স্রস্টাকে অস্বীকার করার সর্বশেষ যুক্তির তদন্ত
লিখেছেনঃ এমডি আলী
নাস্তিকরা নিজেদেরকে যুক্তিবাদী দাবি করলেও নাস্তিক্যবিরোধী যুক্তি অকাট্য হলেও তারা সেটা মেনে নিতে চায় না। অন্ধবিশ্বাস ত্যাগ সবাই করতে পারে না। এর জন্য তীব্র সাহস লাগে, সততা লাগে। সত্যকে গ্রহণ করে নেবার তীব্র ইচ্ছাশক্তি লাগে। কিন্তু নাস্তিকদের মধ্যে এসব গুণাবলি একদম নাথিং বললেই চলে। বিভিন্ন টাইপের নাস্তিকদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করার অভিজ্ঞতা আমার প্রচুর হয়েছে। এখনো মাঝে মাঝে সময় পেলে তাদের ভুল গুলো ধরিয়ে দেবার চেষ্টা করে থাকি। কিন্তু দুই একজন বাদে বেশির ভাগই নিজের ভুল স্বীকার করে নিতে প্রস্তুত থাকে না।
যুক্তিতর্কের একেবারে শেষ প্রান্তে এসে নাস্তিকরা বলেই ফেলে স্রস্টা যদি থাকে সে দুনিয়াতে আসে না কেন? মানুষকে দেখাক যে উনিই সেই একমাত্র স্রস্টা? উনিই একমাত্র আল্লাহ? তাহলেই তো হয়ে যায়। যেহেতু উনি আসেন না, সেহেতু উনি আসলে নাই। নাই দেখেই উনি আমাদের সামনে নেই। যদি থাকতো তাহলে স্রস্টা একদিনের জন্য হলেও আমাদের সামনে আসতো।
নাস্তিকদের কথায় অনেক ভুল ও সমস্যা রয়েছে।কারণ তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই স্রস্টাকে আমাদের সামনে আসতে হবে তাহলেও নাস্তিকরা আসলে স্রষ্টাকে মেনে নেবে না। কারণ স্রষ্টার অস্তিত্বের অকাট্য যুক্তি প্রমাণ নাস্তিকদের সামনে সুন্দর করে ব্যাখ্যা করলেও যেখানে নাস্তিকরা সত্যটা গ্রহণ করতে পারে না সেখানে স্রস্টা সামনে আসলেই যে তারা মেনে নিবে এটার নিশ্চয়তা নেই। যুক্তিবিদ্যার দৃষ্টিতে নাস্তিকদের কথাবার্তায় লজিক্যাল ফ্যালাসিতে ভরপুর থাকে। নাস্তিকরা অনেক অপযুক্তি/কুযুক্তি দিয়ে থাকে। যেমন স্রস্টা আসেনি তাই উনি আসলে নেই এমন কথা আসলে STRAW MAN FALLACY.এই কুযুক্তিতে অন্য কারো কথাকে নিজের মতো করে ঘুরিয়ে-সাজিয়ে অথবা বিকৃত করে বলা হয় যেন আক্রমণ করা সহজ হয়। নাস্তিকরা স্রষ্টার অস্তিত্বের যুক্তি প্রমাণকে ভুল প্রমাণ করতে না পেরে ঘুরিয়ে সাজিয়ে বিকৃত করে বলে দিয়েছে স্রস্টা আমাদের সামনে আসেনি তাই উনি নেই। একইসাথে RED HERRING এর আশ্রয় গ্রহণ করা হয়েছে অর্থাৎ প্রসঙ্গ ঘোরানোর লজিকাল ফ্যালাসি। স্রস্টা আমদের সামনে আসা অথবা না আসার সাথে উনার থাকা অথবা না থাকার কোনো সম্পর্ক নেই। “স্রস্টার অস্তিত্ব নাই” দাবিটিকে সঠিক প্রমাণ করতে না পেরে স্রস্টা আমাদের সামনে কেন আসেন না বলে প্রসঙ্গ ঘোরানোর পায়তারা করা হয়েছে যা আসলে কুযুক্তির আশ্রয় গ্রহণ ছাড়া কিছু না।
ধরুন আপনি কারো সাথে এই নিয়ে কথা বলছেন যে সেখানে পাখি আছে নাকি নেই। আপনি অনেক যুক্তি প্রমাণ দিয়ে বুঝালেন যে সেখানে পাখি আছে কিন্তু আপনার প্রতিপক্ষ আপনার যুক্তি প্রমাণের কাছে টিকতে না পেরে আপনার প্রতিপক্ষ আপনার যুক্তি প্রমাণ নিয়ে কথা না বলে কথা ঘুরিয়ে বলে দিল যেহেতু পাখিটি আমাদের কাছে উড়ে আসতে পারছে না সেহেতু পাখি বলেই আসলে কিছু নেই। আচ্ছা বলুন তো এই কথাটি কি ঠিক নাকি ভুল? এই উদাহরণ বুঝে থাকলে এটা আপনি বুঝে যাবেন যে নাস্তিকরা এভাবেই অপযুক্তির আশ্রয়ে কথাবার্তা বলে থাকে।
নাস্তিকরা স্রস্টাকে যে দুনিয়াতে আসতে বললেন প্রশ্ন হচ্ছে স্রষ্টার দুনিয়াতে আসার দরকার কি? যেখানে উনি মানুষকে বুদ্ধি দিয়েছেন উনার পরিচয় জানার জন্য? “স্রস্টা দুনিয়াতে এসে বললেই তো নাস্তিকরা মেনে নেবে যে উনিই আসলে স্রস্টা” নাস্তিকদের এমন কথা আসলে ডাহামিথ্যে। কেন? হিন্দুরা যদি ছবি দেখিয়ে নাস্তিকদেরকে বলে এই যে ৩৩ কোটি ভগবানের ছবি। এইবার নাস্তিকরা সব হিন্দু হয়ে যাও, তাহলে কি নাস্তিকরা নিজেদের নাস্তিক্যধর্ম ত্যাগ করে হিন্দুধর্ম গ্রহণ করবে? হিন্দুধর্মের দৃষ্টিতে তো ঈশ্বরের হাজার হাজার ছবি আছে, মূর্তি আছে সেসবকে নাস্তিকরা কেন মানে না? একইভাবে খ্রিস্টানধর্মে তো দাবি করা হয় ঈশ্বর নাকি মানুষের আকৃতিতে দুনিয়াতে এসেছিলেন তাহলে খ্রিস্টানধর্মের দৃষ্টিতে জিশুকে ঈশ্বর হিসেবে কেন মেনে নিচ্ছে না নাস্তিকরা? খ্রিস্টানরা তো বলেই,ঈশ্বর নাকি দুনিয়াতে মানুষের আকৃতি নিয়ে এসেছিলেন যার ছবিও খ্রিস্টানরা দেখায়। আর নাস্তিকদের দাবি তো এটাই যে ঈশ্বরকে দেখাও, বা উনাকে আমাদের সামনে নিয়ে আসুন অথবা উনি কেন আমাদের সামনে আসেন না,আসলেই আমরা মেনে নিব তাহলে এই দাবি গুলো তো হিন্দুধর্ম, খ্রিস্টানধর্ম পূরণ করে দিচ্ছে ঈশ্বরের ছবি,মূর্তি দেখিয়ে তাই না? তাহলে নাস্তিকরা তখন মানে না কেন?
আমরা মুসলিমরা মানি স্রস্টা এতো দুর্বল হয়ে যাননি যে উনাকে দুনিয়াতে এসে নিজেকে প্রমাণ করে দেখাতে হবে। স্রস্টার মর্যাদা অনেক উঁচু। উনি অনেক সম্মানের। উনি মানুষ হওয়ার দুর্বলতা থেকে মুক্ত। স্রষ্টার শুরু নেই, শেষ নেই। স্রস্টা ধ্বংস হওয়া থেকে মুক্ত। উনার ক্ষুধা লাগা,জৈবিক চাহিদা থাকা ইত্যাদি মনুষ্য দুর্বলতা থেকে সৃষ্টিকর্তা মুক্ত। এই কারণেই তো উনি সর্বশক্তিমান। উনি কেন দুনিয়াতে সরাসরি এসে মানুষকে নিজের অস্তিত্বের পরিচয় দিতে যাবেন? উনি তো মানুষকে মনুষ্য বিবেক বুদ্ধি দিয়েছেনই, চিন্তা করার শক্তি দিয়েছেনই এছাড়াও পুরো সৃষ্টিজগত দেখেও উনাকে সহজেই চিনে নেয়া যায় তাই স্রষ্টাকে দুনিয়াতে আসতে হবে এরকম কথা ফালতু ও ভিত্তিহীন ছাড়া আর কিছু নয়। নাস্তিকরা আসলে ভণ্ড। যখন দেখে যুক্তিপ্রমাণ দিয়ে কুলাতে পারবে না তখন নানান ছলচাতুরী করে লজিক্যাল ফ্যালাসির আশ্রয় গ্রহণ করে।
বুখারী শরিফ থেকে নবীজি মোহাম্মদ (সা) আয়িশা (রা)কে ছয় বছরে বিয়ে করেন এবং নয় বছরে সংসার শুরু করেন সহিহ হাদিসটি নাস্তিকরা ঠিকই মানলেও একই বুখারী শরিফ থেকে নবীজি (সা) চাঁদকে দ্বিখণ্ডিত করেছিলেন বিশুদ্ধ হাদিসটি, ঘটনাটি, ইতিহাসটি নাস্তিকরা মানে না। আল্লাহ নিজেই কুরআনে সেটা স্পষ্ট করে বলেছেন আল্লাহ যদি ফেরেশতা অবতীর্ণ করতেন অথবা এমন কিছু পাঠাতেন যা অলৌকিক কিছু তাহলেও আল্লাহকে তারা সত্য বলে বিশ্বাস করতো না। আমরা বিশুদ্ধ ইতিহাস থেকে জানি যে নবী মোহাম্মদ (সা) আল্লাহর হুকুমে চাঁদকে দ্বিখণ্ডিত করেছিলেন। এটা কি তারা মানে? তাহলে?
আল কুরআন,২৫ নং সুরা ফুরকানের ২১ আয়াতে বলা আছে,
যারা আমার সাক্ষাৎ আশা করে না, তারা বলে, আমাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ করা হল না কেন? অথবা আমরা আমাদের পালনকর্তাকে দেখি না কেন? তারা নিজেদের অন্তরে অহংকার পোষণ করে এবং গুরুতর অবাধ্যতায় মেতে উঠেছে।
আল কুরআন,৪১ নং সুরা হা-মীম ১৪ আয়াতে বলা হয়েছে,
তাদের কাছে যখন তাদের অগ্রে ও পশ্চাতে (একের পর এক) রসূলগণ এসেছিল (আর বলেছিল)- তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ‘ইবাদাত করো না। (জবাবে) তারা বলেছিল- আমাদের প্রতিপালক ইচ্ছে করলে তো অবশ্যই ফেরেশতা নাযিল করতেন। কাজেই তোমাদেরকে যা দিয়ে পাঠানো হয়েছে আমরা তা অমান্য করছি।
আল কুরআন, ৬ নং সুরা আনআম ৭ থেকে ৯ আয়াতে বলা হয়েছে,
যদি আমি কাগজে লিখিত কোন বিষয় তাদের প্রতি নাযিল করতাম, অতঃপর তারা তা সহস্তে স্পর্শ করত, তবুও অবিশ্বাসীরা একথাই বলত যে, এটা প্রকাশ্য জাদু বৈ কিছু নয়। তারা আরও বলে যে, তাঁর কাছে কোন ফেরেশতা কেন প্রেরণ করা হল না ? যদি আমি কোন ফেরেশতা প্রেরণ করতাম, তবে গোটা ব্যাপারটাই শেষ হয়ে যেত। অতঃপর তাদেরকে সামান্যও অবকাশ দেওয়া হতনা। যদি আমি কোন ফেরেশতাকে রসূল করে পাঠাতাম, তবে সে মানুষের আকারেই হত। এতেও ঐ সন্দেহই করত, যা এখন করছে।
আল কুরআন, ৬ নং সুরা আনআম ১১১ আয়াতে বলা হয়েছে,
আমি যদি তাদের কাছে ফেরেশতাদেরকে অবতারণ করতাম এবং তাদের সাথে মৃতরা কথাবার্তা বলত এবং আমি সব বস্তুকে তাদের সামনে জীবিত করে দিতাম, তথাপি তারা কখনও বিশ্বাস স্থাপনকারী নয়; কিন্তু যদি আল্লাহ চান। কিন্তু তাদের অধিকাংশই মুর্খ।
জোকার নাস্তিকরা আরও বলে মুমিনরা দুয়া করে স্রস্টাকে আকাশ থেকে নামিয়ে আনুক। স্রস্টা নাকি মুমিনদের দুয়া শুনেন। আল্লাহ মুমিনদের সব দুয়াই মুমিনদের ইচ্ছা অনুযায়ী কবুল করে থাকেন এই কথা ইসলাম কখনো বলে নাই।
আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ৭১৫, সহিহ হাদিসঃ
আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাঃ) বলেনঃ যে কোন মুসলমান ব্যক্তি পাপাচার বা আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্ন করার দোয়া ব্যতীত যে কোন দোয়া করলে আল্লাহ তাকে তিনটি জিনিসের যে কোন একটি দান করেনঃ (১) হয় দ্রুত তার দোয়া কবুল করেন অথবা (২) তা তার পরকালের জন্য সঞ্চিত রাখেন অথবা (৩) অনুরূপ কোন ক্ষতি তার থেকে অপসারিত করেন। এক ব্যক্তি বললো, তাহলে সে তো অধিক পরিমাণে দোয়া করতে পারে। তিনি বলেনঃ আল্লাহ তার চেয়েও অধিক কবুলকারী।-ihadis.com
তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম যে মুমিনরা দুয়া করেছে আল্লাহ যাতে দুনিয়াতে আসেন কিন্তু দোয়া করার পরেও আল্লাহ আসেন নাই এর থেকে কিভাবে প্রমাণ হয় যে আল্লাহ নাই? তাছাড়া আমরা আগেই জেনেছি যে “আসা” অথবা “না আসা”র সাথে “থাকা” অথবা “না থাকার” সম্পর্ক নেই। কেউ যদি না আসে তারমানে তার অস্তিত্ব নেই কথাটি কেন ও কিভাবে সঠিক হয়? আল্লাহ তো জানিয়েই দিয়েছেন আমরা দুনিয়াতে আল্লাহকে দেখতে পারবো না। জান্নাতীরা জান্নাতে আল্লাহকে দেখতে পারবে। কারণ দুনিয়াতে আল্লাহকে দেখতে হলে যে যে নিয়ম লাগে তা দুনিয়াতে আল্লাহ দেন নাই কিন্তু জান্নাতে সব আল্লাহ দিয়ে রেখেছেন তাই সেখানে আল্লাহর প্রিয় বান্দারা উনাকে সহজেই দেখতে পারবে।
সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ১৩২০, সহিহ হাদিসঃ
জারীর ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, একদিন আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে বসেছিলাম। এক সময় তিনি পূর্ণিমার চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ অচিরেই (জান্নাতে) তো তোমরা তোমাদের প্রভু আল্লাহ তা’আলাকে এমন স্পষ্টভাবে দেখতে পারবে যেন এ চাঁদকে অবাধে দেখতে পাচ্ছ। (সুতরাং যদি এরূপ চাও) তাহলে সাধ্যমত সূর্যোদয়ের পূর্বের সলাত এবং সূর্যাস্তের পূর্বের সলাত উত্তম সময়ে আদায়ের মাধ্যমে আয়ত্তে রাখ। এ কথা দ্বারা তিনি ফজর ও আসরের সলাত বুঝালেন। অতঃপর জারীর ইবনু ‘আবদুল্লাহ এ আয়াতটি পাঠ করলেন, (আরবী) “তুমি তোমার প্রভুর পবিত্রতা বর্ণনা ও প্রশংসা কর সূর্যোদয়ের পূর্বে এবং সূর্যাস্তের পূর্বে - (সূরাহ্ ত্ব-হা ২০:১৩০) ”।-ihadis.com
সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৫৫৪, সহিহ হাদিসঃ
জারীর ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, একদা আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি রাতে (পূর্ণিমার) চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ ঐ চাঁদকে তোমরা যেমন দেখছ, ঠিক তেমনি অচিরেই তোমাদের প্রতিপালককে তোমরা দেখতে পাবে। তাঁকে দেখতে তোমরা কোন ভীড়ের সম্মুখীন হবে না। কাজেই সূর্য উদয়ের এবং অস্ত যাওয়ার পূর্বের সালাত (শয়তানের প্রভাবমুক্ত হয়ে) আদায় করতে পারলে তোমরা তাই করবে। অতঃপর তিনি নিম্নোক্ত আয়াত পাঠ করলেন, “কাজেই তোমার প্রতিপালকের প্রশংসার তাসবীহ্ পাঠ কর সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে”- (সুরা ক্বাফ ৫০/৩৯)। ইসমাঈল (রহঃ) বলেন, এর অর্থ হল- এমনভাবে আদায় করার চেষ্টা করবে যেন কখনো ছুটে না যায়।-ihadis.com
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ১৭৭, সহিহ হাদিসঃ
জারীর বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃআমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট বসা ছিলাম। তিনি পূর্ণিমার রাতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলেন, অচিরেই তোমরা তোমাদের প্রভুকে দেখতে পাবে, যেমন তোমরা এই চাঁদ দেখতে পাচ্ছো। তাঁকে দেখতে তোমাদের কোন অসুবিধা হবে না। ফাজ্র ও আসরের সলাতে তোমরা পরাভূত না হয়ে সামর্থ্যবান হলে তাই করো (সলাত কাযা করো না)। অতঃপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেন (অনুবাদ): “এবং তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে”-(সূরাহ কাফ ৫০ : ৩৯)।-ihadis.com
আমাদের সত্যকারী সৃষ্টিকর্তা আল্লাহই। উনি আমাদের স্রস্টা। মহাবিশ্বকে আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর অস্তিত্ব অবশ্যই আছে। যুক্তিপ্রমাণ এবং আরও অসংখ্য অকাট্য প্রমাণ দ্বারা প্রমাণিত যে আল্লাহর অস্তিত্ব সত্যিই অপরিহার্য সত্য। আল্লাহ সৃষ্টি না করলে সৃষ্টিজগত অস্তিত্বে আসতে পারতো না। আমাদেরকে বুঝতে হবে, অস্তিত্ব আছে প্রমাণ করা আর অস্তিত্বকে সামনে চাক্ষুষ উপস্থিত করা দুটো এক কথা নয়। আমি সহজে বুঝিয়ে দিচ্ছি ব্যাপারটা তাহলে আপনিও আমার সাথে একমত হতে পারবেন। আপনি মানুষ। আপনার অস্তিত্ব আছে। আপনি লেখাটি পড়ছেন। আপনি এখন উপস্থিত আছেন। আপনি যে আমার এই লেখাটি নিয়ে চিন্তা করছেন, ভাবছেন যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছেন। আপনার এসব কর্মের সার্বিক আচরণ যৌক্তিকভাবে প্রমাণ করছে যে আপনার মাথায় বুদ্ধি আছে,শক্তি আছে,চিন্তা করার ক্ষমতা আছে। যদিও আপনার বুদ্ধি, চেতনা, শক্তি এসব প্রমাণ করা যায় কিন্তু এসবকে কি আপনি আমাকে হাতে ধরে চাক্ষুষ দেখাতে পারবেন? অবশ্যই না। তাহলে আমরা বুঝতে পারলাম অস্তিত্বকে সামনে নিয়ে আসতে না পারা “অস্তিত্ব নেই”কে প্রমাণ করতে পারে না।
নাস্তিক্যবিরোধী যুক্তি যতোই অকাট্য আর শক্তিশালী হোক না কেন সেটা নাস্তিকরা বিশ্বাস করতে চায় না। তাহলে নাস্তিকরা যদি উপরে বর্ণিত যৌক্তিক আলোচনার সাথে একমত না হয়ে থাকে তাহলে নাস্তিকদের কাছে কিছু একই ধরণের যৌক্তিক প্রস্তাব পেশ করা যায়। নাস্তিকদের কথা থেকে জানা যায় “যার অস্তিত্ব আছে তাকে সব সময় সরাসরি উপস্থিত করা সম্ভব না হলে তার অস্তিত্ব বাতিল বলে প্রমাণিত”। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেয়া হয় তাহলেও নাস্তিকদের জন্য আরও যে যে মারাত্মক সমস্যা তৈরি হবে সেটা হচ্ছেঃ
১ঃ
নাস্তিকরা যদি এটাই মনে করে “স্রস্টাকে দুনিয়াতে আসতে হবে যেহেতু তিনি আসে নাই তাই স্রষ্টার অস্তিত্ব নাই” তাহলে সমস্ত আস্তিকদেরকে রকেট ভাড়া করে পুরো মহাবিশ্ব ভ্রমণ করিয়ে নাস্তিকদেরকে চাক্ষুষ প্রমাণ করে দেখানো লাগবে মহাবিশ্ব পুরো খালি, মহাবিশ্বের বাইরেও পুরো খালি তাই স্রস্টাকে দেখা যায় নাই। যখন নাস্তিকরা এটা করে দেখাতে পারবে তখনই প্রমাণ হবে যে নাস্তিকদের কথা ঠিক তার আগে নাস্তিকদের কথা সঠিক মনে করা নাস্তিকদের যুক্তিতেই সঠিক হবে না।
২ঃ
"অস্তিত্ব আছে" এবং "সরাসরি উপস্থিত করা" দুটো বিষয় সব ক্ষেত্রে এক নয়। এ কথা যদি নাস্তিকরা না মানে তাহলে ডারউইনবাদের সিস্টেম আমাদেরকে সরাসরি দেখাতে হবে। মানে একটা বান্দর থেইকা মানুষে রুপান্তর হওয়া সরাসরি বাস্তবে দেখাতে হবে। এ ক্ষেত্রে চিড়িয়াখানায় যাওয়ার ভাড়া আমি দিয়ে দিবো কিন্তু আগে আমাকে নিশ্চিত হয়ে জানাতে হবে একটা বান্দর ঠিক কয়দিন পরেই মানুষ হয়ে যাবে। যদি না পারে তাহলে নাস্তিকদের যুক্তি অনুপাতেই তা মিথ্যা প্রমাণিত হবে এবং ডারউইনবাদ যে মিথ্যা বিশ্বাস সেটা স্পষ্ট হয়ে যাবে।
৩ঃ
নাস্তিকদের বুদ্ধি আছে? চিন্তাশক্তি আছে? দেহে এনার্জি আছে? যদি থাকে তাহলে সেসবের অস্তিত্বের শুধু প্রমাণ দিলেই হবে না বরং এসবের অস্তিত্বের আকার,রুপ বাস্তবে উপস্থিত করে দেখাতে হবে। আমরা হাতে কাগজ অথবা বালু যেভাবে ধরে দেখি সেভাবেই নাস্তিকদের বুদ্ধি,বিবর্তিত বিবেক, চিন্তাশক্তি এসব হাতে ধরে দেখাতে হবে। যদি না পারে তাহলে নাস্তিকদের যুক্তি ও দাবি অনুপাতেই তারা বুদ্ধিহীন, চেতনাহীন এবং এনার্জিহীন প্রমাণ হবে। কারণ তারা অস্তিত্বকে সামনে নিয়ে এসে আমাদেরকে দেখাতে পারছে না।
৪ঃ
সময়ের অস্তিত্বকে নাস্তিকরা স্বীকার করে? যদি উত্তর "হ্যাঁ" হয় তাহলে সময়ের অস্তিত্বর প্রমাণ পেশ করার সাথে সাথেই সময়কে সরাসরি বাস্তবিক উপস্থিত করতে হবে। আমরা বই যেভাবে হাতে নিতে পারি সেভাবে সময়কে হাতে ধরিয়ে নাস্তিকদেরকে দেখাতে হবে। নাহলে নাস্তিকদের কথা থেকেই নাস্তিকদেরকে মেনে নিতে হবে সময় বলে আসলে কিছু নেই।
আপনি যদি একটু গভীরভাবে নাস্তিকদের কথাবার্তা পর্যবেক্ষণ করেন তাহলে বুঝতে পারবেন “আল্লাহকে দেখি না তাই বিশ্বাস করি না” কথাতেই গিয়েই তারা আটকিয়ে থাকবে। অনেক নাস্তিক একই কথা এখন উল্টোভাবে বলে যাতে মানুষ নাস্তিকদের নিয়ে হাসাহাসি করতে না পারে। যেমন অনেক নাস্তিক বলে থাকে “স্রস্টার প্রমাণ আমাদের সামনে হাজির করতে হবে” “আমরা যেহেতু মহাবিশ্বের বাইরে দেখতে পারিনি তাই বলা যাবে না স্রস্টা আছেন” খেয়াল করেছেন কথা গুলো? ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেই একই কথা “স্রস্টাকে দেখি না তাই মানি না” কিন্তু এই কথা যে চরম অযৌক্তিক আর নিচুমানের সেটা আমরা ভালো করেই বুঝি।
এই পৃথিবীতে,মানুষ তাৎক্ষণিকভাবে এবং সরাসরি খুব সামান্য এবং খুব কম জিনিসই দেখতে পারে। মানুষ অদৃশ্য বা অদূরদর্শী বলতেই হয়। সময় এবং স্থানের অগণিত উপাদান গুলির মধ্যে অবস্থানের প্রভাবের কারণে মানুষ অনেক কিছুই দেখতে পারেন না,এমনকি তাকে আরও দেখতে অক্ষম করে তোলে। ঈগল পাখির দৃষ্টিশক্তি আর মানুষের দৃষ্টিশক্তি এক নয়।বিড়াল, নেকড়ে, শিয়াল, ইঁদুর, বাদুড় এবং পেঁচার মতো প্রাণীরা প্রায় একচেটিয়াভাবে অন্ধকারে সক্রিয় থাকে। তারা রাতে শিকার করে এবং অন্ধকারে দেখার ক্ষমতার কারণে শিকারীদের থেকে নিরাপদ থাকে। মানুষের দৃষ্টিশক্তির দেখার সিমা রয়েছে যার বাইরে সে দেখতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ,জানালাবিহীন ঘরে বসে থাকা একজন ব্যক্তি কেবল ঘরের অভ্যন্তর দেখতে পারেন। বাইরে দেখতে হলে তাকে ঘর ছেড়ে যেতে হবে; অর্থাৎ, তাকে অবশ্যই বাইরে দেখার প্রতিবন্ধকতা হিসাবে ঘরটি কাটিয়ে উঠতে হবে।
তদুপরি,৫০০ কিমি দূরের শহরে একজন বন্ধুকে দেখতে একজন ব্যক্তিকে অনেক ভ্রমণ করতে হবে; অর্থাৎ, তাকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় দূরত্ব এবং সময়ের বাধা অতিক্রম করতে হবে যা তাকে বন্ধুকে দেখতে সাহায্য করবে।একইভাবে, একজন ব্যক্তি তার বন্ধুকে দেখতে চাইলে যে দুই বছর আগে মারা গেছে। মৃত্যু বন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করতে হলে তাগে দুই বছর আগে যেতে হবে যখন সে মারা যায়নি আবার ভবিষ্যতে তার সাথে কি কি হতে পারবে বা হবে না এসব দেখতে হলেও তাকে ভবিষ্যতে যেতে হবে কিন্তু মানুষ না অতীতকালে যেতে পারে আর না ভবিষ্যৎকালে। অর্থাৎ সে যদি সময়কে নিজে কন্ট্রোল করতে পারে তাহলে এসব সে করতে পারবে। মানুষ সময়ের মধ্যে বন্দী। যেকোনো জিনিস দেখতে মানুষকে অবশ্যই শারীরিক পরিস্থিতি এবং পরিস্থিতি থেকে নিজেকে মুক্ত করতে হবে যেখানে সে নিজেই একটি শারীরিক সত্তা হিসাবে আটকিয়ে আছে। তাহলে সৃষ্টিকর্তা যিনি টাইম,স্পেস,ম্যাটারের উর্ধে তাঁকে দুনিয়াতে বসে দেখতে চাওয়াটা হাস্যকর ছাড়া কিছু নয়।
আল কুরআন,৬ নং সুরা আনআমের ১০২ থেকে ১০৪ আয়াতে বলা আছে,
তিনিই আল্লাহ তোমাদের পালনকর্তা। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনিই সব কিছুর স্রষ্টা। অতএব, তোমরা তাঁরই এবাদত কর। তিনি প্রত্যেক বস্তুর কার্যনির্বাহী। (মানুষের) দৃষ্টিসমূহ তাঁকে পেতে পারে না,অবশ্য তিনি দৃষ্টিসমূহকে পেতে পারেন। তিনি অত্যন্ত সুক্ষদর্শী, সুবিজ্ঞ। তোমাদের কাছে তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে নিদর্শনাবলী এসে গেছে। অতএব, যে প্রত্যক্ষ করবে,সে নিজেরই উপকার করবে এবং যে অন্ধ হবে, সে নিজেরই ক্ষতি করবে। আমি তোমাদের পর্যবেক্ষক নই।
আপনি নিজেই বলুন তো,সৃষ্টিকর্তা যদি দুনিয়াতে মানুষের আকৃতি ধরে মানুষের কাছে গিয়ে গিয়ে বলে “আমি স্রস্টা আমার উপাসনা করো” ব্যাপারটা কেমন দেখাবে? এটা কি সৃষ্টিকর্তাকে অপমান করার মতো ব্যাপার নয়? আর স্রস্টা যদি নিজ অস্তিত্ব সবার সামনে প্রকাশই করে দেন তাহলে ইমান আনা, পরিক্ষা নেয়া ইত্যাদি ব্যাপার গুলো থাকবে না এই কারণেই আল্লাহ সরাসরি আমাদের সামনে আসবেন না। কিন্তু হ্যাঁ, আমরা যদি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে জান্নাতী হতে পারি সেখানে আমরা আল্লাহকে দেখতে পারবো। কারণ জান্নাতের জগত দুনিয়ার জগত থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হবে তখন।
নাস্তিকরা মানুষের সাথে হিপোক্রেসি করে। তারা আমাদেরকে আল্লাহ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায় যাতে আমরা ভিতরে পুরো একা হয়ে যাই। একাকিত্ব যে কত ভয়াবহ সমস্যার তৈরি করে সেটা আলাদা করে বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন মনে করছি না। আপনি জানেন না নাস্তিক্যধর্মে নিজেকে খুন অর্থাৎ আত্মহত্যা করা বৈধ? কোনো মানুষ যদি সত্য স্বীকার করে নিয়ে আল্লাহর ইবাদত করে এবং অন্যকে আল্লাহর ইবাদত করতে বলে তখন নাস্তিকদের এটা সহ্য হয় না। অথচ হাস্যকর কথা হচ্ছে,নাস্তিকরাই আবার বলে থাকে তারা নাকি বাক/ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। প্রতিটি মানুষের উচিত আল্লাহকে মেনে নেয়া। আল্লাহর সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করা। মানুষ যখন আল্লাহকে নিজের রব হিসেবে মেনে নিতে শিখবে তখন সকল ডিপ্রেশন,হতাশা, মানুষের থেকে পাওয়া দুঃখ ইত্যাদি কিছুই তারউপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারবে না। কারণ তখন আপনার সব দুঃখ কষ্টের কথা আপনি নামাজে সেজদায় আপনার আসলে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কাছে শেয়ার করতে পারবেন যা আপনি নাস্তিক হলে পারতেন না। অন্যদিকে নাস্তিক কেউ হতাশার শেষ প্রান্তে ডুবে গেলে মুক্তচিন্তায় নিজেকে খুন করে নেয়া ছাড়া উপায় হাতে থাকে না। নাস্তিকদেরকে দেখলে আমার এই কথাটি খুব মনে পড়ে “জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব”। এখন আপনি নাস্তিক হবেন নাকি আল্লাহর প্রিয় বান্দা আপনার বিবেচনায় রেখে দিলাম।