আল্লাহ কি কখনো মিথ্যা বলেন?

বিষয়ঃ আল্লাহ কি কখনো মিথ্যা বলেন?

লিখেছেনঃ এমডি আলী।

—-----------------------------------------

নাস্তিকরা আল্লাহ সম্পর্কে অভিযোগ করে আল্লাহ নাকি মাঝে মাঝে মিথ্যা কথা বলেন। এই মিথ্যা অভিযোগকে সত্য প্রমাণ করার জন্য তারা হাদিস থেকেও বানিয়ে বানিয়ে বিকৃত ব্যাখ্যা প্রচার করে থাকেন। আমরা আজকে নাস্তিকদের ইসলামবিরোধী বিশ্বাস গুলো বিচার করে দেখবো আদৌ তাদের ইসলাম সম্পর্কে এমন বিশ্বাস ইসলামের দৃষ্টিতে সমর্থনযোগ্য কিনা।


আল্লাহ সপ্নে কাফেরদেরকে অল্প করে দেখালেন

অভিযোগ ১/ সুরা আনফাল ৮ঃ৪৩ = আল্লাহ যখন তোমাকে স্বপ্নে সেসব কাফেরের পরিমাণ অল্প করে দেখালেন;বেশী করে দেখালে তোমরা কাপুরুষতা অবলম্বন করতে এবং কাজের বেলায় বিপদ সৃষ্টি করতে। কিন্তু আল্লাহ বাঁচিয়ে দিয়েছেন। তিনি অতি উত্তমভাবেই জানেন; যা কিছু অন্তরে রয়েছে।


নাস্তিকরা উক্ত আয়াতকে কেন্দ্র করে বলে,

এখানে আল্লাহ পাক একটি যুদ্ধের সময় মোহাম্মদ (সা)কে একটি মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। পরে দেখা গেল স্বপ্নে দেখা বিষয়টি সত্য নয়। তখন আল্লাহ পাক আরেকটি আয়াতের মাধ্যমে জানালেন, তিনি ইচ্ছে করেই এই মিথ্যা কথাটি বলেছিলেন। যেন সাহাবীদের যুদ্ধের মনোবল অটুট থাকে।


জবাবঃ “আল্লাহ প্রথমে মিথ্যা সপ্ন দেখিয়েছেন পরে আবার অন্য আয়াতের মাধ্যমে বলেছেন তিনি ইচ্ছা করেই মিথ্যা সপ্নটি দেখিয়েছেন” এমন ব্যাখ্যা আমি কোনো তাফসীরে পাইনি। তাহলে নাস্তিকরা যে মুক্তচিন্তায় উক্ত ব্যাখ্যাটি বানিয়েছে এটা কি স্পষ্ট নয়? “আল্লাহ মিথ্যা কথা বলেছেন” অথবা “আল্লাহ মিথ্যা দেখিয়েছেন” এমন দাবি ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ বাতিল। কেননা হাদিসের কোথাও এমকি সাহাবীরা পর্যন্ত কেউই এমন দাবি করেন নি। যদি করতো তাহলে নাস্তিকদের দাবি ঠিক হতো। কিন্তু নাস্তিকরা কেন এমন একটি আয়াত অথবা একটি সহিহ হাদিস দেখাতে পারলো না যেখানে বলা হয়েছে “আল্লাহ মিথ্যা সপ্ন বা মিথ্যা কথা দেখিয়েছেন বা বলেছেন”? 


নবী মোহাম্মদ (সা) থেকে শুরু করে উনার সাহাবী এমনকি তাবে-তাবেই কেউই উক্ত আয়াতের এই ব্যাখ্যা করেনই নাই যে আল্লাহ মিথ্যা কথা বলেছেন। তাহলে নাস্তিকরা কেন মুক্তচিন্তায় বিকৃত ব্যাখ্যা করলো? তাছাড়া একজন নাস্তিক কিভাবে বিশ্বাস করতে পারে যে আল্লাহ মিথ্যা বলেন? কেননা নাস্তিকতা অর্থ হচ্ছে আল্লাহকে অবিশ্বাস সেখানে নাস্তিকই আবার ইসলামের রেফারেন্স দেখিয়ে দাবি করছে আল্লাহ মিথ্যা কথা বলেন– বৈপরীত্য হয়ে গেলো না? প্রথমটি সত্য হলে দ্বিতীয়টি মিথ্যা আর দ্বিতীয়টি সত্য হলে প্রথমটি। আর ইসলামের দৃষ্টিতে আল্লাহ মিথ্যা বলেননি তাহলে নাস্তিকরা কেন মিথ্যাকথাটি বলল?


আসুন তাফসীর থেকে পড়ে জেনে নেই

ইসলামের দৃষ্টিতে আসলেই কি সুরা আনফালের ৮ঃ৪৩ আয়াত অনুযায়ী আল্লাহ মিথ্যা কথা বলেছেন? স্পষ্ট উত্তর হচ্ছে “না”। কারণ আল্লাহ নবীজি (সা) কে স্বপ্নে যা দেখিয়েছেন বাস্তবেও তাই ঘটেছিল। মানে কাফেরদের সংখ্যা ছিল মুসলিমদের থেকে বেশি কিন্তু আল্লাহ মুসলিমদেরকে সাহস দেবার জন্য নবীজি (সা)কে স্বপ্নে কাফেরদের সংখ্যা কম করে দেখিয়েছেন এবং যখন সন্ত্রাসী কাফেরদের সাথে মুসলিমদের যুদ্ধ হয় তখন মুসলিমরা কাফেরদের সংখ্যা কমই দেখেছিল। এখানে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হচ্ছে নবী মোহাম্মদ (সা) স্বপ্নে যা নিজ চোখে দেখেছিলেন এবং মুসলিমরা বাস্তবে যা দেখেছিল সেই চোখে দেখাকে কি তাদের দৃষ্টিতে মিথ্যা বলা যায়? উত্তর হচ্ছে “না”। কারণ তাদের চোখে তারা যা দেখেছিল সেটা সত্যিই দেখেছিল।


ইঃফা, তাফসীরে ইবনে কাসীর,৪ খণ্ড, ৪৬৭ ও ৪৬৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

আবু ইসহাক সুবাইর (রহ) ইবন মাসউদ (রা) হইতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন বদরের যুদ্ধের সময় আমরা উহাদিগকে সংখ্যায় অতি অল্প দেখিয়াছি। শেষ পর্যন্ত আমি আমার পার্শ্বের এক লোককে বলিলাম, তুমি কি উহাদের সংখ্যা সত্তর জন দেখিতেছ? সে উত্তর করিল; না, বরং উহাদের সংখ্যা হইল একশত। এমনকি উহাদের এক লোককে বন্দী করিয়া উহাদের সংখ্যা জিজ্ঞাসা করিলে সে উত্তর করিল আমাদের সংখ্যা হইল এক হাজার। এই হাদিস ইবন আবু হাতিম ও ইবন জারীর (রহ) বর্ণনা করিয়াছেন।


ইঃফা,তাফসীরে ইবনে কাসীর,৪ খণ্ড,৪৬৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

মুজাহিদ (রহ) বলেন, আল্লাহ পাক মহানবী (সা)কে স্বপ্নে উহাদের সংখ্যা কম দেখাইয়া ছিলেন। অতঃপর মহানবী (সা) তাহাঁর সাহাবাগণকেও ইহা অবহিত করিয়া ছিলেন। সুতরাং উহাদের কাছে ইহাই প্রতীয়মান হইয়াছে। ইবনে ইসহাক (রহ) সহ অনেক লোকই এইরুপ অভিমত প্রকাশ করিয়াছেন। ইবনে জারীর (রহ) উহাদের কোন কোন লোক হইতে বর্ণনা করেন যে, যেরূপ স্বপ্নে দেখা গিয়াছে ময়দানেও অনুরূপ পরিদৃষ্ট হইয়াছে।


মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত, তাফসীরে ইবনে কাসীর,৮ খণ্ড,৫৮৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত,

তিনি (আল্লাহ) এই দয়াও দেখালেন যে, মুসলমানদের দৃষ্টিতে যুদ্ধের সময়েও মুশরিকদের সংখ্যা কম দেখালেন, যাতে তাঁরা বীরবিক্রমে যুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে খুবীই নগণ্য মনে করেন।


তাফসীরে জালালাইন,২ খণ্ড, ৫৭৯ ও ৫৮০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে যে, 

বস্তুত প্রকৃতির সে বিস্ময়টি ছিল এই যে, কাফের বাহিনী যদিও তিন গুণ বেশি ছিল, কিন্তু আল্লাহ তা’লা শুধুমাত্র স্বীয় পরিপূর্ণ ক্ষমা ও কুদরতবলে তাদের সংখ্যাকে মুসলমানদের চোখে কম করে দেখিয়েছেন, যাতে মুসলমানদের মধ্যে কোনো দুর্বলতা ও বিরোধ সৃষ্টি হয়ে না যায়। আর এ ঘটনাটি ঘটে দু’বার। একবার মহানবী (সা)কে স্বপ্নযোগে দেখানো হয় এবং তিনি বিষয়টি মুসলমানদের কাছে বলেন। তাতে তাদের মনোবল বেড়ে যায়। আর দ্বিতীয়বার ঠিক যুদ্ধক্ষেত্রে যখন উভয় পক্ষ সামনা-সামনি হয়, তখন মুসলমানদেরকে কাফেরদের সংখ্যা কম করে দেখানো হয়। সুতরাং ৪৩ তম আয়াতে স্বপ্নের ঘটনা এবং ৪৪ তম আয়াতে প্রত্যক্ষ জাগ্রত অবস্থার ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে।


তাফসীরে জালালাইন,২ খণ্ড,৫৮০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, 

আয়াতটির দ্বারা এ কথাও বোঝা গেল যে, কোনো কোনো সময় মুজেজা ও অলৌকিকতা স্বরূপ চোখের দেখাও ভুল প্রতিপন্ন হয়ে যেতে পারে। যেমনটি এক্ষেত্রে হয়েছে। সে জন্যই এখানে পুনর্বার বলা হয়েছে- অর্থাৎ এহেন কুদরতি বিস্ময় এবং চোখের দৃষ্টির উপর হস্তক্ষেপ এ কারণে প্রকাশ হয় যাতে সে কাজটি সুসম্পন্ন হয়ে যেতে পারে, যা আল্লাহ করতে চান। অর্থাৎ মুসলমানদের তাদের সংখ্যাল্পতা ও নিঃস্বম্বলতা সত্ত্বেও বিজয় দান করে ইসলামের সত্যতা এবং তার প্রতি অদৃশ্য সমর্থন প্রকাশ পায়। বস্তুত এ যুদ্ধের যা উদ্দেশ্য ছিল, আল্লাহ তা’লা এভাবেই তা পূর্ণ করে দেখিয়ে দেন


পাঠক আপনি নিজেই বলুন তো উপরের কোথায় এই কথা লেখা আছে যে “আল্লাহ মিথ্যা সপ্ন দেখিয়েছেন?” অথবা “আল্লাহ মিথ্যাকথা বলেছেন?” তাহল নাস্তিকরা মুক্তচিন্তার চাপে যেভাবে বিকৃত অর্থ করেছে সেই ব্যাখ্যা স্পষ্ট মিথ্যাচার এটা নিশ্চিত। উপরের তাফসীর পড়লে স্পষ্ট যে আল্লাহ অলৌকিক ভাবে মুসলিমদের কাছে কাফেরদের সংখ্যাকে কম করে দেখিয়েছেন আর নবীজি (সা)ও এই কথা মুসলিমদের কাছে জানিয়ে দিয়েছিলেন। আর যুদ্ধেও মুসলিমরা সংখ্যা কম দেখতেছিল। এটা তো স্পষ্ট এক মোজেজা বা অলৌকিকতা। এটাই ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা। কিন্তু এই ব্যাখ্যাকে ধামাচাপা দিয়ে আল্লাহকে খারাপ বানানোর জন্য কেন মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করতে হল মুক্তমনাদের? সুতরাং নাস্তিকরা যে ইসলামকে নিয়ে অন্ধবিশ্বাস করে এটা বারবার প্রমাণিত হতেই থাকছে।


অধিক সংখ্যাকে কম করে দেখানো মানেই কি মিথ্যা? অবশ্যই না। ধরুন আপনার হাতে ৫০০ টাকা আছে। জাদুকর তার জাদুর মাধ্যমে আপনাকে দেখালো যে আপনার হাতে যেই টাকা আছে সেটা আসলে অনেক কম এবং আপনি নিজেও দেখছেন যে ৫০০ টাকা আপনার কাছে খুবই কম মনে হচ্ছে। এই যে আপনার মনে হচ্ছে আর আপনি নিজেও চাক্ষুস দেখছেন যে ৫০০ টাকা কম- এই দেখাটি কি মিথ্যা নাকি সত্য? অবশই সত্য। কারণ জাদুকর আপনাকে দেখাচ্ছেন আর আপনিও বাস্তবে তাইই দেখেছেন আর মনে করছেন। এই সাধারণ উদাহরণ বুঝে থাকলে এটাও বুঝতে সুবিধা হবে যে আল্লাহ সপ্নে নবীজি (সা)কে কাফেরদের অধিক সংখ্যক লোকদের কম করে দেখিয়েছেন এবং নবীজি (সা) উনার সাহাবীদেরকে সেটা বলেছিলেন এবং বাস্তবেও সাহাবীরাও যুদ্ধে তাই দেখেছিলেন। তাই উনারা নিজ চোখে যা দেখেছিলেন সেটা বাস্তবেই দেখেছিলেন যদিও কাফেরদের সংখ্যা বেশি ছিল। তাই উক্ত আয়াতকে কেন্দ্র করে কখনোই এটা বলা যায় না যে আল্লাহ মিথ্যা কথা বলেছেন। কেননা এটাকে অলৌকিকতা বলা হয়, মিথ্যা বলা নয়।


ধরুন আপনার কালকে কঠিন পরীক্ষা আর আপনি সেই বিষয় খুবই দুর্বল। আপনার শিক্ষকের সাথে বিষয়টি আলোচনা করার পরে উনি আপনাকে এমন ভাবে উৎসাহ আর সাহস দিলেন যে আপনার কাছে মনে হচ্ছে ১০০ পৃষ্ঠার বই ৫০ পৃষ্ঠার সমান। আপনি শিক্ষকের অনুপ্রেরণায় ১০০ পৃষ্ঠারই প্রস্তুতি নিয়েছেন আর মনে মনে ভাবছেন এটা তো আমার কাছে ৫০ পৃষ্ঠার মতো অল্প সংখ্যা। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে আপনার কাছে ১০০ পৃষ্ঠাকে যে ৫০ পৃষ্ঠার সমান অল্প মনে হচ্ছে এটা কি মিথ্যা? অবশ্যই না। কারণ আপনার শিক্ষক আপনার বিষয় এক্সপার্ট ছিল এবং আপনাকে কিভাবে অনুপ্রেরণা দিলে ভালো হবে সেটা উনি ভালো জানেন তাই আপনার কাছে অথবা আপনার চোখে ১০০ পৃষ্ঠাকে ৫০ পৃষ্ঠার সমান মনে হওয়া মিথ্যা নয় বরং আপনার জন্যই উত্তম। এই উদাহরণ বুঝে থাকলে এটা বুঝতেও সুবিধা হবে যে,


ইঃফা,তাফসীরে ইবনে কাসীর,৪ খণ্ড,৪৬৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

মুজাহিদ (রহ) বলেন, আল্লাহ পাক মহানবী (সা)কে স্বপ্নে উহাদের সংখ্যা কম দেখাইয়া ছিলেন। অতঃপর মহানবী (সা) তাহাঁর সাহাবাগণকেও ইহা অবহিত করিয়া ছিলেন। সুতরাং উহাদের কাছে ইহাই প্রতীয়মান হইয়াছে। ইবনে ইসহাক (রহ) সহ অনেক লোকই এইরুপ অভিমত প্রকাশ করিয়াছেন। ইবনে জারীর (রহ) উহাদের কোন কোন লোক হইতে বর্ণনা করেন যে, যেরূপ স্বপ্নে দেখা গিয়াছে ময়দানেও অনুরূপ পরিদৃষ্ট হইয়াছে।


ধরুন ৫ লাখ নাস্তিক সন্ত্রাসীরা নিরীহ মুসলিমদেরকে হত্যা করার জন্য যুদ্ধের ময়দানে এসেছে। সেই নিরীহদের একজন নেতা হচ্ছেন আপনি। আর আপনারা সংখ্যায় কম। আপনি যুদ্ধে যাবার আগে সব মানুষদেরকে অনুপ্রেরণা দেবার জন্য ভাষণ দিলেন যে নাস্তিক সন্ত্রাসীরা সংখ্যায় ৫ কোটিই হউক না কেন আমাদের চোখে তারা সংখ্যায় আমাদের চেয়েও কম। আপনার এমন সাহসী অনুপ্রেরণায় সবাই দুনিয়াতে মানবতা প্রতিষ্ঠা করার জন্য সেই ৫ লাখ সন্ত্রাসী নাস্তিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লড়াই করার অনুপ্রেরণা পেল।


আপনার অসাধারণ অনুপ্রেরণায় আপনার ভাষণে স্বপ্নে সবাই নাস্তিক সন্ত্রাসীদের সংখ্যা দেখল কম এবং ন্যায়ের পক্ষে যুদ্ধ করার সময় তারা এমন এক মনোভাব নিয়ে রেখেছিল যে আসলেই সন্ত্রাসী নাস্তিকদের সংখ্যা কম। এখানে আপনি একজন নেতা হিসেবে যেই অনুপ্রেরণা দিলেন অর্থাৎ সন্ত্রাসী নাস্তিকদের সংখ্যা কম যদিও বেশি এই অনুপ্রেরণাকে কি মিথ্যা বলা যাবে? একদম না। আপনারা যে অনুপ্রেরণার জন্য তাদের সংখ্যাকে কম করে দেখলেন এটাকে কোন যুক্তিতে মিথ্যা বলা যায়? ঠিক একইভাবে আল্লাহ নবীজি (সা)কে সপ্নে তাদের সংখ্যাকে অল্প করে দেখিয়েছেন যাতে নবীজি (সা) ও নিরীহ সব মুসলিমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে নারভাস না হয়। এমনকি যুদ্ধের ময়দানেও তারা সংখ্যা কমই দেখেছে। এখানে আল্লাহ বিন্দুমাত্র মিথ্যাকথা বলেন নাই। বরং আল্লাহ যা দেখিয়েছেন তা বাস্তবেও নবীজি (সা) ও উনার সাহাবীরা দেখেছিলেন। এটা নিঃসন্দেহে অলৌকিক একটি ঘটনা।


ইসলামের সমালোচকরা কি কুরআন থেকে এমন একটি আয়াত দেখাতে পেরেছে যেখানে লেখা আছে আল্লাহ মিথ্যাকথা বলেন আর উনি মিথ্যুক? কিন্তু আমি কুরআন থেকে একাধিক স্পষ্ট আয়াত দেখিয়ে দিচ্ছি যেখানে এটা লেখা আছে আল্লাহ সত্যবাদী। 


সুরা সোয়াদ ৩৮ঃ৮৪ = 

আল্লাহ বললেন, এটি সত্য আর সত্যই আমি বলি।  


সুরা ইমরান ৩ঃ৬০ = 

যা তোমার পালকর্তা বলেন তাই হচ্ছে যথার্থ সত্য। কাজেই তোমরা সংশয়বাদী হয়ো না।


সুরা নিসা ৪ঃ৮৭ = 

আল্লাহ ব্যতীত আর কোনোই উপাস্য নেই। অবশ্যই তিনি তোমাদেরকে সমবেত করবেন কেয়ামতের দিন, এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। তাছাড়া আল্লাহর চাইতে বেশী সত্য কথা আর কার হবে! 


সুরা নিসা ৪ঃ১২২ = 

আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সত্য সত্য। আল্লাহর চাইতে অধিক সত্যবাদী কে?

 

সুরা আহযাব ৩৩ঃ৪ = 

আল্লাহ ন্যায় কথা বলেন এবং পথ প্রদর্শন করেন।


নাস্তিকরা ইসলাম আসলে বোঝেই না। নাস্তিকদের বিশ্বাস হচ্ছে তাদের মগজ জন্তু জানোয়ার থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে হয়েছে। আচ্ছা আপনারাই বলুন এমন মগজ দিয়ে কিভাবে সত্য সন্ধান করা সম্ভব? পাঠক আরও লক্ষ্য করুন উক্ত আয়াতটি আল্লাহর অস্তিত্ব যে সত্য, হযরত মোহাম্মদ (সা) যে সত্য নবী ছিলেন এবং ইসলাম যে একমাত্র সত্য জীবন বিধান সেটা পরিস্কার প্রমাণিত হয়ে যায়। কিভাবে?


খেয়াল করুন যদি নবী মোহাম্মদ (সা) মিথ্যুক নবী হতেন তাহলে উনি নিজে সপ্নে কাফেরদের সংখ্যা কম দেখলেও বাস্তবে মুসলিমদেরকে কি যুদ্ধের ময়দানে কম করে দেখাতে পারতেন? এটা কি উনার পক্ষে সম্ভব ছিল? আর উনার দলের লোকের সংখ্যা কম হওয়া সত্ত্বেও উনি বেশি সংখ্যক কাফেরদের সাথে কেন লড়াই করতে যাবেন? কাফেররা কি উনাকে সম্পদের লোভ দেখায় নি? নারীর লোভ দেখায় নি? নেতৃত্বের লোভ দেখায় নি? উনি তাহলে কেন সেসব অস্বীকার করে কম সংখ্যা নিয়ে এতো বিশাল সংখ্যার দলের সাথে যুদ্ধ করতে গেলেন? আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে যদি স্বপ্নে নবীজি (সা) ভুল দেখে থাকেন তবে বাস্তবে কিভাবে সাহাবীরা কাফেরদের সংখ্যা কম দেখলো? এই মোজেজা অস্বীকার করার কি কি উপায় আছে মিথ্যুক নাস্তিকান্ধদের কাছে?


তারমানে আল্লাহ নবী মোহাম্মদ (সা)কে যেই স্বপ্ন দেখিয়েছেন সেটা সত্যই উনি দেখেছেন আর আল্লাহ কখনোই এখানে মিথ্যা কথা বলেন নাই আর বাস্তবেও মুসলিমরা সেটাই দেখতে পেয়েছিল। এখানে একটি সংশয়মূলক প্রশ্ন জাগে। সেটা হচ্ছে নবী মোহাম্মদ (সা) যদি মিথ্যাবাদী নবী হয়ে থাকতেন তবে আল্লাহর নামে এমন স্বপ্ন কেন দেখলেন যা বাস্তবে সবার চোখেই সত্য হয়ে ফুটে উঠেছিল? তাহলে প্রমাণ হচ্ছে যে আল্লাহর অস্তিত্ব সত্যিই প্রমাণিত? আর নবী মোহাম্মদ (সা) সত্যিই আল্লাহর নবী ও রাসুল ছিলেন? এই সত্যতা নাস্তিকরা কিভাবে অস্বীকার করবে? নাস্তিকদের ভিত্তি যে সম্পূর্ণ মিথ্যার উপর দাড়িয়ে আছে এটা বুঝার জন্য এই প্রমাণ গুলো যথেষ্ট নয়?


আল্লাহ মানুষের মতো ষড়যন্ত্র করেন?

অভিযোগ ২/  নাস্তিকরা বলে,

ইসলামের বিশ্বাস অনুসারে আল্লাহ পাক হচ্ছেন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। চালাকি করা, ধূর্ততা বা প্রতারণার আশ্রয় নেয়া, এগুলো আমাদের মত সাধারণ মানুষের সাধারণ কাজ হতে পারে কিন্তু সর্বশক্তিমান আল্লাহ পাক কেন এই ধরণের কাজ করতে যাবেন, তা এক অবাক করার মত বিষয়। যার কাছে সর্বময় ক্ষমতা, যিনি হুকুম দিলে মহাবিশ্ব গ্রহ নক্ষত্র নিমিষের মধ্যে সৃষ্টি হয়ে যায়, তিনি মানুষের কৌশল দেখে পাল্টাপাল্টি কৌশল করছেন, বিষয়টি আল্লাহর সর্বময় ক্ষমতার ধারণার সাথে সাংঘর্ষিক। যেন দুই পাহাড় দুই মাস্তানের যুদ্ধ, যেখানে দুইজনই একজন আরেকজনকে পরাজিত করতে প্রতারণা করছে।


সূরা আল-ইমরানের ৫৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ সম্পর্কে الماكرين শব্দটি উল্লেখ করে বলা হয়েছে, আল্লাহ সবচেয়ে বড় প্রতারক বা ধূর্ত। আপনারা চাইলে এই শব্দটির অনুবাদ বিভিন্ন ডিকশনারিতে খুঁজে দেখুন, এটির অর্থগুলো হচ্ছে প্রতারক বা ধূর্ততার সাথে যে কৌশল করে বা কুটকৌশলী। কিন্তু এই আয়াতটির বাঙলা অনুবাদে ইচ্ছাকৃতভাবে আল্লাহকে মোলায়েম করে কৌশলী বলা হয়েছে।


সুরা আল ইমরান ৩ঃ৫৪ = এবং কাফেরেরা চক্রান্ত করেছে আর আল্লাহও কৌশল অবলম্বন করেছেন। বস্তুতঃ আল্লাহ হচ্ছেন সর্বোত্তম কুশলী। ///> সুরা আনফাল ৮ঃ৩০ = স্মরণ কর, সেই সময়ের কথা যখন কাফিরগণ তোমাকে বন্দী করার কিংবা হত্যা করার কিংবা দেশ থেকে বের করে দেয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করে। তারা চক্রান্ত করে আর আল্লাহও কৌশল করেন। আল্লাহই হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলী। ///> সুরা আরাফ ৭ঃ৯৯ = তারা কি আল্লাহর কৌশল থেকে নির্ভয় হয়ে গেছে? নিশ্চিত ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায় ছাড়া আল্লাহর কৌশল হতে কেউ নির্ভয় হতে পারে না। ///> সুরা ইউনুস  ১০ঃ২১ = দুঃখ কষ্ট মানুষকে স্পর্শ করার পর আমি যখন তাদেরকে অনুগ্রহ আস্বাদন করতে দেই, তখন তারা আমার নিদর্শনগুলোর ব্যাপারে কুট কৌশলের আশ্রয় নেয়। বল, ‘কৌশল গ্রহণে আল্লাহ হলেন ক্ষিপ্রগতিসম্পন্ন, তোমরা যে সব কূটচাল গ্রহণ কর আমার ফেরেশতাগণ তা লিপিবদ্ধ করে রাখে।’


জবাবঃ “আল্লাহ উনার অপরাধী বান্দার বিরুদ্ধে কৌশল করতে পারবেন না” এটাও নাস্তিকদের বানানো কথা যা ওরা ইসলামের মধ্যে মিশিয়ে দেবার চেষ্টা করেছে কারণ ইসলামের দৃষ্টিতে আল্লাহ অবশ্যই উনার অমান্যকারী বান্দাদেরকে শাস্তি দেবার উদ্দেশ্য কৌশল করতেই পারেন। এটা একদমই অবাক করার বিষয় না। অবাক করার বিষয় হচ্ছে যাদের পূর্ব-পুরুষে গরু,ছাগল,বান্দর এমনকি শূকর পর্যন্ত বিদ্ধমান যারা স্রস্টাকেই অস্বীকার করে এরাই আবার বলে দিতে চাচ্ছে আল্লাহ কি করতে পারবেন আর কি করতে পারবেন না তাও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে! এটাই হচ্ছে অবাক করার বিষয়।


“আল্লাহ কৌশল করতে পারেন না” এই কথা কি নাস্তিকরা স্বীকার করে? যদি উত্তর হয় “হ্যাঁ” তাহলে নাস্তিক্যবাদ মিথ্যা কারণ নাস্তিকতা মানে স্রষ্টার অস্তিত্ব অস্বীকার করা। যদি উত্তর হয় “না” তাহলে এই বিশ্বাস করলে নাস্তিক আর নাস্তিকই থাকতে পারছে না কেননা তার নাস্তিক্যবিশ্বাস হচ্ছে স্রষ্টাকে অস্বীকার করা। আল্লাহ কৌশল করতে পারেন না এই বিশ্বাস নাস্তিক্যবিরোধী বিশ্বাস তাই কোনো নাস্তিক এই বিশ্বাস করতে পারে না অভিযোগ করা তো দূরে থাক। আল্লাহ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী তাই আল্লাহ চাইলেই উনার বান্দাকে শাস্তির উদ্দেশ্যে কৌশল তিনিও করতেই পারেন এখানে উনার সর্বময় ক্ষমতার অধিকার কিভাবে সাংঘর্ষিক হচ্ছে?


বরং উনি যে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী সেটাই স্পষ্ট প্রমাণ করছে যে উনি চাইলে উনার অপরাধী বান্দাকে শাস্তি দিতে কৌশল করতেই পারেন। একেবারেই স্বাভাবিক একটি বিষয়। আল্লাহ কি করতে পারবেন আর কি করতে পারবে না সেটা কি নাস্তিকরা নির্ধারণ করে দেবে? কেন? নবী মোহাম্মদ (সা) কি কখনো এই কথা বলেছেন যে আল্লাহ সব সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী তাই আল্লাহ কৌশল করতে পারবেন না বা পারেন না? উনার কোনো সাহাবী নবীজি (সা) থেকে কি এই ব্যাখ্যা করেছেন? অথবা কুরআনের উক্ত আয়াতকে কেন্দ্র করে কি কোনো মুজতাহিদ ইমাম এই ধরণের ব্যাখ্যা করেছেন? তাহলে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা কেন করলো মুক্তমনারা?


এখন আসুন জেনে নেই “আল মাকিরিন” মানে আসলে কি বুঝায়?


মাওলানা মোঃ হাবিবুর রহমান লিখিত “শব্দে শব্দে আল কুরআন” বইয়ের ২ খণ্ড,৫৪ পৃষ্ঠাতে বলা হয়েছে,

(সুরা আল ইমরান ৩ঃ৫৪)এর “খইর” শব্দের অর্থ শ্রেষ্ঠ আর “আল মাকিরিনা” শব্দের অর্থ কুশলীদের বলা হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ শ্রেষ্ঠ কৌশলী বুঝানো হয়েছে। /// এই বইতেই ৪ খণ্ড,১৯২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে,(সুরা আনফাল ৮ঃ৩০)এর “খইর” অর্থ সর্বশ্রেষ্ঠ এবং “আল মাকিরিনা” অর্থ কুশলীদের মধ্যে, বলা হয়েছে। /// আবার ৪ খণ্ড,৮৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে, (সুরা আরাফ ৭ঃ৯৯)এর আরবি “মাকরো” শব্দের অর্থ কৌশল সম্পর্কে। /// আবার এই বইতেই ৫ খণ্ড,১৫৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে, (সুরা ইউনুস  ১০ঃ২১)এর আরবি “মাকরো” শব্দের অর্থ কৌশলে বলা হয়েছে।


মাওলানা মোহাম্মদ আবুল কালাম মাসুম লিখিত “তাফসীরে আনওয়ারুল কুরআন,১ খণ্ড,৪৬৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

সুরা আল ইমরান ৩ঃ৫৪ এর শাব্দিক অনুবাদেও আরবি “ওয়ামাকারোল্লো” শব্দের অর্থ আল্লাহ গোপন কৌশল করলেন বলা হয়েছে আবার আবার “ওয়াল্লাহু খয়রুল মারিরিন” আরবি শব্দের অর্থ বলা হয়েছে আল্লাহ শ্রেষ্ঠতম কৌশলী। /// আবার ২ খণ্ড,৪৯৯ পৃষ্ঠায় সুরা আনফাল ৮ঃ৩০ এর আরবি শাব্দিক অনুবাদে “ওয়াল্লাহু খয়রুল মারিরিন” এর অর্থ বলা হয়েছে আল্লাহ হচ্ছেন সর্বাধিক দৃঢ় তদবীরকারক। /// আবার ২ খণ্ড,৩৮১ পৃষ্ঠায় সুরা আরাফ ৭ঃ৯৯ এর আরবির শাব্দিক অনুবাদে বলা হয়েছে, “আফাআমিনু মাকরোল্লো” অর্থ হ্যাঁ, তবে কি তারা আল্লাহর এই পাকড়াও হতে নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়েছে? “ফালা ইয়া’মানু মাকরোল্লো” অর্থ বস্তুত আল্লাহর পাকড়াও হয়ে কেউই নিশ্চিন্ত হয় না। /// ৩ খণ্ড,৫০ পৃষ্ঠাতেও শাব্দিক অনুবাদে “আসরোউ মাকরো” অর্থ আল্লাহ তা’লা অতিসত্বরই এ দুরভিসন্ধির শাস্তি প্রদান করবেন।


তারপরেও তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেয়া হয় “আল্লাহ শ্রেষ্ঠ ষড়যন্ত্রকারী” এই অনুবাদই হবে এরপরেও আমাদের আপত্তি নেই। কেননা যারা ইসলামকে দুনিয়া থেকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র করে, চক্রান্ত করে তাদেরকে শাস্তি দেবার জন্য আল্লাহ নিঃসন্দেহে যদি তাদেরই বিরুদ্ধে তাদের ষড়যন্ত্রকে ধ্বংস করতে আল্লাহও ষড়যন্ত্র করে তাহলে এটা অযৌক্তিক হবে না। নাস্তিক মুক্তমনারা হয় এসব বোঝে না আর না হয় ইচ্ছা করেই ইসলামকে খারাপ করে দেখানোর জন্য মুক্তচিন্তায় বাটপারি করে।


কুরআনুল কারীম (বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর ) ১ খণ্ড,২৯৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

আরবি ভাষায় “মাকর” শব্দের অর্থ সুরক্ষা ও গোপন কৌশল। উত্তম লক্ষ্য অর্জনের জন্য মকর ভাল এবং মন্দ লক্ষ্য অর্জনের জন্য হলে তা মন্দও হতে পারে। এ আয়াতে (সুরা আল ইমরান ৩ঃ৫৪) কাফেরদের “মাকর” - এর বিপরীতে আল্লাহর পক্ষ থেকেও “মাকার” করার কথা এ কারণেই যোগ করা সঠিক হয়েছে। বাংলা ভাষার বাচনভঙ্গিতে ‘মাকার’ শব্দটি শুধু ষড়যন্ত্র ও অপকৌশল অর্থে ব্যবহৃত হয়। কাজেই এ নিয়ে আরবি বাচনভঙ্গিতে সন্দেহ করা উচিত নয়। আরবি অর্থের দিক দিয়েই এখানে আল্লাহকে শ্রেষ্ঠতম কুশলী বলা হয়েছে।


উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কেউ যদি ষড়যন্ত্র করে আর একজন দেশপ্রেমী নেতা যদি বাংলাদেশ বিরোধী শক্তিকে দমন করার জন্য ষড়যন্ত্র করে তাহলে এটা যেমন যৌক্তিক এবং এই কথাকে কেউ যেমন কটূক্তি করতে পারে না ঠিক একইভাবে যারা ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাদের এই ষড়যন্ত্রকে নষ্ট করে দিতে আল্লাহও যদি তাদেরকে শাস্তি দেবার জন্য তাদের বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্র করে তবে এটা যৌক্তিকই হবে। অবাক করার বিষয় হচ্ছে অনুবাদকারীরাও নাস্তিকদের ডাহা জালিয়াতি থেকে বাদ গেল না। অনুবাদ কারীরা যেই অনুবাদ করেছেন সেটা সঠিক অনুবাদই করেছেন। অনুবাদকারীরা আল্লাহকে মোলায়েম করতে অনুবাদ করেছেন এই কথা কি নাস্তিকদের সব অনুবাদকারীরা এসে বলে দিয়ে গেছে? পাঠক নাস্তিকরা এভাবেই মানুষকে নিয়ে মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। মিথ্যাচার করাই মুক্তচিন্তা? এটাই কি নাস্তিকদের মুক্তচিন্তার আন্দোলন?


যুদ্ধে মিথ্যা বলার ব্যাপারটি

অভিযোগ ৩/ নাস্তিকরা বলে,


নবী মোহাম্মদ (সা) নাকি সত্যবাদী ছিলেন অথচ এই হাদিসে সে নিজেই মানুষকে যুদ্ধে মিথ্যাবলার উপদেশ দিচ্ছে যা অমানবিক এবং অন্যায়। যুদ্ধ হচ্ছে ধোঁকার জায়গা। প্রতিপক্ষকে যুদ্ধে পরাজিত করার জন্য মিথ্যা বলা এবং প্রতারণা করাকে ইসলামে বৈধতা দেয়া হয়েছে। এই হাদিস গুলো কি উনাকে মিথ্যাবাদী প্রমাণ করছে না?


জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ  ১৬৭৫, সহিহ হাদিসঃ আমর ইবনু দীনার (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যুদ্ধ হল ধোকা।-ihadis.com


সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ  ২৮৩৩,২৮৩৪, সহিহ হাদিসঃ আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ যুদ্ধ হলো কৌশল।-ihadis.com


জবাবঃ ইসলামের এতো সুন্দর একটি কৌশলকেও নাস্তিকদেরকে খারাপ বানাতে হবে? যুদ্ধের ময়দানে কি দুশমনকে কাচ্চি পোলাও খাওয়ানো হয় নাকি? নাস্তিক্যধর্মে যুদ্ধের কোনো নির্দিষ্ট নৈতিকতা নেই। এমনকি যুদ্ধ কাকে বলা হবে ? কাকে বলা হবে না? এই সংজ্ঞা অথবা নৈতিকতা গুলো কোন নাস্তিক বানিয়ে দিবে এবং তাকে কেন বিশ্বাস করতে সবাই বাধ্য হবে ? এমন প্রশ্নে নাস্তিক্যধর্ম কি সমাধান দিবে সেটা নিয়ে বেশ সংশয় রয়ে যাচ্ছে। তাহলে যুদ্ধে মিথ্যা বলা অনৈতিক এমন নৈতিকতা কোন নাস্তিক বানিয়েছে যাকে সমস্ত মানুষ বিশ্বাস করতে বাধ্য? উক্ত নাস্তিকের দেয়া নৈতিকতা অবিশ্বাস করে নিজস্ব নৈতিকতা বানানোর মুক্ত স্বাধীনতা কি অন্য সকল মানুষদের থাকা উচিত নয়?

একজন নাস্তিক ক্ষমতা পেয়ে যেমন সবাইকে অন্যায়ভাবে নিজের মুক্তচিন্তায় হত্যা করার স্বাধীনতা রাখে ঠিক একইভাবে সব ক্ষেত্রে মিথ্যাকথা বলারও ফ্রিডম রাখে। সংশয় হচ্ছে যুদ্ধের ময়দানেও সত্য বলতেই হবে এই নৈতিকতা নাস্তিকরা কিভাবে তৈরি করেছে? এই নৈতিকতার যুক্তি কি নাস্তিক্যবিশ্বাস অনুযায়ী? নাস্তিক্যবিশ্বাস থেকে যুদ্ধের নৈতিকতা নিয়ে নাস্তিকদের নিজস্ব কোনো গ্রন্থ আছে কি না সেটা আমার জানা নেই তাই সংশয় হচ্ছে একজন নাস্তিক যদি এই নৈতিকতা তৈরি করে যে যুদ্ধের সময়ই না শুধু সবক্ষেত্রেই মিথ্যা বলতেই হবে তাহলে এই নৈতিকতাকে অন্য নাস্তিকরা কিভাবে অনৈতিক প্রমাণ করবে? একজন নাস্তিক যদি তার মুক্তচিন্তায় এটা বিশ্বাস করে যে, সে সর্বদা মিথ্যাকথা বলবে কেননা মিথ্যাকথা বলা তার কাছে নৈতিক,প্রশ্ন হচ্ছে তার নৈতিকতাকে কোন যুক্তিতে নাস্তিক্যধর্ম ভুল প্রমাণ করতে পারবে? 

ধরা যাক একজন চোরের নাম হচ্ছে আরোজাসিফ। সে যুক্তি দিল আমি ইসলামকে ঘৃণা করি তাই ইসলাম নিয়ে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই মিথ্যাচার করবো, করবো তথ্য বিকৃতি করে উপস্থাপনা এটা আমার স্বাধীনতা, এটাই আমার মুক্তচিন্তার আন্দোলন। আমার দেহ আমার চিন্তা তাই আমার চিন্তায় সবক্ষেত্রেই মিথ্যাকথা বলা ভালো। এখানে সংশয় হচ্ছে নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে কি উক্ত নাস্তিক্যচোরাকে অনৈতিক প্রমাণ করার কোনো ভিত্তি আছে নাস্তিকদের কাছে? আপনার কাছে যদি তাকে ভুল বলার স্বাধীনতা থাকে তবে একই যুক্তিতে তার নিজস্ব চিন্তাকে সঠিক বলে বিশ্বাস করার স্বাধীনতা তার থাকবে না কেন? তাহলে নাস্তিক্যবিশ্বাস থেকে ইসলামের নৈতিকতাকে খারাপ প্রমাণ করা কি কোনভাবেই সম্ভব হচ্ছে?

তাহলে ইসলামের দৃষ্টিতে উক্ত হাদিসের সঠিক মর্মার্থ কি হবে? আল্লামা মুফতি তাকি উসমানি লিখিত “দরসে তিরমিযী”,৫ খণ্ড,৫৭৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

যুদ্ধে অনেক সময় দুশমনকে ধোঁকা দেওয়ার প্রয়োজন হয় এবং ধোঁকা দেওয়ার দুটি পদ্ধতি হয়, একটি পদ্ধতি হলো, মুসলমান তাওরিয়া (বাহ্যার্থের আড়ালে নিগুঢ় অর্থ উদ্দেশ্য নেওয়া) করবে এবং এমন শব্দ বলবে, যার ফলে দুশমন ধোঁকায় পড়ে যাবে এবং তার অন্তরে যথার্থ অর্থের নিয়ত থাকবে। এটা সর্বসম্মতিক্রমে বৈধ। তবে যুদ্ধের ক্ষেত্রে শত্রুকে বিভ্রান্ত করার জন্য সুস্পষ্ট মিথ্যা বলা বৈধ কিনা, এ সম্পর্কে ইসলামি আইনবিদগণের মতপার্থক্য আছে। তবে বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায়, ধোঁকা দেওয়ার জন্য সুস্পষ্ট মিথ্যা বলারও অবকাশ আছে। অবশ্য চুক্তির বিরোধিতার জন্য মিথ্যা বলা অবৈধ। তবে যুদ্ধের কৌশল হিসেবে মিথ্যা বলার অবকাশ আছে। এর সমর্থন এ ঘটনা দ্বারা হয় যে, হজরত হাজ্জাজ ইবনে আল্লাক (রা) যখন মক্কা মুকাররামায় যেতে লাগলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা) হতে অনুমতি নিলেন যে, আমি সেখানে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলবো, তখন রাসুলুল্লাহ (সা) তাকে অনুমতি দিয়েছেন, তাই তিনি যখন সেখানে পৌঁছলেন, তাদের সঙ্গে মিছামিছি বলে দিলেন যে, খায়বরে মুসলমানদের পরাজয় হয়েছে। এ খবরটি মিথ্যা ছিলো। এর দ্বারা অনেক ইসলামি আইনবিদ দলিল পেশ করেন যে, স্পষ্ট মিথ্যা বলা বৈধ। তবে সর্বাবস্থায় সতর্কটা হলো, স্পষ্ট মিথ্যা না বলে তাওরিয়া করা। 

ধরুন আপনাকে যুদ্ধে নাস্তিক সন্ত্রাসী বাহিনী ধরে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো যে তোর মা-বোন কোথায়? তোর মা-বোনকে আমরা মুক্তমনে ধর্ষণ করবো। বল, না হলে আমরা তোকে হত্যা করবো। আপনি নিজেকে রক্ষা করার জন্য ও আপনার মা-বোনকে রক্ষা করার জন্য সন্ত্রাসী নাস্তিকদেরকে মিথ্যা বললেন যে আমার মা-বোন পালিয়ে গেছে তারা কোথায় গিয়েছে আমি জানি না। এই যে আপনি আপনার মা-বোনকে রক্ষা করার জন্য মিথ্যা বললেন এই সাময়িক ক্ষেত্রে ইসলাম মিথ্যা বলার অনুমতি দেয়। এবং এটা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে যৌক্তিকও।

কিন্তু সাধারণ অবস্থায় বিন্দুমাত্রও মিথ্যাকথা বলা যাবে না। যুদ্ধে নিজেকে, নিজের মা-বোনের ইজ্জত রক্ষা করতে সাময়িক মিথ্যা বলা কেন খারাপ? নিজের সৈন্যদলকে নিরাপদ রাখার জন্য দুশমনদের কাছে মিছামিছি বলা কেন খারাপ হবে? এই ব্যাপার যেকোন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ বুঝবে। নবীজি (সা) যুদ্ধে সাময়িক মিথ্যা বলার অনুমতি দিয়েছেন এটা কেন খারাপ সেটা নাস্তিক্যধর্ম দিয়ে প্রমাণ করতে পারবে নাস্তিকরা? না। তাহলে নাস্তিকদের এটা বলার যুক্তি নেই যে উনি ভুল কিছু বলেছেন। নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে সব সময়ই মিথ্যাকথা বলার স্বাধীনতা থাকলেও ইসলাম তিনটি ক্ষেত্র ছাড়া বাকি সব সময় মিথ্যাকথা বলার অনুমতি প্রদান করে না। নবীজি (সা) থেকেই আসুন জেনে নেই।

জামে আত তিরমিজি,হাদিসঃ১৯৩৯,সহিহ হাদিসঃ

আসমা বিনতু ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তিনটি ক্ষেত্র ব্যতীত মিথ্যা বলা বৈধ নয়। (এক) স্ত্রীকে খুশি করার উদ্দেশ্যে তার সাথে স্বামীর কিছু বলা, (দুই) যুদ্ধের সময় এবং (তিন) লোকদের পরস্পরের মাঝে সংশোধন করার জন্য মিথ্যা কথা বলা। অধঃস্তন রাবী মাহমূদ তার হাদীসে বলেছেন, তিনটি ক্ষেত্র ব্যতীত অন্য কোথাও মিথ্যা বলা ঠিক নয়।-ihadis.com

প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ বা মিথ্যাচার করার ইসলামিক কৌশল! 

অভিযোগ ৪/  নাস্তিকরা বলে,

নবী মোহাম্মদ (সা) প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ বা মিথ্যাচার করার খুব সুন্দর একটি কৌশল বলে দিয়েছেন, যার একদম সরাসরি প্রমাণ পাওয়া যায় হাদিসেই। নিচের হাদিস দুইটি পড়ুন, এখানে বলা হচ্ছে, কোন বিষয়ে কেউ যদি প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু পরে যদি তার বিপরীতটি তার কাছে উত্তম মনে হয়, তাহলে প্রতিশ্রুতির কাফফারা দিয়ে বিপরীত কাজটিই করা যাবে। এতো সরাসরি মিথ্যাচার, এবং প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা। কাফফারা দিলেই কি সব মাফ হয়ে যায়?

সহিহ বুখারী,হাদিসঃ৭১৪৬,৭১৪৭, সহিহ হাদিসঃ আবদুর রহমান ইব্‌নু সামুরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ হে ‘আবদুর রহমান ইব্‌নু সামুরাহ! তুমি নেতৃত্ব চেও না। কারণ চাওয়ার পর যদি তোমাকে তা দেয়া হয়, তবে তার দায়িত্ব তোমার উপরই বর্তাবে। আর যদি চাওয়া ছাড়াই তা তোমাকে দেয়া হয় তবে এ ক্ষেত্রে তোমাকে সাহায্য করা হবে। আর কোন বিষয়ে কসম করার পর, তার বিপরীত দিকটিকে যদি এর চেয়ে কল্যাণকর মনে কর, তাহলে কসমের কাফ্ফারা আদায় কর এবং কল্যাণকর কাজটি বাস্তবায়িত করো।-ihadis.com

সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ৪১৬৪,সহিহ হাদিসঃআবূ হুরাইরাহ্‌ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃরসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন বিষয়ে কসম করে, পরে অন্যটি তার চেয়ে উত্তম মনে করে, তবে সে যেন তার কসমের কাফ্‌ফারা দেয় এবং ঐ (উত্তম) কাজটি করে ফেলে।-ihadis.com

জবাবঃ নাস্তিকদের অভিযোগ গুলো দিন দিন এতো হাস্যকর হচ্ছে যে কমেডিশো দেখার আর আলাদা করে প্রয়োজন অনুভব করি না। উক্ত হাদিসের কোথায় এই কথা লেখা হয়েছে যে কসম ভেঙ্গে ফেলা মিথ্যাচার করার সুন্দর কৌশল? অথবা কোন সাহাবী এই ব্যাখ্যা করেছেন যে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ বা মিথ্যাচার করার খুব সুন্দর একটি কৌশল এই হাদিস থেকে আমরা শিক্ষা পাই? অথবা এই হাদিস গুলো থেকে কি কোনো মুজতাহিদ ইমাম এই ব্যাখ্যা করেছেন যে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা মানেই মিথ্যাচার করা? অথবা এই হাদিস মানুষকে মিথ্যাচার শিক্ষা দেয়? নাস্তিকরা যে মুক্তমনে মিথ্যাচার করে সেই ব্যাখ্যা হাদিসের সাথে মিশিয়ে দিয়েছে এটা কি ধরতে পেরেছেন পাঠক?

উক্ত হাদিসের মর্মার্থ যে মিথ্যাচার করার কৌশল শিক্ষা দেয়া না সেটার স্পষ্ট প্রমাণ হচ্ছে মিথ্যা কসম করাই ইসলামে নিষেধ। এখানে মিথ্যা কসম শিক্ষা দেবার কথা আসেই বা কিভাবে? নাস্তিকরা যতটুকু দেখালে নিজেদের সুবিধামত মুক্তচিন্তায় ব্যাখ্যা করতে পারবে ততটুকু দেখিয়ে ইসলামকে খারাপ করার ষড়যন্ত্র করে। কিন্তু সততার সাথে আমরা যদি বিচার করে দেখি তাহলেই সত্যিটা উপলব্ধি করা খুবই সহজ ব্যাপার।

সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ১৯৫,সহিহ হাদিসঃ

আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃনবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তিন ব্যক্তির সাথে কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তা’আলা কথা বলবেন না। (১) যে ব্যক্তি কোন কিছু দান করে খোঁটা দেয়; (২) যে ব্যক্তি মিথ্যা কসম করে দোকানদারী করে এবং (৩) যে ব্যক্তি টাখ্‌নুর নীচে ঝুলিয়ে পোশাক পরিধান করে।-ihadis.com

সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ২৫৩,সহিহ হাদিসঃ

আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃযে ব্যক্তি মিথ্যা কসমের মাধমে কোন সম্পদ আত্মসাৎ করবে আল্লাহর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ঘটবে এমন অবস্থায় যে, তিনি তার প্রতি রেগে থাকবেন। পরে বর্ণনাকারী আ’মাশ বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি (ইয়ামানের ভূমির স্থলে) এ কথা বলেন, জনৈক ব্যক্তির সাথে আমার সাথে একটি কূপ নিয়ে বিরোধ ছিল। আমরা এর মীমাংসার জন্য রসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে উপস্থিত হই। তখন তিনি বললেন, তোমার দু’জন সাক্ষী লাগবে অথবা বিবাদী থেকে কসম নেয়া হবে।-ihadis.com

মুয়াত্তা ইমাম মালেক,হাদিসঃ১৪০৬,সহিহ হাদিসঃ

জাবির ইব্নু আবদুল্লাহ্ (রা) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার মিম্বরে যে মিথ্যা কসম করে সে যেন তার স্থান দোযখে বানিয়ে নেয়।-ihadis.com

মুয়াত্তা ইমাম মালেক,হাদিসঃ১৪০৭,সহিহ হাদিসঃ

আবূ উমামা (রা) থেকে বর্ণিতঃরসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা কসম করে কোন মুসলমান ভাইয়ের সম্পদ আত্মসাৎ করে তার জন্য আল্লাহ্ তা‘আলা বেহেশত হারাম করে দিবেন এবং দোযখ ওয়াজিব করে দিবেন। সাহাবীগণ বললেন, যদি সামান্য জিনিসও হয় তবে। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদিও পিলু গাছের একটি ডাল হয়, যদিও পিলু গাছের একটি ডাল হয়, যদিও পিলু গাছের একটি ডাল হয়, তিনি এই বাক্যকে তিনবার বলেছেন।-ihadis.com

রিয়াদুস সলেহিন,হাদিসঃ৩৪২,সহিহ হাদিসঃ

আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনু আস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘‘আনহুমা থেকে বর্ণিতঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, ‘‘কাবীরাহ গুনাহসমূহ হচ্ছে, আল্লাহর সাথে শরীক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, প্রাণ হত্যা করা এবং মিথ্যা কসম খাওয়া।’’-ihadis.com

রিয়াদুস সলেহিন,হাদিসঃ১৭২৩,সহিহ হাদিসঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কাবীরাহ গোনাহ হচ্ছে আল্লাহর সাথে শির্ক করা। মাতা-পিতার অবাধ্যাচরণ করা, (অন্যায় ভাবে) কোন প্রাণ হত্যা করা, মিথ্যা কসম খাওয়া।’’-ihadis.com

যেখানে নবীজি (সা) নিজেই এই কথা বলে দিয়েছেন যে মিথ্যা কসম করা কবীরা গুনাহ বা বড় অপরাধ সেখানে নাস্তিক অন্ধবিশ্বাসীদের উক্ত হাদিসকে নিয়ে মিথ্যাচার করার অর্থ কি? অথবা মিথ্যা কসম করা যে ইসলামেই নিষেধ এই তথ্য গুলোই বা নাস্তিকরা ধামাচাপা দেবার চেষ্টা করেছে কেন? নাস্তিকদের এতো স্পষ্ট মিথ্যাচার যেকেউই বুঝতে পারবে। 

উক্ত হাদিসের সঠিক মর্মার্থ হচ্ছে ভালো কসম করা এবং ভালো কসমের থেকে যদি আরও ভালো কিছু সামনে আসে তবে সেটাকে প্রাধান্য দেয়া। এই সহজ কথা না বুঝে হাদিস নিয়ে প্রতারণা করার নাস্তিক্য মুক্তচিন্তার রহস্য কি আসলে? হাদিসে স্পষ্ট করে এটা বলেই দিয়েছে যে কোনো ব্যক্তি কোনো বিষয়ে কসম করে, পরে অন্যটি তার চেয়ে উত্তম মনে করে, তবে সে যেন তার কসমের কাফ্‌ফারা দেয় এবং ঐ উত্তম কাজটি করে ফেলে। অর্থাৎ প্রথমে আপনি ভালো একটি কসম করলেন এবং পরবর্তীতে দেখলেন তার থেকেও আরও ভালো কাজ সামনে এসেছে তাহলে প্রথম ভালো কসম ত্যাগ করে দ্বিতীয় তার থেকে উত্তম ভালো কাজকে প্রাধান্য দিতে হবে। এটাই হাদিসের সঠিক মর্মার্থ। আসুন হাদিস পড়ি।

সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ৪১৬৩,সহিহ হাদিসঃ

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর নিকটে গভীর রাত পর্যন্ত বিলম্ব করে। এরপর তার গৃহে গিয়ে দেখে যে, বাচ্চারা ঘুমিয়ে পড়েছে। তার স্ত্রী তার খাবার নিয়ে এলে সে সন্তানদের কারণে কসম করলো যে, সে খাবে না। পরে খাবার গ্রহণকে উচিত মনে করলে সে খেয়ে নিল। এরপর সে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর নিকট এসে তাঁকে উক্ত ঘটনা বলে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ যে ব্যক্তি কোন বিষয়ে কসম খায়, পরে অন্যটিকে তা থেকে উত্তম মনে করে, যে যেন তা করে ফেলে এবং নিজের কসমের কাফফারাহ দেয়।-ihadis.com

খেয়াল করুন একজন বাবা যিনি সন্তানদের সাথে এক সাথে খাবার খাওয়াকে পছন্দ করলো কিন্তু যেহেতু সন্তানরা ঘুমিয়ে গিয়েছে সেহেতু সে কসম করলো যে সে খাবে না কিন্তু বেশি ক্ষুধার কারণে সে বুঝতে পারলো যে তার নিজের সুস্থতার জন্য খাদ্যগুলো খেয়ে ফেলা ভালো কাজ। তাই প্রথম ভালো কাজটি ত্যাগ করে সে দ্বিতীয় ভালো কাজটিকে প্রাধান্য দিয়েছে। এটাই হাদিসের সঠিক ব্যাখ্যা। সে প্রথমে যে কসম করলো সে খাবার খাবে না এটা ভালো এরথেকে আরও বেশি ভালো হচ্ছে তার ক্ষুধা দূর করার জন্য খাবার গুলো খেয়ে ফেলা এটা প্রথমটি থেকে বেশি উত্তম। এই ক্ষেত্রেই কসম ভঙ্গ করে তারচেয়ে দ্বিতীয় কাজকে প্রাধান্য দেয়াই হাদিসটির আসল উদ্দেশ্য। অথচ মুক্তমনা নামধারী বাটপার গুলো হাদিসকে কিভাবে বিকৃত করলো!

আল্লামা তাকি উসমানি লিখিত “দরসে তিরমিযী” ৫ খণ্ড, ৪৫৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

এ হাদিস থেকে বুঝা গেলো, যদি কোনো ব্যক্তি কোনো কাজ করার জন্য কসম খায়, পরবর্তীতে মত পরিবর্তন হয় এবং এই খেয়াল হয় যে, আমি কসম খেয়েছি যে কাজটি করার জন্য, সেটি পাপের, তাহলে কসম ভেঙ্গে ফেলা ওয়াজিব। আর যদি খেয়াল হয় যে, এ কাজটি পাপের নয়, কিন্তু ফায়দা ও মাসলিহাতের বিপরীত, তাহলে সমস্ত ফোকাহায়ে কেরামের ঐক্যমত্য রয়েছে যে, এ কসম ভঙ্গ করা বৈধ। এটাই হাদিসের কেন্দ্রীয় অর্থ।

নাস্তিকদের নিজস্ব বানানো ব্যাখ্যা অনুযায়ী যদি এখানে মিথ্যাচার করার কৌশল শিক্ষা দিয়েই থাকে তবে কসমের থেকে অর্থাৎ তার থেকে ভালো কাজ করতে বলা হয়েছে কেন? তার চেয়ে ভালো কাজ বলার থেকে কি এটা বুঝা যাচ্ছে না যে প্রথমটিও ভালো কাজের জন্যই কসম করতে বলা হয়েছে? নাস্তিকরা কি এরকম হাদিস দেখাতে পেরেছে যেখানে নবী মোহাম্মদ (সা) বলেছেন তোমরা মিথ্যা কসম করো? অথবা মিথ্যা কসম করলে বিনা হিসেবে জান্নাত পাওয়া যাবে? অথবা মিথ্যা কসম করলে গুনাহ ক্ষমা হয়?

প্রথম ভালো কাজের কসম ভঙ্গ করে দ্বিতীয় তারচেয়ে উত্তম কাজেকে প্রাধান্য করার আরও কিছু ঘটনা পাঠ করুন। আপনারা নিজেরাই ধরতে পারবেন নাস্তিকান্ধরা হাদিস নিয়ে কিভাবে মানুষকে ধোঁকা আর প্রতারণা করে যাচ্ছে। নাস্তিকদের কি মুক্তমনে মিথ্যা বলতে বুক কাঁপে না?

সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ৪১৬১,সহিহ হাদিসঃ

আবূ মূসা আশ‘আরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমরা একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর নিকট সওয়ারী চাইতে আসি। তিনি বললেনঃ আমার নিকট এমন কিছু নেই যা তোমাদেরকে সওয়ারী হিসেবে দিতে পারি। আল্লাহর কসম! আমি তোমাদেরকে সওয়ারী দিব না। এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কালো মিশ্রিত সাদা কুঁজমিশ্রিত তিনটি উট আমাদের নিকট পাঠান। আমরা আলোচনা করলাম যে, সওয়ারী চাওয়ার জন্যে আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর নিকট এসেছিলাম। তখন তিনি কসম খেয়েছিলেন যে, তিনি আমাদের সওয়ারী দিবেন না। এরপর আমারা তাঁর নিকট গিয়ে তাঁকে কসমের বিষয় জানালাম। তিনি বললেনঃ আমি কোন বিষয়ের উপর কসম করলে তার বিপরীত কাজ যদি উত্তম দেখি, তবে সে উত্তমটি করি।-ihadis.com

সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ৪১৫৫,সহিহ হাদিসঃ

খালাফ ইবনু হিশাম, কুতাইবাহ্ ইবনু 'ঈদ ও ইয়াহ্ইয়া ইবনু হাবীব হারিসী (রহঃ) আবূ মূসা আশ'আরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, একদা আমি আশ'আরী গোত্রের কিছু সংখ্যক লোককে নিয়ে বাহন চাওয়ার জন্যে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর নিকট আসি। তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের বাহনের সওয়ারী দিব না। আর আমার কাছে এমন কিছু নেই যাতে আমি তোমাদের সওয়ার করাতে পারি। আবূ মূসা আশ'আরী (রাঃ) বলেন, আল্লাহ যতটা চাইলেন আমরা ততক্ষণ অপেক্ষা করলাম। তারপর তাঁর কাছে উট আনা হলো। তিনি আমাদেরকে তিনটি সাদা কুঁজবিশিষ্ট উট দেয়ার নির্দেশ দেন। যখন আমরা (তা নিয়ে) চলে আসি। তখন আমরা বললাম, রাবী বলেন, অথবা আমাদের একে অপরকে বললেন যে, এতে আল্লাহ তা’আলা আমাদের কল্যাণ করবেন না। আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট সওয়ারী বাহন চাইতে এসেছিলাম। তখন তিনি কসম করেছিলেন যে, আমাদেরকে সওয়ারী বাহন দিবেন না। এরপর আমাদেরকে সওয়ারী দিলেন। তারপর তারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট এসে তাঁর কসমের কথা অবগত করালেন। তিনি বললেনঃ আমি নই; বরং আল্লাহ তোমাদের সওয়ারী দিয়েছেন। আর আল্লাহর কসম! ইনশা-আল্লাহ আমি যখনই কোন বিষয়ের উপর কসম করি এরপর যদি এর তুলনায় অন্যটি কল্যাণকর মনে করি, তবে আমি আমার কসমের কাফফারাহ দিয়ে দিব এবং যা উত্তম তাই করবো।-ihadis.com

মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করুন প্রথমে নবীজির কাছে উট ছিল না বিধায় উনি কসম করে বললেন যে তিনি সওয়ারী দিবেন না কিন্তু পরে যখন উটের ব্যবস্থা হয় তখন তিনি তাদের কাছে পাঠিয়ে দেন এবং আগের কসম ভঙ্গ করেন। নাস্তিকরা হাদিসের আসল মর্মার্থকে সরিয়ে দিয়ে নিজেদের মুক্তচিন্তায় বানানো মিথ্যা ব্যাখ্যা করে কিভাবে হাদিসের সাথে মিশিয়ে দিচ্ছে সেটা তো বুঝতেই পেরেছেন আশা করি। নবীজি (সা) যদি মিথ্যাচারের কৌশল শিক্ষা দেবার জন্য উক্ত হাদিস বর্ণনা করেই থাকতেন তাহলে উনি উট কেন যোগার করে সওয়ারী হিসেবে তাদেরকে দিতে গেলেন? নাস্তিকরা কি এমন হাদিস দেখাতে পারবে যেখানে বলা হয়েছে তোমরা মিথ্যা কসম করো এবং মিথ্যা কসম ভঙ্গ করে এর থেকে আরও মিথ্যা কসম করতে থাকো? 

সহিহ মুসলিমঃ৪১৬৫,সহিহ হাদিসঃ

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন বিষয়ের উপর কসম করে, পরে অন্যটিকে তার চেয়ে ভালো মনে করে তবে সে যেন সেই ভাল বিষয়কে কার্যে পরিণত করে এবং কসমের কাফ্‌ফারা আদায় করে।-ihadis.com

সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে যে যদি আপনি ভালো কোনো কসম করেন এবং আরপরে সেটা থেকেও ভালো কিছু আপনার সামনে আসে তবে প্রথম ভালো কসম ভঙ্গ করে এরপরে দ্বিতীয় ভালো কাজকে প্রাধান্য দিতে হবে এটাই হাদিসের সঠিক মর্মার্থ। অথচ ইসলামবিদ্বেষীরা কিভাবে হাদিসের সঠিক মর্মার্থকে ধামাচাপা দিয়ে মিথ্যাচার করলো সেটা তো আপনারা নিজ চোখে দেখলেনই?

সর্বদা সত্য বলিব,মিথ্যা বলিব না এটাই ইসলামের শিক্ষা

সুরা বাকারা ২ঃ৪২ =

তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিয়ে দিও না এবং জানা সত্ত্বে সত্যকে তোমরা গোপন করো না।

সুরা বাকারা ২ঃ২৮১ = 

ঐ দিনকে ভয় কর, যে দিন তোমরা আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে। অতঃপর প্রত্যেকেই তার কর্মের ফল পুরোপুরি পাবে এবং তাদের প্রতি কোন রূপ অবিচার করা হবে না।


সুরা বাকারা ২ঃ১৪৭/সুরা আল ইমরান ৩ঃ৬০ = 

সত্য তোমার রবের পক্ষ থেকে। সুতরাং তুমি কখনো সন্দেহ পোষণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।

সুরা আল ইমরান ৩ঃ১০৪ = 

আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা আহবান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম।

সুরা মায়দা ৫ঃ৮ = 

হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর জন্য ন্যায়ের সাথে সাক্ষ্যদানকারী হিসেবে সদা দণ্ডায়মান হও। কোন কওমের প্রতি শত্রুতা যেন তোমাদেরকে কোনভাবে প্ররোচিত না করে যে, তোমরা ইনসাফ করবে না। তোমরা ইনসাফ কর, তা তাকওয়ার নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় তোমরা যা করো, আল্লাহ সে বিষয় সবিশেষ অবহিত।

সুরা হজ্জ ২২ঃ৩০ = 

মিথ্যা কথা থেকে দূরে সরে থাক।

সুরা বাইয়েনাহ ৯৮ঃ৭ = 

যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারাই সৃষ্টির সেরা।

সহিহ বুখারী,হাদিসঃ২৬৫৩,সহিহ হাদিসঃ

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে কাবীরাহ গুনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, কাউকে হত্যা করা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া।-ihadis.com

সহিহ বুখারী,হাদিসঃ২৬৫৪,সহিহ হাদিসঃ

আবূ বক্‌র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা তিনবার বললেন, আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহগুলো সম্পর্কে অবহিত করব না? সকলে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! অবশ্যই বলুন। তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে শির্‌ক করা এবং পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া। তিনি হেলান দিয়ে বসেছিলেন; এবার সোজা হয়ে বসলেন এবং বললেন, শুনে রাখ! মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, এ কথাটি তিনি বার বার বলতে থাকলেন। এমনকি আমরা বলতে লাগলাম, আর যদি তিনি না বলতেন।-ihadis.com

সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ৯,সহিহ হাদিসঃ 

তালহাহ্‌ ইবনু ‘উবাইদুল্লাহ থেকে বর্ণিতঃতিনি হাদীসটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে ইমাম মালিকের বর্ণিত হাদীসের অবিকল বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি এ হাদীসের শেষাংশে বলেছেন, ‘অতঃপর রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “সে সফলকাম হয়েছে তার বাবার কসম! যদি সে সত্য কথা বলে থাকে।” অথবা তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করেছে, যদি সে সত্য কথা বলে থাকে।”-ihadis.com

আদাবুল মুফরাদ,হাদিসঃ১৫,সহিহ হাদিসঃ 

আবু বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে কবীরা গুনাহগুলোর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মকগুলি সম্পর্কে তোমাদের অবহিত করবো না? কথাটি তিনি তিনবার বলেন। সাহাবাগণ বলেন, হাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ। তিনি বলেনঃ আল্লাহর সাথে শরীক করা (শিরক) এবং পিতা-মাতার অবাধ্যাচরণ। তিনি হেলান দেয়া অবস্থা থেকে সোজা হয়ে বসে বলেনঃ এবং মিথ্যা বলা। তিনি এ কথাটি বারবার বলছিলেন। আমি মনে মনে বললাম, আহা! তিনি যদি ক্ষান্ত হতেন।-ihadis.com

উপদেশ,হাদিসঃ১৮৮,সহিহ হাদিসঃ 

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সত্যবাদিতা একটি পুণ্যময় কাজ। আর পুণ্য জান্নাতের পথ দেখায়। যে ব্যক্তি সর্বদা সত্যের উপর দৃঢ় থাকে তাকে আল্লাহর খাতায় সত্যনিষ্ঠ বলে লিখে নেয়া হয়। পক্ষান্তরে মিথ্যা হচ্ছে পাপকাজ। পাপাচার জাহান্নামের পথ দেখায়। যে ব্যক্তি সদা মিথ্যা কথা বলে এবং মিথ্যায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তাকে আল্লাহর খাতায় মিথ্যুক বলে লিখে নেয়া হয়’ (বুখারী, মুসলিম, বাংলা মিশকাত ৯ম খণ্ড হা/৪৬১৩)। তাই আমাদের সকলের উচিত কথা বলার পূর্বে চিন্তা-ভাবনা করে বলা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টিপূর্ণ কথা বলার চেষ্টা করা। যাতে আল্লাহর অসন্তোষ রয়েছে, সেসব কথা বলা থেকে বিরত থাকা। অনুরূপভাবে সত্য বলার চেষ্টা করা এবং মিথ্যা বলা থেকে বেঁচে থাকা। সেই সাথে আল্লাহর যিকরে মশগূল থাকা। আল্লাহর বাণী ‘নিশ্চয়ই যে সকল নারী-পুরুষ বেশী বেশী আল্লাহকে স্মরণ করে আল্লাহ তাদের জন্য মাগফিরাত ও মহা প্রতিদান প্রস্তুত করে রেখেছেন’ (আহযাব ৩৫)।-ihadis.com

আদাবুল মুফরাদ,হাদিসঃ৩৮৬,সহিহ হাদিসঃ

উম্মু কুলসুম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ উম্মু কুলসুম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ যে ব্যক্তি লোকজনের মধ্যে আপোষ-মীমাংসা করে দেয় এবং কল্যাণকর কথা বলে বা কল্যাণকর ব্যবস্থার উন্নয়ন করে, সে মিথ্যুক নয়। উম্মু কুলসুম (রাঃ) আরো বলেন, আমি তিনটি ক্ষেত্র ছাড়া আর কোন ব্যাপারে নবী করীম (সাঃ)-কে কাউকে মিথ্যা বলার অনুমতি দিতে শুনিনিঃ (১) লোকজনের মধ্যে আপোষ-রফা করতে, (২) স্ত্রীর নিকট স্বামীর কথায় এবং (৩) স্বামীর নিকট স্ত্রীর কথায়।-ihadis,com

রিয়াদুস সলেহিন,হাদিসঃ৬৩৫,সহিহ হাদিসঃ

আবূ উমামাহ বাহেলী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের শেষ সীমায় একটি ঘর দেওয়ার জন্য জামিন হচ্ছি, যে সত্যাশ্রয়ী হওয়া সত্ত্বেও কলহ-বিবাদ বর্জন করে। সেই ব্যক্তির জন্য আমি জান্নাতের মধ্যস্থলে একটি ঘরের জামিন হচ্ছি, যে উপহাসছলেও মিথ্যা বলা বর্জন করে। আর সেই ব্যক্তির জন্য আমি জান্নাতের সবচেয়ে উঁচু জায়গায় একটি ঘরের জামিন হচ্ছি, যার চরিত্র সুন্দর।’-ihadis.com

জামে আত তিরমিজি,হাদিসঃ৩০১৮,সহিহ হাদিসঃ

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃনবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাবীরা গুনাহ প্রসঙ্গে বলেনঃ তা হচ্ছে আল্লাহ তা’আলার সাথে শারীক করা, বাবা-মার অবাধ্য হওয়া, নরহত্যা করা ও মিথ্যা বলা।-ihadis.com

রিয়াদুস সলেহিন,হাদিসঃ৫৫,সহিহ হাদিসঃ

ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় সত্য পুণ্যের পথ দেখায় এবং পুণ্য জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। একজন মানুষ (অবিরত) সত্য বলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছে তাকে খুব সত্যবাদী বলে লিখা হয়। পক্ষান্তরে মিথ্যা পাপের পথ দেখায় এবং পাপ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। একজন মানুষ (সর্বদা) মিথ্যা বলতে থাকে, শেষ অবধি আল্লাহর নিকটে তাকে মহা মিথ্যাবাদী বলে লিপিবদ্ধ করা হয়।-ihadis.com

উপদেশ,হাদিসঃ২৩,সহিহ হাদিসঃ

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তোমার মধ্যে চারটি বস্তু বিদ্যমান থাকে, তখন দুনিয়ার যা কিছুই তোমার থেকে চলে যায় তাতে তোমার কোন ক্ষতি নেই। আমানত রক্ষা করা, সত্য কথা বলা, উত্তম চরিত্র হওয়া এবং খানা-পিনাতে সতর্কতা অবলম্বন করা-ihadis.com

উপদেশ,হাদিসঃ৫৩,সহিহ হাদিসঃ 

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলা হল, সবচেয়ে ভাল মানুষ কে? তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক হিংসা-বিদ্বেষ মুক্ত অন্তরের অধিকারী এবং সত্য কথার অধিকারী ব্যক্তি সবচেয়ে উত্তম মানুষ’। ছাহাবীগণ বললেন, আমরা সত্য কথার অধিকারী জানি। কিন্তু হিংসা-বিদ্বেষ মুক্ত অন্তর কি জিনিস তা জানি না। তিনি বললেন, যে ব্যক্তি স্বচ্ছ ও পরহেযগার। যার মধ্যে (১) পাপ নেই, পাপ হলেই ক্ষমা চায় (২) সীমালংঘন নেই (৩) খিয়ানত নেই (৪) হিংসা নেই।-ihadis.com

সুনানে ইবনে মাজাহ,হাদিসঃ৪২১৬,সহিহ হাদিসঃ 

আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলা হলো, কোন ব্যক্তি সর্বোত্তম? তিনি বলেনঃ প্রত্যেক বিশুদ্ধ অন্তরের অধিকারী সত্যভাষী ব্যক্তি। তারা বলেন, সত্যভাষীকে তো আমরা চিনি, কিন্তু বিশুদ্ধ অন্তরের ব্যক্তি কে? তিনি বলেন, সে হলো পূত-পবিত্র নিষ্কলুষ চরিত্রের মানুষ যার কোন গুনাহ নাই, নাই কোন দুশমনি, হিংসা-বিদ্বেষ, আত্মঅহমিকা ও কপটতা।-ihadis.com

উপসংহারঃ

সার্বিক যুক্তিপূর্ণ ও প্রমাণ নির্ভর আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম আল্লাহ মিথ্যা বলেননি। আল্লাহ নবীজি (সা) ও সাহাবীদেরকে অলৌকিক ঘটনা দেখিয়েছেন যা নাস্তিকরা আল্লাহর মিথ্যা বলে চালিয়ে দিয়েছে। আর যুদ্ধের ময়দানে নিজের দল ও নিজেকে নিরাপদ করার স্বার্থে সাময়িক মিথ্যা বলার সুযোগ থাকলেও সর্বদা স্বাভাবিক অবস্থায় সত্যই বলা ইসলামের শিক্ষা। অন্যদিকে নাস্তিক্যধর্মে মুক্তচিন্তার আশ্রয়ে যেকোন নাস্তিক যেকয়ন মুহূর্তে মিথ্যা বলার স্বাধীনতা রাখে। একইসাথে আল্লাহ মিথ্যা কথা বলেন, আল্লাহ মিথ্যা সপ্ন দেখিয়েছেন এমন কথা নিঃসন্দেহে নাস্তিকদের অন্ধবিশ্বাস ছাড়া আর কিছুই নয়। কেননা ইসলাম এসব সমর্থন করেই না।

কুরআনের একটি আয়াত পড়ি।

সুরা নাহল ১৬ঃ১০৫ = 

মিথ্যা কেবল তারা রচনা করে, যারা আল্লাহর নিদর্শনে বিশ্বাস করে না এবং তারাই মিথ্যাবাদী।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে আপনার সন্তানকে আপনি মুক্তমনা নাস্তিক বানাবেন নাকি একজন সভ্য মানুষ সেটা আপনার বিবেচনায় রেখে দিয়ে আজকের মতো যাচ্ছি।

============

আরও প্রাসঙ্গিক লেখা গুলোঃ

মহাবিশ্বকে স্রষ্টা বানায়নি দাবির প্রমাণ কোথায়?

স্রষ্টা নিজেই কি নাস্তিক?

আল্লাহ রিজিকদাতা হলে মানুষ না খেয়ে মরে কেন ?

স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রমাণ নাই?

বান্দাকে আল্লাহ মোহর মেরে দেন কেন?

=============

এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post