মুসলিমের উপর কাফেরের কিসাস নেই?

মুসলিমের উপর কাফেরের কিসাস নেই?

লিখেছেনঃ এমডি আলী

—----------------------

ভূমিকাঃ

নাস্তিক্যধর্মের অনুসারীরা একটি হাদিস দেখিয়ে প্রচার করে কাফেরকে হত্যার বিনিময়ে কোনো মুসলিমকে হত্যা করা যাবে না। নাস্তিকরা বোঝাতে চায় মুসলিমদের জন্য সর্ব সাধারণ অবস্থাতে কাফের হত্যা জায়েজ। ইশ, ইসলাম কত বর্বর অমানবিক! কিন্তু আসলেই কি তাই? তাহলে সত্যিটা কি? হ্যাঁ, আজকে সেটাই যাচাই করবো।


সেই হাদিসটি পড়ি

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৬৯১৫, সহিহ হাদিসঃ

আবূ জুহাইফাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, আমি ‘আলী (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনাদের কাছে এমন কিছু আছে কি যা কুরাআনে নেই? তিনি বললেন, দিয়াতের বিধান, বন্দী-মুক্তির বিধান এবং (এ বিধান যে) কাফেরের বদলে কোন মুসলিমকে হত্যা করা যাবে না।-ihadis.com


সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ২৬৫৯, হাসান সহিহঃ

আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কোন কাফেরকে হত্যার অপরাধে কোন মুসলমানকে হত্যা করা যাবে না।-ihadis.com


কোন কাফেরদের ক্ষেত্রে এটা বলা হয়েছে?

অন্যান্য হাদিস গুলো সামনে রাখলে পরিস্কার হয়ে উঠে যে উক্ত হাদিসে সব ধরণের কাফেরদের জন্য বলা হয়নি বরং যে কাফেররা ইসলামিক রাষ্ট্রে অন্যায়ভাবে প্রবেশ করে অথবা অন্যায়ভাবে বসবাস করছে সেই সব কাফেরদের জন্য উক্ত হাদিস বলা হয়েছে। আসুন হাদিস থেকেই পড়ি।


সুনানে আন-নাসায়ী,হাদিসঃ ৪৭৪৬, সহিহ হাদিসঃ

মালিক আশতার (রাঃ) থেকে বর্ণিত: তিনি আলী (রাঃ)-কে বললেনঃ মানুষ আপনার কাছ থেকে জ্ঞান-প্রজ্ঞার বিপুল কথা শুনে থাকে। যদি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনাকে খাস কিছু বলে থাকেন, তা আমাদের নিকট বর্ণনা করুন। তখন আলী (রাঃ) বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে এমন কিছু বলেন নি, যা তিনি অন্যান্য লোককে বলেন নি। তবে আমার তলোয়ারের খাপে যা রয়েছে তা ব্যতীত। এরপর দেখা গেল, তাতে রয়েছেঃ মুসলমানদের রক্ত সমমর্যাদাসম্পন্ন, একজন সাধারণ মুসলমান একজন কাফিরকে আশ্রয় দিতে পারে, আর কোন মুসলমানকে কাফিরের পরিবর্তে হত্যা করা যাবে না, আর না ঐ যিম্মিকে হত্যা করা যাবে, যে তার ওয়াদার উপর স্থির রয়েছে।-ihadis.com


সুনানে ইবনে মাজাহ,হাদিসঃ ২৬৬০, সহিহ হাদিসঃ

ইবনুল আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কোন কাফেরকে হত্যার অপরাধে কোন মুসলমানকে হত্যা করা যাবে না এবং চুক্তিভুক্ত কোন যিম্মিকেও তার চুক্তি বহাল থাকা অবস্থায় হত্যা করা যাবে না।-ihadis.com


সহিহ বুখারী,হাদিসঃ ৬৯১৪,সহিহ হাদিসঃ

'আব্দুল্লাহ্‌ ইব্‌নু 'আম্‌র (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, যে ব্যক্তি নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি প্রদত্ত কোন লোককে হত্যা করে, সে ব্যক্তি জান্নাতের সুগন্ধির ঘ্রান নিতে পারবে না। অথচ তার সুগন্ধ চল্লিশ বছরের দুরত্ব থেকে পাওয়া যায়।-ihadis.com


সুনানে আন নাসায়ী,হাদিসঃ ৪৭৪৫, সহিহ হাদিসঃ

আবূ হাস্‌সান (রাঃ) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেনঃ আলী (রাঃ) বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে এমন কিছু বলেন নি যা তিনি অন্যান্য লোকের নিকট বলেন নি; তবে আমার তলোয়ারের খাপে যে এক কিতাব রয়েছে তা ব্যতীত। জনগণ তার পিছু ছাড়লেন না। পরে তিনি সেই লিখা বের করলেন। দেখা গেল, তাতে লিখিত রয়েছে যে, মুসলমানদের রক্ত সমমর্যাদাসম্পন্ন। একজন সাধারণ মুসলমানও কাউকে আশ্রয় দিতে পারে, মুসলিমগণ অমুসলিমদের ব্যাপারে এক হাতের ন্যায়, আর কোন মুসলমানকে কাফিরের পরিবর্তে হত্যা করা যাবে না, আর নিজের ওয়াদার উপর স্থির কোন যিম্মিকে হত্যা করা যাবে না।-ihadis.com


সুনানে আবু দাউদ,হাদিসঃ ২৭৫১, হাসান সহিহঃ

‘আমর ইবরু শু’আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদা থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ সকল মুসলিমের রক্ত সমান। একজন সাধারণ মুসলিমও যে কোন ব্যক্তিকে নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিলে তার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা সকলের কর্তব্যে পরিণত হয়। অনুরুপভাবে দূরবর্তী স্থানের মুসলিমরাও তাদের পক্ষে এ ধরনের আশ্রয় দিতে পারে। প্রত্যেক মুসলিম তার প্রতিপক্ষ শত্রুর বিরুদ্ধে অন্য মুসলিমকে সাহায্য করবে। যার শক্তিশালী ও দ্রুত পতিসম্পন্ন সওয়ারী আছে, সে দুর্বল ও ধীর গতিসম্পন্ন সওয়ারীর অধিকারী ব্যক্তির সাথে থেকে চলবে। সেনাবাহিনীর কোন বিশেষ অংশ গনীমাতের মাল অর্জন করলে তা সকলের মধ্যে বন্টিত হবে। কোন কাফিরকে হত্যার অপরাধে কোন মুমিনকে হত্যা করা যাবে না। চুক্তিবদ্ধ কোন কাফিরকে চুক্তির মেয়াদের মধ্যে হত্যা করা যাবে না। বর্ণনাকারী ইসহাক্ব তার বর্ণনায় “আলমুসলিমূনা তাতাকাফা দিমাউহুম” এবং “ওয়ালা ইউক্বতালু মুমিনুন বি কাফিরিন” বাক্য দুটি উল্লেখ করেননি।-ihadis.com


 সুনানে আবু দাউদ,হাদিসঃ ৪৫৩০, সহিহ হাদিসঃ

ক্বাইস ইবনু ‘আব্বাদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, একদা আমি ও আল-আশতার ‘আলী (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে বলি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি আপনাকে বিশেষ কোন উপদেশ দিয়েছেন যা সাধারণভাবে মানুষকে দেন নি? তিনি বললেন, না; তবে শুধু এতটুকু যা আমার এ চিঠিতে আছে। অতঃপর তিনি তার তরবারির খাপ হতে একখানা পত্র বের করলেন। তাতে লেখা ছিলঃ সকল মুসলিমের জীবন সমমানের। অন্যদের বিরুদ্ধে তারা একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তি। তাদের একজন সাধারণ ব্যক্তি কর্তৃক প্রদত্ত নিরাপত্তাই সকলের জন্য পালনীয়। সাবধান! কোন মুমিনকে কোন কাফির হত্যার অপরাধে হত্যা করা যাবেনা। চুক্তিবদ্ধ অমুসলিম নাগরিককেও চুক্তি বলবৎ থাকাকালে হত্যা করা যাবে না। কেউ বিদআত চালু করলে তার দায় তার উপর বর্তাবে। কোন ব্যক্তি বিদআত চালু করলে বা বিদআতীকে মুক্তি দিলে তার উপর আল্লাহর অভিশাপ এবং ফেরেশতা ও মানবকুলের অভিশাপ।-ihadis.com


বঙ্গীয় নাস্তিক গুলো এতো গণ্ডমূর্খ যে ইসলামের আইন বা বিধান কিভাবে কার্যকর বা প্রয়োগ হবে তা বোঝেই না। না বুঝেই মুক্তচিন্তায় মূর্খতার সাহায্যে দুই একটা আংশিক হাদিস দেখিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে অযৌক্তিক অপপ্রচার চালায় আর মনে মনে পোলাও খায়। সার্বিক দলিল প্রমাণ সামনে তুলে ধরলেই নাস্তিক্যধর্মের অনুসারীদের জালিয়াতি ধরা খেয়ে যায়। যেসব কাফেররা ইসলামিক রাষ্ট্রে অবৈধ উপায়ে বসবাস করছে অর্থাৎ মুসলিমদের সাথে ইসলামিক রাষ্ট্রে চুক্তিবদ্ধ নাগরিক নয় এমন কাফেরকে যদি কোনো মুসলিম হত্যা করে তাহলে সেই অপরাধী কাফেরকে হত্যার জন্য মুসলিমকে হত্যা করা হবে না। অন্যান্য হাদিস সামনে রাখলে ইসলামের এই বিধান একদম স্পষ্ট।


ইসলামবিরোধী অন্ধবিশ্বাসীদের কাছে প্রশ্ন হচ্ছে যদি হাদিসে সব ধরণের কাফেরকে হত্যা করা জায়জে হয়েই থাকে তাহলে চুক্তিবদ্ধ কাফেরকে কেন চুক্তিবদ্ধ থাকাকালে হত্যা করার বিধান ইসলামে নেই? যেসব কাফের ইসলামিক রাষ্ট্রের নাগরিক তাদেরকে কোনো মুসলিম হত্যা করলে মুসলিমকেও হত্যা করা হবে এটা কি পরিস্কার হচ্ছে না উপরের হাদিস গুলো থেকে? নাহলে নবীজি (সা) কেন বলবেন যে চুক্তিবদ্ধ অমুসলিম নাগরিক হত্যা করা যাবে না?


আদাবুল মুফরাদ,হাদিসঃ ১০৪, সহিহ হাদিসঃ

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত: তার জন্য একটি ছাগল যবেহ করা হলে তিনি তার গোলামকে বলতে লাগলেন, তুমি কি আমাদের ইহুদী প্রতিবেশীকে তা দিয়েছো? তুমি কি আমাদের ইহুদী প্রতিবেশীকে তা দিয়েছো? আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ জিবরাঈল (আবু দাউদ) আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে অবিরত নসীহত করতে থাকেন। আমি মনে মনে ভাবলাম যে, তিনি তাকে হয়তো ওয়ারিস বানাবেন।-ihadis.com


আদাবুল মুফরাদ,হাদিসঃ ১২৭, সহিহ হাদিসঃ

মুজাহিদ (র) থেকে বর্ণিত: আমি আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ)-এর নিকট ছিলাম। তখন তার গোলাম ছাগলের চামড়া ছাড়াচ্ছিলো। তিনি বলেন, হে বালক! অবসর হয়েই তুমি প্রথমে আমাদের ইহুদী প্রতিবেশীকে গোশত দিবে। এক ব্যক্তি বললো, ইহুদী! আল্লাহ আপনাকে সংশোধন করুন। তিনি বলেন, আমি নবী (সাঃ)-কে প্রতিবেশী সম্পর্কে উপদেশ দিতে শুনেছি। এমনকি আমাদের আশংকা হলো বা আমাদের নিকট প্রতিভাত হলো যে, তিনি অচিরেই প্রতিবেশীকে ওয়ারিস বানাবেন।-ihadis.com


কাফের ইহুদীকে তো নবীজি মোহাম্মদ (সা) প্রতিবেশী বলে সম্বোধন করছেন। এমনকি খাবার সুস্বাদু ছাগলের মাংস পাঠিয়ে দিতে বলেছেন। উনি কেন বলেন নাই সেই ইহুদীকে হত্যা করে আসো? চুক্তিবদ্ধ অমুসলিমকে কোনো মুসলিম হত্যা করলে তাকেও কেসাস বা হত্যা করতে হবে এই বিধানের হাদিস গুলোকে ধামাচাপা দিয়ে অর্ধেক হাদিস দেখিয়ে নাস্তিকরা যে মুক্তচিন্তায় চুরিবিদ্যার চর্চা করে যাচ্ছে এটা নিয়ে আমার সংশয় নেই। এভাবে মুক্তবুদ্ধিতে চুরিবিদ্যার আশ্রয় ছাড়া চিন্তার মুক্তির আন্দোলন করতে পারে না নাস্তিক্যধর্মের অনুসারীরা?


সবকিছু বিবেচনা করে আমরা দেখলাম যে চুক্তিবদ্ধ বা ওয়াদাকৃত অমুসলিম নাগরিককে হত্যার পরিবর্তে মুসলিমকে হত্যা করা যাবে। তবে চুক্তিহীন অমুসলিমকে হত্যার পরিবর্তে মুসলিমকে হত্যা করা যাবে না। কারণ রাষ্ট্রের সাথে চুক্তি ছাড়াই অবৈধভাবে রাষ্ট্রে বসবাসকারী অথবা বিদেশ থেকে কোনোরূপ চুক্তি বা পাসপোর্ট ছাড়াই (উদাহরণ স্বরূপ) অবৈধভাবে অন্য দেশে প্রবেশকারী ব্যক্তিদের জীবনের মূল্য আর স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে নাগরিকের অধিকার নিয়ে বসবাসকারী ব্যক্তিদের জীবনের মূল্য কখনোই এক হতে পারে না। তাই ইসলামি শরিয়াভিত্তিক রাষ্ট্রে চুক্তিবিহীন কোনো কাফেরকে হত্যার পরিবর্তে কোনো মুসলিমকে মৃত্যুদন্ড দেয়ার নিয়ম নেই।


ফিকহের কিতাব থেকে পড়ি

আব্দুর রহমান ইবনে বায়লামানী(রা) থেকে বর্ণিত,নবীজি (সা) একজন মুসলিমকে জনৈক চুক্তিবদ্ধ অমুসলিমের পরিবর্তে হত্যা করেছেন এবং বলেছেন : যিম্মাদারী পূরণকারীদের মধ্যে আমি যিম্মা পূরণের ব্যাপারে অধিক হকদার (১)।


মালিক (রা) থেকে বর্ণিত: কুফার জনৈক ব্যক্তি হতে বর্ণনা করেন উমার ইবনু খাত্তাব (রা) জনৈক সেনাধ্যক্ষকে লিখেছিলেন,জানতে পারলাম, আনারব কাফেরদের মধ্যে কেউ যুদ্ধ বন্ধ করে পাহাড়ে আশ্রয় নিলে তোমাদের কেউ তাকে ডেকে বলে, “তোমাদের কোন ভয় নেই”, পরে হাতের মুঠোয় পেয়ে আবার তাকে হত্যা করে ফেলে। যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম, সত্যই যদি কাউকেও আমি কোনদিন এমন (ওয়াদা ভঙ্গ) করতে দেখতে পাই, তবে তার গর্দান উড়িয়ে দেব। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন: এই হাদীসটি সম্পর্কে আলিমগণ একমত নন এবং এর উপর আমল নাই। মালিক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল ইশারা ইঙ্গিতে যদি কেউ কাউকে আমান বা নিরাপত্তা প্রদান করে, তবে কি তা গ্রহণযোগ্য হবে? তিনি বললেন; হ্যাঁ, আমি মনে করি সৈন্যদেরকে যেন বলে দেওয়া হয় যে, ইশারা করে যাকে নিরাপত্তা প্রদান করা হয়েছে তাকে যেন হত্যা না করে। কারণ আমার মতে ইশারাও ভাষার মতোই্। আমার নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা) বলেছেন: যে জাতি চুক্তি ভঙ্গ করে, সেই জাতির উপর আল্লাহ তায়ালা শত্রু চাপিয়ে দেন (২)।


মালিক (র) থেকে বর্ণিত: তাঁর কাছে রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, উমার ইবনু আবদুল আযীয (র) বলতেন, ইহুদী ও খ্রিস্টানদের দিয়াত যখন তারা একে অন্যকে হত্যা করে, স্বাধীন মুসলমানের দিয়াতের অর্ধেক। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, আমাদের কাছে বিধান এই যে, কোন মুসলমানকে কাফিরের পরিবর্তে হত্যা করা হবে না। হ্যাঁ, যদি ধোঁকা দিয়ে সে যিম্মীকে হত্যা করে তবে তাকে হত্যা করা হবে। সুলায়মান ইব্নু ইয়াসার (র) বলতেন, অগ্নিউপাসকদের দিয়াত আট শত দিরহাম। মালিক (র) বলেন, এটাই আমাদের নিকট বিধান। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, ইহুদী খ্রিস্টানদের ক্ষত করার দিয়াত মুসলমানদের ক্ষত করার দিয়াতের হিসাবে মুযিহার ১/২০ এবং মামুমা ও জাইফায় ১/৩। এর উপর অন্যগুলোর অনুমান করা যায় (৩)।


কাফের হত্যার বিনিময়ে মুসলিমকে হত্যা করা যাবে না এই হাদিসের ব্যাখ্যায়,হযরত শায়েখ আল-মাওসালাই আল-হানাফী (রহ) বলেছেন, যুদ্ধে একজন যোদ্ধাকে হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে একজন মুসলমানকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় না (৪)। 


হযরত শায়েখ আবু বকর আল-জাসসাস (রহ) বলেছেন, একজন অবিশ্বাসী যোদ্ধার প্রতিশোধের জন্য একজন বিশ্বাসীকে হত্যা করা হয় না, কারণ এটি প্রতিষ্ঠিত হয়নি যে নবী একজন বিশ্বাসীর জন্য মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি বাতিল করেছেন যে একজন অমুসলিম নাগরিককে হত্যা করে (৫)। 


ইবনে হাজার আসকালানি (রহ) বলেছেন, প্রত্যেক অবিশ্বাসীকে হত্যা করা মুসলমানের অধিকার নয়। বরং তার জন্য ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়া নাগরিক বা সংরক্ষিত ব্যক্তিকে হত্যা করা হারাম (৬)।


দরসে তিরমিজি থেকে পড়ি

অনেক আলেমের মতে, এর ওপর আমল অব্যাহত। এটি সুফিয়ান সাওরি, মালেক ইবনে আনাস, ইমাম শাফেয়ি, আহমদ ও ইসহাক রহ. এর মাজহাব। তাঁরা বলেছেন, কোনো মুমিনকে কাফেরের বদলে কতল করা যাবে না। আর অনেক আলেম বলেছেন, মুসলমানকে চুক্তিকারি জিম্মির বদলে কতল করা যাবে। প্রথম উক্তিটি আসাহ্ (৭)।


হানাফিদের প্রথম দলিল কোরআনে কারিমের আয়াত “ইন্নাননাফসা বিন নাফসি” এই আয়াতে মুসলমান কিংবা কাফেরের কোনো শর্ত নেই। দ্বিতীয়ত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিম্মিদেরকে কতল করার ব্যাপারে কত কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। এমনকি বলেছেন, যে ব্যক্তি জিম্মিকে কতল করবে সে জান্নাতের খুশবুও লাভ করবে না। অথচ জিম্মিরা কাফের। সুতরাং তা সত্ত্বেও এর মৃত্যুদণ্ডের ব্যাপারে এতো ভয়ংকর সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। এর দ্বারা বুঝা গেলো, তাকে কতল করাও এমনই পাপ, যেমন কোনো মুসলমানকে কতল করা। জিম্মিকে যখন বলা হলো যে, তার জ্ঞান নিরাপদ, অতএব এবার তার জানে এবং মুসলমানদের জানে পার্থিব বিধানে কোনো পার্থক্য অবশিষ্ট নেই। এ কারণে বিভিন্ন সাহাবায়ে কেরাম হতে বিশেষ করে হজরত ওমর রা. হতে প্রমাণিত আছে যে, তিনি জিম্মির পরিবর্তে মুসলমানকে কতল করেছেন। এটি হানাফিদের দলিল


এ অনুচ্ছেদের হাদিসে বিষয় বলা হয়েছে, কোনো মুমিনকে কোনো কাফেরের পরিবর্তে কতল করা যাবে না। হানাফিদের পক্ষ হতে এই বাক্যটির তিনটি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। একটি ব্যাখ্যা এই করা হয়েছে যে, এই হাদিসে কাফের দ্বারা উদ্দেশ্য হলো হরবি। অর্থাৎ, কোনো মুমিনকে কোনো হরবি তথা কাফের অধ্যুষিত এলাকার মুসলিম শত্রুর বদলে কতল করা যাবে না। এর সমর্থন এর দ্বারাও হয় যে, অনেক বর্ণনায় একটি বাক্যের পর আরেকটি বাক্য আছে “ওয়ালা নু আহ দিন ফি আহদিহি” অর্থাৎ,কোনো জিম্মিকে কাফেরের পরিবর্তে কতল করা হবে না। তখন “নু আহ দিন” শব্দটি “কাফিরুন” শব্দের ওপর আতফ। বস্তুত আতফ দলিল করে ভিন্নতা। এতে দ্বারা বুঝা গেলো, কাফের দ্বারা উদ্দেশ্য হরবি আর “নু আহ দিন” দ্বারা উদ্দেশ্য হল জিম্মি। এই হাদিসের দ্বিতীয় ব্যাখ্যা এই করা হয়েছে যে, কোনো মুসলমানকে কোনো কাফেরের সাক্ষীর ভিত্তিতে কতল করা যাবে না। 


তৃতীয় ব্যাখ্যা শাহ সাহেব (রহ) উল্লেখ করেছেন। সেটি হলো এ বাক্যটি দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, যেমন হাদিস শরিফে এসেছে অর্থাৎ, বর্বর যুগের খুন এখন মাফ করে দেওয়া হয়েছে। যদি জাহেলি যুগে কাউকে কেউ কতল করে থাকে তাহলে এর বদলে মুসলমান হওয়ার পর কতল করা যাবে না। এবার এই বাক্যের অর্থ এই হলো যে, মুমিনকে সে কাফেরের বদলে কতল করা যাবে না যাকে সে মুমিন জাহেলি যুগে কতল করেছিলো (৮)।


মুসলিমকে মৃত্যুদণ্ডের বিধান

আল কুরআন,সুরা বাকারা ২:১৭৮ আয়াতঃ

হে ঈমানদারগন! তোমাদের প্রতি নিহতদের ব্যাপারে কেসাস গ্রহণ করা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তির বদলায়, দাস দাসের বদলায় এবং নারী নারীর বদলায়। অতঃপর তার ভাইয়ের তরফ থেকে যদি কাউকে কিছুটা মাফ করে দেয়া হয়, তবে প্রচলিত নিয়মের অনুসরণ করবে এবং ভালভাবে তাকে তা প্রদান করতে হবে। এটা তোমাদের পালনকর্তার তরফ থেকে সহজ এবং বিশেষ অনুগ্রহ। এরপরও যে ব্যাক্তি বাড়াবাড়ি করে, তার জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব। 


সুনানে আন নাসায়ী,হাদিসঃ ৪৭৪৩, সহিহ হাদিসঃ

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে থেকে বর্ণিত: তিনি বলেনঃ তিন অবস্থার যে কোন একটি ব্যতীত কোন মুসলমানকে হত্যা করা বৈধ নয়। প্রথমতঃ বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও যদি সে ব্যভিচার করে, তখন তাকে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করা হবে, দ্বিতীয়ত ঐ ব্যক্তি, যে কোন মুসলমানকে স্বেচ্ছায় হত্যা করে, তৃতীয়ত ঐ ব্যক্তি যে ইসলাম হতে বের হয়ে যায়, এবং পরে আল্লাহ্ তা‘আলা এবং আল্লাহ্‌র রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। তাকে হত্যা করা হবে বা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা দেশান্তর করা হবে।-ihadis.com


সুনানে আবু দাউদ,হাদিসঃ ৪৩৫৩, সহিহ হাদিসঃ

আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে কোন মুসলিম সাক্ষ্য দেয়- আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল, তাকে হত্যা করা বৈধ নয় তিনটি অপরাধের যে কোন একটিতে লিপ্ত না হলেঃ (প্রথম) বিবাহিত লোক ব্যভিচার করলে তাকে পাথর মেরে হত্যা করবে, (দ্বিতীয়) আল্লাহ এবং তাঁর রাঊলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে অথবা ফাঁসি কাষ্ঠে ঝুলানো হবে অথবা তাকে দেশ হতে নির্বাসন দেয়া হবে, (তৃতীয়) আর কাউকে হত্যা করলে তার বিনিময়ে কিসাসস্বরূপ তাকেও হত্যা কয়া হবে।-ihadis.com


উপসংহারটি বুদ্ধিমান চিন্তাশীল পাঠকদের বিবেচনায় রেখে দিলাম।


রেফারেন্স ও তথ্যসূত্রঃ

[১] মুসনাদে ইমাম আবু হানিফা,৩১৭ নং হাদিস।

[২] মুয়াত্তা ইমাম মালিক, ৯৬২ নং হাদিস।-ihadis.com

[৩] মুয়াত্তা মালিক,দিয়াত অধ্যায়,পরিচ্ছেদ ১৫, ১ নং রেওয়ায়েত।-ihadis.com

[৪] আল-ইখতিয়ার লি তা’লীল, ৫০৬ নং পৃষ্ঠা।

[৫] আহকাম আল-কুরআন,১ খণ্ড, ১৭৬ পৃষ্ঠা।

[৬] ফাতহুল বারী, ৬৫১৭ হাদিসের ব্যাখ্যা। বিস্তারিতঃ Muslims not punished for killing non-Muslims?

https://www.abuaminaelias.com/muslims-not-punished-for-killing-non-muslims/

[৭] আল্লামা মুফতি তাকি উসমানি (হাঃফি) লিখিত “দরসে তিরমিযী, ৫ খণ্ড, ৩৩৪ পৃষ্ঠা।

[৮] আল্লামা মুফতি তাকি উসমানি (হাঃফি) লিখিত “দরসে তিরমিযী, ৫ খণ্ড,৩৩৫ পৃষ্ঠা।


=============================

মিথ্যুকবাজ মুক্তমনাদের অভিযোগের জবাব পড়ুনঃ


মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড অমানবিক?


কুরবানীর ঈদ অমানবিক?


অমুসলিমরা জাহান্নামী বলা ঘৃণিত চিন্তা?


ইসলামে ইহুদীবিদ্বেষ আছে?


অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না?


==============================

এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post