ইসলামে অপশনাল লো বা ঐচ্ছিক আইন

ইসলামে অপশনাল লো বা ঐচ্ছিক আইন

লিখেছেনঃ এম ডি আলী

ইসলাম বিদ্বেষীরা এই দিকটি মোটেও বুঝতে চায় না অথবা ইচ্ছা করেই এমন করে কারন ইসলাম এর আইন অনেক সুন্দর । আর নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসীরা এই ঐচ্ছিক আইন, আইনের মধ্যে থেকে নয় বরং মুসলিমদের উপর এমন এমন ভাবে চাপিয়ে দিতে চায় যা ঐচ্ছিক । কিছু কিছু আইন আছে যা ঐচ্ছিক যেমনঃ

বিয়ের ব্যাপারেই বলি, বয়স ! নবী মুহাম্মদ (সা) বিভিন্ন বয়সে বিয়ে করেছেন যেমন ৪০, ১৫, ২৭ , ৩৫, ৬ বছর বয়সী মহিলাদের বিয়ে করেছেন ইত্যাদি। এখন নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসীরা বলে সমস্ত মুসলিমরা কেন ৬ বছর বয়সেই বিয়ে করে না ? এর উত্তর হলঃ ইসলাম আপনাকে বাধ্য করছে না যে আপনাকে ৬ বছর বয়সেই বিয়ে করতেই হবে নাইলে বিশাল পাপ হবে । এটি একটি ঐচ্ছিক বিধান । এখানে ইসলাম আপনাকে স্বাধীনতা দিচ্ছে । আপনাকে অল্প বয়সে বিয়ে করতেই হবে এটা বাধ্যতামূলক না । সোজা হিসাব ।
আরও কিছু বিশুদ্ধ হাদিস থেকে আমরা জেনে নেই আসুনঃ

ihadis.com, সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৪৯২১, সহিহ হাদিসঃ ইবনে উমর (রা) বর্ণিত, নবী মুহাম্মদ (সা) কে গুইসাপ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি তা খাই না এবং তা হারামও বলি না ।

ihadis.com, সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৪৯২৫, সহিহ হাদিসঃ নবী মুহাম্মদ (সা) এর কাছে এক ব্যাক্তি গুইসাপের গোস্ত নিয়ে এলেন। নবী (সা) তা খাননি এবং হারামও করেননি ।

ihadis.com, সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৪৯২৬, সহিহ হাদিসঃ একদিন নবী মুহাম্মদ (সা) এর সাথে তাঁর কিছু সাহাবী ছিলেন । যাদের মধ্যে সাদ (রা) ও ছিলেন । তাঁদের সামনে গুইসাপের গোস্ত আনা হলে, নবী মুহাম্মদ (সা) এর এক স্ত্রী উচ্চস্বরে বললেন, এটা কিন্তু গুই সাপের গোস্ত ! তখন নবী মুহাম্মদ (সা) বললেনঃ তোমরা খেয়ে নেও, কারন এটা হালাল , তবে এটা আমার খাদ্য নয় ।

হাদিসের ফলাফল আমরা বুজলাম ইসলামের কিছু কিছু ঐচ্ছিক , নবী (সা) গুইসাপ নিজে খাননি কিন্তু হারামও করেননি , এখানে এটা স্পষ্ট যে , আপনার ভাল লাগলে আপনি খেতে পারেন, আর যদি ভাল না লাগে আপনি খেতে পারবেন না , এখন কোন নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসী যদি বলে নবী যেহেতু গুইসাপ নিজে খাননি তাহলে সাহাবীরা কেন খেলেন ? এই প্রশ্নই মুলত ভুল ।

আবার বাংলাদেশের মুসলিমরা কেউই গুইসাপ খায় না , আমিও খাই না , আমার ভাল লাগে না এর মানে কি এই প্রমান হয় যে আমরা নবী মুহাম্মদ (সা) মানি না ? উত্তর হচ্ছেঃ প্রশ্নটি ভুল । কারন যেখানে ইসলাম আপনাকে ঐচ্ছিক স্বাধীনতা দিয়েছে সেখানে আপনি প্রশ্ন চালিয়ে দিতে পারেন না । এটা অন্যায় হবে বরং ইসলামের আইনের বিরুদ্ধে চলে গেল !
অবস্থার প্রেক্ষাপট/পরিবেশের ভিন্নতা/প্রয়োগ আইন

এই বিষয়টি নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসীরা সব থেকে বেশি ভুল করে । কারন যুদ্ধের আইন এরা সমাজের মধ্যে ফিট করে বলে "ইসলাম নাকি অশান্তি চায়" - এটি ভুল আর ভিত্তিহীন কথা । আমরা সবাই জানি যে যুদ্ধ অবস্থায় শুদু যুদ্ধের নীতিমালা প্রয়োগ হবে , সমাজের মধ্যে শান্তিতে যারা থাকতে চায় তাঁদের সাথে তো যুদ্ধ নীতি প্রয়োগ হবে না , তাই না !

= ইসলামে শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করতে বলে হয়েছেঃ যেমনঃ * সুরা বাকারা ২:২৪৪ = তোমরা আল্লাহ্‌র রাস্তায় লড়াই করো এবং জেনে রাখো নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সর্বস্রোতা । সর্বজ্ঞ ।

= ইসলামে কেন শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করতে বলা হয়েছেঃ যেমনঃ * সুরা বাকারা ২:১৯০ = তোমরা আল্লাহ্‌র রাস্তায় তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করো, যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং সীমালঙ্ঘন করো না । নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করে না।

এখন উপরের যুদ্ধের আয়াত যদি আপনি সমাজের শান্তি আইনে ফেলে ইসলামকে ভুল প্রমান করতে চান এতে তো অন্যায় হবে কারন ইসলাম আপনাকে কখনো বলে না অন্যায় ভাবে কাউকে হত্যা করতে। যেমনঃ সুরা মায়দাহ ৫:৩২ = কোন নিরপরাধ মানুষকে যে অন্যায়ভাবে হত্যা করলো সে যেন পুরা মানবজাতিকে হত্যা করলো এবং যে ব্যাক্তি কোন মানুষের প্রান রক্ষা করলো সে যেন পুরা মানবজাতির প্রান রক্ষা করলো ।

- এই আয়াত থেকে প্রমান হয় অন্যায় ভাবে কাউকে হত্যা করা ইসলামে হারাম । কিন্তু এই আয়াত নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসীরা কখনো বুজবে না , অবাক লাগে এদের জন্য ! এরা জেনে বুঝেই কি তাহলে ইসলাম সম্পর্কে সরলমনা মুসলিম ভাইদের ইসলাম সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা দেয় ! সাবধান হে ভাই, ইসলাম একটি সত্য জীবন বিধান , সুন্দর আদর্শ রয়েছে এতে ।

দাসদাসীঃ

একই লেভেলের গোঁজামিল মার্কা ভুল , অন্ধ বিশ্বাসী নাস্তিকরা এই আইন নিয়েও করে । সেটা আবার কেমন ? সেটা হল, এই সময় দাসদাসী আইন অফ । কারো বাংলাদেশ, অ্যামেরিকা , থাইল্যান্ড , ইত্যাদি দেশে সরাসরি এই দাসদাসী প্রথা নাই , কিন্তু যেই দেশে এই প্রথা নাই সেই দেশে কেন এই দাসদাসী আইন থাকবে ? তাই না ! ।

ইসলাম শুদুমাত্র যুদ্ধ অবস্থায় এই আইন অন করে দেয় , পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে , বুঝে শুনে তারপরে , এই নিয়ে সামনে বিস্তারিত বিশাল একটি লেখা আসছে আমার , ইনশা আল্লাহ্‌ , ইসলাম যে একমাত্র মানবতার সমাধান সেটা এই আইনেই আমি প্রমান করে দিব।

এই যুগে যেহেতু এই দাসদাসী প্রথা নাই , কিন্তু নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসীদের একটি বিশাল অভিযোগ এই প্রথা নিয়ে , অথচ ইসলাম কি বলে এই বিষয় সেটা না বুঝেই, সেটা না জেনেই, সেটা না ভেবেই, শুদু এই প্রথা খারাপ, খারাপ ,খারাপ এই তাহিরি মার্কা জিকির করে ! হাস্যকর লাগে এদের কথা সমাচার ।

শান্তির পরশঃ

ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহ) বলেন-
"কারো যদি চিন্তাধারা সঠিক হয়; তাহলে তার দূরদৃষ্টি খুলে যাবে। এটি অন্তরের আলোকবর্তিকা। এর দ্বারা সে অনুধাবন করতে পারবে জান্নাত-জাহান্নাম, আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের জন্য কী তৈরি করে রেখেছেন এবং তার অবাধ্য বান্দাদের জন্য কি শাস্তির ব্যাবস্থা রেখেছেন? সে অনুধাবন করবে- মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে কবর থেকে বের হচ্ছে, ফেরেশতাগণ তাদেরকে চারদিকে ঘিরে রেখেছে। মহান আল্লাহ তায়ালা এসে উপস্থিত। তার জন্য সিংহাসন তৈরি করে রাখা হয়েছে। সবার হাতে আমলনামা দেয়া হবে। সাক্ষ্য-প্রমাণ হাজির, মিযান স্থাপন করা হয়েছে। বাদী-বিবাদী উপস্থিত। পাওনাদার উপস্থিত তার দাবি নিয়ে। পিপাসার্ত হয়ে সবাই দিশেহারা, হাউজে কাওছারে উপস্থিত। পুলসিরাত স্থাপন করা হয়েছে। কেউ কেউ তো অন্ধকারে হাবুডুবু খাচ্ছে। কত লোক পুলসিরাত থেকে জাহান্নামে ছিটকে পড়ছে। সে দেখতে পাবে-ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার চিত্র আর চিরস্থায়ী পরকালের অবস্থা।"[মাদারেজুস সালেকীন: ১/১২৩ ]

সুতরাং আজকের এই লেখা থেকে আমরা শিখলামঃ

১/ ইসলামের কিছু আইন আছে যা হল ঐচ্ছিক ।
২/ বিয়ের ক্ষেত্রে তথা কোন বয়সে বিয়ে - এটা ঐচ্ছিক ।
৩/ যুদ্ধ অবস্থায় , যুদ্ধের আইন প্রয়োগ হবে ।
৪/ শান্তির অবস্থার যুদ্ধের আইন ইসলাম প্রয়োগ করতে বলে না । মাইন্ড ইট ।
৫/ দাসদাসী প্রথা যেহেতু এখন নাই , সেহেতু এই আইন নিয়ে অন্ধ বিশ্বাসী নাস্তিকদের ত্যানা প্যাঁচানোটা খুবই অযৌক্তিক ।
৬/ যে আইন ঐচ্ছিক সেটা , কারো উপর চাপিয়ে দেয়া ইসলাম আইনের বিরুদ্ধে চলে গেল ।


এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post