নাস্তিকদের বইপত্রে মুক্তচিন্তার গালিগালাজ

নাস্তিকদের বইপত্রে মুক্তচিন্তার গালিগালাজ

লিখেছেনঃ এমডি আলী

—-----------------------------

ভূমিকাঃ

একজন মানুষ কতটুকু সভ্য সেটা তার আচার আচরণে ফুটে উঠে। এক শ্রেণীর মানুষ এই দুনিয়াতে বসবাস করে নিজেদেরকে চিন্তার মুক্তির আন্দোলনকারী হিসেবে। মুক্তচিন্তার বই থেকেই আমরা দেখবো কেমন ভয়াবহ গালিগালাজে ভরপুর তাদের বই পুস্তক গুলো। নাস্তিক্যধর্মের সেই অনুসারীরা অভিযোগ করে থাকে কুরআন নাকি গালাগালি শিক্ষা দেয় এমনকি হযরত মোহাম্মদ (সা)ও নাকি গালাগালি করতেন। আসলেই কি তাই? এই আলাপ বিস্তারিত সামনে আসবে তারা আগে আমরা দেখে নিব সাহিত্যের নামে নাস্তিক মুক্তমনাদের বইতে গালাগালির চিত্রনামা। কারা সভ্য আর কারা অমানুষ সেটা আজকেই প্রমাণ হয়ে যাবে।


মুক্তমনাদের সাইটে গালাগালির উপকারিতা

“মুক্তমনা ডট কমে” ২০ জুন ২০১১ সালের তারিখে “ভাষার ব্যবহার ও গালি বৃত্তান্ত” শিরোনামে একটি আর্টিকেল পাব্লিশ করা হয়। সেখানে লেখা হয়েছে (ক),

গালিগালাজ বা গালমন্দ হল ভাষার অন্যতম বহুল ব্যবহার। গালিগালাজ মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে বটে তবে ক্ষেত্রবিশেষ এর প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। মানুষ যেদিন থেকে ভাষার ব্যবহার শিখেছে সেদিন থেকেই শুরু হয়েছে গালির ব্যবহার। এই গালিগালাজের প্রকার ও ধরণ আবার সমাজ ভেদে ভিন্নতর। এক স্থানের স্তুতি কথা অন্যস্থানে গালি হিসাবে ব্যবহারের নজির দেখা যায়। যেমন, যুক্তরাজ্যে fag মানে সিগারেট, কিন্তু যুক্তরাষ্টে fag বলতে হোমোসেক্সুয়াল পুরুষ বোঝায়। বাংলাদেশের বিভিন্নস্থানে ‘খাসি’ শব্দটা অস্তিবাচক হিসাবে ব্যবহার করা হলেও মেহেরপুরে এটাকে গালি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশে, বন্ধুদের মাঝে বা ইনফর্মাল আড্ডায় ‘শালা’, ‘গাধা’, ‘কুত্তা’ এ জাতিয় শব্দ গালি মনে না হলেও বড়দের মাঝে বা ফর্মাল কোন বৈঠকে তা ব্যবহার করা হলে গালি হিসাবে গণ্য করা হবে। আবার সমাজের অশিক্ষিত মানুষের কাছে যা বুলি তা অনেকসময় শিক্ষিত মানুষের কাছে গালি হিসাবে চিহ্নিত হয়। যেমন আমাদের দেশে নিম্নশ্রেণীর মানুষেরা ‘মাগি’, ‘ভাতার’, ‘মিনসে’ শব্দগুলো সাধারণ অর্থেই ব্যবহার করে কিন্তু এই শব্দগুলো শিক্ষিত সমাজে গালি হিসাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। জেন্ডার ভেদেও গালির ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। পুরুষদের সাধারণ আড্ডায় অনেক শব্দ ব্যবহার করা হয় যা নারী মহলে গালি হিসাবে চিহ্নিত। যেমন, হুদায়, চোঁদনা, বাড়া, বকচোদ ইত্যাদি

পুরো লেখাটিতে গালাগালির সংস্কৃতির আলোচনা করা হয়েছে। যাইহউক সামনে আরও ভয়ংকর সব কথাবার্তা ফাঁস করে দেয়া হবে। নাস্তিকরা নিজেদের বইপত্র মন দিয়ে পড়ে না। পড়লে বুঝতে পারতো নাস্তিকরা ভুল পথে চলছে।

কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ

কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ হুমায়ুন আজাদ রচিত একটি উপন্যাস। ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৯ সালে একুশে গ্রন্থমেলায় বাংলাদেশের আগামী প্রকাশনী, ঢাকা থেকে এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। হুমায়ুন আজাদ এই উপন্যাস উৎসর্গ করেছেন, ফরাসী কবি শার্ল বোদলেয়ারের প্রতি যাকে তিনি দণ্ডিত মহাকবি বলে উল্লেখ করেছেন (সূত্রঃ উইকিপিডিয়া)। 

সাহিত্যের নামে নাস্তিক হুমায়ুন আজাদ যেভাবে গালাগালির বন্যা বৈয়ে দিয়েছেন এই বইতে সেটা স্পষ্ট। বইটি যখন পড়ছিলাম তখন আমার বমি আসছিল। আমি ভাবছিলাম এমন নিচুমানের বই তার পক্ষেই লেখা সম্ভব। বইটি থেকে মুক্তচিন্তায় অবৈধ যৌনলীলা,মুক্তচিন্তায় গালাগালি,মুক্তচিন্তায় অসভ্যতা, নারীদের সাথে মুক্তচিন্তায় প্রতারণা ছাড়া আর কিছু শেখা যাবে বলে আমার মনে হয় না। নাস্তিক্যধর্মে তো এসব বৈধ তাই নাস্তিকদের কাছে চিন্তার মুক্তিতে গালাগালি দেয়া, চুরি করা, নারীদের সাথে প্রতারণা করা, যারতার সাথে যৌনচর্চা করা ইত্যাদি তো খারাপ হতে বাধ্য নয়।

বস্তির গরিব মানুষরা শুয়োর

কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ, ৭৭ পৃষ্ঠায় লেখা আছে,

পাঁচতলা থেকে হাসান তাকায় দক্ষিণের প্রসারিত ব্যাপ্ত আকাশচুম্বী মলস্তূপের দিকে। পৌরসভা নতুন সভ্যতা গড়ার জন্যে জমিয়ে তুলছে বর্তমান আবর্জনার পাহাড়, এই মলস্তূপ থেকে একটি একটি করে উঠে এসেছে তার অনেক কবিতা। আরো আসবে। মলস্তূপের পাশে বস্তির গুয়োরগুলোকে তার মনে পড়ে, কী করুণ বিষণ্ণ গরিব শুয়োর। মানুষও ওদেরই মতো, সেও কি ওগুলোরই সহোদর?

এই বদমাইশ নাস্তিকটি গরীবের সৌন্দর্য নামে একটি কবিতা লিখেছে,সেই কবিতায় লেখা আছে,

গরিবেরা সাধারণত সুন্দর হয় না। গরিবদের কথা মনে হ’লে সৌন্দর্যের কথা মনে পড়ে না কখনো।গরিবদের ঘরবাড়ি খুবই নোংরা, অনেকের আবার ঘরবাড়িই নেই। গরিবদের কাপড়চোপড় খুবই নোংরা, অনেকের আবার কাপড়চোপড়ই নেই। গরিবেরা যখন হাঁটে তখন তাদের খুব কিম্ভুত দেখায়। যখন গরিবেরা মাটি কাটে ইট ভাঙে খড় ঘাঁটে গাড়ি ঠেলে পিচ ঢালে তখন তাদের সারা দেহে ঘাম জবজব করে, তখন তাদের খুব নোংরা আর কুৎসিত দেখায়গরিবদের খাওয়ার ভঙ্গি শিম্পাঞ্জির ভঙ্গির চেয়েও খারাপ। অশ্লীল হাঁ ক’রে পাঁচ আঙ্গুলে মুঠো ভ’রে সব কিছু গিলে ফেলে তারা।

থুতু ফেলার সময় গরিবেরা এমনভাবে মুখ বিকৃত করে যেনো মুখে সাতদিন ধ’রে পচছিলো একটা নোংরা ইঁদুর। গরিবদের ঘুমোনোর ভঙ্গি খুবই বিশ্রী। গরিবেরা হাসতে গিয়ে হাসিটাকেই মাটি ক’রে ফেলে। গান গাওয়ার সময়ও গরিবদের একটুও সুন্দর দেখায় না। গরিবেরা চুমো খেতেই জানে না, এমনকি শিশুদের চুমো খাওয়ার সময়ও থকথকে থুতুতে তারা নোংরা করে দেয় ঠোঁট নাক গাল।

গরিবদের আলিঙ্গন খুবই বেঢপ। গরিবদের সঙ্গমও অত্যন্ত নোংরা, মনে হয় নোংরা মেঝের ওপর সাংঘাতিকভাবে ধ্বস্তাধ্বস্তি করছে দু’টি উলঙ্গ অশ্লীল জন্তু। গরিবদের চুলে উকুন আর জট ছাড়া কোনো সৌন্দর্য নেই। গরিবদের বগলের তলে থকথকে ময়লা আর বিচ্ছিরি লোম সব জড়াজড়ি করে। গরিবদের চোখের চাউনিতে কোনো সৌন্দর্য নেই, চোখ ঢ্যাবঢ্যাব ক’রে তারা চারদিকে তাকায়। মেয়েদের স্তন খুব বিখ্যাত, কিন্তু গরিব মেয়েদের স্তন শুকিয়ে শুকিয়ে বুকের দু-পাশে দুটি ফোড়ার মতো দেখায়। অর্থাৎ জীবনযাপনের কোনো মুহূর্তেই গরিবদের সুন্দর দেখায় না। শুধু যখন তারা রুখে ওঠে কেবল তখনি তাদের সুন্দর দেখায়।

পাঠক আপনারাই বলেন এভাবে গরীবদেরকে সম্মান করা হল নাকি অপমান?

নাস্তিকদের নাস্তিক্যধর্মে মুক্তচিন্তায় গালাগালি করা জায়েজ 

“কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ” বইয়ের ৩৩ পৃষ্ঠায় লেখা আছে,

তারা দুজন পান শুরু করে, হাসান পানীয়র সাথে একটি ব্যাপক দোলনও পান করতে থাকে। আলাউদ্দিন বলে, দোস্ত, তুমি বলছিলা মাছের আন্ডার মতন কুত্তার বাচ্চার মতন অনেকগুলি নষ্ট হইয়া একটা দুইটা কবি হইয়া বাইর হয়, ঠিক কথাই কইছো, কিন্তু আমি অই পাঁচটা কুত্তার বাচ্চার চাইরটার মইধ্যে পড়তে চাই নাই। তাতে কি হইতো? কবিও হইতাম না, এইদিকে না খাইয়া মরতাম, ব্ল্যাক লেবেলের বতলের কাছেও যাইতে পারতাম না । না খেয়ে মরার কথায় নিজের দিকে তাকায় হাসান। সেও কি মরবে না খেয়ে? আলাউদ্দিন খুবই চমৎকার আছে, এমন চমৎকার থাকলে কবিতার কোনো দরকার পড়ে না হয়তো; বা কবিতা থেকে খুবই দূরে থাকলে মানুষ এমন চমৎকার থাকে। ঝকঝকে পংক্তি লিখতে থাকলে আলাউদ্দিনের সব কিছু আজ এমন ঝকঝক করতো না, কোনো মরিয়ম দোলা ছড়াতো না; সে হয়তো কোনো দোস্তের অফিসে গিয়ে নিজের ভেতরের ময়লা খুঁটতে খুঁটতে পানটান করতো।

“কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ” বইয়ের ৩৪ পৃষ্ঠায় লেখা আছে,

অইটারে তুমি অক্সফোর্ড বলতেছ? ফোর্ড আর নাই, খালি অক্সগুলি আণ্ডা দুলাইয়া শিং উচাইয়া গুতাগুতি করতেছে। হাসান বলে, ইউনিভার্সিটি ওই নজিবর রহমান কায়কোবাদঅলাদের জন্যেই, আমার জন্যে নয়। কবি ঔপন্যাসিকের জন্যে ওই দুর্গ নয়, ওটা সংঘবদ্ধদের জন্যে। আলাউদ্দিন বলে, তোমার হইবো ক্যান? তুমি ত জমিরালি পরাগালির বাসায় বাজার কইর‍্যা দেও নাই, তাগো পোলামাইয়ারে চুয়িংগাম কিন্না খাওয়াও নাই, তাগো পায়ের ধুলা মাথায় মাখো নাই, তাগো লইয়া তিনখানা ভাঙাচুরা পরবন্ধ লেখো নাই । তুমি কবি হইছো, তুমি বলি হইয়া গেছো। হাসান বলে, কিন্তু আমি হয়তো কবি হবো না, কুকুরবাচ্চার মতোই নষ্ট হবো, আমি হয়তো কিছুই হবো না। আলাউদ্দিন বলে, চলো দোস্ত, তোমারে একটু ভালমন্দ খাওয়াই আনি । লাঞ্চটা আমি অই চাইরতারাই করি। কবিতা ছাইরা ট্যাকা করতেছি ত চাইরতারা পাচতারায় যাওনের লিগাই, এইতে কবিতা ছারনের কষ্টটা একটু কমে কি বুঝিতে চাই আর জানি না কি আহা, সব রাঙা কামনার শিয়রে যে দেয়ালের।

নাস্তিক হুমায়ুন আজাদ সারা সন্ধ্যা এক অসহায় তরুণীকে চুইংগামের মতো চুষতে চাবাতে চেয়েছিল। তার বই পত্রে চুইংগামের কথা আনতে সে ভুল করে না। খেয়াল করেছেন পাঠক? 

হুমায়ুন আজাদ লিখিত “আমার অবিশ্বাস” বইয়ের ১৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছেঃ

যখন শিশু ছিলাম,কিশোর হয়ে উঠেছি যখন, তখনও আমি সব কিছু চুষে দেখতে চেয়েছি, আজো অনেক কিছু চুষে আর চেখে দেখতে ইচ্ছা করে, ছেলেবেলা ভোরে ইচ্ছে হতো চুলোর লাল আগুনের টুকরোগুলোকে চুষে দেখতে, ওগুলো লাল গোলাপের থেকেও লাল হতে জ্বলজ্বল করতো। সূর্যাস্তকেও চুষে স্বাদ নিতে ইচ্ছে হতো,কয়েক বছর আগে সারা সন্ধ্যা চুষতে চিবুতে ইচ্ছে হয়েছিল চুইংগামের মতো এক তরুণীকে।

হুমায়ুন আজাদ খুব ভালো করেই জানতেন নারীদের নিয়ে মুক্তচিন্তা করা নাস্তিকদের জন্য জায়েজ আছে। তো উনি সারা সন্ধা সেই অসহায় নারী তরুণীকে নিয়ে ধর্ষণের ওরফে সারা সন্ধ্যা চুষতে চিবুতে চেয়েছিলেন চুইংগামের মতো। অন্ধবিশ্বাসী নাস্তিকদের কাছে এসব সাহিত্য মনে হয়। সাহিত্যের নামে এসব নোংরা বর্বর ও নারী ধর্ষণের মুক্তচিন্তাকে ধামাচাপা দিয়ে রাখতে রাখতে হুমায়ুন আজাদের অন্ধভক্তরা। যাগগে, নাস্তিকটি গালাগালিতেও কতটা এক্সপার্ট ছিল সেই আলোচনায় ফিরে আসি। 

“কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ” বইয়ের ৩৫ পৃষ্ঠায় লেখা আছে,

হাসান বাইরে তাকিয়ে একটি ভাঙাচোরা রিকশা দেখতে পায়, রিকশাটাকে তার বদলেয়ার রেবো মালার্মে রবীন্দ্রনাথের মতো মহানুভব মনে হয়, রিকশাকে সে গোপনে বলে, বিষণ্ণ রিকশা, করুণ রিকশা, অনির্বচনীয় রিকশা, ডানাভাঙা রিকশা আমাকে একটি চিত্রকল্প দাও, অন্তত একটা ছেঁড়াফাড়া কবিতা দাও। আমার মানসসুন্দরী নেই, ধর্ষিত বিপন্ন ব্যথিত রিকশা, তুমি হও আমার ক্ষণিক মানসসুন্দরী। পাজেরো শাই শাই ক'রে চলতে থাকে, আটকে যেতে থাকে, বলতে থাকে, অ্যাড গার্মেন্টস্ ইন্ডেন্টিং চারতারা পাঁচতারা ব্ল্যাক লেবেল অ্যাড গার্মেন্টস্ ইন্ডেন্টিং চারতারা পাঁচতারা ব্ল্যাক লেবেল মরিয়ম মরিয়ম মরিয়ম। রিকশা বলে, আমি শিক আর টায়ার আর প্যাডেল, আমি বদলেয়ার র্যাবো মালার্মে রবীন্দ্রনাথ নই, এমনকি আমি যতীন্দ্রমোহন বাগচী মানকুমারী বসুও নই, মানসসুন্দরী নই, আমার ভেতরে কোনো কবিতা নেই, আমি তোমাকে কবিতা দিতে পারবো না।

বাঁ পাশের সিনেমা হলটি নাভি খুলে মাজা বাঁকিয়ে হাসানের কানে কানে বলে, আমি তোমাকে কবিতা দিতে পারবো না, আমি ব্যানার, জোড়া জোড়া নগ্ন স্তন, স্থল উরু, স্তনবাঁক, চিজ বাড়ি হায় মাস্ত মাস্ত। ডান পাশের ভিডিওর দোকানটি ন্যাংটো হয়ে যায়, ঝনক ঝনক ক'রে বুক দাপাতে থাকে, অট্টরোলে বলে, হা হা হা হা, কবিতা কারে বলে মিয়া? অইটা আবার কি জিনিশ, কি মাল? পিরথিমিতে অইটার কি দরকার? অইটায় কয় কেজি সেক্স? তু চিজ বড়ি হায় মস্ত মস্তমুক্তি ক্লিনিকটি দুই পা ফাঁক ক'রে দু-দিকে ছড়িয়ে দিয়ে গোঙাতে থাকে, এমআর এমআর এমআর, এমআর দিতে পারি, তোমারে কবিতা দিতে পারি না। তুমি কি এমআর করাইবা? আসো, চিৎ হইয়া শোও, তিন মিনিটে ভিতরের কবিতার সব ফিটাস ফালাইয়া দিমু, আধঘণ্টায় বাড়িতে হাইট্যা চইল্যা যাইবা। হাসান দেখতে পায় ঝাঁকে ঝাঁকে দলবেঁধে সবাই এসে বলছে, তারা তাকে কবিতা দিতে পারবে না। নৌকো ছেঁড়া পাল উড়িয়ে এসে তার সামনে থামে, বলে, তুমি কোথায় যাচ্ছো, হাসান? তোমাকে আমি কবিতা দিতে পারবো না। যাও, তুমি অপরূপ অ্যাড গার্মেন্টস্ ইন্ডেন্টিং হইয়া যাও, সেইখানে চাইরতারা পাঁচতারা ব্ল্যাক লেবেল মরিয়ম মরিয়ম মরিয়ম। একঝাক কাক উড়ে যেতে যেতে বলে, তোমাকে আমরা কবিতা দিতে পারবো না, হাসান, তুমি যেখানে যাচ্ছো সেখানে অনেক মাল আছে, কবিতা নেই, সেইখানে আমাগো মতো কাউয়ারাই আছে

উইস্কির সাথে মুক্তচিন্তায় টাকাকে গালাগালি

“কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ” বইয়ের ৫৮ পৃষ্ঠায় লেখা আছে,

আলাউদ্দিন রেহমান বলে, দোস্ত, একটা ভাল খবর আছে, তোমার জন্যে, ম্যাডাম মরিয়ম মাঝেমইদ্যেই তোমার নাম লয়, বলে তুমি আর আসলা না। হাসান বলে, কার কথা বলছো, বুঝতে পারছি না তো। আলাউদ্দিন রেহমান বলে, আরে দোস্ত, অই যে একদিন আসছিলা আর তোমারে হুইস্কি ঢাইল্যা খাওয়াইছিলো, সেই ম্যাডাম মরিয়ম; মাঝেমইদ্যেই তোমার কথা কয়। মনে হয় দিলে দাগ কাইট্যা গেছো। হাসান বলে, খুবই চমৎকার মেয়ে ম্যাডাম মরিয়ম, তুমি বেশ ভালোই আছো । আলাউদ্দিন রেহমান বলে, দোস্ত, ভাল থাকা কি অতই সহজ, মাইয়ালোক লইয়া? এই এরিয়ায় গার্মেন্টস্ আর প্রিন্সেসে তফাৎ নাই; মাইয়ালোক শুরুতে গোলাপের পাপড়ির মতন পাতলা আর শ্যাষে পাথরের মতন ভারি। দোস্ত, আমি ভাল থাকতে চাই না, মাঝেমইধ্যে আনন্দে থাকতে চাই। আইজ সন্ধ্যায় আমার বাইড়তে আইসো, দোস্ত, একটু খাঅনদাঅনগিলন যাইবো, আনন্দ করন যাইবো। হাসান বলে, আচ্ছা, অবশ্যই আসবো। আলাউদ্দিন বলে, আরও দুই চাইরটা কবিরেও বলতেছি, অই দোস্তরা গিলার বেশি চান্স পায় না, কিন্তু গিলতে চায়, অগো গিলাইতে ভালই লাগে, ইম্মরটালগো লগে খাইতে আমার ভালই লাগে, অগো যতই গাইল্লাই অরা কমবেশি ইম্মরটাল এইটা আমি বুঝি । অগো নাম থাকবো, আমার নাম থাকবো না ।

হাসান বলে, তুমি গার্মেন্টস্, নও তুমি অ্যাড নও, তোমার ভেতর সেই কবিটি এখনো আছে, তুমি আবার কবিতা লেখো। তোমার কবিতা আমি পছন্দ করতাম। তোমার ভেতরেও অমর হওয়ার রোগ আছে, আলাউদ্দিন। আলাউদ্দিন রহমান বলে, আরে দোস্ত, গার্মেন্টস্, আর পয়েট্রি একলগে যায় না, ট্যাকা বানাইতে চাইলে আর ইম্মরটাল হঅন যায় না। ইম্মরটাল হইতে হইলে সেক্রিফাইস করতে হয়, পাগল হইতে হয়, আয়নায় নিজেরে দেইখ্যা গুডমর্নিং বলার প্রতিভা থাকতে হয়, খানকি ট্যাকারে গুডবাই জানাইতে হয়, আমি পয়েট্রিরে গুডবাই জানাইছি, অই বিউটি আমার লগে শুইবো না, তোমাগো লগেই রাইত কাটাইবোতয় ট্যাকার শরিলটাও শোঅনের মতন। অনেক দিন পানটান হয় নি, হাসান একটু তৃষ্ণা বোধ করে, আজ সন্ধ্যায় বেশ পান করা যাবে, রক্তনালি ভ'রে নিতে হবে ব্ল্যাক লেবেলে। সন্ধ্যার বেশ পরে, কখন যাবে কখন যাবে ভাবতে ভাবতে একটু দেরি ক'রে, সে উপস্থিত হয় আলাউদ্দিন রেহমানের লালমাটিয়ার বিশাল বাড়ির তেতলার ফ্ল্যাটে। হাসানকে দেখে হৈহৈ ক'রে ওঠে আলাউদ্দিন, শ্যাষম্যাষ কবি হাসান রশিদ আসছেন, বেশি দেরি করেন নাই, ঘণ্টা দুই দেরি করছেন, বইস্যা যাও, দোস্ত, খাও, গিলো। ঢুকেই হাসান দেখে পাঁচ অমর পান ক'রে চলছেন। আলাউদ্দিনের কাব্যরুচি গার্মেন্টস ইন্ডেন্টিং অ্যাডে নষ্ট হয় নি- এজন্যেই ওকে আজো কবি মনে হয়, আলাউদ্দিন বেছে বেছেই গিলতে ডেকেছে, হাসানের ভালোই লাগে।

নায়িকাদের নগ্ন সাতার

“কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ” বইয়ের ৫৯ পৃষ্ঠায় লেখা আছে,

কথাশিল্পী করিম আহমেদটি সবার বড়ো, দু-খানা বই লিখে সাতখানা পুরস্কার পেয়ে তিনি সব সময় গাল ফুলিয়ে এবং সব কিছুর ওপর নিরন্তর বিরক্ত হয়ে থাকেন, সহজে কাউকে দেখতে পান না, তাঁর চোখ দুটি যে-কাউকে দেখার জন্যে নয়; হাসানের মতো সামান্যতাকে তিনি দেখতে পেয়েছেন ব'লে মনে হলো না । তিনি পান ক'রে চলছেন, পানপাত্রে হয়তো তাঁর নায়িকাদের নগ্ন সাঁতার কাটতে দেখছেন, চমৎকারভাবে কাঁপছেন, কারো দিকে তাকাচ্ছেন না, মনে মনে তিনি দস্তয়োভস্কির বা হেমিংওয়ের সাথে হয়তো কথা ব'লে চলছেন। কবিদের মাঝে এই গদ্য কেনো? হাসান নিজেকে জিজ্ঞেস করে। ওহ! কবি কামর আবদিন আবার এঁকে ছাড়া কোথাও যান না, তাঁরা দুজন দুজনকে প্রশংসা ক'রে ক'রে পুরস্কার পাচ্ছেন ও বুড়ো হচ্ছেন। তাঁরা দেশকে একদিন দুটি অতুলনীয় বুড়ো উপহার দেবেন। 

হাসান মনে মনে অনেকক্ষণ ধ'রে হাসে। কবি কামর আবদিন এখন খুব সাড়া জাগাচ্ছেন, এবং তিনি আপাদমস্তক অকবিসুলভ ভদ্রজন, বুড়ো হ'লে লোকটি হয়তো এতো ভদ্র হবেন যে সব কিছু ঘিনঘিনে ক'রে তুলবেন; তাঁর চুল ঢেউ খেলানো, মুখখানি সুন্দর- এটা তাঁর বড়ো সম্পদ, এটা ভেঙে তিনি খেয়ে যাবেন আরো তিরিশ বছর, এবং তিনি কথা বলার সময় মৃদুমধুর তোতলান, সব সময়ই মধুর কথা বলেন। কবি কামর আবদিন পান করতে করতে বলেন, আআআসুসুসুন হাসান রশিদ সাহেব, আআআপপপনার ককককথাই হহহচ্ছিলো।

নাস্তিকটির বইতে বিজ্ঞানবিরোধী কথাবার্তা

আমরা সবাই জানি ধূমপান করা বিজ্ঞান বিরোধী একটি কর্ম। এটা জেনেও অনেক বিজ্ঞানমনস্ক দাবিদার নাস্তিককে চিন্তার মুক্তিতে সিগারেট খেতে দেখা যায়। এটাও সত্যি কথা যে নাস্তিক্যধর্মে বিজ্ঞানবিরোধী কাজ করা, বিজ্ঞানবিরোধী চিন্তা করার স্বাধীনতা প্রতিটি নাস্তিকের রয়েছে। যেমন নাস্তিকরা বিশ্বাস করে তার জানোয়ার থেকে বিবর্তন হয়ে এসেছে এটা একটি বিজ্ঞানবিরোধী কথা এরপরেও অনেক নাস্তিক এটিকে অন্ধবিশ্বাস করে।

“কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ” বইয়ের ৬২,৬৩ পৃষ্ঠায় লেখা আছে,

কামর আহমেদ চিৎকার করে ওঠেন আমাকে একটা সিগারেট দিন,আমাকে একটা সিগারেট দিন। কামর আবদিন তাঁকে বলেন, করিম ভাই, আপনার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিলো, আপনার সিগারেট খাওয়া ঠিক হবে না। করিম আহমেদ বলেন, রাখুন হার্ট অ্যাটাক, আমাকে একটা সিগারেট দিন, আমাকে একটা সিগারেট দিন। হাসান উঠে গিয়ে তাকে একটি সিগারেট দেয়। করিম আহমেদ সিগারেটটি ঠোঁটে রাখতে রাখতে একবার সিগারেটটি নিচে প'ড়ে যায়, তিনি সেটি খুঁজতে থাকেন। হাসান সিগারেটটি তুলে তাঁর হাতে দেয়। তিনি বলেন, আগুন দিন, আগুন দিন। হাসান আগুন জ্বালাতে জ্বালাতে দেখে করিম আহমেদের কোলে একটা ছোটো অদ্ভুত বোতল, বোতলটা পিছলে প'ড়ে যাচ্ছে। হাসান বোতলটা তুলে বলে, এটা কী? করিম আহমেদ চিৎকার ক'রে বলে, এটা সিভাস রিগাল, এটা সিভাস রিগাল, এটা আমার জন্যে, আমি এটা ছাড়া খেতে পারি না ।

আলাউদ্দিন ঢুলতে ঢুলতে বলে, দ্যাখো শালা নভেলিস্টরা কিনা ছোটোলোক, ঘরে ঢুইক্যাই সিভাস রিগালের বোতলটা নিজের প্যাটের ভিতর ঢুকাইয়া রাখছে । কবিরা যদি ব্ল্যাক লেবেল টানে তাইলে নভেলিস্টগো টাননের কথা মেথরপট্টির কেরু, ব্যাটারি ভিজাইন্যা অ্যাসিড। রাকিব সুলতান ঢকঢক ক'রে বোতল থেকেই গলায় ঢালতে থাকে সিভাস রিগাল, এবং টলতে টলতে মেঝের ওপর ব'সে পড়ে। করিম আহমেদ কেঁপে কেঁপে বলেন, হাসান সাহেব, আরেকটা সিগারেট দিনহাসান বলে, আপনার আর সিগারেট খাওয়া ঠিক হবে না। করিম আহমেদ রেগে ওঠেন, ধমক দিয়ে বলেন, আরে হাসান সাহেব, আপনি তো খুবই কৃপণ লোক, একটা সিগারেট, তাও দিতে চাচ্ছেন না। শাহেদ আলতাফ অনেকক্ষণ চুপচাপ পান করছিলো, অল্প অল্প ঢুলে পড়ছিলো, এক সময় সব কিছু তার অসহ্য মনে হয়; সে ব'লে ওঠে, শালা এই গাঁইয়া কবিয়ালগো সাথে পান করতে আসার থিকা মেথরপট্টিই ফার বেটার, শালারা কবিতাও ল্যাখতে জানে না পানও করতে জানে না। আমি এখনই বেরিয়ে বাদামতলি চ'লে যাবো, সেইখানে গোলাপির সাথে মদ খাবো

ধূমপান আসলেই একটি ব্যাধি। এটি সামাজিক ও শারীরিক ব্যাধি। ধূমপান অনেক সামাজিক বিপর্যয় নিয়ে আসে। আমরা একটু পথে-ঘাটে তাকালে দেখব, অসংখ্য মানুষ জলন্ত সিগারেট হাতে নিয়ে ঘুরছে। এটি একটি ভয়াবহ দিক। তবে যারা এ রকম করছে, তাদের কাছে এটি বড় কোনো বিষয় মনে হয় না। তারা এটিকে স্বাভাবিক মনে করে। মনে করে, এটি কোনো ব্যাপারই নয়। এটি আসলেই খুব জঘন্য একটি বিষয়। এর প্রভাব খুবই মারাত্মক। সিগারেটের প্যাকেটেই লেখা থাকে “ধূমপান ক্যান্সারের কারণ” এরপরেও মানুষরা মুক্তচিন্তায় উহা সেবন করে।

তামাক মূলত হৃৎপিণ্ড, লিভার ও ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। ধূমপানের ফলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD) (এমফাইসিমা ও ক্রনিক ব্রংকাইটিস সহ), ও ক্যান্সার (বিশেষত ফুসফুসের ক্যান্সার, প্যানক্রিয়াসের ক্যান্সার, ল্যারিংস ও মুখগহ্বরের ক্যান্সার) এর ঝুঁকি বহুগুণ বাড়ায়। তামাক উচ্চ রক্তচাপ ও প্রান্তীয় রক্তনালীর রোগ করতে পারে। এর প্রভাব নির্ভর করে একজন ব্যক্তি দৈনিক কতটি ও কয় বছর ধরে ধূমপান করে তার উপর। অল্পবয়স থেকে এবং অধিক তামাকের ঘনত্বসম্পন্ন সিগারেট খাওয়ার ফলে ঝুঁকি আরো বাড়তে পারে। পরিবেশ থেকে প্রাপ্ত তামাকজাত ধোঁয়া ও পরোক্ষ ধূমপানও সকল বয়সী ব্যক্তির ক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়াও আপনারা অনলাইনে এমন বিভিন্ন আর্টিকেল থেকে জেনে নিতে পারেন।

“কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ” বইয়ের ৬৭ পৃষ্ঠায় লেখা আছে,

কয়েক দিন ধ’রেই হাসান ভাবছে একবার বাংলাবাজারের চৌধুরী ব্রাদার্সে যাবে, কথা ব'লে দেখবে তাঁরা তার প্রথম কাব্যগ্রন্থটি বের করবেন কি না? একেকবার সে খুবই অনুপ্রাণিত বোধ করে, পরেই মনে হয় যদি তাঁরা রাজি না হন? প্রথম কাব্যগ্রন্থ কি তাকে দুঃখ দেবে, লজ্জা দেবে, বুকে একটা ঘা জাগিয়ে দেবে? একদিন দুপুরে সে সুদূর বাংলাবাজারের পথে গিয়ে পৌঁছে; রিকশা থেকে নেমে খুঁজতে থাকে চৌধুরী ব্রাদার্স; তার লজ্জা লাগে, ভয় লাগে, মনে হয় ফিরে যাই, আবার সে একটি একটি ক'রে নম্বর আর নাম পড়তে পড়তে এগোতে থাকে। সে এক সময় চৌধুরী ব্রাদার্সের ছোটো দোকানটি দেখতে পায়। কলেজের ছাত্র যেমন প্রথম একলা পতিতাপল্লীর গলির সামনে এসে ভয়ে লজ্জায় হঠাৎ অন্য দিকে চ'লে যায়, তাকিয়ে দেখে কেউ তাকে দেখলো কি না, হাসানও দ্রুত হেঁটে পেরিয়ে যায় কয়েকটি দোকান, দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট কিনে ধরায়, আবার অন্য দিকে হাঁটতে থাকে, সিগারেটটি শেষ করে। সে কি ফিরে যাবে? সে কি চৌধুরী ব্রাদার্সে ঢুকবে? নিজের কী পরিচয় দেবে সে? নিজেকে কবি বলা কি ঠিক হবে? না, না, না। না, আর ঘোরাঘুরি নয় আর সিগারেট নয়; সে এবার ঢুকে পড়ে চৌধুরী ব্রাদার্সে, দু-দিকে ব'সে আছেন দুই সুদর্শন তরুণ, মাঝে এক অদ্ভুত তীক্ষ্ণ বৃদ্ধ। হাসান নিজের পরিচয় দিয়ে বলে, আমার নাম হাসান রশিদ।

“কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ” বইয়ের ৪০ পৃষ্ঠায় লেখা আছে,

অ্যাড হচ্ছে নিরন্তর বেচা বেচা বেচা, অবিনাশী টাকা টাকা টাকা । অ্যাড আর কী হাসান? অ্যাড হচ্ছে আধমিনিটের জন্যে অমরতা দান, বিশ্ববিখ্যাত করা। এখন কি সবাই বিশ্ববিখ্যাত? এই অসামান্য সময়ে প্রত্যেকের নিয়তি অন্তত আধমিনিটের জন্যে বিশ্ববিখ্যাত হওয়া । বিখ্যাত না হয়ে আর উপায় নেই, বিখ্যাত না হয়ে আমাদের মৃত্যু নেই। আধমিনিট বিখ্যাত হওয়ার জন্যে দণ্ডিত আমরা। আমি তোমার থেকে বিখ্যাত, রাস্তায় তোমাকে কেউ চেনে না, তোমাকে দেখে কেউ রিকশা থেকে লাফিয়ে নামার উত্তেজনা বোধ করে না, আমাকে দেখে করে; আমি সাবানের অ্যাড ছিলাম, এখন আমি রাস্তায় বেরোতে পারি না। সবাই তোমার পায়ে পড়তে চায়? না, সবাই আমাকে রেস্টহাউজে মোটেলে নিতে চায়, অন্তত একরাতের জন্যে পুলক অনুভব করতে চায়, এক রাত এক রাত। তুমি একরাতের বিলোল হিল্লোল উর্বশী? আমরা এখন সবাই একরাতের উর্বশী, সবাই আধমিনিটের সেলিব্রেটি। তুমি কি বাস্তব, তুমি কি বাস্তবতা, হে তরুণী? না, আমি বাস্তব নই, আমি ফ্যান্টাসি। এটা বাস্তবতার কাল নয়, এখন কেউ বাস্তবতা সহ্য করে না, এখন সব কিছু ভেঙেচুরে ফ্যান্টাসি তৈরি করতে হয়, এটা ফ্যান্টাসির যুগ। আমি ফ্যান্টাসির কন্যা। হাসান তরুণীটির সাথে কথা বন্ধ ক'রে একটি সিগারেট ধরায়।

আপনারা জেনে অবাক হবেন যে নাস্তিক হুমায়ুন আজাদ নিজেও বিড়িখোর ছিলেন। বিড়ি খাওয়া বিজ্ঞান বিরোধী হওয়া সত্ত্বেও তিনি মুক্তচিন্তায় বিড়ি খেতেন। কিছু কিছু নাস্তিকরা অন্যকে যে বিজ্ঞান শেখাতে আসে সেসব আসলে ভিত্তিহীন কেননা স্বয়ং নাস্তিক্যধর্মেই বিজ্ঞান বিরোধী কাজ করার বৈধতা রয়েছে। তাই দুনিয়ার সকল মানুষরা যদি বিজ্ঞানবিরোধী কাজ করে এরপরেও কিছু আসে যায় না। 

বিশ্রী নির্লজ্জ গালিগালাজ নাস্তিকটির বইতে

“কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ” বইয়ের ৬০ পৃষ্ঠায় লেখা আছে,

কবি রাকিব সুলতান এরই মাঝে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে। রাকিব সুলতান বলে, গিলতে আসতে দেরি করলে আর কবি হওন হইবো না ভাই, মদের গন্ধ পাইলেই কবিগো কুত্তার মতন ছুইট্টা আসতে হইবো শুয়োরের মতোন। ঘোৎঘোৎ করতে করতে আসতে হইবো, মদই হইল কবি গো পানি কবিগো নিশ্বাস, হায়, তাও অই গরিবরা পায় না, গার্মেন্টসূরা পায় খানকির পুতরা পায়, কবিরা পায় না। বইল্যা দিলাম আপনে ভাই কবি হইতে পারবেন না, যান, গ্যারামে গিয়া চেয়ারম্যানের মোটাগাটা একটা মাইয়ারে বিয়া কইর‍্যা সুখে ঘরসংসার করেন, পোলাপান পয়দা করেন। কবি সালেহ ফরিদউদ্দিন একপাশে তার প্রুফগুচ্ছ বিছিয়ে বসেছে, কাবাব আর নান খেয়ে চলছে, ও সব সময়ই ক্ষুধার্ত থাকে, এবং নিজের কবিতাও আবৃত্তি ক'রে চলছে, আর পান ক'রে চলছে। সে বলে, আসো, দোস্ত, বসো আমার পাশে; তোমারে একটা কবিতা শুনাই । সালেহ প্রুফগুচ্ছ থেকে একটি কবিতা পড়তে শুরু করে, ওর দেখে পড়তে হয় না, চোখ বুজেই সে আবৃত্তি করতে থাকে।

“কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ” বইয়ের ৮৩ পৃষ্ঠায় লেখা আছে,

ওগুলো একটু দেখে দিতে। এই চোদানি পাছামারা কোটিপতিগুলোকে কেনো যে শেষ বয়সে চাকরানিরোগের মতো কবিতারোগে ধরে, হাসান বুঝতে পারে না; এই চার ডেঞ্চারঅলাটা একলাই নয়, আরো কয়েকটিকে দেখেছে হাসান, তারা কবিতা লিখে অমর রবীন্দ্রনাথ হ'তে চায়। কোটি কোটি বনানী পাজেরো ইন্ডাস্ট্রি ইত্যাদির পর কেনো এই পেটমোটা গাড়লগুলোর এই অমরতারোগ? ওরা পাক্কা ঝানু লোক, অন্ধিসন্ধি সব জানে; কিন্তু হাসান ওদের পদ্য দু-একটি প'ড়ে দেখেছে, ভেতরে ভেতরে ওরা শিশু, ক্লাশ ফোরের শিশু, তুচ্ছ সরল মহান আবেগে ওরা ফুলেফেঁপে আছে। এক দিকে যারা ঈশ্বরের থেকেও এতো প্রাপ্তবয়স্ক অন্য দিকে তারা কীভাবে হয় এতো অপ্রাপ্তবয়স্ক? এই ঝানু পাক্কা কোটিপতিটাও একটা শিশু, বস্তি, ব্রিজ, রেলগাড়ি, ধর্ষিতা হালিমা রহিমা সালেহাকে নিয়ে সত্যেন্দ্রনাথ জসীমউদ্দীনের মতো অনেক পদ্য লিখে ফেলেছে, জীবনে যে সে কিছুই করতে পারে নি, তার সোনার মানবজীবন যে ব্যর্থ গেছে, চাষটাষ কিছুই করতে পারে নি, তার জন্যে সে পাতায় পাতায় হাহাকার করেছে, ‘প্রভু’, ‘প্রেম’, ‘হৃদয়’ লিখতেও বানান ভুল করেছে, কিন্তু কবি তাকে হ'তে হবে, অমরতা তার চাই।

নাস্তিকের বানানো ক্যারেক্টারের মদ খেয়ে মাতলামি

“কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ” বইয়ের ৮৩ পৃষ্ঠায় লেখা আছে,

এক দুপুরের সমাপ্ত মহাকাল। সেই দুপুরে, হাসানের মনে হচ্ছিলো, সে যাপন করছে। তার সমগ্র জীবন- সমগ্র জীবন আশি বা একশো বছরের যোগফল নয়, সমগ্র জীবন হচ্ছে বিশেষ মুহূর্তের তীব্র পরম অবর্ণনীয় রূপ, যার পর আর বাঁচতে ইচ্ছে করে না; জীবন তার কাছে এতো তীব্র এতো সম্পূর্ণরূপে কখনো ধরা দেয় নি, হয়তো আর ধরা দেবে না। সেই দুপুরে সে মদ্যপান করে নি, কিন্তু তার মনে হচ্ছিলো সে অজস্র কাল ধ'রে মদ্যপান ক'রে কোনো আদিম দেবতার মতো বিভোর মাতাল হয়ে প'ড়ে আছে প্রান্তরে, তাকে ঘিরে চলছে উৎসব, সে শুধু পান ক'রে চলছে অশেষ অমৃত। শ্যামলী কি পদ্মানদী? মানসসরোবর? শ্যামলী কি বঙ্গোপসাগর? শ্যামলী কি জ্যৈষ্ঠের জোয়ার? শ্রাবণের আদিগন্ত বন্যা? শ্যামলী কি মেঘ ঝড় বিদ্যুৎ? তারা ডুবে গিয়েছিলো নুহের প্লাবনে, বিশ্ব জুড়ে জল জল জল ছাড়া আর কিছু ছিলো না, অবিরল বৃষ্টি ঝরছিলো সমস্ত আকাশ ভেঙে চল্লিশ রাত চল্লিশ দিন ধরে, তারা দুটি মহাদেশ হারিয়ে যাচ্ছিলো। পারদের মতো অতল জলের তলে; তারা ভেঙে পড়ছিলো ব্যাবিলন জেরুজালেমের মতো, অজস্র শতাব্দী ধরে ভেঙে পড়া ছাড়া আর কিছু ছিলো না, শুধু ভেঙে পড়ার সুগম্ভীর শব্দ উঠছিলো তাদের শরীরের কক্ষের পর কক্ষ থেকে, গম্বুজ থেকে, মিনার থেকে, তোরণ থেকে; তারা গড়ে উঠছিলো বিদিশা বিক্রমপুর ময়নামতি মহাস্থানগড়ের মতো, তাদের শরীরের পাশ দিয়ে বয়ে চলছিলো প্রমত্ত পদ্মা ব্ৰহ্মপুত্র মেঘনা যমুনা, যেখানে এক বিষণ্ণ কবি তার নৌকোয় ব'সে লিখে চলছিলো তার তীব্রতম কবিতা।

অজস্র শতাব্দী কেটে গেলে এক শরীর আরেক শরীরকে জড়িয়ে ধ'রে প'ড়ে ছিলো ক্লান্ত সুখী প্রসন্ন পরিতৃপ্ত জনপদের মতো; তাদের শরীরের পলিমাটিতে এসে পড়ছিলো ধানের বীজ, গমের অঙ্কুর, ছড়িয়ে পড়ছিলো কলমিলতা, শেকড় ছড়াচ্ছিলো উদ্ভিদগণ, দিকে দিকে ডেকে উঠছিলো শালিক চড়ুই চিল। শ্যামলী নদীপারের জনপদের মতো কণ্ঠস্বরে তাকে বলেছিলো, হাসান, আমি তোমাকে ভালোবাসি। হাসান, আরেক জনপদ, পদ্মার জলকল্লোলের স্বরে বলেছিলো, আমি তোমাকে ভালোবাসি, শ্যামলী। শ্যামলী বলেছিলো, আমাদের শরীর একথাই শুধু বলছে; আজই আমি প্রথম আমার যে শরীর আছে বুঝলাম। হাসান বলেছিলো, একমাত্র শরীরই শুধু সত্য বলতে পারে, শরীরের থেকে বড়ো কোনো ঈশ্বর নেই। শ্যামলী বলেছিলো, হাসান, তোমাকে একটি কথা বলার আছে আমার। হাসান বলেছিলো, পরে বোলো, এই সুখকর ক্লান্তির পরে বোলো, আমি এখন ক্লান্তির পরম সুখ অনুভব করছি; আমি ক্লান্তি উপভোগ করতে চাই। শ্যামলী বলেছিলো, না, এখনই আমি বলতে চাই, এখনই বলার সময়, আমরা সুখে ক্লান্ত তখনই আমার কথাটি বলা ভালো।হাসান বলেছিলো, বোলো। শ্যামলী বলেছিলো, হাসান, আমি বিবাহিত।

“কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ” বইয়ের ৮৮ পৃষ্ঠায় লেখা আছে,

রাকিব বলে, দুইটা আইজ বড় কবিগো ইউটিলাইজ করতে দেন, পত্রিকায় আপনের কবিতা ছাপাই দেঅনের ব্যবস্থা করুম। মেয়ে তিনটি ঘোরাঘুরি করছে, হাসছে, গেলাশে ব্ল্যাক লেবেলও ঢেলে দিচ্ছে, মনে হচ্ছে বড়ো কবিদের ওরা অপছন্দ করছে না। কবি একটু রেগে ওঠে, কবিভাইরা, আমার কবিতা শোনেন, কবিতা শোননের লিগা আপনাগো দাওয়াত দিয়া আনছি, ব্ল্যাক লেবেল খাওয়াইতেছি। রাকিব বলে, আপনের ওই বালের কবিতা শুনতে শুনতে আমার প্যাট ভইরা মুতে ধরছেকোটিপতি কবি রাকিবকে টয়লেট দেখানোর জন্যে একটি মেয়েকে ডাকাডাকি করতে থাকে

রাকিব বলে, বড় কবিরা ছোট কবির বাসায় আইস্যা টয়লেটে মোতে না, তাগো কার্পেটে মোতে সোফায় মোতে লাখটাকার ফুলদানিতে মোতে রঙিন মাছের বাক্সে মোতে তাগো মোখে মোতে। রাকিব দাঁড়িয়ে জিপ খুলতে থাকে, এবং এক সময় শা শা ক'রে এদিকে সেদিকে প্রস্রাব করতে থাকে, তার ধারা থামে না। কোটিপতি কবিটি চিৎকার ক'রে ওঠে, এ আপনে কি করতেছেন, এ আপনে কি করতেছেন? এইটা বাথরুম না, এইটা বাথরুম না, এইটা আমার দশ লাখ ট্যাকার কাশ্মিরি কার্পেট। রাকিব বলে, হাসান, এই ভাগাড়ে তুমিও একটু মোতো, মোতার জইন্যে এর থিকা ভাল জায়গা আর পাইবা না, বড় কবিরা কোটিপতির বাড়িতে এইভাবেই মোতে, মোতো হাসান মোতো। রাকিব সুলতান যেনো পাতাগুয়েল হয়ে উঠেছে।

নাস্তিক গালিবাজ হুমায়ুন আজাদের কামাতুর কবিতা

হুমায়ুন আজাদের 'কাব্যসমগ্র' থেকে  “ঈ-শ! ঈ-শ! এ-ই, আ-হ্, এইখানে, প্রিয়!” এই নামে একটি কবিতা আছে। প্রকাশক 'আগামী প্রকাশনি, ফেব্রুয়ারী  ২০০৫। কবিতা হচ্ছে এমন, 

'ঈ-শ! ঈ-শ! এ-ই, আ-হ্‌, এইখানে, প্রিয়! এইখানে রাখো,জিভদেব! আ-হ্‌! ম'রে যাচ্ছি! চোষো, একটুকু ধীরে,আ-হ্‌! ডান চাঁদে ঠোঁট রেখে চিরকাল থাকো, পান করো, খাও, গেলো, শুষে নাও, ভেঙে, ফেড়ে, ছিঁড়ে।' 'ঈ-শ! ঈ-শ! এ-ই, আ-হ্‌, এইখানে, প্রিয়!' 'আমার মুঠোতে দাও রাজদন্ড! দাও! ধরি! বন্য দেবতা এতো দৃঢ়! পেশল! শক্তিমান! উচ্চশির! দাও তারে মুখগহ্বরে! কী প্রচন্ড! আ-হ্‌! কন্ঠের ভেতর শুনি পৌরাণিক অপরূপ কথা, দম বন্ধ হয়ে আসে! ভেঙে পড়ছি আশ্বিনের ঝড়ে!' 'ঈ-শ! ঈ-শ! এ-ই, আ-হ্‌, এইখানে, প্রিয়!' 'ঈ-শ! ঈ-শ! এ-ই, আ-হ্‌, এইখানে, শিউলি বোঁটায় রাখো ব্যাঘ্রজিভ, কমলোষ্ঠে, চোষো, ভাঙো! ঘন মধু ঝরে, আহ্‌! মধু খাও, প্রিয়! ম'-রে যা-চ্ছি! ফোঁটায় ফোঁটায় ঝ'-রে যাচ্ছি, ঢোকো, মধুময় চাকের ভেতরে।' 'ঈ-শ! ঈ-শ! এ-ই, আ-হ্‌, এইখানে, প্রিয়!' 'ঢো-কো! আরো! গভীর পাতালে! ই-শ! বিদ্ধ, খনন করো, আহ্! কে ঢুকছে? পশুদেব? কবিতা? ধীরে ধীরে ধীরে, এ-ই-বা-র দ্রু-ত, প্রিয়, ম'রে যা-চ্ছি, ঢোকো, দুই হাতে ধরো, ভে-ঙে যা-চ্ছি, ম'-রে যাচ্ছি, গ'লে যাচ্ছি মৃত্যুর গভীরে!' 'ঈ-শ! ঈ-শ! এ-ই, আ-হ্‌, এইখানে, প্রিয়!'

কুরআনে গালিগালাজ আছে?

নাস্তিকরা বিভিন্ন আয়াত কাটছাঁট করে, দেখানোর চেষ্টা করে কুরআনে নাকি গালিগালাজ আছে। আসলেই কি তাই? আমরা নাস্তিকদের দেখানো আয়াত গুলো পাঠ করবো এবং ভালো করে যাচাই করবো নাস্তিকদের ইসলাম বিরোধী বিশ্বাস কি আসলেই সঠিক কিনা।

আয়াত ১/ 

সুরা বাকারা ২:১৭১ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

বস্তুতঃ এহেন কাফেরদের উদাহরণ এমন, যেন কেউ এমন কোন জীবকে আহবান করছে যা কোন কিছুই শোনে না, হাঁক-ডাক আর চিৎকার ছাড়া বধির মুক, এবং অন্ধসুতরাং তারা কিছুই বোঝে না

আমরা সুরা বাকারার ১৬৯ ও ১৭০ আয়াত পড়ি। সে তো এ নির্দেশই তোমাদিগকে দেবে যে, তোমরা অন্যায় ও অশ্লীল কাজ করতে থাক এবং আল্লাহর প্রতি এমন সব বিষয়ে মিথ্যারোপ কর যা তোমরা জান না। আর যখন তাদেরকে কেউ বলে যে, সে হুকুমেরই আনুগত্য কর যা আল্লাহ তা'আলা নাযিল করেছেন, তখন তারা বলে কখনো না,আমরা তো সে বিষয়েরই অনুসরণ করব। যাতে আমরা আমাদের বাপ-দাদাদের কে দেখেছি। যদি ও তাদের বাপ দাদারা কিছুই জানতো না, জানতো না সরল পথও।

কুরআন স্পষ্ট করেই বলছে যে কাফেররা অন্যায় ও অশ্লীল কাজ করতো এবং আল্লাহর নামে মিথ্যাচার করতো এবং তাদেরকে যখন বলা হতো আল্লাহকে মানো তখন এই সত্য কথাটি তারা মেনে নিতে চাইতো না এবং নিজেদের বাপ দাদাদের অন্ধঅনুসরণ করতো। এই কারণেই পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ কাফেরদেরকে শাসন করে বধির মুক, এবং অন্ধ বলেছেন। বুদ্ধি থাকা সত্ত্বেও কেউ যদি মূর্খের মতো কাজ করে তাকে কি বধির মুখ অন্ধ বলা অন্যায়?

আয়াত ২/

সুরা বাকারা ২:২৫৪ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে রুযী দিয়েছি, সেদিন আসার পূর্বেই তোমরা তা থেকে ব্যয় কর, যাতে না আছে বেচা-কেনা, না আছে সুপারিশ কিংবা বন্ধুত্ব। আর কাফেররাই হলো প্রকৃত যালেম

যারা আল্লাহর সাথে কুফুরি করে তাদেরকে কাফের বলা হয় আর ইসলামের দৃষ্টিতে নিঃসন্দেহে কুফুরি করা বড় অপরাধ। তাছাড়া আমরা যদি কুরআনের ২৫৬ ও ২৫৭ আয়াত পাঠ করি তাহলে দেখবো,

দ্বীনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি বা বাধ্য-বাধকতা নেই। নিঃসন্দেহে হেদায়াত গোমরাহী থেকে পৃথক হয়ে গেছে। এখন যারা গোমরাহকারী `তাগুত'দেরকে মানবে না এবং আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপন করবে, সে ধারণ করে নিয়েছে সুদৃঢ় হাতল যা ভাংবার নয়। আর আল্লাহ সবই শুনেন এবং জানেন। যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। আর যারা কুফরী করে তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো দোযখের অধিবাসী, চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে।

বলা হয়েছে। তাই যারা কাফের হয়েছে তারা নিজের প্রতি নিজেই যুলুম করেছে। আর এটাই উক্ত আয়াতের ভাবার্থ যে কাফেররাই প্রকৃত যালেম। এখানেও অন্যায়ভাবে কিছু বলা হয়নি তাই এটাকে গালি বলাটা মিথ্যাচার ছাড়া কিছু নয়।

আয়াত ৩/

সুরা জুম’য়া ৬২:৫ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, 

যাদেরকে তওরাত দেয়া হয়েছিল, অতঃপর তারা তার অনুসরণ করেনি, তাদের দৃষ্টান্ত সেই গাধা, যে পুস্তক বহন করে, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে, তাদের দৃষ্টান্ত কত নিকৃষ্ট। আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না।

এই আয়াতের মধ্যেই স্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছে তারা আল্লাহর সত্য আয়াত সমূহকে মিথ্যা বলে। কাফেরদের এমন দাবি ঠিক নয় তাই সেই মিথ্যাকে সমালোচনা করে তাদেরকে নিকৃষ্ট বলা হয়েছে। ধরুন যেসব নাস্তিকরা ইসলাম নিয়ে মিথ্যাচার করে আপনি যদি তাদের মিথ্যাচারের জন্য তাদেরকে নিকৃষ্ট বলেন এটাকে কি গালি বলা যাবে নাকি যা সত্য সেটাই বলা হয়েছে বলতে হবে?

আয়াত ৪/

সুরা ফুরকান ২৫:৪৪ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

আপনি কি মনে করেন যে, তাদের অধিকাংশ শোনে অথবা বোঝে? তারা তো চতুস্পদ জন্তুর মত; বরং আরও পথভ্রান্ত।

ডারউইন সকল মানুষকে আক্ষরিক অর্থেই জন্তু জানোয়ার বানিয়ে দিয়ে গেছেন সেই হিসেবে নাস্তিকরা তো এই আয়াতকে নিয়ে আপত্তি করবার সুযোগ থাকে না। উক্ত আয়াতে তাদেরকেই চতুস্পদ জন্তুর মতো বলা হয়েছে যাদের বুদ্ধি থাকা সত্ত্বেও প্রয়োগ করে না, যাদের সৎ সাহস থাকা সত্ত্বেও ব্যাবহার করে না।

সুরা ফুরকানের ৪১ ও ৪৩ নাম্বার আয়াতটি পড়লে স্পষ্ট হয়ে যায়। সেখানে বলা হয়েছে, তারা যখন আপনাকে দেখে, তখন আপনাকে কেবল বিদ্রুপের পাত্ররূপে গ্রহণ করে, বলে, এ-ই কি সে যাকে আল্লাহ রসূল' করে প্রেরণ করেছেন? আপনি কি তাকে দেখেন না, যে তারা প্রবৃত্তিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে? তবুও কি আপনি তার যিম্মাদার হবেন? 

এরপরে উক্ত আয়াত বলা হয়েছে। কাফেররা প্রথমে নবীজি মোহাম্মদ (সা)কে নিয়ে বিদ্রুপ করতো এরপরে আল্লাহ কাফেররা যে নিজেদের বিবেক বুদ্ধি প্রয়োগ করে না সেই কারণে চতুস্পদ জন্তুর মতো বলে উদাহরণ দিয়েছেন। আল্লাহ তো কুরআনে শুধু উদাহরণ দিয়েছেন আর ডারউইন তো আক্ষরিক অর্থেই দুনিয়ার সকল মানুষকে জন্তু জানোয়ার ফতোয়া দিয়ে গিয়েছেন। উক্ত আয়াতের কারণে যদি কুরআনকে নাস্তিকরা বাতিল করতে চায় তাহলে প্রথমে বিবর্তনতত্ত্বকে বাতিল ঘোষণা করুক। আছে সেই সৎ সাহস? জানি, নাই।

আয়াত ৫/

সুরা তাওবা ৯:২৮ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, 

হে ঈমানদারগণ! মুশরিকরা তো অপবিত্র। সুতরাং এ বছরের পর তারা যেন মসজিদুল-হারামের নিকট না আসে। আর যদি তোমরা দারিদ্রে?র আশংকা কর, তবে আল্লাহ চাইলে নিজ করুনায় ভবিষ্যতে তোমাদের অভাবমুক্ত করে দেবেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

সুরা তওবার সামনের অর্থাৎ ৩২ ও ৩৩ নাম্বার আয়াতটি পড়ি। তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূরকে নির্বাপিত করতে চায়। কিন্তু আল্লাহ অবশ্যই তাঁর নূরের পূর্ণতা বিধান করবেন, যদিও কাফেররা তা অপ্রীতিকর মনে করে। তিনিই প্রেরণ করেছেন আপন রসূলকে হেদায়েত ও সত্য দ্বীন সহকারে, যেন এ দ্বীনকে অপরাপর দ্বীনের উপর জয়যুক্ত করেন, যদিও মুশরিকরা তা অপ্রীতিকর মনে করে।

তাহলে আমরা বুঝলাম কাফেররা আল্লাহর দ্বীনকে বিধানকে দুনিয়া থেকে মুছে দিতে চায় এমনকি আল্লাহ উনার দ্বীনকে জয়যুক্ত করবেনই যদিও মুশরিকরা সেটা পছন্দ না করেন। তাহলে আল্লাহর দ্বীনকে যারা নিভিয়ে দিতে চায় তারা কিভাবে পবিত্র হতে পারে?

এছাড়া তাফসীরে ইবনে কাসীর,৮ খণ্ড,৬৭২ ও ৬৭৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

আল্লাহ তা'আলা তাঁর পবিত্র দ্বীনের অনুসারী এবং পাক পবিত্র মুসলিম বান্দাদেরকে হুকুম করছেন যে, তারা যেন ধর্মের দিক থেকে অপবিত্র মুশরিকদেরকে বায়তুল্লাহর পাশে আসতে না দেয়। এই আয়াতটি নবম হিজরীতে অবতীর্ণ হয়। ঐ বছরই রাসূলুল্লাহ (সঃ) আলী (রাঃ)-কে আবূ বকর (রাঃ) -এর সাথে প্রেরণ করেন এবং নির্দেশ দেনঃ “হজ্বের সমাবেশে ঘোষণা করে দাও যে, এ বছরের পরে কোন মুশরিক যেন হজ্ব করতে না আসে এবং কেউ যেন উলঙ্গ হয়ে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ না করে।” শরীয়তের এই হুকুমকে আল্লাহ তা'আলা এমনিতেই পূর্ণ করে দেন। সেখানে আর মুশরিকদের প্রবেশ লাভের সৌভাগ্য হয়নি এবং এরপরে উলঙ্গ অবস্থায় কেউ আল্লাহর ঘরের তাওয়াফও করেনি। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) গোলাম ও যিম্মী ব্যক্তিকে এই হুকুমের বহির্ভূত বলেছেন। মুসনাদে আহমাদে জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “এ বছরের পরে চুক্তিকৃতগণ ছাড়া এবং তাদের গোলামরা ছাড়া আর কেউই যেন আমাদের মসজিদে প্রবেশ না করে।” কিন্তু এই মারফূ' হাদীস অপেক্ষা বেশী সহীহ সনদযুক্ত মাওকুফ রিওয়ায়াত রয়েছে।

তাহলে আমরা আরও পরিস্কার ভাবে জানতে পারলাম মুশরিকরা মুক্তচিন্তায় নগ্ন হয়ে বায়তুল্লাহ তওয়াফ করতো যা অবশ্যই পবিত্রতম কাজ নয়। এই কারণেই মুশরিকদেরকে অপবিত্র বলা হয়েছে। আর অপবিত্রকে অপবিত্র বলা মোটেও অন্যায় নয়। 

আয়াত ৬/

সুরা আনফাল ৮:৫৫ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, 

সমস্ত জীবের মাঝে আল্লাহর নিকট তারাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট, যারা অস্বীকারকারী হয়েছে অতঃপর আর ঈমান আনেনি। আবার সুরা বাইয়্যেনাহ ৯৮:৬ আয়াতে বলা হয়েছে, আহলে-কিতাব ও মুশরেকদের মধ্যে যারা কাফের, তারা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে থাকবে। তারাই সৃষ্টির অধম

সুরা আনফালের ৫৪ ও ৫৬ আয়াতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, যেমন ছিল রীতি ফেরাউনের বংশধর এবং যারা তাদের পূর্বে ছিল, তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল স্বীয় পালনকর্তার নিদর্শনসমূহকে। অতঃপর আমি তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছি তাদের পাপের দরুন এবং ডুবিয়ে মেরেছি ফেরাউনের বংশধরদেরকে। বস্তুতঃ এরা সবাই ছিল যালেম। যাদের সাথে তুমি চুক্তি করেছ তাদের মধ্য থেকে অতঃপর প্রতিবার তারা নিজেদের কৃতচুক্তি লংঘন করে এবং ভয় করে না।

ইসলাম বিদ্বেষী ফেরাউনের কুকর্মের আলাপ এখানে করবো না সেটা আপনারা প্রায় সবাই জানেন বাকি নবীজি মোহাম্মদ (সা) এর যুগের ইসলাম বিদ্বেষীরা মুসলিমদের সাথে একাধিকবার চুক্তি ভঙ্গ করেছে যা নিঃসন্দেহে অপরাধ। আর এই অপরাধীদেরকেই সব থেকে নিকৃষ্ট বলা হয়েছে। আল্লাহকে অস্বীকার করা, নবীজি মোহাম্মদ (সা)কে অস্বীকার করা নিঃসন্দেহে বড় অপরাধ। আর এই অপরাধীরা নিঃসন্দেহে সৃষ্টির অধম কোনো সন্দেহ নেই।

তাহলে সমগ্র আয়াত গুলো জানার পড়ে আমরা বুঝতে পারলাম কুরআন সত্যকে সত্যি বলে আর মিথ্যাকে মিথ্যা, নিকৃষ্টকে নিকৃষ্ট বলে আর অধমকে অধম, জুলুমকারীকে জুলুমকারী বলে আর অপবিত্রকে অপবিত্রকারী বলে। কুরআনে মোটেও কাউকে গালিগালাজ করেনি বরং যা সত্যি সেটাই বলেছে মাত্র। 

নবীজি (সা) বন্ধ্যা নারী বলে গালি দিতেন?


নাস্তিক্যধর্মের অনুসারীরা নিচের দুটো হাদিস দেখিয়ে বলে নবীজি (সা) নাকি বন্ধা নেড়ি বলে নারীকে অপমান করতেন। আসুন প্রথমে হাদিস দুটো পড়ি এরপরে আসল সত্যিতা জানবো।


সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩১১৯, সহিহ হাদিসঃ ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন রওনা হওয়ার ইচ্ছা করলেন, তখন সফিয়্যাকে তাঁর তাঁবুর দরজায় চিন্তিতা ও অবসাদগ্রস্তা দেখতে পেলেন। তিনি বললেনঃ বন্ধ্যা নারী! তুমি আমাদের (এখানে) আটকে রাখবে? তিনি পুনরায় তাকে বললেনঃ তুমি কি কুরবানীর দিন (বায়তুল্লাহ) যিয়ারত করেছ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাহলে রওনা হও।-ihadis.com


সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৩০৭৩, সহিহ হাদিসঃ আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাফিয়্যা (রাঃ) সম্পর্কে জানতে চাইলে আমরা বললাম, সে ঋতুবতী হয়েছে। তিনি বলেনঃ বন্ধ্যা, ন্যাড়া, সে তো আমাদের আটকে ফেলেছে। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! তিনি কোরবানীর দিন তাওয়াফ করেছেন। তিনি বলেনঃ তাহলে অসুবিধা নেই। তোমরা তাকে রওনা হতে বলো।-ihadis.com


উক্ত হাদিসে নবীজি মোহাম্মদ (সা) বন্ধ্যা নেড়ি বলে গালি দিয়েছেন ব্যাখ্যাটি নাস্তিকদের বানানো। কেননা কোনো হাদিস ব্যাখ্যাগ্রন্থে এই কথা পাইনি যে নবীজি মোহাম্মদ (সা) সাফিয়া (রা)কে গালি দিয়েছেন। সুতরাং উক্ত হাদিসকে কেন্দ্র করে নাস্তিকরা যে লজিক্যাল ফ্যালাসি করেছে এটা স্পষ্ট। অর্থাৎ নাস্তিকরা “বন্ধ্যা নেড়ি” শব্দ দেখেই এই সিদ্ধান্তে এসেছে যে উনি গালি দিয়েছেন। আসলেই কি নবীজি মোহাম্মদ (সা) গালি দেয়ার অর্থে অথবা সাফিয়া (রা)কে অপমান করার অর্থে সেই কথা বলেছিলেন?


আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ২৭১, সহিহ হাদিসঃ

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাঃ) নিজেও অশ্লীলভাষী ছিলেন না এবং অশ্লীলতাকে তিনি পছন্দও করতেন না। তিনি বলতেনঃ তোমাদের মধ্যে উত্তম স্বভাব-চরিত্রের লোকই সর্বোত্তম।-ihadis.com


আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ৪৩২, সহিহ হাদিসঃ

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কখনো অশ্লীলভাষী, অভিশাপকারী বা গালি বর্ষণকারী ছিলেন না। অসন্তুষ্ট হলে তিনি বলতেনঃ তার কি হলো? তার কপাল ধূলিমলিন হোক।-ihadis.com


রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ ৬৩০, সহিহ হাদিসঃ

আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে ‘আস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (প্রকৃতিগতভাবে কথা ও কাজে) অশ্লীল ছিলেন না এবং (ইচ্ছাকৃতভাবেও) অশ্লীল ছিলেন না। আর তিনি বলতেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই উত্তম, যে তোমাদের মধ্যে সুন্দরতম চরিত্রের অধিকারী।’’-ihadis.com


আল লু’লু ওয়াল মারজান, হাদিসঃ ১৫০০, সহিহ হাদিসঃ

‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘আম্‌র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অশ্লীল ভাষী ও অসদাচরণের অধিকারী ছিলেন না। তিনি বলতেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম যে নৈতিকতায় সর্বোত্তম।-ihadis.com


এসব হাদিস থেকে তো পরিস্কার যে নবীজি মোহাম্মদ (সা) সাফিয়াকে গালি দিতে পারেন না। উক্ত হাদিসে যেই আরবি শব্দ এসেছে সেটি হচ্ছে “‘আক্বরা হালক্বা’ (عَقْرَى حَلْقَى)‘ এর একটি অর্থ হয় বন্ধ্যা নেড়ি আরও অনেক অর্থ রয়েছে তার মধ্যে আছে, পশু কুরবানি করা/জবেহ করা। আমরা কিন্তু উপরের হাদিসেই দেখেছি সেখানে হজ্জ সংক্রান্ত আলাপ হচ্ছে। হজ্জ্বের একটি অংশ হলো পশু জবেহ করা, যাকে আমরা কুরবানি জানি। আলোচ্য হাদিসে তাই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আক্বরা শব্দের অর্থ কিন্তু বন্ধ্যাও হয়। আবার জবেহ করাও হয়। এখন এখানে কোনটা বোঝাচ্ছে? সবকিছু মিলিয়ে দেখলে এই দাঁড়ায় হাদিসটি হজ্জ্বের সাথে সম্পৃক্ত। হজ্জ্বের সাথে বন্ধ্যা হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। এটা সালফে সালেহিনদের বুঝ নয়। বরং, এখানে হজ্জ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ কুরবানিকেই নির্দেশ করছে। সুতরাং উক্ত হাদিসে অনুবাদে “বন্ধ্যা নেড়ি‘ শব্দ চয়ন করা হয়েছে সেটি সঠিক নয় এই কথা একদম পরিস্কার।


আরও কিছু হাদিস পড়ি যেখানে নবীজি মোহাম্মদ (সা) বিরক্ত প্রকাশ করেন এমন অর্থে “‘আক্বরা হালক্বা’ শব্দটি বলেছিলেন। গালাগালি বা অপমান করার অর্থে নয়।


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ১৭৭২, সহিহ হাদিসঃ

‘আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে রওয়ানা হলাম। হজ্জ আদায় করাই ছিল আমাদের উদ্দেশ্য। আমরা(মক্কায়) আসলাম, তখন আমাদের হালাল হওয়ার নির্দেশ দেন। অতঃপর প্রত্যাবর্তনের রাত এলে সাফিয়্যাহ বিন্তু হুয়াই (রাঃ) এর ঋতু আরম্ভ হল। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘হালকা’ ‘আকরা’, বলে বিরক্তি প্রকাশ করে বললেনঃ আমার ধারণা, সে তোমাদের আটকিয়েই ফেলবে। অতঃপর বললেনঃ তুমি কি কুরবানীর দিন তাওয়াফ করেছিলে? সাফিয়্যাহ (রাঃ) বললেনঃ হ্যাঁ। তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তবে চল। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি তো (‘উমরা আদায় করে) হালাল হইনি। তিনি বললেনঃ তাহলে এখন তুমি তান’ঈম হতে ‘উমরাহ আদায় করে নাও। অতঃপর তাঁর সঙ্গে তার ভাই [‘আব্দুর রাহমান ইব্‌নু আবূ বক্‌র(রাঃ)] গেলেন। ‘আয়েশা (রাঃ) বলেন, (‘উমরা আদায় করার পর) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়, যখন তিনি শেষ রাতে (বিদায়ী তাওয়াফের জন্য) যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেনঃ অমুক স্থানে তোমরা সাক্ষাৎ করবে।-ihadis.com


আল লু'লু ওয়াল মারজান, হাদিসঃ ৮৩৭, সহিহ হাদিসঃ

‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, প্রত্যাবর্তনের রাত এলে সাফিয়্যাহ বিন্‌তু হুয়াই (রাঃ)-এর ঋতু আরম্ভ হলে তিনি বললেন, আমার ধারণা, আমি তোমাদের আটকে ফেললাম। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা শুনে ‘আকরা’ ‘হালকা’ বলে বিরক্তি প্রকাশ করে বললেনঃ তুমি কি কুরবানীর দিন তাওয়াফ করেছিলে? সাফিয়্যাহ (রাঃ) বললেন, হাঁ। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তবে চল।-ihadis.com


সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩১১৮, সহিহ হাদিসঃ

‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ কোন পুরুষ স্ত্রীর সাথে সাধারণত যা করার ইচ্ছা করে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সফিয়্যাহ্ (রাঃ)-এর সাথে তাই করার ইচ্ছা করলেন। তারা বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! তিনি হায়যগ্রস্তা। তিনি বললেন, তাহলে সে তো আমাদের এখানে অবস্থান করতে বাধ্য করবে। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি কুরবানীর দিন (বায়তুল্লাহ-এর) যিয়ারাত করেছেন। তিনি বললেন, তাহলে সে তোমাদের সঙ্গে যাত্রা করুক।-ihadis.com


এরপরেও তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেয়া হয় যে “বন্ধ্যা নেড়ি”ই বলেছেন এরপরেও সমস্যা নেই কেননা সাফিয়া (রা) এর হায়েজ হয়েছিল আর উনি যে কুরবানীর দিন (বায়তুল্লাহ-এর) যিয়ারাত করেছেন এটা নবীজি মোহাম্মদ (সা) জানতেন না ফলে সাফিয়া (রা)কে বন্ধ্যা নেড়ি বলে উদাহরণ দিয়েছেন। অর্থাৎ বন্ধ্যা নারীরা যেমন সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম তেমনি সাফিয়া (রা) এর হায়েজ হবার কারণে হজ্জযাত্রীরা যাত্রা করতে অক্ষম হয়ে গিয়েছিল। এখানে কোনোভাবেই নবীজি মোহাম্মদ (সা) সাফিয়া (রা)কে অপমান করার জন্য গালাগালি করেছেন প্রমাণিত হয় না।


যদি গালাগালিই উদ্দেশ্য হতো তাহলে নবীজি মোহাম্মদ (সা) জানার পরে সাফিয়া (রা)কে যেতে দিতেন না বরং নির্যাতন অত্যাচারও করতেন যেহেতু নাস্তিকদের অন্ধবিশ্বাস অনুযায়ী নবীজি মোহাম্মদ (সা) নাকি দুনিয়ার সব থেকে খারাপ মানুষ ছিলেন! তো খারাপ মানুষ স্ত্রীকে কেন গালি দিয়ে যেতে বলবে? নির্যাতন অত্যাচার করবে না? কি নাস্তিক?


এই বিষয় গবেষণালব্ধ লেখাটি পড়ুন (খ),(গ)। তাহলে আরও বুঝতে পারবেন নাস্তিকরা ইসলাম সম্পর্কে কতটা অজ্ঞ ও মূর্খ হয়ে ইসলামের সমালোচনা করে থাকে।


বানরের জ্ঞাতিগোষ্ঠী বলেছিলেন?


সিরাতুন নবী (সাঃ), ইবনে হিশাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, তৃতীয় খণ্ড, ২৩১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,


ইবন ইসহাক বলেন : রাসূলুল্লাহ্ (সা) আলী (রা)-কে তাঁর পতাকা নিয়ে আগেই পাঠিয়ে দিলেন। বাকি সকলেও দ্রুত রওনা হলেন, আলী (রা) সবার আগে পৌঁছে গেলেন। তিনি দুর্গগুলোর কাছাকাছি পৌঁছে শুনতে পেলেন, তারা রাসূলুল্লাহ্ (সা) সম্পর্কে অশ্রাব্য গলাবাজি করছে। তিনি দ্রুত ফিরে আসলেন এবং পথিমধ্যে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সংগে তাঁর সাক্ষাৎ হল । তিনি আরয করলেন : ইয়া রাসূলাল্লাহ্ (সা)! আপনি ইতর প্রকৃতির লোকগুলোর নিকটবর্তী হবেন না। তিনি বললেন : কেন ? সম্ভবতঃ তুমি আমার প্রতি তাদের কোন কটূক্তি শুনছেতিনি বললেন : হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ (সা)! তখন রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন : আমাকে দেখলে তারা ওসব আর মুখে আনবে না। তিনি তাদের দুর্গগুলোর নিকটবর্তী হয়ে বললেন : হে বানরের জ্ঞাতিগোষ্ঠী ! আল্লাহ্ তা'আলা কি তোমাদের লাঞ্ছিত করেন নি? তিনি কি তোমাদের প্রতি আযাব নাযিল করেন নি? তারা বলল : হে আবুল কাসিম ! তা তো আপনার অজানা নয়।


নাস্তিকরা যে কত বাটপার হয় এখানে প্রমাণ হয়ে গেলো। বনু কুরাইজা সন্ত্রাসীগোষ্ঠীরা নবীজি মোহাম্মদ (সা)কে মুক্তচিন্তায় এমন এমন গালিগালাজ করে যে সেসব মুখে পর্যন্ত আনা যাচ্ছিল না সেখানে নবীজি মোহাম্মদ (সা) তাদেরকে “হে বানরের জ্ঞাতিগোষ্ঠী” বলে কি এমন অন্যায় করলেন? উল্টো নাস্তিকদের তো খুশি হওয়ার কথা যে হযরত মোহাম্মদ (সা) ইসলাম বিদ্বেষীদেরকে বান্দরের আত্মীয়স্বজন বলেছিলেন। নাস্তিকরা খুশি না হয়ে উল্টো নবীজি মোহাম্মদ (সা)কে খারাপ মনে করছে কেন? নাস্তিকদের বই পত্রেই তো আছে নাস্তিকরা জন্তু জানোয়ার বান্দর শিপ্পাঞ্জিদের আত্মীয় স্বজন। কি বিশ্বাস হচ্ছে না? আচ্ছা আমিই প্রমাণ দিয়ে দেখাচ্ছি।


নাস্তিক বিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্স এর “দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ” বাংলা অনুবাদ করেছেন, কাজি মাহবুব হাসান, এই বইয়ের ১৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

এটা এখন সুস্পষ্ট সত্য যে আমরা শিপ্পাঞ্জিদের নিকটাত্মীয়, হয়তো বানরদের কিছুটা দূরের আত্মীয়, আর্ডভার্ক বা ম্যানিতিদের আরো খানিকটা দূরের আত্মীয়, আরো দূরের আত্মীয় কলা এবং শালগমদের…ক্রমশ যত ইচ্ছা দীর্ঘ করা যেতে পারে এই তালিকা।


সন্ত্রাসী বনু কুরাইজাদেরকে বানরের জ্ঞাতিগোষ্ঠী বলাতে যদি গালাগালি হয় আর অত্যন্ত সাম্প্রদায়িক এবং নোংরা মন মানসিকতার পরিচয় হয়ে থাকে তাহলে নাস্তিকদের বানানো এই নৈতিকতা অনুযায়ী অভিজিৎ রায়কে কেন সাম্প্রদায়িক ও নোংরা মানসিকতার বলে ঘোষণা করলো না নাস্তিকরা? “বিশ্বাসের ভাইরাস” নামে সে একটি বই লিখেছিল সেখানে দুনিয়ার কোটি কোটি আস্তিক বিশ্বাসীদেরকে ভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে দেখানোর পায়তারা করেছে। এটা কি গালি নয় তাহলে? এটা কি সাম্প্রদায়িকতা নয় তাহলে? এটা কি নোংরা মস্তিস্কের লক্ষণ নয়? নাস্তিকরা নিজেদের বানানো নৈতিকতা থেকে দাবি করুক অভিজিৎ রায়রা নোংরা মানসিকতার প্রাণী ছিলেন? সাহস নেই তাই না?


উপসংহারঃ

মদ-গাজা, বিড়ি, গালাগালি, নির্লজ্জতা, মাকে নিয়ে নির্লজ্জ কথাবার্তা মুক্তচিন্তায় হুমায়ুন আজাদ যেভাবে কুলিয়েছে সেভাবেই বইতে যুক্ত করে দিয়েছে সাহিত্যের নামে। যেসব লোকেরা হুমায়ুন আজাদ নাস্তিকটির বই পড়ে নাস্তিক্যধর্ম গ্রহণ করেছে তাদের মাথা কতটুকু সুস্থ স্বাভাবিক সেটা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্নের সুযোগ থেকে যায়। গণ্ডমূর্খ গালিবাজ নাস্তিক গুলো আবার বলে ইসলাম নাকি গালাগালি শিক্ষা দেয়। নাস্তিক্যধর্মে মুক্তচিন্তায় মিথ্যাকথা বলা বৈধ কিন্তু আমরা তো নাস্তিক নই। আমরা তো মুক্তচিন্তক নই। আমরা সভ্য মানুষ। আমরা বুদ্ধিমান মানুষ। আমরা ঠিকই বুঝে নিয়েছি প্রকৃত গালিবাজ আসলে কারা। অন্যদিকে ইসলাম কখনো নোংরা অসভ্য গালিগালাজ শিক্ষা দেয় না যেভাবে নাস্তিকদের আদর্শ শিক্ষা দেয়। ইসলাম নিয়ে নাস্তিক্যধর্মের অনুসারীদের মিথ্যাচার করাটা একটি পেশার মতো। নাস্তিকরা নিজেদের ইসলাম বিরোধী অন্ধবিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠিত করতে সততাকে খুন করে এরপরে ইসলামের সমালোচনা করে থাকে যা যেকোন সুস্থ মাথার মানুষ উপলব্ধি করতে সক্ষম।

তথ্যসূত্রঃ

[ক] ভাষার ব্যবহার ও গালি বৃত্তান্ত https://blog.muktomona.com/2011/06/20/16882/?fbclid=IwAR3exllv56t30Ec2tAg0rUQluQjSSk0D0Hi5wyBtXQ0vZxI1KKSjvNriZTg

[খ] রাসূল (ﷺ) কি সাফিয়্যা (রাঃ) কে কটু কথা বলেছিলেন? www.frommuslims.com

[গ] নবী(ﷺ) কি মন্দভাষী ছিলেন? https://response-to-anti-islam.com/

[ঘ] গালি দিয়ে আমরা এত সুখ পাই কেন?

https://www.bbc.com/bengali/news-56973646?fbclid=IwAR2cO6ofAPNVtgSM8dKlCUg-DctGVuBix537yVevnK5GT4qR8u42W6CjzjA


প্রাসঙ্গিক লেখা সমূহঃ

বনু মুস্তালিকের যুদ্ধবন্দিনীদের ধর্ষণ করা হয়েছিল?

নাস্তিক্যধর্মে আত্মহত্যার বৈধতা

নাস্তিকরা যেভাবে লজিকাল ফ্যালাসি করে

নাস্তিকদের বিভিন্ন প্রকার মুক্তচিন্তা

সংশয়বাদে যৌক্তিক সংশয়

মীরজাফরদের মুক্তচিন্তা

মহাবিশ্বকে স্রষ্টা বানায়নি দাবির প্রমাণ কোথায়?


এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post