কুরআনে বৈপরীত্য আয়াত আছে?

বিষয়ঃ কুরআনে বৈপরীত্য আয়াত আছে? 

লিখেছেনঃ এমডি আলী।

ভূমিকাঃ 

কুরআনে নাকি অনেক পরস্পর বৈপরীত্য আয়াত আছে এমনটাই বিশ্বাস করে থাকেন ইসলামবিরোধীরা। আজকে তাদের বিশ্বাস গুলো যাচাই করে দেখা হবে আসলেই কুরআনে বৈপরীত্য আয়াত আছে কিনা। নাস্তিক মুক্তমনারা ভিন্নমতের লেখা গুলো বুঝে পড়তে চায় না। তারা নিজেদেরকে এই বলে বুঝ দেয় যে “আরে এসব মুমিনিও যুক্তি” “মুমিনিও ত্যানা প্যাঁচানো কথা”। কিন্তু সত্যসন্ধানীরা ঠিকই বুঝতে পারে কার লেখা যৌক্তিক আর কার লেখা মিথ্যাচারে ভরপুর। আপনি যদি আসলেই সত্যিটা জানতে চান তাহলে এই তদন্তে অংশগ্রহণ করুন। আর যদি মনে করেন আপনি সব জেনে ফেলেছেন তাহলে আপনার মতো জ্ঞান অর্জনে অনাগ্রহী লোকের সাথে আলাপ নেই। 

নাস্তিকদের মুক্তমনাদের মিথ্যাচার গুলো ধরে ফেলা একদম পানির মতো সহজ। যারা ঠিক মতো বই পুস্তক ঠিক মতো পড়েন তাদের কাছে। ধরুন এক লোক হাতে ডিম নিয়ে বলছে আমার হাতে ডিম নেই একে বলা হয় বৈপরীত্য কথা অথবা কন্ট্রাডিকশন যুক্ত কথা বলা হয়। কিন্তু যদি বলা হয় আমার হাতে ডিম আছে আবার যদি বলা হয় আমার হাতে আপেল আছে তাহলে কি এটা বৈপরীত্য হবে? না। কারণ একই হাতে ডিম ও আপেল দুটোই থাকতে পারে। নাস্তিকরা যে বলে কুরআনে নাকি কন্ট্রাডিকশন আছে আসুন যাচাই করে দেখি আসলেই কুরআনে কন্ট্রাডিকশন আছে নাকি নাস্তিকরা মুক্তচিন্তায় মিথ্যাচার করেছে। আসুন শুরু করি তদন্ত।

শুরুতেই পরাজয় স্বীকার?

ইসলামবিরোধীরা বলে,

সুরা নিসা ৪:৮২ =  এরা কি লক্ষ্য করে না কোরআনের প্রতি? এই কোরআন যদি আল্লাহ ব্যতীত অপর কারও পক্ষ থেকে হত, তবে এতে অবশ্যই বহু বৈপরীত্য দেখতে পেত। 

শুরুতেই জানিয়ে রাখি, কোরআনের এই আয়াতগুলোতে (সুরা বাকারা ২:২১৯, সুরা বাকারা ২:২৪২, সুরা ইউনুস ১০:৩৭, সুরা হুদ ১১:১, সুরা নাহল ১৬:৮৯, সুরা বনী ইসরাইল ১৭:৪১, সুরা হজ ২২:১৬, সুরা নুর ২৪:১৮, সুরা নুর ২৪:৪৬, সুরা নামল ২৭:১, সুরা ফুসসিলাত ৪১:৩, সুরা জাসিয়া ৪৫:৬, সুরা কামার ৫৪:৩২, সুরা কামার ৫৪:৪০, সুরা কামার ৫৪:২২, সুরা কামার ৫৪:১৭) 

এসব আয়াতে, আল্লাহ বারবার জানিয়েছেন যে কুরআন একটি সুস্পষ্ট কিতাব, সহজ কিতাব, কুরআন বিস্তারিত বিশ্লেষণকারী, আপনি যদি সেটা না মানেন তাহলে আপনি এই পোস্ট নিয়ে কিছু বলার আগে আমি জানিয়ে রাখি প্রতিটা বৈপরীত্য তথা মাছ কোনো না কোনো ত্যানা বা শাক দিয়ে ঢাকা যাবে। আর একটি কথা তা হল, এখানে আলোচনা করা হয়েছে কোরআন নিয়ে, হাদিস নিয়ে নয়। তাদের সুবিধার্থে যারা সারাক্ষণ নিজেদের কোরআন অনলি মুমিন বলে দাবি করে। সুতরাং হাদিস অথবা তাফসীর দিয়ে কোনো জবাব দেয়া যাবে না।

আহলে কুরআন একটি পথভ্রষ্ট দল। যারা বলে “আমরা শুধু কুরআন মানি, হাদিস মানি না”। তারা কাফের,তাদেরকে মুসলিম বলা যাবে না। এই দলটিও নাস্তিকদের মতো বানিয়ে বানিয়ে কুরআনের ভুল ব্যাখ্যা করে থাকে। নাস্তিকরা দাবি করেছে কুরআনের মধ্যে বৈপরীত্য আছে কিন্তু আবার হাস্যকর শর্ত দিচ্ছে যার অকাট্য জবাব আমি দিয়েছি। কেমন দুর্বল আর ভিতু হলে এমন শর্ত কেউ দিতে পারে একবার ভাবুন তো। তারমানে সে মেনেই নিয়েছে যে কুরআনে আসলে কোনো বৈপরীত্য নেই। তাহলে কেন কুরআন নিয়ে অভিযোগ? উত্তর সহজ, যেভাবেই হউক ত্যানা প্যাঁচিয়ে নিজেদের ইসলামবিরোধী বিশ্বাসকে টেকাতে হবে। যারা ইসলাম নিয়ে গবেষণা করেন তারা সহজেই এটা বুঝতে পারবে যে কুরআনই শুধু দলিল না,সহিহ হাদিসও আমাদের দলিল। কুরআন মানতে হবে হাদিস মানা যাবে না এই কথার প্রমাণ কি? তাফসীর মানা যাবে না কথার প্রমাণ কি? কেউ যদি নিশ্চিত হয় যে কুরআনে বৈপরীত্য আছে তাহলে সে কেন নিজেকে এভাবে রক্ষা করতে চাইবে যে হাদিস বা তাফসীর থেকে জবাব দেয়া যাবে না? হাদিস থেকে জবাব দেয়া অথবা তাফসীর থেকে জবাব দেয়াটা কিভাবে শাক দিয়ে,মাছ লুকানো হয়? কুরআন কুরআনের মতো বুঝতে হলে আপনাকে অবশ্যই নবী মোহাম্মদ (সা) তথা সহিহ হাদিস থেকে জানতে হবে। আর হাদিসের ব্যাখ্যা, মর্মার্থ ইত্যাদি বুঝতে হলে আপনাকে অবশ্যই তাফসীর থেকে সাহায্য নিতে হবে। সালফে সালেহিনরা যেভাবে কুরআন হাদিস বুঝেছে আমাদেরকেও সেভাবেই বুঝতে হবে। নাস্তিকরা ইসলামকে কখনো সততার সাথে সমালোচনা করে নি। কুরআনের একটি আয়াত দেখিয়েছে কিন্তু আরেকটি দেখায় নি যেখানে জবাব আছে। কুরআন নিজেই স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে কুরআনকে কিভাবে বুঝতে হবে আর মূর্খ ইসলামবিরোধী লোকটি হাস্যকর শর্ত দিচ্ছে যে হাদিস বা তাফসীর থেকে কিছু বলা যাবে না।

আল কুরআন, সুরা নিসা ৪:৫৯ আয়াতে বলা আছে, 

হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর-যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম।

আল কুরআন, সুরা ইয়া-সীন ৩৬:২১ আয়াতে বলা আছে, 

অনুসরণ কর তাদের, যারা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় কামনা করে না, অথচ তারা সুপথ প্রাপ্ত। 

উপরের দুই আয়াতের ব্যাখ্যায় সহিহ হাদিস এবং তাফসীরে যাওয়ার আগেই আপনাদের আয়াতের দিকে খেয়াল দিতে বলব । দেখুন আয়াতে আল্লাহ কি বলেছেন তোমরা আল্লাহকে মানো মানে কুরআন , এরপরে বলেছেন নবীজিকে মানো, মানে নবীজি (সা)এর সুন্নাহ এরপরেই আবার বলেছেন তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদেরকেও মানো, এরমানে এমন লোকদের কথা আমাদের মানতে বলেছে যারা ইসলামকে সঠিকভাবে আমাদের পালন করতে বলে । সুতরাং আমরা উপরের আয়াত হতে পেলাম কুরআন হাদিস মানার পাশা পাশি এমন জ্ঞানী লোকদের কথাও মানতে হবে যারা আমাদেরকে সঠিকভাবে ইসলাম পালনকরতে উৎসাহ দেয়। যদি তাদের মধ্যে বিরত দেখা দেয় তাহলে কুরআন ও সহিহ হাদিসের দিকেই আমাদের ধাবিত হতে হবে। এমন একটি আয়াত দেখাতে পারবেন যেখানে বলা আছে নবীজি (সা)কে মানা যাবে না? অথবা নবীজি (সা) থেকে এমন একটি হাদিস দেখাতে পারবেন যেখানে বলা আছে “তোমরা শুধু কুরআন মানো, আমাকে অনুসরণ করো না”? ইসলামবিরোধী গোষ্ঠী আসলে কুরআনের বৈপরীত্য বের করতে পারেনি, আর কখনো পারবেও না এই কারণেই লজ্জায় মুখ লুকিয়ে আগেই কৌশলে পরাজয় মেনে নিয়ে বলেছে হাদিস ও তাফসীর থেকে জবাব দেয়া যাবে না। হাদিস গুলো পড়ুন অনেক কিছু স্পষ্ট হতে পারবেন।

সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৩৬৬০, সহিহ হাদিসঃ 

যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আমার নিকট হতে হাদীস শুনে তা মুখস্থ রাখলো এবং অন্যের নিকটও তা পৌছে দিলো, আল্লাহ তাকে চিরউজ্জ্বল করে রাখবেন। জ্ঞানের অনেক বাহক তার চেয়ে অধিক সমঝদার লোকের নিকট তা বহন করে নিয়ে যায়; যদিও জ্ঞানের বহু বাহক নিজেরা জ্ঞানী নয়।-ihadis.com

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ১২, সহিহ হাদিসঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, অচিরেই কোন ব্যক্তি তার আসনে হেলান দেয়া অবস্থায় বসে থাকবে এবং তার সামনে আমার হাদীস থেকে বর্ণনা করা হবে, তখন সে বলবে, আমাদের ও তোমাদের মাঝে মহামহিম আল্লাহ্‌র কিতাবই যথেষ্ট। আমরা তাতে যা হালাল পাব তাকেই হালাল মানবো এবং তাতে যা হারাম পাবো তাকেই হারাম মানবো। (মহানবী বলেন) সাবধান! নিশ্চয়ই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা হারাম করেছেন তা আল্লাহ্‌ যা হারাম করেছেন তার অনুরূপ।-ihadis.com

এই হাদিস গুলো থেকে পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে যে অনেকেই আছেন যারা বলেন আমরা কুরআন মানি হাদিস মানি না তাদের জন্য নবীজি (সা) এর উপরের হাদিসই এনাফ। এখানে একটি বুঝার বিষয় হল নবীজি (সা) আল্লাহর কথা অনুযায়ী চলেন তিনি নিজ থেকে কিছুই বলেন না । সুতরাং হাদিসেও তাই নবীজি এই কথাই বলেছেন যে নবী যা হারাম করেছেন সেটি আল্লাহ যা হারাম করেছেন তার অনুরুপ । এরপরের হাদিস তো মুখস্ত করার ব্যাপারে নবীজি আদেশই দিয়েছেন। দেখুন "ihadis.com", হাদিসের বিখ্যাত বই যেমন বুখারি, মুসলিম , জামে আত তিরমিজি,ইত্যাদি বড় বড় হাদিসের কিতাবে "তাফসীর" নামে একটি অধ্যায় আছে যেখানে নবীজি (সা) সহ তাঁর সাথীরা কুরআনের তাফসীর করেছেন। যদি তাফসীর মানা ইসলামে নিষেধ হত তাহলে তাঁরা কেন তাফসীর করলেন? ইসলামবিরোধী মূর্খদের যে ইসলাম নিয়ে গভীর পড়াশোনা নেই এটা তাদের নিন্মমানের সমালোচনা বিচার করলেই বুঝা যায়।

সবকিছু কখন নির্ধারিত হয়?

১/ অভিযোগঃ এক আয়াতে বলা হচ্ছে কদরের রাতে আরেক আয়াতে বলা হচ্ছে সৃষ্টির পূর্বেই। এখানে তো বৈপরীত্য হল। 

ক্বদরের রাতেঃ সুরা দুখান ৪৪:৪-৫ = এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়। আমার পক্ষ থেকে আদেশক্রমে, আমিই প্রেরণকারী। 

সৃষ্টির পূর্বেইঃ সুরা হাদিদ ৫৭:২২ = পৃথিবীতে এবং ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর কোন বিপদ আসে না; কিন্তু তা জগত সৃষ্টির পূর্বেই কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ। 

জবাবঃ প্রথম আয়াতে খেয়াল করুন। সেখানে বলা হচ্ছে এই রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থির হয় আল্লাহর আদেশে, আল্লাহই প্রেরণ করেন সেই আদেশ । অন্য আয়াতে বলা হচ্ছে সৃষ্টির আগেই সব আল্লাহ লিখে রেখেছেন অর্থাৎ তাকদির। এখানে কোনো বৈপরীত্য হচ্ছে না কেননা আল্লাহ আগেই তাকদির লিখে রেখেছেন আর সেটি ফেরেশতাদের কাছে প্রেরন করেন শবে কদরের রাতে। যেমন ধরুন আমি আগেই খাবার তৈরি করে রেখেছি কিন্তু সেটি তোমাকে দিলাম রবিবারে অনেকটা এরকম। এখানে আসলে কোনো বৈপরীত্য নেই।

তাফসীরে আহসানুল বয়ান, পৃষ্ঠাঃ ৮৬৫ , সুরা দুখান ৪৪:৪ , ৫ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,

সাহাবা ও তাবেঈন থেকে এর ব্যাখ্যায় বর্ণিত হয়েছে যে , এই রাতে আগামী বছরের জীবন, মরন ও জীবিকার উপায় উপকরন ফয়সালা লউহে মাহফুজ থেকে অবতীর্ণ করে ফেরেশতাদেরকে সোপর্দ করা হয়। 

সুতরাং আল্লাহ সব কিছু আগেই নিরধারন করে রেখেছেন কথা সত্য কিন্তু সেগুলা সেসব কদরের রাতে ফেরেশতাদের দিয়ে দেন এটাই বুঝানো হয়েছে। যদি বলা হতো আল্লাহ সব লিখে রেখেছেন আবার যদি বলা হতো সব লিখে রাখেন নাই তাহলে বৈপরীত্য হতো। কিন্তু এমন কিছুই আয়াতে বলা নাই।

মানুষ কি অন্যের পাপের বোঝা বহন করবে? 

২/ অভিযোগঃ এক আয়াতে বলা হচ্ছে হ্যাঁ আরেক আয়াতে বলা হচ্ছে না। কেন?

হ্যাঁ: সুরা আনকাবুত ২৯:১৩ = তারা নিজেদের পাপভার এবং তার সাথে আরও কিছু পাপভার বহন করবে। অবশ্য তারা যে সব মিথ্যা কথা উদ্ভাবন করে, সে সম্পর্কে কেয়ামতের দিন জিজ্ঞাসিত হবে।  এবং সুরা নাহল ১৬:২৫ = ফলে কিয়ামতের দিন তারা নিজেদের বোঝাও পুরোপুরি বহন করবে এবং এমনসব লোকদের বোঝার একটি অংশও বহন করবে যাদেরকে তারা জ্ঞান ছাড়াই গোমরাহ করে, খুবই নিকৃষ্ট বোঝা যা তারা বহন করে। 

না: সুরা আনআম ৬:১৬৪ = যে ব্যক্তি কোন গোনাহ করে, তা তারই দায়িত্বে থাকে। কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। অতঃপর তোমাদেরকে সবাইকে প্রতিপালকের কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। অনন্তর তিনি তোমাদেরকে বলে দিবেন, যেসব বিষয়ে তোমরা বিরোধ করতে। 

জবাবঃ বাহ্যিক আয়াত সামনে রেখেই উত্তর দিয়ে এরপরে ব্যাখ্যায় প্রবেশ করব। সুরা আনকাবুত ২৯:১৩ এবং সুরা নাহল ১৬:২৫ আয়াতে বলা হচ্ছে এমন লোকদের কথা যারা নিজেরা তো খারাপ কাজ করতই পাশাপাশি অন্যদের খারাপ কাজের উৎসাহ দিত এতে তারা তো নিজেদের পাপের বোঝা বহন করবে এবং অন্যকে খারাপ কাজে উৎসাহ দেয়ার জন্য এর একটি পাপের অংশও তারা বহন করবে এবং অন্যদিকে সুরা আনআম ৬:১৬৪ আয়াত এমন লোকের কথা বলা হচ্ছে যে নিজে পাপ করছে এবং সে এর জন্য নিজেই দায়ী। আর এখানে মোটেও বৈপরীত্য হচ্ছে না। আয়াত গুলো মনোযোগ দিয়ে পড়লেই ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে যায়। যেমন, একজন মানুষ নিজে বিড়ি খায় এবং অন্যদেরকে বিড়ি খেওয়ার অভ্যাস গড়ায় সাহায্য করেছে। এখানে কিন্তু সে নিজেও অপরাধী পাশাপাশি অন্যকে এই খারাপ অভ্যাসে জড়ানোর জন্য এর একভাগ বেশি শাস্তি সেও পাবে কারণ সেই এর হতা। অন্যদিকে এক মানুষ নিজে পাপ কাজ করেছে কিন্তু অন্য কাউকে বলেনি এই ক্ষেত্রে তার এই পাপের ভার কেউই নিবে না,তাকে নিজেরেই নিতে হবে। আয়াত দুটোতে স্পষ্ট করেই সেটা বলা হয়েছে। তাহলে এখানে বৈপরীত্য কিভাবে হল? হাদিস দুটো পড়ুন আরও স্পষ্ট হতে হবেন।

সহিহ মুসলিম, হাদিস ৬৬৯৭ , সহিহ হাদিসঃ 

রসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ যে লোক সঠিক পথের দিকে ডাকে তার জন্য সে পথের অনুসারীদের প্রতিদানের সমান প্রতিদান রয়েছে। এতে তাদের প্রতিদান হতে সামান্য ঘাটতি হবে না। আর যে লোক বিভ্রান্তির দিকে ডাকে তার উপর সে রাস্তার অনুসারীদের পাপের অনুরূপ পাপ বর্তাবে। এতে তাদের পাপরাশি সামান্য হালকা হবে না।-ihadis.com

সুনানে আন নাসায়ী , হাদিসঃ ৩৯৮৫ , সহিহ হাদিসঃ 

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিতঃ অন্যায়ভাবে যে ব্যক্তিকেই হত্যাই করা হোক না কেন, তার রক্তের একাংশ আদম (আঃ) -এর প্রথম পুত্র কাবিলের উপর বর্তায়। কেননা সে-ই সর্বপ্রথম তার ভাই হাবিলকে হত্যা করে রক্তপাতের রীতি প্রবর্তন করেছে।-ihadis.com

আরও মজার কথা হল এই প্রশ্নের চমৎকার জবাব তাফসীরে ইবনে কাসীর, ১৩ খণ্ড , ৩২৫ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করা হয়েছে, বলা হয়েছেঃ সুরা আনকাবুত ২৯:২৩ এবং সুরা নাহল ১৬:২৫ - এই দুই বিষয় কোনো বৈপরীত্য মনে করা ঠিক না। কারণ যারা অপরকে পথভ্রষ্ট করে, তাদেরকে পথভ্রষ্ট করার পাপ বহন করতে হবে , এটা নয় যে যাদেরকে পথভ্রষ্ট করা হয়েছে তাদের পাপ হালকা করে তাদের বোঝা এদের উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। সুতরাং আপনি নিজে অপরাধ করলে তো তার শাস্তি বহন করবেনই সাথে অন্যদেরকে উস্কানি দেয়ার মূল হতা যদি আপনি হন এতেও অতিরিক্ত বোনাস শাস্তির বোঝা বহন আপনি করবেন কিন্তু যদি শুধু নিজে পাপ করেন আর কাউকে করতে বলেন নাই তাইলে আপনি শুধু নিজেই নিজের আকামের বোঝা বহন করবেন। পাঠক এইবার বুঝেছেন তো কেন সেই মূর্খ নাস্তিকটি হাদিস ও তাফসীর থেকে রেফারেন্স দিতে মানা করেছিল? হ্যাঁ, এই কারণেই।

আল্লাহ কতটি সুরা রচনার চেলেঞ্জ করেছেন? 

৩ অভিযোগঃ একটি দশটি বা পুরা কিতাব, আসলে কতটা আয়াত আল্লাহ চ্যালেঞ্জ দিয়ছেন। এরকম বৈপরীত্য কেন?

সুরা বাকারা ২:২৩ = এতদসম্পর্কে যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে যা আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, তাহলে এর মত একটি সূরা রচনা করে নিয়ে এস। তোমাদের সেসব সাহায্যকারীদেরকে সঙ্গে নাও-এক আল্লাহকে ছাড়া, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো। 

সুরা ইউনুস ১০:৩৮ = মানুষ কি বলে যে, এটি বানিয়ে এনেছ? বলে দাও, তোমরা নিয়ে এসো একটিই সূরা, আর ডেকে নাও, যাদেরকে নিতে সক্ষম হও আল্লাহ ব্যতীত, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক। 

সুরা হুদ ১১:১৩ = তারা কি বলে? কোরআন তুমি তৈরী করেছ? তুমি বল, তবে তোমরাও অনুরূপ দশটি সূরা তৈরী করে নিয়ে আস এবং আল্লাহ ছাড়া যাকে পার ডেকে নাও, যদি তোমাদের কথা সত্য হয়ে থাকে। 

সুরা কাসাস ২৮:৪৯ = বলুন, তোমরা সত্যবাদী হলে এখন আল্লাহর কাছ থেকে কোন কিতাব আন, যা এতদুভয় থেকে উত্তম পথপ্রদর্শক হয়। আমি সেই কিতাব অনুসরণ করব। 

জবাবঃ খুবই হাস্যকর একটি বৈপরীত্য যা টস লাইট দিয়ে বেচারা গুগল মামার থেকে ধার করেছে। আমার উত্তর দিতেও লজ্জা লাগছে যে এতো লেইম মার্কা অভিযোগ কেউ করে কিভাবে। ধরুন আপনি খুব শক্তিশালী একজন মানুষ। এখন দুর্বল কিছু বালক এসে আপনার সাথে বাহাদুরি দেখাচ্ছে । আপনি তাদেরকে বললেন যদি পারো তাহলে ১০০ কেজি উঠিয়ে দেখাও। তারা পারল না। আপনি আবার বলেন যদি এটি না পারো তাহলে  ৫০ কেজি উঠিয়ে দেখাও। তারা এরপরেও পারল না। আপনি তাদেরকে আবার বললেন আচ্ছা তাহলে এবার ১০ কেজি উঠাও , এরপরেও তারা পারল না। তাহলে ৫ কেজি উঠাও, তাও পারল না।  এখন কোনো মূর্খ এসে যদি বলে এখানে ১০ কেজি নাকি ১০০ কেজি , ৫ কেজি উঠাতে কেন বলা হল এটি তো বৈপরীত্য-এই কথাটি যেমন ভুল তেমনি উক্ত অভিযোগটিও ভুল। কুরআনে যদি বলা হতো তোমরা পারলে একটি সুরার মতো আয়াত নিয়ে আসো আবার যদি বলা হতো একটি সুরার মতো নিয়ে এসো না তাহলে কথাটি বৈপরীত্য হতো। কিন্তু আয়াতে আলাদা আলাদা করে তো স্পষ্ট করেই সব বলে দেয়া হয়েছে। এখানে বৈপরীত্য কিভাবে হবে?

কুরআনে প্রথমে কুরআনের মত সুরার মত একটি সুরা নিয়ে আসার চেলেঞ্জ জানানো হয়েছে, বিদ্বেষীরা পারে নাই,এরপরে সহজ করার জন্য মাত্র একটি সুরা লিখে আনার জন্য বলেছে তাও পারে নাই এরপরে কুরআনের ছোট একটি সুরার মত সুরা লিখে আনার জন্য বলেছে তাও পারে নাই , পরিশেষে কুরআনের বিধান যে সেরা সেটা প্রমান করার জন্য আল্লাহ চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন পারলে এর থেকে ভাল কোন বিধান এনে দেখাও। এখন পর্যন্ত কেউ পারে নাই। ধরুন আপনার শিক্ষক আপনাকে বলল আজকে ১০ টি অংক করে আনবা আপনি পারেননি, এরপরে বলল আচ্ছা ৫ টি অংক করে আনবা , আপনি তাও পারেননি এরপরে বলল আচ্চা ১ অংক করে আনবা .....আপনি তাও পারলেন না -- এখানে শিক্ষকের কথায় কিভাবে বৈপরীত্য হয় সেটি যুক্তিবাদীদের কাছে বোধগম্য নয়। আর পরিশেষে কথা হল এখানে মোটেও বৈপরীত্য নেই বরং নাস্তিকদের ব্রেনে কেমিক্যাল গ্যাস্টিক প্রবেশ করেছে বিধায় এই সহজ বিষয় তারা বুঝতে পারেনি এর জন্য আমরা দুক্ষিত এবং মর্মাহত।  

সমগ্র কুরআন এক সাথে নাজিল হয়েছে? 

৪/ অভিযোগঃ এক আয়াতে বলা হচ্ছে হ্যাঁ, আরেক আয়াতে বলা হচ্ছে না,এরকম কেন ?

হ্যাঁ: সুরা দুখান ৪৪:৩ = আমি একে নাযিল করেছি। এক বরকতময় রাতে, নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। এবং সুরা কদর ৯৭:১ = আমি একে নাযিল করেছি শবে-কদরে। 

নাঃ সুরা ইনসান ৭৬:২৩ = আমি আপনার প্রতি পর্যায়ক্রমে কোরআন নাযিল করেছি। এবং সুরা ফুরকান ২৫:৩২ = সত্য প্রত্যাখানকারীরা বলে, তাঁর প্রতি সমগ্র কোরআন একদফায় অবতীর্ণ হল না কেন? আমি এমনিভাবে অবতীর্ণ করেছি এবং ক্রমে ক্রমে আবৃত্তি করেছি আপনার অন্তকরণকে মজবুত করার জন্যে। 

জবাবঃ পাঠক উপরের আয়াত সমূহ মনোযোগ দিয়ে পাঠ করুন । নিজেরাই উত্তর পেয়ে যাবেন । যে আয়াতে বলা হচ্ছে "কুরআন নাজিল করা হয়েছে বরকতময় রাতে" আবার "আরেক আয়াতে বলা হচ্ছে আল্লাহ পর্যায়ক্রমে নাজিল করেছেন"  দুইটি আয়াতকে সামনে রাখলে জবাব পরিস্কার হয়। আল্লাহ যদি শবে কদরের রাতে সম্পূর্ণ কুরআন নাজিলই করে থাকেন তাহলে কেন তিনি আবার সেগুলা পর্যায়ক্রমে নাজিল করেছেন? এর সহজ উত্তর হল আল্লাহ মুলত শবে কদরের রাতে কুরআন নাজিল করা শুরু করেছেন এবং এভাবেই ধিরে ধিরে নবীজি (সা)এর কাছে পর্যায়ক্রমে নাজিল করেছেন। এখানে মোটেও বৈপরীত্য নেই।

তাফসীরে কুরতুবি এ ছাড়া তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ , সুরা দুখান ৪৪:৩ আয়াতের ব্যাখ্যায় সেটাই বলা হচ্ছে যে,

কুরআন শবে কদরে নাজিল হওয়ার অর্থ এই যে লওহে মাহফুজ থেকে সমগ্র কুরআন দুনিয়ার আকাশে এ রাতেই নাজিল হয়েছে । অতপর নবুওয়াতের তেইশ বছরে প্রয়োজনানুপাতে খণ্ড খণ্ড করে রাসুল (সা)এর প্রতি নাজিল করা হয় । কেউ বলেছেন প্রতি বছর যতটুকু কুরআন নাজিল হওয়ার প্রয়োজন ছিল,ততটুকুই শবে কদরে দুনিয়ার আকাশে নাজিল হয়েছে। 

তাফসীরে ফি যিলালিল কুরআন, ১৮ খণ্ড , ২৪৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

সুরা দুখান ৪৪:৩ ব্যাখ্যা = যে পবিত্র কল্যাণময় রাতে কুরআন নাজিল হয়েছে, সেটা কোনটা ? এ সম্পর্কে নিগূঢ়তম সত্য ও নির্ভুলতম তথ্য একমাত্র আল্লাহই ভাল জানেন । তবে আমরা এতটুকু নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে এটা রমজানের কোন এক রাত যখন কুরআন নাজিল হওয়ার সূচনা হয়েছে । কেননা কুরআনে বলা হয়েছে রমজান মাসে কুরআন নাজিল হয়েছে । এ কথা সুবিদিত যে সেই রাতে সম্পূর্ণ কুরআন নাজিল হয়নি । তবে এই রাতে পৃথিবীর সাথে এর যোগাযোগ শুরু হয়েছে । "কল্যাণময় রাতে কুরআন নাজিল হয়েছে" এ উক্তির তাফসীর প্রসঙ্গে এতটুকুই যথেষ্ট ।

ইঃফা, তাফসীরে ইবনে আব্বাস, ৩ খণ্ড , ২৮৭,২৮৮ পৃষ্ঠা, সুরা দুখান ৪৪:৩ ব্যাখ্যাঃ 

আমি তা অবতীর্ণ করেছি অর্থাৎ জিবরাইলকে প্রেরন করেছি কুরআনসহ । এ বিষয়টি শপথ করে বলা হয়েছে । আল্লাহ জিবরাইল (আ)কে দুনিয়ার আকাশে প্রেরন করেছিলেন । এরপরে জিবরাইল (আ) লেখক ফেরেশতাদের তা পড়ে শোনান । এ লেখকগন দুনিয়ার আকাশের অধিবাসী এক মুবারক রজনীতে রহমত, ক্ষমা ও বরকতের রাত্রিতে, সেটি হল লাইলাতুল কদর ।তারপর আল্লাহ জিবরাইলকে প্রয়োজন মুতাবিক আয়াত ও সুরা নিয়ে মোহাম্মদ (সা)এর নিকট প্রেরন করেন । 

তাফসীরে জালালাইন, খণ্ড ৫ ,  ৮৬০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

কুরআন শবে কদরে নাজিল হয়েছে এর অর্থ এই যে লওহে মাহফুজ থেকে সমগ্র কুরআন এই দুনিয়ার আকাশে এ রাত্রিতেই নাজিল করা হয়েছে এবং তারপরে পর্যায়ক্রমে মোহাম্মদ (সা)এর কাছে নাজিল করা হয়। 

আয়াত গুলো মনোযোগ দিয়ে পড়লেও এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে আল্লাহ কুরআন নাজিল করেছে এক বরকত রাতে এবং সেখান থেকেই পর্যায় ক্রমে নাজিল করেছে নবীজি (সা) এর উপরে। এখানে কোনো বৈপরীত্য নেই। যদি বলা হতো কুরআন পুরোটা আমি দুনিয়াতে নাজিল করেছি আবার যদি বলা হতো কুরআন পুরোটা আমি নাজিল করে নাই তাহলে এখানে বৈপরীত্য হতো। কিন্তু কুরআনে এমন কিছুই বলা হচ্ছে না। তাছাড়া তাফসীরের এই বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা সমূহ আপনাদের যেন আমি দেখাতে না পারি এর জন্যই ইসলামবিরোধীরা প্রথমেই আমাকে হাদিস এবং তাফসীরের ব্যাখ্যা না দেওয়ার পরোক্ষভাবে অনুরধ করেছিলেন কিন্তু আমি তাদের এসব ডাহামিথ্যাচার প্রকাশ করে দিতে থাকবোই।

সৃষ্টির সময়ে আল্লাহ আকাশ ও জমিন একত্রিত নাকি পৃথক করেছেন? 

৫/ অভিযোগঃ কোথাও একত্রিত আবার কোথায় পৃথক করেছেন এরকম কেন ?

একত্রিতঃ সুরা ফুসসিলাত ৪১:১১ = অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধুম্রকুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আসো ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম। 

পৃথকঃ সুরা আম্বিয়া ২১:৩০ = কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না? 

জবাবঃ নাস্তিকদের মূর্খামি দেখলে এখন আর অবাক লাগে না আমার। মূর্খ না হলে যে নাস্তিক হয় না সেটা নাস্তিকদের অভিযোগ গুলো বিচার না করলে আমি বুঝতেই পারতাম না। আয়াত গুলো খেয়াল করুন। সুরা আম্বিয়ার ২১:৩০ আয়াতেই তো বলা হচ্ছে যে আকাশ ও পৃথিবী মিশে ছিল পরে আল্লাহ তাদেরকে পৃথক বা আলাদা করে দিলেন। আবার অন্য আয়াতে বলা হচ্ছে আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধুম্রকুঞ্জ। এখানে কোনো বৈপরীত্য নেই। উদাহরণ দিলে সহজে বুঝতে পারবেন। চায়ের সাথে চা পাতি ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিল পরে আমি ছাকনি দিয়ে দুটিকে আলাদা করে দিলাম। একইভাবে আসমান ও পৃথিবী একত্রে মিশে ছিল পরে আল্লাহ এদেরকে আলাদা করলেন অথবা পৃথক করলেন। এরপরে আলাদা করে আকাশের দিকে লক্ষ্য করলেন যা ছিল ধুম্রকুঞ্জ। এখানে বৈপরীত্য কিভাবে হচ্ছে? আয়াতে স্পষ্ট করে সব বলে দেয়া হচ্ছে আর মূর্খ নাস্তিক গুলো গায়ের জোরে অভিযোগ করে বসে আছে।

আল্লাহ কি নবী রাসুলদের মধ্যে তারতম্য করেন? 

৬/ অভিযোগঃ কোথাও হ্যাঁ আবার কোথাও না বলা হচ্ছে কেন?

হ্যাঁ: সুরা বনী ইসরাইল ১৭:৫৫ = আমি তো কতক নবীরাসুলকে কতক নবীরাসুলদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি এবং দাউদকে যবুর দান করেছি। 

না: সুরা নিসা ৩:৮৪ =  বলুন, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা কিছু অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের উপর, ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব এবং তাঁদের সন্তানবর্গের উপর আর যা কিছু পেয়েছেন মূসা ও ঈসা এবং অন্যান্য নবী রসূলগণ তাঁদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে। আমরা তাঁদের কারো মধ্যে পার্থক্য করি না। আর আমরা তাঁরই অনুগত। 

জবাবঃ প্রথম অংশে, আল্লাহ এক নবীর থেকে অন্য নবীকে মর্যাদা দিয়েছেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এখানে আল্লাহ নবীদের মর্যাদার তফাৎ নিয়ে কথা বলেছেন। কিছু কিছু নবীর মর্যাদা কিছু কিছু নবীদের থেকে বেশি। যেমন আল্লাহ আদম (আ) কে নিজ হাতে সৃষ্টি করে মর্যাদা দিয়েছেন যা অন্য কোনো নবীর নেই, নুহ (আ) কে প্রথম রাসুল হিসেবে মর্যাদা দিয়েছেন যা অন্য কোন নবীর নেই,ইবরাহিম (আ)কে খলীল বা অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহন করে মর্যাদা দিয়েছেন যা অন্য নবীদের নেই, মুসা (আ)এর সাথে সরাসরি কথা বলে কালিমুল্লাহর মর্যাদা দিয়েছেন যা অন্য কেউর নেই, আমাদের নবী (সা) কে শেষ নবী হিসেবে মর্যাদা দিয়েছেন যা অন্য নবীদের থেকে আলাদা । এই বিষয়টি আল্লাহ আরেক আয়াতে পরিস্কার করেছেন যেমনঃ 

আল কুরআন, সুরা বাকারা ২:২৫৩ আয়াতে বলা আছে, 

এ সকল রাসুল যাদের কারো উপর আমি কাউকে মর্যাদা দান করেছি, তাঁদের মধ্যে কারো সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন এবং কারো মর্যাদাকে সমুন্নত করেছেন। 

পরের আয়াতটি নিয়েই মিথ্যাচার করেছে। সেটি হল সুরা নিসা ৩:৮৪ বলা হচ্ছে যে "আমরা তাঁদের কারো মধ্যে কোন পার্থক্য করি না" আসলে আয়াতের প্রথম লাইন খেয়াল করুন সেখানে বলা হচ্ছে বলুন আমরা ইমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং বাকি নবীদের উপর এরপরেই বলা হচ্ছে আমরা তাঁদের উপর কোন পার্থক্য করি না অর্থাৎ মানুষ যে তাঁদের উপর ইমান এনেছে আর এই ইমানের উপরে আমরা কোনো পার্থক্য করি না। এটাই বুঝানো হয়েছে। আসুন তাফসীর থেকে জেনে নেই।

তাফসীরে ফতহুল মাজিদ, সুরা আল ইমরান ৩:৮৪ আয়াতের ব্যাখ্যাঃ 

এই আয়াতে আল্লাহ রাসুল (সা) থেকে স্বীকৃতি নিচ্ছেন যে বল আমি আল্লাহর প্রতি ইমান আনলাম এবং আমার প্রতি ও পূর্ববতী সকল নবীর প্রতি যা নাজিল করা হয়েছে তার প্রতি ইমান আনলাম এবং এ ইমানে কোন পার্থক্য করিনি । অতএব সকল নবী ও তাঁদের প্রতি অবতীর্ণ কিতাবের উপর কোন পার্থক্য ছাড়াই ইমান আনতে হবে।  

ই,ফাঃ তাফসীরে ইবনে আব্বাস, ১ খণ্ড , ১৭৪ পৃষ্ঠাঃ 

সুরা আল ইমরান ৩:৮৪ ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে আল্লাহর সমস্ত নবী রাসুলদের উপর আমরা ইমান আনি এবং তাঁদের মধ্যে কোন তারতম্য করি না অর্থাৎ অস্বীকার করি না।

তাফসীরে জালালাইন, ১ খণ্ড, ৬৬৯ পৃষ্ঠাঃ 

এখানে খুবই সুন্দর করে আয়াতের ব্যাখ্যা করা হয়েছে , এখানে সুরা আল ইমরান ৩:৮৪ একই কথা বলা হয়েছে যে আল্লাহ আমাদেরকে বলতে বলছেন যে আমরা সমস্ত নবীদের উপর যেন ইমান আনি এবং এক নবীকে মেনে আরেক নবীকে অস্বীকার করে তারতম্য করতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন।   

উদাহরণ দিয়েও বুঝিয়ে দিচ্ছি। বুঝবেন। শিক্ষক বলছেন তোমাদের ক্লাসে যারা ছাত্র আছেন তাঁদের একজনের উপর আরেকজনের মর্যাদা আছে। কারণ কেউ অনেক ভাল ফলাফল করেছে আবার কেউ কম ভাল ফলাফল করেছে আবার কেউ এরথেকে নিচু মানের ফলাফল এনেছে। কিন্তু তোমাদেরকে একটি কথা মানতে হবে যে তারা সকলেই ছাত্র আর এই বিষয় তোমরা কোনো পার্থক্য করো না। এই উদাহরণ বুঝে থাকলে কুরআনের উক্ত আয়াত দুটো বুঝতে সহজ হবে। নাস্তিকরা এতো নিচু মানের মূর্খ যে কুরআনের সহজ সহজ আয়াত গুলো বাংলা পড়েও বুঝতে পারে না। কথাটি সত্য যে নাস্তিকতা মানেই বিনোদন।  

কাফের মুশরিক নারীদের ইমান না আনলে বিয়ে করা যাবে?

৭/ অভিযোগঃ কোথায় হ্যাঁ আবার কোথায় না বলা হচ্ছে কেন?

হ্যাঁ: সুরা মায়দা ৫:৫ = আজ তোমাদের জন্য পবিত্র বস্তুসমূহ হালাল করা হল। আহলে কিতাবদের খাদ্য তোমাদের জন্যে হালাল এবং তোমাদের খাদ্য তাদের জন্য হালাল। তোমাদের জন্যে হালাল সতী-সাধ্বী মুসলমান নারী এবং তাদের সতী-সাধ্বী নারী, যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তোমাদের পূর্বে, যখন তোমরা তাদেরকে মোহরানা প্রদান কর তাদেরকে স্ত্রী করার জন্যে, কামবাসনা চরিতার্থ করার জন্যে কিংবা গুপ্ত প্রেমে লিপ্ত হওয়ার জন্যে নয়। যে ব্যক্তি বিশ্বাসের বিষয় অবিশ্বাস করে, তার শ্রম বিফলে যাবে এবং পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

না: সুরা বাকারা ২:২২১ = আর তোমরা মুশরেক নারীদেরকে বিয়ে করোনা, যতক্ষণ না তারা ঈমান গ্রহণ করে। অবশ্য মুসলমান ক্রীতদাসী মুশরেক নারী অপেক্ষা উত্তম, যদিও তাদেরকে তোমাদের কাছে ভালো লাগে। এবং তোমরা (নারীরা) কোন মুশরেকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ো না, যে পর্যন্ত সে ঈমান না আনে। একজন মুসলমান ক্রীতদাসও একজন মুশরেকের তুলনায় অনেক ভাল, যদিও তোমরা তাদের দেখে মোহিত হও। তারা দোযখের দিকে আহ্বান করে, আর আল্লাহ নিজের হুকুমের মাধ্যমে আহ্বান করেন জান্নাত ও ক্ষমার দিকে। আর তিনি মানুষকে নিজের নির্দেশ বাতলে দেন যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে। 

জবাবঃ সেই আহলে কিতাবদের আল্লাহ বিয়ে করা জায়েজ করেছেন যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে আমাদের আগে যেমন তাওরাত , ইঞ্জিল এসব কিতাবের সঠিক অনুসারী যদি কেউ থাকে তাহলে তাকে বিয়ে করা জায়েজ। কিন্তু সে যদি আহলে কিতাব না হয় তাহলে তাকে বিয়ে করা জায়েজ হবে না। অন্য দিকে যে আহলে কিতাব না আবার মুশরিক তাদেরকে বিয়ে করা ইসলামে জায়েজ নেই। এখানে বৈপরীত্য নেই কোনো। 

তাফসীরে জালালাইন, ২ খণ্ড , ৭১ পৃষ্ঠাঃ 

আহলে কিতাব শব্দটি যুক্ত হওয়ায় আহলে কিতাব নয়, এমন অমুসলিম মহিলাকে সর্বসম্মতিতেক্রমে বিবাহ করা হারাম প্রমানিত হল। 

উদাহরণ দিয়ে বলছি বুঝুন। উগ্র অমুসলিমদের সাথে চলাফেরা করবে না যতক্ষণনা তারা ভদ্র হয়। আর এমন অমুসলিমদের সাথে চলতে পারবে যে উগ্র না এবং যার চরিত্র ভাল। এখানে বৈপরীত্য নেই কারণ কি টাইপের অমসুলিমদের সাথে চলা যাবে আর যাবে না সেটাই বলা হচ্ছে। ঠিক একইভাবে আল্লাহ এমন অমুসলিম নারীদের বিয়ে করতে নিষেধ করেছেন যারা আহলে কিতাব নয় আর এমন অমুসলিম নারী বিয়ে করা জায়েজ যারা আহলে কিতাব। কুরআনের উক্ত আয়াতটির মধ্যেও কোনো বৈপরীত্য পাওয়া যাচ্ছে না। 

আল্লাহ মানুষকে কেমন রূপে সৃষ্টি করেছেন?

৮/ অভিযোগঃ কোথাও সুন্দর আবার কোথাও দুর্বল করে এরকম বৈপরীত্য কেন?

উত্তম সুন্দরতমঃ সুরা ত্বীন ৯৫:৪ = আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম গঠনে।  এবং সুরা সাজদাহ ৩২:৭ = যিনি তার প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সৃষ্টি করেছেন উত্তম রূপে এবং কাদামাটি থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। 

দুর্বলতমঃ সুরা নিসা ৪:২৮ = মানুষ তো সৃষ্টি হয়েছে দুর্বল চিত্ত রূপে। এবং সুরা মারিজ ৭০:১৯ = আল্লাহ তোমাদের ভার লঘু করতে চান, কারণ মানুষকে দুর্বলরূপে সৃষ্টি করা হয়েছে। 

জবাবঃ ইসলামবিরোধী গোষ্ঠীদের থেকে এমন বৈপরীত্য দেখে হাঁসতে হাঁসতে ক্লান্ত হয়ে যাবো আমি। এতো অযৌক্তিক মস্তিস্ক কেন সেই গোষ্ঠীর? বৈপরীত্য আছে কি নেই সেটা বলার আগে বলি, উক্ত আয়াতে ভুল কি বলা আছে? মানুষের আকৃতি তো আসলেই সুন্দর। আবার একইসাথে দুর্বল। তাহলে এখানে বৈপরীত্য কিভাবে থাকতে পারে? ধরুন আমি একটি রোবট তৈরি করলাম এবং বললাম আমি রোবট তৈরি করেছি অনেক সুন্দর করে, স্টিল দিয়ে কিন্তু এটি যতই সুন্দর হোক না কেন এটি দুর্বল কারণ রোবট মানুষের থেকে বেশি বুদ্ধিমান কখনোই হতে পারবে না। উদাহরণটি বুঝে থাকলে আপনি এটাও বুঝতে পারবেন যে, আল্লাহ মানুষকে সুন্দর গঠনে সৃষ্টি করেছেন কিন্তু সুন্দর হলেও মানুষ দুর্বল কেননা একটি হাতি থেকে মানুষ অনেক দুর্বল আবার একটি সিংহ থেকেও মানুষ দুর্বল কিন্তু হাতি আর সিংহর দেহের গঠন থেকে মানুষের দেহের গঠন সুন্দর। এটি আমরা বাস্তবেই বুঝতে পারি, নিজ চোখে দেখেও কিন্তু এই সাধারণ বিষয়টি বুঝা যায় কিন্তু এই পানির মতো সহজ ব্যাপারটিও নাস্তিকরা বুঝতে পারেনি। হায়রে মূর্খ ইসলামবিরোধী জাতি।

মুহাম্মাদ ও তার কোরআন কাদের জন্য? 

৯/ অভিযোগঃ মক্কার লোকদের জন্য নাকি সমগ্র মানুষের জন্য?

মক্কার লোকদের জন্যঃ সুরা আশ শুরা ৪২:৭ = এমনি ভাবে আমি আপনার প্রতি আরবী ভাষায় কোরআন নাযিল করেছি, যাতে আপনি মক্কা ও তার আশ-পাশের লোকদের সতর্ক করেন এবং সতর্ক করেন সমাবেশের দিন সম্পর্কে, যাতে কোন সন্দেহ নেই। একদল জান্নাতে এবং একদল জাহান্নামে প্রবেশ করবে। 

সমস্ত মানবজাতির জন্যঃ সুরা সাবা ৩৪:২৮ =  আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্যে সুসংবাদাতা ও সতর্ককারী রূপে পাঠিয়েছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। এবং সুরা জাসিয়া ৪৫:২০ = এটা মানুষের জন্যে জ্ঞানের কথা এবং বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য হেদায়েত ও রহমত। 

জবাবঃ মক্কার আশে পাশের লোকদের সতর্ক করা দ্বারা মক্কার আশে পাশের সমগ্র মানুষকে বুঝানো হয়েছে, যেহেতু আল্লাহ আরেক আয়াতে বলেছেন সমগ্র মানুষের জন্য মহানবী (সা) সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী। এই আয়াত দুটোর মধ্যেও কোনও বৈপরীত্য নেই। যদি আয়াতে বলা হতো, শুধু মাত্র মক্কার লোকদের জন্য তাহলে আয়াতে বৈপরীত্য হতো। কিন্তু আয়াতটি তো এমন কিছুই বলছে না। সেহেতু এখানে বৈপরীত্য পাওয়া মূর্খতার লক্ষণ।

তাফসীরে জালালাইন, ৫ খণ্ড, ৭৮২ পৃষ্ঠাঃ 

মক্কা মকাররমার আশপাশ । এর অর্থ আশে পাশের আরব দেশ সমূহও হতে পারে এবং পূর্ব পশ্চিম আরব দেশ সমূহও হতেও পারে এবং পূর্ব পশ্চিম তথা সমগ্র বিশ্বও হতে পারে। তাফসীরে নুরুল কুরআনের ভাষায় - মক্কার চতুর্দিক বলতে সমগ্র বিশ্বকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে । এ ব্যাপারে তাফসীরকারকগণ একমত । এ ছাড়া তাফসীরে আবু বকর জাকারিয়া, তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ, তাফসীরে ইবনে কাসির, তাফসীরে ফি যিলাযিল কুরআন , তাফসীরে ইবনে আব্বাস , তাফহিমূল কুরআন সহ আরও তাফসীরে একই কথা বলা হয়েছে। 

ধরুন ক্লাসে শিক্ষক উপদেশ দিচ্ছেন, ভিটামিন তোমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং তোমাদের আশে পাশে যারা আছেন সবার জন্য। আবার অন্য দিন ক্লাসে এসে শিক্ষক সবাইকে বললেন ভিটামিন পুরো মানবজাতির জন্যই প্রয়োজনীয়। পাঠক এখানে মোটেও বৈপরীত্য হচ্ছে না কারণ আমরা সবাই জানি ভিটামিন শুধু ক্লাসের ছাত্রদের জন্যই না শুধু বরং গোটা মানবজাতির জন্য ঠিক একইভাবে ইসলাম শুধু মাত্র মক্কার অথবা তার পাশে পাশের মানুষের জন্যই না শুধু পুরো মানবজাতির জন্য।

সঙ্গী ছাড়া সন্তান জন্ম হওয়া সম্ভব? 

১০/ অভিযোগঃ হ্যাঁ আবার নাও বলা হচ্ছে কেন?

হ্যাঁ: সুরা মারঈয়াম ১৯:২১ = সে বললঃ এমনিতেই (পুত্রসন্তান জন্ম) হবে। তোমার পালনকর্তা বলেছেন, এটা আমার জন্যে সহজ সাধ্য এবং আমি তাকে মানুষের জন্যে একটি নিদর্শন ও আমার পক্ষ থেকে অনুগ্রহ স্বরূপ করতে চাই। এটা তো এক স্থিরীকৃত ব্যাপার।

নাঃ সুরা আন’য়াম ৬:১০১ = তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের আদি স্রষ্টা। কিরূপে আল্লাহর পুত্র হতে পারে, অথচ তাঁর কোন সঙ্গী নেই? তিনি যাবতীয় কিছু সৃষ্টি করেছেন। তিনি সব বস্তু সম্পর্কে সুবিজ্ঞ।

জবাবঃ পাঠক আপনারাই দেখুন নাস্তিক মুক্তমনাদের মূর্খতার চিত্র। কিসের সাথে কি গোঁজামিল দিয়ে বৈপরীত্য দাবি করছে। প্রথম আয়াতটি হযরত ইসা (আ) এর ক্ষেত্রে যাকে আল্লাহ পিতা ছাড়াই অস্তিত্ব দিয়েছেন মায়ের গর্ভে। আর অন্য আয়াতে আল্লাহ নিজের সম্পর্কে বলছেন যে আল্লাহর পুত্র হতেই পারে না কারণ উনি এসব সৃষ্টি থেকে মুক্ত। আল্লাহ কি মানুষের মতো নাকি যে উনার পুত্র থাকবে, পিতা থাকবে, স্ত্রী থাকবে? নাস্তিকরা নিজেদের ইসলামবিরোধী বিশ্বাসকে কিভাবে মিথ্যার আশ্রয়ে টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে নিজেরাই দেখছেন তো। সুরা মারঈয়াম ১৯:২১ আয়াতেই পরিস্কার বলা হচ্ছে মরিয়ম (আ) কে সন্তান আল্লাহ দিবেন সেটি মানুষের জন্য নিদর্শন সরূপ আর সুরা আন’য়াম ৬:১০১ আয়াতে যা বলা হচ্ছে আল্লাহর নিজের কথা যে আল্লাহর কিভাবে সন্তান হবে কারণ তিনি তো আর সৃষ্টি নন, তিনি হলেন স্রষ্টা। পাঠক আপনারা এক কাজ করুন এখনি উপরের আয়াতের সামনে আর পিছনে আয়াত সমুহ পড়ুন নিজেরাই আরও স্পষ্ট বুঝতে পারবেন।

হাজার বছর নাকি ৫০ হাজার বছর?

১১/ অভিযোগঃ এক আয়াতে হাজার বছর অন্য আয়াতে ৫০ হাজার বছর বলা হয়েছে।

হাজার বছরঃ সুরা সাজদা ৩২ঃ৫ = আসমান থেকে জমিন পর্যন্ত সবকিছু তিনিই পরিচালনা করেন । তারপর সবকিছুকে তিনি ওপরের দিকে নিয়ে যাবেন (এমন) একদিনে , যার পরিমান তোমাদের গণনায় হাজার বছর।

পঞ্চাশ হাজারঃ সুরা মাআরিজ ৭০ঃ৪ = ফেরেশতারা ও রূহ আল্লাহ্‌র দিকে ঊর্ধ্বগামী হয় এমন একদিনে যা পার্থিব ৫০ হাজার বছরের সমান

জবাবঃ মনোযোগ দিয়ে আয়াত দুটো পড়লেই কিন্তু হয়ে যায়। সুরা সাজদা-৫ নং আয়াতে বলা হচ্ছে আল্লাহ্‌ সবকিছুকে ওপরের দিকে নিবেন যা আমাদের কাছে হাজার বছর। অন্যদিকে,সুরা মা’আরিজ ৪ নং আয়াতে বলা হচ্ছে ফেরেশতা ও রূহ আল্লাহর দিকে যায় যা আমাদের কাছে ৫০ হাজার বছরের সমান। আয়াতে বলাই হচ্ছে “সব কিছু” উপরে নিয়ে যাবেন সেটা হচ্ছে আমাদের কাছে হাজার বছর আর শুধুমাত্র ফেরেশতা ও রুহ আল্লাহর দিকে যায় যা ৫০ হাজার বছর। এখানে আয়াত গুলো স্পষ্ট। বৈপরীত্য পাওয়া যাচ্ছে না আয়াত গুলোতে। এক আয়াতে সব কিছু ব্যাপারে বলা হচ্ছে আরেক আয়াতে শুধু মাত্র ফেরেশতা ও রুহের কথা বলা হচ্ছে। মনে করুন, আমার এক স্থানে যেতে ১ ঘণ্টা সময় লাগে আবার অন্য আরেক জাগাতে যেতে ৫০ মিনিট সময় লেগে যায়। এর দ্বারা কখনো একথা বুঝা যায় না যে আমি পরস্পর বিরোধী কথা বলেছি। ধরুন,অফিসের বস আপনাকে বলছে, আমি গাড়ি দিয়ে অফিসে এসেছি ৩০ মিনিটে আর তুমি রিকশা দিয়ে অফিসে এসেছ ১ ঘণ্টায়। খেয়াল করুন এখানে সময়ের ভিন্নতা আছে কিন্তু পরস্পর বিরোধের কিছুই নাই। হতো যদি আফিসের বস বলত আমি গাড়ি দিয়ে এসেছি ৩০ মিনিটে তুমিও একই গাড়ি দিয়ে এসেছ ৩২ মিনিটে। উদাহরণ বুঝে থাকলে এটাও বুঝবেন। আল্লাহ্‌ সবকিছু তাঁরদিকে নিয়ে যাবেন এমন একদিনে যা আমাদের কাছে হাজার বছর আবার ফেরেশতা ও রূহ আল্লাহ্‌র দিকে যায় এমন একদিনে যা আমাদের কাছে ৫০ হাজার বছর। সুতরাং কন্ত্রাডিকশনের প্রশ্নই আসে না। ইসলামবিরোধীরা ইসলামকে ভুল দেখানোর জন্য সততাকে হত্যা করে এই কারণে নাস্তিকরা সহজ সহজ ব্যাপার গুলো বুঝতে পারে না।

প্রথমে পৃথিবী সৃষ্টি করা হয়েছে তারপর আকাশ?

১২/ অভিযোগঃ আয়াত সমূহে দেখা যায় ২ দিনে আকাশ সৃষ্টির আগে পৃথিবী ও পৃথিবীর যাবতীয় কিছু সৃষ্টি হয়েছে ৪ দিনে। অন্য আয়াতে আবার দেখা যাচ্ছে পৃথিবীকে আকাশ সৃষ্টির পরে পৃথিবীকে বিস্তৃত করা হয়েছে ও পর্বতাদি সৃষ্টি করা হয়েছে।

কুরআনের সুরা হামিম আস সেজদা ৪১ঃ ৯,১০,১১,১২ নং আয়াতে বলা হচ্ছেঃ বলুন তোমরা কি সে সত্তাকে অস্বীকার করো যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন দুদিনে এবং তোমরা কি তাঁর সমকক্ষ স্থির করো ? তিনি তো সমগ্র বিশ্বের পালনকর্তা। তিনি পৃথিবীতে উপরিভাগে অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন । তাতে কল্যাণ নিহিত রেখেছেন এবং চার দিনের মধ্যে তাতে তার খাদ্যের বেবস্থা করেছেন । অনুসন্ধানকারীদের জন্য সেখানে (সবকিছু) সমান সমান মজুদ রয়েছে। অতপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধুম্রকুঞ্জ, অতপর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন তোমরা উভয় আসো ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম। অতপর তিনি আকাশমণ্ডলীকে দুদিনে সপ্তআকাশ করে দিলেন এবং প্রত্যেক আকাশে আদেশ প্রেরণ করলেন , আমি নিকটবর্তী আকাশকে প্রদিপমালা দ্বারা সুশোভিত ও সংরক্ষিত করেছি । এটা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর বেবস্থাপনা।

আবার কুরআনের সুরা আন নাজিয়াত ৭৯ঃ ২৭ থেকে ৩৩ নং আয়াত সমূহে বলা হয়েছেঃ  “তোমাদের সৃষ্টি অধিক কঠিন না আকাশের , যা তিনি নির্মাণ করেছেন ? তিনি একে উচ্চ করেছেন এবং  সুবিন্যাস্ত করেছেন । তিনি এর রাত্রিকে করেছেন অন্ধকারাছন্ন এবং প্রকাশ করেছেন এর সূর্যালোক । পৃথিবীকে এরপরে বিস্তৃত করেছেন। তিনি এর মধ্যে থেকে পানি ও ঘাম নির্গত করেছেন। পর্বতকে তিনি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন । তোমাদের ও তোমাদের চতুষ্পদ জন্তুদের উপকারার্থে।

জবাবঃ আয়াত সমূহ খুবই মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। উপরের দুটো দাবি একত্রে করছি তাহলেই স্পষ্ট হবে যে কোনো বৈপরীত্য নাই। সুরা হামিম আস সেজদাহ এর আয়াত সমূহে দেখা যাচ্ছে দু দিনে আকাশ সৃষ্টির আগে পৃথিবী ও পৃথিবীর যাবতীয় কিছু সৃষ্টি হয়েছে চারদিনে। অন্যদিকে সুরা আন নাজিয়াত এ দেখা যাচ্ছে পৃথিবীকে আকাশ সৃষ্টির পরে পৃথিবীকে বিস্তৃত করা হয়েছে ও পর্বতাদি সৃষ্টি করা হয়েছে।

সুরা হামিম সেজদাহ এর আয়াত সমূহ থেকে যে দাবি করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন কারণ এই সুরার উক্ত আয়াত গুলির কোথাও “পৃথিবীর সব কিছু সৃষ্টি” এ কথা নাই যা নাস্তিকান্ধরা মনে করেছে। আবার সুরা আন নাজিয়াতের আয়াত সমূহ থেকে নাস্তিকরা বলছে পৃথিবীকে আকাশ সৃষ্টির পরে বিস্তৃত করা হয়েছে। হুম কারণ আগে বিস্তৃত করা হয়নি কিন্তু “পর্বতাদি সৃষ্টি করা হয়েছে” এ শব্দ নাই । বলা হয়েছে পর্বতকে তিনি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সৃষ্টি করা আর প্রতিষ্ঠিত হওয়া দুটোই ভিন্ন বিষয়।

মনে করুন আমি বলছি, আমার খাতায় পৃথিবীর ছবি এঁকেছি। সাথে পাহাড়ের ছবিও এঁকেছি। তারপর আকাশের ছবি এঁকেছি। আচ্ছা আপনিই বলুন কবিতা পড়া কঠিন নাকি ছবি আঁকা? আমি ছবি এঁকেছি। আকাশের মধ্যে রঙ করেছি সুন্দর করে। পৃথিবীর দৃশ্যে এরপরে রঙ করেছি। পাহাড়কে সুন্দর করে এঁকেছি। এরমানে কি বুঝায় আমি পাহাড়ের দৃশ্য আবার এঁকেছি? না বরং একই কথা আবার বলছি।

আমার জবাবের সারসংক্ষেপ একত্রে করলে হয়, আল্লাহ্‌ পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবীর উপরের ভাগে অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন । আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন, উচু ও সুবিন্যাস্ত করলেন । এরপরে পৃথিবীকে বিস্তৃত করলেন। পর্বতকে তিনি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। এখানে বৈপরীত্য কিভাবে হয়? যদি বলা হত, পরে আবার পর্বতকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন তাহলে বিরোধ হতো কিন্তু এ জাতীয় কোনো শব্দ নাই। খেয়াল করুন “এরপরে পৃথিবীকে বিস্তৃত করলেন” লাইন শেষ । পরে বলা হচ্ছে পর্বতকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করলেন যা আগেও বলা হয়েছে।

যার যার কর্মফল তারতার তাহলে হত্যার আইন কেন?

১৩/ অভিযোগঃ আয়াতের নির্দেশনা, উপদেশ ইত্যাদির প্রতিফলন কুরআনের অন্যত্র না মেলা অর্থাৎ যেখানে যার যার কাজের ভার তার সেখানে কেন হত্যার কথা আসবে?

সুরা কাফিরুন ১০৯ঃ ৬ = তোমাদের কর্ম ও কর্মফল তোমাদের এবং আমার কর্ম ও কর্মফল আমার জন্য।

সুরা বাকারা ২ঃ১৯১ = আর তাদেরকে হত্যাকরো যেখানে যাও এবং তাদেরকে বের করে দেও সেখান থেকে যেখান থেকে তারা বের করেছে তোমাদেরকে । বস্তুত ফেতনা ফ্যাসাদ বা দাঙ্গা – হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ । আর তাদের সাথে লড়াই করো না মসজিদুল হারামের নিকট যতক্ষণ না তারা তোমাদের সাথে সেখানে লড়াই করে । অবশ্য যদি তারা নিজেরাই তোমাদের সাথে লড়াই করে তাহলে তাদেরকে হত্যা করো । এই হল কাফেরদের শাস্তি।

জবাবঃ নাস্তিকরা মানুষের মতো চিন্তা করতে জানতে কুরআনের আয়াত গুলো সহজেই বুঝতো। বর্ণিত আয়াত দুটির অবস্থান ও হুকুম সম্পূর্ণ আলাদা , উদ্দেশ্য আলাদা । তার আগে একটি কথা বলে নেই। সুরা বাকারার ১৯১ নং আয়াত দেখালেন কিন্তু কেন এ সুরার ১৯০ এবং ১৯৩ নং আয়াত দেখালেন না। কেন?

আল কুরআন, সুরা বাকারা ২ঃ ১৯০ নং আয়াতঃ

তোমরা আল্লাহ্‌র পথে সেসব লোকদের সাথে লড়াই করো যারা তোমাদের সাথে লড়াই করে । কিন্তু সীমালঙ্ঘন করোনা কারন আল্লাহ্‌ কখনো সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।

আল কুরআন, সুরা বাকারা ২ঃ ১৯২ নং আয়াতঃ 

তবে তারা যদি (যুদ্ধবিগ্রহ থেকে) ফিরে আসে তাহলে আল্লাহ্‌ বড়ই ক্ষমাশীল ও দয়ার আধার।

আল কুরআন, সুরা বাকারা ১৯৩ নং আয়াতঃ 

যদি তারা (যুদ্ধ থেকে) ফিরে আসে তবে তাদের সাথে আর কোন বাড়াবাড়ি নয় তবে জালেমদের ওপর (এটা প্রযোজ্য নয়) ।

উপরের আয়াত সমূহে স্পষ্ট বলা হয়েছে সেসব লোকদের সাথে লড়াই করো যারা তোমাদের সাথে লড়াই করে। যুদ্ধের ময়দানে কি নান্নার কাচ্চি বিরিয়ানি খাওয়াবে নাকি। যুদ্ধের ময়দানে লড়াই হয়। এখন হাইব্রিড জাতের নাস্তিক লোক যদি বলে ভাই আপনি যুদ্ধের ময়দানে লড়াই করে ঠিক করেননি। আপনার উচিত ছিল মানবতা দেখিয়ে মাইর খাওয়া। আপনারা এই ধরনের মানুষকে কি বলবেন সেটা আপনাদের কাছেই আমি বিচার রেখে দিলাম। যারা যুদ্ধের ক্ষেত্র এবং সমাজের নরমাল ক্ষেত্র এই দুটির মধ্যে তফাৎ বুঝে না তাদের আসলে মানসিক ডাক্তার দেখানো খুবই জরুরি বলে আমি মনে করি। সুরা কাফিরুন ৬ নং আয়াত এটি সাধারন কথোপকথন এর অবস্থায় নাজিল হয়েছে যুদ্ধের সময় নাজিল হয় নি অথবা যুদ্ধের বিধানের আয়াত এটি নয়। আমি বুঝলাম না আপনারা কোন লজ্জায় এই আয়াত দিয়ে ঐ আয়াতের মধ্যে বৈপরীত্য পেলেন।

আপনার শিক্ষক আপনাকে বলল তুমি যেমন পড়াশোনা করবে তেমন ফল পাবে । তোমার ফলাফল তোমার কাছে আর অন্য ছাত্রদের ফলাফল তাদের কাছে। অন্যদিন আপনার ঐ শিক্ষক আপনাকে আবার বলছেন হে ছেলে, অন্যায় এর বিরুদ্ধে লড়াই করো ,মিথ্যার বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাও । এখন আপনি কি বলবেন আপনার শিক্ষক পরস্পর বিরোধী কথা বলেছে? না। কারণ একটি উপদেশ পড়াশোনা নিয়ে আরেকটি উপদেশ সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করার ব্যাপারে। উদাহরণ বুঝে থাকলে এটা বুঝবে যে কুরআনের এক উপদেশ কর্মফলাফল এর কথা বলছে আরেক আয়াতে যুদ্ধের মুহূর্তের কথা বলছে। দুটো আয়াত দুই প্রেক্ষাপটে বর্ণিত। তাই এখানে বৈপরীত্য থাকার সুযোগ নেই।

অহেতুক পুনরাবৃত্তির বৈপরীত্য

১৪/ অভিযোগঃ কুরআনে আছেঃ এবং তোমরাও ইবাদতকারো নও, যার ইবাদত আমি করি । (সুরা কাফিরুন আয়াত-৩) । একই সুরার ৫ নং আয়াতে একই কথার পুনরাবৃত্তি। এক কথা বার বার বলা অহেতুক বৈপরীত্য এর মধ্যে পরে। এছাড়া সুরা রহমানের মধ্যে “অতএব তোমরা কোন কোন নিয়ামত অস্বীকার করবে?” কথাটি বার বার এসেছে।

জবাবঃ  কলেজ পড়াকালীন আমাদের প্রিন্সিপ্যাল ফলাফল যারা খারাপ করেছে তাদের উদ্দেশ্য করে বলেছে পাঁশ করতে না পারলে তোমাদের প্রমোশন করা হবে না। তিনি এ কথা মিনিমাম পাঁচ ছয় বার পুনরাবৃত্তি করেছেন। কোন মূর্খ লোক যদি বলে স্যার অহেতুক একই কথা বার বার বলছেন কেন? উত্তর হল ঐ মূর্খ লোক স্যারের কথার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারেনি আর পাঁশ করার যে গুরুত্ত সেটা বুঝাতেই স্যার একই কথা অনেক বার পুনরাবৃত্তি করেছেন। এটাকে বৈপরীত্য বলা অথবা অহেতুক বলা মূর্খতা। অনেক কবিতায় এক কথা বার বার বলা হয়। সুকান্ত ভট্টাচার্য এর “আঠারো বছর বয়স” কবিতায় তিনি ৭ বার “আঠারো বছর বয়স” এই শব্দে উল্লেখ করেছেন কারণ ১৮ বছর বয়সের গুরুত্ব অনেক এর তাৎপর্য অনেক। সন্তান খাবার খেতে না চাইলে মা হাজার বার বলেন বাবা খাও , ভাত খাও , আমার প্রানের সোনা ভাত খাও। যারা জ্ঞানী তারা জানে একই কথা বার বার বলার মানে কথার গুরুত্ব বুঝানো। মায়ের ভালোবাসা সন্তানের প্রতি কত তীব্র সেটার প্রকাশ। কুরআনে কিছু আয়াত পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে সেগুলোর গুরুত্ব বুঝানোর জন্য।

অর্থহীন অক্ষর সমষ্টি

১৫/ অভিযোগঃ এক আয়াত স্পষ্ট না অথচ আরেক আয়াতে বলা হচ্ছে কুরআনকে সহজ করে দেয়া হয়েছে বুঝার জন্য। এটা তো বৈপরীত্য।

সুরা বাকারা ২ঃ ১ নং আয়াতঃ আলিফ লাম মীম আবার সুরা নামল ১ নং আয়াতঃ ত্বা সিন 

সুরা বাকারা ২ঃ২৪২ = এভাবেই আল্লাহ তা'আলা তোমাদের জন্য স্বীয় নির্দেশ বর্ণনা করেন যাতে তোমরা তা বুঝতে পার।

জবাবঃ কুরআন ও সহিহ হাদিসের কোথাও এই কথা বলা নেই যে আলিফ লাম মিম, ত্ব সিন এসব অর্থহীন আয়াত। এসব আয়াতের অর্থ একমাত্র আল্লাহ ভালো জানেন। সেটাও স্পষ্ট করে বলে দেয়া আছে। তাই এসব আয়াতকে অন্য আয়াতের সাথে বৈপরীত্য মনে করাটা ভুল। কুরআনে এই ধরণের যত শব্দ আছে  তার উদ্দেশ্য কি এখন আমরা সেটাই জানব। 

তাফসীরে ইবনে কাসির ১ খণ্ডে, ২৭৮ পৃষ্ঠায় বলা আছে,

“আলিফ লাম মীম” এর তাফসীর রয়েছে। এই ধরণের শব্দকে বলা হয় হরফে মুকাত্তায়াত । কুরআনের সুরা সমুহের শুরুতে অবস্থিত স্বতন্ত্র অক্ষরগুলি সম্পর্কে তাফসীরকারকগন বিভিন্ন মত পেশ করেছেন । কেউ বলেন উহা আল্লাহ্‌ পাকের বিশেষ সংকেত সূচক । কেউ কেউ এইগুলোকে কুরানিক কোডও বলেছেন । উহার অর্থ তাৎপর্য আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন । উহার অর্থ তাঁর কাছেই ন্যাস্ত থাকবে । ইমাম কুরতুবি (রহ) তাফসীর গ্রন্থে এটাই বলেছেন । বিস্তারিত জানতে ইবনে কাসির দেখুন । 

“হরফে মুকাত্তায়াত অর্থহীন সমষ্টি” এমন কথা ইসলামের দৃষ্টি ভুল। এর অর্থ আল্লাহই ভালো জানেন। তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে আল্লাহ যে কুরআনকে স্পষ্ট করেছেন বুঝার জন্য সেটা কি? এই কথা সেই সব আয়াতের বেলায় প্রযোজ্য যেসব আয়াতে পরিস্কার সব বলে দেয়া হয়েছে। আর হরফে মুকাত্তায়াত সেই সব আয়াত থেকে আলাদা যদিও এটাও কুরআনের আয়াত। তাই এখানে বৈপরীত্য কোনো কথা নেই। উদাহরণ দিলে বুঝতে সুবিধা হবে। ধরুন আপনার স্ত্রীর কাছে আপনি চিঠি লিখলেন যার সব কিছু স্পষ্ট কিন্তু সেই চিঠিতেই এমন কিছু শব্দ লিখে দিলেন যা আপনার স্ত্রী বুঝতে পারবে না। স্ত্রীকে বলে দিলেন সেই শব্দ গুলো আমার ভালোবাসার প্রকাশ যা শুধু আমিই জানি কিন্তু তোমাকে বলবো না। খেয়াল করুন আপনার এই কথাটি আপনার স্ত্রীর মনে আপনার প্রতি ভালোবাসাকে আরও কত বেশি বৃদ্ধি করে দেবে। কুরআনে এমন কিছু শব্দ যার অর্থ আমাদের জানা নাই সেটা আল্লাহ ভালো জানেন। আল্লাহর প্রতি আমাদের মানসিক আনুগত্যটা যাতে বেশি হয় এই কারণেই সেসব আয়াত বলা।

আল্লাহ্‌র কিতাব বিকৃত হবে না অথচ মানুষ বিকৃত করছে?

১৬/ অভিযোগঃ এক আয়াতে বলা হচ্ছে “কিতাবকে জিহব্বা দ্বারা বিকৃত করে” আবার অন্য আয়াতে বলা হচ্ছে “আল্লাহ্‌র আদেশ বা বানী কেহ পরিবর্তন করতে পারে না” এটা তো পরিষ্কার বৈপরীত্য।

সুরা আল ইমরান ৩ঃ আয়াত ৭৮ = আর নিশ্চই তাহাদের মধ্যে একদল লোক আছেই যারা কিতাবকে জিহব্বা দ্বারা বিকৃত করে যাতে তোমরা উহাকে আল্লাহ্‌র কিতাবের অংশ মনে করো কিন্তু উহা কিতাবের অংশ নয় এবং তারা বলে, উহা আল্লাহ্‌র পক্ষ হতে কিন্তু উহা আল্লাহ্‌র পক্ষ হতে প্রেরিত নয় । তারা জেনে শুনে আল্লাহ্‌র সম্পর্কে মিথ্যা বলে।

সুরা আনআম ৬ঃ ৩৪ = তোমার পূর্বেও অনেক রাসুলকে অবশ্যই মিথ্যাবাদী বলে হয়েছিল কিন্তু তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলা ও ক্লেশ দেওয়া সত্তেও তারা ধৈর্য ধারন করেছিল যে পর্যন্ত না আমার আমার সাহায্য তাদের নিকট এসেছে। আল্লাহ্‌র আদেশ কেহ পরিবর্তন করতে পারে না। রাসুলগনের সম্বন্ধে কিছু সংবাদ তো আমার নিকট রয়েছে। 

জবাবঃ এসব হাবিজাবি ফালতু সমালোচনার জবাব দিতেও বিরক্ত লাগে এরপরেও দেই কারণ আমি চাই না নাস্তিকদের মতো অন্য কেউ মূর্খ থেকে যাক। এক আয়াতে বলা হচ্ছে একদল লোক নিজের জিহ্বা দ্বারা বিকৃত করে কিন্তু সেটা আসলে কিতাবের অংশ নয় আবার অন্য আয়াতে বলা হচ্ছে আল্লাহর আদেশ কেহ পরিবর্তন করতে পারবে না। এই দুটো আয়াতে কোনো বৈপরীত্য নাই। কারণ খারাপ মানুষরা আল্লাহর আয়াতকে বিকৃত করার চেষ্টা করবেম করেও কিন্তু আসলে তারা পারে না কারণ সেসব কিতাবের অংশ নয়। আর বাস্তব অর্থেই আল্লাহর কিতাব বিকৃত করা সম্ভব না। কারণ সব কিছুই আল্লাহর কাছে সংরক্ষিত অবস্থায় আছে। সুতরাং এখানে বৈপরীত্য নাই।

উদাহরণ দিলে বুঝে যাবেন। শিক্ষক বলল, তোরা কেউই আমার বই থেকে আমার লেখা মুছে ফেলতে পারবি না, অনেকেই বিকৃত কররার চেষ্টা করে কিন্তু সেগুলো তো আমার লেখা নয়। আমার লেখা মুছে ফেলা বা বিকৃত করা যাবে না কারণ আমার কাছে মূল কপি আছে। এখানে যেমন বৈপরীত্য নেই তেমনি সেখানেও নেই। এরপরেও যদি আমরা তাফসীর থেকে দেখি তাহলে সুরা আনআম ৩৪ নং আয়াত এর ব্যাখ্যা জেনে ফেলি তাহলেই আর ঐ ভুয়া অভিযোগের অস্তিত্ব থাকে না। এই সুরার মধ্যে বলা হয়েছে, “আল্লাহ্‌র বানী কোনো পরিবর্তন হয় না” এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে আল্লাহ্‌র ওয়াদা কেউ পরিবর্তন করতে পারবে না। দেখুন তাফসীরে আশ্রাফি, পৃষ্ঠা ২০০। “ওয়ালা মুবাদ্দালা লি কালিমাতিল্লাহ” – এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, আল্লাহ্‌ তালার বানী কেউ পরিবর্তন করতে পারবে না অর্থাৎ আল্লাহ্‌ তা”লার ওয়াদাসমূহ। দেখুন সফওয়াতু তাফাসির খণ্ড ১ পৃষ্ঠা ৩৭৮। পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে আল্লাহ্‌র ওয়াদা কেউ পরিবর্তন করতে পারবে না পক্ষান্তরে  অন্য আয়াতে বলা হচ্ছে তার জিহব্বা দ্বারা বিকৃত করে কিন্তু তা আসলে আল্লাহ্‌র বানী নয়। দুটো আয়াতেরই উদ্দেশ্য অথবা অর্থ আলাদা তাই এখানে বৈপরীত্য হচ্ছে না।

পুরুষের ক্ষেত্রে নরম, নারীর জন্য এত কঠিন কেন ?  

১৭/ অভিযোগঃ শাস্তির ক্ষেত্রে ভিন্নতা কেন ? মহিলা ব্যভিচারিণী ক্ষেত্রে এত কঠিন আর পুরুষের ক্ষেত্রে এত নরম কেন? 

সুরা নিসা ৪ঃ ১৫ = তোমাদের নারীদের মধ্যে যারা ব্যভিচার করে তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্যে হতে চারজন সাক্ষী তলব করবে। যদি তারা সাক্ষ্য দেয় তবে তাদেরকে ঘরে আবদ্ধ করবে, যে পর্যন্ত না তাদের মৃত্যু হয় অথবা আল্লাহ্‌ তাদের জন্য অন্য কোন ব্যবস্থা করেন।

সুরা নুর ২৪ঃ ২ = ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারি, উহাদের প্রত্যেক একশত কশাঘাত করবে।

জবাবঃ এখানে ডাহামিথ্যের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। সুরা নিসার ১৫ নং আয়াত বললেন আর ১৬ নং আয়াত কেন লুকালেন আপনারা? সুরা নিসার ১৬ নং আয়াতে বলা হচ্ছে “তোমাদের মধ্যে যে দুইজন ইহাতে (ব্যভিচারে) লিপ্ত হবে তাদের শাস্তি দিবে।যদি তারা তওবা করে এবং নিজেদের সংশোধন করে নেয় তবে তা হতে নিবৃত থাকবে। নিশ্চই আল্লাহ্‌ পরম তওবা কবুলকারী” ও পরম দয়ালু। খেয়াল করুন আয়াতে কিন্তু দুইজনকেই শাস্তি দেওয়ার কথা আসছে আর তওবা তথা নিজের ভুল সংশোধনের কথাও আছে। সুরা নিসার ১৫ নং আয়াতের শেষ দিকে বলা হচ্ছে “অথবা আল্লাহ্‌ তাদের জন্য অন্য কোনো ব্যবস্থা করেন” এ কথার দ্বারা এটাও বুঝা যায় যে অন্য শাস্তি প্রয়োগ করা যাবে। 

সুরা নুর ২ নং আয়াতে যে একশত বার কশাঘাত এর কথা আছে এর দ্বারা কখনোই বৈপরীত্য হয় না কারণ শাস্তির ধরণ ভিন্ন হতেই পারে। ধরেন ক্লাসে দুইজন ছাত্র পড়া পারেনি এক ছাত্রকে ক্লাসের বাইরে কান ধরিয়ে দাড়িয়ে থাকতে বলেছে শিক্ষক আর অন্য ছাত্রকে ক্লাসের বেঞ্চের উপরে কান ধরে দাড় করে দিয়েছে। এই শাস্তি ছাত্রদের ভালোর জন্য। এখানে শাস্তির ক্ষেত্রে যেমন ভিন্নতা আছে কিন্তু পরস্পর বৈপরীত্য নাই একই ভাবে কুরআনের উক্ত দুই আয়াতের ব্যাপারেও তাই। পরিশেষে উল্লেখ্য প্রথমে বিধান দেওয়া হয়েছিল, ব্যভিচারিণীকে কারারুদ্ধ করে রাখতে হবে , যতক্ষণ না তার জন্য নতুন বিধান দেয়া হয়। এরপরে অবতীর্ণ হয় আলোচ্য আয়াত। বলা হয় ব্যভিচারক ও ব্যভিচারিকা উভয়কেই করতে হবে একশত কশাঘাত। বিস্তারিত জানতে দেখুন তাফসিরে মাযহারি খণ্ড ৮ পৃষ্ঠা ২৭৯ – ২৮০। নাস্তিকরা যদি সততার সাথে পড়াশোনা করতো তাহলে কি এভাবে জালিয়াতি করতে পারতো? 

শিরক নাকি ক্ষমা হবে না তাহলে বাছুরকে খোঁদা মেনে শিরক করে মাফ পেল কেন ?  

১৮/ অভিযোগঃ শিরকের গুনাহ মাফ করবেন না তাহলে আবার গরুর বাছুরকে খোঁদারূপে গ্রহন (যা শিরক) করার পরেও আল্লাহ্‌ কেন ক্ষমা করে দিলেন। এটা কি পরস্পর দ্বিমুখী নয়?

সুরা নিসা ৪ঃ ৪৮ =  নিশ্চই আল্লাহ্‌ তাঁর সাথে শরিক করা ক্ষমা করবেন না । ইহা বেতিত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন এবং যে কেহ আল্লাহ্‌র কাছে শরিক করে সে এক মহাপাপ করে।

সুরা নিসা ৪ঃ ১৫৩ = অতপর স্পষ্ট প্রমান তাদের নিকট প্রকাশ হওয়ার পরও তারা গো-বাছুরকে উপাস্যরূপে গ্রহন করেছিল । ইহাও ক্ষমা করেছিলাম এবং মুসাকে স্পষ্ট প্রমান প্রদান করেছিলাম।

জবাবঃ নাস্তিকরা যদি সততার সাথে আয়াতগুলোর ব্যাখ্যা জেনে নিত তাহলে এভাবে মিথ্যা সমালোচনা করতে পারতো না। শিরক এর গুনাহ মাফ করবেন না এর দ্বারা উদ্দেশ্য কেউ যদি শরিক অবস্থায় তওবা ছাড়া মারা যায় তাহলে এ গুনাহ আল্লাহ্‌ মাফ করবেন না। মৃত্যুর আগে তওবা করলে আল্লাহ্‌ মাফ করে দিবেন। এই হাদিসটি পড়ুন স্পষ্ট হয়ে যাবে।

আল লু’লু ওয়াল মারজান, হাদিসঃ ৫৮, সহিহ হাদিসঃ

আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে আল্লাহ্‌র সঙ্গে শিরক করা অবস্থায় মারা যায়, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। এবং আমি বললাম, যে আল্লাহ্‌র সঙ্গে কোন কিছুকে শিরক না করা অবস্থায় মারা যায়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।-ihadis.com

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৪২৫০, সহিহ হাদিসঃ

আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ গুনাহ থেকে তওবাকারী নিষ্পাপ ব্যক্তিতুল্য।-ihadis.com

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৪২৫৩, হাসান হাদিসঃ

আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃনবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ রূহ কণ্ঠাগত না হওয়া (মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত) পর্যন্ত মহামহিম আল্লাহ বান্দার তওবা কবুল করেন।-ihadis.com 

এটা স্পষ্ট যে মৃত্যুর আগে তওবা করলে আল্লাহ যেকোনো বড় অপরাধ ক্ষমা করে দিবেন। কিন্তু মৃত্যুর আগে তওবা না করলে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। এই আয়াত গুলো নাস্তিকরা লুকিয়ে রেখেছে। যদি দেখাত তাহলে নিজেদের সুবিধা মতো সমালোচনা করতে পারতো না।

সুরা নিসার ৪ঃ ১৭ থেকে ১৮ আয়াতে বলা আছে, 

আল্লাহ্‌ অবশ্যই সেইসব লোকের তওবা কবুল করবেন তারা ভুলবশত মন্দকাজ করে এবং তারাতারি তওবা করে । এরাই তারা যাদের তওবা আল্লাহ্‌ কবুল করেন । আল্লাহ্‌ সর্ব উত্তম , প্রজ্ঞাময় । তওবা তাদের জন্য না যারা আজীবন মন্দকাজ করে , অবশেষে তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হলে সে বলে , আমি এখন তওবা করতেছি এবং তাদের জন্য নয় যাদের মৃত্যু হয় কাফের অবস্থায়।

সুরা নিসার ১৫৩ নং আয়াতে  আসি যে, তারা গো-বাছুর উপাস্য করেও আল্লাহ্‌ কেন মাফ করলেন। এর স্পষ্ট জবাব হল তারা তাদের শিরকের গুনাহ থেকে তওবা করেছিল। তাফসিরে ইবনে কাসির,ডঃ মুহাম্মদ মুজিবর রহমান অনুবাদকৃত, ৪ খণ্ড, ৬১৫ পৃষ্ঠায় বলা আছে, 

“অতপর হযরত মুসা (আ) আল্লাহ্‌ তা’লার নিকট দুয়া করেন এবং তাদের তওবা কবুল হওয়ার পন্থা এই বলে দেয়া হয় যে, যারা গো-বাছুর পুজো করেনি তারা পুজোকারীদেরকে হত্যা করবে। যখন হত্যাকার্য আরম্ভ হয়ে যায় তখন আল্লাহ্‌ তাদের তওবা কবুল করলেন এবং মৃতদেরকেও জীবিত করে দেন। তাই আল্লাহ্‌ তা’লা এখানে বলেন, ওটাকেও আমি ক্ষমা করে দিয়েছি এবং এ মহাপাপকেও আমি ক্ষমা করেছি।

মৃত্যুর আগে তওবা করা হলে আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন কিন্তু শিরিকের গুনাহ নিয়ে মৃত্যুবরণ করলে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। সুতরাং এখানে বৈপরীত্য পাওয়া নাস্তিকদের চরম অজ্ঞতার শামিল।

প্রথম মুসলিম কে? 

১৯/ অভিযোগঃ প্রথম মুসলিম বিশ্বাস স্থাপনকারী কে? একেক আয়াতে একেকজনকে বলা হচ্ছে।

সুরা বাকারা ২ঃ৩৭ = অতপর আদম তার রবের পক্ষ থেকে কিছু বানী পেল, ফলে আল্লাহ্‌ তার তওবা কবুল করলেন। নিশ্চই তিনি তওবা কবুলকারী অতি দয়ালু।

সুরা বাকারা ২ঃ১৩১ = (ইব্রাহীম) স্মরণ করো , যখন তাকে তার পালনকর্তা বললেন, অনুগত হও , সে বলল আমি বিশ্বপালকের অনুগত হলাম। 

সুরা আরাফ ৭ঃ ১৪৩ = অতপর যখন তার জ্ঞান ফিরে এল, বললেন হে প্রভু। তোমার সত্ত্বা পবিত্র,তোমার দরবারে আমি তওবা করছি এবং আমিই সর্বপ্রথম বিশ্বাস স্থাপনকারী

সুরা শু’আরা ২৬ঃ ৫১ = (মিশরিয়রা) আমরা আশা করি , আমাদের পালনকর্তা আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি মার্জনা করবেন। কারন আমরা বিশ্বাস স্থাপনকারীদের মধ্যে অগ্রগনি।  

সুরা জুমার ৩৯ঃ ১২ =  (মুহাম্মদ) আরও আদিষ্ট হয়েছি, সর্বপ্রথম মুসলিম হওয়ার জন্যে। 

জবাবঃ পাঠক আপনারা নিজেরাই চেক করে দেখতে পারেন প্রতিটি আয়াতে নবীদের নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে। তাহলে সহজভাবেই এটা স্পষ্ট যে, যেই সুগে যেই নবী এসেছিলেন সেই নবী সেই যুগের প্রথম আনুগত্যকারী, প্রথম মুসলিম। তাহলে এখানে বৈপরীত্য কিভাবে হয়? নাস্তিকদের মগজ কি বিলিপ্ত হয়ে যাচ্ছে যে তারা মানুষের মতো স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করতে পারছে না? উদাহরণ খেয়াল করুন। একটি প্রাইমারী স্কুলে ক্লাস ১ – ৫ পর্যন্ত আছে । আমি বললাম ক্লাস ১– এর একজন ছাত্রের রোল এক। আবার বললাম ক্লাস ২ –এর একজন ছাত্রের রোল এক। আমার বললাম ক্লাস ৩-এর একজন ছাত্রের রোল এক। আবার বললাম ক্লাস ৪-এর একজন ছাত্রের রোল এক । আবার বললাম ক্লাস ৫-এর ছাত্রের রোল এক। অর্থাৎ যদি বলি বিদ্যালয়ের রোল একের ৫ জন ছাত্র আছে। এখানে নাস্তিকদের মতো কেউ যদি প্রশ্ন করে রোল এক আসলে কার? তাহলে কি এটা নিন্মমানের প্রশ্ন হচ্ছে না? কুরানের মধ্যে কোনো বৈপরীত্যই নাই। হ্যাঁ, বৈপরীত্য আছে সেটা হচ্ছে নাস্তিকদের বিবর্তিত নিন্মমানের মগজে।

উদাহরণটি বুঝে থাকলে এটাও বুঝতে আপনার সুবিধা হবে যে,যেমন প্রথম মানুষ হযরত আদম (আ)। তার সময়ে সেই প্রথম মুসলিম। আল্লাহ্‌ যুগে যুগে নবী রাসুলগণ প্রেরণ করেছেন। এখন আদম (আ) হলেন প্রথম মুসলিম আবার ইব্রাহীম (আ)ও প্রথম মুসলিম। কিভাবে? আদম (আ) উনার যুগে বা উনার সময়ে প্রথম মুসলিম আবার ইব্রাহীম (আ) উনার সময়ে প্রথম মুসলিম। মুসা (আ) এর সময়ে তিনি প্রথম মুসলিম। এভাবে নবী মুহাম্মদ (সা) এর সময়ে প্রথম ইমান আনে তিনি তাই জাহেলি যুগে নবী মুহাম্মদ (সা) হলেন প্রথম মুসলিম। হযরত আদম (আ) এর পরে হাওয়া (আ) হলেন দ্বিতীয় মুসলিম। কিন্তু মেয়েদের মধ্যে হাওয়া (আ) হলেন প্রথম মুসলিম। মানে আলাদা আলাদা সময়ে সবাই প্রথম হতে পারে কিন্তু একই সময়ে প্রথম হতে পারে না। যেমন যদি বলতাম ক্লাস ১-এর দুই জনের রোল এক তবে এটা হতো ভুল এবং পরস্পর বৈপরীত্য। কারণ একই ক্লাসে দুইজন কি করে রোল এক হয়? তেমনি যদি কুরআনে লেখা থাকতো আদম (আ) ও নবী মোহাম্মদ (সা) একই যুগের প্রথম মুসলিম তাহলে বৈপরীত্য হতো। কিন্তু এমন আয়াত কুরআনে নেই। তাই বৈপরীত্য বলার সুযোগ নেই। 

ইহুদী খৃষ্টানরা কি জান্নাতে যাবে?

২০/ অভিযোগঃ এক আয়াতে বলা হচ্ছে মুসলিমরা জান্নাতে যাবে আরেক আয়াতে বলা হচ্ছে জাহান্নামী হবে।

সুরা আল ইমরান ৩ঃ৮৫ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেছেনঃ আর কেহ ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মের অনুসরণ করলে তা কখনোই তাঁর নিকট গ্রহনযোগ্য হবে না আর পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্থদের দলভুক্ত হবে । 

সুরা মায়িদা ৫ঃ ৭২ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেছেন, যারা বলে মরিয়মের পুত্র মসীহই আল্লাহ্‌ । নিশ্চয় তারা অবিশ্বাসী হয়েছে আর মসীহ বলেছিল হে নবী ইসরাইলগন, তোমরা আমার প্রতিপালক ও তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্‌রই ইবাদত করো । নিশ্চয়ই যে আল্লাহ্‌র সাথে শিরিক করে অবশ্যই আল্লাহ্‌ তার জন্য জান্নাত হারাম করেছেন , আগুন তাদের বাসস্থান আর অত্যাচারীদের জন্য সাহায্যকারী নাই । 

সুরা বাকারা ২ঃ ৬২ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেছেনঃ নিশ্চয় যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও যারা ইহুদী হয়ে গেছে এবং খৃষ্টান ও সাবেয়িগণের মধ্যে যে আল্লাহ্‌ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস এনেছে ও সৎকর্ম করেছে তাদের জন্য কেবল তাদের প্রতিপালকের কাছে পুরস্কার আছে । তাদের ভয় নাই ও তারা দুঃখিত হবে না । 

সুরা মায়িদা ৫ঃ৬৯ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেছেন নিশ্চয় যারা বিশ্বাসী ইহুদী, সাবেয়ি ও খৃষ্টান তাদের মধ্যে যে আল্লাহ্‌ ও পরকালে বিশ্বাস করবে ও সৎকাজ করবে তার কোন ভয় নাই আর সে দুঃখিত হবে না। 

জবাবঃ আশা করি আগেই বুঝতে পেরেছেন যে সুরা বাকারার ৬২ এবং সুরা মায়িদার ৬৯ নং আয়াত যা বলা হয়েছে যে, বিশ্বাসী ইহুদী, সাবেয়ি ও খৃষ্টানরা জান্নাতে যাবে। সেটা হল যেসব ইহুদীরা হযরত মুসা (আ) কে নবী মান্য করেছে, আল্লাহ্‌ ও পরকালে বিশ্বাস করবে, সৎকাজ করবে এবং যেসব খৃষ্টান হযরত ইসা (আ) মান্য করবে নবী হিসেবে এবং আল্লাহ্‌ পরকালে বিশ্বাস করবে, সৎকাজ করবে তারা জান্নাতে যাবে অর্থাৎ যেসব মানুষ নবী মোহাম্মদ (সা) এর আগমনের আগে তাদের নিজেদের নবীদের সঠিকভাবে অনুসরণ করবে, আল্লাহ্‌ ও পরকালে বিশ্বাস করবে,সৎকাজ করবে তারা জান্নাতে যাবে। কিন্তু মহানবি (সা) যেহেতু শেষ নবী তাই এখন আর অন্য নবীদের শরিয়ত মানা যাবে না অথবা অন্য কোনো ধর্ম গ্রহণ করলে আল্লাহ্‌ সেটা গ্রহণ করবেন না কারণ সেগুলা বন্ধ হয়ে গেছে আর এখন আল্লাহ্‌র হুকুম শেষ নবীকে মেনে ইসলাম গ্রহণ করবে তাহলেই জান্নাতে যাওয়া যাবে। 

এক হাজার নাকি তিন হাজার ফেরশতা 

২১/ অভিযোগঃ এক নবী মুহাম্মদ (সা) কে সাহায্যের জন্য প্রস্তুত আছেন এক হাজার ফেরেশতা আবার অন্য আয়াতে বলা হচ্ছে সাহায্যকারী ফেরেশতাদের সংখ্যা আসলে তিন হাজার।

সুরা আনফালের ৯ ও ১০ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেছেনঃ যখন তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে কাতর পার্থনা করেছিলে, তিনি তা কবুল করেছিলেন ও বলেছিলেন আমি তোমাদের এক হাজার ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করব ,যারা একের পর এক আসবে। আল্লাহ্‌ এটা করেন শুদু সুসংবাদ দেবার জন্য এবং এই উদ্দেশে যাতে তোমাদের হৃদয় শান্তি লাভ করে আর সাহায্য তো কেবল আল্লাহ্‌র থেকেই আসে । 

সুরা আল ইমরানের ১২৪ থেকে ১২৬ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেছেনঃ যখন তুমি বিশ্বাসীগণকে বলেছিলে ইহা কি তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয় যে তোমাদের প্রতিপালক তিন হাজার ফেরেশতা প্রেরণ করে , তোমাদের সাহায্য করবেন। হ্যাঁ, নিশ্চয়ই যদি তোমরা ধৈর্য ধারন করো ও সংযমী হও এবং যদি তারা দ্রুত গতিতে তোমাদের উপর পতিত হয় তাহলে তোমাদের প্রতিপালক পাঁচ হাজার বিশিষ্ট ফেরেশতা দ্বারা তোমাদের সাহায্য করবেন এবং আল্লাহ্‌ তোমাদের জন্য একে কেবল সুসংবাদ করেছেন  যাতে এর দ্বারাই তোমাদের অন্তর আশ্বস্ত হয়।

জবাবঃ উপরের সুরা আনফালের ৯ ও ১০ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেছেন যে তিনি এক হাজার ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করবেন এবং সুরা আল ইমরানের ১২৪ থেকে ১২৬ নং আয়াতে তিন হাজার দ্বারা সাহায্য করবেন বলেছেন। এখানে কোনো পরস্পর বিরোধী মন্তব্য নাই কারণ আমি যদি বলি আপনাকে দুইশো টাকা দিয়ে সাহায্য করবো এরমানে এই না যে আমি আপনাকে পাঁচশো বা তিনশো টাকা দিব না। বোঝা গেছে? আল্লাহ তা’লা ধিরে ধিরে একাধিক সংখ্যার ফেরেশতা পাঠান। যদি আয়াতে বলা হতো ১ হাজার ফেরেশতাই পাঠাবেন আর কোনো ফেরেশতা পাঠাবেন না তাহলে এখানে বৈপরীত্য হতো। কিন্তু এখানে কিছুই আয়াতে বলা নাই। তাই বৈপরীত্য আসার প্রশ্নই আসে না।

তাফসীরে ইবনে কাসীর, ড মুজিবুর রহমান অনুবাদ, ৮ খণ্ড, ৫১৫ ও ৫১৬ পৃষ্ঠায় লেখা আছে,

হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “বদরের দিন নবী (সঃ) স্বীয় সহচরদেরকে গণনা করে দেখলেন যে, তাদের সংখ্যা ছিল তিনশ'র কিছু বেশী। আর মুশরিকদের দিকে দৃষ্টিপাত করে তিনি অনুমান করলেন যে, তাদের সংখ্যা ছিল এক হাজারেরও অধিক। নবী (সঃ) কিবলামুখী হয়ে দুআ' করতে লাগলেন। তাঁর গায়ে একখানা চাদর ছিল এবং তিনি লুঙ্গি পরিহিত ছিলেন । তিনি বলছিলেনঃ “হে আল্লাহ! আপনি আমার সাথে যে ওয়াদা করেছিলেন তা আজ পুরো করুন! যদি আপনি মুসলমানদের এই ছোট দলটিকে আজ ধ্বংস করে দেন তবে দুনিয়ার বুকে আপনার ইবাদত করার কেউই থাকবে না এবং তাওহীদের নাম ও চিহ্নটুকুও মুছে যাবে।” তিনি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছিলেন ও প্রার্থনা জানাচ্ছিলেন, এমন কি তাঁর কাঁধ থেকে চাদরখানা পড়ে যাচ্ছিল। হযরত আবূ বকর (রাঃ) এসে চাদরখানা তাঁর কাঁধে উঠিয়ে দিলেন এবং তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে গিয়ে বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আল্লাহর কাছে আপনার প্রার্থনা যথেষ্ট হয়েছে। তিনি স্বীয় ওয়াদা পূর্ণ করবেন।” তখন আল্লাহ তা'আলা এ আয়াতটি অবতীর্ণ করলেনঃ “যখন তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট কাতর কণ্ঠে প্রার্থনা করছিলে, আর তিনি সেই প্ৰাৰ্থনা ককূল করেছিলেন, (এবং তিনি বলেছিলেন) আমি তোমাদেরকে এক সহস্র ফেরেশ্তা দ্বারা সাহায্য করবো, যারা একের পর এক আসবে।”সুতরাং যখন যুদ্ধ সংঘটিত হলো তখন আল্লাহ তা'আলা মুশরিকদের পরাজয় ঘটালেন।

তাফসীরে ইবনে কাসীর, ড মুজিবুর রহমান অনুবাদ, ৪ খণ্ড, ১৬১ পৃষ্ঠায় লেখা আছে,

হযরত রাবী' ইবনে আনাস (রাঃ) বলেন যে, আল্লাহ তা'আলা মুসলমানদের সাহায্যের জন্যে প্রথমে এক হাজার ফেরেশতা পাঠিয়েছিলেন, তার পরে তিন হাজারে পৌঁছে যায় এবং শেষে পাঁচ হাজারে দাঁড়ায়। এখানে এ আয়াতে তিন হাজার ও পাঁচ হাজার ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য দানের অঙ্গীকার রয়েছে এবং বদরের যুদ্ধের সময় এক হাজার ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করার অঙ্গীকার ছিল। তথায় আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ অর্থাৎ 'নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে পিছনে আগমনকারী এক হাজার ফেরেশতা দ্বারা সাহায্যকারী।' (৮ঃ ৯) আয়াতদ্বয়ের মধ্যে সমতা এভাবেই হতে পারে। কেননা, তথায় “মুরদীফিনা” শব্দ বিদ্যমান রয়েছে। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, প্রথমে পাঠান হয়েছিল এক হাজার অতঃপর তাঁদের পরে আর দু'হাজার পাঠিয়ে তাঁদের সংখ্য্যা তিন হাজার করা হয় এবং সর্বশেষে আরও দু'হাজার প্রেরণ করে তাঁদের সংখ্যা পাঁচ হাজারে পৌঁছিয়ে দেয়া হয়। বাহ্যতঃ এটাই জানা যাচ্ছে যে, এ অঙ্গীকার ছিল বদরের যুদ্ধের জন্যে, উহুদের যুদ্ধের জন্যে নয়। কিন্তু কেউ কেউ বলেন যে, এ অঙ্গীকার উহুদের যুদ্ধের জন্যেই ছিল ।

মানুষকে আসলে কি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন? 

২২/ অভিযোগঃ মানব সৃষ্টি নিয়েও আছে পরস্পর বিরোধী কথা। কোথাও বলা হচ্ছে পানি থেকে, কোথাও বলা হচ্ছে জমাট রক্ত থেকে, কোথাও বলা হচ্ছে ধুলা থেকে।

সুরা ফুরকানের ৫৪ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেছেনঃ আর তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পানি হতে তারপর তিনি মানবজাতির মধ্যে রক্তগত ও বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। আর তোমাদের পালনকর্তা মহাশক্তিমান। 

সুরা নুরের, ৪৫ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেছেন, আর সমস্ত জীব সৃষ্টি করেছেন পানি হতে , ওদের কতক বুকে ভর দিয়ে চলে , কতক পায়ে , কতক চারপায়ে চলে । আল্লাহ্‌ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেছে । আল্লাহ্‌ সব কিছুই করতে সক্ষম। 

সুরা আলাকের , ১-২ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেছেনঃ তুমি তোমার রবের নামে পাঠ করো যিনি সৃষ্টি করেছেন , সৃষ্টি করেছেন জমাট রক্ত থেকে। 

সুরা হিজরের ২৬ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেছেঃ আমি তো মানবকে গাঢ় কাদার শুষ্ক মাটি হতে সৃষ্টি করেছি। 

সুরা সিজদাহ ৭ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেছেনঃ যিনি প্রত্যেক সৃষ্টিকে উত্তমরূপে সৃজন করেছেন এবং কাদামাটি হতে মানুষ সৃষ্টির সূচনা করেছেন। 

সুরা সোয়াদের ৭১ নং আয়াত আল্লাহ্‌ বলেছেনঃ যখন তোমার পালনকর্তা ফেরেশতাদের বললেন যে আমি মাটি হতে মানুষ সৃষ্টি করব। 

সুরা রহমান ১৪ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেছেনঃ তিনি মানুষকে পোড়া মাটির মত শুষ্ক মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। 

সুরা রুমের ২০ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেছেনঃ আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে এক নিদর্শন – তিনি তোমাদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। এখন তোমরা মানুষ , সর্বত্র ছড়িয়ে আছ। 

সুরা ফাতিরের ১১ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেছেনঃ  আর আল্লাহ্‌ তোমাদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন এরপরে শুক্রবিন্দু হতে। তারপর তোমাদের জোরা করেছেন। আর আল্লাহ্‌র অজ্ঞাতসারে কোন নারী গর্ভধারন করে না বা সন্তান প্রসব করেনা এবং ফলকের লেখা ছাড়া কারো আয়ু বৃদ্ধি না আয়ু হ্রাস হয় না। এটা আল্লাহ্‌র জন্য সহজ। 

জবাবঃ উপরের বর্ণিত সুরাগুলিতে বলা হয়েছে যে মানুষকে পানি থেকে , জমাট বাধা রক্ত থেকে ও মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এগুলো নাকি বৈপরীত্য আয়াত। ইসলামবিরোধীদের এসব অভিযোগ না পড়লে বুঝতেই পারতাম না যে মূর্খতা দেখতে আসলে কেমন। মানুষকে যে পানি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে তা আধুনিক বিজ্ঞানও এই ব্যাপারে একমত। কেননা সম্প্রতি বিজ্ঞানের অতি আধুনিক পর্যায়ে আমরা সাইটোপ্লাজম সম্পর্কে জানতে পেরেছি। সাইটোপ্লাজম হল একটি কোষের মুল অংশ, যার ৮০ শতাংশ পানি দ্বারা গঠিত। আধুনিক গবেষণায় জানা গেছে যে, বেশীরভাগ দেহ ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ ভাগ পানি দ্বারা গঠিত এবং প্রতিটি সজীব সত্তার অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য পানি একান্ত অপরিহার্য। সুতরাং মানব শরীর পানি দ্বারা গঠিত এটা সত্য কথা। মানব শরীর যে জমাট বাধা রক্ত থেকে তৈরি হয়েছে এটাও সত্য। এরপরে বলা হয়েছে যে মানুষকে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে এটাও সত্য। কেননা মানুষের দেহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম , অ্যালুমনিয়াম , আয়রন , কোবাল্ট নিকেল, গোল্ড সিলভার কপার ইত্যাদি । গ্যাসের মধ্যে হাইড্রোজেন, অক্সিজেন , কার্বন ডাইঅক্সাইড , কার্বন মনোক্সাইড , নাইট্রোজেন ইত্যাদি । এসিডের মধ্যে সালফিউরিক এসিড , নাইট্রিক এসিড , হাইড্রোক্লোরিক এসিড ,ক্লোরিন ইত্যাদি যা দৈনন্দিন use , উৎপাদিত , নিঃশেষিত ও রূপান্তরিত হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে মানব শরীর থেকে। 

অপরদিকে মাটিও বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম , অ্যালুমনিয়াম , আয়রন , কোবাল্ট নিকেল, গোল্ড সিলভার কপার ইত্যাদি। গ্যাসের মধ্যে হাইড্রোজেন, অক্সিজেন , কার্বন ডাইঅক্সাইড , কার্বন মনোক্সাইড , নাইট্রোজেন ইত্যাদি। এসিডের মধ্যে সালফিউরিক এসিড , নাইট্রিক এসিড,হাইড্রোক্লোরিক এসিড ,ক্লোরিন ইত্যাদি রয়েছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে কুরআন যা বলেছে সেটা সত্যি কথা। যদি বলেন কুরআনে মানুষকে পানি থেকে, জমাট রক্ত থেকে, মাটি থেকে , কাদামাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে তাই এসব কথা পরস্পর বিরোধী তাহলে একইভাবে ইমারত গড়তে ইট , সিমেন্ট ও বালির দরকার হয়য় তাহলে এগুল কি বৈপরীত্য কথা?

তিনটি বিভিন্ন মাটির সংমিশ্রণ না হলে এতবড় কঠিন ও সুন্দর মনোরম ইমারত গড়া যায় না । কঠিন ও শক্ত ইট তৈরি করতে হলে ঘনীভূত মাটির প্রয়োজন । ইট গাথাবার জন্য আবার সিমেন্ট ও বালির সংমিশ্রণে কর্দমাক্ত করতে হয় । তবেই একটি বড় ও সুন্দর প্রাসাদ তৈরি করা যায় । অনুরুপ ভাবে একটি সুন্দর আকৃতির মানুষ তৈরি করতে পানি , জমাট বাধা রক্ত, ধুলা মাটি ও কাদা মাটির উপাদান নিতে হয়েছে এতে পরস্পর বিরোধী হয় না বিন্দুমাত্রও।একজন ইঞ্জিনিয়ার হিসাব দিয়ে যদি বলেন, এই প্রাসাদ তৈরি করতে রড , সিমেন্ট , ইট , বালি , পাথর , মাটি , কাদা মাটি , রং প্রভুটির দরকার হয়েছে তাহলে কি এখানে পরস্পর বিরোধী কথা হয় ? যদি আলাদা আলাদা করেও বলে যেমন এই প্রাসাদ তৈরি করেছি ইট দিয়ে , তৈরি করেছি সিমেন্ট দিয়ে , রড দিয়ে এইভাবে যদি আলাদা করেও বলে এতেও কি বৈপরীত্য হয়? 

ইবলিশ কি জিন নাকি ফেরেশতা ? 

২৩/ অভিযোগঃ কুরআনে এক জাগাতে বলেছে ইবলিশ ছিল জিন, আরেক জাগাতে বলেছে সে ছিল ফেরেশতা । এখানে কি বৈপরীত্য হচ্ছে না? 

সুরা আরাফ, ১১ আয়াতঃ আমি ফেরশতাদেরকে বলছি আদমকে সেজদা করো তখনি সবাই সেজদা করেছে কিন্তু ইবলিশ ছাড়া। সে সেজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।-এই আয়াত থেকে বুঝা যাচ্ছে ইবলিশ ছিল ফেরেশতা।

সুরা কাহফ, ৫০ আয়াতঃ আদমকে সেজদা করার জন্য সকল ফেরেশতাকে বলা হল। সকলেই সেজদা করলো। একমাত্র ইবলিশ ছাড়া। সে ছিল জিনদের অন্তর্ভুক্ত। সে আল্লাহ্‌র অবাধ্য হল।-এই আয়াত থেকে বুঝা যাচ্ছে ইবলিশ জিন। 

জবাবঃ সুরা আরাফের আয়াতে কিন্তু এটা বলা হয় নাই যে ইবলিশ জিন ছিল না, ফেরেশতা ছিল। সেই আয়াতে বলা হয়েছে ফেরেশতারা সেজদা দিসে কিন্তু ইবলিশ দেয় নাই। অন্যদিকে সুরা কাহফের আয়াতে স্পষ্ট করেই বলে দেয়া হয়েছে ইবলিশ ছিল জিন, সে ফেরেশতা ছিল না। তাহলে এতো স্পষ্ট আয়াতে নাস্তিকরা কিভাবে বৈপরীত্য পেল? ফেরেশতাদেরকে সম্বোধন করলেও সেই আদেশ ইবলিশের উপরও প্রযোজ্য ছিল? উতর হচ্ছে হ্যাঁ। একটি কারণ তো হল যে ইবলিশ ফেরেশতাদের সাথেই আল্লাহ্‌র ইবাদত করত এবং ফেরেশতাদের সম্মান প্রাপ্ত ছিল। আরেকটি কারন হল আরবিতে ব্যাকরণে তাগ্লিব নামে একটা ব্যাপার আছে। এর মানে যদি মেজরিটি (Majority) কে সম্বোধন করা হয় তবে মাইনরিটি (Minority) ও এতে সারা দিবে। যেমন এক ক্লাসে ১০০ জনের মধ্যে ৯৯ জন ছেলে, একজন মেয়ে । যদি বলা হয়, আরবিতে, ছেলেরা দাড়াও, তবে , সেই মেয়েও উঠে দাঁড়াবে। এটাই তাগ্লিব। মেয়েকে আলাদা ভাবে সম্বোধনের দরকার নাই। সেভাবে কুরআনে যখন আল্লাহ্‌ ফেরেশতাদের ডাকলেন তখন আলাদাভাবে জীন ইবলিশকে ডাকার দরকার নাই। তাই কুরআনের উক্ত আয়াতের মধ্যেও বৈপরীত্য নেই।

কোন সময় সঠিক? 

২৪/ অভিযোগঃ একে অপরের সাথে বিরোধ। কেননা একে আয়াতে একে রকম সময় লেখা আছে। 

সুরা ফুসসিলাত, ১৬ আয়াতঃ অবশেষে আমি কতিপয় অমঙ্গল দিনে তাদের ওপর প্রবল বাতাস পাঠালাম যেন পার্থিব জীবনেই তাদেরকে অপমান ও লাঞ্ছনাকর আজাবের মজা চাখাতে পারি । আখেরাতের আজাব তো এর চেয়েও অধিক অপমানকর । সেখানে কেউ তাদের সাহায্যকারী থাকবে না ।

সুরা কামার, ১৯ আয়াতঃ বিরামহীন অশুভ দিনে তাদের ওপর প্রচণ্ড বাতাস পাঠালাম ।

সুরা হাক্কাহ, ৬,৭ আয়াতঃ আর আদকে কঠিন ঝঞ্জাবায়ু দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে যা তিনি সাত রাত ও আট দিন ধরে বিরামহীনভাবে তাদের ওপর চাপিয়ে রেখেছিলেন । ফলে তুমি সম্প্রদায়কে সেখানে লুটিয়ে পড়া অবস্থায় দেখতে পেতে যেন তারা সারশূন্য খেজুর গাছের মত । 

জবাবঃ প্রথম আয়াতে কোন এক দিন অনেক বাতাস পাঠানো হয়। সেটা হচ্ছে। দ্বিতীয় আয়াত অনুযায়ী সেটা বিরামহীন চলতে থাকে বলা হচ্ছে আর, তৃতীয় আয়াত অনুযায়ী ঐ বিরামহীন চলতে থাকে সাত রাত ও আট দিন ধরে। সেটা বলা হয়েছে। তাহলে এখানে বৈপরীত্য কিভাবে হয়? যেমন আপনি বললেন, কক্সবাজারে প্রচুর বাতাস হচ্ছে এরপরে বললেন, সেই বাতাস অনেক সময় ধরে চলছে তারপরে বললেন টানা সাত দিন ধরে বাতাস হয়েছে। এখানে যেমন বৈপরীত্য হয়য় না সেখানেই হয় না।  

মেরি কি একাধিক ফেরেশতাদের সাথে কথা বলেন নাকি একজন ? 

২৫/ অভিযোগঃ মাতা মেরি একজন ফেরেশতার সাথে কথা বলেছে নাকি একাধিক?

সুরা আল ইমরান, ৪২ আয়াতঃ যখন ফেরেশতারা বলল, হে মারইয়াম নিচ্ছয়ই আল্লাহ্‌ তোমাকে মনোনীত করেছেন ও পবিত্র করেছেন এবং নির্বাচিত করেছেন তোমাকে বিশ্বজগতের নারীদের উপর ।  

সুরা মারইয়াম, ১৬ এবং ১৭ আয়াতঃ  মারইয়ামকে যখন সে তার পরিবারবর্গ থেকে পৃথক হয়ে পূর্ব দিকের কোন এক স্থানে চলে গেল, সে তাদের নিকট থেকে নিজেকে আড়াল করলো তখন আমি তার নিকট আমার রূহ (জিবরাইল) কে প্রেরণ করলাম । অতপর সে তার সামনে পূর্ণ মানবের রুপ ধারন করলো । 

জবাবঃ সুরা আল ইমরানের ৪২ আয়াতে বুঝা যায় একাধিক ফেরেশতা এসে মরিয়ম (আ)কে এটা বলেছেন যে আল্লাহ্‌ তোমাকে মনোনীত করেছেন ও পবিত্র করেছেন এবং নির্বাচিত করেছেন তোমাকে বিশ্বজগতের নারীদের উপর। অন্যদিকে সুরা মরিয়ম এর ১৬,১৭ আয়াতে বলা হচ্ছে, পরিবার থেকে আলাদা হয়ে সে যখন অন্য জায়গায় নিজেকে আড়াল করলো তখন জিব্রাইল ফেরেশতা উনার কাছে আসে। এখানে কোনো বৈপরীত্য হচ্ছে না কারণ প্রথমে একাধিক ফেরেশতা এসে উনাকে যে আল্লাহ মনোনীত করেছেন সেটা জানায় এরপরে জিব্রাইল ফেরেশতা উনাকে পুত্র সন্তানের সংবাদ দিতে আসেন। খেয়াল করেছেন?

আল কুরআন, সুরা মরিয়ম ১৯ঃ১৯ আয়াতে লেখা আছে,

সে বললঃ আমি তো শুধু তোমার পালনকর্তা প্রেরিত, যাতে তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করে যাব।

উদাহরণ দিলে বুঝতে সুবিধা হবে। ধরুন সরকার পক্ষ থেকে আপনার কাছে একাধিক লোক এসে বলল সরকার থেকে তোমাকে উপহার দেয়া হবে। এরপরে অন্য দিন অন্য এক লোক এসে আপনাকে বলল, আমি আপনাকে সরকারের পক্ষ থেকে এই উপহার দিতে এসেছি। এখানে কি বৈপরীত্য হয়েছে? উত্তর হচ্ছে না। এটা যদি বুঝে থাকেন তাহলে উপরের আয়াতটিও বুঝে যাবেন।

মাতা মরিয়ম কি হারুন এর বোন?

২৬/ অভিযোগঃ কুরআনে সুরা মারইয়াম,২৮ আয়াত অনুযায়ী, মাতা মারইয়ামকে মুসা (আ) এর ভাই হারুন এর বোন হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে। কিন্তু মাতা মারইয়াম তো হারুন এর নিজের বোন নয়। তাহলে কি এখানে কুরআন বৈপরীত্য কথা বলছে না?

জবাবঃ এটার জবাব হাদিসেই দেয়া আছে। হাদিসটি পড়ুন।

জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ৩১৫৫, হাসান হাদিসঃ

মুগীরাহ ইবনু শু‘বাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে নাজরান নামক জায়গায় পাঠালেন। সে অঞ্চলের (খৃষ্টান) অধিবাসীরা আমাকে বললো, তোমরা কি পাঠ কর না : “হে হারূনের বোন”- (সূরা মারইয়াম ২৮)? অথচ মূসা ও ‘‘ঈসা (‘আঃ)- এর মাঝখানে সময়ের যে ব্যবধান ছিল তাতো জানা কথা। তাদের এ প্রশ্নের কি জবাব যে আমি দিতে পারি তা আমি বুঝতে পারিনি। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট ফিরে এসে তাঁকে এ বিষয়ে জানালাম। তিনি বললেনঃ তুমি তাদেরকে এতটুকুও কি জানাতে পারলে না যে, তারা (বানী ইসরাঈল) নিজেদের নাম রাখতো তাদের পূর্ববর্তী নাবী-রাসূল ও মহান ব্যক্তিদের নামানুসারে।-ihadis.com

অর্থাৎ মরিয়ম(আ.)কে “হারুনের বোন” বলার অর্থ এই নয় যে তিনি মুসা(আ.) এর সময়কার মানুষ হারুন(আ.) এর বোন। সে যুগে বনী ইস্রাঈলের লোকজন নবী-রাসুল ও পূণ্যবান মানুষের নামে সন্তানদের নামকরণ করত। কাজেই হারুন নামে অনেক মানুষ ছিল। এখানেও বৈপরীত্য প্রশ্ন আসে না।

ফেরাউন ডুবে গেলে তাকে আল্লাহ্‌ আবার কিভাবে জীবিত রাখলেন ? 

২৭/ অভিযোগঃ এক আয়াতে ফেরাউন পানিতে ডুবে মারা গিয়েছিল কিন্তু আরেক আয়াতে বলা আছে ফেরাউন জীবিত ছিল

সুরা বনী ইসরাইল, ১০৩ আয়াতে বলা হয়েছেঃ শেষ পর্যন্ত ফেরাউন মুসা ও বনী ইসরাইলকে দুনিয়ার থেকে উৎখাত করার সংকল্প করলো। কিন্তু আমি তাকে ও তার সঙ্গি সাথীদেরকে এক সাথে ডুবিয়ে দিলাম

সুরা ইউনুস,৯২ আয়াতঃ আজ আমি তোমার দেহটি (লাশটি) রক্ষা করব , যাতে তুমি তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হয়ে থাক আর নিচ্ছই অনেক মানুষ আমার নিদর্শন সমুহের ব্যাপারে গাফেল।

জবাবঃ আয়াত দুটি ভাল করে পড়লে পরিষ্কার বুঝা যায় যে প্রথম আয়াত অনুযায়ী ফেরাউন পানিতে ডুবে মারা গিয়েছিল এবং দ্বিতীয় আয়াত অনুযায়ী মৃতদেহ সংরক্ষনের কথা বলা হয়েছে। দ্বিতীয় আয়াতে কোথাও ফেরাউনের জীবিত থাকার কথা বলা হয় নি। আয়াত না বুঝেই লাফ দিয়ে বৈপরীত্য পেয়েছি দাবি করাটি মূর্খতা ছাড়া কিছু নয়।

আল্লাহ কি পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু?

২৮/ অভিযোগঃ এক আয়াতে বলা হচ্ছে আল্লাহ দয়ালু আরেক আয়াতে বলা হচ্ছে আল্লাহ শাস্তি দিবেন। এভাবে কি বৈপরীত্য হচ্ছে না?

হ্যাঁঃ যিনি পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু। কোরআন ১/৩

নাঃ এতে সন্দেহ নেই যে, আমার নিদর্শন সমুহের প্রতি যেসব লোক অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করবে, আমি তাদেরকে আগুনে নিক্ষেপ করব। তাদের চামড়াগুলো যখন জ্বলে-পুড়ে যাবে, তখন আবার আমি তা পালটে দেব অন্য চামড়া দিয়ে, যাতে তারা আযাব আস্বাদন করতে থাকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, হেকমতের অধিকারী। কোরআন ৪/৫৬

জবাবঃ আল্লাহ যেমন অসীম দয়ালু তেমনি উনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে শাস্তি দানেও কঠোর। এখানে বিন্দুমাত্র বৈপরীত্য নেই। উদাহরণ হিসেবে একজন বিচারক যেমন শাস্তি দানে কঠোর হতে পারেন আবার ভালো কাজ ক্রলে একইসাথে দয়ালু হতে পারেন তেমনি।

আহলে কিতাবদের ঈশ্বর আর মুসলিমদের ঈশ্বর কি একই?

২৯/ অভিযোগঃ কোথাও হ্যাঁ, বলা হচ্ছে, আবার কোথাও না।

হ্যাঁঃ তোমরা কিতাবধারীদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করবে না, কিন্তু উত্তম পন্থায়; তবে তাদের সাথে নয়, যারা তাদের মধ্যে বে-ইনসাফ। এবং বল, আমাদের প্রতি ও তোমাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে, তাতে আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমাদের উপাস্য ও তোমাদের উপাস্য একই এবং আমরা তাঁরই আজ্ঞাবহ। কোরআন ২৯/৪৬

নাঃ বলুন, হে কাফেরকূল, আমি এবাদত করিনা, তোমরা যার এবাদত কর। এবং তোমরাও এবাদতকারী নও, যার এবাদত আমি করি। কোরআন ১০৯/১-৩

জবাবঃ চিন্তাশীল মগজ না থাকলে এমন ভিত্তিহীন অভিযোগ করা অস্বাভাবিক কিছু নয়। প্রথম আয়াতে বলাই হচ্ছে সবার উপাস্য একই। কারণ আমাদের মহাবিশ্বের স্রষ্টা তো একজনই তিনি হচ্ছেন আল্লাহ। কিন্তু অনেকেই এই কথাটি স্বীকার করতে চায় না। অমান্য করে নিজেদের খেয়াল খুশি মতো ইবাদত করে যা ইসলামের দৃষ্টিতে ঠিক নয়। এখানে বৈপরীত্য কিভাবে হয়? মূর্খমনারা পরের আয়াতটি পড়লেই বুঝতে পারতো।

আল কুরআন, সুরা আনকাবুত - ২৯:৪৭ আয়াতে বলা আছে,

এভাবেই আমি আপনার প্রতি কিতাব অবর্তীণ করেছি। অতঃপর যাদের কে আমি কিতাব দিয়েছিলাম, তারা একে মেনে চলে এবং এদেরও (মক্কাবাসীদেরও) কেউ কেউ এতে বিশ্বাস রাখে। কেবল কাফেররাই আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করে। 

মহাবিশ্বের সকল কিছুর স্রষ্টা একমাত্র আল্লাহই। কিন্তু যারা আল্লাহকে মানে না তারা কাফের।

প্রাণ কে হরণ করেন?

৩০/ অভিযোগঃ আল্লাহ নাকি ফেরেশতা প্রাণ হরণ করেন, এক আয়াতে বলা হচ্ছে আল্লাহ আবার আরেক আয়াতে বলা হচ্ছে ফেরেশতা।

আল্লাহঃ আল্লাহ মানুষের প্রাণ হরণ করেন তার মৃত্যুর সময়, আর যে মরে না, তার নিদ্রাকালে। অতঃপর যার মৃত্যু অবধারিত করেন, তার প্রাণ ছাড়েন না এবং অন্যান্যদের ছেড়ে দেন এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। কোরআন ৩৯/৪২

ফেরেশতাঃ ফেরেশতা যখন তাদের মুখমন্ডল ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করতে করতে প্রাণ হরণ করবে, তখন তাদের অবস্থা কেমন হবে? কোরআন ৪৭/২৭

জবাবঃ উপরের দুটো আয়াতের মধ্যে একটি আয়াতের মধ্যেও তো এই কথা বলা নিই যে শুধুমাত্র ফেরেশতারা প্রাণ হরণ করেন আল্লাহ নয়, আবার শুধুমাত্র আল্লাহ প্রাণ হরণ করেন ফেরেশতা নয়। তাহলে কিভাবে বৈপরীত্য হচ্ছে? তাছাড়া  সহজ ব্যাপার যে আল্লাহ ফেরেশতাদের পাঠিয়ে দেন যাতে ফেরেশতারা প্রাণ হরণ করতে পারে। আর তাছাড়া আয়াত থেকে বুঝা যাচ্ছে আমরা যখন ঘুমের অবস্থায় যখন আমার প্রাণ আল্লাহর কাছেই চলে যায় কিন্তু আল্লাহ যদি সেই প্রাণ ছেড়ে দেন তাহলেই আমরা কেবল ঘুম থেকে জাগ্রত হতে পারি। এটা তো আল্লাহই করেন। মৃত্যুর ফেরেশতারা তো আল্লাহর আদেশেই প্রাণ নেয় সেই হিসাবে তো সেটা আল্লাহই প্রাণ নিচ্ছেন বলা যায়। তাই এসব আয়াত থেকেও বৈপরীত্য আছে দাবি করা যায় না।

মানুষ কি শূন্য থেকে সৃষ্টি হয়েছে?

৩১/ অভিযোগঃ  এক আয়াতে বলা হচ্ছে সে কিছুই ছিল না তো আরেক আয়াতে বলা হচ্ছে নিজেরাই নিজেদের স্রস্টা।

হ্যাঁঃ মানুষ কি স্মরণ করে না যে, আমি তাকে ইতি পূর্বে সৃষ্টি করেছি এবং সে তখন কিছুই ছিল না। কোরআন ১৯/৬৭

নাঃ তারা কি শূন্য থেকেই সৃজিত হয়ে গেছে, না তারা নিজেরাই স্রষ্টা? কোরআন ৫২/৩৫

জবাবঃ এখানেও নাস্তিকরা সব সময়ের মতো মিথ্যাচার করেছে। প্রথম আয়াতে বলেই দেয়া হয়েছে আল্লাহ  মানুষকে সৃষ্টি করেছেন যখন সে কিছুই ছিল না আর অন্য আয়াতে প্রশ্ন করা হচ্ছে যে তারা কি শুন্য থেকে সৃষ্টি হয়েছে নাকি নিজেরাই নিজেদের স্রষ্টা? অর্থাৎ আমরা যে আল্লাহর সাহায্য ছাড়া শুন্য থেকে সৃষ্টি হয় নাই এমনকি আমরা নিজেরাও নিজেদের স্রষ্টা না এটাই আল্লাহ বুঝিয়েছেন। আয়াতে কিন্তু এটা বলা হয় নাই যে আমি মানুষকে শুন্য থেকে সৃষ্টি করেছি আবার করি না। এমন বলা হলে বৈপরীত্য হতো কিন্তু এমন কিছুই আয়াতে বলা নাই।

মানুষের শরীর নাকি আত্মা জান্নাতে যাবে?

৩২/ অভিযোগঃ  কোনটা?

শরীরঃ এ মাটি থেকেই আমি তোমাদেরকে সৃজন করেছি, এতেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে দিব এবং পুনরায় এ থেকেই আমি তোমাদেরকে উত্থিত করব। কোরআন ২০/৫৫

মানুষ কি মনে করে যে আমি তার অস্থিসমূহ একত্রিত করব না? পরন্ত আমি তার অংগুলিগুলো পর্যন্ত সঠিকভাবে সন্নিবেশিত করতে সক্ষম। কোরআন ৭৫/৩-৪

কাফেররা বলে, আমরা কি তোমাদেরকে এমন ব্যক্তির সন্ধান দেব, যে তোমাদেরকে খবর দেয় যে; তোমরা সম্পুর্ণ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও তোমরা নতুন সৃজিত হবে। কোরআন ৩৪/৭

আত্মাঃ হে প্রশান্ত আত্মা, তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট ফিরে যাও সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে। অতঃপর আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর। কোরআন ৮৯/২৭-৩০

তোমাদের সৃষ্টি ও পুনরুত্থান একটি মাত্র আত্মার সৃষ্টি ও পুনরুত্থানের সমান বৈ নয়। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছু শোনেন, সবকিছু দেখেন। কোরআন ৩১/২৮

জবাবঃ উপরের একটি আয়াতেও বলা হয় নাই যে আত্মা জান্নাতে যাবে অথবা শরীর। আয়াত গুলো পড়লেই বুঝা যায় যে আল্লাহ আমাদেরকে পুনরায় অস্তিত্ব দিতে সক্ষম সেটা বলা হয়েছে অন্য আয়াতে আমার প্রাণ আল্লাহর কাছে চলে যায় সেটা বলা হয়েছে। এখানে বৈপরীত্যের প্রশ্নই আসে না।

মরিয়ম ইসার মা নাকি হারুণের বোন?

৩৩/ অভিযোগঃ কোনটা?

ইসার মাঃ যখন ফেরেশতাগণ বললো, হে মারইয়াম আল্লাহ তোমাকে তাঁর এক বানীর সুসংবাদ দিচ্ছেন, যার নাম হলো মসীহ-মারইয়াম-তনয় ঈসা, দুনিয়া ও আখেরাতে তিনি মহাসম্মানের অধিকারী এবং আল্লাহর ঘনিষ্ঠদের অন্তর্ভূক্ত। কোরআন ৩/৪৫

হারুনের বোনঃ অতঃপর তিনি সন্তানকে নিয়ে তার সম্প্রদায়ের কাছে উপস্থিত হলেন। তারা বললঃ হে মারইয়াম, তুমি একটি অঘটন ঘটিয়ে বসেছ। হে হারূণ-ভাগিনী, তোমার পিতা অসৎ ব্যক্তি ছিলেন না এবং তোমার মাতাও ছিল না ব্যভিচারিনী। কোরআন ১৯/২৭-২৮

জবাবঃ উপরে আয়াতে তো ইসা (আ) এর মায়ের কথাই বলা হয়েছে। আর দ্বিতীয় আয়াতে উনি যখন সন্তান জন্ম দিলেন তখন লোকেরা উনাকে হারুনের ভাগিনী বলেছেন। কিন্তু তারমানে এই না যে উনি সরাসরি হারুনের বোন। পূর্বে মানুষরা ভালো মানুষদের নামে নাম করণ করেও ডাকতো। এই বিষয় সরাসরি হাদিস রয়েছে। আসুন জেনে নেই।

সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), হাদিসঃ ৫৪১৩, সহিহ হাদিসঃ

আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র, আবূ সাঈদ আশাজ্জ ও মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না আনাযী (রহঃ) ... মুগীরা ইবনু শু'বা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যখন নাজরান গেলাম, তখন সেখানকার লোকেরা আমাকে জিজ্ঞাসা করল, আপনারা (আল-কুরআনে)يَا أُخْتَ هَارُونَ (হে হারুনের বোন) অর্থাৎ ঈসা (আলাইহিস সালাম) [অর্থাৎ ঈসা (আঃ) এর মা মারইয়ামকে হারুনের বোন বলা হয়েছে] অথচ মূসা (আলাইহিস সালাম) ছিলেন ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর এত দিন আগে? [সুতরাং মূসা (আলাইহিস সালাম) এর ভাই নবী হারুন (আলাইহিস সালাম) ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর অনেক আগের যুগের। মারইরাম তার বোন হন কিভাবে?] পরে যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আমি ফিরে এলাম, তখন তাঁকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, তারা (ইয়াহুদী-নাসারারা) তাদের পূর্ববর্তী নবী ও সালিহগণের নামে (সন্তানের) নাম রাখত।-hadithbd.com

সততার সাথে একটু বুঝে শুনে পড়াশোনা করলেই এসব অযৌক্তিক আর ফালতু অভিযোগ করবার সুযোগ পেতো না।

সব মানুষ মৃত্যুবরণ করে?

৩৪/ অভিযোগঃ  এক আয়াতে বলা হচ্ছে সবাইকে মরতে হবে তো আরেক আয়াতে বলা হচ্ছে ইসাকে হত্যা করা হয়নি।

হ্যাঁঃ প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে। তারপর যাকে দোযখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, তার কার্যসিদ্ধি ঘটবে। আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া অন্য কোন সম্পদ নয়। কোরআন ৩/১৮৫

প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। কোরআন ২১/৩৫

জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। অতঃপর তোমরা আমারই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে। কোরআন ২৯/৫৭

নাঃ আর তাদের একথা বলার কারণে যে, আমরা মরিয়ম পুত্র ঈসা মসীহকে হত্যা করেছি যিনি ছিলেন আল্লাহর রসূল। অথচ তারা না তাঁকে হত্যা করেছে, আর না শুলীতে চড়িয়েছে, বরং তারা এরূপ ধাঁধায় পতিত হয়েছিল। বস্তুতঃ তারা এ ব্যাপারে নানা রকম কথা বলে, তারা এক্ষেত্রে সন্দেহের মাঝে পড়ে আছে, শুধুমাত্র অনুমান করা ছাড়া তারা এ বিষয়ে কোন খবরই রাখে না। আর নিশ্চয়ই তাঁকে তারা হত্যা করেনি। বরং তাঁকে উঠিয়ে নিয়েছেন আল্লাহ তা’আলা নিজের কাছে। আর আল্লাহ হচ্ছেন মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। কোরআন ৪/১৫৭-১৫৮

জবাবঃ প্রথম আয়াত গুলোতে বলা হচ্ছে সবাইকে মৃত্যুবরণ করতে হবে আর অন্য আয়াতে ইসা (রা) কে যে হত্যা করা হয়নি সেই কথা বলা হয়েছে। তাই এখানে বৈপরীত্য দাবি করা নাস্তিকদের অজ্ঞতার প্রমাণ। পাঠক আপনারা নিজেরাই আয়াত গুলো ভালো করে পড়ে দেখুন।

মুশরিকদের কি হবে?

৩৫/ অভিযোগঃ  জাহান্নামে যাবে নাকি নিজ নিজ স্রষ্টার কাছে যাবে?

দোযখে যাবেঃ তোমরা এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের পুজা কর, সেগুলো দোযখের ইন্ধন। তোমরাই তাতে প্রবেশ করবে। কোরআন ২১/৯৮

নিজ নিজ পালন কর্তার কাছে যাবেঃ তোমরা তাদেরকে মন্দ বলো না, যাদের তারা আরাধনা করে আল্লাহকে ছেড়ে অন্য কারো। তাহলে তারা ধৃষ্টতা করে অজ্ঞতাবশতঃ আল্লাহকে মন্দ বলবে। এমনিভাবে আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতে তাদের কাজ কর্ম সুশোভিত করে দিয়েছি। অতঃপর তাদের পালনকর্তার কাছে তাদেরকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তখন তিনি তাদেরকে বলে দেবেন যা কিছু তারা করত। কোরআন ৬/১০৮

জবাবঃ মুশরিকরা জাহান্নামেই যাবে। আর পরের আয়াতে স্পষ্ট করে বলা হচ্ছে তারা আল্লাহর কাছে যাবে। এখানে বৈপরীত্য কিভাবে হয়? মুশরিকদের মৃত্যু হলে তাদেরকে আল্লাহর কাছেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে এবং আল্লাহ তাদেরকে বলে দেবেন যা কিছু তারা করতো। কুরআনে যদি বলা থাকতো মুশরিকরা আল্লাহর কাছে যাবে জান্নাতে যাবার জন্য তাহলে বৈপরীত্য হতো কিন্তু আয়াত গুলোতে এমন কিছুই বলা হয় নাই। 

মুহাম্মাদ কি আল্লাহর দ্বারা অলৌকিক কিছু করতে পারতেন?

৩৬/ অভিযোগঃ কোনটা

হ্যাঁঃ কিয়ামত আসন্ন, চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হয়েছে। কোরআন ৫৪/১

সুতরাং তোমরা তাদেরকে হত্যা করনি, বরং আল্লাহই তাদেরকে হত্যা করেছেন। আর তুমি মাটির মুষ্ঠি নিক্ষেপ করনি (বদর যুদ্ধে বালু ছুড়ে শত্রুদের চোখ অন্ধ করে দেয়া), যখন তা নিক্ষেপ করেছিলে, বরং তা নিক্ষেপ করেছিলেন আল্লাহ স্বয়ং যেন ঈমানদারদের প্রতি এহসান করতে পারেন যথার্থভাবে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ শ্রবণকারী; পরিজ্ঞাত। কোরআন ৮/১৭

পবিত্র ও মহিমাময় তিনি যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মাসজিদুল হারাম হতে মাসজিদুল আকসায়, যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বারাকাতময়, তাকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য; তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। কোরআন ১৭:১

নাঃ আর সম্ভবতঃ ঐসব আহকাম যা ওহীর মাধ্যমে তোমার নিকট পাঠানো হয়, তার কিছু অংশ বর্জন করবে? এবং এতে মন ছোট করে বসবে? তাদের এ কথায় যে, তাঁর উপর কোন ধন-ভান্ডার কেন অবতীর্ণ হয়নি? অথবা তাঁর সাথে কোন ফেরেশতা আসেনি কেন? তুমিতো শুধু সতর্ককারী মাত্র; আর সব কিছুরই দায়িত্বভার তো আল্লাহই নিয়েছেন। কোরআন ১১/১২

কাফেররা বলেঃ তাঁর প্রতি তাঁর পালনকর্তার পক্ষ থেকে কোন নিদর্শন অবতীর্ণ হল না কেন? আপনার কাজ তো ভয় প্রদর্শন করাই এবং প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যে পথপ্রদর্শক হয়েছে। কোরআন ১৩/৭

তারা বলে, তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে তার প্রতি কিছু নিদর্শন অবতীর্ণ হল না কেন? বলুন, নিদর্শন তো আল্লাহর ইচ্ছাধীন। আমি তো একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র। কোরআন ২৯/৫০

জবাবঃ উপরের আয়াতে কোথাও এটা বলা হয় নাই যে নবী মোহাম্মদ (সা) আল্লাহর সাহায্য ছাড়া অনেক কিছু করতে পারেন। আয়াতে স্পষ্ট করে লেখা আছে আল্লাহর সাহায্য ছাড়া মোহাম্মদ (সা) কিছু করতে পারেন না। সুতরাং নাস্তিকরা এখানে অভিযোগটি ঠিক মতো করতে পারে না এমনকি ডাহামিথ্যেচার করেছে। বৈপরীত্যের তো প্রশ্নই আসে না। 

স্ত্রীদের ইদ্দত কত দিনের?

৩৭/ অভিযোগঃ  কোনটা?

তিন মাসঃ আর তালাকপ্রাপ্তা নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন হায়েয পর্যন্ত। আর যদি সে আল্লাহর প্রতি এবং আখেরাত দিবসের উপর ঈমানদার হয়ে থাকে, তাহলে আল্লাহ যা তার জরায়ুতে সৃষ্টি করেছেন তা লুকিয়ে রাখা জায়েজ নয়। আর যদি সদ্ভাব রেখে চলতে চায়, তাহলে তাদেরকে ফিরিয়ে নেবার অধিকার তাদের স্বামীরা সংরক্ষণ করে। আর পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের উপর অধিকার রয়েছে, তেমনি ভাবে স্ত্রীদেরও অধিকার রয়েছে পুরুষদের উপর নিয়ম অনুযায়ী। আর নারীরদের ওপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। আর আল্লাহ হচ্ছে পরাক্রমশালী, বিজ্ঞ। কোরআন ২/২২৮

তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যাদের ঋতুবর্তী হওয়ার আশা নেই, তাদের ব্যাপারে সন্দেহ হলে তাদের ইদ্দত হবে তিন মাস। আর যারা এখনও ঋতুর বয়সে পৌঁছেনি, তাদেরও অনুরূপ ইদ্দতকাল হবে। গর্ভবর্তী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তানপ্রসব পর্যন্ত। যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন। কোরআন ৬৫/৪

চার মাস দশ দিনঃ আর তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে এবং নিজেদের স্ত্রীদেরকে ছেড়ে যাবে, তখন সে স্ত্রীদের কর্তব্য হলো নিজেকে চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে রাখা। তারপর যখন ইদ্দত পূর্ণ করে নেবে, তখন নিজের ব্যাপারে নীতি সঙ্গত ব্যবস্থা নিলে কোন পাপ নেই। আর তোমাদের যাবতীয় কাজের ব্যাপারেই আল্লাহর অবগতি রয়েছে। কোরআন ২/২৩৪

জবাবঃ স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক দেয় তাহলে সেই ক্ষেত্রে তিনমাস ইদ্দত পালন করতে হবে আর স্বামীর যদি মৃত্যু হয়ে যায় তাহলে স্ত্রী চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। এখানে বৈপরীত্য কিভাবে? স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিলে তিনমাস ইদ্দত পালন করতে হবে আবার যদি অন্য জায়গায় বলা হতো, স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিলে চারমাস ইদ্দত করতে হবে তাহলে বৈপরীত্য হতো। কিন্তু আয়াতে তো এই ধরণের কিছুই বলা হচ্ছে না।

কুরআন কে নাযিল করে?

৩৮/ অভিযোগঃ  কে?

জিব্রাইলঃ আপনি বলে দিন, যে কেউ জিবরাঈলের শত্রু হয়-যেহেতু তিনি আল্লাহর আদেশে এ কালাম আপনার অন্তরে নাযিল করেছেন, যা সত্যায়নকারী তাদের সম্মুখস্থ কালামের এবং মুমিনদের জন্য পথপ্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা। কোরআন ২/৯৭

পবিত্র আত্মা/ রুহুল কুদ্দুসঃ বলুন, একে পবিত্র ফেরেশতা পালনকর্তার পক্ষ থেকে নিশ্চিত সত্যসহ নাযিল করেছেন, যাতে মুমিনদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং এটা মুসলমানদের জন্যে পথ নির্দেশ ও সু-সংবাদ স্বরূপ। কোরআন ১৬/১০২

ফেরেশতাগণঃ তিনি স্বীয় নির্দেশে বান্দাদের মধ্যে যার কাছে ইচ্ছা, নির্দেশসহ ফেরেশতাদেরকে এই মর্মে নাযিল করেন যে, হুশিয়ার করে দাও, আমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। অতএব আমাকে ভয় কর। কোরআন ১৬/২

আল্লাহঃ আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ নাযিল করেছি আর অবশ্যই আমি তার সংরক্ষক। কোরআন ১৫/৯

জবাবঃ উপরের আয়াতেই স্পষ্ট করে বলে দেয়া আছে যে আল্লাহর আদেশে ফেরেশতা কুরআন অবতীর্ণ করেন। তাহলে ফেরেশতারা নাজিল করেন আল্লাহ নাজিল করেন না কিভাবে হয়? ইসলামবিরোধীদের সমস্ত অভিযোগগুলোই এমন হয়, মানে কোনো আগা মাথা নাই।

আল্লাহর রসুল কি মজুরী নেন?

৩৯/ অভিযোগঃ  নেন নাকি নেন না?

হ্যাঁঃ আর এ কথাও জেনে রাখ যে, কোন বস্তু-সামগ্রীর মধ্য থেকে যা কিছু তোমরা গনীমত হিসাবে পাবে, তার এক পঞ্চমাংশ হল আল্লাহর জন্য, রসূলের জন্য, তাঁর নিকটাত্নীয়-স্বজনের জন্য এবং এতীম-অসহায় ও মুসাফিরদের জন্য; যদি তোমাদের বিশ্বাস থাকে আল্লাহর উপর এবং সে বিষয়ের উপর যা আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি ফয়সালার দিনে, যেদিন সম্মুখীন হয়ে যায় উভয় সেনাদল। আর আল্লাহ সব কিছুর উপরই ক্ষমতাশীল। কোরআন ৮/৪১

আল্লাহ জনপদবাসীদের কাছ থেকে তাঁর রসূলকে যা দিয়েছেন, তা আল্লাহর, রসূলের, তাঁর আত্নীয়-স্বজনের, ইয়াতীমদের, অভাবগ্রস্তদের এবং মুসাফিরদের জন্যে, যাতে ধনৈশ্বর্য্য কেবল তোমাদের বিত্তশালীদের মধ্যেই পুঞ্জীভূত না হয়। রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। কোরআন ৫৯/৭

নাঃ এরা এমন ছিল, যাদেরকে আল্লাহ পথ প্রদর্শন করেছিলেন। অতএব, আপনিও তাদের পথ অনুসরণ করুন। আপনি বলে দিনঃ আমি তোমাদের কাছে এর জন্যে কোন পারিশ্রমিক চাই না। এটি সারা বিশ্বের জন্যে একটি উপদেশমাত্র। কোরআন ৬/৯০

আপনি এর জন্যে তাদের কাছে কোন বিনিময় চান না। এটা তো সারা বিশ্বের জন্যে উপদেশ বৈ নয়। কোরআন ১২/১০৪

বলুন, আমি তোমাদের কাছে এর কোন বিনিময় চাই না, কিন্তু যে ইচ্ছা করে, সে তার পালনকর্তার পথ অবলম্বন করুক। কোরআন ২৫/৫৭

বলুন, আমি তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাই না বরং তা তোমরাই রাখ। আমার পুরস্কার তো আল্লাহর কাছে রয়েছে। প্রত্যেক বস্তুই তাঁর সামনে। কোরআন ৩৪/৪৭

অনুসরণ কর তাদের, যারা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় কামনা করে না, অথচ তারা সুপথ প্রাপ্ত। কোরআন ৩৬/২১

জবাবঃ উপরের আয়াত গুলো পড়লেই বুঝা যায় আল্লাহ তাঁর রাসুলকে যা দিয়েছেন সেটা উনি গ্রহণ করেছেন। পরবর্তী আয়াত গুলোতেও স্পষ্ট করে বলা আছে, নবীজি মানুষের কাছে কিছু চান না আল্লাহর বানী প্রচার করবার বিনিময়ে। এখানেই কিভাবে বৈপরীত্য হয়? যদি বলা হতো, মানুষের থেকে মজুরি নিয়েন না, আবার যদি বলা হতো মানুষের থেকে মজুরি নেন তাহলে বৈপরীত্য বলা যেত কিন্তু এসব আয়াতে বলাই হচ্ছে না। তাই বৈপরীত্যের প্রশ্নই আসে না।

কত হাজার ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য?

৪০/ অভিযোগঃ  কোনটা সঠিক?

১০০০ঃ তোমরা যখন ফরিয়াদ করতে আরম্ভ করেছিলে স্বীয় পরওয়ারদেগারের নিকট, তখন তিনি তোমাদের ফরিয়াদের মঞ্জুরী দান করলেন যে, আমি তোমাদিগকে সাহায্য করব ধারাবহিকভাবে আগত এক হাজার ফেরেশতার মাধ্যমে। কোরআন ৮/৯

৩০০০ঃ আপনি যখন বলতে লাগলেন মুমিনগণকে-তোমাদের জন্য কি যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের সাহায্যার্থে তোমাদের পালনকর্তা আসমান থেকে অবতীর্ণ তিন হাজার ফেরেশতা পাঠাবেন। কোরআন ৩/১২৪

৫০০০ঃ অবশ্য তোমরা যদি সবর কর এবং বিরত থাক আর তারা যদি তখনই তোমাদের উপর চড়াও হয়, তাহলে তোমাদের পালনকর্তা চিহ্নিত ঘোড়ার উপর পাঁচ হাজার ফেরেশতা তোমাদের সাহায্যে পাঠাতে পারেন। কোরআন ৩/১২৫

জবাবঃ প্রথমে ১০০০ ফেরেশতা পাঠান। এরপরে ৩০০০, এরপরে ৫০০০ ফেরেশতা পাঠান। বৈপরীত্য কিভাবে হয়? তাছাড়া উপরের আয়াত গুলো পড়লেও পরিস্কার অর্থে বুঝা যায় যে আল্লাহ কুরআনে নিজেই বলেছেন উনি ধারাবাহিকভাবে ফেরেশতা পাঠিয়ে সাহায্য করবেন। তাই সংখ্যার কারণে এখানে বৈপরীত্য হবে না। যেমন কেউ যদি বলে আমি যুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে সৈন্য পাঠাবো। যেমন এক হাজার, তিন হাজার, পাঁচ হাজার। এখানে যেমন বৈপরীত্য বলা যায় না তেমনি সেখানেও।  

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ,উক্ত আয়াত গুলোর ব্যাপারে বলা হয়েছে,

মুসলিমরা কুরাইশদের নিরস্ত্র বাণিজ্যিক কাফেলার ওপর আক্রমণ করার জন্য বদরের দিকে যাত্রা করেছিল। বদর পৌঁছে তারা জানতে পারলো মক্কা থেকে মুশরিকরা একদল সৈন্য নিয়ে আগমন করছে। এ কথা শুনে মুসলিমদের মধ্যে হতবুদ্ধিতা ও অস্থিরতা বিরাজ করে। আল্লাহ তা”লার কাছে রাসুল (সা) দুয়া করলেন। ফলে প্রথমে এক হাজার, পরে তিনহাজার এবং শেষে পাঁচ হাজার ফেরেশতা দ্বারা আল্লাহ তাদের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন এ শর্তে যে, যদি ধৈর্য ও তাকওয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাক।

আল্লাহ না চাইলে বুদ্ধি প্রয়োগ করে ইমান আনতে পারে কেউ?

৪১/ অভিযোগঃ  এক আয়াতে বলা হচ্ছে আল্লাহর হুকুম না হলে ইমান আনা যায় না তো আরেক আয়াতে বলা হচ্ছে খারাপ কাজ এর জন্য মানুষ দায়ী।

আর কারো ঈমান আনা হতে পারে না, যতক্ষণ না আল্লাহর হুকুম হয়। পক্ষান্তরে তিনি অপবিত্রতা আরোপ করেন যারা বুদ্ধি প্রয়োগ করে না তাদের উপর। কোরআন ১০/১০০

আপনার যে কল্যাণ হয়, তা হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে আর আপনার যে অকল্যাণ হয়, সেটা হয় আপনার নিজের কারণে। আর আমি আপনাকে পাঠিয়েছি মানুষের প্রতি আমার পয়গামের বাহক হিসাবে। আর আল্লাহ সব বিষয়েই যথেষ্ট-সববিষয়ই তাঁর সম্মুখে উপস্থিত। কোরআন ৪/৭৯

বলুন, আমি পথভ্রষ্ট হলে নিজের ক্ষতির জন্যেই পথভ্রষ্ট হব; আর যদি আমি সৎপথ প্রাপ্ত হই, তবে তা এ জন্যে যে, আমার পালনকর্তা আমার প্রতি ওহী প্রেরণ করেন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, নিকটবর্তী। কোরআন ৩৪/৫০

জবাবঃ এই আয়াত গুলো নাস্তিকরা বুঝতেই পারে নাই। আয়াত গুলোতে কোনো বৈপরীত্য নেই। হেদায়েত পেতে হলে আল্লাহর অনুমতি লাগে আর এই অনুমতি তখন মেলে যখন মানুষ নিজে চেষ্টা করে আল্লাহর কাছে হেদায়েত চায়। মানুষ যদি হেদায়েত না চায় তাহলে আল্লাহ হেদায়েত দিবেন না। উপরের আয়াতেই স্পষ্ট করে বলে দেয়া আছে যে, পক্ষান্তরে তিনি অপবিত্রতা আরোপ করেন যারা বুদ্ধি প্রয়োগ করে না তাদের উপর। সুতরাং আপনি যদি সততার সাথে বুদ্ধি প্রয়োগ করে আল্লাহর কাছে হেদায়েত চান আপনি হেদায়েত পাবেন। যেমন অনেক নাস্তিক সংশয়বাদীরাই নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে ইসলামবিরোধী বিশ্বাস ত্যাগ করে তওবা করে ইসলামে ফিরে আসতেছে। তারা যদি হেদায়াত পায় আপনি কেন পাবেন না?

অন্তরে মোহর কি আল্লাহ ইচ্ছে করে মারে নাকি কৃতকর্মের ফলস্বরূপ?

৪২/ অভিযোগঃ  কি হবে আসলে?

ইচ্ছে করেঃ নাকি তারা একথা বলে যে, তিনি আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা রটনা করেছেন? আল্লাহ ইচ্ছা করলে আপনার অন্তরে মোহর এঁটে দিতেন। বস্তুতঃ তিনি মিথ্যাকে মিটিয়ে দেন এবং নিজ বাক্য দ্বারা সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন। নিশ্চয় তিনি অন্তর্নিহিত বিষয় সম্পর্কে সর্বিশেষ জ্ঞাত। কোরআন ৪২/২৪

আপনি কি তার প্রতি লক্ষ্য করেছেন, যে তার খেয়াল-খুশীকে স্বীয় উপাস্য স্থির করেছে? আল্লাহ জেনে শুনে তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, তার কান ও অন্তরে মহর এঁটে দিয়েছেন এবং তার চোখের উপর রেখেছেন পর্দা। অতএব, আল্লাহর পর কে তাকে পথ প্রদর্শন করবে? তোমরা কি চিন্তাভাবনা কর না? কোরআন ৪৫/২৩

অভিযোগের পথ তো তাদের ব্যাপারে রয়েছে, যারা তোমার নিকট অব্যাহতি কামনা করে অথচ তারা সম্পদশালী। যারা পেছনে পড়ে থাকা লোকদের সাথে থাকতে পেরে আনন্দিত হয়েছে। আর আল্লাহ মোহর এঁটে দিয়েছেন তাদের অন্তরসমূহে। বস্তুতঃ তারা জানতেও পারেনি। কোরআন ৯/৯৩

কৃতকর্মের ফলঃ তাদের নিকট কি একথা প্রকাশিত হয়নি, যারা উত্তারাধিকার লাভ করেছে। সেখানকার লোকদের ধ্বংসপ্রাপ্ত হবার পর যদি আমি ইচ্ছা করতাম, তবে তাদেরকে তাদের পাপের দরুন পাকড়াও করে ফেলতাম। বস্তুতঃ আমি মোহর এঁটে দিয়েছি তাদের অন্তরসমূহের উপর। কাজেই এরা শুনতে পায় না। এগুলো হল সে সব জনপদ যার কিছু বিবরণ আমি আপনাকে অবহিত করছি। আর নিশ্চিতই ওদের কাছে পৌছেছিলেন রসূল নিদর্শন সহকারে। অতঃপর কস্মিনকালও এরা ঈমান আনবার ছিল না, তারপরে যা তার ইতিপূর্বে মিথ্যা বলে প্রতিপন্ন করেছে। এভাবেই আল্লাহ কাফেরদের অন্তরে মোহর এঁটে দেন।  কোরআন ৭/১০০-১০১

এটা এজন্য যে, তারা বিশ্বাস করার পর পুনরায় কাফের হয়েছে। ফলে তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে। অতএব তারা বুঝে না। কোরআন ৬৩/৩

অতএব, তারা যে শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছিল, তা ছিল তাদেরই অঙ্গীকার ভঙ্গর জন্য এবং অন্যায়ভাবে রসূলগণকে হত্যা করার কারণে এবং তাদের এই উক্তির দরুন যে, আমাদের হৃদয় আচ্ছন্ন। অবশ্য তা নয়, বরং কুফরীর কারণে স্বয়ং আল্লাহ তাদের অন্তরের উপর মোহর এঁটে দিয়েছেন। ফলে এরা ঈমান আনে না কিন্তু অতি অল্পসংখ্যক। কোরআন ৪/১৫৫

জবাবঃ উপরের আয়াতে কোনো বৈপরীত্য নেই। আল্লাহ তাদেরকেই মহর মেনে দিবেন যারা জেনে বুঝে ইসলামের বিরুদ্ধে তথা আল্লাহর বিরুদ্ধে অবস্থান নিবেন। হ্যাঁ, কেউ যদি সততার সাথে চলে তাহলে আল্লাহ দয়া করে হেদায়েত দিয়ে দিতে পারেন। উপরের আয়াতে বলে দেয়া আছে যে, যাদেরকে মহর মেরে দেয়া হয়েছে সেটা তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গর জন্য এবং অন্যায়ভাবে রসূলগণকে হত্যা করার কারণে। এরপরে ইসলাম গ্রহণ করে পুনরায় কাফের হয়ে গেছে এই অপরাধের জন্য আল্লাহ মহর মেরে দেন। সুতরাং সবন গুলো আয়াত খেয়াল দিয়ে পড়লে এটা স্পষ্ট যে অপরাধীদের কর্মের কারণে আল্লাহ জেনে বুঝে মহর মেরে দেন। তাই এখানে বৈপরীত্য হবার সুযোগ নেই। যদি আয়াতে বলা হতো, আল্লাহ মানুষকে হুদাহুদি মহর মেরে দেন, আবার যদি বলা হতো হুদাহুদি মহর মারেন না তাহলে এখানে বৈপরীত্য হতো। কিন্তু আয়াত গুলোতে তেমন কিছু বলা নাই।

ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্ম গৃহীত হবে কিনা?

৪৩/ অভিযোগঃ  হ্যাঁ নাকি না?

হ্যাঁঃ তোমরা কিতাবধারীদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করবে না, কিন্তু উত্তম পন্থায়; তবে তাদের সাথে নয়, যারা তাদের মধ্যে বে-ইনসাফ। এবং বল, আমাদের প্রতি ও তোমাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে, তাতে আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমাদের উপাস্য ও তোমাদের উপাস্য একই এবং আমরা তাঁরই আজ্ঞাবহ। কোরআন ২৯/৪৬ 

নিশ্চয় যারা মুসলমান, যারা ইহুদী, ছাবেয়ী বা খ্রীষ্টান, তাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে আল্লাহর প্রতি, কিয়ামতের প্রতি এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না। কোরআন ৫/৬৯

নিঃসন্দেহে যারা মুসলমান হয়েছে এবং যারা ইহুদী, নাসারা ও সাবেঈন, (তাদের মধ্য থেকে) যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি এবং সৎকাজ করেছে, তাদের জন্য রয়েছে তার সওয়াব তাদের পালনকর্তার কাছে। আর তাদের কোনই ভয়-ভীতি নেই, তারা দুঃখিতও হবে না। কোরআন ২/৬২

নাঃ যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতি গ্রস্ত।কোরআন ৩/৮৫

জবাবঃ উপরের আয়াত গুলোতে স্পষ্ট করে বলাই হচ্ছে যারা ইমান আনে তাদের ভয় নেই। উপরের আয়াতে তো বলা নেই যে যারা ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মে ইমান আনবে তারা জান্নাতী।

মদ শয়তানের অপবিত্র কাজ নাকি আল্লাহর রহমত?

৪৪/ অভিযোগঃ  কার কাজ? কার রহমত?

শয়তানের কাজঃ তারা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্যে উপকারিতাও রয়েছে, তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়। আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, কি তারা ব্যয় করবে? বলে দাও, নিজেদের প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর যা বাঁচে তাই খরচ করবে। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্যে নির্দেশ সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা করতে পার। কোরআন ২/১১৯

হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। কোরআন ৫/৯০

শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শুত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামায থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখন ও কি নিবৃত্ত হবে? কোরআন ৫/৯১

আল্লাহর পুরস্কারঃ তাদেরকে ঘুরে ফিরে পরিবেশন করা হবে স্বচ্ছ পানপাত্র। কোরআন ৩৭/৪৫

পানপাত্র, জগ ও বিশুদ্ধ শরাবের পেয়ালা নিয়ে, কোরআন ৫৬/১৮

ও শরাবে পরিপূর্ণ পেয়ালা। কোরআন ৭৮/৩৪

তাদেরকে মোহর করা বিশুদ্ধ পানীয় পান করানো হবে। কোরআন ৮৩/২৫

জবাবঃ এখানে টাটকা জালিয়াতি করা হয়েছে। মদকে দুনিয়াতে আল্লাহ হারাম করে দিয়েছেন। আর জান্নাতে আল্লাহ উনার নেক বান্দাদেরকে শরাব বা স্বচ্ছ পানপাত্র খাওয়াবেন সেটা বলা হয়েছে। কিন্তু নাস্তিকরা দেখুন কিভাবে এই বিষয়টি না দেখিয়েই বৈপরীত্য দাবি করে দিব। যদি কুরআনে লেখা থাকতো যে আল্লাহ দুনিয়াতে মদ হারাম করেছেন, আবার যদি অন্য আয়াতে বলা হতো আল্লাহ দুনিয়াতে মদ হারাম করেন নাই তাহলে বৈপরীত্য হতো। কিন্তু আয়াতে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপটে বলা হচ্ছে। তাই এখানে বৈপরীত্য আসার সুযোগ নেই।

আদম আর ইসা কি একইভাবে তৈরি?

৪৫/ অভিযোগঃ  হ্যাঁ নাকি না?

হ্যাঁঃ নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত হচ্ছে আদমেরই মতো। তাকে মাটি দিয়ে তৈরী করেছিলেন এবং তারপর তাকে বলেছিলেন হয়ে যাও, সঙ্গে সঙ্গে হয়ে গেলেন। কোরআন ৩/৫৯

নাঃ সে বললঃ আমি তো শুধু তোমার পালনকর্তা প্রেরিত, যাতে তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করে যাব। কোরআন ১৯/১৯

জবাবঃ ঈসা (আ)কে যেমন আল্লাহ পিতা ছাড়া সৃষ্টি করেছেন তেমনি আদম (আ)কেও পিতা ছাড়াই সৃষ্টি করেছেন। এখানে আল্লাহ পুত্র সন্তান দান করবেন কথাটি কিভাবে বৈপরীত্য হতে পারে? নাস্তিকরা এতো মূর্খ কেন হয়? নাস্তিকরা কি মিথ্যা কথা না বলে ইসলাম বিরোধীতা করতে পারে না?

অবিশ্বাসীরা দ্বীন কবুল না করলে যুদ্ধ করতে হবে?

৪৬/ অভিযোগঃ  হ্যাঁ নাকি না?

হ্যাঁঃ আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ভ্রান্তি শেষ হয়ে যায়; এবং আল্লাহর সমস্ত হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তারপর যদি তারা বিরত হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করেন। কোরআন ৮/৩৯

নাঃ যদি তারা তোমার সাথে বিতর্কে অবতীর্ণ হয় তবে বলে দাও, “আমি এবং আমার অনুসরণকারীগণ আল্লাহর প্রতি আত্নসমর্পণ করেছি।” আর আহলে কিতাবদের এবং নিরক্ষরদের বলে দাও যে, তোমরাও কি আত্নসমর্পণ করেছ? তখন যদি তারা আত্নসমর্পণ করে, তবে সরল পথ প্রাপ্ত হলো, আর যদি মুখ ঘুরিয়ে নেয়, তাহলে তোমার দায়িত্ব হলো শুধু পৌছে দেয়া। আর আল্লাহর দৃষ্টিতে রয়েছে সকল বান্দা। কোরআন ৩/২০

জবাবঃ এক আয়াতে যুদ্ধের কথা বলা হচ্ছে, আরেক আয়াত যুদ্ধহীন সিচুয়েশনের কথা বলছে। এখানে বৈপরীত্য কিভাবে হল? আয়াত পড়লেই তো পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে।

অবিশ্বাসী জাহান্নামীদের খাদ্য কি হবে?

৪৭/ অভিযোগঃ  কোন পানি?

ফুটন্ত পানিঃ পরহেযগারদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা দেয়া হয়েছে, তার অবস্থা নিম্নরূপঃ তাতে আছে পানির নহর, নির্মল দুধের নহর যারা স্বাদ অপরিবর্তনীয়, পানকারীদের জন্যে সুস্বাদু পানীয়র (wine) নহর এবং পরিশোধিত মধুর নহর। তথায় তাদের জন্যে আছে রকমারি ফল-মূল ও তাদের পালনকর্তার ক্ষমা। পরহেযগাররা কি তাদের সমান, যারা জাহান্নামে অনন্তকাল থাকবে এবং যাদেরকে পান করতে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি অতঃপর তা তাদের নাড়িভূঁড়ি ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেবে? কোরআন ৪৭/১৫

ফুটন্ত পানীয়ঃ তাদেরকে ফুটন্ত নহর থেকে পান করানো হবে। কোরআন ৮৮/৫

ঝাড়ঃ কন্টকপূর্ণ ঝাড় ব্যতীত তাদের জন্যে কোন খাদ্য নেই। কোরআন ৮৮/৬

পুঁজঃ এবং কোন খাদ্য নাই, ক্ষত-নিঃসৃত পুঁজ ব্যতীত। কোরআন ৬৯/৩৬

জবাবঃ সব গুলোই সঠিক। জাহান্নামীদেরকে ফুটন্ত পানি,ঝাড় ও পুঁজ এসবই খাওয়ানো হবে। কন্টকপূর্ণ ঝাড় যখন খওয়ানো হবে তখন অন্য কিছু খাওয়ানো হবে না আবার যখন ক্ষত-নিঃসৃত পুঁজ খাওয়ানো হবে তখন সেটা ছাড়া অন্য খাবার দেয়া হবে না। তাই বৈপরীত্যের প্রশ্নই আসে না।

আল্লাহকে বিশ্বাস ও মুহাম্মাদে অবিশ্বাস করা যাবে?

৪৮/ অভিযোগঃ  যাবে নাকি যাবে না?

হ্যাঁঃ তোমরা কিতাবধারীদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করবে না, কিন্তু উত্তম পন্থায়; তবে তাদের সাথে নয়, যারা তাদের মধ্যে বে-ইনসাফ। এবং বল, আমাদের প্রতি ও তোমাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে, তাতে আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছিআমাদের উপাস্য ও তোমাদের উপাস্য একই এবং আমরা তাঁরই আজ্ঞাবহ। কোরআন ২৯/৪৬

নিশ্চয় যারা মুসলমান, যারা ইহুদী, ছাবেয়ী বা খ্রীষ্টান, তাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে আল্লাহর প্রতি, কিয়ামতের প্রতি এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না। কোরআন ৫/৬৯

নিঃসন্দেহে যারা মুসলমান হয়েছে এবং যারা ইহুদী, নাসারা ও সাবেঈন, (তাদের মধ্য থেকে) যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি এবং সৎকাজ করেছে, তাদের জন্য রয়েছে তার সওয়াব তাদের পালনকর্তার কাছে। আর তাদের কোনই ভয়-ভীতি নেই, তারা দুঃখিতও হবে না। কোরআন ২/৬২

নাঃ যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাদেরকে আপনি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যদিও তারা তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয়। তাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর অদৃশ্য শক্তি দ্বারা। তিনি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। তারা তথায় চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আল্লাহর দল। জেনে রাখ, আল্লাহর দলই সফলকাম হবে। কোরআন ৫৮/২২

জবাবঃ উপরের কোনো আয়াতেই এই কথা বলা হচ্ছে না যে আল্লাহকে বিশ্বাস করা লাগবে না অথবা নবী মোহাম্মদ (সা) কে বিশ্বাস করা লাগবে না। তাহলে বৈপরীত্য কিভাবে হয়েছে? তাছাড়া আয়াত তো শুধু একটা না আরও আছে। যেখানে আল্লাহর প্রতি, নবী মোহাম্মদ (সা)এর প্রতি স্পষ্ট ইমান আনার কথা বলা হয়েছে। যদি শুধু আল্লাহর প্রতিই ইমান আনার কথা হতো আর নবীজির (সা) উপর ইমান না আনলেও হতো তাহলে আল্লাহ কুরআনে কেন বলবেন যে নবী যা দেয় তোমরা তা নেও? আয়াতটি পড়ুন।

আল কুরআন, সুরা হাশর ৫৯ঃ ৭ আয়াতে লেখা আছে,

আল্লাহ জনপদবাসীদের কাছ থেকে তাঁর রসূলকে যা দিয়েছেন, তা আল্লাহর, রসূলের, তাঁর আত্নীয়-স্ব জনের, ইয়াতীমদের, অভাবগ্রস্তদের এবং মুসাফিরদের জন্যে, যাতে ধনৈশ্বর্য্য কেবল তোমাদের বিত্তশালীদের মধ্যেই পুঞ্জীভূত না হয়। রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।

সব থেকে বড় প্রশ্ন যদি নবীজি (সা)কে অবিশ্বাস করতে ইসলাম বলেই থাকে তাহলে উনি যে আল্লাহর নবী সেটা কিভাবে বিশ্বাস করা যাবে? তাই নাস্তিকরা উপরের আয়াত থেকে যা বুঝিয়েছে সেটা ঠিক নয়।

সৃষ্টিকর্তা একজন?

৪৯/ অভিযোগঃ  কে?

হ্যাঁঃ তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের আদি স্রষ্টা। কিরূপে আল্লাহর পুত্র হতে পারে, অথচ তাঁর কোন সঙ্গী নেই? তিনি যাবতীয় কিছু সৃষ্টি করেছেন। তিনি সব বস্তু সম্পর্কে সুবিজ্ঞ। কোরআন ৬/১০১

আল্লাহ সর্বকিছুর স্রষ্টা এবং তিনি সবকিছুর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কোরআন ৩৯/৬২

নাঃ এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর সেই মাংসপিন্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে মাংস দ্বারা আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে নতুন রূপে দাঁড় করিয়েছি। নিপুণতম সৃষ্টিকর্তা (আহসানাল খালিক্বিন/Best of Creators) আল্লাহ কত কল্যাণময়। কোরআন ২৩/১৪

তোমরা কি বা’আল দেবতার এবাদত করবে এবং সর্বোত্তম স্রষ্টাকে (আহসানাল খালিক্বিন/Best of Creators) পরিত্যাগ করবে। কোরআন ৩৭/১২৫

তোমরা তাদেরকে মন্দ বলো না, যাদের তারা আরাধনা করে আল্লাহকে ছেড়ে। তাহলে তারা ধৃষ্টতা করে অজ্ঞতাবশতঃ আল্লাহকে মন্দ বলবে। এমনিভাবে আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতে তাদের কাজ কর্ম সুশোভিত করে দিয়েছি। অতঃপর তাদের পালনকর্তার কাছে তাদেরকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তখন তিনি তাদেরকে বলে দেবেন যা কিছু তারা করত। কোরআন ৬/১০৮

জবাবঃ উপরের কোনো আয়াতেই বলা হচ্ছে না আল্লাহ দুইজন। আল্লাহ আদি স্রষ্টা,সব কিছুর স্রষ্টা,নিপুণতম সৃষ্টিকর্তা (আহসানাল খালিক্বিন/Best of Creators) বলা হয়েছে। ইসলামবিরোধীরা এতো বিভ্রমে ভোগে, এখানে যে আল্লাহর কথাই বলা হয়েছে সেটাও বুঝতে পারেনি। কুরআন ও সহিহ হাদিস থেকে স্পষ্ট বর্ণনা নাস্তিকরা দেখাতে পারবে যেখানে বর্ণিত হয়েছে আল্লাহ একাধিকজন? সুরা ইখলাস পড়লেই তো স্পষ্ট হয়ে যায় ইসলাম আল্লাহর একত্ববাদের কথা বলে।

বিশ্বাসীদের স্বর্ণ নাকি রৌপ্য কঙ্কণ পরানো হবে?

৫০/ অভিযোগঃ  কোনটি?

স্বর্ণঃ নিশ্চয় যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে দাখিল করবেন উদ্যান সমূহে, যার তলদেশ দিয়ে নির্ঝরিণীসমূহ প্রবাহিত হবে। তাদেরকে তথায় স্বর্ণ-কংকন ও মুক্তা দ্বারা অলংকৃত করা হবে এবং তথায় তাদের পোশাক হবে রেশমী। কোরআন ২২/২৩

রৌপ্যঃ তাদের আবরণ হবে চিকন সবুজ রেশম ও মোটা সবুজ রেশম এবং তাদেরকে পরিধান করোনো হবে রৌপ্য নির্মিত কংকণ এবং তাদের পালনকর্তা তাদেরকে পান করাবেন ‘শরাবান-তহুরা। কোরআন ৭৬/২১

জবাবঃ স্বর্ণ, রৌপ্য কঙ্কণ উভয়টি পরানো হবে। যদি বলা হতো শুধুই স্বর্ণ পরানো হবে রৌপ্য কঙ্কণ না তাহলে বৈপরীত্য হতো। কিন্তু আয়াতে এমন কিছু বলা আছে? দেখেন তো ভালো করে।

পিতা মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করতে হবে?

৫১/ অভিযোগঃ  করতে হবে নাকি হবে না?

হ্যাঁঃ তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা। কোরআন ১৭/২৩

আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়ানো দু বছরে হয়। নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই নিকট ফিরে আসতে হবে। কোরআন ৩১/১৪

নাঃ আমি মানুষকে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরীক করার জোর প্রচেষ্টা চালায়, যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো না। আমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি তোমাদেরকে বলে দেব যা কিছু তোমরা করতে। কোরআন ২৯/৮

পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই; তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহঅবস্থান করবে। যে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে এবং তোমরা যা করতে, আমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে জ্ঞাত করবো। কোরআন ৩১/১৫

হে ঈমানদারগণ! তোমরা স্বীয় পিতা ও ভাইদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ করো না, যদি তারা ঈমান অপেক্ষা কুফরকে ভালবাসে। আর তোমাদের যারা তাদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে তারা সীমালংঘনকারী। কোরআন ৯/২৩

জবাবঃ  যদি পিতামাতা অন্যায় কাজের আদেশ দেয় অথবা কুফুরি করে তাহলে তাদের কথা মানা যাবে না কিন্তু এরপরেও দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহঅবস্থান করতে বলেছে। এখান বৈপরীত্য কিভাবে হচ্ছে? আয়াতে তো স্পষ্ট করে বলেই দেয়া হয়েছে, পিতামাতার সাথে সব সময় ভালো আচরণ করতে কিন্তু যদি তারা অন্যায় কিছু করতে বলে তাহলে তাদের কথা মানা যাবে না।

একাধিক স্ত্রীর মাঝে সুবিচার করা সম্ভব?

৫২/ অভিযোগঃ সুবিচার করা যাবে নাকি যাবে না?

হ্যাঁঃ আর যদি তোমরা ভয় কর যে, এতীম মেয়েদের হক যথাথভাবে পুরণ করতে পারবে না, তবে সেসব মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভাল লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্কা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায় সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে, একটিই অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদেরকে; এতেই পক্ষপাতিত্বে জড়িত না হওয়ার অধিকতর সম্ভাবনা। কোরআন ৪/৩

নাঃ তোমরা কখনও স্ত্রীদের মধ্যে সুবিচার করতে পারবে না, যদিও এর আকাঙ্ক্ষী হও। অতএব, সম্পূর্ণ ঝুঁকেও পড়ো না যে, একজনকে ফেলে রাখ দোদুল্যমান অবস্থায়। যদি সংশোধন কর এবং খোদাভীরু হও, তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়। কোরআন ৪/১২৯

জবাবঃ সুবিচার করতে পারবে না বলে ভয় দেখানো হয়েছে যাতে একটি বিয়ে করা হয়। আর যদি একাধিক বিয়ে করেও ফেলে কেউ তাহলে অবশ্যই সুবিচার করতে হবে। এটাই হচ্ছে উক্ত দুই আয়াতের ভাবার্থ। যেমন ধরুন আপনি আপনার এক বন্ধুকে বললেন, সেই অংটি অনেক কঠিন তুই পারবি না, কিন্তু যদি পরিক্ষায় আসে আর তুই যদি করিস তাহলে ঠিক মতো লিখে দেইস। এখন এখানে যদি কেউ বলে এখানে বৈপরীত্য হয়েছে তাহলে সে মিথ্যা বলল। তেমনি কুরআনেও উক্ত আয়াতে বৈপরীত্য নেই। খুব মন দিয়ে যদি আয়াত গুলো আপনারা পড়েন তাহলে বুঝতে পারবেন আয়াতে একাধিক নারীকে বিয়ে করার কথা বলা হয়েছে এবং একই সাথে সবার সাথে ন্যায় সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে বলেছে কিন্তু এই কাজটি অনেক কঠিন তাই একজনের দিকে অধিক ঝুকে না পড়তে বলেছে অন্যজনকে দোদুল্যমান অবস্থায় রেখে। তাহলে এখানে বৈপরীত্য আসার প্রশ্ন আসে কিভাবে?

কর্মের ভিত্তিতে মানুষ কত প্রকার?

৫৩/ অভিযোগঃ  কয়প্রকার?

দুইঃ সেদিন মানুষ বিভিন্ন দলে প্রকাশ পাবে, যাতে তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম দেখানো হয়। অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে। কোরআন ৯৯/৬-৮

তিনঃ এবং তোমরা তিনভাবে বিভক্ত হয়ে পড়বে। যারা ডান দিকে, কত ভাগ্যবান তারা। এবং যারা বামদিকে, কত হতভাগা তারা। অগ্রবর্তীগণ তো অগ্রবর্তীই। কোরআন ৫৬/৭-১০

জবাবঃ এক আয়াতে বল হচ্ছে কিয়ামতের দিন মানুষকে বিভিন্ন দলে প্রকাশ করা হবে এবং অন্য আয়াতে বলা হয়েছে সেই বিভিন্ন দলে প্রকাশ পাওয়া লোকদেরকে তিন ভাগে ভাগ করা হবে। তাহলে এখানে বৈপরীত্য কিভাবে? ধরুন আপনি বললেন, আমার কাছে হাজার টাকার নোট আছে আমি সেগুলোকে তিনভাবে ভাগ করবো। এখানে কি যেমন বৈপরীত্য হবে না তেমনি কুরআনের উক্ত আয়াতে বৈপরীত্য হবে না। কারণ কিয়ামতের দিন বিভিন্ন দলে মানুষ প্রকাশ পাবে কিন্তু সেই বিভিন্ন দল গুলো তিন ভাবে ভাগ হয়ে যাবে। এখানে বৈপরীত্যের সুযোগ নেই। 

পথভ্রষ্ট বা মন্দ কার পক্ষ থেকে হয়?

৫৪/ অভিযোগঃ  কার থেকে হয়?

শয়তানঃ স্মরণ করুণ, আমার বান্দা আইয়্যুবের কথা, যখন সে তার পালনকর্তাকে আহবান করে বললঃ শয়তান আমাকে যন্ত্রণা ও কষ্ট পৌছিয়েছে। কোরআন ৩৮/৪১

যার প্রতি আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন। শয়তান বললঃ আমি অবশ্যই তোমার বান্দাদের মধ্য থেকে নির্দিষ্ট অংশ গ্রহণ করব। তাদেরকে পথভ্রষ্ট করব, তাদেরকে আশ্বাস দেব; তাদেরকে পশুদের কর্ণ ছেদন করতে বলব এবং তাদেরকে আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তন করতে আদেশ দেব। যে কেউ আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে পতিত হয়। সে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তাদেরকে আশ্বাস দেয়। শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয়, তা সব প্রতারণা বৈ নয়। কোরআন ৪/১১৮-১২০

যারা আমার বান্দা, তাদের উপর তোমার(শয়তানের) কোন ক্ষমতা নেই; কিন্তু পথভ্রান্তদের মধ্য থেকে যারা তোমার পথে চলে। কোরআন ১৫/৪২

অতঃপর শয়তান তাকে কুমন্ত্রনা দিল, বললঃ হে আদম, আমি কি তোমাকে বলে দিব অনন্তকাল জীবিত থাকার বৃক্ষের কথা এবং অবিনশ্বর রাজত্বের কথা? কোরআন ২০/১২০

মানুষ নিজেঃ আপনার যে কল্যাণ হয়, তা হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে আর আপনার যে অকল্যাণ হয়, সেটা হয় আপনার নিজের কারণে। আর আমি আপনাকে পাঠিয়েছি মানুষের প্রতি আমার পয়গামের বাহক হিসাবে। আর আল্লাহ সব বিষয়েই যথেষ্ট-সববিষয়ই তাঁর সম্মুখে উপস্থিত। কোরআন ৪/৭৯

বলুন, আমি পথভ্রষ্ট হলে নিজের ক্ষতির জন্যেই পথভ্রষ্ট হব; আর যদি আমি সৎপথ প্রাপ্ত হই, তবে তা এ জন্যে যে, আমার পালনকর্তা আমার প্রতি ওহী প্রেরণ করেন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, নিকটবর্তী। কোরআন ৩৪/৫০

আল্লাহঃ তোমরা যেখানেই থাক না কেন; মৃত্যু কিন্তু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই। যদি তোমরা সুদৃঢ় দূর্গের ভেতরেও অবস্থান কর, তবুও। বস্তুতঃ তাদের কোন কল্যাণ সাধিত হলে তারা বলে যে, এটা সাধিত হয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর যদি তাদের কোন অকল্যাণ হয়, তবে বলে, এটা হয়েছে তোমার পক্ষ থেকে, বলে দাও, এসবই আল্লাহর পক্ষ থেকে। পক্ষান্তরে তাদের পরিণতি কি হবে, যারা কখনও কোন কথা বুঝতে চেষ্টা করে না। কোরআন ৪/৭৮

কাফেররা বলেঃ তাঁর প্রতি তাঁর পালনকর্তার পক্ষ থেকে কোন নিদর্শন কেন অবতীর্ণ হলো না? বলে দিন, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যে, মনোনিবেশ করে, তাকে নিজের দিকে পথপ্রদর্শন করেন। কোরআন ১৩/২৭

তাদের পূর্বে যারা ছিল, তারা চক্রান্ত করেছে। আর সকল চক্রান্ত তো আল্লাহর হাতেই আছে। তিনি জানেন প্রত্যেক ব্যক্তি যা কিছু করে। কাফেররা জেনে নেবে যে, পর জীবনের আবাসস্থল কাদের জন্য রয়েছে। কোরআন ১৩/৪২

আমি সব পয়গম্বরকেই তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করেই প্রেরণ করেছি, যাতে তাদেরকে পরিষ্কার বোঝাতে পারে। অতঃপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা, পথঃভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথ প্রদর্শন করেন। তিনি পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়। কোরআন ১৪/৪

বরং যালিমরা জ্ঞান ছাড়াই তাদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করে। সুতরাং যাকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেন কে তাকে হিদায়াত করবে? আর তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। কোরআন ৩০/২৯

জবাবঃ শয়তান মানুষকে পথভ্রষ্ট করে আর মানুষ নিজেও নিজের স্বাধীন ইচ্ছা অপব্যাবহার করে নিজেকে ধোঁকা দেয়। এখানে বৈপরীত্য নেই। এখন কথা হচ্ছে আল্লাহ কি পথভ্রষ্ট করেন? এর জবাব হচ্ছে আল্লাহ সব কিছুই সৃষ্টি করেছেন। ধরুন আপনি খারাপ পথে যাবেন এখন শয়তান কিন্তু আপনার সাথে আপনাকে ধোঁকা দিতে চাইবে আর আপনি যদি নিজেকে ও শয়তানকে পরাস্ত না করে খারাপ পথ বেছে নেন তাহলে আল্লাহ আপনাকে সেই পথে যাবার সুযোগ করে দিবেন। অর্থাৎ আল্লাহ আপনার কাজ কর্মে বাধা দিবেন না। তাই উক্ত আয়াত গুলো বুঝে পড়লেই ব্যাপার গুলো ধরে ফেলা যায়। আপনি যদি হেদায়েত না নিতে চান আল্লাহ আপনাকে কেন জবরদস্তি করে হেদায়েত দিতে যাবেন? এই যে আল্লাহ আপনাকে বিপথে যাবার এবং ভালো পথে যাবার সুযোগ দিয়েছেন এটাই হচ্ছে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা যে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা, পথঃভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথ প্রদর্শন করেন। এই বিষয় আমার বিস্তারিত লেখা আছে সেটা পড়ে নিন। এখানে বিস্তারিত লেখার সুযোগ নেই।

মুহাম্মাদ ভুল ত্রুটি করতে বা পথভ্রষ্ট হতে পারে?

৫৫/ অভিযোগঃ  পারে নাকি পারে না?

হ্যাঁঃ যাতে আল্লাহ আপনার অতীত ও ভবিষ্যত ত্রুটিসমূহ মার্জনা করে দেন এবং আপনার প্রতি তাঁর নেয়ামত পূর্ণ করেন ও আপনাকে সরল পথে পরিচালিত করেন। কোরআন ৪৮/২

জেনে রাখুন, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। ক্ষমাপ্রার্থনা করুন, আপনার ক্রটির জন্যে এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের জন্যে। আল্লাহ, তোমাদের গতিবিধি ও অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞাত। কোরআন ৪৭/১৯

বলুন, আমি পথভ্রষ্ট হলে নিজের ক্ষতির জন্যেই পথভ্রষ্ট হব; আর যদি আমি সৎপথ প্রাপ্ত হই, তবে তা এ জন্যে যে, আমার পালনকর্তা আমার প্রতি ওহী প্রেরণ করেন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, নিকটবর্তী। কোরআন ৩৪/৫০

নাঃ তোমাদের সঙ্গী (মুহাম্মাদ) পথভ্রষ্ট হননি এবং বিপথগামীও হননি। কোরআন ৫৩/২

জবাবঃ কুরআনে স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছেন নবী মোহাম্মদ (সা) পথভ্রষ্ট হননি এবং বিপথগামীও হননি। আর বাকি আয়াত গুলোতে বলা হয়েছে যদি হয় তাহলে নিজের জন্য হবে কিন্তু উনি তো এমন কিছুই করেন নাই তাই উনাকে পথভ্রষ্ট দাবি করা যাবে না। এখানেও বৈপরীত্য হচ্ছে না।

মুমিনরা কি কাফেরদের ক্ষমা করবে?

৫৬/ অভিযোগঃ  করবে নাকি করবে না?

হ্যাঁঃ মু’মিনদেরকে বলঃ তারা যেন ক্ষমা করে তাদেরকে যারা আল্লাহর দিনগুলির প্রত্যাশা করেনা, এটা এ জন্য যে আল্লাহ প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তার কৃতকর্মের জন্য প্রতিদান দিবেন। কোরআন ৪৫/১৪

নাঃ অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদের বন্দী কর এবং অবরোধ কর। আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎ পেতে বসে থাক। কিন্তু যদি তারা তওবা করে, নামায কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। কোরআন ৯/৫

জবাবঃ যখন ক্ষমা করা দরকার ছিল তখন ক্ষমা করতে বলা হয়েছে কিন্তু যখন মুশরিকরা চুক্তি ভঙ্গ করলো তখন  নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে।

আল্লাহ কি ফেরাউনকে বাঁচিয়ে দিয়েছে নাকি প্রতিশোধ নিয়েছে?

৫৭/ অভিযোগঃ  বাঁচিয়েছিলেন নাকি প্রতিশোধ নিয়েছিলেন?

বাঁচিয়ে দিয়েছিলঃ অতএব আজকের দিনে বাঁচিয়ে দিচ্ছি আমি তোমার দেহকে যাতে তোমার পশ্চাদবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পারে। আর নিঃসন্দেহে বহু লোক আমার মহাশক্তির প্রতি লক্ষ্য করে না। কোরআন ১০/৯২

প্রতিশোধ নিয়েছিলঃ তারা যখন আমাকে রাগান্বিত করল, তখন আমি তাদের উপর প্রতিশোধ নিলাম, অতঃপর সব্বাইকে ডুবিয়ে মারলাম। কোরআন ৪৩/৫৫

জবাবঃ ফেরাউনকে মৃত্যু দিয়ে প্রতিশোধ নেয়া হয়েছে কিন্তু তার দেহকে বাঁচিয়ে দেয়া হয়েছে যাতে অন্য মানুষরা দেখে শিক্ষা নিতে পারে। আমরা জানি ফেরাউনের লাশকে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে।

সোলাইমানকে মৃদু নাকি প্রবল বাতাস নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল?

৫৮/ অভিযোগঃ  কোন বাতাস?

মৃদুঃ তখন আমি বাতাসকে তার অনুগত করে দিলাম, যা তার হুকুমে মৃদুমন্দ গতিতে প্রবাহিত হত যেখানে সে পৌছাতে চাইত। কোরআন ৩৮/৩৬

প্রবলঃ এবং সুলায়মানের অধীন করে দিয়েছিলাম প্রবল বায়ুকে; তা তাঁর আদেশে প্রবাহিত হত ঐ দেশের দিকে, যেখানে আমি কল্যাণ দান করেছি। আমি সব বিষয়েই সম্যক অবগত রয়েছি। কোরআন ২১/৮১

জবাবঃ মৃদু-প্রবল দুই ধরণের বাতাসই নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দিয়েছিলেন। বাতাস কি কখনো মৃদু হয় না? বাতাস কি কখনো প্রবল হয় না? তাহলে?

মহাপ্লাবনে নূহ নবীর পুত্র বেঁচেছিল? 

৫৯/ অভিযোগঃ  কোনটা?

হ্যাঁঃ এবং স্মরণ করুন নূহকে; যখন তিনি এর পূর্বে আহবান করেছিলেন। তখন আমি তাঁর দোয়া কবুল করেছিলাম, অতঃপর তাঁকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে মহা সংকট থেকে উদ্ধার করেছিলাম। কোরআন ২১/৭৬ 

নাঃ সে বললঃ আমি এখনই কোন পাহাড়ে আশ্রয় গ্রহণ করব যা আমাকে পানি হতে রক্ষা করবে। সে (নূহ) বললঃ আজ আল্লাহর শাস্তি হতে কেহই রক্ষাকারী নেই, কিন্তু যার উপর তিনি দয়া করেন। ইতোমধ্যে তাদের উভয়ের মাঝে একটি তরঙ্গ অন্তরাল হয়ে পড়ল, অতঃপর সে নিমজ্জিতদের অন্তর্ভুক্ত হল। কোরআন ১১/৪২-৪৩

জবাবঃ আল্লাহর নুহ (আ) এর পরিবারকে বাঁচিয়েছিলেন কিন্তু এরমানে এই না যে তাঁর পুত্রকেও। আয়াতে স্পষ্ট করেই বলে দেয়া হয়েছে অতঃপর সে নিমজ্জিতদের অন্তর্ভুক্ত হল।

আল্লাহ কি কারো সাথে সরাসরি কথা বলে?

৬০/ অভিযোগঃ  বলেন নাকি বলেন না?

হ্যাঁঃ তুমি কি সে লোককে দেখনি যে এমন এক জনপদ দিয়ে যাচ্ছিল যার বাড়ীঘরগুলো ভেঙ্গে ছাদের উপর পড়ে ছিল? বলল, কেমন করে আল্লাহ মরনের পর একে জীবিত করবেন? অতঃপর আল্লাহ তাকে মৃত অবস্থায় রাখলেন একশ বছর। তারপর তাকে উঠালেন। বললেন, কত কাল এভাবে ছিলে? বলল আমি ছিলাম, একদিন কংবা একদিনের কিছু কম সময়। বললেন, তা নয়; বরং তুমি তো একশ বছর ছিলে। এবার চেয়ে দেখ নিজের খাবার ও পানীয়ের দিকে-সেগুলো পচে যায় নি এবং দেখ নিজের গাধাটির দিকে। আর আমি তোমাকে মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত বানাতে চেয়েছি। আর হাড়গুলোর দিকে চেয়ে দেখ যে, আমি এগুলোকে কেমন করে জুড়ে দেই এবং সেগুলোর উপর মাংসের আবরণ পরিয়ে দেই। অতঃপর যখন তার উপর এ অবস্থা প্রকাশিত হল, তখন বলে উঠল-আমি জানি, নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল। কোরআন ২/২৫৯

এছাড়া এমন রসূল পাঠিয়েছি যাদের ইতিবৃত্ত আমি আপনাকে শুনিয়েছি ইতিপূর্বে এবং এমন রসূল পাঠিয়েছি যাদের বৃত্তান্ত আপনাকে শোনাইনি। আর আল্লাহ মূসার সাথে কথোপকথন করেছেন সরাসরি। কোরআন ৪/১৬৪

নাঃ কোন মানুষের জন্য এমন হওয়ার নয় যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন। কিন্তু ওহীর মাধ্যমে অথবা পর্দার অন্তরাল থেকে অথবা তিনি কোন দূত প্রেরণ করবেন, অতঃপর আল্লাহ যা চান, সে তা তাঁর অনুমতিক্রমে পৌঁছে দেবে। নিশ্চয় তিনি সর্বোচ্চ প্রজ্ঞাময়। কোরআন ৪২/৫১

জবাবঃ আয়াতে তো স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে যে ওহীর মাধ্যমে অথবা পর্দার অন্তরাল থেকে অথবা তিনি কোন দূত প্রেরণ করবেন, কথা বলতে চাইলে। বৈপরীত্য কিভাবে হয়? স্পষ্ট আয়াত গুলো পড়েও কি বুঝতে পারছে না নাস্তিকরা? পাঠক আপনারা নিজেরাই উপরের আয়াত গুলো পড়ে দেখুন নিজেরাই বুঝতে পারবেন নাস্তিকদের প্রতারনা।

কোরান সুস্পষ্ট নাকি অস্পষ্ট কিতাব?

৬১/ অভিযোগঃ কোনটা?

স্পষ্টঃ ত্বা-সীন; এগুলো আল-কোরআনের আয়াত এবং আয়াত সুস্পষ্ট কিতাবের। কোরআন ২৭/১

আরবী ভাষায় এ কোরআন বক্রতামুক্ত, যাতে তারা সাবধান হয়ে চলে। কোরআন ৩৯/২৮

আলিফ, লা-ম, রা; এটি এমন এক কিতাব, যার আয়াত সমূহ সুস্পষ্ট অতঃপর সবিস্তারে বর্ণিত এক মহাজ্ঞানী, সর্বজ্ঞ সত্তার পক্ষ হতে। কোরআন ১১/১

অস্পষ্টঃ তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন। তাতে কিছু আয়াত রয়েছে সুস্পষ্ট, সেগুলোই কিতাবের আসল অংশ। আর অন্যগুলো রূপক। সুতরাং যাদের অন্তরে কুটিলতা রয়েছে, তারা অনুসরণ করে ফিৎনা বিস্তার এবং অপব্যাখ্যার উদ্দেশে তন্মধ্যেকার রূপকগুলোর। আর সেগুলোর ব্যাখ্যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। আর যারা জ্ঞানে সুগভীর, তারা বলেনঃ আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি। এই সবই আমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। আর বোধশক্তি সম্পন্নেরা ছাড়া অপর কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না। কোরআন ৩/৭

জবাবঃ উপরের আয়াতেই বলে দেয়া হয়েছে কুরআনের কিছু আয়াত স্পষ্ট আর কিছু আয়াত রয়েছে রুপক। তাহলে এখানে বৈপরীত্য হচ্ছে কিভাবে? যদি কুরআনে বলা হতো কোনো রুপক আয়াত নেই তাহলে বৈপরীত্য হতো। কুরআন তো স্পষ্ট করেই দিচ্ছে কিছু আয়াত রুপক হিসেবে আল্লাহ নাজিল করেছেন। ধরুন আপনার বন্ধুর কাছে আপনি চিঠি লিখলেন সেখানে আপনি বললেন আমার সব কথা স্পষ্ট কিন্তু কিছু কথা আবার রুপক যা তোমাকে বুঝে নিতে হবে তাহলে এখানে কি বৈপরীত্য কোনো কথা হলো? 

ইসলামে জোর জবরদস্তির স্থান নেই?

৬২/ অভিযোগঃ কোথাও হত্যা আর কোথাও বলা হচ্ছে জোর জবরদস্তি নেই।

নেইঃ দ্বীনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি বা বাধ্য-বাধকতা নেই। নিঃসন্দেহে হেদায়াত গোমরাহী থেকে পৃথক হয়ে গেছে। এখন যারা গোমরাহকারী ‘তাগুত’দেরকে মানবে না এবং আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপন করবে, সে ধারণ করে নিয়েছে সুদৃঢ় হাতল যা ভাংবার নয়। আর আল্লাহ সবই শুনেন এবং জানেন। কোরআন ২/২৫৬

তোমাদের ধর্ম তোমাদের জন্যে এবং আমার ধর্ম আমার জন্যে। কোরআন ১০৯/৬

আছেঃ অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদের বন্দী কর এবং অবরোধ কর। আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎ পেতে বসে থাক। কিন্তু যদি তারা তওবা করে, নামায কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। কোরআন ৯/৫

যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখেনা এবং কিয়ামাত দিনের প্রতিও না, আর ঐ বস্তুগুলিকে হারাম মনে করেনা যেগুলিকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল হারাম বলেছেন, আর সত্য ধর্ম (ইসলাম) গ্রহণ করেনা, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাক যে পর্যন্ত না তারা অধীনতা স্বীকার করে প্রজা রূপে নত হয়ে জিযিয়া দিতে স্বীকার করে। কোরআন ৯/২৯

জবাবঃ নিষিদ্ধমাস শেষ হলে হামলা করতে বলা হয়েছে এখান থেকেই স্পষ্ট যে কাফেরদের সাথে চুক্তি হয়েছিল যার কারণে তাদেরকে নিষিদ্ধমাস পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছিল। এরপরেও হামলা করতে বলা হয়েছে। সব অবস্থার জন্য নয়। কিছু আয়াত স্বাভাবিক অবস্থার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যেমন ধর্মে কোনো জবরদস্তি নেই, আবার কিছু আয়াত যুদ্ধের অবস্থার ক্ষেত্রে বর্ণিত হয়েছে যেমন মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার আয়াত গুলো। তাই এখানে বৈপরীত্যর কিছু নেই। প্রেক্ষাপট লুকিয়ে রেখে মিথ্যার আশ্রয়ে বলাই  যায় আয়াতে বৈপরীত্য আছে। কিন্তু সত্যিটা জেনে নিলেই স্পষ্ট হবে যে আয়াতে বৈপরীত্য নেই কোনো।

আল্লাহ কি সব জাতির জন্য বার্তাবাহক প্রেরণ করেছিল?

৬৩/ অভিযোগঃ  হ্যাঁ নাকি না?

হ্যাঁঃ আর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের একেকজন রসূল রয়েছে। যখন তাদের কাছে তাদের রসূল ন্যায়দন্ডসহ উপস্থিত হল, তখন আর তাদের উপর জুলুম হয় না। কোরআন ১০/৪৭

নাঃ আমি তাদেরকে কোন কিতাব দেইনি, যা তারা অধ্যয়ন করবে এবং আপনার পূর্বে তাদের কাছে কোন সতর্ককারী প্রেরণ করিনি। কোরআন ৩৪/৪৪

জবাবঃ এক আয়াতে বলা হচ্ছে প্রত্যেক সম্প্রদায়ের একেকজন রসূল রয়েছে অন্য আয়াতে বলা হচ্ছে নবীজি (সা) এর আগে কোনও সতর্ককারী প্রেরণ করিনি অর্থাৎ নবীজি (সা) হলেন সেই জাতির সতর্ককারী। এখানেও বৈপরীত্য হয় কিভাবে তাহলে? যদি নবীজি (সা)কে উনার জাতির কাছে না পাঠানো হতো তাহলে বৈপরীত্য হতো কিন্তু আয়াত তো স্পষ্ট বলছে যে আল্লাহ প্রেরণ করেছেন।

আল্লাহর নামে শপথ করা যাবে?

৬৪/ অভিযোগঃ  যাবে নাকি যাবে না?

হ্যাঁঃ কাফিরেরা দাবী করে যে, তারা কখনও পুনরুত্থিত হবেনা। বলঃ নিশ্চয়ই হবে, আমার রবের শপথ! তোমরা অবশ্যই পুনরুত্থিত হবে। অতঃপর তোমরা যা করতে তোমাদের সেই সম্বন্ধে অবশ্যই অবহিত করা হবে। এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ। কোরআন ৬৪/৭

আর তোমার কাছে সংবাদ জিজ্ঞাসা করে, এটা কি সত্য? বলে দাও, অবশ্যই আমার রবের শপথ এটা সত্য। আর তোমরা পরিশ্রান্ত করে দিতে পারবে না। কোরআন ১০/৫৩

নাঃ এবং মানবমন্ডলীর মধ্যে হিত সাধন, পরহেযগারী ও মীমাংসা করে দেয়ার ক্ষেত্রে তোমরা স্বীয় শপথসমূহের জন্য আল্লাহর নামকে লক্ষ্যবস্তু বানিও না। বস্তুতঃ আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা। কোরআন ২/২২৪

জবাবঃ আল্লাহ শপথ করা যাবে কিন্তু খারাপ ও অন্যায় কাজ অথবা হিত সাধন, পরহেযগারী ও মীমাংসা করে দেয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহর নামকে শুধুমাত্র লক্ষ্যবস্তু বানানো যাবে না। আল্লাহ শপথ করতে পারবেন না এই কথা আয়াতে বলা নেই বরং মানুষ যাতে নিজেদের সুবিধার জন্য অন্যায়ভাবে আল্লাহর শপথ না করে সেই কথা বুঝানো হয়েছে।

উপসংহারঃ

ইসলামবিরোধী বিশ্বাসীদের বমিউদ্রেককারী কথাবার্তা গুলো বিশ্লেষণ করলেই বুঝা যায় তারা কতটা দুর্বল। ইসলাম যা বলেনি সেটা ইসলামের দিকে চাপিয়ে দিয়ে তারা ইসলামকে খারাপ প্রমাণ করতে চাচ্ছে। ইসলামবিরোধী বিশ্বাসকে এভাবেই বুঝি মুক্তচিন্তা করে টিকিয়ে রাখছে তারা? কুরআন সত্য, ইসলাম সত্য, নবী মোহাম্মদ (সা) আসলেই শেষ নবী ছিলেন। কেউ যদি ইসলাম গ্রহণ না করে মারা যায় তাহলে আপনি নাস্তিক নিশ্চিত থাকুন আপনি জাহান্নামে যাবেন। তখন আপনার এই ইসলামবিরোধী বিশ্বাস আপনাকে রক্ষা করতে পারবে না। এ আয়াতটি আরেকবার পড়ুন।

আল কুরআন, সুরা নিসা ৪:৮২ আয়াতে বলা আছে, 

এরা কি লক্ষ্য করে না কোরআনের প্রতি? এই কোরআন যদি আল্লাহ ব্যতীত অপর কারও পক্ষ থেকে হত, তবে এতে অবশ্যই বহু বৈপরীত্য দেখতে পেত। 

কুরআন বিভিন্ন সময়ে অবতীর্ণ হয়েছে, কুরআন বৈপরীত্য থাকার কথা ছিল কিন্তু নেই। কি আশ্চর্য না? আপনার চোখের সামনেই প্রমাণ হাজির করা আছে কুরআনে বৈপরীত্য নেই। এরপরেও কি নিজেকে ইসলামবিরোধী বিশ্বাস থেকে নিজেকে মুক্ত করবেন না? আরে কত ধোঁকা খাবেন আপনি? যারা কুরআনে বৈপরীত্য বের করার চেষ্টা করেছে তারা কিভাবে মিথ্যাচারের আশ্রয় গ্রহণ করেছে আপনি কি দেখেন নি? পড়েন নি? একটু সচেতন হয়ে চিন্তা করুন প্লিজ। ইসলাম নিয়ে আপনি অযৌক্তিক হাঁসি ঠাট্টা করতে পারে কিন্তু নিরপেক্ষ হয়ে সততার সাথে একটু ভেবে দেখতে পারছেন না?

এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post