মক্কাবিজয়সহ সত্যময় ভবিষ্যৎবাণী


বিষয়ঃ মক্কাবিজয়সহ সত্যময় ভবিষ্যৎবাণী 

লিখেছেনঃ এমডি আলী

===================================


কগনিটিভ বায়াস হচ্ছে পক্ষপাতদুষ্ট জ্ঞান। এটি একটি ভুল পদ্ধতি। মানুষের আবেগ, পূর্ব থেকে নিয়ে আসা বিশ্বাস অথবা অবিশ্বাস, পরিবেশিক সূত্রে প্রাপ্ত নাস্তিকতা, ইসলামবিদ্বেষীতা চর্চা। ইসলামের কোনো সমালোচক যখন আশে পাশের সবাইকে দেখে ইসলামের বিরুদ্ধে সমালোচনা করতে, নবী মোহাম্মদ (সা)কে নিয়ে অযৌক্তিক নানান অশ্লীল কথা ছড়াছড়ি করতে,গালাগালি করতে এসবই তার সামনে থাকা তথ্য প্রমাণ গুলোর মধ্যে গ্রহণ বর্জনের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে। এক কথায় সেই লোকটি যদিও নিজেকে চিন্তার মুক্তির আন্দোলনের সৈনিক দাবি করুক না কেন তারা আসলে নিজের অজান্তেই পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত থাকে। অর্থাৎ সে যা শুনতে চায়, যা শুনলে সে আনন্দিত হয়, যা তার মুক্তচিন্তার বিশ্বাসকে স্বস্তি দেয়, সেই ধরণের তথ্য প্রমাণ সম্পর্কে অবচেতনভাবেই তার পক্ষপাত থাকে।

একজন ব্যক্তি যখন বিষয়ীগতভাবে তথ্য সংগ্রহ বা স্মরণ রাখে, তখন তার পূর্ব ধারণা বা সংস্কার বা নিজস্ব ধ্যানের সাথে যা মিলে যায়, সেই সব তথ্যের প্রতি তার এক ধরণের পক্ষপাত থাকে। তার মধ্যে তাড়না থাকে যে, সে যেই মতবাদে বিশ্বাস লালন করে, সেগুলো যেন সত্য প্রমাণ করা যায়। সে চেষ্টা করে, যে কোনো ভাবে হোক ইসলামকে ভুল প্রমাণ করতে হবে। শুধুমাত্র সেইসবের পক্ষে থাকা তথ্য প্রমাণই তার কাছে সত্যিকারের তথ্য প্রমাণ বলে মনে হয়। কিন্তু ব্যাপারটা উল্টোও হতে পারে। অন্যদিকে, যেসব তথ্য প্রমাণ তার নাস্তিক্যবিশ্বাসের বিরুদ্ধে যায়, তা যত শক্তিশালী বা স্পষ্টই হোক না কেন, সে সেগুলো এড়িয়ে যায় বা সেগুলো প্রত্যাখ্যান করার চেষ্টা করে। তথ্য প্রমাণ থেকে যতটুকু তার পক্ষে গেছে, সেগুলো সে কাজে লাগায় এবং মনে রাখে তার নাস্তিক্যবিশ্বাস অথবা ইসলামবিরোধী বিশ্বাস আরও শক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে। এই প্রবণতাটিই হলো ‘কনফার্মেশন বায়াস’ বা ‘কগনিটিভ বায়াস‘, যা একটি ভুল পদ্ধতি। ইসলামবিরোধী গোষ্ঠীর লোকেরা এই ভুল পদ্ধতিটির অনুসরণ করে থাকেন।

বিজ্ঞানীগণ গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ পেয়েছেন যে, মানুষের মস্তিষ্ক হচ্ছে একটি প্যাটার্ন রিকগনাইজিং মেশিন। অর্থাৎ সে প্রতিনিয়ত প্যাটার্ন খোঁজে। কোনো নাস্তিক যখন কুরআনের আয়াত পড়ে তখন সে ধরেই নেয় এটি ভুল। সে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করতে থাকে কুরআনের ভুল বের করবার। সে চেষ্টা করতে থাকে নবী মোহাম্মদ (সা)কে কিভাবে খারাপ বানানো যায়। অথচ সে যা কল্পনা করছে তা প্রকৃত সত্য নয়। কিন্তু তার মস্তিষ্ক যেহেতু প্যাটার্ন খোঁজে সে একটা পর্যায়ে নিজেকে বিশ্বাস করাতে চায় কুরআন আল্লাহর বাণী নয়। একইভাবে, মস্তিষ্ক সবসময় তার বিশ্বাসকে দৃঢ় করার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সেই সব স্মৃতি তাকে বারবার মনে করিয়ে দেয়, যা তাকে আনন্দ দেয়। এই আনন্দটুকু পেলে তার মন ভালো হয়ে যায়, সেই প্রক্রিয়াটি বুঝতে পেরে তার বিবর্তিত মস্তিস্ক কাজটি বারবার করে, নিজেকে আনন্দ দেয়ার চেষ্টায়। এই কারণে, তারা যখন অনেকগুলো তথ্য প্রমাণ পড়েন, তার মধ্যে সেইগুলোই তার মস্তিষ্কে বেশি বেশি বার এক্সেস হয়, যেই সব স্মৃতি তারা বারবার মনে করতে থাকে। আর এই কারণেই ইসলামবিরোধী গোষ্ঠীর ভেতরে কনফার্মেশন বায়াসের উদ্ভব ঘটে।

খেয়াল করলে দেখবেন নাস্তিকরা যখন ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো কথা পায় আনন্দের সাথে লুফে নেয় অথচ তার বিরুদ্ধে যত পরিস্কার শক্তিশালী দলীল থাকুক না কেন,যত মজবুত যুক্তিই থাকুক না কেন,তারা ঠাট্টা মশকরা করে হলেও সেই যুক্তি প্রমাণ গুলোকে এড়িয়ে যেতে চায়। প্রত্যাখ্যান করার পয়তারা করে। ইসলামবিরোধী জাতিকে তাহলে কি করতে হবে? অবশ্যই সততার সাথে,নিরপেক্ষভাবে সত্যকে সন্ধান করতে হবে। নিজেদের ইসলামবিরোধী বিশ্বাসকে প্রশ্ন করতে হবে। ইসলামের বিরুদ্ধে কিছু পেলেই সাথে সাথে সেটা বিশ্বাস না করে তদন্ত করে দেখতে হবে। জানোয়ার থেকে প্রাপ্ত বিবর্তিত মগজকে অবিশ্বাস করে মানুষের মতো গভীর চিন্তাশীল মগজওয়ালা হতে হবে।

মক্কা বিজয়ের ভবিষ্যৎবাণীঃ

আল কুরআন,সুরা কাসাস ২৮ঃ৮৫ আয়াত থেকে বর্ণিত,

যিনি আপনার প্রতি কোরআনের বিধান পাঠিয়েছেন, তিনি অবশ্যই আপনাকে স্বদেশে ফিরিয়ে আনবেন। বলুন আমার পালনকর্তা ভাল জানেন কে হেদায়েত নিয়ে এসেছে এবং কে প্রকাশ্য বিভ্রান্তিতে আছে।

তাফসীরে জালালাইন,৪ খণ্ড, ৮২৯ ও ৮৩০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,


অতএব সূরার শেষভাগে শেষনবী রাসূল (সা) এর এমনি ধরনের অবস্থার সারসংক্ষেপ বর্ণনা করেছেন যে, মক্কার কাফেররা তাঁকে বিব্রত করেছে, তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছে এবং মক্কায় মুসলমানদের জীবন দুঃসহ করেছে; কিন্তু আল্লাহ তা'আলা তাঁর চিরন্তন রীতি অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ (সা) কে সবার উপর প্রকাশ্য বিজয় ও প্রাধান্য দান করেছেন এবং যে মক্কা থেকে কাফেররা তাঁকে বহিষ্কার করেছিল, সেই মক্কায় পুনরায় তাঁর পুরােপুরি কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে- অর্থাৎ যে পবিত্র সত্তা আপনার প্রতি কুরআন ফরজ করেছেন তথা তেলাওয়াত, প্রচার ও মেনে চলা ফরজ করেছেন, তিনিই পুনরায় আপনাকে “মা'আদে” ফিরিয়ে নেবেন। 

সহীহ বুখারী ও অন্যান্য গ্রন্থে হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, আয়াতে 'মাআদ’ বলে মক্কা মােকাররমাকে বােঝানাে হয়েছে। উদ্দেশ্য এই যে, যদিও কিছুদিনের জন্য আপনাকে প্রিয় জন্মভূমি বিশেষত হেরেম ও বায়তুল্লাহকে পরিত্যাগ করতে হয়েছে; কিন্তু যিনি কুরআন নাজিল করেছেন এবং তা মেনে চলা ফরজ করেছেন তিনি অবশেষে আপনাকে আবার মক্কায় ফিরিয়ে আনবেন। তাফসীরবিদ মুকাতেল বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ এত হিজরতের সময় রাত্রিবেলায় সওর গিরিগুহা থেকে বের হন এবং মক্কা থেকে মদীনাগামী প্রচলিত পথ ছেড়ে ভিন্ন পথের প্রসিদ্ধ মনযিল রাবেগের নিকটবর্তী জোহফা নামক স্থানে পৌছলেন, তখন মক্কার পথ দৃষ্টিগােচর হলাে এবং বায়তুল্লাহ ও স্বদেশের স্মৃতি মনে আলােড়ন সৃষ্টি করল । তখনই হযরত জিবরাঈল (আ.) এই আয়াত নিয়ে আগমন করলেনএই আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সা) কে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে যে, জন্মভূমি মক্কা থেকে আপনার এই বিচ্ছেদ ক্ষণস্থায়ীপরিশেষে আপনাকে পুনরায় মক্কায় পৌছিয়ে দেওয়া হবে। এটা ছিল মক্কা বিজয়ের সুসংবাদ। এ কারণেই ইবনে আব্বাসের এক রেওয়াতে বলা হয়েছে যে, এই আয়াত জোহফায় অবতীর্ণ হয়েছে। বিধায় এটি মক্কী নয়, মাদানীও নয়।

আলােচ্য আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সা) কে বিজয়ী বেশে পুনরায় মক্কা প্রত্যাবর্তনের সুসংবাদ এক হৃদয়গ্রাহী ভঙ্গিতে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, যে পবিত্র সত্তা আপনার প্রতি কুরআন ফরজ করেছেন, তিনি আপনাকে শক্রর বিরুদ্ধে বিজয় দান করে পুনরায় মক্কায় ফিরিয়ে আনবেন। এতে এদিকেও। ইঙ্গিত রয়েছে যে, কুরআন তেলাওয়াত ও কুরআনের নির্দেশ পালন করাই এই সাহায্য ও প্রকাশ্য বিজয়ের কারণ হবে।

যারা সততার চিন্তা করতে জানে তারা কুরআনের এই অকাট্য মোজেজা সহজেই উপলব্ধি করতে পারবে। নবী মোহাম্মদ (সা)কে সন্ত্রাসী কাফেররা মুক্তচিন্তায় নির্যাতন অত্যাচার করে নিজের দেশ থেকে বের করে দিয়েছে ঠিক সেই মুহূর্তে কুরআনের আয়াতটি অবতীর্ণ হয় এবং নিশ্চিত করে জানিয়ে দেয়া হয় নিজের দেশে সে পুনরায় আসবেই। লক্ষ্য করুন যদি উনি নিজের দেশে আসতে না পারতেন তাহলেই কিন্তু কুরআনের আয়াতটি ভুল প্রমাণ হয়ে যেতো অথচ কুরআনের ভবিষ্যৎবাণী ঠিকই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। নবী মোহাম্মদ (সা) এর পক্ষে কি সম্ভব এটা নিশ্চিত করে জানতে পারা যে উনি নিজের দেশে আসতে পারবেন কি পারবেন না? কাফেররা উনাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল স্বাভাবিকভাবে উনি অবশ্যই হতাশ থাকবেন তাই না? একটি মানুষ কেমন পর্যায়ের চাপে পড়লে নিজের মাতৃভূমি ত্যাগ করতে পারে? ঠিক সেই মুহূর্তে কুরআনের উক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ হয় ভাবতে পারছেন কিছু? মক্কা থেকে মদিনাতে যাবার পরবর্তী সময়ে ক্ষমতাবান সন্ত্রাসী কাফেরদের বিরুদ্ধে যা যুদ্ধ হয়েছে সেসব যুদ্ধে মুসলিমদের বিজয়ের পূর্বাভাস কি উক্ত আয়াতে পরোক্ষভাবে আগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে না? অবশ্যই। কারণ যুদ্ধে হেরে গেলে নিশ্চয়ই সেই ইসলামবিরোধী কাফেররা মুসলিমদেরকে গণহত্যা করতো আগে তো নবী মোহাম্মদ (সা) কে খুন করতো। অথচ আল্লাহ কুরআনে আগেই জানিয়ে দিয়েছেন যে হযরত মোহাম্মদ (সা) পুনরায় নিজের দেশে আসবেন। আপনার মনে হয় এমন কঠিন কঠিন ভবিষ্যৎবাণী নবী মোহাম্মদ (সা) করতে পারেন যদি না আল্লাহ উনাকে স্বয়ং সাহায্য না করে থাকে? একটু চিন্তা করে দেখুন।

উনি যদি মিথ্যুক ও খারাপ মানুষ হতেন যেভাবে নাস্তিকরা উনাকে খারাপ বানায় আরকি তাহলে উনি তো এতো কষ্টই করতে যেতেন না বরং কাফেরকে খুশি করে নিজের স্বার্থ হাসিল করতে পারতেন সহজেই। তাই নয় কি? নিজেকে আয়নার সামনে দাড় করিয়ে প্রশ্ন গুলো করতে থাকুন তো। আরো আশ্চর্যের কথা হচ্ছে কুরআনের আয়াতটি হঠাৎ করেই অবতীর্ণ হয়েছে। নবী মোহাম্মদ (সা)কে হঠাৎ করেই ভবিষ্যৎবাণীটি জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে আপনি আবার নিজের দেশে ফিরে আসবেন। কুরআনের অকাট্য মোজেজা গুলোকে কিভাবে লুকাবেন?

আরো চমৎকার ভবিষ্যৎবাণীঃ

আল কুরআন, সুরা ফাতাহ ৪৮ঃ২৭ ও ২৮ আয়াত থেকে বর্ণিত,

আল্লাহ তাঁর রসূলকে সত্য স্বপ্ন দেখিয়েছেনআল্লাহ চাহেন তো তোমরা অবশ্যই মসজিদে হারামে প্রবেশ করবে নিরাপদে মস্তকমুন্ডিত অবস্থায় এবং কেশ কর্তিত অবস্থায়। তোমরা কাউকে ভয় করবে না। অতঃপর তিনি জানেন যা তোমরা জান না। এছাড়াও তিনি দিয়েছেন তোমাদেরকে একটি আসন্ন বিজয়। তিনি তাঁর রাসুল (সা)কে পথ নির্দেশ ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন,অপর সমস্ত দ্বীনের উপর একে জয়যুক্ত করবার জন্যে। সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।

আয়াতটির প্রেক্ষাপট জেনে নেয়া যাক। তাফসীরে আহসানুল বয়ান, ৯০১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

হুদাইবিয়ার ঘটনার পূর্বে রাসূলুল্লাহ (সা) -কে স্বপ্নে মুসলিমদের সাথে মাসজিদুল হারাম প্রবেশ করে তাওয়াফ ও উমরাহ করতে দেখানাে হয়নবীর স্বপ্নও অহী (এবং বাস্তব) হয়তবে এই স্বপ্নে এটা নির্দিষ্ট ছিল না যে, তা এ বছরেই হবে। কিন্তু নবী করীম (সা) এটাকে অতি মহান সুসংবাদ মনে করে উমরাহ করার জন্য সত্বর প্রস্তুত হয়ে গেলেন এবং এর জন্য সাধারণ ঘােষণা দেওয়ালেন ও বেরিয়েও পড়লেন। পরিশেষে হুদাইবিয়ায় পূর্বোল্লেখিত সন্ধি সুসম্পন্ন হয়। তবে আল্লাহর নিকট এই স্বপ্নের তাৎপর্য ছিল আগামী বছর। যেমন, পরের বছরে মুসলিমগণ অতি নিরাপত্তার সাথে উমরাহ আদায় করেন এবং আল্লাহ তাঁর নবীর স্বপ্নকে সত্য করে দেখান। অর্থাৎ, যদি হুদাইবিয়ায় সন্ধি না হত, তাহলে যুদ্ধে মক্কায় অবস্থিত দুর্বল মুসলিমদের ক্ষতি হত। সন্ধির এই উপকারিতাগুলাে আল্লাহই জানেন। এ থেকে খায়বার ও মক্কা বিজয় সহ সন্ধির সুফল স্বরূপ অধিকহারে ইসলাম গ্রহণের কথাকে বুঝানাে হয়েছে। কেননা, এটাও এক প্রকার মহা বিজয়। হুদাইবিয়ার সময় মুসলিমরা ছিলেন দেড় হাজার। এর দু’বছর পর যখন মুসলিমরা বিজয়ী হিসাবে মক্কায় প্রবেশ করেন, তখন তাঁদের সংখ্যা ছিল দশ হাজার।

তাফসীরে ইবনে কাসীর, ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদ কৃত, ১৬ খণ্ড, ৮১২ ও ৮১৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বপ্নে দেখেন যে, তিনি মক্কা গিয়েছেন এবং বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করেছেন। তার এই স্বপ্নের বৃত্তান্ত তিনি মদীনাতেই স্বীয় সাহাবীদের (রাঃ) সামনে বর্ণনা করেছিলেন। হুদায়বিয়ার সন্ধির বছর যখন তিনি উমরার উদ্দেশ্যে মক্কার পথে যাত্রা শুরু করেন তখন এই স্বপ্নের ভিত্তিতে সাহাবীদের এটা দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, এই সফরে তাঁরা সফলতার সাথে এই স্বপ্নের প্রকাশ ঘটতে দেখতে পাবেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে যখন তারা উল্টো ব্যাপার লক্ষ্য করেন এমনকি সন্ধিপত্র সম্পাদন করে তাদেরকে বায়তুল্লাহর যিয়ারত ছাড়াই ফিরে আসতে হয় তখন এটা তাদের কাছে খুবই কঠিন ঠেকে। সুতরাং হযরত উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনি তাে আমাদেরকে বলেছিলেনঃ “আমরা বায়তুল্লাহ শরীফে যাবাে ও তাওয়াফ করবাে?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “হ্যা, এটা সঠিক কথাই বটে, কিন্তু আমি তাে একথা বলিনি যে, এই বছরই এটা করবাে?” হযরত উমার (রাঃ) জবাব দেনঃ “হ্যা আপনি একথা বলেননি এটা সত্য।রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন বললেনঃ “তাহলে এতাে তাড়াহুড়া কেন? তােমরা অবশ্যই বায়তুল্লাহ শরীফে যাবে এবং তাওয়াফও অবশ্যই করবে।” অতঃপর হযরত উমার (রাঃ) হযরত আবু বকর (রাঃ)-কে এ প্রশ্নই করলেন এবং ঐ একই উত্তর পেলেন। এখানে “ইংশা আল্লাহ” ইসতিসনা বা এর ব্যতিক্রমও হতে পারে এ জন্যে নয়, বরং এখানে এটা নিশ্চয়তা এবং গুরুত্বের জন্যে।

এই বরকতময় সপ্নের প্রকাশ ঘটতে সাহাবীগণ (রা) দেখেছেন এবং পূর্ণ নিরাপত্তার সাথে মক্কায় পৌঁছিয়েছেন এবং ইহরাম ভেঙ্গে দিয়ে কেউ কেউ মাথা মুণ্ডন করিয়েছেন এবং কেউ কেউ কেশ কর্তন করিয়েছেন। সহিহ হাদিসে আছে যে রাসুল (রা) বলেছেন, আল্লাহ তা’লা মাথা মুণ্ডনকারীদের উপর দয়া করুন। সাহাবীগণ (রা) জিজ্ঞেস করলেন চুপ কর্তনকারীদের উপরও কি? রাসুল (সা) দ্বিতীয়বারও ঐ কথাই বললেন। আবার জনগণ ঐ প্রশ্নই করলেন। অবশেষে তৃতীয়বার বা চতুর্থবারে তিনি বললেন চুল কর্তনকারীদের উপরও আল্লাহ দয়া করুন।

পাঠক যেই বিষয়টি চিন্তা করবার মতো তা হচ্ছে নবী মোহাম্মদ (সা) সম্পূর্ণ কিভাবে নিশ্চিত ছিলেন যে মক্কাতে উনি এবং উনার সাথীরা নিরাপদে প্রবেশ করতে পারবে, হজ্জ করতেই পারবে? দুই এক বছর আগে উনি সপ্নে দেখলেন আর সেটা বাস্তবে প্রতিফলনও হলো। এটা কেন? পাঠক লক্ষ করলে দেখবেন, নবীজি (সা) সপ্ন দেখার পরবর্তী সময়ে প্রথমবার যখন হজ্জ করতে যান তখন কিন্তু সফল হননি সাহাবীরা উনাকে প্রশ্ন পর্যন্ত করেছেন যে আপনার সপ্নের বাস্তবতা তো দেখলাম না ঠিক তখনই নবীজি (সা) শান্তভাবে নিশ্চিন্তেই জবাবে বলেছেন যে,

“হ্যা, এটা সঠিক কথাই বটে, কিন্তু আমি তাে একথা বলিনি যে, এই বছরই এটা করবাে?” হযরত উমার (রাঃ) জবাব দেনঃ “হ্যা আপনি একথা বলেননি এটা সত্য।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন বললেনঃ “তাহলে এতাে তাড়াহুড়া কেন? তােমরা অবশ্যই বায়তুল্লাহ শরীফে যাবে এবং তাওয়াফও অবশ্যই করবে। 

ঠিক এর সামনের বছরই উনারা নিরাপদে হজ্জ করতে সক্ষম হন। চিন্তা করুন নবী মোহাম্মদ (সা) কিভাবে এতো নিশ্চিত ছিলেন? উনি কিভাবে জানতেন যে সামনের বছরেই উনার সপ্নে দেখা বিষয়টি বাস্তবে প্রমাণিত হয়ে যাবে? যদি না আল্লাহ উনাকে সাহায্য না করে থাকবেন? কি জবাব দিবে কনফার্মেশন বায়াসের আক্রান্ত জন্তুবাদী গোষ্ঠীরা? নবীজি (সা) কোনো মানুষের সাহায্য নিয়েছিলেন এর কোন প্রমাণ নেই তাই এই কথা বলার সুযোগ নেই যে উনি অন্য কারও সাহায্য নিয়েছেন এবং সেটা কুরআনে লিখে দিয়েছেন। আর কোনো মানুষের পক্ষেই কি সম্ভব এমন কঠিন ভবিষ্যৎবাণী করা? কুরআনে এই একটাই শুধু ভবিষ্যৎবাণী করা নেই বরং একাধিক রয়েছে তাই একে কাকতালীয় বলে চালিয়ে দেয়ারও সুযোগ নেই। কুরআনে প্রচুর অকাট্য মোজেজা আছে যার বিরুদ্ধে কোনো যৌক্তিক  জবাব ইসলামবিরোধীদের কাছে নেই। হ্যাঁ, তারা তামাশা করতে পারে, ঠাট্টা করতে পারে কিন্তু কুরআনের মোজেজার বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ ও যুক্তি দিয়ে জবাব দিতে পারে না।

ওয়ালীদ ইবনে মুগিরাকে নিয়ে ভবিষ্যৎবাণীঃ


কুরআনের এই মোজেজাটি আরো আশ্চর্যজনক। যে কাউকেই চমকিত করে দেবে। শুধু চিন্তাশীল মগজ থাকা প্রয়োজন সাথে বিনয়শীল একটি হৃদয়। আপনি প্রস্তুত তো? তাহলে পড়তে থাকুন।

আল্লামা ইদরীস কান্ধলভী (রহ ) লিখিত “সীরাতুল মুস্তফা (সা)” ১ খণ্ড, ১৫৮-১৫৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

কুরায়শগণ যখন দেখলো যে, দৈনন্দিন ইসলামের প্রসার বেড়েই চলছে, তখন একদিন তারা ওলীদ ইবন মুগীরার নিকট একত্রিত হলো, যে ছিল তাদের মধ্যে বয়োঃবৃদ্ধ ও প্রবীণ ব্যক্তি, তারা বলল হজ্জের মৌসুম তা সমাগত, আর তাঁর (নবী (সা)এর) উল্লেখ ও চর্চা তো সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়েছে, এ উপলক্ষে দেশের আনাচে কানাচে থেকে সব লোক আসবে আর আপনাকে ঐ ব্যক্তি (মোহাম্মদ (সা)) সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। কাজেই তাঁর সম্পর্কে আমাদের একটা সম্মিলিত ও ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত থাকা দরকার এবং সবাই এ ব্যাপারে একই সিদ্ধান্ত দেয়া দরকার যাতে পরস্পর বিরোধী না হয়। অন্যথায় আমাদের মধ্যেই একজনের কথায় অপরেরটা মিথ্যা ও পরস্পর বিরোধী প্রতিপন্ন হবে, যা মোটেই সমীচীন হবে না। কাজেই হে আবু আবদুশ শামস (ওলীদের উপাধি)। আপনি আমাদের জন্য একটা সিদ্ধান্ত দিয়ে দিন যার উপর আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকব।

ওলীদ বলল,তোমরা প্রস্তাব কর, আমি শুনি, এরপরে একটা সিদ্ধান্তে আসা যাবে। তারা বলল ইনি গণক। ওলীদ বলল এটা মিথ্যা কথা, আল্লাহর কসম তিনি গণক নন। আমি যথেষ্ট গণক দেখেছি। তাঁর মধ্যে না গণকের কোন চিহ্ন আছে, আর না তাঁর বক্তব্যে গণকদের মত গোঙ্গানো কথার সাথে কথা জড়ানো। লোকেরা বলল, তিনি মোহাম্মদ (সা) পাগল। ওলীদ বলল, তিনি পাগলও নন। আমি পাগল ও উম্মাদদের প্রকৃতিও জানি, আমি তাঁর মধ্যে এ ধরণের কোন আলামত পাই না। লোকেরা বলল, তিনি কবি। ওলীদ বলল, আমি নিজেও কবি, এর সমস্ত শাখা-প্রশাখা যেমন রাজায ও হাযাজ, মাকবুয ও মাবসুত ইত্যাদি সম্পর্কে আমি সম্যক অবগত। তাঁর বক্তব্যের সাথে কবিতার কোনই সম্পর্ক নেইলোকেরা বলল তিনি জাদুকরওলীদ বলল তিনি জাদুকরও নন। তিনি জাদুকরদের মট ঝাড়ফুঁকও করেন না আর তাদের মত গিরাও বাঁধেন না। লোকেরা বলল ওহে আবু আবদুশ শামস, তা হলে আপনি বলুন শেষ পর্যন্ত তা হলে কি?

ওলীদ বলল আল্লাহর কসম মোহাম্মদ (সা) এর কথা এক আশ্চর্য ধরণের মিষ্টি ও মাধুর্যমণ্ডিতআর এর এক আশ্চর্য ধরণের চমক রয়েছে। এ বক্তব্যের উৎস মূল অত্যন্ত সজীব এবং এর শাখা প্রশাখা অত্যন্ত ফলবান (অর্থাৎ এই ইসলাম একটি পবিত্র বৃক্ষের ন্যায় যা অত্যন্ত সুদৃঢ়ভাবে শক্ত জমি থেকে উদ্গত এবং এর শাখা প্রশাখা আসমান পর্যন্ত বিস্তৃত যা ফলে ফুলে পরিপূর্ণ)। কাজেই যা কিছু তোমরা বললে আমি ভাল্ভাবেই জানি যে তা সবই বাতিল ও ভিত্তিহীন। আমার বিবেচনায় এটা বলা সব চেয়ে উপযুক্ত হবে যে এ ব্যক্তি জাদুকর এবং তাঁর কথাও জাদু যা স্বামী-স্ত্রীতে, পিতা-পুত্রে, ভাইয়ে-ভাইয়ে এবং গোত্রে-গোত্রে বিভেদ সৃষ্টি করে- যেটা জাদুরই বৈশিষ্ট। এ সব কথার পর সভা ভঙ্গ হলো।

যখন হজ্জের মৌসুম এলো লোকজন আসতে শুরু করলো, কুরায়শরা পথেঘাটে ছড়িয়ে পড়ল এবং যে ব্যক্তিই সেদিক দিয়ে যেত, মোহাম্মদ (সা) এর ব্যাপারে তাকেই বলতে থাকল, ঐ ব্যক্তি জাদুকর, তোমরা তাঁর থেকে দূরে থাকবেকিন্তু কুরায়শদের এ প্রচেষ্টা ইসলামের কোনই ক্ষতি করতে সক্ষম হলো না (বরং এ ব্যাপারে আগ্রহ আরো বেড়ে গেল)। দেশের আনাচে কানাচে আগত লোকজন মোহাম্মদ (সা) সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত হয়েছে।

পাঠক লক্ষ্য করুন, কাফেররা যখন ইসলামের বিরুদ্ধে পরামর্শ করছিল তখন হযরত মোহাম্মদ (সা)কে নিয়ে যা যা অভিযোগ করা যায় সব গুলোই তারা নিজেরাই বাতিল করে দেয়। যখন দেখল সব অভিযোগ বাতিল করে দিলে মানুষকে তাঁকে নিয়ে মিথ্যাচার করা যাবে না তখন ইচ্ছা করেই এমন একটি অপবাদ রেডি করলো যা তারা নিজেরাই আগে বাতিল করেছিল আর তা হচ্ছে হযরত মোহাম্মদ (সা) নাকি জাদুকর ছিলেন। ভাবা যায় ? অথচ তারা একটু আগেই কিন্তু নিজেরাই স্বীকার করেছিল যে মোহাম্মদ (সা) এর মধ্যে জাদুকর হওয়ার কোন লক্ষণ নেই। হযরত মোহাম্মদ (সা) কি পারতেননা এসব কাফেরদেরকে খুশি করে নিজদের স্বার্থ হাসিল করতে যদি উনি নিজে একজন ভণ্ড হয়ে থাকতেন? কিন্তু কখনোই উনি এমনটি করেন নাই বরং যা সত্য তাই সব সময় বলে গেছেন এমনকি এটা নিজের বিরুদ্ধে গেলেও। এটাই তো চরম সত্যবাদী হওয়ার লক্ষণ।

আল কুরআন, সুরা মুদ্দাসসির ৭৪ঃ১১ থেকে ২৬ পর্যন্ত আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

যাকে আমি অনন্য করে সৃষ্টি করেছি, তাকে আমার হাতে ছেড়ে দিন। আমি তাকে বিপুল ধন-সম্পদ দিয়েছি। এবং সদা সংগী পুত্রবর্গ দিয়েছি,এবং তাকে খুব সচ্ছলতা দিয়েছি। এরপরও সে আশা করে যে, আমি তাকে আরও বেশী দেই। কখনই নয়! সে আমার নিদর্শনসমূহের বিরুদ্ধাচরণকারী। আমি সত্ত্বরই তাকে শাস্তির পাহাড়ে আরোহণ করাব। সে চিন্তা করেছে এবং মনঃস্থির করেছে। ধ্বংস হোক সে, কিরূপে সে মনঃস্থির করেছে! আবার ধ্বংস হোক সে, কিরূপে সে মনঃস্থির করেছে! সে আবার দৃষ্টিপাত করেছে,অতঃপর সে ভ্রূকুঞ্চিত করেছে ও মুখ বিকৃত করেছে, অতঃপর পৃষ্ঠপ্রদশন করেছে ও অহংকার করেছে। এরপর বলেছেঃ এতো লোক পরস্পরায় প্রাপ্ত জাদু বৈ নয়,এতো মানুষের উক্তি বৈ নয়।আমি তাকে দাখিল করব অগ্নিতে।

তাফসীরে ইবনে কাসীর,ডঃ মুজিবুর রহমান,১৭ খণ্ড, ৭৩০,৭৩১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

ঐ অভিশপ্ত ব্যক্তির নাম হলাে ওয়ালীদ ইবনে মুগীরা মাখযুমী, যে কুরায়েশদের নেতা ছিল। হযরত আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, ঘটনাটি হলােঃ একদা এই অপবিত্র ওয়ালীদ হযরত আবূ বকর (রাঃ)-এর কাছে আসলাে এবং তাঁর নিকট হতে কুরআন কারীমের কিছু অংশ শােনার ইচ্ছা প্রকাশ করলাে। হযরত আবু বকর (রাঃ) তখন তাকে কুরআনের কয়েকটি আয়াত পাঠ করে শুনালেন। এতে সে মুগ্ধ হয়ে গেল। এখান থেকে বের হয়ে সে কুরায়েশদের সমাবেশে গিয়ে হাযির হলাে এবং বলতে লাগলােঃ “হে জনমন্ডলী! বড়ই বিস্ময়কর ব্যাপার এই যে, হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) যে কুরআন পাঠ করে থাকেন, আল্লাহর কসম! ওটা কবিতাও নয়, যাদু-মন্ত্রও নয় এবং পাগলের কথাও নয়। বরং খাস আল্লাহর কথা! এতে সন্দেহের লেশমাত্র নেই।” কুরায়েশরা তার একথা শুনে নিজেদের মাথা ধরে নেয় এবং বলেঃ “এ যদি মুসলমান হয়ে যায় তবে কুরায়েশদের একজনও মুসলমান হতে বাকী থাকবে না।” 

আবূ জেহেল খবর পেয়ে বললােঃ “তােমরা ব্যতিব্যস্ত হয়াে না। দেখাে, আমি কৌশলে তাকে ইসলাম হতে বিমুখ করে দিচ্ছি।” একথা বলে সে মাথায় এক বুদ্ধি এঁটে নিয়ে ওয়ালীদের বাড়ীতে গেল এবং তাকে বললােঃ “আপনার কওম আপনার জন্যে চাঁদা ধরে বহু অর্থ জমা করেছে এবং ওগুলাে তারা আপনাকে দান করতে চায়।” এ কথা শুনে ওয়ালীদ বললােঃ “বাহ! কি মজার ব্যাপার! আমার তাদের চাঁদা ও দানের কি প্রয়ােজন? দুনিয়ার সবাই জানে যে, আমি তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ধনী। আমার সন্তান-সন্ততিও বহু রয়েছে।” আবু জেহেল বললােঃ “হ্যা, তা ঠিক বটে। কিন্তু লােকদের মধ্যে এই আলােচনা চলছে যে, আপনি যে আবু বকর (রাঃ)-এর কাছে যাতায়াত করছেন তা শুধু কিছু লাভের আশায়।” এ কথা শুনে ওয়ালীদ বললােঃ “আমার বংশের মধ্যে আমার বিরুদ্ধে যে এসব গুজব রটেছে তা তাে আমার মােটেই জানা ছিল না? আচ্ছা, এখন আমি কসম খেয়ে বলছি যে, আর কখনাে আমি আবু বকর (রাঃ), উমার (রাঃ) এবং মুহাম্মাদ (সঃ)-এর কাছে যাবাে না। মুহাম্মাদ (সঃ) যা কিছু বলে তা তাে লােকপরম্পরায় প্রাপ্ত যাদু ভিন্ন আর কিছুই নয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তা'আলা তাঁর রাসূল (সঃ)-এর উপর আয়াতগুলাে অবতীর্ণ করেন

ঘটনাটি পড়ে কি বুঝলেন আপনি? প্রথমে ঠিকই কুরআনের প্রভাবে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল মুগিরা কিন্তু যখন আবু জাহেল কৌশল করলো তখন উল্টো পথে চলে গেলো মুগিরা। অনেক নাস্তিক হয়তো এমন থাকতে পারে যে তারা মনে মনে ঠিকই কুরআনের মোজেজা গুলো দেখে আশ্চর্য হয়। কুরআনের সামনে নিজেকে আত্মসমর্পণ করতে মনেও চায় কিন্তু নিজেদের মুক্তমনা পরিবেশে থাকার প্রভাবে সত্যকে গ্রহণ করে নিতে পারে না ঠিক মুগিরার মতন আরকি। পাঠক উক্ত আয়াতে কুরআনের মোজেজা কোথায় জানেন? ওয়ালিদ ইবনে মুগীরা কখনোই ইসলাম গ্রহণ করেনি। কুরআনের আয়াতটি মন দিয়ে খেয়াল করুন বলা হয়েছে “সে আমার নিদর্শনসমূহের বিরুদ্ধাচরণকারী। আমি সত্ত্বরই তাকে শাস্তির পাহাড়ে আরোহণ করাব।” অর্থাৎ মুগীরা নিজের অপরাধের জন্য আল্লাহর শাস্তি ভোগ করবেই। এই আয়াত পরিস্কার করে যে সে কখনো ইসলাম গ্রহণ করবে না আর করেও নি কখনো। কুরআনে কিভাবে নিশ্চিত করে জানিয়ে দিতে পারলো যে সে কখনো ইসলাম গ্রহণ করবে না? নবী মোহাম্মদ (সা) ফেইক হলে তো পারতেন সেই ধনী কাফেরটিকে খুশি করে নিজের স্বার্থ হাসিল করে নিতে কিন্তু এরকম কিছুই হয়নি। উল্টো তার বিরুদ্ধেই ভবিষ্যৎবাণী উল্লেখ করেছেন আল্লাহর সাহায্য নিয়ে।

মক্কা বিজয়ের ভবিষ্যৎবাণী, নিজের সাহাবীদের নিয়ে নিরাপদে হজ্জ করার ভবিষ্যৎবাণী এমনকি ওয়ালীদ ইবনে মুগিরাকে নিয়ে করা ভবিষ্যৎবাণী গুলোকে কিভাবে কাকতালীয় বলা যায়? খেয়াল করলে দেখবেন নবী মোহাম্মদ (সা) কোনো মানুষের সাহায্য নেননি ভবিষ্যৎবাণী গুলো করার পূর্বে একমাত্র আল্লাহই উনাকে স্বয়ং সাহায্য করেছেন দেখে উনি নিশ্চিতকরে সব গুলো বলতে পেরেছেন। উনি যদি মিথ্যুক হতেন তাহলে উনার ভবিষ্যৎবাণী গুলোর বাস্তব ভিত্তি থাকতো না। কাফেররা সহজেই উনাকে ভুল প্রমাণ করে দিতে পারতেন। তাই যারা আল্লাহর কুরআনের অকাট্য মোজেজা তথা নিদর্শন দেখেও বিরোধিতা করতে থাকবে তাদেরকে পরিণতি যেই মুক্তমনা কাফেরদের মতো হবে যারা নবী মোহাম্মদ (সা) এমনকি উনার সাহাবীদেরকে গণহত্যা করতে চাইতো। করেছিল নির্যাতন অত্যাচার।

উপসংহারঃ নিজেকে আয়নার সামনে দাড় করিয়ে নিজের বিবর্তিত চেহারা খানা দেখুন। মুক্তচিন্তার নামে ইসলামবিরোধিতা করে যাচ্ছেন তাও মিথ্যাচার করে। ইসলাম নিয়ে অন্ধবিশ্বাস করেন আপনারা উল্টো দোষ দেন মুমিনদেরকে। কি হাস্যকর ব্যাপার।

এখন আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমার আর কিছুই বলার নেই। নিজের পূর্বপুরুষ যদি মানুষ মনে করে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার মধ্যে মানুষ ওয়ালা মগজ রয়েছে যা চিন্তাশীল। তাই সেই বুদ্ধিযুক্ত মগজকে প্রয়োগ করে সত্যকে মাথা পেতে নেবার চেষ্টা করুন।


প্রাসঙ্গিক আরও লেখা পড়ুনঃ

ইরামের খবর কুরআনে কিভাবে?

কুরআনে আবু লাহাবকে গালাগালি করা হয়েছে?

কুরআনের ভবিষ্যৎবানীর নিশ্চিত সত্যতা

বক্ষ সংকুচিত ও কুরআনের মোজেজা

মেঘের ওজন ও কুরআনের সত্যতা

ক্ষমতাশীল কাফেরদের বিরুদ্ধে ভবিষ্যৎবাণী



এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post