Life After Death? --Physicists Says "It's Quantum Information that Transcends from One World to Another". আমাদের দেহের মৃত্যুর পরবর্তী সময়ে আমার কি হয়? এই বিষয় বিজ্ঞানীদের মধ্যে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। তবে কোনো কোনো বিজ্ঞানী এমন তথ্য দিয়েছেন যা আমাদেরকে ভাবনার মধ্যে ফেলে রাখে। অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুয়ার্ট হ্যামেরফ এবং ব্রিটিশ পদার্থবিদ স্যার রজার পেনরোজ এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন যে,


the University of Arizona’s Stuart Hameroff and British physicist Sir Roger Penrose conclude that it is information stored at a quantum level. Penrose agrees --he and his team have found evidence that "protein-based microtubules—a structural component of human cells—carry quantum information— information stored at a sub-atomic level.”


এটি (চেতনা) একটি কোয়ান্টাম স্তরে সংরক্ষিত তথ্য। পেনরোজ সম্মত হন --তিনি এবং তার দল প্রমাণ পেয়েছে যে "প্রোটিন-ভিত্তিক মাইক্রোটিউবুলস-মানুষের কোষগুলির একটি কাঠামোগত উপাদান-কোয়ান্টাম তথ্য বহন করে- একটি উপ-পরমাণু স্তরে সংরক্ষিত তথ্য।"


Penrose argues that if a person temporarily dies, this quantum information is released from the microtubules and into the universe. However, if they are resuscitated the quantum information is channeled back into the microtubules and that is what sparks a near death experience. “If they’re not revived, and the patient dies, it’s possible that this quantum information can exist outside the body, perhaps indefinitely, as a soul.


বিজ্ঞানী পেনরোজ যুক্তি দেখান যে যদি একজন ব্যক্তি অস্থায়ীভাবে মারা যায়, এই কোয়ান্টাম তথ্য মাইক্রোটিউবুলস থেকে এবং মহাবিশ্বে প্রকাশিত হয়। যাইহোক, যদি তাদের পুনরুজ্জীবিত করা হয় তবে কোয়ান্টাম তথ্যগুলি মাইক্রোটিউবিউলগুলিতে ফিরে যায় এবং এটিই মৃত্যুর কাছাকাছি অভিজ্ঞতার জন্ম দেয়। "যদি তারা পুনরুজ্জীবিত না হয়, এবং রোগী মারা যায়, তবে এটি সম্ভব যে এই কোয়ান্টাম তথ্য শরীরের বাইরে, সম্ভবত অনির্দিষ্টকালের জন্য, আত্মা হিসাবে থাকতে পারে।


Researchers from the renowned Max Planck Institute for Physics in Munich are in agreement with Penrose that the physical universe that we live in is only our perception and once our physical bodies die, there is an infinite beyond. Some believe that consciousness travels to parallel universes after death. 


মিউনিখের বিখ্যাত ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ফিজিক্সের গবেষকরা পেনরোসের সাথে একমত যে আমরা যে ভৌত মহাবিশ্বে বাস করি তা কেবল আমাদের উপলব্ধি এবং একবার আমাদের শারীরিক দেহ মারা গেলে, এর বাইরেও একটি অসীম রয়েছে। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে চেতনা মৃত্যুর পর সমান্তরাল মহাবিশ্বে ভ্রমণ করে। বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করে কেউই বলতে পারছে না যে মৃত্যুই আমাদের শেষ ঠিকানা। উনাদের বিভিন্ন গবেষণা, রিসার্চ ও যুক্তি গুলো যাচাই করলে এটা বলাই যায় যে মৃত্যুই আমাদের শেষ ঠিকানা নয়। কিছু একটা তো আছে মৃত্যুর পর যা আমাদের সামনে অপেক্ষা করছে।


রেফারেন্সঃ Life After Death? --Physicists Says "It's Quantum Information that Transcends from One World to Another"

https://www.sciphysics.com/2021/11/life-after-death-physicists-says-its.html


নাস্তিকঃ

দুনিয়ার সব কিছুই আল্লাহর ইচ্ছায় হয়। যতো খারাপ কাজ হয় সব আল্লাহর ইচ্ছায় হয়। আপনি কি এই কথার সাথে একমত?


মুমিনঃ

হুম একমত।


নাস্তিকঃ

তাহলে আপনি মেনে নিচ্ছেন সব অপরাধের জন্য আল্লাহই দায়ী?


মুমিনঃ

না। আমি মেনে নিচ্ছি না। 


নাস্তিকঃ

তাহলে আপনার কথা কি পরস্পর সাংঘর্ষিক হয়ে গেলো না?


মুমিনঃ

অবশ্যই না। 


নাস্তিকঃ

কিভাবে?


মুমিনঃ

সহজ উদাহরণ দিচ্ছি, বুঝতে পারবেন। বুঝতে পারলে সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে। খাতায় ছাত্র ভুল লেখে,যা বৈধ নয় ঠিক নয় তা লেখে এসব কিন্তু শিক্ষকের ইচ্ছায় হয়। কারণ পরিক্ষাটা শিক্ষকই নিচ্ছেন। শিক্ষক পরিক্ষা না নিলে কিন্তু ছাত্র খাতায় লিখতেই পারতো না। শিক্ষক নিজেই দেখছেন ছাত্র ভুল লিখছে। এমনকি পরিক্ষার সিস্টেমটাই তো শিক্ষকরা বানিয়েছে। তো ছাত্র ফেল করলে ফেলটা কিন্তু শিক্ষকের ইচ্ছাতেই হলো। কিন্তু তার মানে কি শিক্ষককে দোষী বলা যাবে? উত্তর হচ্ছে না। কারণ শিক্ষকের গাইডলাইন। ঠিক এভাবে সব কিছুই আল্লাহর ইচ্ছাতেই হচ্ছে, আল্লাহই সব কিছুই হতে দিচ্ছেন। আল্লাহ ইচ্ছায় আমরা আমাদের স্বাধীনতাকে উপভোগ করছি। কিন্তু তার মানে এই না যে আল্লাহ অপরাধী। আল্লাহ বান্দার অপরাধের জন্য দায়ী না কারণ আল্লাহ গাইডলাইন দিয়ে রেখেছেন। এখন আপনি যদি আল্লাহর গাইডলাইন না মেনে নিজের ইচ্ছায় খারাপ কাজ করেন এর জন্য আপনি নিজেই দায়ী। আল্লাহ কোনো ভাবেই দায়ী নয়। আপনাকে ছাড় দেয়া, আপনাকে স্বাধীনতা দেওয়া সবই আল্লাহর ইচ্ছার আওতাধীন। কিন্তু তার মানে এই না যে আল্লাহ চান আপনি অপরাধ করুন যেভাবে সব কিছু শিক্ষকের ইচ্ছাতে হলেও উনি চান না আপনি পরিক্ষায় ফেল মারুন।


নাস্তিকঃ

বিজ্ঞান কিছু আবিষ্কার করার আগে কেনো আবিষ্কৃত ফ্যাক্টগুলো কুরআন থেকে মুসলিমরা বলে না,অথবা আবিষ্কার করে না? বিজ্ঞান সেই জিনিষ আবিষ্কারের পরেই মুসলিমরা দাবি করে যে ,আবিষ্কৃত ফ্যাক্ট কুরআনে আছে। এটা কি হাস্যকর নয়?


মুমিনঃ 

আপনার প্রশ্ন থেকে বুঝা যাচ্ছে আপনি ধরে নিচ্ছেন বিজ্ঞান যা আবিস্কার করেছে তা কুরআনে আছে। হ্যাঁ, আমি বুঝেছি আপনি তর্কের খাতিরেই ধরে নিয়েছেন। তাহলে খেয়াল করুন কুরআনে যেহেতু আছে তাহলে তো সেটা প্রতিষ্ঠিত অবস্থাতেই রয়েছে। আবিষ্কার অবস্থাতেই তো রয়েছে। যেহেতু কুরআন কখনো পরিবর্তন হবেই না। যেহেতু কোরআন বিজ্ঞানের বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেই রেখেছে। তাহলে এখানে আমি বলতেই পারি বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত বিষয়গুলো বিজ্ঞানীরা আবিস্কার করে যা কুরআনে আগে থেকেই বলে দেয়া। তাহলে এটা কিভাবে হাস্যকর হয়? বিজ্ঞানের যেসব বিষয় প্রতিষ্ঠিত সত্য বলে গণ্য হবে পরিবর্তন হবে না সেই বিষয় গুলো কুরআনের সাথে মিল থাকাটাই স্বাভাবিক। মহাবিশ্বের স্রষ্টা তো আর অবৈজ্ঞানিক কথা বলবেন না। তাহলে আমরা মুসলিমরা যদি ধরিয়ে দেই যে কুরআন যে আল্লাহর বানী এই যে দেখো প্রমাণ তাহলে সেটা কেন অযৌক্তিক হবে?


নাস্তিকঃ

প্রব্লেম অফ ইভেল কেন যৌক্তিক নয়? স্রস্টা সব জানেন,স্রস্টা সর্বোচ্চ ভালো, স্রস্টা সব থেকে দয়ালু। তাই দুনিয়াতে দুঃখ-কষ্ট-বেদনা এগুলো থাকতে পারে না। যেহেতু আছে সুতরাং স্রস্টা বলে কেউ নেই।


মুমিনঃ

অনেকেই এই বিষয়টা না বুঝে পেচিয়ে ফেলেন। নাস্তিক মূর্খ গুলো তো এক্কেবারে গণ্ডঅজ্ঞ বলা চলে এই বিষয়। আসুন দেখি ওদের কিসের এতো প্রব্লেম ইভিল নিয়ে। এইবার যুক্তিটিতে কি কি সমস্যা বা ভুল আছে তা জেনে নেইঃ স্রস্টা বেশি জানেন,বেশি ভালো, বেশি দয়ালু। (অর্থাৎ স্রস্টার অস্তিত্বকে নিশ্চিত আছে ধরে নেয়া হয়েছে)। দুনিয়াতে কষ্ট থাকতে পারে না (এই পয়েন্টে এসেই ভুল করেছে নাস্তিকরা)-স্ট্রোম্যান ফ্যালাসি/ ফলস এনালজির প্রয়োগ হয়েছে। সুতরাং স্রস্টা নেই (এই সিদ্ধান্তটিও ভুল)-স্ট্রোম্যান ফ্যালাসি/ ফলস এনালজির প্রয়োগ হয়েছে।


নাস্তিকঃ

কেন দাবি গুলো ভুল?


মুমিনঃ

স্রস্টা দয়ালু তারমানে এটা নয় যে উনি মন্দের অস্তিত্ব সৃষ্টি করতে পারেন না। আর উনি যদি দুনিয়াতে মন্দের সিস্টেমই না রাখেন তাহলে মানুষ কিভাবে বুঝবে ভালো কোনটা আর মন্দ কোনটা? তারমানে মন্দের অস্তিত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকা মানুষের জন্য আবশ্যক, ভালো কাজের দিকে বেশি ধাবিত হবার জন্য। তাই যুক্তিময় সিদ্ধান্তে এটা বলাই যায় মন্দের অস্তিত্ব স্রস্টাকে আরও বেশি ভালো প্রমাণ করছে।

যেহেতু দুনিয়াতে মন্দের অস্তিত্ব আছে তারমানে সেই মন্দ থেকে আমাদেরকে স্রস্টা সচেতন করতে চান যাতে আমরা ভালোর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে সক্ষম হই। মন্দ থেকে দুরে থেকে। নাহলে মানুষকে স্রস্টা কেন চিন্তাশীল মগজ দিবেন? কেন স্বাধীন ইচ্ছে দেবেন?


তাহলে সার্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা যে সঠিক যুক্তিগুলো পেলাম তা হচ্ছেঃ স্রস্টা যেহেতু সর্বশক্তিমান সেহেতু উনি মন্দের অস্তিত্ব সৃষ্টি করতেই পারেন। মন্দের অস্তিত্ব মানুষকে ভালোর অস্তিত্বকে উপলব্ধি করায় এমনকি মন্দ থেকে সচেতন করে সেহেতু মন্দের অস্তিত্ব স্রস্টাকে খারাপ প্রমাণ করে না। সুতরাং প্রবলেম অফ ইভেল স্রস্টার অস্তিত্বকে নাই প্রমাণ করতে পারে না,পারে না স্রস্টাকে খারাপ প্রমাণ করতে বরং স্রস্টাকে আরও বেশি জ্ঞানী প্রমাণ করে।


নাস্তিকঃ 

বিয়ে তথা একত্রে সংসার করতে কি নারী পুরুষের উভয়ের সম্মতি দরকার? যদি বলেন হ্যাঁ , তবে ৬ বছরের একটি শিশু কি সংসার কি জিনিস বুঝবে? দৈহিক রিলেশন কি জিনিস ভালভাবে বুঝবে? যদি না বুঝে থাকে তবে আয়েশার ঐ শিশুকালে কবুল বলার মত স্বাভাবিক জ্ঞানই হয়নি। হযরত মোহাম্মদ (সা) সর্ব কালের, সর্ব যুগের জন্য আদর্শ মানব। এখন তাকে ফলো করে সবাই যদি বুড়ো বয়সে ৬ বছরের শিশুকে নিয়ে করে – তখন এটা যাই হোক আধুনিক সভ্য জগতে একসেপ্টটেবল নয় ।


মুমিনঃ

আপনি যখন ছোট আপনার ভালো মন্দের বিচার আপনি করবে না। করবে তোমার পরিবার। ঠিক মহানবী (সা) এর মত সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষের কাছে বিয়ে দেয়া অনেক বড় ব্যাপার। বুখারির হাদিসে আছে, রাসুল (সা) ৬ বছরে বিয়ে করলেন  আর ৯ বছরে ঘরে তুললেন। প্রশ্ন হচ্ছে, আয়েশা (রা) যখন বড় হলেন তখন কি কোনো অভিযোগ করেছিলেন? উত্তরঃ না। যেখানে তাঁরা তাদের লাইফ নিয়ে খুশি,সেখানে আপনার মত নাস্তিকদের প্রশ্ন উঠতেই পারে না। মহানবী (সা) আমাদের আদর্শ। 


কিন্তু এরমানে এই না যে নবী মোহাম্মদ (সা) যা করেছেন আমাদেরকে হুবহু সেটাই করতে হবে। যদিই তাই হতো তাহলে আমাদেরকেও চাঁদকে দুই ভাগ করে দেখাতে হতো, আমাদেরকে মেরাজে ভ্রমণ করে আসতে হতো। নবী মোহাম্মদ (সা) যা নিজে করেছেন এবং অন্য তা করতে বলেছেন অথবা উনার মৌন সম্মতি ছিল এমন কাজ করাকে সুন্নাত বলা হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে নবী মোহাম্মদ (সা) ৬ বছরের শিশু বিয়ে করেছেন এখন উনি কি এমন হাদিস বলেছেন যে সবাইকেই সেই বয়সেই বিয়ে করতে হবে? উত্তর হচ্ছে না। তাই সেই বয়সে বিয়ে করাটা বাধ্যতামূলক না,ইসলামে। বোঝা গেছে? আর নাস্তিকদের বিশ্বাস অনুযায়ী যদি ক্ষতি না হয় তাহলে যা ইচ্ছে তাই করা যাবে এই দৃষ্টিতে নবীজি (সা) ৬ বছরের শিশু বিয়ে করে তো ক্ষতি হয় নাই তাহলে নাস্তিকরা কেন এটা মেনে নিচ্ছে না যে গোল্ডেন রুল অনুযায়ী নবী মোহাম্মদ (সা) ঠিক কাজটিই করেছেন?


ফ্রেঞ্চ দার্শনিক Montesqueu তার Spirit Of Laws বইতে ২৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেনঃ 

উষ্ণ অঞ্চলের মেয়েরা ৮,৯,১০ বছর বয়সেই বিয়ের উপযুক্ত হয়ে যায় । ২০ বছর বয়সে তাদের বিয়ের জন্য বৃদ্ধ ভাবা হয়। 


অ্যামেরিকার সংবিধান তৈরিতে যেসব বইয়ের সাহায্য নেয়া হয়েছে তার মধ্যে Spirit Of Laws বইটি অন্যতম। তারমানে অল্প বয়সে বিয়ে করাটা স্বাভাবিক ছিল। অন্যায় কিছু ছিল না। রাসুল (সা) কি শুধু ৬ বছর বয়সী মেয়েকেই বিয়ে করেছিল? না । ভিন্ন ভিন্ন বয়সেও তিনি বিয়ে করেছেন। আয়েশা (রা) কখনো এই বিয়ে নিয়ে আপত্তি করেন নাই। তৎকালীন যুগে ৬ বছরে বিয়ে সাধারণ ব্যাপার ছিল এই যুগে সাধারন না। রাসুল (সা) এর আগেই আয়েশা (রা), জুবাইর ইবন মুতির  সাথে Engaged ছিলেন । (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৪৯,ইঃফা)। পরে হযরত আবু বকর (রা) ইসলাম গ্রহন করলে এ বিয়ে ভেঙ্গে যায়।


নাস্তিকঃ

আপনি তো ঘুরে ফিরে কিন্তু আপনি সেই খেলনা খেলা শিশু বিবাহকেই প্রমোট করলেন।


মুমিনঃ

আমি গোল্ডেন রুল থেকেও প্রমাণ করেছি আপনি কি তাহলে বলবেন গোল্ডেন রুল ভুল? কোনো কাজ যদি ক্ষতি না হয় তাহলে সেটাকে কেন মন্দ বলতে হবে আপনাদেরকে? এখন কি আপনি বলবেন আপনারা গোল্ডেন রুলও মানেন না? আমি প্রমোট করলাম কই? ইসলাম তো এই বিধান ফরজ করে নাই যে সব মুসলিমকে সেই বয়সী মেয়েকেই বিয়ে করতে হবে। তাহলে? রাসুল (সা) তো বিভিন্ন বয়সেও বিয়ে করেছেন । যেমনঃ মায়মুনা বিনতুল হারিস (রা) ৩৬ বছর বয়সে, হাফসা বিনতে উমার (রা) ২২ বছর বয়সে,জুয়াইরিয়া বিনতুল হারিস (রা) ২০ বছর বয়সে,সাফিয়া বিনতে হুয়াই (রা) ১৭ বছর বয়সে ইত্যাদি। উনি কাউকে জবরদস্তি বিয়ে করেছেন এমন প্রমাণ কেউই দেখাতে পারবে না।


একটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে এভাবে যে,ডাক্তাররা ছোট শিশুদের ইনজেকশন দেয় যা যন্ত্রণাদায়ক এটা আপাতত দৃষ্টিতে আপত্তিকর হলেও যেহেতু ফলাফল ভালো তাই পূর্বের আপত্তি আর আপত্তি থাকে না কারণ ইনজেকশন এর কষ্টের ফলে শিশুদের রোগ দূর হবে তাই এই কষ্ট শিশুদের জন্য আপত্তিকর থাকলেও ফলাফল এর জন্য এটি আপত্তিকর না। একই ভাবে বাহ্যিক দৃষ্টিতে ৬ বছরে বিবাহ আপত্তিকর (নাস্তিকদের কাছে) মনে হলেও ফলাফল যেহেতু ভালো তথা আয়েশা (রা) তাঁর স্বামীকে ভালবাসতেন তাঁর স্বামীও তাঁকে ভালবাসত এবং তাদের সংসার ছিল সুখের সংসার এমনকি আয়েশা (রা) এই ৬ বছরের বিয়ে ব্যাপারে জীবনেও আপত্তি করি নাই তাই এই আপত্তি আর আপত্তি থাকছে না কারণ এর ফলাফল ভাল। তাই যৌক্তিকভাবে এই বিয়ে নিয়ে নাস্তিকদের আপত্তি করবার সুযোগ নেই। যদি এমন হতো যে আয়েশা (রা)কে নির্যাতন করা হতো, অত্যাচার করতো উনার স্বামী সেখানে নাস্তিকরা অভিযোগ করলে সেটা গ্রহণযোগ্য হতো কিন্তু এমন কিছুই আয়েশা (রা) এর বেলায় হয়নি। তাই আপত্তির সুযোগ থাকছে না।


ধরুন, আপনি এক কালো মেয়েকে বিয়ে করলেন যে খুবই গরীব কিন্তু আপনি ধনী। ধরুন আপনার বন্ধু যদি আপনাকে বলে কিরে তুই এত বড় এক ধনী হয়ে এক গরিবের মেয়েকে বিয়ে করলি কেন? এটি আমার কাছে আপত্তিজনক, তাছাড়া কেমন জানি দেখায়। আপনি আমাকে বললেন দূর বকা আমি ওকে আমার প্রাণের চেয়েও বেশি ভালবাসি সেও আমাকে ভালবাসে আমরা আনন্দে এখানে তুই বলার কে? খেয়াল করেছেন বিষয়টি? এখানে আপনার বন্ধুর আপত্তি দিয়ে কিন্তু তাদের দাম্পত্য জীবনে কিছুই আসে যায় না কারণ তারা সুকেহ আছে কিন্তু হ্যাঁ যদি তাদের মধ্যে ভালবাসা না থাকতো তাহলে আপত্তি করলে সেটা গ্রহণযোগ্য হতো।যেহেতু তারা তাদের জীবন নিয়ে খুশি তাই এখানে অন্যের আপত্তির ২ পয়সার কোনো মূল্য নাই।


আয়েশা (রা) এই বিয়েতে রাজি ছিল। হযরত আম্মাজান আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুল (সা) বলেছেন ,হে আয়েশা ! তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে তুমি দুনিয়া ও আখিরাতে আমার স্ত্রী হবে ? আয়েশা বলল কেন নয় ? তখন রাসুল (সা) বললেনঃ তুমি দুনিয়া ও আখিরাতে আমার স্ত্রী। 

রেফারেন্সঃ হাকিম, সিলসিলা আহাদিস সহিহা লি আলবানী , হাদিস নং ১১৪২। আরও দেখুনঃ “রাসুল (সা) এর স্ত্রীগণ কেমন ছিলেন” পৃষ্ঠাঃ ৩৬ , পিস পাবলিকেশন হাদিস সহিহ।


আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসুল (সা) বলেছেন দুবার করে আমাকে স্বপ্নযোগে তোমাকে দেখানো হয়েছে। এক লোক রেশমি কাপড়ে জরিয়ে তোমাকে নিয়ে যাচ্ছিল,আমাকে দেখে বলল এ হল তোমার স্ত্রী। তখন আমি পর্দা খুলে দেখি সে তুমিই । যখন আমি (আয়েশা) বললামঃ এ স্বপ্ন যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় তবে তিনি বাস্তবে পরিনত করবেন।

রেফারেন্সঃ সুহিহ বুখারী, খণ্ড ৮, হাদিস নং ৪৭০৭। ইসলামিক ফাউন্ডেশন


তাই আয়েশা (রা) যে নির্ভয়ে, সেচ্ছায় এই বিয়েতে রাজি ছিল সেটা স্পষ্ট। আয়েশা (রা) উনার স্বামীকে ভালবাসার একটি নমুনা বলি। আয়েশা (রা) তাঁর স্বামীর হাদিস বর্ণনা করেছেন প্রায় ২২১০ টি। এবার বুঝে নেন। কেউ যদি নিজের স্বামীকে ঘৃণা করে তাহলে সেই স্বামীর কথা কেন মুখস্ত করতে যাবে? কেন সেই স্বামীর বিরুদ্ধে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলে নাই? হিন্দিতে একটি প্রবাদ বাক্য আছে, “আগার মাইয়া সাহাব রাজি তো কিয়া কারেগা কাজী”।


নাস্তিকদের কাছে যে যে প্রশ্ন গুলো থেকে যাবে,হযরত আয়েশা (রা) যদি নবী মুহাম্মদ (সা) কে পছন্দ না করতেন তাহলে নবীজি মৃত্যুর পরে তিনি ইচ্ছা করলেই পালিয়ে যেয়ে অন্য ধর্ম অথবা নবীর বিরুদ্ধে কথা বলতে পারতেন অথবা এমন কিছু হাদিস বানাতে পারতেন যা ইসলামের বিরুদ্ধে যায় কিন্তু তিনি সেটা কেন করলেন না? হযরত আয়েশা (রা) কি তাঁর সারা জীবনে কখনো নবীর সাথে তাঁর বিয়ের ব্যাপারে আপত্তি করেছিল? হযরত আয়েশা (রা) কি নবী (সা) কে ভালবাসতেন না সেটার প্রমাণ কোথায়? হযরত আয়েশা (রা) কি নবী (সা) কে কখনো বলেছেন আমাকে তালাক দিয়ে দিন? হযরত আয়েশা (রা) কেন নবী (সা) হাদিস বর্ণনা করতেন যদি তিনি তাকে পছন্দ নাই করতেন? একটি প্রমাণ দিতে পারবেন যে হযরত আয়েশা (রা) ইসলামের কোনো ক্ষতি করেছিল?


নাস্তিকঃ

জীন বা অদৃশ্য কিছু অস্তিত্ব কি দুনিয়ায় আছে?


মুমিনঃ


দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় ২১ মার্চ ২০১৬ তারিখের একটি খবরঃ 

এক খেলোয়াড় সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ল আজব দৃশ্য । খেলোয়াড়ের পিছনে এক মহিলা ছিল । ট্রলি ধরা মহিলা ঐ নারীকে হ্যালো বলল সে চোখের পলকে হাওয়া তথা গায়েব হয়ে গেল অথচ ঐ খেলোয়াড় তখনও কথা বলে চলছেন টিভি ক্যামেরার সামনে।


বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় ৬ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখের খবরঃ 

হোয়াইট হাউস ব্যাপারে বিস্তারিত বলা হয়েছে । “ভুতের উৎপাত” শিরোনামে  নিচের দিকে বিভিন্ন বাস্তব ঘটনার উল্লেখ আছে । খৃষ্টানরা যেটাকে Ghost বলে আমরা সেটাকে জীন বলি ।


রেফারেন্সঃ হোয়াইট হাউসের কথাঃ www.bd-pratidin.com/various/2017/12/06/286527


Black Magic | National Geographic: https://www.youtube.com/watch?v=i52MQIJcBVM


টিকাঃ যখন নারীবাদীদের সাথে অথবা যে কারও সাথে পোশাক ইসু নিয়ে কথা বলবেন তখন কিভাবে কথা বলবেন? সেই নারীবাদীকে প্রথমেই জিজ্ঞাসা করুন  অশ্লীল পোশাক এবং শালীন পোশাক বলতে আপনি কি বুঝেন? এই প্রশ্নে মাক্সিমাম নারীবাদীরা যে জবাব দেবে সেটা হচ্ছে, অশ্লীল পোশাক বলে কিছু নাই যার যেটা রুচি সে সেটাই পরিধান করবে- এই কথা গুলোই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলবে। তখন তাকে পাল্টা প্রশ্ন করুন কেউ যদি রাস্তায় পুরো নগ্ন হবার স্বাধীনতা চায় সেই ক্ষেত্রে আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গি কি? এই প্রশ্নে দেখবেন তেমন যৌক্তিক উত্তর দিতে পারবে না। আবার প্রশ্ন করুন, আপনি আপনার দেহের স্ত*ন, ভেজাই*না, পা*ছা, এসব কেন কাপড় দিয়ে পর্দা করে রেখেছেন? এসব অঙ্গকে কেন পোশাকের পর্দা থেকে খুলে দিচ্ছেন না?এভাবেই প্রশ্ন করতে হবে ওদেরকে নাহলে ওদের শিক্ষা হবে না। এই প্রশ্নে সে আপনাকে বলবে আপনি ভদ্রটা বুঝেন না। এভাবে কেউ প্রশ্ন করে। আপনি তাকে আবার প্রশ্ন করুন, আপনি একটু আগেই না বললেন শালীন-অশালীন বলে কিছু নেই তাহলে এখন ভদ্রতার কথা টানছেন কোন যুক্তিতে? আপনাদের যুক্তিতেই তো লেং টা হয়ে যাওয়াই তো সম্পুর্ন স্বাধীনতা তাহলে স্বাধীনতার নাম দিয়ে অর্ধেক দেহ কেন ঢাকবেন পুরোপুরি উদোম হয়ে যাওয়াই তো ভালো। এইখানে আপনাদের নারীবাদীদের কি যুক্তি? এরপরে সেই নারীবাদী আপনাকে মাদ্রাসার ছাপ বলে অপমান করবে কিন্তু তারপরেও আপনার যৌক্তিক প্রশ্নের জবাব দেবার মতো হেডম হবে না।


আমি যখন প্রথম কুরআনের অনুবাদ পড়েছিলাম তখন অসাধারণ লেগেছিল। কুরআনের যেই দিক আমার সব থেকে বেশি ভালো লাগে সেটা হচ্ছে যখন কুরআন পড়ি তখন কুরআন যেন আমার ভিতরে ঢুকে যায়। আমার সাথে যেন কুরআন কথা বলে। কুরআন আমাকে বসিয়ে রাখতে বাধ্য করে। আখিরাতের জগৎ চোখের সামনে দেখিয়ে দেয় এই কুরআন। একটু অন্য রকম লাগতে পারে কথাটি তাও বলছি।আমি কুরআনকে নাস্তিকদের দৃষ্টিতে এমনকি খ্রিস্টানদের দৃষ্টিতেও পড়েছি। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ এতে না স্তিক ও খ্রি স্টানরা যে কেমন লেভেলের ধাপ্পাবাজ সেটা আমি অনুভব করতে পেরেছি। আমি কুরআনকে বিভিন্ন ভাবেই দেখেছি সততার সাথে। নিরপেক্ষ হয়েই বলতে পারবো কুরআনের মাঝে বিন্দুমাত্র ভুল পাইনি। যারা কুরআনের বিরুদ্ধে তাদের অন্তরে আসলে বিদ্বেষ হিংসায় ভরা। এই কারণে আল্লাহর কথা তাদের হজম হয় না।


একজন নাস্তিক যে কিনা আগেই কুরআনকে মনে প্রাণে ঘৃণা করে সে কিভাবে কুরআনের কথা ফিল করতে পারবে? একজন খ্রিস্টান যে কিনা এই আশায় কুরআন পড়ে যে যশুই নাকি আল্লাহ ছিলেন আর নবী মোহাম্মদ (সা) নাকি যিশুর উপাসনা করতেন। এভাবে কি কুরআনের মর্মার্থকে উপলব্ধি করা সম্ভব? নারে পাগলা না। কুরআন পড়ার আগে নিজের ভিতর সকল ঘৃণা হিংসা-বিদ্বেষ মুছে ফেলে নিরপেক্ষ ও সততার সাথে চিন্তা করে করে কুরআনের দৃষ্টিতে কুরআন পড়ে দেখো। তোমাকে যে অস্তিত্ব দিয়েছে উনাকে পেয়ে যাবা। আমার কথা বিশ্বাস করার দরকার নাই নিজেই টেস্ট করে দেখো। আর কতো নাস্তিকাস্টান প্রজাতিদের থেকে কুরআন জানবা এইবার না হয় কুরআনের দৃষ্টিতে কুরআন পড়ে দেখো। মনে রেখো একমাত্র ইসলামই তোমাকে মুক্তি দিতে পারে।


নাস্তিকদের সব অভিযোগের জবাব দিতে পারবেন আপনিও, কারণ নাস্তিকদের ফালতু সমালোচনার জবাব দেয়া পানির মতো সহজ। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। আসিফ মাহমুদ ভাইয়ের এই বিষয় লেখাটি আমি তুলে দিচ্ছি। মন দিয়ে বুঝে পড়ুন। তবে এজন্য মোরাল ফিলোসফি সম্পর্কে আপনাদের কিছুটা আইডিয়া দিতে হবে। কয়েক যুগ থেকেই ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিকরা ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। কখনো রাসূল (স) এর যুদ্ধ নিয়ে, কখনো তাঁর বিয়ে নিয়ে, কখনোবা দাসপ্রথা নিয়ে। প্রায় সব প্রশ্নের প্যাটার্নই এক। তিনি কেন বনু কুরাইযার সব পুরুষকে হত্যা করেছিলেন? এটা খুব নির্মম! কেন তিনি আয়িশা (রা) কে মাত্র ৬ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন? তিনি নারীলোভী! কেন ইসলাম দাসপ্রথা সমর্থন করে? এটা বর্বর!


পাঠক, একটা বিষয় লক্ষ্য করলে দেখবেন, তারা শুধু প্রশ্ন করছে না, সাথে একটা জাজমেন্ট জুড়ে দিচ্ছে। জাজমেন্টগুলোর সারকথা হচ্ছে, ইসলাম যেই কাজগুলো করেছে বা রাসূল (স) যেই কাজগুলো করেছেন সেগুলো 'অনৈতিক'। এখানেই আমাদের আলোচনা শুরু হয়। নৈতিকতা এবং অনৈতিকতা নিয়ে দর্শনের যেই পাঠ তাকে বলা হয় 'মোরাল ফিলোসফি' বা 'নৈতিক দর্শন'। নৈতিকতা মূলত তিন ধরণের। অবজেক্টিভ, রিলেটিভ এবং ইমোটিভ। মূল আলোচনা হয় অবজেক্টিভ এবং রিলেটিভ মোরালিটির একটা চরম রূপ যেটা সাবজেক্টিভ মোরালিটি নামে পরিচিত এই দুটো নিয়ে। এই দুটোর আমি সংজ্ঞায়ন করছি, একটু বোঝার চেষ্টা করুন।


অবজেক্টিভ মোরালিটি হচ্ছে কিছু সার্বজনীন নৈতিক নিয়ম যেগুলো ব্যক্তি, সমাজ, কালভেদে পরিবর্তন হয়না। এই পৃথিবীতে নৈতিকতা, অনৈতিকতার কিছু বাইনারী নিয়ম আছে। যেমন- মিথ্যা বলা অনৈতিক, হত্যা করা অনৈতিক। এমন না যে জনাব করিমের জন্য মিথ্যা বলা অনৈতিক কিন্তু জনাব সলিমের জন্য নৈতিক। বরং, এটা সর্বজনীন। এই অবজেক্টিভ মোরালিটির দাবিদার হচ্ছে বিভিন্ন ধর্মের মানুষজন, যেমন- আমরা মুসলিমরা। আমরা দাবি করি, সৃষ্টিজগতের পালনকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আ'লামীনের কাছ থেকে আমরা ওহীর মাধ্যমে নৈতিকতার কিছু স্ট্যান্ডার্ড পেয়েছি। কোন কাজটা নৈতিক, কোন কাজটা অনৈতিক তার একটা সুস্পষ্ট set of rules পেয়েছি। আর এগুলো ব্যক্তিভেদে পরিবর্তন হয়না, সমাজভেদে, সময়ভেদে পরিবর্তন হয়না। এগুলো সর্বদা ধ্রুব। এটাই অবজেক্টিভ মোরালিটি। অনেকেই অবজেক্টিভ মোরালিটির সাথে এবসলিউট মোরালিটি গুলিয়ে ফেলেন। 


যেমন- হত্যা করা অনৈতিক। এখন কেউ বলতেই পারেন যে, সেল্ফ ডিফেন্সে হত্যা করা কি অনৈতিক? কিংবা অন্যায়ের শাস্তিস্বরূপ? উত্তর হচ্ছে না, অনৈতিক না। তাহলে কি অবজেক্টিভ মোরালিটির সংজ্ঞা ভায়োলেট হচ্ছে? একদমই না। অবজেক্টিভ মোরালিটি হচ্ছে set of rules. এখানে নৈতিকতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে কন্ডিশনও সেট করা থাকে। যেমন- জানের ওপর আঘাত আসলে মিথ্যা বলাও নৈতিক, সেল্ফ ডিফেন্সে হত্যা করা নৈতিক, এগুলো নিয়মেরই অন্তর্ভুক্ত। আর এই নিয়মগুলো সদা অপরিবর্তনীয়। কিন্তু যদি এমন বলা হতো, কোনো অবস্থাতেই মিথ্যা বলা বৈধ না, হত্যা করা বৈধ না, তাহলে সেটাকে বলা হতো এবসলিউট মোরালিটি। দুইটায় তফাৎ আছে, বোঝা গেছে?


এবার আসি, সাব্জেক্টিভ মোরালিটি কী? সাব্জেক্টিভ মোরালিটি হচ্ছে, নৈতিকতা ধ্রুব না। এটা ব্যক্তিভেদে, সমাজভেদে, সময়ভেদে ভিন্ন হতে পারে। তাই তারা নৈতিকতার একটা স্ট্যান্ডার্ড আছে এই বিষয়টা অস্বীকার করে। যেখানে অবজেক্টিভিস্টরা দাবি করে ২+২=৪ যেমন সত্য, তেমনই নৈতিকতারও কিছু ধ্রুব সত্য আছে। যেমন মিথ্যা বলা অনৈতিক, চুরি করা অনৈতিক ইত্যাদি৷ এগুলো ব্যক্তিভেদে পরিবর্তিত হয়না। কিন্তু সাব্জেক্টিভিস্টরা বলে, না। এটা ধ্রুব না, একেক ব্যক্তির জন্য একেকরকম। একেকজনের নৈতিক অবস্থান একেকরকম হতে পারে। যেমন- কোনো কোনো ব্যক্তির কাছে সমকামিতা নৈতিক হতে পারে, কোনো কোনো ব্যক্তির কাছে অনৈতিক হতে পারে। স্ট্যান্ডার্ড বলে কোনোকিছু নেই, যার যার চয়েজ। 


আশা করি পার্থক্যটা কিছুটা বুঝতে পেরেছেন। এই হলো ব্যাসিক পাঠ। এখন আবার আগের টপিকে ফিরে যাই। একজন নাস্তিক যখন রাসূল (স) এর কোনো একটা কাজকে অনৈতিক বলছে বা ইসলামের কোনো একটা অবস্থানকে অনৈতিক বলছে, তাকে প্রথম যেই প্রশ্নটি করবেন তা হলো-


"তুমি কি অবজেক্টিভ মোরালিটিতে বিশ্বাস করো নাকি সাব্জেক্টিভ?" উত্তরে যদি সে বলে- "আমি সাব্জেক্টিভ মোরালিটিতে বিশ্বাস করি", তবে কি তার আর ক্রিটিসাইজ করার সুযোগ আছে পাঠক? কারণ সে তো মনে করে নৈতিকতা ধ্রুব না, একেক ব্যক্তির, একেক সমাজের নৈতিক অবস্থান একেকরকম হতে পারে, কোনো স্ট্যান্ডার্ড নেই, তাহলে সে কীভাবে কোনো একটা কাজকে 'নৈতিক' বা 'অনৈতিক' বলতে পারে? গট ইট? কিন্তু...উত্তরে সে যদি বলে- "আমি অবজেক্টিভ মোরালিটিতে বিশ্বাস করি", তাহলে তাকে যেটি বলবেন তা হলো- "তোমার অবজেক্টিভ মোরাল ভ্যালুগুলোর মানদণ্ড কি? তোমার নৈতিকতার যেই মানদণ্ড, সেটি যে সত্য তার প্রমাণ দাও! যখন তুমি তোমার নৈতিকতা সত্য বলে প্রমাণ করবে, তারপর তুমি ইসলামকে ক্রিটিসাইজ করবে, এর আগে নয়।" 


এই জায়গায় পাঠকের হয়তো বুঝতে একটু অসুবিধা হচ্ছে। বুঝিয়ে বলছি। ধরুন আপনি পরীক্ষা দিয়েছেন। সেখানে কিছু প্রশ্ন ছিলো, সেগুলোর উত্তর লিখেছেন। এখন, আপনার উত্তরগুলো ঠিক নাকি ভুল, এটা কে যাচাই করতে পারবে? যে সঠিক উত্তরগুলো জানে, সে যাচাই করতে পারবে। এখন ধরুন, একজন এসে বললো আপনার উত্তরগুলো ভুল। আপনি কেন তাকে মেনে নেবেন? আগে তো তাকে প্রমাণ দিতে যে, সে যেই উত্তরগুলো জানে সেগুলো প্রকৃতপক্ষেই সঠিক এবং সেগুলোর উপর ভিত্তি করে সে আপনার উত্তরকে ভুল বলছে। আমি সেই প্রমাণের কথাই বলছি। এখন বলতে পারেন, নাস্তিকরাও তো আমাদের কাছে প্রমাণ চাইতে পারে। ওয়েল, অবজেক্টিভিস্টরা বিশ্বাস করে মোরাল ট্রুথ বলে কিছু একটা আছে এবং সেটা ধ্রুব ও সর্বজনীন। চুরি করা একই সাথে নৈতিক এবং অনৈতিক হতে পারেনা। অবশ্যই যেকোন একটি হবে। এখন 'চুরি করা অনৈতিক' এই কথাটি যে সত্য তা আমরা কীভাবে জানবো? উত্তর সহজ! আমরা এটা জানবো একজন এক্সটার্নাল অথোরিটি থেকে, যিনি হচ্ছে স্রষ্টা। তিনি জানেন তাঁর সৃষ্টির জন্য কোনটা 'নৈতিক' আর কোনটা 'অনৈতিক'। আর একমাত্র তিনিই সেই স্ট্যান্ডার্ড ঠিক করে দিতে পারেন। তাই, আমাদের নৈতিকতা সত্য।


আমাদের নৈতিকতা সত্য কী-না এই প্রশ্ন তোলার বদলে আমাদের স্রষ্টা এবং ধর্মগ্রন্থ সত্য কী-না সেটা প্রশ্ন তোলা যেতে পারে। আর সেটা একটা বিশদ টপিক। অবশ্যই আমরা প্রমাণ দিতে পারি। এবং অনেক আলোচনা, বই আছে এসবের ওপর। কিন্তু.. একজন নাস্তিক তার নৈতিকতা সত্য এটা কীভাবে প্রমাণ করবে? তার তো স্রষ্টা নেই। ফলে তাকে নৈতিকতার কোনো একটা অবজেক্টিভ স্ট্যান্ডার্ড ফলো করতে হবে যেটা মনুষ্য সৃষ্ট। মনুষ্য সৃষ্ট স্ট্যান্ডার্ড ফল্টি এবং বায়াসড হবে এটা বলাই বাহুল্য তাও আপনারা শুনবেন, তার স্ট্যান্ডার্ড কি। এবং তাকে বলবেন, সে যেন তার স্ট্যান্ডার্ড প্রমাণ করে। সেটা যে সত্য তা যেন সে প্রমাণ করে দেখায়। এবার সেটা যাই হোক! ওয়াল্লাহি, পারবেনা। আর যদি না পারে, তবে মানবো কেন? তবে কেন তার কথায় আমরা এপোলোজেটিক হবো? এটা তো সেই পরীক্ষার খাতা দেখার মতোই ব্যাপার হলো। সে প্রশ্নগুলোর যেই উত্তর জানে সেগুলো যে সত্য এবং সঠিক তা যদি প্রমাণ করতেই না পারে, তাহলে আমি তার কথায় আমার প্রশ্নগুলোকে ভুল কেন মনে করবো বা সংশয়ে ভুগবো? বোঝা গেছে? একটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বলে দেই। অধিকাংশ নাস্তিক নৈতিকতার স্ট্যান্ডার্ড জানতে চাইলে ইউটিলিটারিয়ানিজমের কথা বলে, হার্ম প্রিন্সিপালের কথা বলে। তাদেরকে স্ট্রেইটফরোয়ার্ড জিজ্ঞেস করবেন, ইউটিলিটারিয়ানিজম (উপযোগবাদ) যে সত্য, তা প্রমাণ করো। হার্ম প্রিন্সিপাল সত্য তা প্রমাণ করো। যদি প্রমাণ করতে না পারো, তাহলে চুপ থাকো। তোমার প্রশ্নের,অভিযোগের উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই। প্রিয় মুসলিম ভাইবোনেরা,অল্পেই ভয় পাবেন না। ইসলাম এতো ঠুনকো নয় যে কয়েকটা নাস্তিকদের কয়েকয়া আর্গুমেন্টেই মিথ্যা হয়ে যাবে। ইসলাম সত্য। আল্লাহর অস্তিত্ব সত্য, রাসূল (স) এর শেষনবী হওয়া সত্য, কুরআনের ওহী হওয়া সত্য, আখিরাহ সত্য, মালাইকাগণ সত্য, নবী-রাসূলগণ সত্য, তাক্বদীর সত্য। ভয় পাবেন না, সংশয়ে ভুগবেন না। পড়ুন। জানুন। শিখুন। সত্য আবিষ্কার করবেন প্রতিনিয়ত ইন-শা-আল্লাহ।


নাস্তিক মানেই প্রবৃত্তি পূজারী অর্থাৎ নৈতিকতাকে বিসর্জন দিয়ে, ধর্মীয় উত্তম বিধি বিধানকে অস্বীকার করবে এবং নিজের প্রবৃত্তির খেয়াল খুসির অনুসরণ করবে। অর্থাৎ তার প্রবৃত্তি তাকে যা নির্দেশ দেয় সে তাই করে। যাকে বলে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করা। মুক্তমনাদের বই পত্রসহ তাদের জীবন যাপনে থেকেই পরিস্কার জানা যায় যে যৌনস্বাধীনতায় হস্কক্ষেপ করা উচিত নয় এবং যার ইচ্ছে তার সাথেই যৌন সঙ্গম করা মুক্তচিন্তায় বৈধ। এই মুক্তচিন্তার দৃষ্টিতে কোনো নাস্তিক যদি চায় নিজের মা, নিজের দাদি, নিজের নানি, নিজের খালা, নিজের বোন, ইত্যাদি নারীর সাথে যৌন সঙ্গম করবে সেটাও নাস্তিক্যধর্মে বৈধ যদি সম্মতি থাকে। তারা যদি সুখি হয় তাহলে তা অনৈতিক নয়। তাই নাস্তিকদের কোনো ধরণেরই যৌন সম্পর্ক নিয়েই অভিযোগ করার যৌক্তিক সুযোগ নেই। কোনো নাস্তিক যদি এটা বিশ্বাস করে যে সে ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী তাহলে তার এই বিশ্বাসের দৃষ্টিতে সে কখনো যৌক্তিকভাবে অন্যের যৌন সম্পর্ক নিয়ে অভিযোগ করতে পারবে না। কারণ তাকে এটাও বিশ্বাস করতে হবে যে অন্য মানুষেরও নিজস্ব স্বাধীনতা আছে।


নাস্তিকদের পরিবার আসলে কেমন হয়? একটি নাস্তিক পরিবারে পিতা চাইলে অন্য নারীকে নিয়ে রাত কাটাতে পারবে মা বাধা দিবে না। আবার নাস্তিক মাতা অন্য পুরুষের সাথেও রাত কাটাতে পারবে, পিতা বাধা দিবে না। একজন নাস্তিক পিতা তার একাধিক ছেলে সন্তানদের সাথে সম্মতিতে সমকামিতা যেমন করতে পারবে একইভাবে একজন নাস্তিক মা তার একাধিক নাস্তিক ছেলের সাথে সম্মতিতে যৌনকর্মও করতে পারবে। এসব যৌনলীলা মুক্তচিন্তায় বৈধ। একজন নাস্তিক পিতা যেমন তার চার নাস্তিক মেয়ের সাথে সম্মতিতে যৌনকর্ম করতে পারবে ঠিক একইভাবে একজন নাস্তিক মা তার চার নাস্তিক মেয়ের সাথেও যৌন সম্পর্ক রাখতে পারবে। এই হলো মুক্তবুদ্ধির যৌনকর্মের চেহারা যা নাস্তিকরা লুকিয়ে রাখতে চায়। প্রাণী জগতে শূকরের যেমন মলএর মধ্যে থাকলেও কিছু আসে যায় না ঠিক একইভাবে বিবর্তিত নাস্তিকান্ধদের এসব নাস্তিক্যধর্মের মুক্তবুদ্ধির যৌন নীতিমালাতেও ঘেন্না লাগে না। কুকুর যেমন রাস্তায় সবার সামনে যৌন সঙ্গম করলে লজ্জা লাগে না তেমনি নাস্তিক্যধর্মে বিশ্বাস করা নাস্তিকদেরও মুক্তচিন্তার যৌনসঙ্গমে লজ্জা লাগে না। অথচ এদের কাছেই নাকি আবার চার বিয়ে করা জায়েজ নাই-এর চেয়ে হাস্যকর কথা আর কি হতে পারে? নিজের বিবেককে নাস্তিকান্ধতার শিকলে বেধে না রেখে মানবিক বিবেক দিয়ে নাস্তিক্যধর্মকে একটু বিচার করে দেখুন,চোখ খুলে যাবে।


নাস্তিকদের সাথে যুক্তির সম্পর্ক নাই। বিজ্ঞানের সম্পর্ক নাই। সভ্যতার সম্পর্ক নাই। মানবতার সম্পর্ক নাই। আদর্শের সম্পর্ক নাই। নাস্তিকদেরকে আমরা জম্বিদের সাথে তুলনা করতে পারি। যারা নিজেদের ইসলামবিরোধী বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠিত করতে মিথ্যাচার করতে ভয় পায় না তাদের থেকে আপনি কিভাবে সততা আশা করতে পারেন? এরা নাস্তিক্যবাদকে ধর্ম হিসবে মানতে চায় না আবার অন্যকে ঠিকই নিজেদের মতো করে বিশ্বাস করাতে চায়। এরা নিজেদেরকে বিজ্ঞানমনস্ক হতে বলে কিন্তু বিজ্ঞান নাস্তিকদের বিরুদ্ধে গেলে সেটাকে অপবিজ্ঞান বলে ধামাচাপা দিয়ে রাখে। আমাদেরকে সচেতন সবার সময় আজকেই। আমরা যদি সচেতন না হই, তাহলে নাস্তিকরা আমাদেরকে দখল করে নিয়ে গণহত্যা করবে। আমাদের মা বোন ও স্ত্রীদের সাথে কেমন আচরণ করবে সেটা বুঝিয়ে বলার দরকার নাই। নাস্তিকদের ইতিহাস ঘাঁটলেই তার প্রমাণ মেলে। এখন আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিন আপনি মানুষ হয়ে বাঁচবেন নাকি নাস্তিক হয়ে। কোনটা?

এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post